#না_চাহিলে_যারে_পাওয়া_যায় পর্ব ১৭
#ফারহানা ইয়াসমিন
“হ্যা রু, আমি নিয়াজ আমিই শুভ।”
রুহি কষ্টে উঠে বসলো। শুভ ওকে ধরতে যেতেই রুহি হাত দেখিয়ে থামায়-
“সেদিন সত্যি তাহলে তোকেই দেখেছিলাম আমি?”
“আমি ছিলাম আমাকেই তো দেখবি। রু, কতোদিন পরে তোকে দেখলাম আমার যে কি ভালো লাগছে না বলে বোঝাতে পারবোনা। কিন্তু তুই পড়ে গেলি কেন বলতো?”
শুভকে বাস্তবিকই ভীষণ খুশি দেখাচ্ছে। রুহি অবাক চোখে শুভকে দেখলো। শুভর কি কিছুই মনে হচ্ছে না? এতো বড় মিথ্যে এতোগুলা বছর ধরে লালন করেছে তবুও ওর কোন বিকার নেই দেখা যাচ্ছে। রুহি এতো বিস্মিত হলো যে কি বলবে কথা খুঁজে পেলো না।
“ইশশশ, কি অবস্থা হয়েছে। কতোটা কষ্ট সইতে হয়েছে তোকে তাই ভাবছি।”
“তুই আমার সাথে এতো নরমাল হয়ে কথা বলছিস কি করে শুভ? নিজের কৃতকর্ম নিয়ে কি একটুও ভয় পাচ্ছিস না তুই?”
রুহি তীব্র বিতৃষ্ণা ভরে শুভকে দেখলো। শুভর মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো দ্রুত। রুহি আবার বললো-
“নিজের পরিচয় লুকিয়ে আমার সাথে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টাটা কি তোর ইচ্ছে নাকি অন্য কেউ বলেছে? আমি ভাবতেও পারছি না শুভ তুই এমন একটা কাজ করেছিস। কিভাবে পারলি? তুই নাকি আমাকে ভালোবাসিস? এই তোর ভালোবাসা? প্রতারনা, ধোঁকাবাজি করে আমাকে ফাঁসানো। তোর প্ল্যানটা কি ছিলো আমাকে বলবি?”
রুহি একনাগাড়ে কথা বলে হাফায়। শুভ ছলছল চোখে ওর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো-
“রু তুই ঠান্ডা হ। সব বলবো তোকে। শুধু অনুরোধ আমাকে কোনক্রমেই ভুল বুঝিস না। আমি সত্যিই তোকে ভালোবাসি, এ ভালোবাসায় একফোঁটা খাদ নেই। আমার জীবনে আমি নিজের পরে একজনকেই ভালোবেসেছি আর সে হলো তুই। কাজেই তোর কোন ক্ষতি করবো বা চাইবো এমনটা একবারের জন্যও ভাবিস না প্লিজ।”
শুভ কাতর গলায় মিনতি করলো। রুহি ঠোঁট বাকিয়ে অসহায় চোখে হাসলো-
“কি ভাববো আর কি ভাববো না সেটাই তো বুঝতে পারছি না শুভ। চারিদিকে মুখোশধারী, কে সত্যি কে মিথ্যা কার মনে কি চলছে সব সব কিছু ধোয়াষা। সবচেয়ে দুঃখ হলো যে মানুষটাকে বিশ্বাস করতে চাইতাম সেও আমার সাথে প্রতারনা করলো। আচ্ছা বলতো তুই কি জানতি না আমি তোর ভাবী? জেনেশুনে আমার এতোবড় ক্ষতি করে তোর লাভটা কি শুভ?”
“রু আমি তোর কোন ক্ষতি করিনি। বরং তোকে মৃত থেকে জীবিত করেছি। তুই অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিলিস আমি তোর হাত ধরে টেনে তুলেছি।”
শুভর কন্ঠ কেমন ফ্যাসফ্যাসে শোনায়। রুহি চুপ করে তাকিয়ে শুভকে দেখছে-
“বড় উপকার করেছিস শুভ। সেই উপকারের প্রতিদান যে এভাবে দিতে হবে ভাবিনি। আমার ইমোশন নিয়ে আমার মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার তোকে কে দিয়েছে শুভ? আমি তোদের কাছে একটা ফুটবল যেটাকে যার মন চাইলো লাথি দেবে? তোর ভাই বিয়ে করে পালাবে, তুই সহানুভূতি দেখিয়ে প্রেম করবি। মানে কি এসবের?”
“দেখ রু, ভাইয়ার তো ফেরত আসার কথা ছিলোনা। ও কেন এসেছে তাও জানি না। যে কারনেই আসুক না কেন তুই কিছুতেই ওর সাথে জীবন কাটাতে পারিস না। যে মানুষ এতোদিন তোর খোজ করেনি তাকে কেন তুই সুযোগ দিবি? আমি আছি তো তোর জন্য তোর ভালোবাসার মানুষ।”
“ছিহ শুভ ছিহ। তোদের সব ভাইদের দেখি পরস্ত্রীর দিকে নজর। আমি না চাইতেও তোকে ভালোবেসে ফেলেছি দেখে নিজের উপরই ঘৃনা হচ্ছে।”
ঘৃনায় রুহির মুখচোখ কুঁচকে উঠলো। শুভ কাতর হয়ে রুহির হাত ধরে-
“তুই ভুল বুঝছিস। ভাইয়া তোকে ফেলে চলে গেলে। বড় আব্বু অনেক দুঃখ করতো। তোর জীবন নষ্ট হবার জন্য নিজেকে দায়ী করতো। সেই ভুলের প্রায়শ্চিত করতে চাইতো কিন্তু কিভাবে সেটা জানতো না।”
রুহি এক ঝটকায় শুভর থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো-
“তাই তোকে লেলিয়ে দিয়েছিলো আমার পেছনে?”
রুহি হতবাক হয়ে শুভকে দেখে।
“এভাবে বলছিস কেন রু? পুরো কথাটা তো শোন।”
“না শুনবো না। এখন যে তুই সত্যি বলছিস তার গ্যারান্টি কি? তোর চাইতে তো রাজ ভালো। ও আমার কোন ক্ষতি না করে চলে গেছিলো। আর তুইতো আমার মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছিস। এতো বড় কান্ড ঘটানোর পরে তোকে কি বিশ্বাস করা উচিত বল তো আমাকে?”
রুহি চাপা কন্ঠে গর্জন করলো।
“এভাবে বলিস না রু। আমাকে ভুল বুঝে কোন ভুল ডিসিশন নিস না। আমার পুরো কথা মন দিয়ে শোন তারপর যেটা ভালো মনেহয় সেটা করিস।”
“আমি তোর কোন কথা শুনবো না। তুই এখন যা শুভ, আর কখনো আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করিস না। আমি জাস্ট তোকে নিতে পারছি না। তোরা সবাই এক, কেউ ভালো না।”
বলতে বলতে রুহি ঝরঝর করে কাঁদে। শুভ এগিয়ে এসে ওর মাথায় হাত রাখতে চায়। রুহি ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে শুভকে ধাক্কা দিলো-
“ডোন্ট টাচ মি। এখনই বেড়িয়ে যা আমার রুম থেকে। না হলে আমি চিৎকার করবো।”
“রু প্লিজ একবার শুধু আমার কথা শোন।”
“না একবারও না। আমি আর তোদের খেলার পুতুল হবো না। যা করেছিস করেছিস আর সুযোগ পাবি না। প্লিজ চলে যা।”
শুভ তবুও দাঁড়িয়ে রইলো। রুহির চোখ থেকে সমানে শ্রাবনধারা বইছে।
“এখনো দাঁড়িয়ে আছিস? তুই যাবি না আমি চিৎকার করবো?”
“রু!”
“ঠিক আছে আমিই চলে যাচ্ছি।”
রুহি পা বাড়াতেই শুভ এগিয়ে এলো-
“তুই থাক আমিই চলে যাচ্ছি।”
শুভ গেট খুলে বেরুতেই রুহি বিছানায় লুটিয়ে পড়লো। এদিকে শুভকে রুম থেকে বেরুতে দেখেই দরজার আড়াল থেকে কেউ সরে গেলো দ্রুত।
★★★
“রাজ আজকাল একটু বেশি ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে বিজনেসে।”
আফজাল শিখার নরম পেলব হাতে হাত বুলায়।
“হিসাব দেখতে চাইছে।”
“হুমমম।”
শিখা চোখ বুজে আফজালের স্পর্শ উপভোগ করছে।
“ও হিসাব দেখলে বুঝে ফেলবে গড়মিল। আজকাল রেনুর বর খুব ভাব করছে রাজের সাথে। সেই কানপড়া দিচ্ছে কিনা কে জানে।”
শিখার গায়ে আফজালের স্পর্শ গভীর হলো।
“তা দিকনা। ভাইজান তো আর কিছু করার অবস্থায় নেই। একা রাজ আর কতো কি করবে। তবে বউটা ত্যাদর আছে। যতদিন রাজের সাথে মিল না হয় ততদিন কোন ভাবনা নেই। মিল হলেই বিপদ।”
“মিল যাতে না হয় সেজন্য তো তুমি আছো।”
আফজাল শিখার গালে হাত বুলিয়ে চুমে দিলো। বাহুতে চাপ দিতেই শিখা তাকালো। ওর চোখ দুটো লাল টকটকে-
“সে আছি। ভাইজানের বংশকে ছাটাই করতে যা করা লাগবে করবো। পাঁচ বছর আগে যেভাবে রাজকে বাড়িছাড়া করেছিলাম দরকার হলে আবার সেরকম কিছু করবো। তুমি একদম ভেবোনা এসব নিয়ে।”
“ভাবছি না। তুমি থাকলে ভাবনা কি?”
আফজাল হাসলো, শিখাকে কাছে টানলো। শিখা আদূরে বেড়ালের মতো আফজালের বুকে মুখ গুজলো। আফজাল ক্লান্ত গলায় বললো-
“শিখা, ভাবছি এতো কিছু করে আদৌও কি কোন লাভ আছে? যা হারিয়ে যাওয়ার তা তো গেছেই। এখন এসব করে কি লাভ হবে?”
শিখা তৎক্ষনাৎ মুখ তুলে আফজালকে দেখলো-
“তোমার বুকের আগুন এতো তাড়াতাড়ি নিভে গেলো? কিন্তু আমার যে নেভেনি? আমি তো তিলে তিলে জ্বলছি। ভাইজানকেও ততটুকু জ্বলতে হবে।”
“তুমি ভুলে যাচ্ছ ভাইজান আমাদের চাইতে বেশি হারিয়েছে।”
“আমি এতোকিছু জানতে চাই না আফজাল। প্লিজ এসব বলে আমার মেজাজটা খারাপ করে দিয়ো না। সেসব আবার নতুন করে মনে করতে চাই না যা মনে করলে মরে যেতে মনচায়। যা হচ্ছে হতে দাও।”
আফজাল কিছু না বলে চুপ করে গেলো। শিখার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। বারান্দায় এসে সিগারেট জ্বালালো। শুরুতে বারকয়েক কাশলো তারপর ক্রমাগত কয়েকটা খেলো। হঠাৎ ছাঁদের কার্নিশে চোখ পড়লো। কে দাঁড়িয়ে আছে ওখানে? শুভ না? এতো রাতে ছাঁদে কি করছে শুভ? কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছে কেন? আফজালের বুক ধরাস ধরাস করে। সে প্রায় ছুটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
চলবে—
©Farhana_Yesmin
(বইমেলায় আমার দ্বিতীয় বই ‘অনসূয়া’ পাবেন এশিয়া পাবলিকেশন্স এর স্টল ৯১-৯৪ এ। আমার প্রথম বই তিয়াস পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় ১৪৯ নং স্টলে। দুটো বই রকমারিতেও পাবেন। চাইলে সংগ্রহ করতে পারেন।)