#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -২৫
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা
❝তিন মাস পনেরো দিন কোমায় ছিল তূর্য❞
জমে বরফ হয়ে গেলাম আমি। হাত পাও কেমন অসার হয়ে পড়েছে। চোখের পানিগুলো ও যেন নিষ্ঠুর হয়ে গেল। একদম কান্না পাচ্ছে না আমার। বরং শ্বাস আঁটকে আসছে। মনে বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আরিয়ানা আপুর বলা বাক্যটা। অতি শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়। আমার বেলায় ও কি তা ঘটছে! দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আমার ভিতরটা অথচ চোখে এক ফোঁটা অশ্রুর চিহ্ন ও নেই। তূর্য কোমায় ছিলেন এটা মনে পড়তেই যেন বুক টা হাহাকার করে উঠছে। নীরবতা ছেয়ে গেল চারদিকে। গভীর রাতের আঁধারে যেন আমি আমার জীবনে ধেয়ে আসা অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি। না আমার সহ্যশক্তি নেই আর। আমি হাসতে চাই ভালো থাকতে চাই তূর্যর সাথে।
আরিয়ানা আপু দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে আবারও বলতে শুরু করলেন,,,,
~সেদিন যাওয়ার পথে তূর্য ও বাবার খুব ভয়ানক এক্সিডেন্ট হয়। গাড়িটা ব্রেক ফেইল ছিল। এক্সিডেন্টের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে ছিলাম সবাই। হসপিটালেই পৌঁছাতেই জানতে পারলাম বাবা আর নেই। তূর্যর অবস্থা ও ভালো না। বাঁচার চান্স ছিল না। ডক্টর রা জানান বেচে গেলেও তূর্য হয়তো কোমায় চলে যাবে। মাথার আঘাত টা ছিল গভীর। মস্তিষ্কে আঘাত হানে। সত্যিই তাই হল। সেদিন আর তোর কাছে পৌছানো হল না বাবা আর তূর্যর। বাবার আশা টা আশা-ই থেকে গেল চিরতরের জন্য। তূর্যর অবস্থা ও বাবার মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না।শোকের ছায়া নেমে এল পুরো পরিবারে। এতো কিছুর মাঝে আমরা একদম ভুলে গেলাম তোর কথা। ভাগ্য এতোটাই খারাপ যে তূর্যর মোবাইল টা পর্যন্ত সেদিন বাড়িতে ফেলে গিয়েছিল। তিন মাস পর যখন তূর্য সুস্থ হয় সাথে সাথেই ছুটে গিয়েছে তোর কলেজের ঐ দারোয়ান চাচার কাছে। ওনাকে তো পেলেনই না বরং জানতে পারল ওনি মারা গেছেন। তোদের বাড়ির এড্রেস ও তূর্য জানত। সেখানে গিয়েও তোকে পায় নি। তোরা নাকি বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে গেছিস। পাগল হয়ে গিয়েছিল তূর্য। দিন রাত শুধু তোর খোঁজে বাহিরে বাহিরে থাকত। লোক পর্যন্ত লাগিয়ে রেখেছিল। রাতের আঁধারে কাঁদত ছেলেটা। নিজেকে বন্দী করে রাখত অন্ধকার রুমে। আভাস মরে যাওয়ার ঠিক পনেরো দিন আগে তূর্যর মোবাইলে ফোন এসেছে কে যেন তোকে দেখেছে হসপিটালে একটা ছেলের সাথে। ফোন পাওয়া মাত্রই তূর্য ছুটে গিয়েছিল সেখানে। নিজের খালাতো ভাইয়ের সাথে তোকে দেখতে পেয়ে থমকে গিয়েছিল তূর্য । কোনোভাবেই সে বিশ্বাস করতে পারছিল না তুই আভাসের বউ। আভাসের বিয়েতে আমাদের কারোই যাওয়া হয় নি। আর ওর বিয়েটা ও খালামণি হুট করেই ঠিক করেছিল। তূর্যর রক্ত টগবগিয়ে উঠেছিল তোকে আভাসের বউ হিসেবে দেখে। বাসায় এসে ঘরের সবকিছু ভাঙচুর করছিল। তোহাশ আটকাতেই ওকে জরিয়ে ধরে কেঁদেছিল তূর্য। বড় ভাইয়ের কাছে আবদার করেছিল তোকে এনে দিতে। কিন্তু তা কি আর সম্ভব ছিল?অন্যের বউ হয়ে গিয়েছিলি তুই। অন্য কারো বউ কি আর কেঁড়ে নিয়ে আসা যায়? পারি নি আমরাও পারি নি তূর্যর আবদার টা রাখতে। তারপর থেকে নিজেকে অন্ধকারে রাখতেই ভালোবাসতো তূর্য। তোর ব্যাপারে খোঁজ ও রাখত। যাকে আমরা নিজের চেয়ে ও বেশি ভালোবাসি সেই মানুষ টা যদি অন্য কারো ও হয় তবুও আমরা তাকেই ভালোবেসে যায়। ভালোবাসা কি এতোটাই ঠুনকো হয় যে সময়ের স্রোতে অথবা মানুষ টা অন্য কারো হয়ে গেলেও আমরা ভুলে যাব তাকে? পারে নি তূর্য ও কখনও পারে নি তোকে ভুলতে বরং ওর ভালোবাসায় পাগলামি বেড়ে গিয়েছিল শতগুণ। তোর হাসবেন্ড থাকা সত্ত্বেও ও আড়ালে তোর খেয়াল রাখার তোকে ভালোবাসার দায়িত্ব টা পালন করে যাচ্ছিল ।শুধু নিজেকে হারিয়ে বসেছিল তোকে হারানোর সাথে সাথেই। শান্তি, সুখ কখনও আর ধরা দেয় নি তূর্যর জীবনে। কিন্তু তোর বিরুদ্ধে হাজারো ক্ষোভ জমা হয়েছিল তূর্যর মনে। তাই নিজের ক্ষোভ রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে ভার্সিটিতে খারাপ বিহেভ করেছে। তুই গাড়িতে হাত দিয়েছিলি বলে গাড়ি ভাঙে নি। গাড়ি ভেঙেছে কারণ তার অজান্তেই তার শুভ্রপরীর গায়ে কাঁদা ছিটকে পড়েছে। সব রাগ মিটিয়েছে গাড়িটা ভেঙে। আভাস মারা যাওয়ার দিন ও তূর্য যায় নি। তোকে সামনাসামনি দেখলে নিজের রাগ টা বেড়ে যাবে সবার সামনে কিছু করে বসবে তাই না গিয়ে নিজেকে বন্দী করে রেখেছিল চার দেয়ালের মাঝে।
।
।
আভাস কে তো তূর্যই খুন করতে চেয়েছিল যেদিন জানতে পেরেছে তোকে রেখে পরনারী তে মত্ত সে। তোহাশ আটকে রেখেছিল বহু কষ্টে। কিন্তু দেখ তূর্যর আর খুনই করতে হয় নি তার আগেই আল্লাহ ওকে শাস্তি দিয়েছে।অতিরিক্ত নেশার কারণে হারাতে হয়েছে নিজের জীবন। হার্টে ইনফেকশন হয়ে মারা গেল । আসলে একটা কথা কি জানিস? যে নিজের প্রিয় জিনিস টা হারায় সে বুঝে কেমন কষ্ট হয়,,কেমন যন্ত্রণা হয়। আর কেউ অপ্রত্যাশিত অন্য কারো মূল্যবান জিনিসটা পেয়েও কদর না করে ফেলে রাখে অবহেলায়। আভাস বুঝে নি তোর প্রায়োরিটি। আর তূর্য প্রতিনিয়ত চোখের জল ফেলেছে তোকে হারিয়ে। এখনও বিশ্বাস হয় না শ্রেয়া যেই ছেলে জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতি ফেইস করে ও এক ফোটা অশ্রু গড়ায় নি চোখ থেকে সেই ছেলেটা একটা মেয়ের জন্য চোখের জল বিসর্জন দিয়েছে। আল্লাহ হয়তো তূর্য কে তোকে পাওয়ার আরেকটা সুযোগ দিয়েছিল। নিজেকে কিছু টা গুছিয়ে নেয় তূর্য। তোকে ভার্সিটি তে প্রিয়ুর বাবা ভর্তি করিয়ে দিয়েছে? না ওনি করান নি বরং ওনাকে দিয়ে কাজ টা করিয়েছে তূর্য। প্রিয়ুর বাবা আমাদের অফিসের ম্যানেজার। তূর্যর কথা মোতাবেক সবকিছু করেন ওনি। চাইলে তোকে জোর করে নিজের কাছে আনতে পারত। কিন্তু তূর্যর ইচ্ছে ছিল ধীরে ধীরে আবারও নিজের শুভ্রপরী কে নিজের করে নিবে। তূর্যর ভালোবাসায় আঙুল তুলে ঠিক করিস নি শ্রেয়া কিন্তু আমি জানি ও কষ্ট পেলেও তোকে ছাড়বে না। ওর অস্তিত্বে মিশে গেছিস তুই।
আপুর কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে রইলাম আমি। নিয়তি কেমন তিক্ত খেলা খেলল আমাদের সাথে! আমাদের দু জনের জীবনে ভয়ংকর প্রলয় ডেকে আনল। অন্ধকারে ডেকে দিল আমাদের জীবন টা। অন্ধকার যেমন আছে তেমন আলো ও তো আছে!! রাতের পর যদি দিন হয় নতুন এক ভোরের সূচনা হয় তাহলে আমারও তূর্যর জীবনে কেন নতুন ভোরের আগমন ঘটবে না? ভাগ্য যখন আমাদের দু’জন কে আবারও কাছাকাছি টেনে এনেছে তাহলে কেন দূরে দূরে অবস্থান করছি আমরা? তূর্যর চেয়ে বেশি কখনও কেউ আমাকে ভালোই বাসতে পারবে না। কখনও না। তূর্যর ভালোবাসা সার্থহীন। আমার ভালোবাসা খুবই নগন্য ওনার ভালোবাসার তুলনায়। নতুন এক ভোর চাই নতুনভাবে নিজেকে পূর্ণ করতে চাই। তূর্য কে চাই। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আপনাকেই চাই তূর্য।
এক মুহূর্ত ও বসলাম না আমি। দৌড়ে চলে এলাম ছাদে। পিছন থেকে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে। পিঠে মাথা হেলিয়ে কান্নামিশ্রিত স্বরে এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলাম,,,
–ভালোবাসি তূর্য। খুব ভালোবাসি আপনাকে। আমি জানতাম আপনি এখানেই থাকবেন। দয়া করে হারিয়ে যাবেন না। আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ। রাগের বশীভূত হয়ে আমি ভুল বাল বকে ফেলেছি। কিন্তু আপনাকে ভুল বুঝি নি। কখনও ভুল বুঝি নি।
আমার হাত টা টেনে সরিয়ে দিলেন তূর্য। চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে ওনার। আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি। নিঃশব্দে বিনা বাক্যে আমার হাত টা টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন নিচে। নিচে এসে ড্রইং রুমে এক বৃদ্ধ লোক কে দেখে খুব অবাক হলাম । আরিয়ানা আপু,,,প্রিয়ু,,, আয়ুশ ভাইয়া সবাই একদম চুপচাও বসে আছে। তিতিশা আপুর কোলে বসে বুকে মাথা রেখে ঘুমে মগ্ন। রাত তিনটা বাজে। গভীর রাতে নীরবতার বদলে ড্রইং রুমে মানুষের সমাহার। আমাকে টেনে নিয়ে সোফায় বসালেন তূর্য। নিজেও বসে পড়লেন আমার পাশে। বৃদ্ধ লোকটার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,,,
—শুরু করুন কাজী সাহেব।
চমকে উঠলাম আমি। তূর্যর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই ওড়না টা ভালো করে মাথায় দিয়ে বলে উঠলেন,,,
—কবুল বলতে দেরি করবে না ওকে?
বিস্মিত হয়ে পড়লাম। কি হচ্ছে এসব? এতো রাতে কাজী? এমনভাবে বিয়ে? আবার বলছে অতি বিলম্বিত না করে কবুল বলে দিতে!!! কাজী সাহেব কবুল বলতে বললে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকালাম আমি। সবাই যেন তূর্যর পক্ষেই। এতো রাতে এমন করে বিয়ে কেমন জড়তা ঘিরে ধরছে আমায়। তূর্যর তীক্ষ্ণ রাগান্বিত চক্ষু শেষ মেশ কবুল বলতে বাধ্য করল আমায়। তূর্য একটু ও সময় নিলেন না কবুল বলতে। আলহামদুলিল্লাহ বলে প্রিয়ু সবাই কে মিষ্টি মুখ করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কে বলবে একটু আগে তুফান হয়েছে এ বাড়িতে!! আর অদ্ভুত ভাবে বিয়েতে ও কতটা খুশি সবাই। কাজী সাহেব কে এগিয়ে দিতে গেল আয়ুশ ভাইয়া। তোহাশ ভাইয়া ও চলে গেলেন রুমে। প্রিয়ুর সাথে আমি চলে যেতে নিব তখনি খেয়াল করলাম তূর্য আমার হাত টা ধরে রেখেছে। হেসে দিল প্রিয়ু ও আরিয়ানা আপু।
–ওকে ছেড়ে দে তূর্য। কাল তো বিয়ের অনুষ্ঠান। সাড়ে তিনটা বেজে গেছে এখন না ঘুমোলে অসুস্থ হয়ে পড়বে মেয়েটা।
–শ্রেয়া আমার সাথে আমার রুমে ঘুমাবে ভাবী। বিয়ে করেছি এখন বউ আমার সাথেই থাকবে। বউ ছাড়া এক মুহূর্তও চলবে না আমার।
বিনা লজ্জা সংকোচে তূর্যর বলা কথা শুনে বিষম খেলাম আমি । মারাত্মক লোক তো ওনি। মুখে কি কিছুই আটকায় না? লজ্জা ও কি আমার মতো করে ওনাকে ঘিরে ধরে না? ওনি তো পুরোই লজ্জাহীন যাকে সংক্ষিপ্ত রূপে বলা হয় নির্লজ্জ। মারাত্মক,, ভয়ংকর,, বেয়াদব তূর্য চৌধুরী আমার স্বামী ভাবতেই হৃদয়টা কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। আরিয়ানা আপু ও প্রিয়ু হেসে চলে গেল। এই হাসি এনে দিল আমার মনে ভীষণ অস্বস্তি।
।
।
বাধ্য বউয়ের মতো ওনার পিছন পিছন রুমে আসলাম আমি। ওনি দরজা লাগাতেই বুকটা কেঁপে উঠল ভীষণ জোরে। নিজের এক হাত দিয়ে অন্য হাত খামচে ধরলাম আমি। গলা শুকিয়ে কাঠ। লজ্জায় কেমন নুইয়ে নুইয়ে পড়ছি। আমার দিকে সম্মোহিত ভাবে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তূর্য। পা দু’টো ফ্লোরে আঁকড়ে ধরলাম আমি। একদম কাছে এসে দাঁড়াতেই হার্ট বিট হতে লাগল প্রচন্ড গতিতে । ওনার গরম নিশ্বাস চোখে মুখে আঁচড়ে পড়তেই খিঁচে বন্ধ করে নিলাম চোখ। ওমা একি হলো!!! মুখে গরম নিশ্বাস অনুভব করছি না কেন? অজস্র ভয় ও বুকের ধুকপুকানি নিয়ে চোখ মেলে দেখি তূর্য নেই। কোথায় গেলেন? পিছন ফিরতেই হতবাক আমি। কি সুন্দর করে বিছানায় শুয়ে ঘুমে ডুবে গেছেন নির্লজ্জ তূর্য সাহেব। কিছু সময়ের ব্যবধানেই ঘুমিয়ে গেলেন? বিশ্বাস হচ্ছে না। একটু পরীক্ষা করে দেখা যাক। ওনার একদম নিকটে গিয়ে মুখের সামনে হাত নাড়াতেই হাত টা জোরে চেপে ধরলেন তিনি। চোখ বড় বড় করে তাকাতেই বলে উঠলেন,,,
–বিয়ে করেছি বলে কি সুযোগ লুটে নিবে নাকি শুভ্রপরী? বিয়ে তো করলাম তোমায় নিজের খাঁচায় বন্দী করতে। তাই বলে কি নিজের ইজ্জতের বিসর্জন দিতে হবে এবার ? নো নেভার।
ওনার কথা শুনে মাথা ঘুরে গেল আমার। ছি!! কিসব বলছেন ওনি!!কি লজ্জাজনক কথা বার্তা! হাত টা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই হাতে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলেন। ঝিকে উঠল সারা শরীর।
–আমি ইজ্জতের রফাদফা করব মিথ্যা অপবাদ দিলেন অথচ নিজেই আমার ইজ্জতহরণ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।
কথাটা বলতে দেরি কিন্তু তূর্যর আমাকে নিজের উপর টেনে নিতে একটু ও দেরি করলেন না।
—আমি তোমার ইজ্জতহরণ করব তাই না?( শান্ত কন্ঠে)
—না না আমি তো বলছিলাম তূর্য ভাইয়া আমার ইজ্জত অনেক মূলললল্যবান। ( কাঁপা কাঁপা গলায়)
ভয়াবহভাবে গর্জে উঠলেন তূর্য। চোখ রাঙিয়ে বললেন,,,
–বাসর রাতে আমাকে ভাই ডাকার অপরাধে টানা এক ঘন্টা কান ধরে দাড়িয়ে থাকবি।
এবার বোধহয় বেহুশ হয়েই যাব। সারারাত এক ফোঁটা ও ঘুমায় নি। এখন চোখে ঘুম ভর করেছে কিন্তু তিনি বলছেন কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে। তূর্য যা ভয়ংকর। ওনি যা বলেছেন তাই করতে হবে। ওনার উপর থেকে উঠে অসহায় চোখে তাকালাম আমি।
–কোনো লাভ নেই। অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালে চোখ দুটো খুলে ফেলব এখনই।
হুমকি!!! কত্তো খারাপ আপনি আমায় হুমকি দিচ্ছেন? তূর্যর জান প্রাণ তূর্যর শুভ্রময়ী কে হুমকি দিচ্ছেন! মনের কথা মনে রেখেই কান ধরে দাড়িয়ে পড়লাম আমি। মুখ ফুলিয়ে তূর্যর দিকে তাকাতেই দেখলাম মিট মিট করে হাসতে ব্যস্ত বেয়াদব ছেলে।
~এমনকি কখনো হয় বিয়ের প্রথম রাতেই রোমান্সের বদলে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে হয় বউ?
তূর্যর এমন জ্বালাময়ী হাস্যরসাত্মক প্রশ্নে ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিলাম আমি। ভ্রু কুঁচকে তড়িঘড়ি করে বিচলিত হয়ে কোলে তুলে নিলেন তূর্য। বিছানায় শুয়ে আমাকে নিজের বুকে টেনে নিতেই এক গাল হেসে বলে উঠলাম,,,,
–এমনকি কখনও হয় বাসর রাতে শাস্তির ভয়ে অভিনয় করে বউ?
অগ্নি দৃষ্টি নিবদ্ধ করল আমার দিকে তূর্য। চোখ মেরে ওনার বুকে মুখ লুকাতেই নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিল আমাকে। কানের কাছে দৃঢ় স্বরে বলে উঠলেন,,,
~❝ হাজারো অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে
আমার শুভ্রপরী বন্দী হয়েছে আজ আমার বাহুডোরে। ❞
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। তূর্য ও শ্রেয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত রইল সবার।😇)