#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-৩+৪
ফাবিহা_নওশীন
“আরে ভাবী তুমি তো খুব সুন্দর।ওপপস!!এখন দুঃখ হচ্ছে কেন যে আসলাম না।ভাইয়া তুই এই পরীটাকে কই পাইলি??”
ফায়াজের বোন ফাইয়া ভিডিও কলে ভাই-ভাবীর সাথে কথা বলছে।
ফায়াজ বললো,
–ওই খালি ভাবী ভাবী করছিস কেন??আমাকে দেখিস না??আমি কম কিসে?আমার মতো দুচারটে হ্যান্ডসাম ছেলে দেখা তো পারলে??
ফাইজা বললো,,
–হইছে ভাই।আর নিজের প্রসংসা করে ইমেজ বাড়াতে হবেনা।আয়নার সামনে গিয়ে দাড়া তাহলেই আস্ত হনুমান দেখতে পাবি।
ফায়াজ,,
–ওই জংলী,লন্ডনে থেকে অনেক ভাব বেড়েছে তাই না??সামনে আয় ফকন্নি।
-আসছি ২মাস পর।পরীক্ষা শেষ করে।এখন যা আমি ভাবীর সাথে একা কথা বলবো।
–কি কথা বলবি?
–নিশ্চয়ই তোর সুনাম করবো না।তোর বদনাম করবো।
ফায়াজ মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।
–ভাবী আমি তো তোমার দিক থেকে চোখ ফিরাতে পারছিনা।এই জন্যই ভাইয়া এতো পাগল হয়ে পড়েছিল তোমাকে বিয়ে করার জন্য।
আচ্ছা যাই হোক, তোমাকে একটা কথা বলি।ভাইয়ার প্রতি একটু কেয়ার রেখো।রাগী,জেদি হলেও মনটা অনেক ভালো।একটা অতীত ভাইয়াকে ভেংগে দিয়েছে,বদলে দিয়েছে।ভাইয়া যদি তোমার সাথে রাগারাগি করে একটু সহ্য করো।ভাইয়ার সাথে একটু মানিয়ে নিও প্লিজ।এটা আমার অনুরোধ।
মেহের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
–ঠিক আছে আপনি চিন্তা করবেনা।
ফাইয়া চোখমুখ কুচকে চিতকার করলো,,
–ভাবিইইইই,,
মেহের ঘাবড়ে গেলো।
–কি হলো??
–তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন??আমি তোমার ননদ।আমি তোমাকে তুমি করে বলছি আর তুমি আপনি।কি লজ্জা কি লজ্জা।
মেহের ফিক করে হেসে দিলো।
–ঠিক আছে আমি তুমি করেই বললো।
ওদের মধ্যে অনেকক্ষন কথা হলো।ফাইয়া মেয়েটা অনেক ভালো।মেহেরের খুব পছন্দ হয়েছে।
বাসায় বিভিন্ন মেহমান এলো।কেউ কেউ মেহেরের প্রসংশা করলো আবার কেউ কেউ খুত ধরতে ব্যাস্ত।
ডিনার শেষে মেহেরের শাশুড়ী মা মেহেরকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।
মেহেরকে বসিয়ে দরজা লক করে দিলো। মেহের বুঝতে পারছে ওনি ইম্পর্ট্যান্ট কিছু বলবে।
ফাহমিদা খান মেহেরের পাশে বসে ইতস্তত করছে।কিভাবে কি শুরু করবে বুঝতে পারছেনা।তাই দেখে মেহের বললো,
–মা আপনি কিছু বলতে চাইছেন।মা হিসেবে মেয়েকে নিঃসংকোচে বলতে পারেন।
তারপর মেহেরের গালে হাত রেখে বললো,,
–দেখো মা তুমি এখন এই বাড়ির বউ।এটা এখন তোমার বাড়ি,তোমার সংসার।তোমাকে আপন ভেবে নিজের মেয়ে ভাবে কিছ কথা বলছি।
–হ্যা বলুন।
–কথাটা ফায়াজকে নিয়ে।ও ছোট থেকেই রাগী,জেদি একটা ছেলে।যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।না পেলে আদায় করে নিয়েছে।ও তোমার স্বামী ওর সব কিছু জানার অধিকার তোমার আছে।
কয়েক সেকেন্ড থেমে বললো,। একটা মেয়েকে পছন্দ করতো কিন্তু মেয়েটাকে ওকে ঠকিয়েছে আর এটা ও মেনে নিতে পারেনি।তাই নিজেকে সামলাতে পারেনি।নষ্ট করে দিয়েছে নিজেকে।মদ,নেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে।স্বাভাবিক জীবন থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।কখন কি করে বলা মুশকিল।বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।আমরা অনেক চেষ্টা করেছি ওকে শোধরানোর।বিয়ে দিতে চেয়েছি।কিন্তু কিছুতেই রাজি হয়নি।তারপর একদিন তোমার কথা বললো।আমরা আশার আলো দেখতে পেলাম।তোমাকে দেখেও মনে হয়েছে তুমি আমার ছেলেটাকে শোধরাতে পারবে।সুখী করতে পারবে।
তোমাকে সকালে দেখে আর নাস্তার টেবিলে ওর কথা শুনে বুঝতে পেরেছি ও তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করেনি।এই জন্য আমি মা হয়েভ্ব্র পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।
–মা এসব কি বলছেন,ক্ষমা কেন চাইছেন?ওনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি।সত্যি বলছি।
-আমি জানি ওকে।আমি তো ওর মা।তুমি একটু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো ওর সাথে।ও যেন ওর অতীত ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে পারে সেই চেষ্টা করো।হাল ছেড়ে দিওনা।মেয়েদের অনেক শক্তি।মেয়েরা চাইলে অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে।
আমরা আগামীকাল চলে যাচ্ছি।তাই সবকিছু তোমাকে বলে দিলাম।এখন থেকে তোমাকে একাই সামলাতে হবে।আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে নির্দিধায় জানাবে।
–জ্বি,,আচ্ছা।দোয়া করবেন আমাকে।
–দোয়া করি তোমাদের জুড়ি অক্ষয় হোক।সুখী হও।ভালো থাকো।
তারপর তিনি কতগুলো গয়না আর শাড়ি এনে মেহেরের হাতে দিলেন।
–এই শাড়িগুলো তোমার জন্য কিনেছি আমি নিজে পছন্দ করে।আর এই গয়নাগুলো আমাদের বংশের।আজ থেকে এগুলো তোমার।না করবে না।এইগুলো আমার দোয়া।
মেহের হাসি মুখে সব গ্রহণ করলো।তারপর সালাম করে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।রুমে গিয়ে সবকিছু আলমারিতে গুছিয়ে রাখছে।গুছিয়ে রেখে পিছনে ঘুরতেই চমকে গেলো।ফায়াজ দেয়ালে এক পা উঠিয়ে ঢেলান দিয়ে একমনে মেহেরের দিকে চেয়ে আছে।তারপর পা ফেলে মেহেরে দিকে এগিয়ে আসছে আর আস্তে আস্তে বলছে,
শাড়ী,,গয়না,,,,
মেহেরের দিকে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে।মেহের ভয় পেয়ে পিছাতে লাগলো।পিছাতে পিছাতে আলমারির সাথে মিশে গেলো।ও বুঝতে পারছেনা ফায়াজ কেন এমন করছে।কেন ওর দিকে এভাবে এগুচ্ছে।ভাবতে ভাবতে ফায়াজ ওর একদম কাছে চলে গেল।
ফায়াজ ওর গালের উপর পড়া চুলগুলোতে হাত বুলাচ্ছে।ফায়াজ ওর কাছে যেতেই মেহের বিশ্রী গন্ধ পেলো।
মালতা মাতলা কন্ঠে ধীরে ধীরে বললো,
–তোমার মনে আছে মেহের,,তোমার এই চুল দেখে আমি দ্বিতীয় বার তোমার প্রেমে পড়েছিলাম??
মেহের বুঝতে পারলো ফায়াজ ড্রিংক করেছে।হুশে নেই।
আর ভাবছে ড্রিংক করলো কিভাবে?আজকে তো বাসার বাইরে যায়নি উনি।তারপর সোফার পাশে ট্রি টেবিলে চোখ যেতেই মদের বোতল,গ্লাস দেখতে পেলো।
ফায়াজ ওর চুল সরিয়ে গালে স্লাইড করতে করতে গালের দিকে ঠোঁট এগুতেই মেহের ওকে বাধা দিলো।
–প্লিজ সরুন।আমার ভালো লাগছে না।আপনি হুশে নেই।শুয়ে পরুন।
ফায়াজ চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তাও খোলা রেখে বললো,,
–ভালো লাগছেনা??আমার ছোয়া ভালো লাগছে না??কেন তোমার ফার্স্ট হাসব্যান্ড তোমাকে এর চেয়ে ভালো ভাবে ছুয়েছিলো??তা কিভাবে ছুয়েছিলো আমাকেও একটু বলো।আমিও শুনি।ছেলেটার কি এমন ক্ষমতা ছিলো শুনি।টেল মি ফার্স্ট কিভাবে ছুয়েছিলো??
–ফায়াজ আজেবাজে কথা বলবে না।উনি মারা গেছেন।প্লিজ একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এসব বলবেন না।আমাকে যা বলার বলুন।
ফায়াজ চোখমুখ লাল করে কড়া গলায় বললো,,
–এতো ভালোবাসা?? একদিনের হাসব্যান্ডের জন্য এতো ভালোবাসা?? একদিনে কি এমন দিয়েছিলো তোকে??কি এতো ভালোবেসেছিলো যে আমার কথা তোর কাছে বিষের মতো লাগছে?
এই দাড়া দাড়া বিয়ের আগে থেকেই চিনাজানা ছিলো না তো?এর আগে থেকেই ছুয়াছুয়ি চলছিলো তাই না?
মেহের এবার কেদে দিলো।ফায়াজের এই জঘন্য কথা গুলো সহ্য করতে পারছেনা।ওর চরিত্র নিয়ে বাজে কথা গুলো গায়ে খুব লাগছে।ও ভাবতে পারছেনা ফায়াজ ওকে এসব কি করে বলছে?ওর ভাষা এতটা খারাপ।
–আমি কসম করে বলছি আমি ওনাকে বিয়ের পরেই প্রথম দেখেছি।
মেহের কাদতে কাদতে ঠোঁট ফুলাচ্ছে।ফায়াজ এটা দেখে আরো রেগে যায়।জোরে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিলো।তারপর চুল টেনে তুলে বললো,
–আরেকবার যদি ঠোঁট ফুলাস তবে আমি তোর এই ঠোঁট কেটে ফেলবো।
মেহের ভয়ে মুখ চেপে ধরলো।চুলের গোড়ায় প্রচন্ড ব্যথা পাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।মুখ চেপে ধরে কাদছে।
ফায়াজ চোখমুখ শক্ত করে বললো,
–এতো জ্বলছে এক্স হাসব্যান্ডের জন্য।এত বছর পরেও ভুলতে পারিসনি??কই আমার জন্য তো জ্বলে না।আমাকে তো মনে পড়ে না??
দূরর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে।তোকে দেখলে আমার ঘৃণা হয়।
তারপর চুল ছেড়ে দিয়ে আবার বোতল থেকে মদ গ্লাসে ঢালছে।
মেহের দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।তারপর কল ছেড়ে মন মতো কাদছে।কাদতে কাদতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো চোখে মুখে পানি দিয়ে শুয়ে পরলো।কিন্তু ওর চোখে ঘুম নেই।আড়চোখে ফায়াজের দিকে তাকাচ্ছএ ফায়াজ একমনে মদ গিলছে।
–ফায়াজ,এমন কেন করছেন?কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন??কেন আমার সাথে এমন করছেন?আমি তো আপনাকে বলি নি আমাকে বিয়ে করতে?আমি তো আর বিয়েই করতে চাইনি।এভাবেই জীবন টা কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।তবে কেন এলেন আমার জীবনে??
এসবের কোনো উত্তর নেই মেহেরের কাছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই মেহের ঘুমিয়ে পরলো।
সকাল,,,
মেহেরের ঘুম ভাংতেই লাফিয়ে উঠলো।কেননা গতকাল দেরিতে ঘুম ভাংগাতে ফায়াজ ওকে ধাক্কা মেরে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছিলো।পড়ে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছিলো অনেক।কনুইতে কিছুটা ছিলে গেছে।এখনো ব্যথা আছে।তাই নতুন করে আর ধাক্কা খেতে চায়না।
কিন্ত ফায়াজকে বিছানায় পেলোনা।ড্রিংক করতে করতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরেছে।মেহের ফ্রেশ হয়ে নিচে যাচ্ছে।
আজকে দুপুরেই মেহেরের শ্বশুর শাশুড়ী লন্ডন চলে যাবে।ভাবতেই মেহেরের মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।শুধু মন খারাপ ই না।ভয় ও করছে।না জানি ওনারা যাওয়ার পর ফায়াজ ওর সাথে কি করে।ভাবতে ভাবতে মাথা চক্কর দিচ্ছে।
মাথাটা এমনিতেই ব্যথা করছে কাল রাতে কাদার ফলে।
মেহের নিচে গিয়ে অবাক।কারণ সোফায় তার শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে ওর,,,
চলবে,,,
[যারা গল্পের কাহিনী বুঝতে পারছেনা কিংবা প্যাচ মনে হচ্ছে তাদেরকে বলি প্লিজ একটু ধৈর্য্য ধরুন।ধৈর্য্য ধরে পরের পর্বগুলো পড়তে থাকুন বুঝতে পারবেন।প্রথম পর্বেই যদি সব বলে দেই তবে গল্পের মজা কোথায়।তাই বলছি প্লিজ কষ্ট করে পরের পর্বগুলো পড়তে থাকুন।আর বেশী সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন আমি আর এগুবো না।ধন্যবাদ।]
#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-৪
ফাবিহা নওশীন
মেহেরের বাবা-মা,ছোট বোন মিহু আর দুজন কাজিন সিস এসেছে।এত সকাল সকাল ওদের দেখে মেহের কিছুটা অবাক।
মেহেরকে দেখে মিহু দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলো।মিহুকে পেয়ে মেহের খুব খুশী।মেহের ও বোনকে পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরলো।মিহু হটাৎ মেহেরকে ছেড়ে দিয়ে বললো,,
–আপি,,তোমার শরীরে কেমন নতুন একটা ঘ্রাণ পাচ্ছি।
মেহের আগ্রহ নিয়ে বললো,,
–নতুন ঘ্রাণ??
মিহু দুস্ট হাসি দিয়ে বললো,, জিজু জিজু ঘ্রাণ।
মেহের মিহুর কান ধরে বললো,
–খুব পাকা হয়েছিস না??ভুলে যাচ্ছিস আমি তোর বড় বোন?বড় বোনের সাথে এভাবে কথা বলে কেউ??
মিহু অবাক হয়ে বললো,
–বড় বোন?দেখো আপি আমাদের দুজনের হাইট এক সমান।তাহলে বড় ছোট কি করে হবে।
–তোর সাথে আমি কথায় পারবো না।চেষ্টা করাও বিথা।চল বাবামায়ের কাছে যাই।
মেহের হেসে হেসে মিহুর সাথে কথা বলছে।সেটা দেখে মেহেরের বাবা-মা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।ভেবে নিলো মেয়ে ভালোই আছে।মেহের গিয়ে বাবা মায়ের সাথে কথা বললো।কাজিন আর বোনের সাথে অনেক গল্প করলো।
তবে মেহের ভাবছে অন্য কথা।ফায়াজ যদি উল্টো পাল্টা কিছু বলে ওদের সামনে।এটা ভেবে মেহের অনেক চিন্তিত।
ফায়াজ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসেই মেহমান দেখতে পেলো।ফায়াজকে দেখে মেহেরের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।ফায়াজ কি না কি বলে কিন্তু মেহেরের চিন্তায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে ফায়াজ হাসি মুখে শ্বশুর শাশুড়ীকে সালাম করে খোজ খবর নিলো।মেহেরের বোন আর কাজিনদের সঙ্গে গল্প করছে।
মেহের ফায়াজের এমন রুপ দেখে খুশি হলো।
–যাক গুন্ডাটা সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করছে।সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করে।আমার সাথেই শুধু গুন্ডামি।আমাকে দেখলেই মাথায় পোকা উঠে যায়।
কিছুক্ষণ পর সবাই চলে গেলো।ওনারা ফায়াজের বাবা মার সাথে দেখা করতে এসেছিলো।
ফায়াজের বাবা মাকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে যাচ্ছে ফায়াজ ও মেহের।
এয়ারপোর্টে ফায়াজের মা ফায়াজকে ইচ্ছে মতো শাসিয়ে গেলো।মেহেরের সাথে উল্টো পাল্টা আচরণ যেন না করে,ওর খেয়াল যেন রাখে।আর মেহেরকে বললো ফায়াজ ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করলে ফোন করে যেনো জানায়।ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
ফায়াজ ড্রাইভ করছে মেহের পাশে বসে আছে।তবে জানালার দিকে ঘুরে বসে আছে।একমনে বাইরে তাকিয়ে আছে।জানালার গ্লাসে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ফায়াজ মিটমিট করে হাসছে।ব্যাপারটা মেহেরের কাছে মোটেও ভালো লাগছেনা।ওর এই হাসির মধ্যে কেমন একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।মেহেরের অনেক ভয় লাগছে।এতদিন শ্বশুর শাশুড়ী ছিলো কিন্তু এখন একা।
ফায়াজ মেহেরের চেহারায় আতংক দেখতে পাচ্ছে।যা ফায়াজের মনে পৈচাশিক আনন্দ দিচ্ছে।ফায়াজ মনে মনে বলছে,,
–ওয়েট বেবি,মাত্র তো গেম শুরু।তোমার জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে।সো বি রেডি।
ফায়াজ গাড়ি থেকে নেমেই বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।তারপর সব সার্ভেন্টকে ডাকতে শুরু করলো।৫জন সার্ভেন্ট একসাথে এসে দাড়ালো।
মেহের বাড়ির ভিতরে ঢুকে সবাইকে এভাবে লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলো।
মেহের জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে।
ফায়াজ মেহেরকে বললো তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
মেহের কৌতহুলবশত জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
সবাই এভাবে দাড়িয়ে আছে কেন??
ফায়াজ মেহেরের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে হাসি দিয়ে সকল সার্ভেন্টের হাতে একটা করে খাম দিয়ে বললো,
–তোমাদের দুমাসের অগ্রিম স্যালারি।দুমাস তোমাদের ছুটি।
মেহের চোখ বড়বড় করে ফায়াজের দিকে তাকালো।ছেলেটা কি করছে কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না।সব হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
একজন সার্ভেন্ট অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কিন্তু স্যার কি উপলক্ষে??
ফায়াজ ধমকের সুরে বললো,
–সে কৈফিয়ত তোমাদের দেবো?ছুটি দিয়েছি,অগ্রিম স্যালারি দিয়েছি আর কি চাও?
ওরা কিছু না বলে চলে গেলো।মেহের ফায়াজের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে তারপর কিছুটা সাহস সঞ্চার করে জিজ্ঞেস করলো,
–ওদের সবাইকে ছুটি দিয়ে দিলেন কেন?
ফায়াজ মেহেরের দিকে শয়তানি হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে মেহেরের দিকে এগিয়ে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–ফাকা বাড়িতে তোমাকে খুন করে গুম করে দেবো তাই বাসা ফাকা করলাম।
ফায়াজের কথা শুনে মেহেরের গলা শুকিয়ে গেলো।হাত পা কাপতে শুরু করলো।ফায়াজের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।ফায়াজ রহস্যময় হাসি দিলো।মেহেরের ফায়াজকে ঠিক লাগছেনা।মেহের আস্তে আস্তে ফায়াজের কাছ থেকে সরে গেলো তারপর ঘুরে এক দৌড়ে উপরে গিয়ে রুমের দরজা লক করে দিলো।
ফায়াজ মেহেরের ভয়ার্ত চেহারা দেখে পৈচাশিক শান্তি পেলো।আর মেহেরের এভাবে ভয় পেয়ে চলে যাওয়া ব্যাপার টা ওকে প্রচুর বিনোদন দিলো।না চাইতেও হোহো করে হেসে দিলো।
তারপর বললো,
–ভীতু ভীতুই রয়ে গেলো।যাইহোক ফায়াজ এই ভীতুর ডিমকে ভয় দেখিয়ে অনেক মজা পাবি।নাও মাই সুইট ওয়াইফ ওয়েট এন্ড সি।
সকাল সার্ভেন্টরা চলে গেলো।
রাতের বেলা,,,
মেহের সব কিছু গোছিয়ে রুমের সামনে এলো কিন্তু ঢুকার সাহস পেলোনা।কেমন ভয় ভয় লাগছে।মেহের ভালো করেই জানে ফায়াজের মাথায় কোনো আজাইয়া কিছু ভনভন করছে। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকটা সাহস সঞ্চার করে সূরা পরে বুকে ফু দিয়ে ভিতরে ঢুকলো।
ভিতরে ঢুকে দেখলো ফায়াজ পায়ের উপর পা তুলে ছুড়ি দিয়ে টি টেবিলের উপরে কি যেনো কাটাকাটি করছে।
ফায়াজের হাতে ছুরি দেখে মেহেরের গলা শুকিয়ে গেলো।আর ভাবছে,ওনার হাতে ছুরি কেন?ওনি কি সত্যি সত্যিই আমাকে মারবে?
ফায়াজের কথায় মেহেরের ঘোর ভাংলো।
–এইতো তুমি এসে পড়েছো,,এদিকে এসো।
মেহের বাধ্য মেয়ের মতো সামনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ওড়নায় আংগুল দিয়ে পেচ্ছাচে।
–তুমি জানো তোমার জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছি?শুধু আমিই না আমার এই ছুরিটাও তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
মেহের ভয়ে ভয়ে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে।ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ড্রিংক করেছে কিন্তু অল্প।সম্পুর্ণ হুশে আছে।
ফায়াজ উঠে দাড়িয়ে মেহেরের গলায় ছুরিটা রাখলো।মেহের শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।ওর মুখ দিয়ে কোনো টু শব্দ বের হচ্ছেনা।মনে হচ্ছে শ্বাস নিতেও ভুলে যাচ্ছে।
ফায়াজ মেহেরের গলার চারদিকে ছুরি দিয়ে স্লাইড করছে।তারপর বললো,
–খুব ভুল করে ফেলেছো মেহের।খুব বড় ভুল।আমাকে ধোকা দিয়েছো।আমার সাথে প্রতারণা করে কেউ পার পায়নি আর তুমি তো পুটিমাছ।তুমি পার পাবে না।এই ভুলের শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে সুইটহার্ট।
মেহের কিছু বলতে চাইছে কিন্তু গলা দিয়ে বের হচ্ছেনা।
ফায়াজ ছুরিটা গলা থেকে তুলে গালে নিয়ে গেলো।তারপর গালে স্লাইড করতে লাগলো।মেহের নড়াচড়া করছেনা।মনে হচ্ছে জমে আছে।কিছুক্ষন পর পর ঢুক গিলছে।
ফায়াজ ছুরিটা গালে স্লাইড করতে করতে বললো,
–তুমি একদিন কেন শাস্তি পাবে??তোমাকে ভালোবাসার অপরাধে আমি এতদিন কষ্ট পেয়েছি।আর আমাকে ঠকানোর জন্য আজীবন তোমাকে কষ্ট পেতে হবে।আজীবন।তোমাকে আমি বিয়ে করেছি ঠিকি কিন্তু তুমি আমার বউ নও।
ফায়াজ গালে হাত দিয়ে বললো তুমি,,তুমি,,,হুম পেয়েছি।তুমি আমার গোলাম, দাসী আর রক্ষিতা।বিয়ে করা রক্ষিতা।আমার স্ত্রীর সম্মান পাওয়ার কোনো যোগ্যতা তোমার নেই।
মেহেরের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু কোনো শব্দ করছেনা।ওর এখন ইচ্ছে করছে ফায়াজের হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে নিজেই নিজের গলা কেটে ফেলতে।
ফায়াজ মেহেরকে কাদতে দেখে বললো,
–নো নো বেবি,,এখন নয়।আমার কথা শেষ করতে দেও তারপর যত ইচ্ছে হয় কেদো।
কাল থেকে ব্রেকফাস্ট,লাঞ্চ,ডিনার সব তুমি বানাবে।এই বাড়ির সব কাজ তুমি করবে।আর আমার ঘুম ভাংগার আগে তোমার ঘুম না ভাংগে তবে তোমার কপালে খুব দুঃখ আছে।নাও গেট লস্ট।আমার সামনে থেকে যাও।
মেহেরের গলা থেকে ছুরি সরিয়ে নিলো।মেহের হাফ ছেড়ে বাচলো।যেন ধু ধু মরুভূমিতে একটু পানির সন্ধান পেয়েছে।
ফায়াজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছে তুমি আমার সাথে যা করেছো তার শাস্তি আমি তোমাকে তিলে তিলে দেবো।তোমাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে ভস্ম করে দেবো।আমার ভিতরে যে আগুন তুমি জ্বালিয়েছো তাতে তো আমি একা পুরবো না।তোমাকেও পুরতে হবে।
ফায়াজের প্রচুর পরিমাণে সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে।পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে রাখলো তারপর চিতকার করছে,,
–মেহের মেহের,,,
মেহের ফায়াজের চিতকার শুনে লাফিয়ে উঠলো।মাঝারাতে আবার কি ভুত মাথায় ভর করেছে তা ভাবতেই কলিজা কেপে উঠছে।
চলবে,,,,
(যারা মেহেরের বিষয়টি বুঝতে পারছেন না তাদের বলছি আপনারা আগের পর্বে পরেছেন ফায়াজ মেহেরকে বলেছে একদিনের স্বামীর প্রতি এতো ভালোবাসা।অনেকে হয়তো বুঝেছেন আবার অনেকে বুঝেন নি।যারা বুঝেন নি তাদের বলছি মেহেরের এর আগে বিয়ে হয়েছিলো।আর বিয়ের পরের দিন কোনোভাবে হাসব্যান্ড মারা যায়।ফায়াজ মেহেরের দ্বিতীয় হাসব্যান্ড।আর ফায়াজ মেহেরকে আগের বিয়ে আর স্বামীকে নিয়ে কথা শুনায়।শুনানোর ও কারণ আছে তা আস্তে আস্তে বুঝতে পারবেন।ধন্যবাদ।)