#তোর_শহরে_ভালোবাসা💜
পর্ব-১৮
ফাবিহা নওশীন
🍂🍂
সামুর পিছনে আদি হাতা ফোল্ড করতে করতে সিড়ি দিয়ে নামছে।তা দেখে নিশি হা হয়ে আছে।দুজন নামতেই নিশি কিছু একটা খোজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।সোফার সামনে পিছনে, নিচে,উপরে,সেন্টার টেবিলের উপরে,নিচে খোজছে।তা দেখে সামু জিজ্ঞেস করলো,
–আপু কি খোজ?
নিশি কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে বললো,
–চশমা খোজি,,ইদানীং মনে হচ্ছে একটু বেশি দেখি।
সামু অবাক হয়ে বললো,বেশি মানে?
–কি আর বলবো দুঃখের কথা,,ইদানীং যা চোখের সামনে না থাকে তাও দেখি।যেমন দেখ আমার মনে হচ্ছে তোর পিছনে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে তাও ভাইয়ার মতো চেহেরা,,কিন্তু তোর পিছনে তো কেউ নেই তাইনা,,এত সকাল সকাল কি ভাইয়া উঠে বল?
সামু আর আদি এবার আসল কাহিনী বুঝতে পারলো।সামু মুখে হাত চেপে হাসছে।আদি এসে নিশির চুল ধরে টান দিলো।তারপর বললো,
–মজা করা হচ্ছে না?তোর চুল ছিড়ে কাকের বাসায় দিয়ে আসবো।
নিশি চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
–সে না হয় দিস,,কিন্তু এখন ছাড়,,একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে,,
–কি কাজ?
–সূর্য্যি মামাকে দেখবো?
আদি চুল ছেড়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,,
–কেন?সূর্যকে দেখার এত তাড়া কেন?
–আরে দেখতে হবে না সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে,,যে আমার ভাই সকাল সকাল লিভিং রুমে হাজির,,
–তবে রে,,!!
নিশি দৌড় দিলো ভাইয়ের মার খাওয়ার আগে।সামু হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।তা দেখে আদি বলছে,
–হাসলে কি পেট ভরবে?পেট ভরার জন্য খেতে হবে,,
–হুম,,
সামু বুঝতে পারলো আদি ওর কথা ওকেই শুনাচ্ছে।কিন্তু হাসি চেপে রাখতে পারছেনা।মুখে হাত দিয়ে আটকে রেখেছে।তা দেখে আদি বললো,
–ভালোভাবেই হাসো,,নয়তো হাসি আটকে রাখার ক্রাইমে মরে যাবে।
সামান্তা হাত সরিয়ে জোরে জোরে হেসে দিলো।আদি মুখ ফুলিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো।সামু হাসতে হাসতে নিশির কাছে গেলো।দূর থেকে বড়রা ওদের কান্ড দেখে হেসে যাচ্ছে।আদির মা বললো,
–আমার পরিবারের খুশিতে যেন কারো নজর না লাগে।দোয়া করি এভাবেই খুশি থাকুক সবাই।
নাস্তা শেষে সামু মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।
–আম্মু আর কিছুদিন থেকে গেলে হয়না?
–মেয়ের শ্বশুর বাড়ি কতদিন থাকবো?
–কি বললে এটা তুমি?
–আরে মজা করলাম রাগ করিস কেন?কতদিন ধরে এসেছি।সামিরের স্কুল আছে।জানিসই তো তোর ভাই তোর চেয়ে বড় ফাকিবাজ।পড়াশোনা নষ্ট হচ্ছে অন্য সময় আবার আসবো।তোর সময় হলে তুই আদিকে নিয়ে ঘুরে আসিস।
আর শোন,,আহনাফ ভাই আর ভাবি খুব ভালো মানুষ।তোকে খুব ভালোবাসে।অনেক কপাল করে এমন শ্বশুর শাশুড়ী পেয়েছিস।সবসময় তাদের মেনে চলবি।সব কথা শুনবি।খেয়াল রাখবি।সম্মান করবি।যত কষ্ট হোক না কেন নিজের আগে পরিবার এটা মনে রাখবি।নিশিও তোকে খুব ভালোবাসে।ওর খেয়াল রাখবি।কষ্ট পায় এমন কিছু করবিনা।আর হ্যা,,লাস্ট টাইম যা করেছিস,,এমন কাজ কাউকে না জানিয়ে করবিনা।ভাগ্য ভালো ছিলো তাই বেচে গেছিস কিন্তু সবসময় কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়না।বুঝলি,,কোনো কিছু করার আগে আদিকে জানাবি।
আর হ্যা,সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আদিকে নিয়ে।ও তোর হাসব্যান্ড।সবকিছুতে ওর প্রায়োরিটি আগে দিবি।ওর বয়স কম,ম্যাচুরিটির অভাব আছে।কিছুটা বাচ্চামি স্বভাবের।বয়সের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।ওর দিকে খেয়াল রাখবি।ছেলেটা তোকে খুব ভালো বাসে।শুনেছি অনেক রাগী, জেদি।যখন রাগারাগি করবে তখন মুখে মুখে তর্ক করবিনা।দুজন রেগে গেলে চলবেনা একজনকে অন্তত ঠান্ডা থাকতে হবে।তাই যখন রেগে যাবে চুপ থাকবি।পরে বুঝিয়ে বলবি।ওর সব কথা মেনে চলবি।ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখবি।স্বামীকে খুশি রাখতে না পারলে নারীর জীবন বৃথা।সংসারে স্বামীর অবস্থান প্রথমে। বুঝেছিস?
–হুম।(এতো টিপিক্যাল কেন তুমি।মাথা ঘুরছে এসব শুনে)
সামু নিশির রুমের পাশ দিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতেই নিশি হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এলো।তারপর সামুকে ধরে গান গাইছে,,
আগার তুম মিল যায়ে জামানা ছোর দেংগে হাম,,
–সকাল সকাল পাগল হয়েছো?
–ওই পাগল হবো কেন হা?খুশিতে তো তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস,,
–মানে,,
—
তোর ফেইস দেখেই সবাই সব বুঝতে পারবে।এতো গ্লো করছো কেন গো ভাবি?
[ভ্রু নাচিয়ে ]
–তুমি নিশ্চয়ই গতরাতের গল্প শুনতে চাইছো?
–অবশ্যই,,,
–তাহলে চলো আমার রুমে।তোমার ভাইয়ের সামনে বসিয়ে বলবো।
–ওই,,কি বলিস।যা সর,,
–হিহি,,
সামু রুমে গিয়ে দেখে আদি ঘুমাচ্ছে।সামু আদির পাশে বসে চেক করছে আদি কি সত্যিই ঘুমাচ্ছে কিনা,,
সামু আদিকে একটা চিমটি কাটলো।কোনো হেলদোল নেই।তাই বুঝতে পারলো বেচারা ঘুমের রাজ্যের রাজা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে।উঠে যাবে তখনই আদি সামুকে টান মেরে নিজের বুকে ফেলে দিলো।সামু আদির কাছে এমন কিছু আশা করেনি।ও তো ভেবেছিলো আদি ঘুমাচ্ছে।
আদি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হু,,,চিমটি কাটা হচ্ছে?
–তুমি ঘুমাও নি?
–ঘুমাতে কই দিলে?চিমটি কাটছো কেন?
–আমি ভেবেছি ঘুমাচ্ছ?
–ওহহ আচ্ছা,আমি ঘুমিয়ে গেলেই চিমটি দেও,,
–এই না,,আমি তো চেক করছিলাম ঘুমিয়েছ কিনা?
–ঘুমালে কি করতে?ঘুমের মাঝে আমার ইজ্জত লুটে নিতে?(বাকা হেসে)
–ছিঃ ছাড়ো।
–চলো একটু রোমান্স করি,,
–সারাক্ষন একি কথা রোমান্স আর রোমান্স,,
সত্যি করে বলো তো এর আগে কার সাথে রোমান্স করেছ?
–এর আগে তো আর বিয়ে করিনি,,রোমান্স ও জাগেনি,,,রোমান্স কিভাবে করবো?
রোমান্স করতে বউ দরকার।আর এখন সুন্দর একটা বউ আছে কিন্তু বউ আমার রোমান্স ই করতে চায়না।কি কপাল আমার,,, (বাচ্চাদের মতো মুখ করে)
সামু আদির ফেস দেখে হাহা করে হেসে দিলো।
–বউ এভাবে হেসো না বুকে বড় লাগে,,
–কি লাগে বুকে,,
–তীর,,
–কোথায়?
–এই যে এইখানে (আংগুল দিয়ে দেখালো)
সামু আদির বুকে কিস করতেই আদি হা,,
আদি কিছু বলতে যাবে তখনই সামু আদির মুখ চেপে ধরলো।
–নো মোর টক।
বলেই সামু আদির বুকে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইলো।আদি মুচকি হেসে সামুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
কয়েকঘন্টা পর সামুর ঘুম ভাংলো।আদির নিশ্বাস উঠানামা করছে।তারমানে ঘুমাচ্ছে।সামু আদিকে ছাড়িয়ে উঠে গেলো।
.
.
.
বিকেলে সামুর আম্মু,আব্বু,সামির চলে যাচ্ছে।মেইন ডোরের সামনে দাড়িয়ে সামু কাদছে।সামুর আম্মু,আব্বু অনেক বুঝিয়ে সামুকে শান্ত করেছে।সামুর আব্বু আদিকে বললো,
–বাবা,তুমি ওকে দেখে রেখো।
–আংকেল চিন্তা করবেন না।আমি আছি।
.
.
.
রাতের বেলায় সামু অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।দৃষ্টি শূন্যে স্থির।না চাইতেও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।কোনো কিছুর শব্দে চোখের পানি মুছে নিলো।আদি এসে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রাখলো।
–মন খারাপ?
–হু,
–মন খারাপ করোনা আমি আছি তো,,
সামু ঘুরে আদির বুকে মাথা রাখলো।কেমন অন্য রকম প্রশান্তি পাচ্ছে।আদির শার্ট খামচে ধরে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করছে।
–তুমি আছো বলেই আমি এতটা শান্ত,,জানো যখন এখানে এসেছি প্রথম প্রথম নিজেকে প্রচন্ড একা লাগতো।মা,বাবা,নিশি আপু আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে,অনেক সাপোর্ট দিয়েছে,
আমার জন্য সবকিছু সহজ করে দিয়েছে যাতে আমি অস্বস্তিবোধ না করি।এতকিছুর মাঝেও কোথাও একটা কিন্তু থেকে যেতো।দিনশেষে একা লাগতো।খুব করে চাইতাম নিজের একজন হোক,সম্পূর্ণ নিজের।এখন যেমন তুমি আছো।নিজের একজন।আমার নির্ভরতার জায়গা।
আদি সামান্তার মুখ তুলে ধরে বললো,হুম সারাজীবন থাকবো,একে অপরের নির্ভরতা হয়ে।
দুজনের দৃষ্টি স্থির।একে অপরের চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করছে।
.
.
.
গভীর রাত সামু পরম নির্ভরতায় আদির বুকে ঘুমিয়ে আছে।আদির চোখে ঘুম নেই।আদি অপলক নয়নে চেয়ে আছে।কিছু ভাবছে।আদি সামুকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে চাদর ভালো ভাবে জড়িয়ে দিয়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে।তারপর কল ছেড়ে চোখে মুখে পানি দিচ্ছে।অস্থিরতার সাথে মুখে পানি দিচ্ছে।আয়নায় পানি পড়ে ঘোলা হয়ে গেছে।আদি হাত দিয়ে একটানে পানি মুছে ফেলে।তারপর স্থীর দৃষ্টিতে নিজেকে দেখে।তারপর বিরবির করে বলে,
–আদি,,প্রথমে সামু তোর মোহ ছিলো।তুই ওর রুপে,ওর এডিটিউটে মুগ্ধ হয়েছিলি,,ওর মোহে ডুবে ছিলি,,তারপর যখন ও তোকে পাত্তা দিতোনা তখন ও তোর জেদ ছিলো,ওকে হাসিল করার জেদ।কিন্তু এখন কি?এখন ও তোর কাছে কি?
(আয়নার প্রতিচ্ছবিকে প্রশ্ন করছে)
কিছুক্ষণ স্থীর দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
নাও আই নো,আই লাভ হার,,ইয়েস আই ডো।আদি ইউ লাভস সামু।সি’জ মাইন।আই কান্ট লিভ উইথ হার।
বলেই হাসি ফুটিয়ে শান্ত মনে সামুর কাছে গেলো।চাদরের ভিতরে ঢুকে সামুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,সামু আইম ইন লাভ উইথ ইউ।উম্মাহ।
সকালে ঘুম ভাংতেই সামু নিজের ঠোঁটে সুরসুরি অনুভব করে।আদি সামুর ঠোঁটে হাত বুলাচ্ছে।সামু পিটপিট করে চোখ মেলে আদির আংগুল দেখতে পায়।হুট করেই হা করে আদির আংগুলে কামড় দেয়।আদি আউচ করে উঠে।
সামু ভ্রু নাচিয়ে বলে,
কি?হা?ঘুমের সুযোগ নিচ্ছো?
–আমার বিয়ে করা বউ আমি যা খুশি করবো কার বাবার কি!!
–আপাতত আমার অনেক কিছু।আজকে ভার্সিটি যেতে হবে।উফফ,,সরো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সামু উঠেই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলো।আদির কেন জানি খুব খুশি লাগছে।অন্যরকম ফিলিংস।
সামু আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে।আদি ফ্রেশ হয়ে এসে সামান্তার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কোমড়ে হাত রেখে সামান্তার হাত নিজের কাধে রেখে গান গাইছে আর সামুকে নিয়ে ড্রান্স করছে।সামান্তা আচমকা ভ্যাগাচ্যাগা খেয়ে যায়।তবুও হাসি মুখে আদির সাথে তাল মিলিয়ে ড্রান্স করছে।
Mujshe dur kahi na ja…
Bas ehi kahi reh jah,,
meih teri dibani re…
apsos tujhe hein keya…
Teri meri kahani naye ban gayi
Tu mera hogaia mein teri hogayee…
–সকাল সকাল কি হলো?
এত খুশি কেন?
–,বিকজ আই এম ইন লাভ উইথ ইউ,,
–নতুন কিছুনা।সেটা অনেক আগেই বলেছো।
–না মানে এখন ভালোবাসাটা আরো বেরেছে তাই,
–আচ্ছা,
–হুম তাই আমি এতো খুশি,,
–পাগল,,
–তোমার জন্য,,
নেও এবার রেডি হও।আমি তোমাকে দিয়ে আসবো।
সামু-আদি রেডি হয়ে নাস্তা করে বেরিয়ে যায়।সামু লাল কুর্তি পড়েছে,,কানে ঝুমকো,চুলগুলো ছাড়া,হাতে চুড়ি পড়েই আছে।আদির কড়া নির্দেশ বিয়ের চিহ্নগুলো যাতে না খোলে।তাই ওর দেওয়া চেইন,নাক ফুল,আংটিগুলো ও পড়া।লেডিস সু,লেডিস ব্যগ কাধে ঝুলানো।গলায় আইডি কার্ড।নো সাজগোছ।ঠোঁটে জাস্ট একটু লিপস্টিক।
আদি কালো টি-শার্ট-প্যান্ট পড়া।টি-শার্টের উপর কোর্ট।হাতে ওয়াচ,চোখে গ্লাস।চুলগুলো স্পাইক করা।পারফেক্ট কাপল।
ভার্সিটির গেইটের সামনে গাড়ি থামাতেই সামু আদির গালে শব্দ করে একটা কিস করে কোনো দিক না চেয়ে নেমে পালালো।
আদি অবাক হয়ে নিজের গালে হাত দিয়ে বসে আছে।তারপর অস্ফুটস্বরে বলল,
–“যাক বাবা বউটা একটু রোমান্টিক হচ্ছে।”