#তোর_শহরে_ভালোবাসা 💜
পর্ব-১৫
ফাবিহা নওশীন
🌺🌺
ছাড়ুন,,, আম্মু-আব্বু।হু হু!!
ডাকো যাকে ইচ্ছে ডাকো।আমি তোমাকে ছাড়ছিনা।কি বলেছিলে আমি জিরাফ?রোমান্স ছাড়া আর কিছু পারিনা??
সামান্তা আদির সাথে দৌড়ে পারেনি।ছাদে উঠার সিড়ির কাছে যেতেই পিছনে থেকে ধরে ফেলে।এখন নিজের সাথে মিশিয়ে পিছনে থেকে দু’হাতে সামান্তার পেট চেপে ধরে রেখেছে।সামান্তা ছুটার চেষ্টা করছে আর আম্মু আব্বু করছে,,,।
আদি এবার সামুর গলায় হালকা করে ঠোঁট ছুয়াচ্ছে।আর সামান্তা দু’হাতে ওকে সরানোর চেষ্টা করছে।
সামান্তা না পেরে বললো,
–এভাবে জোর জবরদস্তি রোমান্স করাকে কি বলে জানেন?
আদি মুখ তুলে মনোযোগের ভান করে বললো,
–কি বলে জান?
–লুচ্চামি!!
–ছি,,ছি,,এভাবে বলে না।একে লুচ্চামি না বরের আদর বলে।
তারপর আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
–ছাড়ুন,,কেউ দেখবে,,
সামান্তা আদির হাত টেনে জোরে একটা কামড় দিলো।আদি আহ করে ছাড়তেই সামু এক দৌড়ে নিচে চলে আসে।আদিও পিছনে আসে।
–দাড়াও,,তোমার চুল ছিড়ে ফেলবো।
–আমার চুল ছিড়ার শখ নেই।
সামু গিয়ে আদির মায়ের পিছনে গিয়ে লুকালো।
–মা দেখুন আপনার ছেলে আমার চুল ছিড়তে এসেছে।
আদির মা রেগে গিয়ে আদিকে বললো,
–কিরে আদি,,তুই ওর চুল ছিড়তে এসেছিস তোর সাহস তো কম না।যা এখান থেকে নয়তো তোর সব চুল ছিড়ে নিবো।
–মা জানো ও কি করেছে?
আদির মা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
–কি করেছে?
–ও,,,(হায় আল্লাহ আমি কি ওর মতো পাগল হয়ে গেছি)কিছুনা।
সামু মুচকি মুচকি হাসছে।আদি সামুর দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে।
আদি মনে মনে বলছে এর শোধ পরে নিবো।
আদি নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।নিশির কি হলো জানতে হবে।ও কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা জানতে হবে।
আদি চলে যাওয়ার পর আদির মা জিজ্ঞেস করে,
–কি করেছিস সামু?
–কিছুইনা,,কিছু করলে তো বলতোই।হুদাই আমার চুলের পিছনে পড়েছে।
দূর থেকে সামুর মা সবটা দেখছিলো আর ভাবছে মেয়েটা আমার অনেক ভাগ্যবতী।এত ভালো শাশুড়ি পেয়েছে,,আদিও ভালো।সামুর মতোই বাচ্চামো করে।সামুকে ভালোবাসে খুব।
.
.
.
.
জয় রাতে বাড়িতে ফিরতেই জয়ের বাবা এগিয়ে এসে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো,
–সারাদিন কোথায় ছিলে?তোমার ফোন বন্ধ কেন?তোমার হসপিটালে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু যাওনি কোথায় ছিলে?
–নিশিতাদের বাসায়,,
–হুয়াট!!তুমি হসপিটালে না গিয়ে নিশিতাদের বাড়িতে,,,জয় তোমার ভাই রাজ হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।তোমার চাচার অবস্থাটা বুঝা উচিত।আমাদের এখন ওদের পাশে থাকা উচিত আর তা না করে তুমি নিশিতাদের বাসায় ছিলে।
–হুম ছিলাম।রাজের যা খুশি হোক আই ডোন্ট কেয়ার।ওর মতো মানুষের বেচে থাকা উচিত নয়।
–জয়,,রাজ তোমার ভাই,,,
–ভাই কিসের ভাই?ও আমার ভাই না,,ওর আমার ভাই হওয়ার যোগ্যতা নেই।ও যা করেছে তাতে,,,
–কি করেছে,,হাহ,,কি করেছে রাজ?অসুস্থ একটা মানুষকে নিয়ে এসব বলতে বাধলোনা।
–না বাধলো না।আমি নিতান্তই বিবেক বর্জিত মানুষ নই,আমার শিক্ষা এতটা খারাপ নয় তাই আমি ওর মৃত্যু কামনা করতে পারছিনা।তবে ও যা করেছে তার শাস্তি ওকে পেতেই হবে।আগে হাসপাতাল থেকে ফিরুক।
–জয়,,কি বলছিস,,আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা।ওরা তোকে কি বুঝিয়েছে জানিনা।
–ওরা আমাকে কি বুঝাবে,,আমি কি বাচ্চা ছেলে যে যা বুঝাবে তাই বুঝে নিবো।আমি সবকিছু নিজের চোখে দেখেছি,নিজের কানে শুনেছি।
–কি করেছে?
–ও একজনের স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য অন্য একজনের স্ত্রীর ভিডিও বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে।
জয়ের গলা ধরে আসছে কথাগুলো বলার সময়।
রাজ আমাদের এনগেজমেন্টের দিন নিশির ভাবিকে দেখে পছন্দ করে কিন্তু রাজ জানতো না ওনি নিশির ভাবি,আমিও জানতাম না কারণ এর আগে আমি দেখিনি ওর ভাবীকে।রাজ আমাকে জানায় ওর একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে আমি যেন নিশির সাথে এ নিয়ে কথা বলি।নিশির সাথে কথা বলে জানতে পারি ওনি ওর ভাবি।তারপর রাজকে জানাই ভেবেছি রাজ এসব ভুলে যাবে।কিন্তু না রাজ ভাবীর পিছনে পড়ে থাকে।ওনার নাম্বার কালেক্ট করে ফোন করতো।ভাবি বিরক্ত হতো কিন্তু ননদের হবু শ্বশুর বাড়ির লোক তাই কিছু না বলতে পেরে নাম্বার বদলে দেয় তখন ভার্সিটিতে পিছু করতো।ভাবী বাসায় কিছু জানাতে পারেনি আদির ভয়ে।আদি হাই টেম্পার হয়ে থাকে কখন কি করে ফেলে।
তারপর,,
কিছুক্ষণ থেমে বললো,, তোমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে নিশি আসে।আর রাজ ইচ্ছে করেই নিশিকে ট্রাপে ফেলে।ওর উপর এত পরিমাণে ড্রিংকস ফেলে যে বাধ্য হয়েই ওকে চেঞ্জ করতে হয় আর সেই ওয়াশরুমে রাজ হিডেন ক্যামেরা সেট করে।আর সে ভিডিও দিয়ে ভাবিকে ব্ল্যাকমেইল করে।
–কিহ!!!
–হ্যা,বাবা।হ্যা।বলছিলে না ভাই,,,আমার ভাই আমার বউয়ের সম্মান নিয়ে খেলেছে।নিজের ভাবীর সম্মান। নিজের বাড়ির সম্মান।ওর ভাইয়ের হলুদের দিন ভিডিও পাঠিয়ে ভাবিকে ব্ল্যাকমেইল করে।এমনকি তার পিছনে লোক লাগিয়ে দেয়।হুমকি দেয় এটা বলে যে রাজের সাথে দেখা না করলে ভিডিও লিক করে দেবে।কাউকে বলার চেষ্টা করলেও ভিডিও লিক করে দেবে। তুমি বলেছিলে না ভাবীর চরিত্র খারাপ রাজের সাথে নোংরামি করতে গিয়েছিলো?
না সে তো নিশিকে বাচাতে প্রুভ কালেক্ট করতে গিয়েছিলো আর নিজের সেইফটির জন্য আদিকে ক্লু দিয়ে গিয়েছে।
প্রুভ কালেক্ট করার পর আদি ভাবিকে সেফ করে।আদি সবটা জেনে প্রচুর রেগে যায়।যাবেই তো আমারো একটা বোন আছে কেউ যদি ওর সাথে এমন করতো আমি কি করতাম বাবা?
–জয়ের বাবা চুপ।তিনি ভাবতে পারছেন না রাজ এতটা নিচ।
–ও আরো অনেক মেয়ের জীবন নিয়ে খেলেছে।সব প্রুভ আদির কাছে আছে।ওরা পুলিশ কমপ্লেইন করবে।আর আমিও ওদের সাথে আছি।রাজ সুস্থ হলে জেলে থাকবে।
নিশি আজই এসব জেনেছে আর ভেঙে পড়েছে।আমার ওর পাশে থাকা বেশি জরুরি ছিলো ওই কালপিটের সাথে নয়।
রাজের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।ও আজ থেকে আমার কেউনা।যে আমার সম্মানে হাত দেয় সে আমার ভাই হতে পারেনা।নেভার।এখন তুমি রাজেএ সাপোর্ট করবে না নিজের ছেলে আর ছেলের বউয়ের সাপোর্ট করবে ডিসিশন ইস ইউস।গুড নাইট।
জয়ের বাবা নির্বিকার।তার ভাইয়ের ছেলে এমন বিগড়ে গিয়েছে সেটা তিনি জানতেন ই না।অবশ্যই অন্যায়ের সাথ তিনি দিবেন না।জয়ের সাপোর্টার তিনি।
চৌধুরী বাড়ির ডিনার টেবিল-
সবাই একসাথে খেতে বসেছে।খাবার মুখে তুলতে তুলতে আদি বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,
–বাবা কি ব্যবস্থা নিলে?
–তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা।আমার কমিশনারের সাথে কথা হয়েছে,,,সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।হ্যারেজমেন্টের জন্য কেইস করা হবে।সব প্রুফের কপি পাঠানো হয়েছে।রাজ সুস্থ হলেই জেলে থাকবে ইনশাআল্লাহ।তুমি তোমার বিয়েতে ধ্যান দেও।
আদির মা বললো, হুম,,এবার যেনো আর কোনো সমস্যা না হয়।ভালোয় ভালোয় আগামীকাল হলুদ,তারপর বিয়েটা হয়ে গেলেই হয়।
আদি সামুর দিকে চেয়ে বললো,, মা তুমি এত চিন্তা করোনা তো,,সব ঠিক হবে এবার।আমাদের লাইফের ভিলেনকে সামু ধরাসাই করে দিয়েছে।
সামান্তা ভিষণ লজ্জা পাচ্ছে।সবাই হোহো করে হেসে দিলো।
🌷🌷
পরেরদিন সন্ধ্যা–
সামুকে কাচি হলুদরঙ, সবুজ রঙের পাড়ের শাড়ি পড়ানো হয়েছে।ফুলের গয়না,ভারী মেকাপে সামুকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।সামুর হলুদ রং একদম পছন্দ নয় তবে সবার জোরাজোরিতে পড়েছে।হলুদের দিন নাকি হলুদ না পড়লে গায়ে হলুদ হলুদ ফিল আসেনা।সামুর তো নিজেকে সরিষা ক্ষেত ফিল হচ্ছে।
আদি হালকা বাদামী রংয়ের পাঞ্জাবি পড়েছে।সামনের দুটো বোতাম খোলা,হাতে ব্যান্ডের ঘড়ি,,চুলগুলো স্পাইক করা।
সামান্তা রুম থেকে বের হতেই আদিকে দেখে পুরাই ক্রাশ।আদির দিকে হা করে চেয়ে আছে।তা দেখে আদি বলে,,
–খেয়ে ফেলবে নাকি এমন হা করে আছো কেন মিস.সরিষা ক্ষেত?
আদির কথায় সামু কিছুটা লজ্জা পেলেও রাগটাই বেশি হলো।এত সুন্দর করে সেজেছে কই ভালো কমপ্লিমেন্ট দিবে তা নয় হলুদ পড়ায় সরিষা ক্ষেত উপাধি দিয়ে দিলো।আদির মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে।ওর কথা ওকেই ফিরিয়ে দিলো।
সামান্তা নাক ফুলিয়ে কিছু না বলেই হাটা দিলো।কয়েকপা এগুতেই ঘাড়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলো।হাত দিয়ে দেখলো হলুদ।পিছু ফিরতেই দেখে আদি দাত কেলিয়ে হাসছে।
সামু ভ্রু নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হলো?
–হলুদ দিলাম,,আমার বউকে আমিই আগে হলুদ ছোয়ালাম।
সামু মনে মনে বলছে,,
আমাকে ইনসাল্ট করে হলুদ লাগানো হচ্ছে।
মুখ ভেংচি কেটে হাটা ধরলো।আদি বুঝতে পারলো না সামু এমন কেন করলো,, বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
নিশিও শাড়ী পড়ে সেজেগুজে হাজির।তখনই জয় ও তার ফ্যামিলি হাজির।জয়ের ফ্যামিলিকে দেখে নিশি উচ্ছ্বসিত।হিয়ের ফ্যামিলিকে এখানে আসা করে নি।নিশি এগিয়ে গিয়ে সবাইকে অভ্যর্থনা জানালো।তারপর জয়ের দিকে তাকাতেই জয় ইশারায় সব ওকে জানালো।
নিশি চলো ওদের সাথে আমরাও বিয়েটা করে ফেলি,,
জয় বাকা হেসে নিশিকে বললো।
নিশি ভ্রু কুচকে বললো,
–মাথা ঠিক আছে?
–এত সুন্দর করে সেজেগুজে সামনে দাড়িয়ে থাকতে কোন ছেলের মাথা ঠিক থাকে।
নিশি জয়ের মাথায় গাট্টি মেরে বললো,
–১বছর ওয়েট করো।তার আগে এসব ভুলেও বলোনা।
সামান্তা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।তখনই ওর ফোনে টুং করে একটা মেসেজ এলো।আদির মেসেজ,,
“তোমাকে এত্ত সুন্দর লাগছে আমি চোখ ফিরাতে পারছিনা।হলুদরঙ তুমি এত অপছন্দ করো কেন?তোমাকে হলুদে ভিষণ ভালো লাগে।একদম হলুদ পরী।লাভিউ উম্মাহ”
মেসেজটি দেখে সামান্তার মুখে হাসি ফুটে।
মুচকি মুচকি হাসছে।আদি সেটা দেখে নিজেও হাসে।
কিছুক্ষণ পর রাজের বাবা আসে।এসেই আদির বাবাকে বলে,
আমার ছেলের এমন একটা অবস্থা করে আপনারা আনন্দ উৎসব করছেন?রাজ কোমায় চলে গেছে।আপনারা আবার ওর নামে কেস করেছেন?
আদি উঠে এসে বললো,
–আপনার কি মনে হয় আমরা আপনার ছেলের জন্য শোক পালন করবো?ওর কপাল ভালো ও কোমায় চলে গেছে।এসি রুমে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকবে।নয়তো জেলে পচে মরতে হতো।আপনি কোন মুখে এসব বলতে এসেছেন?আপনার ছেলে এমন একটা কাজ করেছে আপনার লজ্জা হওয়া উচিৎ।
তিনি আমতা আমতা করে বলল,
–তোমরা কেসটা তুলে নেও।প্লিজ।
নিশি এগিয়ে এসে বলল,সরি আংকেল।কে কি করবে জানি না কিন্তু আমি এটা কক্ষনো হতে দেবো না।আমি আপনার মেয়ে হলে কি করতেন?কিংবা আপনার মেয়ের সাথে এমন হলে কি করতেন?আমি ওর শাস্তি চাই।
রাজের বাবার আর কিছু বলার নেই।তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে গেলো।
চলবে,,,