#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ৯
.
বিদ্যার এমন দিন রাত আর্তনাদে সবার চোখের জল ঝরে। তারা বিদ্যার অপু দাদাকে কই পাবে! বিদ্যার যে তার অপু দাদাকে চাই চাই। অপুদাকে ছাড়া যে তার চলেনা……
রঘুনাথ ওর ভুল বুঝতে পারে। ভুল বুঝে আর কি লাভ। যা শেষ হবার তা শেষ হয়ে গেছে।
এখন অঞ্জনা বিদ্যাকে নিয়ে অপুর রুমে ঘুমায়। মাঝে মাঝে মাঝ রাতে বিদ্যা অঞ্জনার শাড়ীর আচল ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। অঞ্জনার ঘুম ভেঙ্গে গেলে বিদ্যাকে জিঙ্গাসা করে, “কি হয়েছে মা, কাঁদছিস কেন?”
বিদ্যা অঞ্জনাকে জাপটে ধরে কেঁদে উঠে বলে,” জেঠি, দাদা কবে আসবে? দাদাকে খবর পাঠাবা কাল সকালে। বলবে আমি তার উপর খুব রাগ করেছি। আমার যে দাদাকে ছাড়া ঘুম আসেনা।”
অঞ্জনা মা হয়ে পুত্র শোক সামলিয়ে নিয়েছে কিন্তু বিদ্যা অপুর সাথে মাত্র তিন মাস কাটিয়েছে। বিদ্যা সেই শোক থেকে উঠতে পারছেনা।
প্রায় রাতে অঞ্জনাকে জড়িয়ে ধরে দাদা দাদা বলে কেঁদে ওঠে বিদ্যা। গভীর রাতে জানালা ধরে আকাশের পানে চেয়ে ফুফিয়ে কাঁদে বিদ্যা। দাদা তুমি কবে আসবে? তোমার সব কথা শুনবো এখন থেকে তবুও তুমি ফিরে আসো দাদা।
এভাবে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। বিদ্যার কাছে আর অপু ফিরে আসেনা। বিদ্যাও বড় হতে থাকে। রঘুনাথ বিদ্যাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। ছেলের অসম্পূর্ণ কাজ নিজের কাধে তুলে নিয়েছে। বিদ্যাকে তিনি আর বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেননি। অপুর শেষ স্মৃতি তিনি বুকে আগলে মানুষ করছেন। আগে বিদ্যা ভাবত, সত্যি ওর অপু দাদা ওকে রেখে বিদেশ চলে গেছে কিন্তু বড় হতেই সে বুঝতে পারে আসলে ওর অপু দাদা মারা গেছে। বিদ্যা এখন বুঝে গেছে, অপু ওর হ্যাসব্যান্ড ছিল। বিদ্যা এখনো অপুকে প্রচন্ড মিস করে।
বিদ্যার বয়স যখন ২০ বছর হয় তখন বাসা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রনকের সাথে বিদ্যার বিয়ে দিবে।
সেদিন বিদ্যা ঘরের দরজা এঁটে ডুকরে কেঁদে উঠছিল। কারন এখনও সে তার মৃত অপু দাদাকেই ভালোবাসে। এই বিদ্যা যে শুধু তার অপু দাদার। অপুর সব কাপড় এলোমেলো করে আবার গোছায়। অপুর ডায়রীর লেখাগুলো প্রতিদিন পড়ে। কিভাবে বিদ্যার জন্য অপু তার নিজের শখ, আশাগুলো মাটি করে বিদ্যাকে হাসিতে ভরে তুলতো। বিদ্যাকে বুকে নিয়েই অপু চোখের জল ফেলে রাতের পর রাত ডায়রী লিখেছে। ডায়রীর শেষ পাতায় লেখা ছিল, “বিদ্যা কি ওর অপু দাদাকে সারাজিবন এভাবে ভালোবাসবে না বড় হলে সেই ভালোবাসা শেষ হয়ে যাবে।”
অপুর সেই ভয়কে কখনো সত্যি হতে দেয়নি বিদ্যা। কারন বিদ্যা এখনো অপুকে ভোলেনি।
অঞ্জনা দেবী সব বুঝতে পেরে সবার সামনে বলে ওঠে, বিদ্যা যেমন আছে ওকে তেমন থাকতে দাও। বিয়ে একবারই হয়। যেটা ওর অনেক আগে হয়েছে। এ নিয়ে যেন দ্বিতীয় বার কোন কথা না শুনি।
অনুরাধার বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। যে অপুর জন্য এত পাগল ছিল সেও নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য ঠিকি বিয়ে করে শশুরবাড়ী চলে যায়। রনকও কিছুদিনপর বিয়ে করে নেয়। রিতেশ আর লক্ষীর একটা কন্যাসন্তান হয়। এর মাঝে বিদ্যা ওর পড়ালেখা শেষ করে খুব ভালো একটা জব খুঁজে নেয়।
২৫ বছর পর,
রঘুনাথ বাবু কয়েক সপ্তাহ আগে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগে বিদ্যার হাত ধরে অনুরোধ করে গেছেন বিদ্যা যেন ওর বাবার সাথে একবার হলেও দেখা করতে যায়।
রঘুনাথের শেষ কথা এমন ছিল,” বিদ্যা, ছোট বেলায় তোর বাবার কাছ থেকে তোকে এক প্রকার কেড়েই নিয়ে এসেছিলাম অপুর জন্য। এতদিন তোর বাবা তোর সাথে অনেক যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি যোগাযোগ করতে দেয়নি এই ভয়ে, ওরা যদি তোকে একেবারে এখান থেকে নিয়ে যায় তাহলে অপুর শেষ স্মৃতিও সারাজিবনের জন্য হারাবো। মা আমাকে ক্ষমা করিস। আমার সময় নেই সেটা আমি ভালই বুঝতে পারছি। তুই বাংলাদেশে ফিরে যা মা।”
সেদিনের শশুর মসাইয়ের কথা রাখতে বিদ্যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশে যাবে। সকাল থেকে অঞ্জনা ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে। অঞ্জনা চোখের জল মুছে বলল,” ওখানে গিয়ে এই মাকে ভুলে যাবিনা তো?”
” মা, আমি না হয় নাই যাই। তুমি এভাবে কাঁদলে আমি কিভাবে যাই বল! তার থেকে না যাওয়ায় ভালো।”
“না না যাবিনা কেন! অবশ্যই যাবি। মন মানছেনা তাই বলছি। ”
” তুমিও চল আমার সঙ্গে!”
” আমি গেলে সংসার সামলাবে কে! আর তোর মা আমাকে একদমই পছন্দ করেনা। আমিও তো কম খারাপ ব্যবহার করিনি তার সাথে। জলদি চলে আসিস মা।”
” মা, আমি ওখানে আমার অফিসের কাজেও যাচ্ছি। কাজ শেষ হলেই চলে আসবো। আর যদি না আসি তাহলে তোমাকে নিয়েই যাবো।”
” তোকে ছাড়া কিন্তু আমি থাকতে পারবোনা। তোর কাকিকে বলে যাস।”
বিদ্যা এসে অঞ্জনা কে একটা কিস করে ল্যাগেজ গুলো কাজের ছেলেকে বলে নিচে নিয়ে যেতে বলল। তারপর অপুর কিছু কাপড়, ছবি, সিঁদুর দানী সহ আরো কিছু জিনিসপত্র নিতেই অঞ্জনা বলল,” সব নিয়ে যাচ্ছিস? আমি তাহলে কি নিয়ে থাকবো।”
পুরো অপু দাদাকেই দিয়ে গেলাম মা। এগুলো ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা। বিদ্যা আর দেরী না করে মালতীর কাছে গেল। বিদ্যা যেন সবার প্রান। মালতী বিদ্যাকে অনেক আদর করে বলল,” জলদি আসিস মা। আমাদের বৃদ্ধ বয়সের তুই একমাত্র অবল্মন। ”
” ঠিক আছে কাকি। নিজের খেয়াল নিও।”
অঞ্জনা দেবীও বিদ্যার পিছু পিছু মালতীর রুমে এসেছে।
“বিদ্যা, বাংলাদেশে ওদের বলে দিয়েছিস তো! তুই আজ রওনা দিচ্ছিস?”
“একসপ্তাহ আগে ওরা টিকেট বুক করে পাঠিয়ে দিয়েছে মা। তাই চিন্তা করোনা। ”
” ওখানে পৌছে কিন্তু কল দিবি। আমি কিন্তু আশায় থাকবো।”
” ওকে মা।”
বিদ্যা হেঁসে সবাইকে প্রনাম জানিয়ে রওনা দিল। সাথে রনক ইয়ারপোর্ট পর্যন্ত এগিয়ে দিল।
“বৌদি, আবার কবে ব্যাক করবেন?”
ভাই, সময় হলে এমনি আসবো। ভালো থেক আর সবার খেয়াল রেখ বলে বিদ্যা ইয়ারর্পোটের ভিতরে চলে গেল।
বিদ্যা ওয়েটিং রুমে বসে আছে। ৬ বছর বয়সে দেশ ছেড়ে এসেছে। আজ বিদ্যার বয়স ৩১ বছর। অনেক মর্ডান এবং ম্যাচুয়েট মেয়ে। নিজেকে সব সময় পরিপাটি করে রাখে। দেখে কারো বোঝার উপায় নেই ওর বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেছে। দেখলে যে কেউ বলবে চব্বিশ পার হয়নি।
বিদ্যা আর্কিটেক্টের উপর পড়াশুনা শেষ করেছে। ঢাকার কয়েকটা মার্কেটের নকশা এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কিছু সরকারী প্রজেক্টের উপর কাজ করার অফার পেয়েছে। তার জন্যও বাংলাদেশে আসা।
বিদ্যা বসে ফোনে স্কল করছিল। হঠাৎ সামনে একটা ছেলে এসে ঠিক ওর সামনা সামনি বসল। বিদ্যার চোখ ছেলেটার উপর আটকে গেল। ছেলেটাকে দেখে মনের ভিতর ঝড় বয়ে গেল। এটা কি করে সম্ভব। বিদ্যা এই শীতেও ঘামতে শুরু করলো।
ছেলেটি বিদ্যার দিকে তাকিয়েই একটা মুচকি হাঁসি দিল। এবার বিদ্যা আরো অসস্তির মধ্য পড়ে গেল। সাথে সাথে চোখটা নামিয়ে নিয়ে ফোনের দিকে মনযোগ দিল।
খানিকক্ষণ পড়ে বিদ্যা আবার চাইলো কিন্তু ছেলেটিকে আর দেখতে পেলনা। অনেক খুজল কিন্তু আর পেলনা। শেষে মনের ভূল বলে উড়ে দিল। কিন্তু বিদ্যার জন্য আরো সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল। ছেলেটি এবার এসে একদম বিদ্যার পাশে বসল।
সাথে সাথে বুকের ভিতর হাতুরি পিটা শুরু হয়ে গেল। বাম হাতে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে পাশের সিটে তাকাতেই দেখলো ছেলেটি আর নেই। বিদ্যার চোখ দু’টি ছেলেটিকে খুঁজে যখন ব্যর্থ হল তখন ও নিজেই নিজেকে শান্তনা দিল, এটা চোখের ভূল ছাড়া কিছুই নয়।
একটু পর আরো তিনজন কলিগ এসে বিদ্যার সাথে যোগ দিল। মৌপ্রিয়া, দিপ্তী এবং নিখিল। ওদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতেই ফ্লাইটের সময় হয়ে গেল।
ফ্লাইটের সময় হলে ৪জনে প্লেনে চড়ল। মৌপ্রিয়া আর নিখিল একসাথে বসলেও বিদ্যা আর দিপ্তীর সিট আলাদা আলাদা পড়ল। বিদ্যা কেবল ওর সীটে বসেছে এমন সময় সেই ছেলেটি এসে বিদ্যার পাশে বসে পড়ল। বিদ্যা সাথে সাথে লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালো। আপনি এখানে?
ছেলেটি ভ্রু কুচকে বলল,” আমার সিটে তো আমারই বসার কথা?”
“এটা আপনার সিট!”
” হুম, আমি তো দেখছি এটা আমারই সিট।”
” স্যরি মিসটেক বলে বিদ্যা বসে পড়ল।”
” বিদ্যার হাত-পা কাঁপছে। বিদ্যা এত একটা স্ট্রং মেয়ে তবুও ছেলেটিকে দেখে সে ক্রমশ কেঁপেই চলছে।”
” এ্যানি প্রবলেম।”
” নো, আমি ঠিক আছি বলে বিদ্যা চোখ বন্ধ করলো।”
” উফ্ বিদ্যা, নিজেকে একটু কন্ট্রোল কর। ছোটমেয়েদের মত তোর হাটু কেন কাঁপছে? পাশের ছেলেটি যদি বুঝতে পারে তাহলে তোর পাক্কা বেইজ্জতি হবে।”
এসব চিন্তা করতে করতে বিদ্যা একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। পুরো রাত বিভিন্ন কাজে ঘুমাতে পারেনি তাই একটু চোখ লেগে এসেছিল।
ঘুমে বিদ্যার মাথা ছেলেটির কাধে ঢলে পড়ল। প্লেনের ঝাকুনিতে বিদ্যা সেখান থেকে ঢলে পড়তেই ছেলেটি অতি যত্নে বামহাত দিয়ে ওকে আগলে রাখলো।
বিমানবালার একটা মেয়ে এসে বলল, ” স্যার ড্রিংকস!”
ছেলেটি মুখে আঙ্গুল চেঁপে ইশারা করলো চুপ হতে। ম্যাডাম ঘুমিয়েছে তাই যেন ডির্স্টাব না করে।
মেয়েটি একটা মুচকি হেঁসে চলে গেল।
ছেলেটি আবার চেহারায় গম্ভীরতা এনে ফোন বের করে গেম খেলতে লাগলো।
এদের পুরো কাহিনী দীপ্তি দেখে ফেলে ঐ পাশের সিটে বসে। দিপ্তিতো রিতিমত অবাক হয়ে গেল ছেলেটির বিদ্যাকে কেয়ারিং করা দেখে। ও কে?
♥
বিমান যখন ল্যান্ড করে তখন ঝাকুনিতে বিদ্যার ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিদ্যা ছেলেটির কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিল এতক্ষন ধরে। ছেলেটিও মনে হয় অতি যত্নে এতক্ষন ধরে আগলে রেখেছিল বিদ্যাকে।
স্যরি, স্যরি… আমি একদমই বুঝতে পারিনি। আসলে আমি…. কথাটি শেষ হওয়ার আগেই ছেলেটি বলল,” ইট’স ওকে।
উফ্ মাত্র ৪৫ মিনিটে কেউ ঘুমিয়ে পড়ে? তাও এই ছেলের কাঁধে? বিদ্যা তুই মনে হয় এখনো মানুষ হয়ে উঠলিনা।”
বিমান ল্যান্ড করতেই ছেলেটি আগেই নেমে গেল। আর তাকে খুঁজে পাওয়া গেলোনা।
দিপ্তী এসে বিদ্যাকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল,” কিরে ছেলেটাকে কি চিনিস?”
” না তো! কেন কি হয়েছে?”
“না মানে ওভাবে ওর কাঁধে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লি আর ও এত যত্ন করে আগলে নিল যেন মনে হয় তোরা হাবি আর ওয়াইফ।”
” কি যা তা বলিস! আমি একজন বিবাহিত মেয়ে। এগুলো শোনাও আমার জন পাপ। ওটা হয়ত মিসটেক ছিল। বাদ দে, চল এখান থেকে বলে ওদের সাথে বিদ্যা নেমে গেল।”
♥
হযরত শাহাজালাল বিমানবন্দরে নেমে সব মালপত্র নিয়ে প্রথমে একটা বাংলাদেশি সিম কিনে ফোনে ভরে অঞ্জনাকে কল দিয়ে বলল,” মা আমি বাংলাদেশে এইমাত্র পৌছালাম। কাকি কে বলে দিও।”
” সাবধানে থাকবি, বাসায় গিয়ে আবার কল দেস। আর শরীরের খেয়াল রাখিস।”
” ওকে মা বলে কল কেটে দিল বিদ্যা।”
২৫ বছর পর বাংলার মাটিতে পা দিল বিদ্যা। বাবা-মায়ের সাথে এখান থেকেই পাড়ি জমিয়েছিল ইন্ডিয়াতে। সব কিছু অচেনা হয়ে গেছে। এত পরিবর্তন শহরটার!
নিখিল এসে বিদ্যাকে বলল,” তুমি কোথায় উঠবে? আমরা তো আমাদের এক আত্বীয়র বাসায় উঠছি আর মৌপ্রিয়া ওর মামার বাসায় উঠছে।”
” তোমরা যাও, আমাকে রিসিভ করতে কেউ আসছে।”
” ওকে বিদ্যা। বাসায় গিয়ে একটা কল দিও।”
” হুম।”
♥
বিদ্যা প্রায় ১৫ মিনিট ধরে দাড়িয়ে আছে। বাসার ঠিকানা ভুলে গেছে। আর একা একা যাওয়ার মত অবস্থায়ও নেই। সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। আরো ১০ মিনিট অপেক্ষা করতেই ঝড়ের গতিতে একটা কার এসে থামলো। কার থেকে একটা মেয়ে বের হয়ে বলল,” বিদ্যা দিদি?”
” ইয়েশ।”
” হেই পেয়েছি বলতেই কার থেকে একবারে ৫টা মেয়ে বের হয়ে এল।”
” আমি ঠিক আপনাদের চিনলাম না?”
” কিন্তু আমরা তোমাকে চিনি বলেই বিদ্যার হাতধরে টেনে গাড়ীতে বসিয়েই গাড়ী স্টার্ট দিল একটা মেয়ে।”
” এই এখন তোমরা তোমাদের পরিচয় দাও তো? কার নাম কি আর কে কার মেয়ে?”
” পিসি, আমি রিয়া। আমি তোমার বড়দার মেয়ে, ও রিতু আর ও সাজিত কাকুর মেয়ে মিতু। টুম্পা আর জেসি আমার বান্ধবী।”
” ওয়াও, তোমরা তো দেখছি অনেক বড় হয়ে গেছ। বাবা আসলোনা যে?”
উনি আসতে চাইছিল আমরা আসতে দেইনি। সবাইকে সারপ্রাইজ দিব তাই।
” অহ্ আচ্ছা।”
আধা ঘন্টার মধ্য একটা বাসার সামনে এসে গাড়ী থামল। নতুন বাসা, এটাতো আমাদের বাসা ছিলনা। আর সবাই কই?
“দিদি নামতো বলেই মিতু হাত ধরে বিদ্যাকে নামালো।”
বিদ্যা বাসায় পা দিতেই সাধনা বরণ ডালা নিয়ে এসে বিদ্যার সামনে দাড়ালো।
মা, কত দিন পর বিদ্যা তার মাকে দেখছে। সাধনা বিদ্যাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। কত বড় হয়ে গেছিস! একবারও মায়ের কথা মনে পড়েনি তোর?
” পড়েছে বলেই তো চলে এলাম।”
তারপর একে একে বাবা সহ সব দাদাদের সাথে সাক্ষাৎ মিললো বিদ্যার। এতদিন পর বাসায় যেন একটা উৎসব শুরু হল ।
বিদ্যা এসে জানলো সামনে রিয়ার বিয়ে তাই আরো তড়িঘড়ি করে বিদ্যাকে নিয়ে আসা হল। এর আগে অনেকবার যোগাযোগ করেও বিদ্যার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। অবশেষে বিদ্যাকে পেয়ে পরিবার কমপ্লিট হয়ে গেল।
♥
পুরোটা দিন একপ্রকার ব্যস্ততার মধ্যই কেটে গেল বিদ্যার। সন্ধ্যার পর মায়ের রুমে আসল বিদ্যা।
সাধনা পারছেনা যে বিদ্যাকে নিজের কলিজাটা কেটে খাওয়াবে। কিন্তু বিদ্যা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে সুয়ে রইল।
বিদ্যা এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকলে হবে? তোর জন্য কত কি বানিয়ে রেখেছি। সব তোকে খাবার দিতে হবেনা?
না মা আমার কিছু লাগবেনা বলে বিদ্যা আরো শক্ত করে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইল। বিদ্যা ওর ২৫ বছরের আগের মাকে খুঁজছে। বাবা ওর জন্য রসগোল্লা নিতে গেছে। গনেশে কাকুর দোকানের টাটকা রসগোল্লা বিদ্যার খুব পছন্দ ছিল। এখনো বাবা ওর পছন্দের কথা স্মরন করে রেখেছে সেটাই বিদ্যা ভেবে অবাক হয়ে যাচ্ছে।
প্রচন্ড ক্লান্ত থাকায় বিদ্যা ওর মায়ের কোলেই ঝিমুতে লাগলো। এমন সময় রুমে একটা ছেলে আসলো। বিদ্যা ঘুম জড়ানো চোখে দেখল সেই ছেলেটা। যে ওকে কলকাতা থেকে ফলো করছে। কিছু বলতে যাবে কিন্তু আবেশে চোখ দু’টি বন্ধ হয়ে আসলো।
বিদ্যা, কে এসেছে দেখ! কিন্তু বিদ্যা কথা বলার অবস্থায় নেই। ঘুমে বিভোর হয়ে পড়ে আছে।
ছেলেটি এক নজরে বিদ্যার দিকে চেয়ে বলল,” থাকনা মিসেস, শ্যামল। অন্য সময় আলাপ হবে।”
[] চলবে……..[]
সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/09/sidur-suddhi-09/
………………………………..
লেখিকা, নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha