#অনুভবে_আজো_তুমি
ফাবিহা নওশীন
অন্তিম পর্ব
মেহেরের শ্বশুর-শাশুড়ী,ননদ লন্ডন থেকে ফিরেছে।শ্বশুর-শাশুড়ী মেহেরের জন্য স্বর্ন,রত্ন,ডায়মন্ডের অলংকার আর বিভিন্ন উপহার সামগ্রী নিয়ে এসেছে।তাদের খুশি দেখে কে।ফাইজা তো বকবক করতে করতে মেহেরের কান পচিয়ে ফেলেছে।মেহের অন্তঃসত্ত্বা উপলক্ষে বাসায় অনুষ্ঠান চলছে।আত্মীয় স্বজন,বন্ধুবান্ধব সবাই জড়ো হয়েছে।মিহরু ৮মাস চলছে।এ অবস্থায় মন খারাপ করে এক জায়গায় বসে আছে।আহিল ওকে নড়তে দিচ্ছেনা।সবাই কত মজা করছে অথচ ওকে স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে।মেহেরের বাবা-মা তো বেশ খুশি।দুই মেয়ে একসাথে মা হচ্ছে।তাদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
মেহের সবাইকে খুশি দেখে নিজের খুশিটা আরো বেড়ে গেছে।ফায়াজ মেহেরের দিকে চেয়ে আছে।ওর হাসিখুশি মুখটা ওকে বেশ প্রশান্তি দিচ্ছে।সবাই ওর মাথায় হাত রেখে দোয়া করছে।খাওয়া-দাওয়া,দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হলো।
ফাইজা,ফায়াজ,ফায়াজের মম মেহেরের বেশ খেয়াল রাখছে।খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই তারা নজর রাখছে।কোনো কিছুতে কমতি রাখছেনা কিন্তু মেহেরই ঠিক মতো খেতে পারছেনা।কিছুই মুখে তুলতে পারছেনা।
ফায়াজ অফিস থেকে এসে শুনতে পেলো মেহের দুপুরে খাবার খায়নি।
ফায়াজ মেহেরের কাছে গিয়ে দেখে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।ফায়াজ মেহেরের পাশে গিয়ে বসে বললো,
–এসব কি মেহের?তুমি দুপুরে খাওনি কেন?এমন অনিয়ম কেন করছো?এসময় না খেয়ে থাকাটা কি ঠিক হচ্ছে?শরীর খারাপ করবে।দূর্বল হয়ে পড়বে।বাবুর খিদে পাবেনা?তুমি নিজের সাথে সাথে বাবুকে না খাইয়ে রাখছো?
মেহেরের কোনো রেসপন্স নেই।ফায়াজের রাগ হলো।তবুও রাগকে কন্ট্রোল করে বললো,
–মেহের,,আমি তোমাকে কিছু বলছি।
মেহের নাক ফুলিয়ে বললো,
–তুমি কি আমাকে বকছো?
–(হায় আল্লাহ এ মেয়ে এখন বুঝতে পারছে আমি বকা দিচ্ছি।)না আদর করছি।
–আমি বুঝি না কিছু?আমি বাবুকে বলে দিবো তুমি বাবুর মাকে বকছো।দাড়াও এখুনি বলছি।
মেহের পেটে হাত রেখে বললো,
বাবু সোনা দেখেছো তোমার পাপাই তোমার মাম্মাকে বকছে।তুমি কিন্তু একদম কথা বলবেনা।
–তুমি আমার মেয়েকে আমার বিরুদ্ধ করছো?
মেহের ভ্রু কুচকে বললো,কিসের মেয়ে?আমার তো একটা ছেলে বাবু হবে।
–নো,আমার একটা পুতুলের মতো কিউট মেয়ে হবে।আমার প্রিন্সেস।
–সে পরে হবে।আগে ছেলে হবে।
–নো মেয়ে,,
–নো ছেলে,,
শুরু হয়ে গেলো ঝগড়া।ছেলে, মেয়ে।
–ফায়াজ আমাকে রাগিওনা।আমি কিন্তু তোমার কোরিয়ার হিরুর মতো চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলবো।
–আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো?আমিও তোমার লম্বা চুল চিড়ে ছোট করে দেবো।
–ইমম,,
মেহের ফায়াজের চুল টানতে শুরু করলো।ফায়াজ কিছুতেই ছাড়াতে পারছেনা।নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মেহেরের চুল ধরে টান দিলো।
আর তখনি বেচারা ফায়াজের মায়ের এন্ট্রি হলো।
ছেলে বউয়ের এই অবস্থা দেখে তার চোখ কপালে।
–এই,,কি করছিস তোরা?
দুজনেই চমকে একে অপরকে ছেড়ে দিলো।
ফায়াজের মম ফায়াজের দিকে রাগী লুক দিয়ে বললো,
–তুই পাগল হয়েছিস?তোকে বলেছি ওকে খাওয়ানোর জন্য রাজি করাতে আর তুই চুল ছিড়ছিস?
–মম তুমি কিছুই দেখোনি।ও আগে আমার চুল টেনেছে।আমি ছাড়ানোর জন্য জাস্ট,,
–চুপ।যা খুশি করবে ও।তুই কেন করবি?
–মম,আমার এতো সুন্দর চুল,,
–তোকে আমি ন্যাড়া করে দিবো।এত সুন্দর চুল,,,আইছে।যা বের হো এখান থেকে।নয়তো সত্যি সত্যিই ন্যাড়া করে দিবো।
ফায়াজ গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে গেলো।ফায়াজের মম মেহেরের দিকে স্মাইলি লুক দিয়ে বললো,
–একটু খেয়ে নেও।
মেহের আর কিছু বলতে পারলোনা।এমনিতেই যা ঘটিয়েছে।চুপচাপ খাচ্ছে।
ফাইজা ভাইয়ের মুখে সব শুনে মেহেরের ঘরে এলো।মেহেরকে মম খাইয়ে দিচ্ছে।
ফাইজা বিছানায় শুয়ে ফোন টিপতে টিপতে বললো,
–মম ভাবছি।ভাই-ভাবীর জন্য বেবি অর্ডার করে আনবো।ওরা ছেলে,আর মেয়ে নিয়ে যে পরিমাণ ঝগড়া আর মারামারি করে তাতে আমি চিন্তায় আছি বেবি হওয়ার পর কি করবে।কারণ হবে তো একটা হয় ছেলে নয় মেয়ে।
মেহের বললো,আমার ছেলে হবে দেখে নিও।
মম বললো,
আচ্ছা যদি মেয়ে হয় তবে কি করবে?আদর করবে না?
–কেন কেন আদর করবোনা।অবশ্যই করবো।জীবন দিয়ে ভালোবাসবো।অনেক আদর করবো।আমারি তো।
–এইতো গুড গার্ল।
ফায়াজ গাল ফুলিয়ে শুয়ে আছে।মেহের ফায়াজকে খুচা দিচ্ছে কিন্তু ফায়াজ নড়াচড়া করছেনা।মেহের ফায়াজের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
–ফায়াজ,, আমার লক্ষী বর।আমার উপর রাগ করেছো?
–……
–ফায়াজ কথা বলো।আমি কিন্তু এখন কেদে দেবো।
ফায়াজ ঘুরে বললো হুম চুল ছিড়বে আবার কান্নাও করবে?
মেহের ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে ফায়াজের বুকে শুয়ে পরলো।ফায়াজ আর কিছু বলতে পারলোনা।মুচকি হাসি দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মেহের জানে কিভাবে ফায়াজকে কব্জা করা যাবে।
–আমি কিছুই করিনি।বাবু আমাকে দিয়ে করিয়েছে।তবুও সরি।
–তাই?
–হুম।
মেহেরের ৬মাস চলছে।মেহেরের মুড সুইং হয়।রাতবিরাতে এটা সেটা আবদার করে।না দিলে রেগে যায়।ফায়াজকে প্রচুর জ্বালাচ্ছে কিন্তু ফায়াজ মেহেরের সব আবদার পূরনের আপ্রাণ চেষ্টা করে।
মাঝরাতে ফায়াজ আংগুল চেপে চিতকার করে উঠে।মেহেরের ও ঘুম ভেঙে যায়।
মেহের হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হয়েছে চিতকার করছো কেন?
ফায়াজ হতাশ চোখে মেহেরের দিকে তাকায়।
(আমার বউ কি ডায়ানে রুপান্তরিত হচ্ছে।আমার হাত কামড়াচ্ছে)
–তুমি এতক্ষণ কি করছিলে?
–চকলেট খাচ্ছিলাম।কিন্তু আমার চকলেট গেলো কই।
মেহের এদিক সেদিকে চকলেট খুজছে।
–সুইটহার্ট তুমি চকলেট নয় আমার হাত কামড়াচ্ছিলে।সারাদিনে এত চকলেট খাও তাতে তোমার হয়না।রাতের বেলায় স্বপ্নেও চকলেট খেতে হবে।
মেহের ক্যাবলার মতো চেয়ে আছে তারপর ইনোসেন্ট মুখ করে বললো,
–সরি গো,,আমি আসলে,,
আমার না খুব চকলেট খেতে ইচ্ছে করছে।এনে দেওনা।
–মেহেরজান এতো চকলেট খায়না।তাহলে বাবুও প্রচুর চকলেট খাবে।অল্প বয়সেই দাতে পোকা ধরে ফুকলি হয়ে যাবে।
–ফায়াজ,, কিছু হবেনা।এনে দেও।আমি খাবো হুহু।
–ওকে ওকে আনছি।
(মেয়ে তো আমার চকলেট খেয়ে দাত শেষ করে দেবে।সরি মামনি তোমার মাম্মাকে খুব ভালোবাসি।কোনো আবদার ফেলতে পারিনা)
ফায়াজ চকলেট এনে দিলো।মেহের এক কামড় খেয়ে বললো, ভালো লাগেনা।আর খাবোনা।
এমনি করে সবসময়।ফায়াজ এতে অভ্যস্ত।রাতভর প্রেগ্ন্যাসির বিষয়ভিত্তিক বই পড়ে বেবি আর মায়ের সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছে।
একমাস পর মেহেরের হটাৎ করেই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম ভাংতেই দেখে ফায়াজ ফোনের আলো জ্বেলে কিছু একটা পড়ছে।মেহের ওকে এই মাঝরাতে বই পড়ছে দেখে অবাক হয়।
–ফায়াজ,,
ফায়াজ বই বন্ধ করে লাইট অন করে মেহেরের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হয়েছে,শরীর খারাপ লাগছে?
–না,আমি ঠিক আছি।তুমি এই মাঝরাতে কি করছো?
–বই পড়ছি।বেবি সম্পর্কে জানছি।জন্মের পর কিভাবে কি করতে হবে।
মেহের বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে বললো,
–রাখো তো।এদিকে এসো।বেবি চায় আমি তোমার বুকে ঘুমাই।নয়তো বেবি রাগ করবে।
ফায়াজ মেহেরের কথামতো লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
তার একমাত্র পরের রাত,,
মেহের ফায়াজের চুল ধরে টানছে।তার অপরাধ মেহের ভেনিলা ফ্রেবারের আইসক্রিম খেতে চেয়েছে আর ফায়াজ অন্য আইসক্রিম এনে দিয়েছে।
–উহহ,,মেহের,,আমার চুল ছাড়ো।আমার অনেক লাগছে।তোমার না আমার চুল অনেক পছন্দ।এভাবে টানলে সব চুল পরে যাবে।
–আপাতত আমার চুলের চেয়ে ভানিলা ফ্রেবারের আইসক্রিম বেশি পছন্দ।আইসক্রিম এনে দেও।
–বাসায় নেই।
–বাইরে থেকে নিয়ে এসো।
–ঠিক আছে।কিন্তু এত রাতে কোনো দোকান খোলা নেই।
–আমি কিচ্ছু জানিনা।
–,ওকে ওকে চুল ছাড়ো আমি আনছি।
মেহের চুল ছাড়তেই ফায়াজ দৌড়।ড্রাইভারকে ঘুম থেকে তুলে আইসক্রিম আনতে পাঠিয়েছে।নিজের সকল সোর্স কাজে লাগিয়েও কোনো দোকান খোলা পায়নি।
ও মেহেরের কাছে গিয়ে বলল,
তুমি শুয়ে পড়।আমি বাইরে থেকে নিয়ে আসি একটু সময় লাগবে তোমার এভাবে জেগে থাকা ঠিক না আমি এনে তোমাকে ডেকে তুলবো।মেহেরও ভাবলো।ঠিকই তো শুয়ে থাকি।
ফায়াজ ভয়ে আর রুমেই আসেনি।মেহের ঘুমিয়ে পড়ে তারপর চুপিচুপি রুমে এসে শুয়ে পড়ে।
এভাবেই চলছে দিন।মেহেরের ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসছে।সবাই ওকে চোখে চোখে রাখে ফায়াজের ভয়,আতংক দিন দিন বেড়েই চলেছে।
একদিন ফায়াজ অফিস মিটিংয়ে ব্যস্ত।ফাইজা ফোন পেয়ে রিসিভ করে জানতে পারে মেহেরের পেইন উঠেছে।ওরা হসপিটালে যাচ্ছে।ফায়াজ সব রেখে চুটে চলে যায় হসপিটালে।হসপিটালের সব কিছু আগেই ঠিক করে রেখেছে ফায়াজ।মেহেরকে একটা ভেডে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ফায়াজ দৌড়ে মেহেরের কাছে যায়।মেহের ব্যথায় চিতকার করছে।ফায়াজ ওর হাত চেপে ধরে বললো,
–মেহের কিচ্ছু হবেনা।ভয় পেওনা।আমি আছি তোমার সাথে।ভয় পেওনা।
মেহের জোর করে হাসি দিয়ে ফায়াজের হাত চেপে ধরলো ততক্ষণে মেহেরকে রুমে নিয়ে গেলো।ফায়াজের হাত থেকে মেহেরের হাত ছুটে গেলো।ফায়াজের মনে হচ্ছে কেউ ওর কলিজা কেটে নিয়ে চলে গেল।ততক্ষণে মেহেরের বাড়ির লোক এসে জড়ো হয়েছে।
ফায়াজ বেঞ্চে বসে কাদছে।ওর অনেক ভয় হচ্ছে।যদি মেহেরের কিছু হয়ে যায়।টেনশনে হাতপা জমে যাচ্ছে।ফাইজা ওকে এটা সেটা বলে শান্তনা দিচ্ছে কিন্তু ও কাউকে ভরসা করতে পারছেনা।
ফায়াজের মম ফায়াজের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ফায়াজের একি কথা মেহেরের কিছু হবেনা তো।ফায়াজের মম বারবার বলছে কিছু হবেনা।সুস্থ হয়ে যাবে কিন্তু কে শুনে কার কথা।
কয়েকঘন্টা পর ডাক্তার বেরিয়ে এলো হাসি মুখে।ফায়াজ দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–আমার ওয়াইফ কেমন আছে?
–ডাক্তার বললো,
আপনার টুইনস হয়েছে।সাথে সাথে দু’জন নার্স দুটো বাচ্চা নিয়ে বের হলো।ফায়াজের মম একজনকে কোলে নিলো আর মেহেরের আম্মু একজনকে কোলে নিলো।ফায়াজের সেদিকে খেয়াল নেই।ও জিজ্ঞেস করলো,
মেহের কেমন আছে বলছেন না কেন?
–উনি ভালো আছেন।তবে একসাথে দুটো বাচ্চা জন্ম দিয়েছে আবার শরীরে কিছুটা দূর্বলতা ছিলো।এখনো জ্ঞান ফিরেনি।
ফায়াজ রাগান্বিত ভাবে বললো,হুয়াট??জ্ঞান কেন ফিরেনি?আপনারা কি করছেন?
ফাইজা এগিয়ে এসে ডাক্তারকে ইশারা করে ফায়াজকে টেনে নিয়ে গেলো।
–ভাই কি করছিস?ভাবীর জ্ঞান ফিরে যাবে একটু সময় লাগবে। রিলেক্স।
–আমি মেহেরকে সুস্থ না দেখা পর্যন্ত রিলেক্স হবোনা।
–ঠিক আছে,, তো এখন বেবিদের দেখ।তোর দুইটা বেবি হয়েছে।একটা ছেলে,একটা মেয়ে।তোর আর ভাবীর দুজনের মনের আশাই পূরন হয়েছে।এইবার তো হ্যাপি হ।
ফায়াজ ফাইজার কথা শুনে চমকে গেলো।একটা ছেলে একটা মেয়ে।ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।কিন্তু নিমিষেই মেহেরের কথা মনে করে হাসি হারিয়ে গেলো।মেহেরকে বেডে শিফট করা হয়েছে।
ফায়াজ মেহেরের পাশে গিয়ে বসে আছে।মেহেরের মুখের দিকে চেয়ে আছে।কেমন ক্লান্ত লাগছে।মেহের হটাৎ পিটপিট করে চোখ মেললো।মেলেই ফায়াজকে দেখে।ফায়াজ ওকে ধরে কেদে ফেললো।
–কি হয়েছে কাদছো কেন?
–তুমি জানো আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
–আমি ঠিক আছি।চোখ মুছো।এখন বাবা হয়েছো।বাবাদের কাদতে নেই।
ফায়াজ বাবা হওয়ার কথা শুনে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
–জানো আমাদের দুটো বাচ্চা হয়েছে।একটা ছেলে একটা মেয়ে।
মেহের ফায়াজের কথা শুনে হেসে দিলো।
–আরে বোকা আমি জানবোনা,আমি জন্ম দিয়েছি,তুমি নও.
–তাই তো,,
ফায়াজ ও হেসে দিলো।
–বাবুরা কই আমি তো এখনো দেখিনি।
–আমিও তোমার চক্করে দেখিনি।
দাড়াও নিয়ে আসছি।
ফায়াজের কথায় দু’জন নার্স বাবুদের নিয়ে ভিতরে এলো।ফায়াজ দুজনকেই দেখছে।কাকে রেখে কাকে কোলে নিবে বুঝতে পারছেনা।ইচ্ছে করছে দুজনকেই কোলে নিতে কিন্তু যদি পড়ে যায়।
–মেহের,,কি করবো?এই দুটো পুতুলকেই কোলে নিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু ভয় হচ্ছে যদি পড়ে যায়।আর একসাথে তুলবো কি করে?
মেহের মুচকি হেসে বললো,
–মেয়েকে কোলে নেও।তুমি না মেয়ে চেয়েছিলে?
–এখন আমার দুজনকেই চাই।এখন বলো কি করবো?
বলেই ফায়াজ দুজনকেই চুমু খাচ্ছে।তোয়ালে মুড়ানো দুটো বাচ্চা পিটপিট করে চাচ্ছে আর চোখ বন্ধ করছে।
–কাউকে ডাকো।আর তুমি একাই চুমু খাচ্ছ কেন?আমি তো এখনো ভালো করে দেখতেই পেলাম না।
ফায়াজ ফাইজাকে ডাকলো।
–ওই বাবুদের আমার কোলে তুলে দে তো।
ফাইজা দুজনকে ফায়াজের দু’হাতে তুলে দিচ্ছে।
–ওই দেখিস ব্যথা যেন না পায়।সাবধানে পড়ে যাবে।
–ভাবী ভাই তো ভুলেই গেছে তার বোন একজন গাইনী ডাক্তার।তার এসবে অভ্যাস আছে।
মেহের মুচকি হাসছে।
ফায়াজ দুজনকে কোলে নিয়ে মেহেরের কাছে নিয়ে গেলো।তারপর বেডে শুইয়ে দিলো।মেহের দুজনকে মন ভরে দেখছে।কি সুন্দর দুইটা বাবু,,হাতপা ছাড়াছড়ি করছে।যদিও বেশি নড়ছেনা।মেহেরের চোখে পানি চলে এলো।মা হওয়ার অনুভূতি খুবই পবিত্র।মেহের দুজনকেই চুমু খেলো।তার মধ্যে হটাৎ একজন কানবা করে দিলো।
ফায়াজ ব্যস্ত হয়ে পড়লো,
–আরে আরে কাদেনা,,
মেহের এ কি?বাবু তো তোমার মতো ঠোঁট ফুলাচ্ছে।
মেহের হেসে বললো,
–বাবুরা তো ঠোঁট ফুলিয়েই কাদে।
–তুমি তো বাবুনা তুমি কেন ঠোঁট ফুলাও?
–আমি ঠোট না ফুলালে তুমি আমার প্রেমে পড়তে?আমাকে বিয়ে করতে?
প্রতিউত্তরে মেহেরের কপালে ফায়াজ ভালোবাসার পরশ একে দিলো।
🌺
🌸
🍀
🌹
🌼
🍁
🌿
চার বছর পর,,,
–মেহের,,মেহের,,,
মেহের দৌড়ে এলো।
–কি হলো এভাবে গলা ফাটাচ্ছ কেন?
–আমার বউ আমি ডেকেছি,,তাতে কার কি?
–মশাই,,,এখন ঢং বাদ দিয়ে বলুন কি চাই?
–দেখো তো সব ঠিক আছে কিনা?
ফায়াজ অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে।মেহের একবার চীখ বুলিয়ে বললো
সব কিছু তো দেখছি ঠিক ই আছে।পারফেক্ট।
–কিছু একটা মিসিং।
–কি?
–কিসিং।
ফায়াজ মেহেরের কোমড় পেচিয়ে ধরলো।মেহের ছুটার জন্য ছটফট করছে
–ফায়াজ,বাচ্চাদের নাস্তা করাতে হবে।স্কুলে দেরি হয়ে যাবে।
–আরে এক মিনিট।
–পাপাই কি করো?
মেহের ফায়াজকে সরিয়ে দিলো।
ফায়াজ বিরবির করে বললো,
এসে পড়েছে সেনা সদস্য,,,
তারপর জোরে বললো, বাপ,কিছু আর করতে দিলি কই?
মেহের ফায়াজের দিকে ভ্রু কুচকে ছেলের দিকে চেয়ে বললো,
–মিহিন,,ফিহা কই?
–চকলেট খায়।
ফিহা চকলেট খেতে খেতে হাজির।পুরো মুখ চকলেট দিয়ে মাখা।
মেহের ফিহার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, ফিহা তুমি আবার চকলেট খাচ্ছো।দেও এটা।
ফিহা দৌড়ে ফায়াজের কাছে গেলো।ফায়াজ ফিহাকে কোলে তুলে নিলো।
–পাপাই মাম্মা চকলেট নিয়ে নেয়।
–কেউ আমার ফ্রিন্সেসের চকলেট নিবেনা।
মেহের ফায়াজের দিকে রাগী লুক দিয়ে বললো,
–তুমি দিয়েছো,,তুমি জানোনা ডক্টর ওকে চকলেট খেতে নিষেধ করেছে।তারপরেও দিয়েছো?
–তোমাকে বলেছিলাম প্রেগন্যান্সির সময় এতো চকলেট খেওনা।তুমি শুনেছিলে?
–এখন আমার দোষ?
ফায়াজ ফিহাকে বললো,
–মামনি,,এখন স্কুলে যেতে হবে।বাকিটা এসে খেও।চলো তোমার মুখ ধুয়ে ফেই।
ফায়াজ ফিহাকে নিয়ে গেলো মুখ ধোয়াতে।
মেহের মিহিনকে নাস্তার টেবিলে নিয়ে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো আর বিরবির করে ফায়াজকে বকছে।
সেটা দেখে ফায়াজের মম বললো,
–কি হয়েছে?সকাল সকাল কে তোমার মুড খাবাপ করলো?
–আপনার ছেলে আমাকে জ্বালিয়ে মারলো।চকলেট খেতে খেতে মেয়েটা দাত নষ্ট করে ফেলেছে।ডক্টর চকলেট খেতে নিষেধ কতেছে আর আপনার ছেলে সকাল সকাল মেয়েকে চকলেট খাওয়াচ্ছে।সে স্বর্ন দিয়ে মেয়ের দাত বাধিয়ে দিবে।
ফায়াজ ফিহাকে চেয়ারে বসাতে বসাতে বললো,
–স্বর্ন কেন আমি রত্ন দিয়ে দাত বাধিয়ে দেবো।
মেহের ভ্রু কুচকে ফায়াজের দিকে চেয়ে বললো,
–আল্লাহর দেওয়া দাতের সাথে তোমার রত্নের দাত পাল্লা দিতে পারবেনা।হুহ।
মেহের দুজনকে দুপাশে বসিয়ে দুজনকে খাওয়াচ্ছে।মিহিন দুষ্টামি করছে।ছেলেটা একদম বাপমে গায়া,,ফিহা মেহেরের মতো শান্তস্বভাবের।
মেহের মিহিনকে বলছে,
–বাদরামি করছো কেন?দিন দিন বাদরের বড় ভাই হচ্ছো।
মিহিন গালে হাত দিয়ে বললো, ফিহা তুই কি বাদর?
ফিহা বললো,
–আমি কেন বাদর হবো,,আমি তো ফিহা।
–কিন্তু মাম্মা যে বললো, আমি বাদরের বড় ভাই।আমি তো তোর বড় ভাই।তারমানে তুই বাদর।হিহি।
ফিহা কাদো কাদো হয়ে বললো,
–মাম্মা,,,,
মেহের ছেলের কথা শুনে তাজ্জবনে গেলো।তারপর ফিহাকে বলল,
–কে বলছে তুমি বাদর,,তুমি তো আমার কলিজা,,আমার লক্ষী সোনা ফিহা।
–হিহি।
একহাতে ছেলের হাত ধরেছে অন্য হাতে মেয়ের হাত ধরেছে ফায়াজ।দুজনকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে।মেহের দরজার সামনে গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে।হটাৎ ই ফিহা আর মিহিন হাটা থামিয়ে দিলো।ফায়াজ দাড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–,কি হয়েছে?
ফিহা আর মিহিন একসাথে বলে উঠলো,আমরা তো মাম্মাকে কিসি করতে ভুলে গেছি।
–এতো অনেক বড় ক্রাইম করে ফেলেছো?
দুজনের হাত ছেড়ে দিলো।দুজনেই দৌড়ে দরজার সামনে যাচ্ছে।মেহের দুজনকে আসতে দেখে হালকা হেসে হাটু গেড়ে বসে পড়লো।
দুজন দুগালে চুমু খেয়ে বললো,
সরি মামা,,ভুলে গিয়েছিলাম কিসি করতে।
–ইটস ওকে।লাভিউ।
–লাভিউ টু।বায়।
–বায়।
ফায়াজ ওদের পিছনে এসে দাড়িয়েছে।
মিহিন বললো, পাপাই তুমিও কিসি করতে ভুলে গেছো?
ফায়াজ মাথা চুলকিয়ে বললো,হু,বাপ।এবার একটু সুযোগ দে।
ফিহা আর মিহি হাসতে হাসতে দুজনে হাত ধরে গাড়িতে উঠে বসলো।
ফায়াজ মেহেরের কপালে চুমু খেয়ে বললো,লাভিউ ওয়াইফি।
তারপর মেহেরেএ অপেক্ষা চলে কখন তার চড়ুই পাখিরা আসবে।সারাবাড়ি দৌড়ে বেরাবে।তারপর প্রিয়তমর অপেক্ষা।
রাত ১১টা মেহের বাচ্চাদের ঘুম পাড়াচ্ছে।ফায়াজ এসে মিহিন আর ফিহার কপালে কিস করে বললো,আমার কলিজাগুলো।
–খাবেনা?
–হুম চলো চলো।তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
মেহের উৎসুক হয়ে বললো, কি??
-সারপ্রাইজ।
মেহের ডিনার শেষে রুমে এসে দেখে ফায়াজ পাঞ্জাবি পড়ে, আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলে ব্রাশ করছে।
মেহেরকে দেখে মেহেরের হাতে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো, তোমার গিফট।
মেহের প্যাকেট খোলে গোল্ডেন পাইরের একটা লাল শাড়ি পেলো।খুশিতে ওর চোখ চকচক করছে।এত বছরে ফায়াজ ওকে অনেক লাল শাড়ি দিয়েছে।কিন্তু মেহেরের মুখের এক্সপ্রেশন একি ছিলো। মনে হয় যেন প্রথম বার পেলো।
–মেহের শাড়িটা পড়ে এসো।আমি বারান্দায় অপেক্ষা করছি।
–এই রাতে?
–হুম,সারপ্রাইজ।
মেহের শাড়ি পড়ে হালকা সাজ দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখে ফায়াজ গিটারে সুর তুলছে।মেহেরকে দেখে গিটার রেখে এসে বললো,
তোমাকে দেখে সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে।
বলেই চোখ মেরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
ঠান্ডা বাতাস বইছে।মেহের জিগাস্যুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ফায়াজের দিকে।
–আজকে সেইদিন যেদিন আমি আমার লাল পরীকে লাল শাড়িতে দেখেছিলাম।মেহের মৃদ্যু হাসি দিলো।
মেহের সবটাই জানতো তবুও ফায়াজের মুখ থেকে শুনতে চাইছিলো।
মেহের ফায়াজের কাধে মাথা রেখে দোলনায় বসে আছে।ফায়াজ গিটারে সুর তুলছে।
এখন অনেক রাত
তোমার কাধে আমার নিশ্বাস
আমি বেচে আছি তোমার
ভালোবাসায়।।
🌺🌺🌺🌺
(গল্পটা শেষ হয়ে গেলো।আমার অনেক কষ্ট লাগছে।যাইহোক সব কিছুর ই শেষ আছে।কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।নতুন গল্প নিয়ে খু শ্রীঘই আসছি””তোর শহরে ভালোবাসা “”।সবাই ভালো থাকবেন।এতদিন ভালোবেসে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।💜💜)