#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -১৯
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা
ঘুমের প্রকোপে চোখ মেলে তাকাতে পারছি না। কোনোমতে বিছানা থেকে উঠে পাশের জানালা টা খুলে দিলাম। রীতি আপু চলে গেছে কাল বিকালেই। মোবাইল হাতে নিতেই দেখলাম দশটা বেজে ১৫ মিনিট। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এলো আমার। আঠারো বছরের জীবনে কখনও এতো বেলা অব্দি ঘুমায় নি আমি। অবশ্যই আজ এতো বেলা পর্যন্ত নিদ্রায় থাকার বিশেষ কারণ আছে। রাত ৩ টা পর্যন্ত হসপিটালে ছিলাম সবার সাথে। ফুহাদ ভাইয়ের অবস্থা ও আগের চেয়ে ভালো এখন। ৩ টার পর তূর্য আমাকে পৌঁছে দেন বাসায়। কিন্তু ওনার বলা একটা কথা কিছুতেই ভুলতে পারছি না আমি। এখনও বুকটা কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। বাইক থেকে নেমে গেইটের ভিতরে চলে আসতে নিলে পিছন থেকে ডেকে ওঠেন তূর্য। আমি দাঁড়াতেই আমার কাছে এসে দাড়ান তিনি। ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় ওনার ক্লান্ত মুখ টা দেখে থমকে গেলাম আমি। কারো ক্লান্তি ভরা চেহারা ও কি এতো মুগ্ধময় হতে পারে? গালে তূর্যর হাতের স্পর্শ পেতেই ঘোর থেকে বেরিয়ে এলাম আমি। ওনার দিকে তাকাতেই ক্লান্তিমাখা স্বরে বলে উঠলেন,,
— কখনও আমি হারিয়ে গেলে তুমি কি মিথির মতোই কাঁদবে শুভ্রপরী?
এমন একটা প্রশ্নের উত্তর কি হবে জানা নেই আমার। অজানা ব্যাথা কষ্ট এসে চেপে ধরল আমার মনে। বুকে আচমকাই অনুভব করলাম অসহ্য ব্যাথা। যা সেকেন্ডেই অতিশয় বেড়ে গেল। কোনো প্রকার জবাব না দিয়ে এক দৌড়ে চলে এলাম ওইখান থেকে। রুমে এসে জানালা দিয়ে দেখতেই নজরে পড়ল তূর্য কে। ওনার দৃষ্টি একদম জানালা বরাবর। চোখে চোখ পড়তেই ক্লান্তি ভরা এক হাসি হাসলেন উনি। কানে মোবাইল ধরে আমায় ইশারা করলেন কিছু একটা। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরক্ষণে ফোনের রিংটোনে বুঝতে পারলাম ইশারার ভাষা। কানে নিতেই তিনি বলে উঠলেন,,,
–সারারাত খাও নি। সেই দুপুরে খেয়েছিলে। ফুহাদের জন্য এতোটাই চিন্তিত ছিলাম যে তোমাকে খাবানোর কথা মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিল। সরি শুভ্রপরী। তোমার ব্যাগটা চেক করে দেখবে। দুটো চিকেন বার্গার আছে একটা প্যাকেটে। খেয়ে নিবে শ্রেয়সী।
স্তম্ভিত হয়ে পড়লাম আমি। কন্ঠে জড়তা নিয়ে বললাম,,
–আপপপনি খাবেন না?
—ক্ষুধা আছে অনেক তবে খাওয়ার ইচ্ছে টা নেই একটুখানি ও।–হালকা হেসে বললেন তূর্য।
—অদ্ভুত কথা বলছেন তো আপনি চিরকুট সাহেব। খেয়ে নিবেন প্লিজ।
–ইচ্ছে নেই বললাম তো শুভ্রপরী।
–ঠিক আছে। খাওয়ার একদম দরকার নেই। আপনি শুধু একটু নিচে অপেক্ষা করুন। আমি এখনই আসছি।
আমার কথা শুনে অবাক হলেন তূর্য। চোখে মুখে অবাকতা বজায় রেখেই বললেন,,,
–এখন নিচে আসার প্রয়োজন নেই শ্রেয়া। অলরেডি অনেক লেইট হয়ে গেছে। এখন খেয়ে ঘুমোও।
—একটু অপেক্ষা করুন চিরকুট লেখক। –করুন স্বরে বললাম।
–ঠিক আছে।
ওনার কাছ থেকে সম্মতি পেতেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল আমার মুখে। বার্গার এর প্যাকেট ও এক বোতল পানি হাতে নিয়ে চলে এলাম নিচে। গেইটের কাছে আসতেই দেখলাম ফোনে ব্যাস্ত ওনি। আমি কাছে এসে দাঁড়াতেই ফোনটা পকেটে রেখে হাসি মুখে বলে উঠলেন,,,
–ফুহাদের জ্ঞান ফিরেছে। আমার জলদি যেতে হবে শ্রেয়সী।
ওনার হাসিটা অবলোকন করতেই হৃদয়ে এক প্রশান্তির নির্মল বাতাস বয়ে গেল। আমার হাতে প্যাকেট আর পানির বোতল দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন তিনি। মুখে হাসি ফুটিয়ে আমি বলে উঠলাম,,,
–দুটো বার্গার আমি খেতে পারবো না। প্লিজ আপনি একটা খেয়ে যান। খাবার নষ্ট করা কি ভালো বলেন? প্লিজ,,,
আমার হাত থেকে প্যাকেট ও পানির বোতল টা নিয়ে বাইকের উপর রাখলেন তূর্য। কাছে এগিয়ে কপালে আসা চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলে উঠলেন,,,
–যদি মুখে বলতে আপনাকে ছাড়া আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না তবে কি খুব ক্ষতি হতো শুভ্রপরী?
তূর্যর মুখে নিজের মনের কথাটা শুনে চরম মাত্রায় বিস্মিত হলাম আমি। কিভাবে ওনি বুঝে গেলেন আমার মনের কথাটা!মাথা নত করে বললাম,,,
–বার্গার গুলো হয়তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলে ভালো হয়।
–ওকে।–এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন তূর্য।
ফোনে মেসেজে আসার শব্দে ধ্যান ভাঙল আমার। হাতে নিয়ে দেখলাম ওনি মেসেজ করেছেন।
~ তুমি কি এখনো ঘুমাচ্ছো শুভ্রপরী? যদি ঘুম ভাঙে তো একবার হসপিটালে আসবে প্লিজ? সকাল সকাল তোমার স্নিগ্ধ ভরা মুখটা দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। কিন্তু ফুহাদ কে ফেলে যেতেও পারছি না। টিউশন করানোর আর প্রয়োজন নেই তোমার। আসবে কি?
ছোট্ট একটা মেসেজ।কিন্তু বিরাট আবেগময় এক আবদার। যদি পারতাম তবে গত কয়েক মাসের স্মৃতি গুলো মুছে দিতাম আমি আমার জীবন থেকে। পরম যত্নে লেপ্টে থাকতাম এই মানুষটার বুকে। এক বুক হতাশা নিয়ে ফোনটা হাত থেকে রেখে দিলাম আমি। ভালোবাসার অতল সাগরে এতোটাই নিমজ্জিত হচ্ছিলাম যে বাস্তবতা টাই ভুলতে বসেছিলাম। চোখ ছাপিয়ে জল নেমে এলো। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখান থেকে চলে যাবো। তবে হয়তো কিছুটা হলেও দূরত্ব বাড়বে আমার ও তূর্যর মাঝে। তোহাশ ভাইয়ার জব অফার টা একসেপ্ট করে নিব। জব টা তো আর মন্দ না। ওনারা মানুষ ও খুব ভালো। ভার্সিটিতে ও কম যাবো এতে তূর্য ও ভুলে যাবেন আমায় ধীরে ধীরে। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম হসপিটালে যাওয়ার লক্ষ্যে। প্রিয়ু কে ও ফোন করে ডেকে নিলাম। তূর্যর জন্য না হোক ফুহাদ ভাইয়া কে অন্তত একবার হলেও দেখতে যাওয়া উচিত আমার।
ফুহাদ ভাইয়া কে দেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে চারপাশ খুঁজে তূর্যর দেখা মিলল না। আমাকে মেসেজে আসার আবদার করে নিজেই এখন গায়েব। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে ওনার মুখোমুখি হতে হবে না। আমিও প্রিয়ু সামনে এগোতেই দেখা মিলল আয়ুশ ভাইয়া ও তূর্যর। আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন তূর্য। ওনার এভাবে চোখ ফিরানো টা ভালো ঠেকল না আমার কাছে। মনটা এক নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ অনুভব করলাম মাথা থেকে আমার ওড়না টা সরে গেছে। ওহ্ তার জন্য ওনার এমন রিয়েক্ট! তাড়াতাড়ি ওড়না টেনে মাথায় দিতেই তূর্য বলে উঠলেন,,,
–আমার সাথে একটু আসো শুভ্রপরী।
ইশশ সবার সামনে এভাবে বলতে হয়! ওনার কি একটু ও লজ্জা লাগে না। ইতস্ততা নিয়ে পা বাড়ালাম ওনার পিছু পিছু।
শ্রেয়া ও তূর্য যেতেই জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে থাকা প্রিয়ুর দিকে তাকালো আয়ুশ। ঠোঁট দুটো প্রশস্ত করে বলল,,,
–আপনি এখানে দাড়িয়ে কি করবেন ন্যাকা রাণী? আপনি বরং আমার সাথে ক্যান্টিনে চলুন।
আয়ুশের মুখে উচ্চারিত ন্যাকা রাণী শব্দ টা শুনে আরও জড়োসড়ো হয়ে গেল প্রিয়ু। নিজের গালেই এখন জুতা দিয়ে
চাপড়াইতে ইচ্ছে করছে তার কেন যে সেদিন ক্যাম্পাসে এতো ঢং করতে গেল। আয়ুশের পিছু পিছু সে ও ছুটল ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে।
গাড়িতে বসে আমার দিকে মুগ্ধময় নয়নে তাকিয়ে রইল তূর্য। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে গাড়ির সামনের অংশ থেকে পানির বোতল টা হাতে নিয়ে দুই ঢুক পানি খেলেন । ফের আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,,,
–আমি পাঁচ দিনের জন্য বিজনেসের কাজে বাহিরে যাবো শ্রেয়া। কাজটা খুবই ইম্পরট্যান্ট। তোমাকে চোখের আড়াল করা আমার পক্ষে আর পসিবল না। জরুরি না হলে কখনই যেতাম না। এক সেকেন্ড ও তোমার থেকে দূরে থাকা টা খুব পুড়ায় আমায়। খুব বেশি চিন্তা হয় তোমায় নিয়ে। সারাক্ষণ ভাবি কোথায় লুকিয়ে রাখব তোমাকে। আমি জানি আয়ুশ তোমায় ভালোবাসে। নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রতি ও ভীষণ জেলাস হয় আমি। কিন্তু এতে তো আয়ুশের দোষ নেই। ভালোবাসা তো ইচ্ছে করে হয় না। অজান্তেই অনুভূতি জমা হয় অজান্তেই আবার ভালোবাসায় পরিণত হয়।
কথাগুলো বলে ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল করলেন তূর্য। রিসিভ হতেই বললেন,,,
–প্রিয়ু কে নিয়ে চলে আয়। আর হে এসাইনমেন্টের খাতাগুলো ও নিয়ে আসিস।পার্কিং এরিয়া তে অপেক্ষা করছি আমরা।
তূর্যর কথোপকথনে আন্দাজ করতে পারলাম আয়ুশ ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলেন। নিজের ভালোবাসার মানুষ কে তারই সবচেয়ে কাছের বন্ধু ভালোবাসে তবুও তাতে বিন্দু পরিমাণ ক্ষোভ নেই তূর্যর। শুনেছি বন্ধু নাকি একসময় শত্রু হয়।পিছনে ছুড়ি মারে। অথচ তাদের বন্ধুত্বটা একদম অন্যরকম।একজন জেনেও মনে কোনো ক্ষোভ নেই আর অন্য জন ভালোবেসে ও বন্ধুর সুখের জন্য করেছেন সেক্রিফাইজ। হে,,এটাই বন্ধুত্ব। আয়ুশ ভাইয়া ও প্রিয়ু চলে এলো মিনিট দুয়েক পর। আয়ুশ ভাইয়ার হাতে কতগুলো খাতা। খাতা গুলো আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন আয়ুশ ভাইয়া। মুচকি হেসে বললেন,,,
–কাল এসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার ডেট তো?
—হুম ভাইয়া।
— দুটো এসাইনমেন্ট একদম কমপ্লিট।
নির্বাক হলাম আমি ও প্রিয়ু। আয়ুশ ভাইয়া আমাদের এসাইনমেন্ট করে দিয়েছেন! এসাইনমেন্ট গুলো হাতে নিয়ে ধন্যবাদ জানাতেই আয়ুশ ভাইয়া বললেন,,,
—প্রিয়ুর ধন্যবাদ এক্সসেপ্টেবল বাট তোমার টা না জেরি।
—মানে!!!
—কারণ তোমার মুখে উচ্চারিত ধন্যবাদ টা অন্য কারো প্রাপ্য। তোমার এসাইনমেন্ট টা আমি করি নি। করেছে তোমার চিরকুট লেখক।
আয়ুশ ভাইয়ার কথা শুনে থমকালাম আমি। সারারাত তো হসপিটালে ছিল মানুষ টা। তবে কি হসপিটালে বসেই করল? এই এসাইনমেন্ট করতে পাক্কা দু ঘন্টা লাগত। তবে কি ওনি সারারাত ঘুমান নি?তার জন্যই চোখ দুটো এতো লাল!! কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে বসলাম আমি। প্রিয়ু ও বসল আমার পাশে। আজ নিজের উপর খুব ঘৃণা হচ্ছে আমার। কেন সেদিন নিজের বিশ্বাস টা ধরে রাখতে পারলাম না আমি? শুধু ভালোবাসি বললেই কি হয়? একটা মেসেজ কখনও কি কারো প্রতি বিশ্বাস নষ্ট করে দিতে পারে?আজ মনে হচ্ছে আমার ভালোবাসা ব্যার্থ। আমি বিধবা জেনেও আমার প্রতি ওনার ভালোবাসা একটু ও কমে নি বরং বেড়েছে শতগুণ। তূর্যর যোগ্য আমি কোনো সময়ই ছিলাম না। ওনার ভালোবাসার যোগ্য ও আমি না। জানালার দিকে ঝুঁকে আমার দিকে তাকাল তূর্য। শান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,,
–নিজের খেয়াল রাখবে শুভ্রপরী। আজ সন্ধ্যার দিকেই চলে যাবো আমি। ফোন দিব রিসিভ করবে প্লিজ। খুব দরকার হলে ফোন দিবে অথবা আয়ুশ কে জানাবে।
চোখ ঝাপসা হয়ে এলো আমার। এতো কেয়ার এতো ভালোবাসার প্রাপ্য আদোও কি আমি? প্রিয়ু কে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
—খেয়াল রাখবেন আমার শুভ্রপরীর শালী সাহেবা। রাখবেন তো?
—জ্বি ভাইয়া। আপনি একদম নিশ্চিন্ত থাকুন। (হেসে)
গাড়ি চলতেই জানালা দিয়ে মুখ বের করে পানিতে টলমল করা চোখ নিয়ে তূর্যর দিকে ফিরে তাকালাম আমি। তূর্য এখনো দাঁড়িয়ে এদিকেই তাকিয়ে আছেন আয়ুশ ভাইয়া ও সাথে দাড়িয়ে। কষ্ট হচ্ছে আমার। ওনার ভালোবাসায় তো বিন্দুমাত্র খাদ নেই তবে আমার ভালোবাসায় কেন রয়ে গেল?এখন চাইলেও কিছু ঠিক হবে না। কিছুই না। সিটে মাথা এলিয়ে নীরবে চোখের জল বিসর্জন দিতে লাগলাম। আমার যে এখন নীরবতা ছাড়া আর কিছুই নেই। অপূর্ণ আমি তূর্য। আপনাকে ছাড়া অপূর্ণ আপনার শুভ্রপরী।
।
।
কাগজে সাইন করে নতুন জবে নিয়োগ দিলাম আমি। দুপুরেই স্টুডেন্টের বাসায় গিয়ে কথা বলে ছেড়ে দিয়েছি টিউশনি গুলো। জবের কথা শুনে অনেক খুশি হলেন তিহুর আম্মু। আমাকে অর্ধেক মাসের বেতন ও দিয়ে দিলেন। সন্ধ্যা হতেই তিতিশাকে পড়াতে এসে আমার সিদ্ধান্ত জানালাম আরিয়ানা আপু কে। খুশিতে চক চক করে উঠল আপুর চোখ গুলো। আরিয়ানা আপু আমায় জরিয়ে ধরে বললেন,,
–ওয়েলকাম আওয়ার হোম শ্রেয়া। আমি খুব খুশি হয়েছি তুমি রাজি হওয়াতে। আমার মন বলছিল তুমি কখনও ফিরিয়ে দিবে না প্রস্তাব টা।
হালকা হাসলাম আমি। তিতিশার দিকে ঝুঁকে ওর থুতনিতে হাত দিয়ে বললাম,,,
–তিতিশা বেবি হ্যাপি হয়েছে তো?
আমাকে ছোট ছোট হাতে আলিঙ্গন করে নিল তিতিশা। আনন্দ,,উচ্ছ্বাসের ছাপ চোখে। মুখে হাসির ঝলক এনে বলল,,,
–আ’ম ভেরি ভেরি হ্যাপি মিস। তুমি খুব ভালো খুব সুন্দর। তুমি তো একটা পরী। শুভ্রপরী।
তিতিশার কথা শুনে চোখ আকৃতি বড় করে তাকালাম আমি। মনের মাঝে জেগে উঠল সন্দেহ। শুভ্রপরী মানে? এই নামে তো তূর্য ছাড়া আমায় কেউই ডাকে না। আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে আরিয়ানা আপু মুখে হাসি টেনে বললেন,,,
–সত্যিই তুমি খুব সুন্দর শ্রেয়া। ও আজ একটা নাটক দেখেছিল তো। ওইখানে নায়িকা সুন্দর দেখে তিতিশা বলে উঠল,,,–আম্মু দেখো না নায়িকা টা কতো সুন্দর। কতো ফর্সা। সাদা পরী তাই না আম্মু?
সাদা পরী তো বেমানান লাগে তাই না শ্রেয়া? তাই ওকে বললাম সুন্দর মানুষ কে শুভ্রপরী ডাকতে হয়। কথাটা বলে হি হি করে হেসে উঠল আরিয়ানা আপু। আমিও আর মাথা না ঘামিয়ে চলে এলাম বাসায় । কিছু জরুরি জিনিস আছে সেগুলো নিয়েই কাল শিফট হবো তিতিশাদের বাড়িতে।
।
।
আজ তিনদিন হয়েছে তিতিশাদের বাসায় এসেছি। তোহাশ ভাইয়া,,,,আরিয়ানা আপু,,তিতিশা ব্যাতিত আর কোনো ফ্যামিলি মেম্বারই দেখি নি আমি। তিতিশার কথিত সেই চাচ্চু কে ও না। আরিয়ানা আপু কে ও জিজ্ঞেস করি নি পরিবারে কে কে আছে! কি দরকার ওনাদের ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে আমার জানার। হাজারো ফুলের মাঝে তিতিশাদের বাগানের বেলি ফুল গাছটার নিচে পাতানো দোলনা টায় বসে আছি আমি । তিতিশা খেলতে ব্যাস্ত বাগানে ওর এক স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে। একটু আগেই তিতিশার সমবয়সী এই বাচ্চা ছেলেটা কে দিয়ে গেছে তাদের ড্রাইভার। প্রায় সময় নাকি খেলতে আসে আরিয়ানা আপুর কাছে থেকে জানতে পারলাম। ওদের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলাম আমি। কিছু একটার শব্দে কেঁপে উঠল আমার হৃদপিণ্ড। পাশ থেকে ফোনটা নিতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠল ” চিরকুট লেখক “। কেটে যেতেই সাইলেন্ট করে রেখে দিলাম আমি। এই তিনদিনে হাজার বার ফোন করেছেন ওনি। কিন্তু আমি চাই না আর চাই না ওনি পড়ে থাকুক আমার মোহে। সুন্দর হোক ওনার জীবনটা এটাই আমার প্রত্যাশা।
চলবে,,,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)