#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-১৭
ফাবিহা নওশীন
সন্ধ্যা বেলায় ফায়াজের ঘুম ভাংলো।ফায়াজ বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করছে।সাথে গরম তরল জাতীয় কিছু।ফায়াজ পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো।ওর বুকের উপর মেহেরকে দেখতে পেলো।বুঝতে পারলো মেহের কাদছে।কিন্তু কেন কাদছে তা জানার প্রয়োজন মনে করছেনা।
কারো মনে যখন কারো প্রতি অধিক ঘৃণা জন্মে তখন তার ভালো কাজগুলোও চোখে পরেনা।ভালো কাজেরও নেগেটিভ দিক খোজে।ফায়াজও তাই করছে।
ওর ব্রেন বলছে মেহেরকে বুক থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে কিন্তু মন বলছে বুকে জড়িয়ে নিতে।ফায়াজের অজান্তেই ফায়াজের হাত মেহেরের পিঠে চলে গেলো।মেহের নিজের পিঠে ফায়াজের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো।আস্তে করে মাথা তুলে ফায়াজের মুখের দিকে তাকালো।ফায়াজের চোখ বন্ধ তাই কিছুটা স্বস্তি পেলো।ফায়াজের হাত আস্তে আস্তে সরিয়ে মেহের উঠে গেলো।
যদি ফায়াজের ঘুম ভেঙে যায় আর ফায়াজ রাগ করে তাই উঠে গেলো।
মেহের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।সিগ্ধ বাতাস বইছে।মেহেরের খোলা চুলগুলো উড়ছে।মেহের দূর পানে চেয়ে আছে।সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে আসছে।আসেপাশের বাড়িগুলোতে আলো জ্বলে উঠছে।মেহের ভাবছে তার জীবনের কথা।
–আমার জীবন টা এমন না হলেও পারতো।অন্য রকম হতে পারতো।ফায়াজ লন্ডন থেকে ফিরে আসতো।ওর বাবা-মা আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতো।দু পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হতো।আমি লাল বেনারশী পড়ে ফায়াজের জীবনে পা রাখতাম।
সুখ-শান্তি,আর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকতো আমাদের জীবন।
সে আমি ফায়াজের ঘরে আসলাম তবে ভালোবাসার জন্য না,ঘৃণার কারণে।ফায়াজ আমাকে ঘৃণা করে তাই বিয়ে করেছে।এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক।ওর কি দোষ?ও কেন আমাকে ভালোবাসবে?যে মেয়েকে পাগলের মতো ভালোবেসেছে।সুখের স্বপ্ন সাজিয়েছে সে মেয়ে তাকে ঠকিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেছে।ওর আমার উপর রাগ করাটাই স্বাভাবিক।তবে আমি কাকে বলবো?কার উপর রাগ দেখাবো?আমার এই পরিনতির জন্য কে দায়ী?
বাবাকে না উপরওয়ালাকে দায়ী করবো?সবই আমার ভাগ্য।
তবে এটুকুই আমার জন্য অনেক।আমি ফায়াজের পাশে আছি।ওর কাছে।রোজ ওকে দেখতে পারছি।ওকে ছুতে পারছি হোক না সে নানা অজুহাতে।আজ নাই ভালোবাসুক।একদিন না একদিন ও আমাকে ভালোবাসবেই।এটা আমার বিশ্বাস।
এসব ভাবতে ভাবতে রাত হয়ে গেছে।
মেহের ফায়াজের খাবার নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে ফায়াজ বেড থেকে নামছে।শরীর কিছুটা দূর্বল তাই আস্তে আস্তে হাটছে।মেহের এগিয়ে গিয়ে বললো,
–আপনার কিছু লাগবে?
ফায়াজ মেহেরের দিকে একবার চেয়ে আবারো হাটায় মন দিলো।
মেহের ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।ফায়াজ সোফার দিকে এগুচ্ছে।সেখানে একটা মিনি আলমারি আছে।যেখানে মদের বোতল দিয়ে ভর্তি।মেহের বুঝতে পারলো ফায়াজ কি করতে চাইছে।মেহের ফায়াজকে অনুনয়ের সুরে বললো,
–আজকের দিনটা বাদ দেওয়া যায়না?আপনার শরীরে জ্বর।এ অবস্থায় ড্রিংক করা ঠিক হবে?
ফায়াজ রাগান্বিত চোখে মেহেরের দিকে চেয়ে বললো,
–তুমি কি চাও আমি সারারাত নির্ঘুম কাটাই?
–আমি তা কেন চাইবো?আর এই মদের সঙ্গে ঘুমের কি সম্পর্ক?
–আমার ঘুমের টনিক।নেশা না হলে আমার ঘুম আসেনা।আর নেশার জন্য মদ প্রয়োজন।মদই আমার একমাত্র সংগী।আমার ঘুমের ওষুধ।
মেহেরের এবার রাগ হলো।কিছুটা চেচিয়ে বললো,
–মদ মানুষের ঘুমের ওষুধ কি করে হতে পারে?আপনার ঘুম না আসলে আমি আপনাকে ঘুমের মেডিসিন দিচ্ছি।ডিনার করে ঘুমের মেডিসিন নিবেন।
ফায়াজ চোখমুখ শক্ত করে মেহেরের দিকে চাইতেই মেহের চুপসে গেলো।
–যেটুকু বলা হবে সেটুকুই করবে।তোমার কাছে কেউ উপদেশ চায়নি।সর এখান থেকে।তোমার জন্য আমার এই অবস্থা।মদ না খেলে আমার রাতে ঘুম আসেনা।সারারাত ছটফট করি।না কোনো মেডিসিনে কাজ হয়।
মেহের জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালো।
–বুঝতে পারছোনা তাই না?তুমি এমন ভাব করো যেন কিছুই বুঝোনা।
তুমি আমাকে ছেড়ে যাবার পর থেকেই এমন সমস্যা হয়েছে।তুমি আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছো।
–কিন্তু এখন তো আমি আছি।তাহলে?
ফায়াজ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
–নাও আই ডোন্ট নিড ইউ।না এখন তুমি সেই মেহের আছো আর না আমি সেই পাগল প্রেমিক ফায়াজ আছি।
ফায়াজ মেহেরকে সামনে থেকে সরিয়ে দিলো।
মেহের বুঝতে পারছে ফায়াজ ওর কথা শুনবে না।মেহের আটকাতেও পারছেনা।বারবার দু’হাতে ফায়াজকে আটকাতে গিয়েও পারছেনা। ফায়াজের শরীর মুছিয়ে দেওয়ার পর ফায়াজ গায়ে আর কিছু পরেনি তাই ফায়াজকে ছুতে অস্বস্তি হচ্ছে।মেহের এতকিছু না ভেবেই ফায়াজের হাত চেপে ধরলো শেষ চেষ্টা করার জন্য।
–ফায়াজ প্লিজ।
ফায়াজ রক্তবর্ন চোখে মেহেরের দিকে চেয়ে বললো,
–তোমার সাহস তো কম নয় আমাকে আটকাচ্ছো?এত দরদ কোথায় থেকে উতলে উঠেছে?
মেহের গম্ভীরমুখে বললো,
–ওই আর মেরিড।আপনি মানুন বা না মানুন আমি আপনার ওয়াইফ।আমার আপনার উপর অধিকার আছে।সো,,,
ফায়াজ শুকনো হাসি দিয়ে বললো,ওয়াইফ??
তারপর হটাৎ করে মেহেরের দুবাহু চেপে ধরলো।মেহের ভয়ে ফায়াজের দিকে চেয়ে দেখলো ওর চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।হিংস্র বাঘের মতো লাগছে।মেহের বুঝতে পারলো ফায়াজ অনেক রেগে গেছে।ওর উপর বড় কোনো ঝড় আসতে চলেছে।
ফায়াজের শরীরে হটাৎ করেই কয়েকগুণ শক্তি বেড়ে গেলো।ফায়াজ মেহেরকে বিছানায় চেপে ধরলো তারপর বললো,
–তুই আমার ওয়াইফ।তোর সাথে বাসর ই করা হয়নি।এটাও তো আমার অধিকার তাইনা।
মেহের ভয়ে ঢুক গিলে বললো,
–দেখুন আপনি রেগে আছেন,তাই এসব করছেন।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।
কিন্তু ফায়াজ ওকে ছাড়ছেনা।ফায়াজ মেহেরের দুহাত চেপে ধরে নিজের ঠোঁট দিয়ে মেহেরের ঠোঁট চেপে ধরলো।মেহের নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ওর শক্তির সাথে পেরে উঠছেনা।ফায়াজের কিস কামড়ে পরিনত হচ্ছে।মেহেরের উপর সব রাগ মেহেরের ঠোঁটের উপর ঝাড়ছে।ব্যথায় মেহের কুকড়ে উঠছে।নিজেকে তো দূর নিজের মাথাও এক ইঞ্চি নড়াতে পারছেনা।মেহেরের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ফায়াজ কিছুক্ষণ পর মেহেরের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে গলায় মুখ ডুবালো।মেহের আর নড়ছেনা।মেহের বুঝতে পারছে ও যত চেষ্টাই করুক ফায়াজের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারবেনা যতক্ষণ না ফায়াজ ছাড়ছে।ফায়াজের প্রতিটি স্পর্শ অনুভব করতে পারছে কিন্তু সেখানে ভালোবাসা খোজে পাচ্ছেনা।মেহের ঢুকরে কেদে উঠলো
ফায়াজ মেহেরের কান্নার আওয়াজ পেয়ে ছেড়ে দিলো।মেহেরের গলা থেকে মুখ উঠিয়ে মেহেরের দিকে চেয়ে বললো,
–এটাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করোনা।আমার প্রয়োজন ছিলো মিটিয়ে নিলাম।আর যদি আমার কাজে বাধা দেও আজ তো শুধু কিস করেছি পরে,,,
ফায়াজ উঠে মদের বোতল নিয়ে বসলো।মেহের ওভাবেই রইলো।
ফায়াজ ড্রিংক করছে আর মনে মনে বলছে,
–এটা আমি কি করতে যাচ্ছিলাম?মেহের খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।আমার এটা করা উচিত হয়নি।
মেহের বসে বসে কার্টুন দেখছে বেডরুমে।হানি আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কেদে ভাসিয়ে ফেলছে।মেহের দেখেই হেসে কুটি কুটি।সকালে ফায়াজ অনেকটা সুস্থ হয়ে গিয়েছে।নাস্তা করে বেরিয়ে গিয়েছে।বিকেল হয়ে গেছে তবুও বাসায় ফিরেনি হয়তো অফিসে আছে।সেদিন যে সিনক্রিয়েট করেছে মুভি দেখার জন্য।এরপর মুভির নাম নিতেও ভয় লাগে তাই কার্টুন দেখছে।
সেদিনের ঘটনা –
মেহের নিচে লিভিং রুমে বসে বসে মুভি দেখছে যেখানে নায়িকা তার ফ্যামিলির চাপে নিজের বিএফকে রেখে অন্য কোথাও বিয়ে করতে যাচ্ছে।মেহেরের পুরনো ব্যথা চারা দিয়ে উঠছে।মুভি দেখার ইচ্ছেটাই শেষ।রিমোট হাতে নিয়ে টিভি যেই বন্ধ করতে যাবে তখনই টিভি বিকট শব্দ করে ভেঙে চুরমার হয়ে কাচগুলো নিচে পড়ে গেলো।মেহের হা হয়ে চেয়ে আছে।কি হলো?
মুহুর্তেই ফায়াজের ভয়ংকর চেহেরা দেখতে পেলো।হাতের মুঠো শক্ত করে চোখমুখ শক্ত করে রেখেছে।রাগে ওর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝড়ছে।ঝড়ের বেগে মেহেরের কাছে এসে বললো,
–আর যদি কখনো এমন মুভি দেখতে দেখি তবে আজ তো টিভি ভেঙেছি পরবর্তীতে তোকে ভেঙে ফেলবো।এইসব দেখেই শিখেছিস কিভাবে একজনের সাথে প্রেম করে অন্যকে বিয়ে করতে হয়।
এরপর থেকে আর সাহস হয়নি মুভি দেখার।মেহের হেসে কুটি কুটি হচ্ছে।
ফায়াজ একরাশ ক্লান্তি নিয়ে রুমে এসে মেহেরকে এভাবে হাসতে দেখে নিজের ক্লান্তির কথা ভুলে গেলো।অবাক চোখে মেহেরকে দেখছে।বিয়ের এতদিনে এই প্রথম এভাবে মন খোলে হাসছে।
মেহের ফায়াজকে দেখে হাসি থামিয়ে দিলো।এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে বললো,
–কিছু বলবেন?
ফায়াজ নড়েচড়ে নিজেকে সামলে আমতা আমতা করে বলল,
–পাগলের মতো হাসছো কেন?আর বাচ্চাদের মতো কার্টুন দেখছো কেন?
মেহের মুখ বাকা করে বললো,
–আমি মুভি দেখলেও সমস্যা কার্টুন দেখলেও সমস্যা।তাহলে কি করবো সারাদিন?
–পড়াশোনা করবে?তোমাকে তো পরীক্ষা দিতে হবে।
ফায়াজ টাই খোলতে খোলতে বলল।
–পড়াশোনা করে কি হবে?
–কি হবে মানে?অশিক্ষিত হয়ে থাকবে?গ্রাজুয়েট কমপ্লিট না হলে কেউ তোমাকে শিক্ষিত বলবেনা।বাই দ্যা ওয়ে তোমার তো এতদিনে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হওয়ার কথা।
মেহের মুখ গম্ভীর করে বললো,এক ইয়ার গ্যাপ গিয়েছে।
ফায়াজ তাচ্ছিল্যের সাথে বললো, ওও,,এক বছর হাসব্যান্ডের জন্য শোক পালন করেছো।
মেহের রাগে গজগজ করে বললো,
নিজের জন্য শোক পালন করেছি।অন্যের জন্য সময় পাইনি।
বলেই মেহের টিভি অফ করে বের হয়ে গেলো।ফায়াজ মেহেরের কথার আগামাথা কিছু বুঝলোনা।ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
ফায়াজ অফিসে যাওয়ার পর ফোন হাতে নিয়ে বসলো।ফেসবুকে টু দিতেই অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো।মেহের নাম্বার চিনেনা তাই রিসিভ করলো না।কিন্তু বারবার বেজেই চলেছে তাই বাধ্য হয়েই ফোন রিসিভ করলো।
ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে এক নাগারে যা বললো তাতে মেহেরের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।বুক ফেটে কান্না আসছে।চোখে পানি ছলছল করছে তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
–কে আপনি? কি নাম আপনার?
চলবে,,