#না_চাহিলে_যারে_পাওয়া_যায় পর্ব ৩৭
#ফারহানা ইয়াসমিন
“এবার শান্তি হলো তো? কতোবার বলেছি এসব বাদ দাও। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে ভুলে যাও সব। নাহ উনি আমার কথা শুনবেই না। এবার শান্তি পেয়োছো তো? এখন একা একা থেকে যত ইচ্ছা কূটনামি চাল চালো। কেউ তোমার কথা শুনবেও না দেখবেও না। ভালো হয়েছে না?”
আফজাল ফোঁস ফোঁস করলে শিখা জবাব দিলো না। তার মেজাজ খারাপ হয়েছে কারন তার চাল এবার বৃথা গেছে। সে ভেবেছিলো রাজ ছেলে নিয়ে আমেরিকায় চলে যাবে অথচ হলো উল্টোটা। আর এসব করলো তারই ছেলের বউ ঝিলিক। তার বানানো খেলাটা ঝিলিক বিগড়ে দিলো। কোথায় এখন বসে বসে ভাইজানের কান্না কাটি দেখবে তা না অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগিলো টাইপ সিন দেখতে হচ্ছে। শিখাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আফজালের মেজাজের পারদ আরো উর্ধমুখী হলো-
“এখন চুপ কেন? সব জিনিস গোছাতে শুরু করো। কালই আমরা ও বাড়িতে শিফট হবো। এতো অপমান আর নেওয়া যাচ্ছে না। সেধে সেধে কেউ অপমান হতে চায় তা তোমাকে না দেখলে বিশ্বাস হতোনা।”
শিখা কিছু বলতে মুখ খুলবে তখনই দরজায় শব্দ হলো-
“বাবা আসবো?”
এইসময়ে শুভর গলা পেয়ে অবাক হলো আফজাল-
“শুভ! আয় বাবা।”
শুভ কাচুমাচু মুখ করে ঘরে ঢুকলো। মায়ের দিকে তাকিয়ে বুঝলো মায়ের মেজাজ খুব একটা ভালো না। কথাটা এখন বলা কি ঠিক হবে? এমন একটা পরিস্থিতি এখন বাড়িতে যে ওর কথাটা শুনলে ওকে স্বার্থপর ভাবতে পারে মা। কিন্তু শুভও ভালো লাগছে না আর। সবকিছু থেকে দূরে যেতে হবে বেঁচে থাকার জন্য হলেও। শুভ মাটিতে পা নাড়াচাড়া করে। আফজাল একবার ছেলেকে আরেকবার শিখার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তারপর শুভর কাছে জানতে চাইলো-
“কিছু বলবি?”
শুভ মাথা নাড়তেই আফজালের গলা কোমল হলো-
“তো বল না এতো ভাবছিস কেন?”
“ইয়ে মানে বাবা আমি ঢাকায় ফিরে যেতে চাই। তুমি তো জানোই বিজনেসে আমার ইন্টারেস্টি নেই। আর তাছাড়া ভাইয়া তো আছেই। সবাইকে বিজনেস করতে হবে এমন তো না। আমার চাকরি বেশ ভালো লাগে। আমি আবার চাকরি শুরু করতে চাই বাবা।”
“বেশ তো, তোর যা ভালো লাগে তাই কর না কেউ তোকে বাঁধা দেবে না। কিন্তু কোথায় জয়েন করবি? আগেরটা তো হুট করে ছেড়ে দিয়ে এলি?”
শুভ একটু চুপ থেকে জবাব দিলো-
“অন্য একটা ব্যাংক থেকে অফার পেয়েছি আব্বু। আগেরটার চাইতে ভালো পদ বেতনও বেশি। ইন্টারভিউ নিয়ে চাকরি কনফার্ম করেছে। এ মাসের পনেরো তারিখে জয়েনিং।”
আফজাল এগিয়ে এসে শুভকে জড়িয়ে ধরলো-
“আম প্রাউড অফ ইউ মাই সান। তুই চাইলে আমাদের পরিচয় দিয়ে চাকরি নিতে পারতি কিন্তু তা না করে তুই নিজের যোগ্যতায় চলার চেষ্টা করছিস এটা আমার খুব ভালো লাগছে। তোর যেটা ভালো লাগে তুই সেটাই কর। বিজনেস তো আছেই চাইলে যে কোন সময় জয়েন করা করতে পারবি।”
শুভ আড়চোখে শিখার দিকে তাকালো মায়ের মনোভাব বোঝার জন্য। শিখা তখনও ওভাবেই গম্ভীর হয়ে বসে আছে। আফজাল তা দেখে ছেলেকে আস্বস্ত করলো-
“মাকে নিয়ে ভাবিস না। আপাতত তোর মা কয়েকদিন ঘর গোছাতে ব্যস্ত থাকবে। তুই কবে যেতে চাস?”
“কালকেই। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে সময় লাগবে তাই কালই যেতে চাইছি।”
“কোন সমস্যা নেই তুই যা। তবে এবার তুই আমাদের ঢাকার ফ্লাটে উঠিস তাহলে তোর জন্য চিন্তা করম হবে। ঠিক আছে?”
“ঠিক আছে বাবা।”
আফজাল ছেলের পিঠ চাপড়ে দিলো। শুভ বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। অনেকদিন পরে কেন যেন বাবাকে তার ভালো লেগে গেলো। ভীষণ আপন আপন লাগলো বাবাকে। শুভ অনেকটা সময় বাবাকে জড়িয়ে ধরে রইলো।
★★★
“প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে আবার মিলিত হওয়ার প্ল্যান হচ্ছে বুঝি? তাই তাকে যেতে না দিয়ে ফিরিয়ে আনলে তাই না? পুরনো প্রেম আবার জেগে উঠলো নাকি? তাইতো বলি আমাকে কেন কাছে আসতে দাও না?”
ঝিলিক হাসলো, সৌরভ আর কিছু পারুক না পারুক বাজে কথা বলায় এক্সপার্ট একেবারে। ক্লজেট থেকে নাইটড্রেস বের করে বাথরুমে যেতে নিলেই সৌরভ এসে ওর বাহু ধরলো শক্ত করে-
“আমার কথার জবাব না দিয়ে কোথায় যাচ্ছ? খুব বেশি সাহস না?”
ব্যাথায় উফফ করে উঠলো ঝিলিক, প্রচন্ড রেগে গিয়ে চিৎকার করলো-
“ছাড়ো ছাড়ো বলছি অসভ্য বর্বর লোক একটা। সাহস তো তোমার বেড়েছে আমি কিছু বলিনা বলে।”
ঝিলিকের চিৎকারে হতচকিত হয়ে ওকে ছেড়ে দিলো সৌরভ। ঝিলিক ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে-
“ডোন্ট ইউ ডেয়ার চাট মি লাইক দিস। এরপর এমন হলে ফল ভালো হবেনা।”
সৌরভ কিছু বলার সাহস পায় না। ঝিলিকের এতো মেজাজ আগে দেখেনি কখনো। সে কেবল লাল চোখে তাকিয়ে রইলো। যেন চোখ দিয়ে ঝিলিককে ঝাঁজরা করবে। ঝিলিক পাত্তা না দিয়ে সৌরভের দিকে তাকিয়ে চোখ নাচায়-
“কি জানতে চাইলো যেন? ও হ্যা, পুরনো প্রেম ফিরে এসেছে এটা না? শোন আমি তোমার মতো নই যে ঘরে জামাই রেখে আরেকজনের সাথে সম্পর্কে জড়াবো। আগেও ছিলাম না এখনো নই। তোমরা মা ছেলে মিলে রাজের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করেছিলে সেটা থেকে এবার বাঁচালাম বেচারাকে। আমার জীবন নষ্ট হয়েছে হোক, রাজ একবার কষ্ট পেয়েছে সেটাও মেনে নিয়েছি কিন্তু রুহিকে সাফার করতে দেবোনা কিছুতেই। আর দ্বিতীয়বার রাজ কষ্ট পাবে এটা আমি ঝিলিক কিছুতেই হতে দেবোনা। তোমাদের পাপের জন্য আমি গুনাহগার হবো কেন? তাই রাজকে সব জানিয়ে দিয়েছি। ও চলে গেলে তোমার মায়ের ইচ্ছাই যে পূরণ হবে সেটা ওকে বুঝিয়ে বলেছি। উপর ওয়ালার মেহেরবানি রাজ বুঝেছে আর বুঝে ফেরত এসেছে।”
সৌরভ ফুসে উঠলো-
“কিছু বলি না বলে অনেক বেড়েছো তুমি।”
ঝিলিক একটু দম নিলো যেন-
“ভুল। তুমি কিছু কি বলবে? মুখ আছে কিছু বলার? অন্য মেয়েদের নিয়ে বিছানায় যাওয়ার সময় এসব বড় বড় বুলি কোথায় থাকে? শোন সৌরভ আজ আবার বলছি, আমি মোটেও আফসোস করি না যে আমি বাচ্চা নষ্ট করেছি। তোমার মতো কুলাঙ্গার লোকের সন্তান ধারণ করার চাইতে না করা ভালো। তোমার আচরণে আজ আবার মনে হলো আমি সঠিক কাজ করেছি। যে লোক নিজের বউকে সন্মান দিতে জানে না, ভালো ব্যবহার করতে পারে না, তাকে ভালোবাসে বলে ব্যবহার করে তার সাথে তো একসাথে থাকাই উচিত না সন্তান অনেক দূরের কথা।”
“তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছো ঝিলিক? এতো সাহস পাও কি করে? ওই রাজ প্রশ্রয়ে বুঝি? দাঁড়াও আজই রুহিকে বলছি তোমাদের রংলিলার কথা।”
সৌরভ হুমকি দেওয়া মাত্রই ঝিলিকের মুখচোখ কঠিন হয়ে উঠলো, আঙুল উচিয়ে বললো-
“এমন কাজ কখনোই করোনা। আমার আর রাজের সাথে যা করেছো তা জানার পরও রাজ তোমাকে কিছু বলেনি কারন ও আমাকে সুখী দেখতে চেয়েছে। কিন্তু তার মানে ওকে দূর্বল ভেবোনা। এবার এমন কিছু করলে তোমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না মনে রেখো। আর একটা কথা, তোমার এতো কষ্ট করার দরকারই বা কি? আমি তো কালই চলে যাচ্ছি তোমার জীবন থেকে। কয়েকদিনের মধ্যে ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবে। এরপর আমি সোজা প্যারিস। ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উপর একটা কোর্সের অফার পেয়েছি। বুঝলে? তুমি কাল থেকে না না আজ এখন থেকেই নিজেকে স্বাধীন ভাবতে পারো। আমাকে নিয়ে আর পড়ে থেকো না। তুমি বরং পরবর্তীতে কাকে বিয়ে করবে সেটা ভাবো। ঠিক আছে? আমার তরফ থেকে তুমি এখন থেকেই মুক্ত।”
ঝিলিক হাসলো প্রানখুলে। নিজের কাপড় নিয়ে সোজা বাথরুমে। সৌরভ বোকার মতো তখনও মুখ হা করে দাঁড়িয়ে। ঝিলিকের সব কথা যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। সত্যি সত্যি কি ঝিলিক তাকে ডিভোর্স দেবে? মাকে জানাতে হবে ব্যাপারটা।
চলবে—
©Farhana_Yesmin