#হৃদমাঝারে পর্ব-১৪
#দেবারতি_ধাড়া
-এই পোলো কী হয়েছে তোর? আমি লক্ষ্য করেছি, স্যার যখন পড়াচ্ছিলেন, তুই তখন ঠিকমতো মন দিয়ে পড়া শুনছিলিস না! বলনা পোলো কী হয়েছে তোর?
-আমার আবার কী হবে নিশান? আমি তো মন দিয়েই পড়া শুনছিলাম…
-বললেই হলো! আমি ঠিক বুঝেছি। তোর নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে.. তা নাহলে তো তুই অন্য দিন এরকম করিস না! এতো অন্য মনস্কও থাকিস না! তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, যে তুই কোনো কারণে আপসেট হয়ে রয়েছিস। আর কেউ বুঝতে না পারলেও আমি ঠিক বুঝেছি পোলো…
-আসলে তোকে কী বলবো আমি বুঝতে পারছি না নিশান। তুই জানিস তো যেদিন থেকে আমাদের কলেজের ছুটি পড়লো, সেদিনের পর থেকেই আমি মাঝে মাঝেই এআরসি-কে ম্যাথ্স সলভ করে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতাম। এআরসি সেগুলো চেকও করে দিতেন। এখন তো উনি কলকাতায় ওনার বাড়িতে আছেন। দু-একদিন আগে পর্যন্তও উনি আমার সব ম্যাথ্স গুলো চেক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই যে ওনার কী হলো, উনি আমার কলও রিসিভ করছেন না, আর টেক্সটের রিপ্লাই দেওয়া তো দূরের কথা, টেক্সট সীনই করছেন না!
পৌলোমী আর নিশান টিউশন থেকে বাড়ি ফিরছিলো। আর ঠিক তখনই ওকে মনমরা হয়ে থাকতে দেখে পৌলোমীর ক্লাসমেট নিশান পৌলোমী মন খারাপের কারণ জানতে চাইলে, পৌলোমী যখন ওর মন খারাপের কারণটা বললো, তখন নিশান সেটা শুনে বললো,
-ওহ! এবার বুঝেছি মহারানীর মুখ ভার করে রাখার কারণটা! আচ্ছা পোলো তুই আমায় একটা কথা বলতো? এআরসি তো কিছু দিনের জন্য ওনার বাড়িতে গেছেন ছুটি কাটাতে। উনি হয়তো এখন ওনার বাড়ির লোকের সাথে, ওনার মায়ের সাথে ভালো করে সময় কাটাচ্ছেন। আর তুই ওনাকে ওনাদের বাড়িতে গিয়েও একটু শান্তিতে থাকতে দিচ্ছিস না, তাই হয়তো স্যার তোর কল রিসিভ করেননি বা টেক্সটের রিপ্লাই করেননি। তুই সেটার জন্য এতো চাপ নিস না তো পোলো! বী কুল.. দেখবি স্যার ঠিক ফ্রি হয়ে তোর ম্যাথস গুলো চেক করে দেবেন!
-না রে নিশান.. এআরসি তো আগে কখনও এরকম করেননি! উনি যতো ব্যস্তই থাকুন না কেন, পড়াশোনার ব্যাপারে কিন্তু উনি খুব সিরিয়াস। আমি ম্যাথস্ সলভ করে পাঠালে উনি ঠিক চেক করে দেন.. আর উনি রিপ্লাইয়ে এতো লেটও করেন না! বিজি থাকলে তো উনি সেটা আমাকে বলেই দিতে পারতেন! কিন্তু ওনার হঠাৎ কী এমন হলো রে? যে একটা রিপ্লাই পর্যন্ত দিচ্ছেন না! ওনার কোনো বিপদ হলোনা তো! আমার ওনার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে রে…
-আচ্ছা ঠিক আছে। বুঝেছি আমি। আয়ান স্যারের জন্য তোর খুব চিন্তা হচ্ছে তাই তো? আমি তোকে কথা দিচ্ছি পোলো, আমি কল করে খোঁজ নেবো আয়ান স্যারের। আর যদি ওনার কোনো খোঁজ পাই, তাহলে খোঁজ পাওয়া মাত্রই তোকে জানাবো। কিন্তু তুই প্লিজ এখন আর মন খারাপ করে থাকিস না পোলো! তুই মন খারাপ করে থাকলে আমার কিন্তু একদম ভালো লাগে না রে!
-কী করবো বল? ওনার জন্য তো আমার খুব মন কেমন করছে! কলেজটা যে কেন ছুটি পড়তে গেলো কী জানি! পরীক্ষার আগে তো এই ছুটিটা না পড়লেই পারে বল? কলেজ খোলা থাকলে তবেই তো আমি এআরসি-কে একটু চোখের দেখা হলেও দেখতে পাই!
-আরে বাবা! আর কিছু দিন পরেই তো কলেজ খুলে যাবে। তখন না হয় মন ভরে আয়ান স্যারকে দেখবি! এখন আর প্লিজ মন খারাপ করে থাকিস না! এইনে কিটক্যাট খা…
নিশান ওর পিঠে ঝোলানো বইয়ের ব্যাগ থেকে একটা বড়ো কিটক্যাটের বাক্স বের করে পৌলোমীর হাতে ধরিয়ে দিলো। কিটক্যাটের বাক্সটা নিশানের হাত থেকে একেবারে ছিনিয়ে নিয়ে পৌলোমী বললো,
-আজও তুই আমার জন্য কিটক্যাট এনেছিস? এই নিশান তুই রোজ রোজ কেন আমার জন্য কিটক্যাট নিয়ে আসিস বলতো?!
-কারণ তোর কিটক্যাট পছন্দ তাই..
-তাই বলে তুই রোজ আমার জন্য কিটক্যাট নিয়ে আসবি? এতো টাকা কোথায় পাস তুই?
-হ্যাঁ নিয়ে আসবো! আমার টিফিনের আর হাত খরচের টাকা থেকে বেঁচে যায়। বাবা তো আমাকে রোজ টিফিনের আর অটো ভাড়ার জন্য টাকা দেয়, তা থেকেই আমি তোর কিটক্যাটের জন্যও কিছুটা টাকা বাঁচিয়ে রাখি।
-ওহ! এই কারণেই তুই রোজ অটোতে যাতায়াত না করে পায়ে হেঁটে এতোটা পথ যাতায়াত করিস তাইতো? কিন্তু তোর বাড়ি থেকে তো কলেজ আর টিউশন অনেকটা হাঁটা পথ! তোর তো কষ্ট হয় নিশান…
-ধুর! কিচ্ছু কষ্ট হয় না আমার। আর তাছাড়া আমি তো মাঝে মাঝে সাইকেল নিয়েও যাওয়া-আসা করি। আর সেই জন্যও টাকাটা বেঁচে যায়! তুই এখন তাড়াতাড়ি কিটক্যাটটা খেতে শুরু কর তো.. আমাকেও একটু দিস কিন্তু! নাহলে তোর আবার পেট খারাপ হলেও হতে পারে!
কথাটা বলেই হো হো করে হেসে উঠলো নিশান। ওর কথায় রেগে গিয়ে পৌলোমী নিশানকে মারতে উদ্যত হলো। তারপর গুম গুম করে নিশানের পিঠে দু-তিনটে ঘুসি মেরে ও নিজেও হেসে ফেললো। তারপর দুজনে মিলে ভাগ করে কিটক্যাট খেতে খেতে বাড়ির দিকে রওনা হলো…
আয়ানের বাড়ির সামনে ব্রেক কষে বাইক থেকে নেমে জিয়া বললো,
-নাও প্রফেসর, তোমার বাড়ি এসেগেছে। যাও এবার এটুকু বাইকটা নিজেই নিয়ে যাও! দেখো, সাবধানে বাইকটা নিয়ে যেও কিন্ত। আবার মাথা ঘুরে পড়ে যেও না যেন.. আমি এবার দিদিয়ার কাছে যাই.. টাটা!
জিয়া আয়ানকে বাড়ির সামনে পৌঁছে দিয়েই দৌড়ে চলে এলো ওখান থেকে। ও আর ওখানে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। ওরকম গম্ভীর আর রাশভারি ব্যক্তিত্বের একটা মানুষকে এভাবে কষ্ট পেয়ে ওর চোখের সামনে একেবারে ঝিমিয়ে পড়তে দেখতে একদম ভালো লাগছিলো না জিয়ার। তাই আয়ানকে বাড়ির কাছে ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে ওখান চলে এসে একটু দূরে গিয়ে একটা ট্যাক্সি ডেকে তাতে উঠে বসেই জিয়া মনে মনে বললো, “আমি জানি প্রফেসর, তুমি আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছো। আমার কথা রাখতে গিয়ে তুমি নিজেই হয়তো শেষ হয়ে যাচ্ছো। কিন্তু কী করবো বলো? এটুকু স্বার্থপর তো আমাকে হতেই হলো.. আমার দিদিয়ার জন্য এটা আমাকে করতেই হলো.. তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও প্রফেসর! এছাড়া যে আমার আর অন্য কোনো উপায় ছিলো না! তুমি এই বিয়েতে না করে দিলে যে আমার দিদিয়া খুব কষ্ট পেতো। আমার দিদিয়াকে আবার নতুন করে কোনো কষ্ট দিতে আমি আর চাই না! কিন্তু তুমি আমাকে কবে এতোটা ভালোবেসে ফেললে প্রফেসর? আমি তো বুঝতেই পারিনি.. আমি তো তোমাকে শুধু একজন ভালো বন্ধুই ভেবেছিলাম। আমি আগে অনেক ছেলের সাথে ফ্লার্ট করেছি। কিন্তু তোমার সাথে তো কখনও ফ্লার্ট করার কথাও মনে হয়নি আমার। একদম বন্ধুর মতোই মিশেছিলাম তোমার সাথে। আর খুব বেশি দিন তো তোমার সাথে আমার পরিচয়ও হয়নি! এর মধ্যেই তুমি আমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেললে কী করে প্রফেসর? কী জানি! ভালোবাসা কী এরকমই হয়?! হবে হয়তো.. তুইও আমায় ক্ষমা করে দিস রে দিদিয়া.. আমি যে তোকেও ঠকাচ্ছি! আমি যে তোর হবু বরকে আগে থেকেই চিনি, আর আমিই যে প্রফেসরকে তোর সাথে বিয়েতে রাজী করিয়েছি, এই কথাটা আমি তোকে কখনোই বলতে পারবো না রে দিদিয়া! কারণ এই কথাটা জানলে তুই আরও বেশি কষ্ট পাবি যে.. কিন্তু কী করবো বল? আমি যে তোকে আর কষ্ট পেতে দিতে পারবো না.. আর তার জন্য যদি আমাকে এই সত্য টুকু গোপন করতে হয়, আমি তাই করবো দিদিয়া.. তুই পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস!”
জিয়া চলে যাওয়ায় পর কোনোরকমে বাইকটা টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে গ্যারেজে ঢোকালো আয়ান। তারপর ধীর পায়ে ঘরে ঢুকতে গেলো। ততোক্ষণে বাসন্তীদেবী আর রিমলি ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন। ওনারা ওঠার পর আয়ানের ঘরের দরজা খোলা দেখে আর আয়ানকে ঘরের মধ্যে দেখতে না পেয়ে ভীষণই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। আয়ানকে দুয়েকবার কলও করেছিলো রিমলি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ও বুঝেছে যে আয়ানের ফোনটা ওর ঘরের বিছানাতেই পড়ে আছে। তাই শুধুমাত্র অপেক্ষা করা ছাড়া আর কল করেও কোনো লাভ নেই। এখন ওকে ওরকম ঝিমিয়ে আর থমথমে মুখ নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখে রিমলি এগিয়ে এসে বললো,
-কীরে দাদা! এতো সকালে কোথায় গিয়েছিলি তুই? সেই কাল বিকেলে আরুশিদিদের বাড়ি থেকে ফেরার পর থেকে যে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলি, তারপর মা আসার পর একবারই দরজা খুলে বিয়ে করবি না বলে আবারও দরজা বন্ধ করলি, তারপর তো আর দরজাও খুললি না একবারও! কী হয়েছে রে তোর? তুই এই বিয়েটা করবি না কেন দাদা? জানিস মা কাল থেকে কিচ্ছু খায়নি তোর জন্য! তার ওপর সকালে তুই বাড়িতে ছিলি না দেখে তো মা কান্নাকাটিও শুরু করেছিলো। অনেক কষ্টে আমি মাকে একটু থামিয়ে শান্ত করতে পেরেছি..
-মা কোথায় রিমলি?
-মা? মা তো আমার ঘরে আছে। কেন রে? এই দাদা, তোর গলাটা এরকম লাগছে কেন রে? তুইও কী কান্নাকাটি করেছিস নাকি? তোর মুখটাও তো কেমন যেন ফ্যাকাশে-ফ্যাকাশে লাগছে!
রিমলির প্রশ্নের আর কোনো উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে রিমলির ঘরের দিকে চলে গেলো আয়ান। বাসন্তীদেবী চুপচাপ রিমলির বিছানার এক কোণে বসেছিলেন। আয়ান ঘরের বাইরে থেকেই ডাকলো,
-মা? ভিতরে আসবো?
-বাবান! তুই এসেছিস? আয় বাবা ভিতরে আয়!
-রিমলি বললো তুমি নাকি খুব কান্নাকাটি করছিলে?
-সেসব কথা বাদ দে বাবান। তুই আগে বল অতো সকালে কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই? বাবান শোন, তোর অমতে তোকে এই বিয়েটা করতে হবে না। কিন্তু তুই এরকম হুটহাট করে আমাদের এভাবে কিছু না বলে কোথাও চলে যাস না বাবা! আমি নাহয় গায়েত্রীদেবীর সাথে কথা বলবো। আমি ওনাদের বারণ করে দেবো আর কোনো আয়োজন বা বিয়ের তোড়জোড় করতে। আমি জানি তাতে হয়তো ওনাদের কাছে আমাকে অনেক ছোটো হতে হবে। আমাকে হয়তো উনি দু-চার কথা শুনিয়েও দিতে পারেন। সে নাহয় আমি নিজের ছেলের জন্য একটু অপমান সহ্য করে নেবো। কিন্তু তোর অমতে আমি এই বিয়েটা দিতে চাই না বাবান। আমার মান-সম্মানের থেকেও আমার কাছে আমার ছেলের সুখে থাকা আর ভালো থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
-না মা, তোমাকে কারোর কাছে কোনো অপমানিত হতে হবে না। ওনাদেরকে কিছু বারণও করতে হবে না।
-মানে? তুই কী তাহলে..
-হ্যাঁ মা, তুমি চিন্তা কোরো না! আমি বিয়েটা করবো।
-কিন্তু কাল যে তুই বললি বিয়ে করবি না?
-সে তো কাল বলেছিলাম। আজ তো বলছি আমি এই বিয়েতে রাজী আছি!
-না বাবান! তুই একবার বলছিস বিয়ে করবি না, একবার বলছিস বিয়ে করবি! বিয়ের মতো এতো বড়ো একটা ব্যাপারে এরকম দোনোমনো করে কিছু হয় না রে বাবা। এটা তো সারাজীবনের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমি হয়তো এই বিয়েটা ভেঙে দেওয়ার কথা বললে একটু অপমানিত হবো, সবার কাছে ছোটো হয়ে যাবো। কিন্তু তুই তো সারাজীবনটা ভালো থাকবি, আমার পছন্দ করা মেয়েকে মন থেকে মেনে নিতে না পেরেও বিয়ে করে তোর জীবনটা তো আর নষ্ট হয়ে যাবে না। আমি আর তোকে এই বিয়ের ব্যাপারে কোনো জোর করবো না। তোর যেদিন যাকে ইচ্ছে হবে তুই সেদিন তাকেই বিয়ে করিস…
-আমি বললাম তো মা, আমি এই বিয়েটা করতে রাজী আছি। তুমি সব ব্যবস্থা করো!
-তুই মন থেকে বলছিস তো বাবান? আমার জন্য, আমাকে অপমানিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তুই তোর জীবনে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস না তো?
তখনই আয়ানের মনে পড়ে গেলো জিয়ার বলা কথা গুলোর কথা। আয়ান যদি শিয়াকে বিয়ে না করে তাহলে জিয়া সবাইকে ছেড়ে, সবকিছু ছেড়ে চলে যাবে বলেছে। ওর সবচেয়ে প্রিয় ফটোগ্রাফিও ছেড়ে দেবে। আয়ান মনে মনে ভাবলো, এই সবকিছু ছেড়ে চলে যাওয়া থেকে জিয়াকে আটকানোর জন্য যে আয়ানকে এই বিয়েটা করতেই হবে। তাতে যদি ওর চরিত্রের দ্বিচারিতা করা হয়, তাহলে তাই করতেই রাজী ও। তাই এসব কিছু ভাবনা চিন্তা করেই বাসন্তীদেবীর প্রশ্নের উত্তরে আয়ান বললো,
-হ্যাঁ মা, আমি মন থেকেই বলছি! তুমি বিয়ের আয়োজন করো। আমি আর বেশিদিন এখানে থাকতে পারবো না। যা করার যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব করো প্লিজ! আমি শিলিগুড়ি ফিরতে চাই!
কথা গুলো বলেই আয়ান রিমলির ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। তারপর আবারও নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে বালিশে মুখ গুঁজে দিলো ও।
জিয়া যখন ক্যাব থেকে নেমে ওর পিমণির বাড়িতে ঢুকলো, তখন বাগানে একটা গাছের তলায় একটা বেঞ্চে বসে অমলেন্দুবাবু খবরের কাগজ পড়ছিলেন। জিয়াকে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখেই উনি বললেন,
-কী ব্যাপার জিয়া? এতো সকাল সকাল কোথায় যাওয়া হয়েছিলো তোর? তোর পিমণি তো এদিকে তোকে দেখতে না পেয়ে একদম হাঁপিয়েই যাচ্ছিলো! তবে আমারও একটু চিন্তা হচ্ছিলো বটে! তুই এখানকার রাস্তাঘাটও সেভাবে চিনিস না। কাউকে কিছু না বলে এভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথায় চলে গিয়েছিলি বাবু?
-সে কী! সবার এতো চিন্তার কী আছে পিসান? আমি তো ভোরবেলায় মর্নিং ওয়াক করতে গিয়েছিলাম!
জিয়ার গলা পেয়ে বাড়ির ভিতর থেকে গায়েত্রীদেবী বেরিয়ে এলেন। ওনার পিছন পিছন শিয়াও বেরিয়ে এসে জিয়াকে দেখে বললো,
-কীরে জিয়া? অতো ভোরে কোথায় গিয়েছিলি তুই? সকালে উঠে তোকে সারা বাড়ি খুঁজে ফেললাম, কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না! পিমণিও তো তোর জন্য কতো চিন্তা করছিলো!
অমলেন্দুবাবু শিয়াকে একটু রাগান্বিতভাবে কথা বলতে দেখে বললেন,
-আরে বাবা শিয়া, জিয়াকে অতো বকাবকি করিস না মা.. জিয়া ভোরবেলা মর্নিং ওয়াক করতে গিয়েছিলো।
-মর্নিং ওয়াক? তুই সত্যিই মর্নিং ওয়াক করতে গিয়েছিলি নাকি জিয়া? আমাকে তো একবার বলে যাবি বল? আমাদের তো চিন্তা হচ্ছিলো নাকি। আর তুই যদি মর্নিং ওয়াক করতেই যাবি, আমাকেও তো ডাকতে পারতিস! আমিও যেতাম.. তুই তো এখানকার রাস্তাঘাটও ঠিকমতো চিনিস না জিয়া…
শিয়ার কথা শুনে জিয়া ওর দিকে এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-সরি রে দিদিয়া! আমি বুঝতে পেরেছি আমার এভাবে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যাওয়াটা একদম উচিৎ হয়নি! আসলে তুই তখন এতো অঘোরে ঘুমাচ্ছিলি যে আমার আর তোকে ডাকতেই ইচ্ছে করলো না! তাই আমি একা একাই চলে গেলাম!
-তাই বলে এতোক্ষণ? মর্নিং ওয়াক করতে কতোক্ষণ সময় লাগে জিয়া?
শিয়ার গালে গাল ঘষে ওকে একটু আদর করে দিয়ে জিয়া বললো,
-সরি বললাম তো দিদিয়া! আর কখনও এরকম হবে না.. প্রমিস!
-থাক হয়েছে! চল এবার ভিতরে চল..
জিয়া আর শিয়ার খুনসুটি দেখে গায়েত্রীদেবী হেসে ফেলে বললেন,
-হ্যাঁ, তোদের দুই বোনের মান-অভিমানের পালা মিটে গিয়ে থাকলে, ভিতরে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে আয়! আমি তোদের জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করছি।
-হ্যাঁ মণি, তুমি যাও.. আমি জিয়াকে নিয়ে এক্ষুণি আসছি!
-হ্যাঁ হ্যাঁ পিমণি আমরা এক্ষণি যাচ্ছি.. চল দিদিয়া…
পিছন থেকে শিয়াকে জড়িয়ে ধরে ওইভাবেই বাড়ির ভিতরে ঢুকলো জিয়া। তারপর মুখ-হাত ধুয়ে ওরা দুজনেই খাবার টেবিলে এসে বসলো। অমলেন্দুবাবুও খবরের কাগজ পড়া শেষ করে বাগান থেকে ফিরে এসে মুখ-হাত ধুয়ে জলখাবার খাওয়ার জন্য টেবিলে এসে বসলেন।
ক্রমশ…
পঞ্চদশ পর্বের লিংক-
https://www.facebook.com/101048758811830/posts/273766554873382/