#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-২২
ফাবিহা নওশীন
মেহের ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে বারান্দায় যায়।বারান্দা অন্ধকার।বারান্দার ভিতরে পা রাখতেই আচমকা বিশ্রী ধোঁয়া ওর নাক মুখে প্রবেশ করে।নাকে যাওয়ার পর বুঝতে পারে সিগারেটের ধোঁয়া।মেহের তোয়ালে দিয়ে মুখ চেপে ধরে কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।ধোয়ার কারণে কাশি উঠে গেছে।
মেহের তোয়ালে মুখে চেপেই কাশতে কাশতে ঘরে এলো।ফায়াজ এসব দেখে সিগারেট ফেলে দৌড়ে ঘরে আশে।
মেহের বেডে বসেই কাশছে।ফায়াজ তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস পানি নিয়ে ওর সামনে ধরে।মেহের পানি নিয়ে ডগডগ করে খেয়ে ফেলে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
ফায়াজ বিরক্ত হয়ে বলে,
–ধোয়ায় তোমার এত প্রব্লেম,বারান্দায় গিয়েছো কেন?
–আমি কি জানি আপনি বারান্দায় আছেন আর মনের সুখে ধোঁয়া উড়াচ্ছেন?
আমি তো হাত মুখ মুছে তোয়ালে মেলতে যাচ্ছিলাম।
–সরি সরি,,আমি আসলে বুঝিনি যে তুমি ওই সময় বারান্দায় যাবে।
মেহের ফায়াজের কথায় অবাক হয়ে যায়।ফায়াজ ওকে সিগারেটের ধোঁয়ার জন্য সরি বলছে যে কিনা কিছুদিন আগে ওকে চেপে ধরে ওর মুখের সামনে সব ধোঁয়া ছেড়ে দেয়।ওকে কষ্ট পেতে দেখে পৈচাশিক হাসি দেয়।কি বমিটাই না হয়েছিলো।
মেহের এটাও খেয়াল করছে ফায়াজ প্রথম দিকে অনেক রুড আর হিংস্র আচরণ করলেও এখন কিছুটা নরমাল ব্যবহার করে।আগে তো কথায় কথায় আজেবাজে কথা শুনাতো,গাল,গলা চেপে ধরতো এমনকি স্বাদের চুলগুলোকেউ ছাড় দেয়নি।মেহের এটাও ভাবছে ফায়াজকে তার আর আগের মতো ভয় লাগেনা।ফায়াজকে দেখলে প্রথমে হাত-পা কাপতো কিন্তু এখন মুখের উপর অনেক কথা শুনিয়ে দিতে পারে।
ফায়াজের শরীরটা বেশিই খারাপ লাগছে।অনেক ব্লাড গেছে তাই কিছুটা দূর্বল।ওর মনে হচ্ছে জ্বর আসবে।বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিলো।চাদর গায়ে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পরলো।
মেহেরের চোখে ঘুম নেই।ভাবছে মিহুকে ফোন করে আহিলের আহিলের বোনের খোজ নিবে।বোনের ইমারজেন্সি ডেলিভারির জন্য তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো।কি হয়েছে,কেমন আছে জানা প্রয়োজন।
মেহের ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় দাড়ালো।মিহুর ফোন রিং হতেই পিক করলো।
–হ্যা আপি,বলো।
–আহিলের বোনের কি খবর?ভালো আছে তো?
–হুম।আহিলের বোনের ছেলে হয়েছে।বাবুটা নাকি অনেক সুন্দর।আহিল যে কি খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবোনা।
–যাক ভালো হয়েছে।শুনে খুশি হলাম।
–আপি ও তো মামা হলো আমি খালামনি কবে হবো?
মেহেরের কথা শুনে মেহের থমকে গেলো।কি উত্তর দিবে খোজে পাচ্ছেনা।
–মিহু,আগে তো গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করি।তোর বাচ্চার এত শখ থাকলে বল বিয়ে দিয়ে দেই।
,–হইছে,,রাখি।এত রাতে তোমাকে আর জিজুকে ডিস্টার্ব না করি।
–কবে আসবি জানাস।আজকে ফায়াজের অফিসে মিটিং ছিলো।
— ওকে গুড নাইট।
–গুড নাইট।
মেহের ফোন রেখে ফায়াজের পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো।মাঝরাতে হটাৎ মেহেরের ঘুম ভেঙে যায়।মনে হচ্ছে বেড কাপছে।মেহের ডিম লাইটের আলোতে দেখে ফায়াজ কাপছে।তাড়াতাড়ি উঠে লাইট অন করে।ফায়াজের দিকে ঝুকে ওর গায়ে হাত রাখলো।ফায়াজ প্রচন্ড কাপছে।আর বিরবির করে কিছু বলছে।মেহের ওর মুখের কাছে কান রাখে।ফায়াজ অস্ফুটস্বরে বলল,,
–মে,,হে,,র।
–হ্যা,বলো শুনছি।
–আমার অনেক ঠান্ডা লাগছে।
–আমি তোমার জন্য কম্বল নিয়ে আসছি।
মেহের একহাতে অনেক কষ্ট করে কম্বল নিয়ে এসে ফায়াজের গায়ে দিয়ে দিলো।ফায়াজ তবুও কাপছে।গায়ে হালকা জ্বর।মেহের জ্বর মেপে কপালে জল পট্টি দিয়ে দিলো।কিছুক্ষণ জলপট্টি দিয়ে ওর কাছে গিয়ে শুয়ে পরলো।কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর পরীক্ষা করলো।ফায়াজ তখনো কেপেই চলেছে।মেহের কম্বলের ভিতরে ঢুকে ফায়াজের গা ঘেঁষে শুয়ে রইলো যাতে ফায়াজ কিছুটা উষ্ণতা পায়।মেহের ওর গা ঘেঁষে শুতেই ফায়াজ ওকে টেনে বুকের উপরে উঠিয়ে দু’হাতে চেপে ধরলো।মেহের ফায়াজের আচমকা কাজে হতবাক।ও সরতে চাইলেও পারছেনা।ফায়াজ ওকে খুব জোরে চেপে ধরে রেখেছে।
মেহেরওফায়াজকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে রইলো।ফায়াজের শরীরে জ্বরের মধ্যেও মিষ্টি ঘ্রাণ পাচ্ছে যা ওকে মাতাল করে দিচ্ছে।মেহের মনে মনে বলছে,
–আমি হয়তো দুনিয়ার সব চেয়ে নির্লজ্জ,বেহায়া,সেল্ফ রেস্পেক্টহীন মেয়ে,,নয়তো এতকিছুর পরেও আমি কেন এই মানুষের বুকে ঘুমানোর লোভ সামলাতে পারিনা।কেন এই বুকের মাঝে মাথা রাখলে মনে হয় আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ?কি আছে এই বুকে?
মেহের ভাবতে ভাবতে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে পরলো।পাখির কিচিরমিচির শব্দে মেহেরের ঘুম ভাংলো।মেহের ফায়াজের বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে।ফায়াজও দু’হাতে জড়িয়ে রেখেছে।
–হায় আল্লাহ, সর্বনাশ।এই ব্যাটা যদি দেখে আমি ওর বুকে ঘুমাচ্ছি আমার হাড় হাড্ডি একটাও রাখবেনা।অথচ তিনিই আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে নিয়েছে।কিন্তু কিচ্ছু স্বীকার করবেনা আমাকেই কথা শুনাবে।
মেহের মাথা তুলে ফায়াজের হাত সরিয়ে যেই আস্তে আস্তে উঠতে যাবে তখনই ফায়াজের ঘুম ভেঙে গেলো।ফায়াজ মেহেরের দিকে চেয়ে আছে।
মেহের ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।তারপর বললো,
–দেখুন,আপনি উল্টো পাল্টা কিছু বলার আগে আমাকে এক্সপ্লেইন করতে দিন।আমি নিজ ইচ্ছেয় আপনার কাছে যায়নি।আপনি জ্বরে কাপছিলেন আমি জাস্ট সাপোর্ট দেওয়ার জন্য,,,
–তোমাকে এক্সপ্লেইন করা লাগবে না।আমার সব মনে আছে।
মেহের স্বস্তির নিশ্বাস নিল।যাক বাবা মনে আছে।
মেহের উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফায়াজ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে রইলো।
মেহের ফ্রেশ হয়ে কফি বানিয়ে ঘরে এলো।ফায়াজ কম্বল মুড়ি দিয়ে কচ্ছপের মতো মুখ বের করে আনমনে কি যেন ভাবছে।মেহের ফায়াজের পাশে গিয়ে বসে কফি এক চুমুক খেয়ে বললো আপনার কফি।মেহেরের কথায় ফায়াজের চিন্তার অবশান ঘটলো।
–হুম।
–আপনার জ্বর কেমন?
ফায়াজ আধশোয়া হয়ে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললো,
–জানি না।
মেহের ঝুকে ফায়াজের কপালে হাত রেখে জ্বর চেক করলো।মেহেরের ঠান্ডা হাত ওর কপালে পড়তেই ফায়াজ কেপে উঠলো।মনে হচ্ছে এক টুকরো ঠান্ডা বরফ সারা শরীরে ঝড়ের বেগে বয়ে গেলো।
–অনেকটাই কম।
বলেই মেহের চলে গেলো।নাস্তা রেডি করছে।তখনই ফোন বেজে উঠলো।ফায়াজের বোন ফাইজা ফোন করেছে।মাঝে মাঝেই ওর সাথে কথা হয়।
–হ্যালো সুইট ননদিনী,কি খবর?
–আই এম অলওয়েজ ফাইন।তোমার খবর বলো মাই কুল ভাবস।
–এই তো অনেক ভালো।মম,পাপা কেমন আছে?
–সবাই ভালো আছে।ভাইয়া কি করে?
–তোমার ভাই শুয়ে আছে।শরীরটা একটু খারাপ।
ফাইজা চিন্তিত হয়ে বললো,কি হয়েছে ভাইয়ার?
–আরে টেনশন করোনা,একটু জ্বর হয়েছে।নাস্তা দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিবো।
–জ্বর?এখন?হটাৎ!!
–আরে বেশি না,,,
ফাইজা আমতা আমতা করে বলল,
–ভাবি,,ভাই হাতথাত কিছু কাটেনি তো,,??
ফাইজার কথা শুনে মেহের অবাকের সর্বোচ্চ সীমায়।
–কেন?
–না আসলে ভাই হাত-পা কাটলেই মানে রক্তক্ষরণ হলেই জ্বর চলে আসে তো তাই জিজ্ঞেস করলাম।
–হাতপা কাটলেই মানে?খোলে বলো তো।
–ছাড়ো ভাবি,,আসলে জ্বরের কথা শুনে বলে ফেলেছি।বাদ দেও।
–না বলো প্লিজ।আমি জানতে চাই,,
–ভাবি আমি চাইনা কষ্ট পাও।
মুখ ফসলে বের হয়ে গেছে।
–আমি একটুও কষ্ট পাবোনা।
ফাইজা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,ব্রেকাপের পর কয়দিন পর পর ই হাত পা কেটে ফেলতো।ভালো করে খেয়াল করে দেখলে হাতে অনেক কাটা দাগ পাবা।
–ওও,,
মেহেরের ইচ্ছে করে জিজ্ঞেস করতে ও যাওয়ার পর ফায়াজ কি করেছিলো কিন্তু ভয় হয়।সাহস করতে পারে না।
এই জন্যই সেদিন বলেছিলো এসবের জন্য সাহস আর অভ্যাস লাগে যা ওর আছে।
মেহের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,,তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?
–ভালোই।পরীক্ষা দিয়ে দেশে চলে আসবো।দেশে এসেই ইন্টানি করবো।এখানে আর ভালো লাগে না।
–গুড ডিসিশন।এক সাথে অনেক মজা হবে।আচ্ছা আমি এখন রাখছি তোমার ভাইয়াকে দেখি গিয়ে।
–আচ্ছা।উম্মাহ,,,
মেহের ফায়াজের জন্য নাস্তা নিয়ে গেলো।ফায়াজ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে গান গাইতে গাইতে বের হচ্ছে।
মেহের ভ্রু কুচকে ফায়াজের দিকে তাকাতেই ফায়াজ গান বন্ধ করে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো।
এই ব্যাটার ভাব দেখলে বাচিনা।জ্বর গায়ে কি ফুর্তি।গান গাইছে।আমি ভাবলাম নিচে যেতে পারবেনা তাই খাবার উপরে নিয়ে এলাম।
–আপনার নাস্তা।খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিন।বেশি শরীর খারাপ থাকলে ডাক্তার ডেকে নিন।
ফায়াজ নাস্তা নিয়ে বললো,
–খাইয়ে দেও।আমার হাত এখনো সুস্থ নয়।
উফফ,,আমি কেন ভুলে যাই।সারাদিন আমার শুধু কামলাগিরী করতে করতে পার হবে।এই ছেলেটা আমাকে জ্বালিয়ে মারলো।
(মনে মনে)
মেহের একটা টুস্ট মুখে তুলে নিয়ে বললো,
–আপনি জানতেন আপনার জ্বর আসবে তাহলে ওষুধ নেন নি কেন?
ফায়াজ চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে আর ফোন টিপছে।মেহেরের কথার উত্তর দিলোনা।
মেহেরও বিরক্ত হয়ে আর জিজ্ঞেস করলো না।
ফায়াজ,মেহের,মিহু,আহিল একসাথে বসে আছে।
মিহু হটাৎ করেই বললো,
–এই তোমাদের দুজনের হাতে ব্যান্ডেজ কেন?
মেহের আর ফায়াজ একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।কি উত্তর দিবে??
চলবে,,