#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ১৩
.
অসহ্য যন্ত্রনায় অভি কেঁপে উঠলো। ওর দু’চোখ দিয়ে শিশিরের মত বিন্দু বিন্দু জল ঝড়ে পড়ল। অভি শুধু একটাই কথা বলল,” You are my everything.”
এত আঘাত পাও তবুও মুখ দিয়ে এগুলো কথা বের হয় কিভাবে! কত নাম্বারের বে-লজ্জাহীন তুমি হ্যাঁ! আমার তো মনে হয়, যদি পৃথিবীতে লজ্জাহীনের কোন প্রতিযোগিতা থাকতো, তাহলে তুমি সেখানে প্রথম স্থান দখল করতে। বিদ্যা আর কাজ করলোনা। সোজা কিচেন থেকে বের হতেই রিয়াকে দেখলো চোখের সামনে। রিয়াকে দেখে বিদ্যা আরও বেশি রেগে গেল।
রিয়া বিদ্যাকে দেখতে পায়নি। রিয়া দাড়িয়ে মনযোগ দিয়ে ফোনে কাজ করছিল। এমন সময় বিদ্যা এসে রিয়ার গালে ঠাশ্ করে একটা থাপ্পড় মেরে বলল,” অভির বডিগার্ড হয়েছ? ফের যদি দেখেছি ওকে হেল্প করা তাহলে কথাটা দাদা আর বৌদির কানে যাবে। প্রথম ভূল বলে মাফ করলাম।”
রিয়া গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে রইল। বিদ্যা চলে যেতেই রিয়া দৌড়ে কিচেনে গিয়ে দেখে অভির পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। অভির রক্তে ফ্লোর মাখামাখি হয়ে গেছে। এভাবে কেউ কাউকে আঘাত করে! পিসির মনে কি দয়া-মায়া বলে কিছু নেই?
অভিদা বলেই রিয়া দৌড়ে অভির কাছে আসল। স্যরি অভিদা বলে কেঁদে উঠলো রিয়া। অভি অনেক কষ্টে ফ্লোর থেকে উঠে বলল,” রিয়া কান্না করোনা। এসব কান্না-কাটি আমার একদম পছন্দ না। আমাকে একটা কাপড় এনে দাওতো?”
রিয়া দৌড়ে বাহিরে চলে গেল। এই সুযোগে অভি অদৃশ্য হয়ে গেল। আর সাথে সাথে মেঝেতে পড়ে রাখা রক্তগুলো ভ্যানিস হয়ে গেল।
অভি রুমে এসে পা থেকে কাঁচটা তুলে পা ড্রেসিং করলো। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে। এদিকে রিয়া কাপড় নিয়ে এসে দেখে অভি কিচেনে নেই। রিয়া দৌড়ে অভির রুমে গিয়ে দেখে অভি সুয়ে আছে। রিয়া ব্যস্তস্বরে বলল,
-” অভিদা, তুমি কখন রুমে আসলা?”
-” একটু আগে। আমার কিছু ভালো লাগছেনা। কাবিরকে পাঠিয়ে দাও তো?”
কাবিরের কথা শুনে রিয়ার গলা শুখে গেল। কাবির অভিদাকে খুব ভালবাসে। কাবির যদি জানে অভিদার এই অবস্থা বিদ্যা পিসি করেছে তাহলে না জানি বিয়েটাই ভেঙ্গে দেয়। অভির দিকে মুখ কাচুমাচু করে তাকালো রিয়া।
রিয়ার মনের কথা অভি বুঝতে পেরে মুখে একটু হাসি টেনে বলল,
-” রিয়া, তুমি যা ভাবছো তার কিছুই হবেনা। তুমি শুধু কাবিরকে ডাকো। তুমি নিঃশ্চিতে থাকো, এই সম্পর্কে কাবির কিছুই জানবেনা।”
অভির কথা শুনে রিয়ার দুঃশ্চিন্তা চলে গেল। তাই রিয়া দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে কাবিরের কাছে গেল।
রিয়া চলে যেতেই অভি চোখ বন্ধ করে রইলো। অভি বিদ্যার এই কাজে একদম রাগ করেনি। অভি শুধু এটাই ভাবছে একটা মেয়ে কতটা পবিত্র হলে সে এভাবে নিজেকে প্রট্রেক্ট করে। এত বছরেও সে তার নিজের সম্মান বজায় রেখে সবার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছে। ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে এর বিপরীত হত। পড়ালেখা সহ জবের খাতিরে কত মানুষের সাথে মিশতে হয়েছে তাকে তবুও একচুল পরিমান নিজের জায়গা থেকে নিজেকে হারাতে দেয়নি। অভি কথাগুলো ভাবতেই কাবির রুমে এসে দেখল, অভির পা ড্রেসিং করা।
এই অভি তোর কি হয়েছে বলেই কাবির দ্রুত অভির কাছে যায়। এসব কি করে হল?
আর বলিসনা, কিচেনে কিছু কাজে গিয়েছিলাম সেখান থেকেই এমন দুর্ঘনা হয়েছে। বাদ দে। বাসায় যাব আজ। সব কিছু প্যাকিং করে নে।
কাবির ভ্রু কুচকে বলল,” এইনা বললি, আজ যাবিনা তাহলে কি এমন হল যে এখন যেতে চাচ্ছিস?”
অভি সোয়া থেকে কষ্ট করে উঠে বসল। তারপর বলল,” এমন কিছুই হয়নি। তুইতো বললি, শশুড়বাড়ীতে বেশিদিন থাকতে নেই। তাই তোর সংসার আমি আর ভাঙ্গতে চাচ্ছিনা। চল বাসায় যাব।”
এবার তো দেখছি, তোর পাগলামি শুরু হয়েছে! দ্বারা, তোকে তো আমি কন্ট্রোল করতে পারবোনা কিন্তু যে পারবে তাকে কল দিচ্ছি বলেই কাবির ফোনটা বের করে মিসেস. জুলিয়াকে কল দিল।
মিসেস.জুলিয়া তখন ঘুমিয়ে ছিল। ফোনের রিংটোনে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এতরাতে আবার কে কল দিল! ফোন চেক করে দেখলো, কাবির কল দিয়েছে। কল রিসিভ করেই বলল,” হ্যালো কাবির, কেমন আছো?”
-” জ্বী আন্টি ভালো আছি। কিন্তু আপনার বখাটে ছেলেকে নিয়ে আমি হয়রান হয়ে গেছি।”
মিসেস. জুলিয়া হেসে বলল,” তা কাবির, আমার বখাটে ছেলে কি করেছে?”
সেটা আর বলতে আছে, দেখেন বলেই অভির পা দেখালো কাবির। এখন বলেন আন্টি, ওকে কি করা উচিত।”
হেই অভি মাই সান, কি হয়েছে তোমার বলে মিসেস. জুলিয়া বেড থেকে উঠে পড়লো।
-” মম, আমার কিছু হয়নি। জাষ্ট একটু কেটে গেছে। আমি সব সামলে নিয়েছি।”
-” তুমি নিজেকে কতটা সামলে নিয়েছ সেটা আমি দেখেই বুঝতে পেরেছি। কেন কাবিরকে হয়রান করছো বাবা!”
অভি দাঁত খিচিয়ে কাবিরকে বলল,” শালা, তুই আমার ফ্রেন্ড না দুশমন বলতো? এই ছোট ব্যাপার নিয়ে মমকে ইনফ্রম করতে হবে? মমের চৌকিদার হয়েছিস?”
-“হেই অভি এসব কি কথাবার্তা! তুমি কাবিরকে ওভাবে বকছো কেন? ও তোমার ভাল চায় বলেই তো আমায় কল দিয়েছে?”
মিসেস. জুলিয়ার কথা শুনে অভি চুপ করে রইলো। অভি কোন কথা না বলে পাশ ফিরে রইল।
-“কাবির!”
-” জ্বী আন্টি…”
-“বাবা, আমার ছেলের কথা শুনে রাগ করোনা। তোমার ভরসায় আমি ওকে ওখানে পাঠিয়েছি। ওর খেয়াল রেখ বাবা। ও মুখে যাই বলুকনা কেন! অভি তোমাকে খুব ভালোবাসে।”
-” জানি আন্টি! ওর একটু রাগ বেশি। আট বছর আমি আপনাদের ওখানে থেকেছি। কোনদিনও অভি অনুভব করতে দেয়নি আমি পরিবার ছাড়া অত দুরে পড়তে গিয়েছি? আপনাদের ঋন আমি কোনদিনও ভুলবোনা।”
-“কেন পুরনো কথা তুলে লজ্জা দাও বাবা! অভির খেয়াল রেখ। আর সময় পেলে অবশ্যই তোমার ওয়াইফকে নিয়ে এখানে এস। তোমার জন্য সবসময় আমার দরজা খোলা।”
আর একটু কথা বলে কাবির ফোন রাখলো। তারপর অভির কাছে গিয়ে ওর ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল,” আমরা আজ যাচ্ছিনা। কারন বাসার সবাই এটাই জানে, আমরা আজ থাকবো। একদিন অপেক্ষা কর না!”
কাবিরের কথা শুনে অভি চুপ হয়ে রইল। কোন কথায় বলল না। অভি কোন কথা বলছেনা মানে অভি একটা থাকতে চায় তাই কাবির রুম থেকে বের হয়ে গেল।
কাবির চলে যেতেই অভি ওর মাকে ভিডিও কল দিল। ওর মা রিসিভ করতেই অভি বলল,” মম আই মিস ইউ।”
-” মিস ইউ টু বাবা। তোমারতো পায়ে ইনজুরি হওয়ার কথা নয়। কি হয়েছে আমাকে বলতো?”
-” মম, কিচ্ছু হয়নি। এমনি এমনি কেটে গেছে।”
-” ওকে, তুমি বলবেনাতো? আমি নিজেই দেখছি।”
অভি কোন কথা না বলে শুধু মুচকি হাঁসলো।
মিসেস. জুলিয়া চোখ বন্ধ করে দেখার ট্রাই করলো, আসলে অভির সাথে কি হয়েছে। কিন্তু মিসেস. জুলিয়া অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পেলনা। শেষে ব্যর্থ হয়ে অভির দিকে চেয়ে দেখল তার ছেলে মুচকি হাঁসছে। তারমানে অভি এই বিষয়ে কাউকে বলতে চায়না। তাই সেটা জানার বৃথা চেষ্টা না করে মিসেস. জুলিয়া বলল,” অভি, তোমারতো এতক্ষনে এই ইনজুরি থাকার কথা নয়। নিশ্চয় তুমি এর চিকিৎসা করোনি।”
-” প্রয়োজন নেই মম।”
মিসেস. জুলিয়া চেহারায় কঠিন ভাব এনে বলল,” এখুনি বেড থেকে উঠো। আর দেখ, তোমার ল্যাগেজের যে গোপন পকেট আছে সেখানে একটা ছোট্ট শিশি আছে। ওখান থেকে একফোটা জল খাও। এখুনি করো। আমি যেন কোন লেট না দেখি।
অভি ছোটবাচ্চাদের মত গাল ফুলিয়ে কষ্ট করে বেড থেকে উঠে ল্যাগেজে হাত দিতেই ওর মা বলল,” ডোর বন্ধ করো।”
ওকে মম বলে অভি চোখের ইশার করতেই সব দরজা-জানালা বন্ধ হয়ে গেল। এবার অভি ল্যাগেজ থেকে ঐ শিশিটা বের করে এক ফোটা জল পান করতেই অভির শরীরে কাজ করতে শুরু করলো। সমস্ত ব্যাথা আর ক্ষত সব নিমিষেই ভালো হয়ে গেল।
এবার অভির মা কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলল,” এর পর যেন দেখিনা তুমি এসব কাজে অবহেলা করেছ।”
অভি যখন দেখলো ওর মা সত্যিই প্রচন্ড রেগে গেছে তখন ওর মাকে ঠান্ডা করার জন্য বলল,” মম, ড্যাড কি করছে? ড্যাডের সাথে কথা বলব। ওনাকে আমি খুব মিস করছি।”
-” সময়টাকে পাল্টানোর ট্রাই করবেনা অভি। আমার জিবন তুমি। সেই জিবনকে তুমি কিভাবে অবহেলা করো?”
-” স্যরি মম।”
মিসেস. জুলিয়া তার হাসব্যান্ড এর কাছে গিয়ে ডাকলো, আশিষ এই আশিষ? দেখ, তোমার বাদর ছেলেটা তোমাকে মিস করছে?”
মি. আশিষ তার স্ত্রীর ডাকে ঘুমের আড়মোড়া ভেঙ্গে অভির দিকে চাইল। হেই মাই প্রিন্স, কেমন আছো?”
-” ভালো নেই। আগে তোমার কুইনকে সামলাও। সে তো আমাকে ধুমকির উপর ধুমকিই দিয়ে চলছে। ড্যাড, আমি আমার মত লাইফ ইনজয় করতে চাই। কেন মম বার বার বাঁধা দিতে আসে? তোমাদের চাওয়া মত এত দিন ধরে আমার জিবন চালিয়েছি। এখানে এসে আমাকে একটু ফ্রী ছেড়ে দাও?”
-” ওকে মাই সান। তোমার মম কে আমি সামলিয়ে নিচ্ছি।”
থ্যাংকস মাই আশিষ বাবা বলেই অভি উচ্চ শব্দে কয়েকটা কিস করেই বলল,” মমের জন্য কোন কিস বরাদ্দ নেই। সব তোমার জন্য।”
ওকে, ওকে বলে হাঁসতে হাঁসতে মি. আশিষ কলটা কেটে দিল।
♥♥
দুপুরের খাবার টেবিলে আর অভিকে দেখা গেলনা। রিয়ার বাবা জিঙ্গাসা করলো, কি ব্যাপার অভিকে দেখছিনা যে! অভি কোথায় কাবির?
আসলে বাবা, ওর গায়ে প্রচন্ড জ্বর এসেছে। সকালে ওর পা কেটে গিয়েছিল। আমি খেতে আসতে বললাম কিন্তু ও আসতে পারলোনা। তাই খাবার নিতে এসেছি।
ও মা! তুমি কষ্ট করবে কেন!তোমার এই কাকিমা আছেনা! আমি সব সামলে নিচ্ছি। শর্মিষ্ঠা খাবার বেড়ে উপরে নিয়ে গেল।
মা খাবার নিয়ে অভিদার কাছে কেন গেল! আমাকে বললেই তো পারতো! আমাকে বললোনা কেন? কথাগুলে বলে রিতু মন ভার করলো।
শুধু রিতু না সাথে কয়েকটা মেয়েদেরও মন উতলা হল অভির জন্য। কোন মতে চোখে-মুখে ভাত গুজে অভির রুমের দিকে ছুটল। এদিকে অভি এমন চিপায় পড়ে গেল যেন মনে হয় অভিকে সবাই মিলে চাংদোলা করে রুম থেকে বের করবে।
এই থামো, থামো। তোমাদের অভ্যাস তো খুব খারাপ? তোমরা মেয়ে হয়ে ছেলের গায়ে হাত দিচ্ছো? তাছাড়া রিতুর মা এখানে আছে। জল আনতে গিয়েছে। উনি যদি এসে দেখেন, তোমরা আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো তাহলে তোমরাই ভাব, তিনি তোমাদের সাথে কেমন ব্যবহার করবেন। তাছাড়া আমার বৌ আছে তো! সে যদি জানে তোমরা আমাকে নিয়ে টানা হিচড়া করছো তাহলে সে নির্ঘাত রেগে গিয়ে আমাকে ডির্ভোস দিবে। আমি আমার বউ কে হারাতে চাইনা। ক্ষমা করে দাও আমার মাতাগন বলে অভি দু হাত জোড় করলো ওদের সামনে।
জেসি হুংকার দিয়ে উঠলো,” অভিদা আবার মিথ্যা কথা বলছো? আমরা তোমার বউ দেখতে চাই। আজ যদি বৌ না দেখাইতে পারছো তাহলে তোমায় আস্ত ছাড়ছিনা।”
এই তোমরা কাকে ছাড়বেনা? রিতুর মা কথাটি বলতে বলতে রুমে ঢুকলো।
মিসেস. শর্মিষ্ঠাকে আসা দেখে সব মেয়েগন অভিকে ছেড়ে দিয়ে একদম ভদ্র মেয়েদের মত বলল,” না তো! আমরা আবার কাকে ধরবো!”
-“Hey angels, Never tell a lie.”
-” ওরা মিথ্যা কথা বলছে? এই মেয়েরা তোমাদের সমস্যা কি বলতো! সব সময় অভির পিছে ঘুর ঘুর করো কেন?”
-” দাদার নাকি পা কেটে গেছে তাই দাদাকে দেখতে এসেছি দিদা।”
রিভার কথা শুনে শর্মিষ্ঠা সব মেয়েদের একটা ধমক দিয়ে বলল,” আর যেন না দেখি তোমরা ওকে বিরক্ত করেছ।”
মিসেস. শর্মিষ্ঠার ধমক খেয়ে সব মেয়েরা রুম থেকে বের হল। দরজা পার হতেই টুম্পা বলল,” এই মিতু, তোর মা এত পাজি মহিলা কেন রে? তোর বাবাকে কি এই বয়সে, তার ছাড়ার ইচ্ছা জাগছে নাকি? তাই সবসময় অভি অভি করে মরে!”
-” কি বলছো দিদি! মা তো দিদির জন্য অভিদাকে পছন্দ করেছে।”
-” ওরে শালা, তলে তলে এতদুর? তোর মাকে কিন্তু সত্যিই ব্রাশফায়ার করে তোর বাবাকে বিধবা বানিয়ে দিব। মাকে বলে দিবি, উনি ভুল ডিসেশন নিয়েছে।”
-“জেসি দিদি, আমার খারাপ লাগছে। মাকে ওভাবে কথা বলছো কেন?”
আরে বোকা মেয়ে তোর মায়ের ইচ্ছা আবার এই বয়সে এসে সাতপাঁকে বাধা। মাকে সাবধানে রাখিস বলে জেসি হাসতে হাসতে চলে গেল।
বেচারী মিতু কিছু না বুঝে ওদের পিছু নিল।
এদিকে মিসেস. শর্মিষ্ঠার অতিরিক্ত কেয়ারিং অত্যাচারে অভি অতিষ্ট। অভি মনে মনে রেগে গিয়ে বলল,” মিসেস. শর্মিষ্ঠা আপনার উপর আমার সেদিন থেকেই রাগ ছিল। যেদিন আপনাকে ধরবোনা, সেদিন আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বো।”
♥♥
বিকালে একটা মিটিং আছে তাই বিদ্যা তার এসাইমেন্ট তৈরি করছে। কিন্তু সফল হচ্ছেনা। ওটা বাদ দিয়ে পেন্সিল আর পেপার নিয়ে একটা প্রজেক্টের নকশা আঁকার ট্রাই করছে কিন্তু সেখানেও সফল হচ্ছেনা। মাথায় শুধু অভি আর অপুর স্মৃতিময় কথাগুলো এসে ধাক্কা দিচ্ছে। মস্তিষ্ক কাজ করা একেবারে বন্ধ করে দিল। অভিকে এতটা আঘাত করা ঠিক হয়নি। কিন্তু নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার মত পরিস্থিতিও সেখানে ছিলনা। কি করতাম! ও এসে সরাসরি আমার দুর্বল জায়গায় আঘাত করছে। উফ্ আমি পাগল হয়ে যাবো।
বিদ্যা ফোনে সময় দেখে নিয়ে রেডী হতে লাগলো। সম্পূর্ন বাঙ্গালী কালচারে রেডী হল। একটু সময় নিয়েই রেডী হতে লাগল।
ব্লাক জামদানি শাড়ী, খুব সুন্দর করে পিছনে খোঁপা বাধা। কপালে ব্লাক টিপ, ব্লাক ইয়ার রিং, ডান হাতে ব্লাক ঘড়ি, বাম হাতে ব্লাক ব্রেসলেট, ব্লাক পার্স, ব্লাক সু। এমনকি ব্লাক কালার ফাইল। পুরোই ব্লাকের সমাহর। অপূর্ব সাজ। অপু বেঁচে থাকলে হয়ত ওর মাথায় ঘুরে যেত।
বিদ্যা সম্পূর্ন রেডী হয়ে নিচে নেমে আসলো। সাধনা দেবী কিচেনে কাজ করছিল। বিদ্যা কিচেনে গিয়ে বলল,” মা, আমি বেরুচ্ছি। আসতে রাত হয়ে যেতে পারে।”
সাধনা দেবী এক দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে চেয়ে আছে। কে বলবে তার মেয়ের জিবনে রং নেই। মনে হচ্ছে একটা ফুটন্ত ব্লাকরোজ।
-” মা, ওভাবে কি দেখছো?”
বিদ্যার কথায় সাধনা দেবীর ধ্যান ভাঙ্গল। সাধনা দেবী নিজেকে সামলিয়ে বলল,” বাসায়তো গাড়ী নেই। কিভাবে যাবি? তাছাড়া বাসায় কোন পুরুষ মানুষও নেই। আমি যাই তোর সাথে?”
মা আমি কি আর ছোট আছি? কলকাতা শহরে কত রাত পর্যন্ত আমাদের কাজ করতে হত! বাবা অবশ্যই, আমার জন্য অফিসের নিচে দাড়িয়ে থাকতো। তারপর আমি বের হলে বাবা আমাকে নিয়ে আসতো।
রঘুনাথ বাবুর কথা বলে বিদ্যা যেন আগুনে ঘি ঢাললো। বিদ্যা ব্যাপারখানা বুঝতে পেরেই ওখান থেকে চম্পট দিল। কিন্তু ডাইনিং রুমে এসে বিদ্যা অভির সাথে ধাক্কা খেল।
বিদ্যাকে দেখে অভির মুগ্ধ হওয়ার কথা কিন্তু অভি মোটেও মুগ্ধ হলনা। বরং রাগি লুক নিয়ে বিদ্যাকে দেখতে লাগলো।
বিদ্যাও নিজেকে সামলে নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল।
বিদ্যা চলে যেতেই অভি বলল,” আজ এ রাস্তায় নিশ্চিত কোন অঘটন ঘটাবে। কি প্রয়োজন ছিল এমন ভাবে সবার সামনে নিজেকে প্রর্দশন করা?”
অভি আর দেরী না করে ঐ অবস্থায় বিদ্যার পিছু নিল। বাসার বাহিরে এসে দেখে বিদ্যা ট্রাক্সির জন্য অপেক্ষা করছে। অভিও ওর সাথেই এসে দাড়ালো।
অভিকে দেখে বিদ্যা প্রচন্ড রেগে গেল। এই ছেলে কি আমার পিছু ছাড়বেনা! আর সকালে তো গায়ের শক্তি দিয়ে ওকে আঘাত করেছিলাম। বিকাল আসতেই ভালো হয়ে গেল! আজব তো?
বিদ্যা আর দেরি করলোনা। একটু হাটতে লাগলো। সামনে বাসস্টপ আছে। আজ বাসেই যাবে। ট্যাক্সিতে গেলে এই ছেলেও ঐ ট্রাক্সিতে উঠবে। তারপর কি মতলব করবে কে জানে।
একটু দেরী করতেই বাস চলে আসলো। বিদ্যা বাসে উঠে ভয় পেয়ে গেল। এত মানুষ। দাড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। অহ্ গড কিভাবে এই ভিড়ের মধ্য দাড়াবো। সব তো দেখছি ছেলে। যা দিন দুনিয়া পড়েছে। অহ্ গড রক্ষা করো।
প্রায় সব পুরুষেরা বিদ্যাকে আড়চোখে দেখছে যেটা বিদ্যার কাছে বিরক্তিকর লাগছে। বিদ্যা ভীড় ঠেলে দাড়ালো।
কেবল একজন ছেলে বিদ্যার কোমড়ে হাত দিতে যাবে এমন সময় অভি হাতটা মুচড়ে ধরে বিদ্যাকে আগলে দাড়ালো। বিদ্যা এখনো দেখতে পায়নি অভি ওর সাথেই বাসে উঠেছে।
অভি লোকটার হাত ছেড়ে দিয়ে মুখে আঙ্গুল চেঁপে ইশারা করলো চুপ করতে। লোকটি যন্ত্রনায় দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইল।
বাস চলছে তার আপন গতিতে। বিদ্যা তার হাত ঘড়িতে দেখলো সময় বেশি নেই। বিপদের উপর বিপদ। এমন সময় সামনে থেকে একটি লোক বিদ্যার উপর হুমড়ে পড়ল। অভিও সাথে সাথে ঐ লোকটার বুক বরাবর লাথি বসিয়ে দিল। লোকটি ছিটকে গিয়ে আরো সাতজন কে নিয়ে বাসের মধ্যই পড়ে গেল।
হেলপার সাথে সাথে ডোরে থাবা মেরে বলল,” ওস্তাদ থামেন। ভিতরে ঝামেলা হয়েছে।”
সাথে সাথে বাস থেমে গেল। অভিও বিদ্যার হাত ধরে বাস থেকে নেমে পড়লো। তারপর বাস চালককে উদ্দেশ্য করে বলল,” মেয়েদের যখন সিকেরোর্টি দিতে পারেন না তাহলে এত যাত্রী উঠান কেন? আপনাদের এই অসচেতনতার কারনে মহিলা যাত্রীগন বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছে।”
বাসের ডাইভার কথা শুনেও যেন শুনলোনা। স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। অভিও সাথে সাথে বলে উঠলো, তোকে তো আমি দেখেই ছাড়বো। তখন আমার সামনে কিভাবে অবাধ্য হস সেটাও দেখব আমি।
বিদ্যাকে নিয়ে একটা ট্রাক্সি করে ওকে ওর অফিসে পৌছে দিল অভি। রাস্তায় কেউ কারো সাথে কথা বলেনি। বিদ্যা চলে যাওয়ার সময় পিছু ফিরে তাকিয়েও দেখেনি অভিকে।
♥♥
বিদ্যাকে দেখে প্রথমে নিখিল সারপ্রাইজ হয়ে গেল। ওয়াও, সী ইজ বিউটিফুল আউট অফ দা ওয়াল্ড। হেই বিদ্যা!
নিখিলের ডাকে বিদ্যা পিছন ফিরে দেখে নিখিল দাড়িয়ে রয়েছে। বিদ্যা নিখিলের কাছে গিয়ে বলল,” মৌপ্রিয়া আর দিপ্তী কই?”
-” ওরাতো এখনো আসেনি। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে বিদ্যা। একদম ২৫ বছরের উদ্দম তরুনী।”
-” আমাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছ? বৌদিকে বলতে হবে?”
-” হেই আমিতো ফ্যান করেছি। তুমি যদি ওকে বল তাহলে নির্ঘাত ও আমাকে ডির্ভোস দিয়ে চলে যাবে।”
-” তাহলে এগুলো অহেতুক কথাবার্তা না বলে চুপ করে থাকো। আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি।”
-” ওকে, ওকে ম্যাম, আর বলবনা।”
এমন সময় মৌপ্রিয়া আর দিপ্তী চলে আসলো। ওরাও বিদ্যার খুব প্রসংসা করলো। কিন্তু বিদ্যা সেদিকে নজর না দিয়ে কাজ নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। ৫ মিনিট পর মিটিং। সবাই চলে গেছে মিটিং হলে। বিদ্যাও কেবল পা বাড়াবে এমন সময় নিচে চোখ গেল। দেখল, অভি এখনো দাড়িয়ে আছে। স্ট্রেঞ্জ….! এখনো ওখানে দাড়িয়ে ও কি করছে?
এসব ভাবার সময় নেই বলে বিদ্যা মিটিং এ যোগদান করতে চলে গেল।
♥♥
মিটিং এ বিদ্যা ওর কম্পানির হয়ে সব তথ্য সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করলো। কিন্তু বিদ্যা তার কাজের আরো কিছু তথ্য উপস্থাপন করতে পারলোনা। অভির চিন্তায় ও কিছু করতে পারেনি।
কথায় আছেনা! সুন্দর মেয়েদের একটু সুযোগ বেশিই। তাই আরো একসপ্তাহ সুযোগ পেল সব তথ্য জমা দেওয়ার জন্য। তবে বিদ্যার উপস্থাপন ছিল অন্যান্য কম্পানিদের প্রতিনিধির থেকে মনোমুগ্ধকর। তারজন্যও হয়ত আরো একটা সুযোগ পেল। মিটিং শেষে বিদ্যা ওর অফিসের এমডির সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নামল। বিদ্যা এবার আরো অবাক হল অভি এখনো দাড়িয়ে আছে ওভাবেই। উফ্, এতো দেখছি পিছুই ছাড়ছেনা।
বিদ্যা ইচ্ছা করেই আরো দেরি করলো।
বিকাল ৩ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অভি বিদ্যার জন্য ওখানেই অপেক্ষা করে আছে। বিদ্যা চাইলে অনেক আগেই বের হয়ে আসতে পারতো কিন্তু অভিকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বের হয়নি।
অবশেষে রাত সাড়ে দশটার সময় বিদ্যা বের হল অফিস থেকে। সাথে আরো কলিগও বের হল। সবাই বিদ্যার সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে। বিদ্যাও ইচ্ছা করেই অভিকে দেখিয়ে ওদের সাথে কিছুটা ক্লোজ হল।
এমনি ইচ্ছা করে বিদ্যা অভিকে শাস্তি দিচ্ছে সেটা অভি মেনে নিয়েছে কিন্তু এভাবে ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করাটা অভির একদম পছন্দ হলনা। অভি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল বিদ্যার দিকে। বিদ্যা নিজেও জানেনা অভি ওর জন্য কি শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে।
[] চলবে….[]
বিদ্রঃ সময়ের অভাবে রিভাইজ দিতে পারলামনা। এমনি লেট হয়ে গেছে। ভুলক্রুটি মার্জনা করে সবাই পড়ে নিবেন।
সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/10/sidur-suddhi-13/
………………………………..
লেখিকা,
নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha