#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-২৫
ফাবিহা নওশীন
মেহের এমন কেন করছো?কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো?আব্বু রাগের মাথায় কি বলেছে সেটা নিয়ে এমন করার কোনো মানে হয়?রাগ কমলে ঠিক সব ভুলে যাবে।তখন আবার কাছে টেনে নিবে।
মেহের বৃষ্টির ফোটার জন্য ভালো করে চাইতে পারছেনা।ঠান্ডায় কাপছে।কাপতে কাপতে বললো,
–আব্বু সব সময় এমন করে।ছোট বেলা থেকে আমাদের লাইফের বড় কিংবা ছোট খাটো সব বিষয়ে একমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার তারই ছিলো।আমাদের লাইফের উপর আমাদের কোনো অধিকার ছিলোনা।সব সময় কেন এমন করবেন ওনি?হতে পারেন আমাদের জন্মদাতা পিতা তিনি আমাদের উপর তার অধিকার রয়েছে তার মানে এই নয় যে তার সিদ্ধান্তই সব সময় সঠিক হবে।আমি,,
–মেহের এখন এসব বাদ দেও।তুমি ঠান্ডায় কাপছো আর বেশিক্ষন এখানে থাকা ঠিক হবেনা।উঠ।
–আমামামাকে বববলতে দিনন,,,
–মেহের রিলেক্স।তুমি কথাও ঠিকমতো বলতে পারছোনা।জ্বর এসে পড়বে।উঠ।
মেহের ঠান্ডায় উঠে দাড়াতে পারছেনা।ফায়াজ ওকে পাজাকোলে করে নিলো।ওকে নিয়ে একদম ওয়াশরুমে নিয়ে দাড় করালো।মেহের কেপেই চলেছে।ফায়াজ তোয়ালে দিয়ে ওর মাথা মুছে দিলো।আরেকটা তোয়ালে ওর শরীরে জড়িয়ে শাড়ী খোলে ফেলল।তারপর কাবার্ড থেকে জামাকাপড় এনে ওকে পড়তে দিয়ে বাইরে এসে নিজেও চেঞ্জ করে নিলো।মেহের ওয়াশরুম থেকে কাপতে কাপতে বের হলো।ফায়াজ ওকে দেখে এগিয়ে গিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো।গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলো।তারপর নিচে গিয়ে কিচেনে দুধ গরম করে নিয়ে এসে মেহেরেকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলো।মেহের বাধ্য মেয়ের মতো ফায়াজের কথা মতো শুয়ে রইলো।
ফায়াজ মেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ভাবছে,
মেহেরের বাবা এমন কেন?ভিলেন টাইপ।এই ভিলেনের ভয়েই মেহের আমাকে ভালোবাসেনি শিওর।একদিকে বাবার ভয় আর অন্য দিকে ভার্সিটিতে আমার ভয়।
ফায়াজ মেহেরের কম্বলের ভিতরে ঢুকে মেহেরকে দুহাতে পেচিয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে ওর গলায় মুখ গুজে ঘুমিয়ে রইলো।
🍀🍀
এভাবে কেটে গেছে আরো ২মাস।এ দুমাসে ফায়াজ মেহেরের সম্পর্ক কিছুটা নরমাল হয়েছে।খুব ভালোবাসা না থাকলেও ফায়াজ খুব বেশি অবহেলা,অপমান করেনি মেহেরকে।মেহের এখন ফায়াজের সাথে সাহস করে দু-চার কথা বলতে পারে।ফায়াজ অনেক চেষ্টা করেছে মেহেরের বাবার সাথে কথা বলে সব ঠিক করতে।কিন্তু ওনি বড্ড বেশি জেদি।দুমেয়ের এক মেয়েকেও ক্ষমা করবেন না।তাদের জন্য অনেক অপমানিত হতে হয়েছে।
বিকেলবেলা☕
ডোরবেল বেজে উঠলো।সার্ভেন্ট গেইট খোলে দিলো।মিহু হুড়মুড় করে ঢুকে গেলো।তারপর বোনকে খোজতে শুরু করলো।
মেহের লিভিং রুমে বসে বসে চিপস খাচ্ছে।মেহেরের সামনে গিয়ে মুখ কালো করে দাড়ালো।মিহুকে এ সময়ে মুখ কালো করে রাখা অবস্থায় দেখে বুক ধক করে উঠলো।মেহের দাড়িয়ে মিহুর গালে হাত দিয়ে বললো,
–মিহু,,,কি হয়েছে?মুখ কালো কেন?
মিহু কিছু না বলে সোফায় বসে বললো,
–পানি খাবো।
মেহের পানি এনে বোনকে দিলো।মিহু পানি খেয়ে মাথা নিচু করে বললো,
–আপি,,আসলে একটা ঘটনা ঘটে গেছে।
মেহের চিন্তিত মুখে বললো,
–কি হয়েছে?উল্টো পাল্টা কিছু করিস নি তো?
–আসলে,,,ইয়ে মানে,
মেহের এবার ধমকে বললো,
–ঢং না করে বল।
মিহু মাথা নিচু করে মেহেরকে একটা পেপার এগিয়ে দিলো।
মেহের ভয়ে ভয়ে পেপারটা হাতে নিলো।
ফায়াজ ল্যাপটপে কাজ করছিলো হটাৎ নিচ থেকে মেহেরের চিতকারের শব্দ পেলো।শুধু মেহের নিয় মেহেরের সাথে আরো একজনের কন্ঠ পেলো।ফায়াজ ল্যাপটপ বন্ধ করে দৌড়ে নিচে এলো।হাপাতে হাপাতে ওদের সামনে এলো।
তারপর যে দেখলো তাতে ওর চোখ চড়কগাছ।
মেহের মিহুর হাত ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নাচছে আর দুজনেই চিতকার করছে।ওদের এভাবে দেখে ফায়াজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
–ওই তোমরা দুজন কি পাবনা থেকে আসছোনি।
ফায়াজকে দেখে দুজন থেমে যায়।
–চিতকার শুনে আমার জান যায় যায় অবস্থা আর তোমরা পাগলা ডান্স দিচ্ছো।
–ইয়ে মানে দুলাভাই,,
–কি,,ইয়ে মানে কি?এত খুশি কেন কি হয়েছে?
মেহের মিহু একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।তারপর মিহু বললো,
–সেটা আমি যাওয়ার পর আপি আপনাকে বলবে।এখন আমাদের দুজনকে একা ছেড়ে দিন।
–কেন?আবার পাগলের মতো লাফাবে?
–জ্বী হা।
ফায়াজ চলে গেলো।পিছু ফিরে একবার চেয়ে দেখলো দুজনে আবারো নাচছে।মুচকি হেসে নিজের কাজে চলে গেলো।
মিহু চলে গেছে।মেহের খুশি খুশি মুখে রুমে ঢুকলো।ফায়াজ বললো,
–কি হয়েছে?তোমরা এত খুশি কেন?
মেহের কি বলবে খোজে পাচ্ছেনা।আমতা আমতা করে বলল,
–আসলে,,
–আসলে কি,,,?
–মিহু,,
–ধুরর।তোমাকে বলতে হবেনা।আমি মিহুকে ফোন করে জেনে নেই।
ফায়াজ ফোন হাতে নিতেই মেহের চিতকার করে বললো,,
–নননায়ায়ায়া।
ফায়াজ চমকে গেলো।
–না মানে আসলে,মিহু,,মিহু প্রেগন্যান্ট।
ফায়াজ ভ্রু কুচকে বললো,প্রেগন্যান্ট!!দুই মাসেই প্রেগন্যান্ট??
মেহের চোখ বড়বড় করে ফায়াজের দিকে চেয়ে আলসেলি ভাংতে ভাংতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
মেহেরের আম্মু বসে বসে কাদছে আর চোখের পানি মুছছে।মেহেরের আব্বু অফিস থেকে বাসায় ঢুকেই মেহেরের আম্মুকে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পেল।ওনার বুঝতে বাকি রইলো না কেন কাদছে।মেয়েদের জন্য কাদছে।রোজই কাদে।মেহেরেএ আব্বু রাগান্বিত ভাবে বললো,
–তোমার সমস্যা কি?রোজ এই নেকাকান্না না করলে নয়?
–আমি নেকা কান্না করছি?আমি কোনো দিন তোমার মুখের উপর কিছু বলিনি।যা বলেছো মেনে নিয়েছি কিন্তু আর পারছিনা।কোনো বাবা এতটা নিষ্টুর,পাষাণ কি করে হতে পারে?দুইটা মাত্র মেয়ে।ভুল নাহয় করেছে তাই বাবা হয়ে এভাবে পর করে দিতে পারলে?কেমন বাবা তুমি?আজীবন শুধু নিজের কথাই ভেবে আসলে।একবারের জন্যও কি মেয়েদের কথা মনে পড়ে না।তুমি এতটা পাষাণ??
–তোমার কি মনে হয় আমার কষ্ট হয়না?
–হয়।কষ্ট তোমারও হয়।কিন্তু তোমার ওই কষ্ট তোমার ইগো আর জিদের কাছে হেরে যায়।তোমার জিদের কাছে তোমার কষ্ট নিতান্তই তুচ্ছ।তুমি কি জানো,মিহু আমার বাচ্চা মেয়েটা মা হতে চলেছে?
–কি মিহু?
–হ্যা।আমাকে ফোন করেছিলো।ফোন করে অনেক কান্নাকাটি করছিলো।মেয়েটা মা হচ্ছে,এত দিন হলো বিয়ে হয়েছে কিন্তু বাপের বাড়ি থেকে কেউ খোজ নেই নি।কষ্ট তো হবেই।
মিহুর বাবার চোখমুখ খুশিতে চকচক করছে।তিনি নানা হতে চলেছেন।এক মুহুর্তেই সব রাগ,অভিমান ধোয়ে মুছে গেছে।
–আমি নানা হবো।আমি এখনি মিহুকে ফোন করছি।
মিহুর বাবার কথায় মিহুর মা বেশ অবাক হলো।হটাৎ করে এমন পরিবর্তন।নানা হওয়ার খুশিতে সব ভুলে গেছে।নতুন বাচ্চা প্রতিটি পরিবারে খুশি বয়ে আনে।
মিহুর বাবা মিহুকে ফোন করছে।মিহু বাবার ফোন দেখে খুশিতে কেদে দিয়েছে।
কাদতে কাদতে ফোন রিসিভ করলো।
–আব্বু,,,
–কিরে কাদছিস কেন?
–তুমি আমাকে এতদিন পর ফোন করেছো।
কেমন আছো?
–ভালো আছি মা।আমাকে ক্ষমা করে দে মা।আমি তোর খোজ খবর নেইনি।আমি আজ অনেক খুশি।আমি নানা হচ্ছি।তুই বাড়িতে আয় মা।তোকে একটু দেখবো।
মিহু খুশির মুখ হটাৎ কালো হয়ে গেলো।
–আব্বু,আমি আসবো কিন্তু আপি,,,আপিকে ছাড়া,,
–তুই কি ভাবছিস,,তোকে একা আসতে বলবো,মেহেরকেউ বলবো।
–সত্যি??
–হুম।আমি এখনি মেহেরকে ফোন করবো।বাড়িটা ফাকা ফাকা হয়ে আছে।তোরা এসে মাতিয়ে দে।
মেহের ফোন হাতে নিয়ে কাদছে।কিছুক্ষণ আগে আব্বু ফোন করেছিলো।ফোন করে কেদেছে।ক্ষমা চেয়েছে।সেই খুশিতে মেহেরও কাদছে।
ফায়াজ মেহেরকে একের পর এক টিস্যু এগিয়ে দিচ্ছে আর জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে।কিন্তু মেহের কেদেই যাচ্ছে বলার নাম নেই।ফায়াজ এবার বিরক্ত হলো।
ধমক দিয়ে বললো,
–বলবা নাকি এভাবে ভ্যা ভ্যা করে যাবে?
ফায়াজের ধমক খেয়ে কান্নার বেগ বেড়ে গেলো।
হায় আল্লাহ,, এ আমি কি করলাম?এখন তো আর কান্না থামবেই না।ফায়াজ বললো,
–ওকে,সরি,,আমার ভুল হয়ে গেছে।আমার টেনশন হচ্ছে।কি হয়েছে প্লিজ বলো।
মেহের কান্না থামিয়ে বললো,
–আব্বু ফোন করেছিলো।ফোন করে কেদেছে।ক্ষমা চেয়েছে।আর বলছে আগামীকাল যেন আপনি আর আমি যাই।মিহুও আসবে।
–হটাৎ?
–আসলে মিহু প্রেগন্যান্ট এটা শুনে আব্বু অনেক খুশি হয়েছে।আর এই খুশিতে আমাদের দু বোনকেই ক্ষমা করে দিয়েছে।মিহুর বেবি আমাদের জন্য লাকি।
ফায়াজের মুখ কালো হয়ে গেলো।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,
–ওহ,,তাহলে আমরা কাল যাচ্ছি।
বলেই ফায়াজ চলে গেলো।ফায়াজের কালো মুখ আর দীর্ঘশ্বাস মেহেরের চোখ এড়ায়নি।
পরেরদিন —
মেহের মিহু ওদের বাবার বাসার লিভিং রুমে বসে বসে গল্প করছে।তখনই আহিল এসে বসলো
–গার্লস কি নিয়ে কথা হচ্ছে??
মেহের হেসে বললো,
–ভাইয়া মিহুর বেবি নিয়ে কথা বলছি।ইউ ক্যান জয়েন আস।
–আপু,,আপনি মিহুর বড় বোন।আমাকে ভাইয়া বলবেন না।নাম ধরে ডাকবেন প্লিজ।বয়সে বড় হতে পারি কিন্তু সম্মানে আপনি বড়।
ফায়াজ ওদের জয়েন করলো।মিহু মেহেরের পাশে জায়গা ছেড়ে দিয়ে আহিলের পাশে গিয়ে বসলো।হটাৎ করেই মিহু মুখে হাত দিয়ে দৌড়ে ছুটে গেলো।মেহের দাঁড়িয়ে গেলো।
আহিল বললো,
–আপু,আপনি বসুন।আমি দেখছি।আহিল মিহুর পিছনে গেলো।
মেহের দাঁড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর মিহু আসলো। মেহের মিহুকে ধরে বসালো।
–মিহু ঠিক আছিস?
–হ্যা,আপি ঠিক আছি।
আপি সাভেন্টকে বলো ওয়াশরুম পরিস্কার করে দিতে।বমিতে,,
আহিল পিছন থেকে বললো,
–আমি পরিস্কার করে দিয়েছি।
মেহের অবাক হয়ে বললো,
–তুমি,,এসব কেন করতে গেলে?কাজের লোক আছে, আমরা আছি।
–তাতে কি আপু।আমি মিহু আর আমার বেবির জন্য একটু করতে পারবোনা।
–আপি আর বলিস না।বাসায়ও এই করে।আমি বিছানাপত্র তলিয়ে ফেলি।ও একটুও রাগ করেনা।নিজ হাতে সব পরিস্কার করে।অনেক কেয়ারিং।
আহিল বললো,
–মিহু তোমাকে ক্লান্ত লাগছে।চলো রেস্ট নিবে।
–উহু,,আমি এখানেই থাকবো।সারাদিন এত রেস্ট নিতে নিতে বোর হয়ে গেছি।
–আচ্ছা।তাহলে আমার কাধে ভর রেখে গল্প করো।
বলেই আহিল মিহুর মাথা ওর কাধে রাখলো।ওর মাথায় চুমু খেলো।
মিহু ফায়াজকে চুপচাপ দেখে বললো,
–আপনি এতো চুপচাপ কেন?
–কই চুপচাপ।আমি তো তোমাদের দেখছি তোমরা কত সুইট কাপল।
মিহু নাক টেনে বলল,
–কেন আপি আর আপনি সুইট কাপল নয়?
ফায়াজ মেহেরের দিকে চেয়ে বললো,
–হ্যা,অবশ্যই।আমি একটু আসছি।তোমরা কথা বলো।
ফায়াজ উপরে চলে গেলো।
–আপি,,ভাইয়ার কিছু হয়েছে?আসার পর থেকেই দেখছি কেমন মনমরা।
–না,,কি হবে?
যদিও মেহের খেয়াল করছে গতকাল থেকেই ফায়াজ চুপচাপ হয়ে আছে।কিছু একটা হয়েছে সেটা মেহের ভালোই বুঝতে পারছে কিন্তু কি হয়েছে সেটা জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছে।কখন আবার হুটহাট রেগে যায়।
পরেরদিনই ফায়াজ মেহের নিজেদের বাসায় ফিরে আসে।ফায়াজের একটা বিজনেস পার্টি আছে সেখানে দুজনকেই যেতে হবে।তাই মেহের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফায়াজের সাথে ফিরে গেলো।
ফায়াজ পার্টিতে যাবার জন্য রেডি হয়ে বসে আছে।
–আমাদের বের হতে হবে তাড়াতাড়ি করো মেহের।
মেহের তাড়াহুড়ো করে ফায়াজের সামনে এলো।
–আমার হয়ে গেছে।
ফায়াজ একবার মেহেরের দিকে চোখ বুলিয়ে বেডে বসে পড়ল।তারপর দুহাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ শান্ত স্বরে বললো,
–শাড়ি চেঞ্জ করে অন্য কালার শাড়ি পড়ে এসো।
মেহের ফুল হাতা কালো রঙের ব্লাউজের সাথে লাল সিল্কের কালো পাইরের শাড়ি পড়েছে।যেমনটি ভার্সিটিতে প্রথমবার শাড়িতে দেখেছিলো মেহেরকে ফায়াজ,ঠিক তেমনই লাগছে।যার কারণে ফায়াজের ব্যথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।পুরনো মেহেরকে মনে পড়ে যাচ্ছে।
মেহের তখনো থ দাড়িয়ে।ও বুঝতে পারছেনা এই শাড়িতে কি প্রব্লেম।যথেষ্ট দামি শাড়ি,পার্টির জন্য পারফেক্ট।মেহেরের প্রিয় রং লাল।তাই শখ করে এত সময় নিয়ে শাড়ি পড়েছে।এখন চেঞ্জ করতে বলছে।
–কি হলো শুনতে পাওনি??
মেহের আমতা আমতা করে বলল,
–এই শাড়িতে কি সমস্যা?আর তাছাড়া চেঞ্জ করতে অনেক সময় লাগবে।আর আপনি তো বলছেন সময় কম।তাই এই,,,
মেহের আর কিছু বলতে পারলোনা তার আগেই ফায়াজ ঝড়ের বেগে এসে মেহেরের শাড়ির কুচি ধরে টান মেরে খুলে ফেললো।
মেহের হা হয়ে নিজের দিকে চেয়ে আছে।
–যাও এবার চেঞ্জ করো।
মেহের ছলছল চোখে ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে।
–কি হলো শুনতে পাওনি?
মেহের চোখমুখ শক্ত করে বলল,
–চেঞ্জ যখন করতে বলেছেন করবো তবে এমন ব্যবহারের কারণও আমি জানতে চাই।
–তোমাকে কোনো কৈফিয়ত দিতে রাজি নই।তুমি আর কখনো লাল শাড়ি পরবেনা।মাইন্ড ইট।
বলেই ফায়াজ রুম থেকে বের হয়ে গেলো।মেহের চোখের পানি ছেড়ে কাদতে লাগলো।
মেহের কালো শাড়ি পরে গাড়িতে বসে আছে পাশেই ফায়াজ ড্রাইভ করছে।মেহেরকে কিছুক্ষণ পর পর আড়চোখে দেখছে।মেহের মুখ গুমড়া করে বসে আছে।ফায়াজ গাড়ি থামিয়ে দিলো।হটাৎ ব্রেক করাতে মেহের ফায়াজের দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না।
ফায়াজ মেহেরকে বললো,
–আই এম সরি।তখন তোমার সাথে অমন ব্যবহার করার জন্য।
–………
ফায়াজ আবারো গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মেহের চুপচাপ ভাবেই বসে আছে।মুখ তখনো গোমড়া করা।ফায়াজের একটুও ভালো লাগছে না।
–মেহের সরি বলেছি তো।আর কি চাও?
–আমি চাই আপাতত আপনি আমাকে বিরক্ত না করুন।
–আমি তোমাকে বিরক্ত করছি?
–…..
–চুপ করে আছো কেন?কথা বলো।
–আমার কিছু বলতে ভালো লাগছে না।
–ঠিক আছে কিছু বলোনা কিন্তু মুখটা ঠিক করো।আমরা পার্টিতে যাচ্ছি।
মেহের ওভাবেই বসে আছে।না কথা বলছে না মুড থিক করছে।ফায়াজের রাগ উঠে গেলো।আচমকা গাড়ি ঘুরিয়ে ফেললো।মেহের অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–গাড়ি ঘুরাচ্ছেন কেন?
ফায়াজ দাতে দাত চেপে বললো,
–আমরা কোথাও যাচ্ছিনা।
–কিন্তু আপনার জন্য তো পার্টিটা অনেক ইম্পর্ট্যান্ট।
–আমার জন্য কি ইম্পর্ট্যান্ট সেটা তুমি কখনও বুঝোনি বুঝার চেষ্টাও করোনা।
–ফায়াজ প্লিজ।
ফায়াজ কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।মেহেরও ফায়াজের চেহেরা দেখে আর কিছু বলতে পারলোনা।মেহেরকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে কোথাও বের হয়ে গেলো।অনেক
রাত হয়ে গিয়েছে কিন্তু বাসায় ফিরার নাম নেই।মেহেরের অনেক চিন্তা হচ্ছে।বারবার ফোন করেও ফায়াজের খোজ পাচ্ছেনা।ফোন বন্ধ বলছে।ওর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
মাঝরাতে হটাৎ ঘুম ভাংলে কারো কান্নার শব্দ পেলো।মেহের চোখ খোলে বিছানায় ফায়াজকে পেলোনা।উঠে বসতেই সোফার দিকে চোখ গেলো।ফায়াজের হাতে ওয়াইনের বোতল।মাথা নিচু করে আছে। কান্নার শব্দ ওখান থেকেই আসছে।মেহের বেড থেকে নেমে ফায়াজের কাছে গেলো।মেহের বুঝতে পারলো ফায়াজ কাদছে।ও ফায়াজের কাধে হাত রাখতেই ফায়াজ মেহেরের হাত সরিয়ে দিলো।মেহের আবারো ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–ফায়াজ কি হয়েছে তুমি কাদছো কেন?
ফায়াজ ওয়াইনের বোতলে আরেকবার চুমুক দিয়ে নাক টেনে বললো,
–মিহু প্রেগন্যান্ট,আহিল আর মিহু কত সুইট কাপল।ওরা কত হ্যাপি।ওদের বেবি আসছে।কিউট একটা বেবি হবে,,,
–হ্যা,তাতো হবেই।
ফায়াজ চিতকার করে বললো,
–আমার কি আছে মেহের?আমাকে তুমি কি দিয়েছো?
চলবে,,,
(আগামী পর্বে সব খোলাসা হবে।)