সিঁদুর শুদ্ধি #নাফিসা মুনতাহা পরী #পর্বঃ৩১

0
820

#সিঁদুর শুদ্ধি
#নাফিসা মুনতাহা পরী
#পর্বঃ৩১

অভি তার অতীত জিবনে ফিরে গেছে। অভি দাড়িয়ে আছে একটা বদ্ধ রুমে। অভির সামনে দিয়ে ওর মতই দেখতে একটা ২৫ বছরের ছেলে ৬ বছর বয়সী মেয়ের পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে। আর মেয়েটা প্রানপনে খিলখিলিয়ে হেঁসে সারা রুমে দৌড়ে মাতিয়ে চলছে। ওরা রুম থেকে বের হয়ে গেলে তাদের পিছুপিছু অভিও রুম থেকে বের হয়ে যায়। বাহিরে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ হচ্ছে। শব্দের প্রখরতা এতই বেশি যে অভি কান ধরে সেখানে বসে পড়লো। হঠাৎ অভির সামনে আসে অসম্ভব সুন্দর একটা নারী। সেই নারীর হাত ধরে আছে সেই শিশুকন্যা। কিন্তু কন্যাটি একটা অবয়ক হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। কিছু দুরে সেই শিশুকন্যাটিও দাড়িয়ে আছে। খানিকটা দুরে এক মহিলা তার শরীরের বিষ উগলে সেই ২৫ বছরের যুবকের প্রান হরন করার চেষ্টা করছে। রুপবতী মেয়েটা বাঁচানোর চেষ্টা করতেই ১১ জন মানুষ এসে সেই নারীকে বন্দী করে হত্যা করার ট্রাই করে এবং এক পর্যায়ে সফল হয়। আর তার অবয়ক বাচ্চাটি ওর মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য ছটপট করতে থাকে। হঠাৎ সেখানে ঝড় উঠলো আর সব কিছু অভির সামনে আবছা হতে লাগলো। অভি রাগে ক্ষোভে চিৎকার দিয়ে বলল,

—” আন্টি আমি কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। আমার চোখ জ্বালা করছে।”

টইংকেল সাথে হাতে একটু জল নিয়ে সেখানে মন্ত্র পড়ে ফু দিল। তারপর অভির দিকে ছুড়ে মারতেই অভি শান্ত হয়ে গেল। টুইংকেল অভির হাত ধরে চিৎকার দিয়ে বলল,

—” অভি যা হবার তা হয়ে যাক। তুমি কিন্তু তোমার চোখ খুলবে না। তাহলে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে। আর হিতে বিপরীতও হবে।”

অপুর সাথে যা যা ঘটেছে সব মুখ দিয়ে আউড়ে চলছে অভি। টুইংকেল সব কিছু মনযোগ দিয়ে শুনছে। আর নিজের মধ্য সব কিছু গেঁথে নিচ্ছে।

অভি আবার বলা শুরু করলো। ১১ জন মানুষ মিলে সেই ছোট্ট মেয়েটির অবয়বকে কব্জা করার আপ্রান চেষ্টা করে কিন্তু সেখানে আরো অনেক অবয়ব এসে সেই ১১ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে।
অন্যদিকে রক্তপ্রভা নামক মহিলাটি ২৫ বছরের যুবকটিকে ছুড়ে ফেলে দেয়। তারপর বড় সাপের রুপ ধরে ছেলেটিকে হত্যা করে ছোট্ট মেয়েটির অবয়বকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
এবার অভির শরীর বারবার ঝিকে ওঠে। বড়বড় শ্বাস ফেলতে থাকে। সামনের মোমবাতির আলোক রশ্মিগুলো থরথর করে কাঁপছে।

টুইংকেল দেখলো, হিতে বিপরীত হয়ে যাচ্ছে তাই তিনি অভিকে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলেন। অভি ফিরে এস তোমার নিজের জগতে। দ্রুত ফিরে আসো।
ওনার কথা অভির উপর কোন প্রভাবই পড়লোনা। অভির তেজ বাড়তে লাগলো। অভি নিজের আসন থেকে আস্তে আস্তে উপরে উঠতে লাগলো। টুইংকেলও সাথে সাথে অভির পাশে অবস্থান করলো। মনে হল রুমে কোন প্রলয়কারী ঝড়ের তান্ডব চলছে। রুমের সমস্ত জিনিস পত্র রুমের ভিতরই এক হয়ে ঘূর্নিপাক খেতে লাগলো।

অভি অনুভব করছে সেই ৬ বছরের শিশুর অবয়বটি অভিকে আলিঙ্গন করছে। শিশুটি আগ্রাসী হয়ে সেই যুবকের সাথে মিলনে তৎপর হয়ে উঠেছে। অসম্ভব কে সম্ভব করে অবয়বটি যুবকটিকে ছেড়ে দিয়ে একটা জোড়ে চিৎকার দিয়েই অদৃশ্য হয়ে পড়ে। যুবকটি তার শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করে। এ এক অদ্ভুদ মিলন। হয়ত অবয়বটি যুবকটিকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেছিল কিন্তু তাকে মাঝপথেই স্থান পরিত্যাগ করে চলে যেতে হয়।

অভি জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে। অভির চিৎকারে টুইংকেল কান চেপে ধরে নিচে পড়ে গেল। অভি আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে গেল। অভি জ্ঞান শূন্য হয়ে নিচে পড়তেই টুইংকেল গিয়ে ওকে ধরে ফেলে। অভি ওভাবেই আবার ভাসতে লাগলো। রুমের দরজা খুলে গেল। অভি শূন্যর উপর ভাসতে ভাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেল। টুইংকেল রুম থেকে বের হওয়ার আগে আদেশ করলো সমস্ত রুমের জিনিসপত্রকে। তোমরা যে যেখানে ছিলে সেখানে নিজ নিজ অবস্থান করো।

টুইংকেলের আদেশ পেয়ে রুমের জিনিসপত্র নিজ থেকে যে যার জায়গায় অবস্থান নিল।

অভি বেডে সুয়ে আছে সেন্সলেস হয়ে। টুইংকেল এসে অভির পুরো শরীর চাদরে ঢেকে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

বিদ্যা বাসায় চলে আসলো। মনে কিছুটা ভয় ছিল, কেউনা জিঙ্গাসা করে সারা রাত তুই কোথায় ছিলি। অবশ্যই এখনো কেউ কিছু জিঙ্গাসা করলোনা। বিদ্যা কেবল সিড়িতে পা দিবে এমন সময় কিচেন থেকে চিৎকারময় বর্জ্য কন্ঠের গান শুনতে পেল। বিদ্যা পায়ে পায়ে কিচেনে গিয়ে দেখলো, রিভা কানে হেডফোন লাগিয়ে গান গাইছে। বিদ্যা দাড়িয়ে থেকে কিছুক্ষন হেসে ফোন বের করে ওর গানগুলো রেকর্ড করতে লাগলো।

এদিকে রিভার মুখ ব্যস্ত হয়ে আছে,
—“বড় লোকের বেটি লো, লম্ডা লম্ডা চুল.., এমন মাথে বাধে লেঙ্গ বাল গান্দ্যাফুল।”

বিদ্যা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থায়। বিদ্যার হাসি দেখে রিয়ার মা সহ আরো অনেকে এসে রিভার কার্যকালাপে হাসির পাঠশালা বসাল।

রিভার মা এসে রিভার কান ধরে হেডফোন খুলে বলল,

—” শিল্পী হয়েছিস! তোর এগুলো ভ্যাড়া সঙ্গীত চর্চা কে করতে বলেছে? গানের তালে গান গাচ্ছিস, ভাবছিস তোর সুরও এমন হবে?”

রিভা বেশ লজ্জা পেয়ে গেল। সবার সামনে মন খারাপ করে মাথা নিচু করে চলে গেল। এমন সময় শর্মিষ্ঠা বলে উঠলো,

—” বিদ্যা, তুমি না একটু আগে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে? এত জলদি কাজ শেষ হয়ে গেল!”

বিদ্যা ব্যাপারখানা বুঝতে পারেনা। কিন্তু এখানে সেই কথা নিয়ে চর্চা করাও বোকামি তূল্য। তাই বিদ্যা একটু হেসে সেখান থেকে দ্রুত চলে আসে। রুমে এসে সর্বোপ্রথম ওর বসকে কল দিয়ে জানতে চাইলো, ঋষিই কি তাদের পাঠানো অফিসার!

বিদ্যার বস প্রশ্নের প্রত্তুরে বলল,

—” হ্যা, ঋষিই ওদের পাঠানো অফিসার।”

বিদ্যা মহা চিন্তায় পরে গেল। এর সাথে কাজ করবে কিভাবে? মানুষটা যে মোটেও সুবিধা জনক নয় সেটা বিদ্যা আগেই বুঝে গেছে। এরতো একটা ব্যবস্থা করতেই হয়।

রাত ৮টা ছুই ছুই। অঞ্জনা দেবী অপুর রুমে বসে আসে। অপুর সমস্ত কাপড় বের করে অনেক ক্ষন ধরে কেঁদেছে। কান্নার আভাস তার মুখেতে স্পষ্ট ফুঠে উঠছে। চোখ জবা ফুলের মত লাল হয়ে আছে। অঞ্জনা দেবী ভাবনার জগতে ডুবে গেল।

আজ দুপুরে বিজয়ের মামা সুধারাম এ বাসায় এসেছে। অঞ্জনা দেবী তাকে খুব একটা পছন্দ করেননা। এ বাসায় অঘোরীদের পা পরার পর থেকে সে এসব তান্ত্রিকদের পছন্দ করেনা। অনিচ্ছা সত্তেও সোফায় বসতে বলেছিল। সম্মান রক্ষার্থে অঞ্জনা দেবীও কিছুটা জায়গা ফাঁকা রেখে বসল।

সুধারাম একথা সেকথা বলে শেষে বলল,

—” বৌদি, অপুর কোন পুরনো জামা আছে? যদি থাকে তাহলে খুব ভাল হতো।”

—“সুধারাম, অপুর পোষাক দিয়ে তুমি কি করবে? তোমাদের মত মানুষকে আমি বিশ্বাস করিনা। কি মতলবে এসেছো এই বাসায় বলতো?”

—“কি যে, বলেননা বৌদি! আমি আবার কি করবো! বিদ্যা সেদিন ফোন দিয়ে বলেছিল, অপুর জন্য পূজা করতে। তাই আপনার কাছে এসেছি ওর কথা বলতে।”

অঞ্জনা দেবী আগেকার দিনের মানুষ, তাই সহজেই সুধারামকে সন্দেহের তালিকায় টেনে আনলো। অঞ্জনা দেবী কপাল কুঞ্চিতো করে বলল,

—” তোমায় বিদ্যা এসব করতে বলেছে? কই আমাকে তো কিছু বলেনি! আমাকে না বলে ও অপু সম্পর্কে কিছু করবেনা, সেটা আমার পুরো বিশ্বাস রয়েছে বিদ্যার উপর।”

—“আপনি বিদ্যাকে কল দিয়ে না হয় দেখেন! ওকে জিঙ্গাসা করলেই সব জানতে পারবেন। ফোন করে দেখেন আপনার বৌমাকে…! ”

—“এত করে যখন বলছো, তাহলে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। তুমি বরং আজ যাও। আজকের দিনে বাড়ি থেকে কিছু বের করতে নেই। বিজয়কে দিয়ে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিব।”

ঠিক আছে বৌদি বলে সুধারাম চলে গেল। তখন থেকে অঞ্জনা দেবী চোখের জল ফেলছে। সুধারামের মতলব ভালো না। অঞ্জনা দেবী আলমারী থেকে অপুর সব ব্যবহার্য কাপড় সহ সকল জিনিসপত্র বের করে সেখানে পেট্রোল ঢেলে দিল। ছেলের শেষ সম্বল ছিল এগুলো। কত যত্ন করে বিদ্যা তুলে রেখেছিল। এগুলোই ছিল ওর বাঁচার অবল্মন। অঞ্জনা দেবী মেসের কাঠি বের করে আগুন জ্বালিয়েই রুম থেকে বের হয়ে গেল।

রুমের ভিতর ধোয়া দেখে সবাই আগুন আগুন বলে চিৎকার দিতে লাগলো। তোমরা কে কোথায় আছ চ্যাটার্জী বাড়ীতে আগুন লেগেছে। ততক্ষনে অঞ্জনা দেবী বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। রাস্তায় এসে একটা অটোতে চড়ে বাপের বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা দিল।

অমবস্যার মত ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত। ভরা পূর্নিমার রাত হওয়া সত্ত্বেও মেঘের দলগুলো চাঁদকে আড়াল করে দিয়েছে। অঞ্জনা দেবী গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেটে চলছে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে। রাত ১০টা পেরিয়ে গিয়েছে। ফোনে বারবার রনক কল দিয়েই চলছে তবুও কল রিসিভ করছেনা। দুরে একটা কুড়ে ঘরে প্রদ্বীপ টিমটিম করে জ্বলছে। অঞ্জনা দেবী এই বৃদ্ধ বয়েসে এসে এত পথ চলতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু নিজের ছেলে বলে কথা। এমন হাজার হাজার মাইল পথ এক নিমিষেই পাড়ি দিতে পারে সে। অঞ্জনা দেবী দ্রুত পা চালালো।

২১ বছর হিমালয়ে সাধনা করেছে সে। অনেক তন্ত্র শক্তির মালিক তিনি। নিজ গ্রামে সবার আপদে-বিপদে সে পাশে থাকবে, এই পন নিয়ে গ্রাম থেকে কিছু দুরে অবস্থান করছে দেবকী দেবী। দেবকী নিজ গৃহে এক পূজায় মগ্ন ছিল। এমন সময় কেউ হাপানো কন্ঠে দেবকী বলে চিৎকার দিল। দেবকীর সমস্ত ধ্যান ভঙ্গ হয়ে গেল। দেবকী আসন থেকে উঠে দ্রুত পায়ে গৃহ থেকে বের হয়ে এল। তারপর হাতের ইশারা করতেই সেখানে একখন্ড আগুন শূন্যতে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। আগুনের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেল তার দিদি উঠানে দাড়িয়ে আছে।

দিদি তুমি বেলেই দেবকী আধা দৌড়ে অঞ্জনা দেবীর কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো। তারপর অপ্রত্যাশিত খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

—” দিদি, তুমি এতরাতে এখানে?”

অঞ্জনা দেবী হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলল,

—” অ….পু।”

আর কথা বলতে পারেনা অঞ্জনা দেবী। দেবকী বড় দিদিকে রুমের ভিতর নিয়ে গেল। তারপর ধীরে সুস্থে বলল,

—” আমার অপুর সমস্যা হয়েছে তা আমি জানি। কিন্তু তুমি কিছু না বললে আমি বুঝবো কি করে?”

অঞ্জনা দেবী এবার কান্না থামিয়ে নিচু কন্ঠে বলল,

–” তোর অপু?”

দেবকী কিছুক্ষন স্থির হয়ে রইলো, তারপর উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,

—” তুমি কি বলতে এসেছ, আগে সেটা বলোনা!”

অপুর পূর্নজন্ম হয়েছে। ওর আগের জন্মের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে সুধারাম বলে এক তান্ত্রিক কিছু করতে চলছে। ও জানতে পেরেছে অপুর পূর্নজন্ম হয়েছে। তুই কিছু একটা কর। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে উঠলো অঞ্জনা দেবী।

দেবকীর চোখে জল ছলছল করছে। সে যে সংসার ত্যাগী একটা মেয়ে। তার চোখে জল মানায়না। দেবকী ওর দিদিকে চুপ করতে বলে আসনে বসে চোখ বন্ধ করলো। তার কিছুক্ষন পরে চোখ খুলে বলল,

—” আমাকে এখুনি যেতে হবে।”

অঞ্জনা দেবী বিচলিত হয়ে বলে উঠলো, তুই এই রাতে কোথায় যাবি?

মধু, মধু বলে একটা মেয়েকে ডাকলো দেবকী। মেয়েটি কাছে আসতেই দেবকী বলল,

—” সে আমার দিদি, তার সেবাযত্নের ক্রুটি করবেনা। তাকে দেখে রেখ আমি না ফিরা পর্যন্ত।”

ঠিক আছে মা বলতেই দেবকী কুঠির থেকে বের হয়ে গেল।

ঘন কালো অন্ধকারময় রাত্রি। তারমধ্যে শশ্মানঘাট। খানিকবাদে আকাশ চিড়ে বিজলি রেখা টেনে পৃথিবীর বুকে আলোর ছটা ছড়িয়ে দিচ্ছে। দুরে একটা ঘুঘু পাখির করুন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। খানিকক্ষন বাদে একটা কাক উড়ে গেল এ গাছ থেকে ও গাছের ডালে। আকাশ গুম হয়ে আছে। দুরে চিতায় পুরে যাওয়া লাশের বাজে উটকো গন্ধ ছড়াচ্ছে। ১৯ বছরের যুবক পাপন থরথর করে কাঁপছে। সে ৩ বছর ধরে গুরুর সাথে কাজ করছে। তবুও মনে হচ্ছে আজ ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে চলছে। গুরু বাবা আজ কাজ না করলেই নয়!

সুধারাম খেকিয়ে উঠে ধমক দিল পাপনকে। তারপর বলল,

—” আজ এই কাজে যদি আমরা সাফল্য পাই তাহলে মনে কর আমি এত এত শক্তির অধিকারী হব সেটা তুই ভাবতেও পারবিনা। আজ আমরা ২৫ বছরের পুরনো মৃত ব্যাক্তির দেহ নিতে চলছি। যার কিনা পূর্নজন্ম হয়েছে।”

পাপন কোন কথা না বলে একটা শাবল নিয়ে কেবল কবরের ধারে গিয়ে দাড়িয়েছে এমন সময় পাপন চিৎকার দিয়ে উষ্টে পড়ে গেল সাধুরামের পায়ের নিচে। আমি পারবোনা এটা বলেই পাপন কাঁদতে লাগলো।

সুধারাম ধমকের স্বরে ওকে চুপ করতে বলল। তারপর চোখ বন্ধ করে বুঝার চেষ্টা করলো এখানে কিসের সমস্যা। কিছুক্ষন পর চোখ খুলে বলল,

—” আমি ছাড়া এই তথ্য কে জানলো যে অপুর পূর্নজন্ম হয়েছে। কোনো মুসলমান এই কবর বন্ধ করে দিয়েছে।”

পাপন কাঁপতে কাঁপতে বলল,

—” তাহলে চলেন বাড়ি চলে যাই।”

সুধারাম একটা শয়তানী হাঁসি দিয়ে বলল,

—” এটার একটা ব্যবস্থা আছে। প্যানটা খুলে ওখানে গিয়ে প্রসাব কর। তাহলে ওর যাদু কার্য নষ্ট হয়ে যাবে। এই মন্ত্র পড়ে, যা কাজটা দ্রুত করে ফেল।”

পাপন অসহায় দৃষ্টিতে সুধারামের দিকে চাইতেই সুধারামের কঠিন চাহোনি দেখেই সুড়সুড় করে কবরের দিকে এগিয়ে গেল। তারপর কবরের পাশে নিদিষ্ট একটা জায়গায় খোড়ার জন্য বসেই বলল,

—” গুরুবাবা, আমার ভয় লাগছে। কিছু হবেনা তো?”

সুধারাম চোখ গরম করে পাপনের দিকে তেড়ে যেয়েও আর গেলোনা। নিজেকে সংযত করে বলল,

—” ওরে বাপ আমার, তোর যদি কিছু হয়, তাহলে আমি এখানে মজুত আছি কেন! নে জলদি করে নে।”

ঠিক আছে বলে পাপন মন্ত্র পড়তে পড়তে সেখানে প্রসাব করলো, তারপর ওখান থেকে কাগজে মোড়া একটা পুটলি বের করে ছুড়ে মারলো। পাপন খুঁশি হয়ে পিছন ফিরে বলল,

—” বাবা, পেরেছি আমি। এখন কি খুড়তে শুরু করবো?”

সুধারাম দুর থেকে দৌড়ে এল পাপনের কাছে। এসেই খুঁশিতে গদগদ হয়ে বলল,

—” সাব্বাশ্ পাপন, তোর উপর আজ আমি খুবই সুন্তষ্ট। আজকে তোকে আমি মন্ত্রসাধক বানাবো।”

পাপনের ঠোটে এক চিলি হাসি ফুটে উঠলো। সুধারাম কবরের পাশে আসন পেতে বসে মন্ত্র পড়তে শুরু করলো আর পাপন কবর খুড়তে আরম্ভ করলো।

এমন সময় সুধারাম অনুভব করলো, দুর থেকে খুব শক্তিশালী একটা ঘূর্নিঝড় ধেয়ে আসছে তারদিকে। সুধারাম চোখ খুলে পিছন দিক ফিরে দেখলো, সত্যই একটা শক্তিশালী বাতাস শনশন শব্দ তুলে সুধারামের দিকে ধেয়ে আসছে। খারাপ কিছু একটা ঘটতে চলছে, এমন কথা ভেবে সুধারাম কেবল নিজেকে ঐ শক্তির বিরুদ্ধে তৈরি করবে এমন সময় অপুর কবরের পাশে দেবকী এসে দাড়ালো। হাতে লাঠি, জটবাধা চুল, কপালে সিঁদুরের ফোটা আর সিংহের চামরার পোষাক পড়ে দাড়িয়ে আছে সুধারামের মৃত্যু দ্রুত।

সুধারাম এবার বেশ বুঝতে পারলো, এটা একটা মানবী। তবে এটা কোন সিদ্ধিপ্রাপ্ত নারী। দেবকীর শক্তির সম্পর্কে ধারনা না থাকার কারনে সুধারাম তার প্রথম ভুল পদক্ষেপ নেয়। দেবকীর দিকে মন্ত্রের বান ছুড়ে মারতেই দেবকী ওর হাতের লাঠিটা ছুড়ে মারলো সুধারামের দিকে। লাঠিটা সুধারামের বুকে এসে ধাক্কা দিল। সেই ধাক্কায় সুধারাম কবর থেকে কয়েকহাত দুরে গিয়ে পড়লো। এদিকে পাপন থর থর করে কাঁপতে লাগলো।

দেবকী চিৎকার দিয়ে বলল,

—” সন্তানের বিপদে মা কি চুপ করে বসে থাকতে পারে! আগেরবার আমি অক্ষম ছিলাম তাই কিছু করতে পারিনি। কিন্ত, এবার ওকে ছুয়ে দেখা।”

[] চলবে……..[]

বিদ্রঃ রিভাইজ দেওয়া হয়নি। ভুলক্রুটি মার্জনা করে পড়ে নিবেন সবাই।

সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/10/sidur-suddhi-20/

আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha

চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন: https://www.facebook.com/groups/nafisarkolom

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here