#তোর_শহরে_ভালোবাসা 💜
পর্ব-১৭
ফাবিহা নওশীন
🌿🌿
‘সামু চেঞ্জ করে শাড়ি পড়ে নিস।বিয়ের প্রথম দিন আর বাড়ি ভর্তি মেহমান আছে।তাই চেঞ্জ করে একটা শাড়ি পড়ে নিস”
নাস্তার টেবিলে সামুর মা সামুকে বললো।
সামু খেতে খেতে বললো,
আচ্ছা আম্মু।
সামু খাওয়া শেষ করে নিশির কাছে শাড়ি নিয়ে যায়।নিশি ওকে গুছিয়ে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।সাথে হালকা করে সেজে নেয়।নিজেকে আয়নায় বারবার দেখছে।একদম বউ বউ লাগছে।
মনে মনে ভাবছে,
এভাবে আদির সামনে গেলে আদি আর রাগ করে থাকতে পারবে না।
সামান্তা আর নিশি লিভিং রুমে বসে গল্প করছে তখনই নিশি সামুকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
–দেখ নিষ্টুরনি,,,আমার ভাইয়ের কি অবস্থা করেছিস?একদিনেই মুখ শুকিয়ে গেছে।
সামু সেদিকে চেয়ে দেখে আদি চোখ ডলতে ডলতে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে।মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে।যেন সদ্য ছেকা খেয়েছে।কোনোদিন না চেয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলের গিয়ে বসে পড়লো।মাথা নিচু করে চুপচাপ খাচ্ছে।সামু আর নিশি দুজনেই ওকে পরখ করছে।
আদি খাওয়া শেষ করে সিড়ি দিয়ে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে।
নিশি সামুকে ধাক্কা মেরে বললো,
তাড়াতাড়ি যা,,আবহাওয়া ভালো ঠেকছেনা।
সামু কাদো কাদো হয়ে বললো,
–আপু এই আবহাওয়ায় আমাকে পাঠাতে চাও,,?তোমার কি দয়ামায়া নেই এই বাচ্চা মেয়েটার প্রতি।
–তোকে খেয়ে ফেলবে না,,,
সামু ভেংচি কেটে রুমের দিকে পা বাড়ালো।আদি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলে ব্রাশ করছে।সামান্তা পিছনে গিয়ে গলা খাকারি দিলো।আদি দেখেও দেখলোনা।ফোন নিয়ে সোফায় বসে পড়ল।সামান্তা পাত্তা না পেয়ে ওর পাশে গিয়ে বসে আবারো গলা খাকাড়ি দিলো।
আদি বিরক্ত হয়ে ফোন থেকে মুখ তুলে ভ্রু কুচকে বললো,
–কি চাই,,
–আমাকে দেখে কি তোমার ভিক্ষুক মনে হচ্ছে,, যে বলছো কি চাই?
আদি কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে বারান্দায় পা বাড়ালো।সামুও পিছু পিছু হাটা ধরলো।আদি আবার রুমে চলে এলো।সামু পিছনে থেকে মজা করে বললো,
–রাগ করেছো গো সোয়ামী??
আদি চমকে সামুর দিকে চেয়ে বললো,
–ছি,,এইগুলা কি ধরনের ল্যাংগুয়েজ সামু?
–আমার সাথে কথা না বললে আমি এমন ভাষাই এপ্লাই করবো?
–তোমার সাথে কথা বলবোনা।গতকাল রাতে কি করেছো ভুলে যাইনি,,,আমাকে দিয়ে খাটিয়ে নাক ডেকে ঘুমিয়েছো।
সামু দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে তারপর বললো,
–সেজন্যই তো সরি বলতে এসেছি।প্লিজ একসেপ্ট মাই সরি।
–নট একসেপ্টেড,তুমি সরি বললেই কি আমার ওয়েডিং ফার্স্ট নাইট ফিরে আসবে?
সামু অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বললো,, না,,
তারপর মাথা উচু করে টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
–তবে একটা কাজ করতে পারি,,চলুন আবার বিয়ে করি।হিহি,,,
আদির সামুর কথা শুনে প্রচুর হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসি চেপে ওর দিকে তাকাতেই নাক ফুলটা চোখে পড়ে।সামুর নাকে নাক ফুলটা জ্বলজ্বল করছে।নাক ফুলটা ওর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।আদি সামান্তার নাকে হাত দিয়ে বললো,
–নাক ফুলটা তো তোমাকে দারুণ মানিয়েছে।
সামান্তা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
–আর শাড়িতে?
আদি এতক্ষণে সামুকে খেয়াল করলো।কিছুটা দূরে গিয়ে সামুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলালো।
সামু মিষ্টি কালার শাড়ি পড়েছে,নাকে ওর দেওয়া নাকফুল,গলায় প্লাটিনামের চেইন,,হাতে রিং আর দুহাতে দুটো চিকন সোনার চুড়ি,,চুলগুলো বেনি করে একপাশে রাখা।চোখে হালকা শেডের সাথে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দেওয়া।একদম সদ্যবিবাহিত নারী।
সামুকে ভালোভাবে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
— তোমায় একদম হট লাগছে।
সামুর মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।
–কি জঘন্য কমপ্লিমেন্ট,,,
আদি বাকা হেসে সামুকএ জড়িয়ে ধরল।
তখনই দরজায় নক করলো কেউ।কিন্তু সেদিকে আদির খেয়াল নেই।সামু দরজায় নক শুনে আদিকে দু’হাতে সরিয়ে নিলো।
আদি সামুর দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো।
–দরজায় কেউ নক করছে,,
আদি বিরক্ত হয়ে উঠে দরজা খোলে দিলো।সাভেন্ট বললো,
–স্যার,আপনার দুজন বন্ধু এসেছে।
–আচ্ছা,বসতে বলো আসছি।
আদি বিরক্তি নিয়ে সামুর দিকে চেয়ে বললো,
–শেষে বন্ধুরা আমার রোমান্সে ভিলেন হলো।
সামু মুচকি মুচকি হাসছে।তারপর বললো,
–কি সুইট আপনার বন্ধুরা,,, একদম সময় মত এসে প্টেছে।
সামু নিচে নেমে দুজন সুদর্শন ছেলেকে লিভিং রুমে বসে থাকতে দেখলো।তারা নিজেদের মতো করে কথা বলছে।সেদিকে সামুর আগ্রহ নেই।সামু সামিরের রুমে গেলো।বেচারা একা একা বোর হচ্ছে ভিষণ তাই সামু ভাইয়ের সাথে সময় কাটাবে।
সামিরের সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে।মিনিট ২০পর সামুর ফোনে টুং শব্দে একটা মেসেজ এসেছে।আদির মেসেজ।
“সামু,বাইরে যাচ্ছি,কখন ফিরবো ঠিক নেই।”
সামান্তা মেসেজ পড়ে মুচকি হাসে।আর ভাবছে যাক অন্তত যাওয়ার আগে বলে তো যায়।সামু দুপুরে লাঞ্চ করে সার্ভেন্টকে দিয়ে নিচের গেস্ট রুম থেকে নিজের জিনিসপত্র,জামাকাপড়, বইপত্র সবকিছু উপরে আদির রুমে পাঠায়।রুমে গিয়ে পুরো রুমে চোখ বুলায়।
এখন থেকে এটা আমার ঘর।অবশেষে আমি এই ঘরের অধিকার পেয়েছি।
তারপর সবকিছু নিজের পছন্দ মতো গুছিয়ে নেয়।নিজের জামাকাপড়, বইপত্র সবকিছু গুছাতে গুছাতে বিকেল হয়ে যায়।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা আদির আসার নাম নেই।সামান্তা ভাবছে,
–আদিকে এবার এই বন্ধুদের আড্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে।বন্ধুদের পেলে সারা দুনিয়া ভুলে যায়।বন্ধু ছাড়া জীবন চলেনা কিন্তু সব ফেলে সারাদিন তাদের লেজ ধরে বসে থাকলে তো চলবেনা।নিজের পার্সোনাল একটা লাইফ আছে,ফ্যামিলি,রেসপনসেবলিটি আছে সেগুলো তো পালন করতে হবে।বিয়ে হয়েছে সংসার হয়েছে এখন একটু পরিবর্তন হতে হবে।মাঝরাতে বাড়ি ফিরা,দুপুর পর্যন্ত ঘুমানো,,তারপর বন্ধুদের আড্ডা,ক্লাব,পার্টি এসব আর চলবেনা তবে তাড়াহুড়ো নয়,সবকিছু ধীরে ধীরে করতে হবে।
সন্ধ্যায় নাস্তা করে বন্ধুদের কাছ থেকে ক্লাসের পড়া জেনে নিয়েছে সামান্তা।বিয়ের জন্য ভার্সিটি যাওয়া হয়নি কতদিন।ওকে যে সবদিক দিয়ে পার্ফেক্ট হতে হবে।তাই পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে।বইপত্র নিয়ে পড়তে বসে গেলো।পড়া শেষ করে শাড়ি চেঞ্জ করে সালোয়ার কামিজ পরে১০টা নাগাদ নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখে আদি চলে এসেছে,,সামিরের সাথে কথা বলছে।সামু আদির পাশে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলো,
–কখন এলে?
–এইতো কিছুক্ষণ আগে।
–ওহহ,,যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।
আদি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
ডিনার শেষে সামু রুমে গিয়ে দেখে আদি নেই।ফ্রেশ হয়ে এসে আদিকে খোজে কিন্তু আদি ঘরে নেই।সামান্তা বারান্দায় গিয়ে দেখে আদি রকিং চেয়ারে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আদিকে এই সময় এভাবে ঘুমাতে দেখে অবাক হয়ে যায়।যে ছেলে রাত ২-৩টা ঘুমায় সে রাত ১২টায় এমন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।সামান্তা আদির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে ডাকে,,
–আদি,,,
নো সাড়াশব্দ।
আবার ডাকে একটু জোরে,,
–আদি,,
–হু(ঘুম ঘুম চোখে)
–এখানে এভাবে ঘুমাচ্ছো কেন?বেডে গিয়ে ঘুমাও,,।
–উহু,,
–কেন?
–উহু,,
–কি জ্বালা শুধু উহু উহু করছে।উঠো বলছি নয়তো পানি ঢেলে দিবো।
আদি ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে চোখ মেলে সামুকে নিজের কোলে বসিয়ে,পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে, ওর পিঠে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
–এত ঘুম কেন?
–কালকে সারারাত ঘুমাইনি।শোক পালন করেছি।তুমি তো আরামসে নাক ডেকে ঘুমিয়েছো।
–হিহি,,
আদি আরো জোরে ঝাপটে ধরে মাথা রাখলো।
তা দেখে সামান্তা বললো,
–আদি আমাকে কি তোমার বালিশ মনে হচ্ছে?
–হু,,তোমার পিঠ বালিশের মতো সফট।পাথরের মতো শক্ত নয়।
আদির কথা শুনে সামু উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।হাসির শব্দে আদির চোখের ঘুম উবে গেলো।হাসির ঝংকার ওর কানে বাজছে।সামুকে এভাবে প্রাণ খোলে কখনো হাসতে দেখেনি।আদি মাথা তুলে সামুর পিঠে নাক ঘষে বললো,
তুমি হাসতেও জানো?তোমাকে এর আগে এভাবে হাসতে দেখিনি?প্রাণ খোলা উচ্ছল হাসি।
সামু আদির কোল থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,
–এভাবে হাসতে দেখোনি,এবার থেকে দেখবে।মাত্র তো শুরু,,,অনেক কিছু বাকি আছে দেখার,,।
আদি উঠে দাড়িয়ে বাকা হেসে বললো,
–ইউ আর রাইট,, অনেক কিছু এখনো বাকি,,
আদির কথার মানে সামুর ব্রেইন এখনো ধরতে পারেনি।ব্রেইন ধরতেই দেখে আদি ওর দিকে এগিয়ে আসছে।
সামান্তা আমতা আমতা করে বলল,,
–না মানে,,,আমি আসলে বলছিলাম,,
আদি সামান্তাকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ওর গালে নাক দিয়ে স্লাইড করতে করতে মাতাল করা কন্ঠে ফিসফিস করে বললো,
–কি বলছিলে,,?
সামান্তার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা।সব কথা গলায় এসে আটকে যাচ্ছে।
আদি সামান্তাকে কোলে তুলে নিলো।সামান্তা আদির শার্ট খামচে ধরে ওর বুকে মুখ লুকালো।ধীর পায়ে রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে নিজের ভর ওর উপর ছেড়ে দিয়ে চোখে,ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ালো,,,।
❤ ❤ ❤ ❤
❤ ❤ ❤
❤ ❤
❤
ঘুম ভেঙে সামু নিজেকে আদির বুকে আবিষ্কার করে।ঘুমঘুম চোখে আদির দিকে তাকাতেই হার্ট এটাক হওয়ার অবস্থা।আদি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে।আদিকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
–এত সকালে ঘুম ভেঙে গেলো কিভাবে?
–ঘুমাইনি।সারারাত জেগে জেগে তোমাকে দেখেছি।
–মিথ্যুক,,ঘুমের রাজ্যের রাজা না ঘুমিয়ে আমাকে দেখবে,,,?
–হুম,,
বলেই সামুর কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।সামু আদিকে ছাড়িয়ে উঠতে গিয়ে আবার শুয়ে পরলো।তারপর আদির দিকে অসহায় ভাবে তাকালো।
আদি বাকা হেসে বললো,
–কি হলো জান যেতে ইচ্ছে করছে না?আমার কাছে আরো থাকতে ইচ্ছে করছে?
সামু মুখ ইনোসেন্ট করে বললো,
–তুমি চোখ বন্ধ কর।
–কেন?
–বন্ধ করো।
–উহু,,
সামু কাদো কাদো হয়ে বললো,
–প্লিজ,,
আচ্ছা,,আদি চোখ বন্ধ করলো।সামু আদির মুখের উপর চাদর দিয়ে নিজের জামাকাপড় ঠিক করে এক দৌড়ে ওয়াশরুম।
আদি চাদর সরিয়ে হেসে দিলো।তারপর মনে মনে বলছে,
–আজ অনেক শান্তি লাগছে।অবশেষে তোমাকে নিজের করেই ফেললাম।বলেছিলাম না তোমাকে হাসিল করেই ছাড়বো।করে ফেলেছি।
সামান্তা শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো।ওর আজ নিজেকে পরিপূর্ণ লাগছে।
সামান্তা শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঝাড়ছে।আদি পিছনে থেকে এসে সামুকে জড়িয়ে ধরে গলায় নাক ঘষছে।
–আদি ছাড়ো,,ফ্রেশ হয়ে নেও।
–উহু,,
সামান্তা জোর করে আদিকে সরিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো।
আদি ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে।আদিকে ভেজা চুলে এভাবে বের হতে দেখে সামান্তা অপলক তাকিয়ে আছে।আদি কাছে এসে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
–কি দেখো বউ?
–কিছুনা,,তাড়াতাড়ি নিচে এসো।
–নিচে গিয়ে কি করবো?
–সবার সাথে নাস্তা করবে।
আদি সামান্তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–আমার তো শুধু তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে।
সামান্তা নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
–দেখাদেখিতে পেট ভরবেনা।রেডি হয়ে নিচে আসুন।
সামান্তা চলে গেল। আদি বিরবির করে বললো,বউটা এতো আনরোমান্টিক কেন?
চলবে….