#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-১৫
ফাবিহা নওশীন
মেহের রুমে ঢুকতে যাবে তখনই হেচকা টান অনুভব করলো।টানের চুটে পিছিয়ে গেলো দরজার সামনে থেকে।
ফায়াজ ওর হাত ধরে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে।মেহের ঢুক গিলে বললো,
–কি হলো আপনি আমার হাত ধরে রেখেছেন কেন?চাড়ুন ক্লাসে যাবো।
–কেন ধরেছি জানোনা?আর কতো এভয়েড করবে?তুমিই গিয়েছিলে তাইনা?আমি স্বপ্ন টপ্ন দেখিনি।
মেহের মাথা নিচু করে আছে।ওর কাছে দেওয়ার মতো উত্তর নেই।ফায়াজ ওর থুতনি ধরে মুখ উচু করে নিজের গালের দিকে এক আংগুল দিয়ে ইশারা করে বললো,
–এসব সত্যি ছিলো তাই না?তুমি কাল আমাকে,,,।
মেহের বললো, আমি আপনার গালে কিছু করিনি।
ফায়াজ হেসে বললো,আমি কই বললাম কিছু করেছো,,আমি তো বললাম তুমি আমায় স্পেশাল কিছু বলে ছিলে।
কি বলো?
মেহের বললো,,আমি আপনাকে কিছু বলিনি।আপনি সব স্বপ্ন দেখেছেন।
ফায়াজ বাকা হেসে বললো, ছিঃছিঃ তুমি একটা ছেলের বাসায় গিয়ে তার বেডরুমে তাও তার বেডে গিয়ে একসাথে,,,তুমি এই কাজটা কি করে করতে পারলে?
মেহের এবার প্রায় কাদো কাদো অবস্থা।ফায়াজের প্রচুর হাসি পাচ্ছে তবুও নিজের হাসিটা দমিয়ে রেখে বললো,
–সে যাইহোক তুমি তো বলছো তুমি আমাকে ভালোবাসি বলোনি,,তাহলে আর তোমার কাছে সময় নষ্ট করে কি লাভ?? তুমি ক্লাস করো আমি নতুন কাউকে খোজে নেই।এভাবে আর কতদিন সিংগেল থাকবো??
বলেই ফায়াজ হাটা ধরলো।
মেহেরের আর কিসের ক্লাস?ও ফায়াজের পিছু পিছু হাটা ধরলো।আর নিজেকে বকছে।এত ভাব দেখানোর কি দরকার ছিলো।সব কিছুতো ইজি ছিলো।বলেই ফেলতি হ্যা কালকে আমি গিয়েছিলাম।তাহলে সব সলভ হয়ে যেতো।এখন তো আরো প্যাচ লেগে গেলো।হিরো আমার হাত থেকে নিকাল যাচ্ছে।এখন আমি কি করি??
ফায়াজ গিয়ে বেঞ্চে বসে পড়ল।ও জানে মেহের ঠিক আসবে।মেহের এসে ওর পাশে বসে পড়লো।ফায়াজ দেখেও না দেখার ভান করছে।ফোন নিয়ে বিজি।
মেহের বিরক্ত হয়ে ওর হাত ধরে টান দিলো।ফায়াজ ওর দিকে না তাকিয়েই বললো,
–কিছু বলার থাকলে তাড়াতাড়ি বলে কেটে পড়ো।আমার বিশেষ কাজ আছে।
–কি কাজ?
–তোমাকে কেন বলবো?
–তা কেন বলবেন?আমাকে না বললেও আমি জানি নতুন একজন পটানোর ধান্দায় ব্যস্ত।
–ভুল বললে,,অলরেডি পটে গেছে।মেয়েটা খুব সুন্দরী।ফোনে পিক আছে,চাইলে দেখতে পারো।
ফায়াজ ফোন সামনে এনে বললো, কি দেখবে?
মেহের কাদো কাদো হয়ে বললো,
–আপনি সত্যি সত্যিই,,
–জ্বি সত্যি সত্যিই।
মেহের এবার কেদে দিলো।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই চলেছে।থামার আর নাম নেই।
ফায়াজ টিস্যু ধরলো।মেহের টিস্যু নিয়ে চোখ মুখ মুছছে আবার কেদে ভাসিয়ে ফেলছে।ফায়াজ বারবার টিস্যু ধরেই যাচ্ছে আর মেহের মুছেই যাচ্ছে।কেউ কোনো কথা বলছেনা।
ফায়াজ মনে মনে বলছে, আজ তোমাকে স্বীকার করিয়েই ছাড়বো।
–আরো কাদবে?
–তাহলে কি করবো?আপনি আমাকে ছেড়ে দিচ্ছেন কোন সুন্দরীর জন্যে।এখন আর আমাকে ভালোলাগেনা।এখন আর আমাকে ভালোবাসেন না।
মেহের আরো একটা টিস্যু নিলো।
–তুমিও তো বাসোনা??
–কে বলেছে বাসি না?
–মেহের বলেছে।
মেহের নাক ফুলিয়ে বললো,মিথ্যা বলেছে।আমি বাসি?
–কি বাসো?
–ভালোবাসি।
–এই তো গুড গার্ল।সবটা স্বীকার করে নিলে।
মেহের এবার ফায়াজের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ফায়াজের দিকে চেয়ে আরো জোরে কেদে দিলো।
ফায়াজ হাহা করে হেসে মেহেরের মাথাটা বুকে চেপে ধরলো।তারপর বললো,
–আমার কাদুনি সুইটহার্ট,,ফায়াজ এই বুকে এই মনে মেহেরকে ছাড়া আর কাউকে কোনোদিন জায়গা দিবেনা।প্রমিস।তবে তোমাকেও বলছি তোমার আশেপাশে যেন আমি ছাড়া কোনো ছেলে না থাকে।এটা আমি বরদাস্ত করবোনা।সো বি কেয়ারফুল।নাও কুল বেবি।
ফায়াজ নিজ হাতে মেহেরের চোখের পানি মুছে দিলো।
এদের ভালোবাসার অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।মেহের ২য় বর্ষে পড়ছে।ফায়াজের কিছুদিন পর ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা।
মেহের ডিপার্মেন্টের বারান্দায় বসে আছে।কিন্তু কিছুতেই স্যারের লেকচার মিলাতে পারছেনা।তখনই ক্লাসের টপার বয় আলিফ এসে বলল,
–কি ব্যাপার মেহের?কি নিয়ে এতো বিরক্ত?
–দেখ না।কিছুতেই বুঝতে পারছিনা।
–আমি কি তোমাকে হেল্প করবো?
মেহের চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বললো,
–হ্যা,অবশ্যই।
আলিফ হাতের আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আর মেহের খুব দ্রুত লিখে যাচ্ছে।হটাৎ ই কেউ আলিফকে হেচড়া টান মেরে উঠিয়ে এত জোরে থাপ্পড় মারলো যেন তার আওয়াজ পুরো বিল্ডিংয়ে বাড়ি খাচ্ছে।
ফায়াজকে দেখে মেহের দাড়িয়ে গেলো।মেহেরের হাতে থাকা বই,খাতা,কলম পড়ে গেলো।ফায়াজ আবার আলিফের কলার চেপে ধরলো।মেহের ফায়াজের সামনে গিয়ে দাড়ালো।
–ফায়াজ ওকে ছেড়ে দেও।ওর কোনো দোষ নেই।ও কিছু করেনি।আমিই ওকে ডেকে এনেছি।ওকে ছেড়ে দেও।যা বলার আমাকে বলো।যা দোষ আমি করেছি।প্লিজ।
ফায়াজ মেহেরের দিকে চোখ গরম করে চেয়ে বললো,
–তুই কি ভেবেছিস তোকে ছেড়ে দেবো?
ফায়াজের এমন দৃষ্টি আর কথায় মেহের অনেক ভয় পেয়ে গেলো।তবুও নিজের কথা না ভেবে বললো,
–আপনার যা ইচ্ছে তাই করবেন।কিন্তু ওকে ছেড়ে দিন।
মেহের ফায়াজের বন্ধু ইমরুলের দিকে তাকিয়ে দুহাত জোর করে বললো, প্লিজ।
ইমরুল ফায়াজকে বললো,
–দোস্ত ছাড় একে।বাচ্চা ছেলে বুঝেনি।আর কখনো এমন করবেনা।
ফায়াজ চিতকার করে দাতে দাত চেপে বললো,
–বাচ্চা ছেলে,,ও কি অন্য গ্রহে বসবাস করে?ও কি জানে না?ওর সাহস হলো কি করে মেহেরের সাথে ঘেষে বসার।মেহেরের দিকে ওভাবে তাকানোর??
মেহের বললো,
–ওকে ছেড়ে দেও।আমি আর কখনো ওর সাথে কথা বলবোনা।ওর আশেপাশে যাবো না,ওর দিকে তাকাবোনা পর্যন্ত।প্রমিস করছি।
ইমরুল জোর করে ফায়াজের হাত থেকে আলিফকে ছাড়ালো।
ফায়াজ আলিফকে ছেড়ে মেহেরের হাত ধরে টানতে টানতে একটা ফাকা রুমে নিয়ে গেলো।ওর হাত ছেড়ে ডান গাল বরাবর একটা থাপ্পড় মারলো।থাপ্পড়ের জন্য তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলো।তারপর গালে হাত দিয়ে ওভাবেই রইলো।ফায়াজ ওকে টেনে তুলে বললো,
–তোকে কি বলেছিলাম?কি বলেছিলাম??
চিতকারে মেহের ভয়ে কেপে উঠলো।
–তোকে বলেছিলাম যা খুশি কর,আমি কিচ্ছু বলবোনা।শুধু ছেলেদের আসেপাশে ঘেষবিনা।বলেছিলাম না ছেলেদের আসেপাশে ঘেষলে একদম মেরে ফেলবো।ভয় নেই তোর?
ফায়াজ মেহেরের গাল চেপে ধরে বললো,
–কি করছিলি ওর সাথে?কেন ডেকেছিলি?
মেহেরের গাল দুটো ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।কিন্তু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে না।
ফায়াজ ওর গাল ছেড়ে দিয়ে বললো,এবার বল কি করছিলি ওর সাথে?
মেহের কাদতে কাদতে বললো,ক্লাসের লেকচারের প্রব্লেম সলভ করতে হেল্প করছিলো।
ফায়াজ আবারও গলা চেপে ধরলো।
–তুই আর মানুষ পাসনি?আমাকে বলতি আমি তোকে তোর লেকচারালের কাছে নিয়ে বসিয়ে দিতাম।তুই ওই বদমাইস ছেলের সাথে ঘেষে বসেছিলি।তুই জানিস ও কিভাবে তোর দিকে চেয়ে ছিলো?
মেহের কাপাকাপা গলায় বলল,
–আমি বুঝতে পারিনি।
–বুঝতে পারিসনি?জানিস না আমি আমার জিনিস কারো সাথে শেয়ার করি না।
মেহের কেদেই চলেছে।
ফায়াজ মেহেরের গলা ছেড়ে দিলো।ওর গালের দিকে খেয়াল করলো।গালে পাচ আংগুলের দাগ বসে গেছে।
মেহেরকে ক্যানটিনে নিয়ে গেলো। একটা চেয়ারে বসিয়ে পানি খেতে দিলো।মেহের পানি খেলো।ওর চোখের পানি শুখিয়ে এসেছে কিন্তু একটু পর পর জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে।ফায়াজ কোথাও চলে গেলো। মেহের গালে হাত দিয়ে আউচ করে উঠলো।গাল ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছে।গরম উত্তাপ বের হচ্ছে।গালে থেকে হাত সরিয়ে নিল।ফায়াজ একটা বাটি নিয়ে ওর পাশে এসে বসলো।বাটিতে বরফ।
ফায়াজ মেহেরের গালে বরফ ছুয়াতেই মেহের আহ করে উঠলো।ফায়াজ কিছু না বলেই বরফ লাগাচ্ছে।
তারপর বললো,আর কখনো যেন আমি তোমাকে ওই ছেলের আশেপাশে না দেখি।মনে থাকবে?
মেহের মাথা নাড়িয়ে হু বললো।
আবারো বরফ ছুয়াতেই না চাইতেও মেহের আহ করে উঠলো।ফায়াজের খুব কষ্ট হচ্ছে মেহেরকে মেরে।নিজের হাতটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু মেহেরের সামনে প্রকাশ করলো না।
–খুব ব্যথা করছে??
মেহের কিছু বললো না।
–ও তোমার দিকে যেভাবে তাকাচ্ছিলো,আমার প্রচন্ড রাগ উঠে গিয়েছিলো।আমি তোমাকে মারতে চাইনি।
মেহের এবারো কিছু বললো না।ফায়াজ বুঝতে পারছে মেহের অভিমান করেছে।
মেহের ওয়াশরুমে গিয়ে নিজের মুখটা দেখছে।
ফুলে লাল হয়ে গেছে।ফায়াজ ওকে মেরেছে এটা ভেবেই বুক ফেটে কান্না আসছে।শরীরের ব্যথার চেয়ে মনের ব্যথা অধিক কষ্টকর।মেহের সেটাই অনুভব করতে পারছে।
ফায়াজ এখনো ক্যানটিনে বসে আছে।
ফায়াজের মাথা থেকে ঘটনাটা বের ই হচ্ছেনা।হাজার চেষ্টা করেও ঝাড়তে পারছেনা।ফায়াজ উঠে গিয়ে ক্যানটিনের কিচেনে গিয়ে একটা ছুরি এনে হাতে পুচ দিয়ে কেটে ফেললো।রক্ত ভেসে যাচ্ছে।ওর বন্ধুরা ওর এমন কাজ দেখে হতবাক।
–দোস্ত কি করলি?
–আমি মেহেরকে অনেক মেরেছি?ও অনেক কষ্ট পেয়েছে।
–তাই বলে,,মারিস ই বা কেন আর পরে কষ্ট ই বা পাস কেন?
ওর হাত ব্যান্ডিজ করে দিলো।
ফায়াজ আর মেহের পাশাপাশি সিটে বসে আছে গাড়িতে।কেউ কারো সাথে কথা বলছেনা।তাকাচ্ছেও না।ফায়াজ কাটা ডানহাত দিয়েই ড্রাইভিং করছে।মেহেরকে গ্লাসে দেখছে।মুখ কালো করে বসে আছে।
ফায়াজ বা হাত দিয়ে মেহেরের হাত ধরলো।
–মেহের আই এম সরি।আমি জানি আমি ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি।কিন্তু আমি তখন নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারি নি।তুমি জানো আমি তোমার ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস।আমার সব চিন্তা,সব অস্থিরতার কারণ তুমি।সেই অস্থিরতা থেকে,,
–গাড়ি থামান…
ফায়াজ গাড়ি থামিয়ে দিলো।
–কি হলো মেহের??
–আপনার ডান হাতে কি হয়েছে?
ফায়াজ আমতা আমতা করে বলল,
–কিছুনা,ওই ক্যানটিনে কিভাবে যেন একটু লেগে গেছে।
মেহের অবিশ্বাসের চোখে বললো,
–হাত দিন আমি দেখবো।
কি হলো দিন।
ফায়াজ হাতটা বাড়িয়ে দিলো।
মেহের হাত ধরে দেখলো।সাদা ব্যান্ডেজ রক্তে লাল হয়ে আছে।ছুপ ছুপ রক্তের শুখনো দাগ।
মেহের ফায়াজের দিকে চেয়ে কেদে দিলো।ওর আর বুঝতে বাকি নেই ফায়াজ কি করেছে।
–মেহের,,আমার লক্ষীসোনা বউটা কাদে কেন?কান্না থামাও।কিচ্ছু হয়নি।
–তুমি অনেক খারাপ।কি করেছো এটা?
ফায়াজ মেহেরের মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে বললো,
–আমি আমার জানটাকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকতে চাইনা।
–আপনার সাথে আমি কথা বলবো না।
–তাহলে তো আমি মরে যাবো।
–মরে যান,,
ফায়াজ মেহেরকে ছেড়ে বললো,
–তোমার এই অভ্যাস গেলোনা?এই তুমি বলো আবার আপনি,, তোমাকে না আপনি বলতে মানা কতেছি।
–মুখে এসে পড়ে। আর আসবে নাই কেন?
আপনার বয়স কত?
–২৪,,,
–আমার এপ্রিলে ২০বছর হবে।তাহলে দেখুন আপনি আমার চেয়েও কত বড়।আপনাকে তুমি কতে কেন বলবো?
–আমি বলছি তাই বলবে।
–আমি দুটোই বলবো।আমার ইচ্ছে।
ফায়াজ হতাশ হয়ে বললো,
–আচ্ছা,তোমার ইচ্ছে।
ফায়াজ গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
–মেহের তুমি আমার উপর আর রেগে নেই তো??
–উহু।
–কালকে থেকে আমার ফাইনাল পরিক্ষা।তোমার খেয়াল ঠিকমতো রাখতে পারবোনা।নিজের খেয়াল নিজে রেখো।আর সাবধান,, আবারো বলছি,,
–আর বলতে হবেনা,আপনার হাতের ওই থাপ্পড় খাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।আমার এত সুন্দর গাল ফুলে কি বিশ্রী অবস্থা।এখনো দাউদাউ করে জ্বলছে।
–এসো একটু আদর করে দেই।
মেহের দু’হাতে গাল ধরে বললো,
–কোনো দরকার নেই।
ফায়াজ হাসছে।আমি তো তাও বললাম।কই আমার হাতেও তো ব্যথা করছে কেউ তো আমাকে বললো না।
মেহের মুখ ভেংচি দিলো।
নির্ধারিত স্থানে গাড়ি এসে থামলো। মেহের বের হওয়ার আগে বললো,
–ডান হাত বাড়ান।
ফায়াজ হাত বাড়িয়ে দিলো।মেহের ফায়াজের কাটা হাতে ঠোঁট ছুয়ে দরজা খোলে বের হয়ে গেলো।ফায়াজ সেখানে বসেই মেহেরের যাওয়া দেখছে।
ফায়াজের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে মেহেরেএ জন্য অপেক্ষা করে তারপর একসাথে বাসায় ফিরে।মেহের খুব সাবধানে থাকে।মেহেরের ফায়াজের হাতের থাপ্পড় খাওয়ার ইচ্ছে নেই।তাই ছেলেদের থেকে দূরে দূরে থাকে।
ফায়াজের আজ পরীক্ষা শেষ।মেহের আর ফায়াজ একসাথে বাসায় ফিরছে।কারো মুখে কথা নেই।দুজনেরই মন খারাপ।ফায়াজ ৭দিনের জন্য লন্ডন যাচ্ছে।৭দিন একে অপরের থেকে দূরে থাকবে।তাই ওদের প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে।
–মেহের কাল চলে যাচ্ছি।আর তুমি এখনো মুখ ভার করে বসে আছো?৭দিন তো এই চেহেরা মনে পড়ে কষ্ট পাবো।তুমি কি তাই চাও?
–কি করবো মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।৭দিন আমার জন্য অনেক বড় কিছু।
–কি করবো বলো?মম বারবার বলছিলো আর ফাইয়া এমন ভাবে বললো না করতে পারলাম না।আমি ওখানে গিয়ে সবাইকে তোমার আর আমার কথা জানাবো।তারপর মম,বাবা তোমার বাসায় আমাদের বিয়ের কথা বলতে যাবে।তারপর আমি তোমাকে নিজের করে নিবো।
মেহের ফায়াজের কথা শুনে কিছুটা লজ্জা পেলো।
তখনই মেহেরের ফোন বেজে উঠলো।সামিরা ফোন করেছে।সামিরার ফোন দেখেই মেহের জিহবায় কামড় দিলো।ফোন রিসিভ করতে যাবে তখনই ফোন অফ হয়ে গেলো।
মেহের বললো,
–ওহহ,নো।
–কি হলো?
–সামিরা ফোন করেছিলো।আমি ওকে অপেক্ষা করতে বলে তোমার সাথে চলে এসেছি।ভুলেই গিয়েছি ওর কথা।নিশ্চয়ই রেগে আছে।ফোনও ইফ হয়ে গেলো।
–চার্য নেই?
আমারটা নেও।
–কয়েকদিন যাবত ফোনটা ডিস্টার্ব দেয়।হয়তো ব্যাটারি প্রব্লেম।আসার সময় আম্মুকে বলে এসেছি আব্বুকে যেন নতুন ফোন নিয়ে আসতে বলে।ফোনে আমাকে না পেলে চিন্তা করোনা।মেসেজ দিয়ে রেখো আমি ফোন করে নিবো।
–আচ্ছা,আমার ফোন নিয়ে এখন সামিরাকে ফোন করে বলে দেও যেন অপেক্ষা না করে।
মেহের সামিরাকে ফোন করে বলে,
–আমি মেহের,,এইটা ফায়াজের নাম্বার আমার ফোন অফ হয়ে গেছে।সরি দোস্ত রাগ করিস না আমি তোর কথা ভুলে গেছি।
–কুত্তা হারামি,তোকে পাই।আমাকে বসিয়ে রেখে লাভারের সাথে পালিয়েছো।কালকে আয়,,,
–সোনা পাখিটা রাগ করেনা।মাথায় পানি দিয়ে বাসায় যা।
–তুই কালকে পিঠে বস্তা বেধে আসিছ।
–আমি আসবো না কালকে।
–কালকে না আসলি যেদিন পাবো সেদিন প্রতিশোধ নিবো।
–আমি আর আসবোই না।তুই আমাকে আর পাবিনা।বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে যাচ্ছি।আমার শ্বশুর বাড়ি এসে মারতে হবে।পারবি?
–কুত্তা,,রাখ।যা তুই শ্বশুর বাড়ি।
–লাভিউ।
ফোন রেখেই মেহের হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।সামিরা খুব রেগে আছে।আমাকে পেলে গিলে খাবে।
–শুনো আমি কালকে ভার্সিটি যাবো না।
–সামিরার ভয়ে?
–উহু,,তোমার লন্ডন যাওয়ার শোকে।
–ক্লাস কেন মিস করবে?
–প্লিজ,প্লিজ।
–আচ্ছা।
–কখন তোমার ফ্লাইট?
–৮টায়।৭টায় বের হতে হবে।বাসায় গিয়ে প্যাকিং করতে হবে।
–রাতে আমাকে ফোন করো।আর সকালে বের হওয়ার সময় মেসেজ করো।
মেহেরের নামার জায়গায় গাড়ি এসে থেমেছে।মেহের নামছেনা আর ফায়াজও নামতে বলছেনা।দুজনেই চুপ।
–কেন জানি মনে হচ্ছে একে অপরের থেকে অনেক দূরে হারিয়ে যাচ্ছি।
–দূর বোকা।মাত্র ৭দিন
ফায়াজ মুখে বললেও ওর মাঝেও এক অস্থিরতা কাজ করছে।
–মেহের আর যাই করো,,৭দিনে আমাকে ভুলে যেওনা।প্লিজ।
–হু।
–এবার বাই বলো।বাসাও যাও।
–আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা।আপনি আমাকে তাড়াতে কেন চাইছেন?
–আমারো তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা।মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।আর পাবোনা।
ফায়াজ হটাৎ গাড়ির কাচ লাগিয়ে দিলো।গাড়ির কাচ লাগানোতে মেহের কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।ফায়াজ মেহেরের দিকে ঝুকে মেহেরকে হাগ করলো।মেহেরও দুহাতে জড়িয়ে ধরলো।ফায়াজ কাধে গরম কিছু অনুভব করলো।মেহেরকে ছেড়ে মেহেরের মুখে দিকে তাকালো।মেহের কাদছে।ফায়াজ মেহেরের থুতনি ধরে উচু করে চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।মেহের এক দৃষ্টিতে ফায়াজকে দেখছে।ফায়াজের নিশ্বাস পড়ছে চোখে মুখে।কেমন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে।ফায়াজের হটাৎ মেহেরের চোখের দিকে চোখ পড়লো।মেহের ওর দিকে অপলক চেয়ে আছে।ফায়াজ মেহেরের চোখে চোখ রেখে অজানায় ডুব দিচ্ছে।কেমন নেশাক্ত লাগছে।গভীর নেশা।ফায়াজ মেহেরের ঠোঁটে ফু দিলো।মেহের কেপে উঠলো।ফায়াজ মেহেরের দুগাল ধরে মেহেরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।মেহের গভীর আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
কয়েক মিনিট পর ফায়াজ ওকে ছেড়ে দিলো মেহের লজায় ফায়াজের দিকে তাকাতে পারছেনা।মেহের কোনো দিকে না চেয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।
ফায়াজের বুকে কেমন চাপা কষ্ট হচ্ছে।কেন যেন মনে হচ্ছে এ দেখাই শেষ দেখা।আর কখনো দেখা হবেনা।আর পাওয়া হবেনা মেহেরের ছোয়া।হারিয়ে যাবে কোনো অদূরে।
ঠিক তাই হয়েছিলো।এটাই ছিলো শেষ দেখা।হারিয়ে গিয়েছিলো মেহের ফায়াজের জীবন থেকে।হয়ে গিয়েছিলো অন্যকারো অর্ধাঙ্গিনী।
চলবে,,,
(আগামীকাল থেকে বর্তমান পাবেন।অতীত কাটঝাট করে দিয়েছি।বর্তমান ভুলে গেছি।রিভাইজ দিয়ে লিখা শুরু করবো।এতদিন কষ্ট করে অতীত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)