#আমার_চন্দ্রাবতী পর্ব ১১
লেখিকা- সালসাবিল সারা
কলেজের পরীক্ষার কারণে টানা বিশদিন বিনা বিশ্রামে পড়ালেখায় মত্ত ছিলো দুআ।পড়ালেখা দুআর জন্যে বরাবরই খুবই সিরিয়াস বিষয়।আজ শেষ পরীক্ষার সুবাদে মা থেকে বেশ কিছু টাকা নিয়েছে সে। উদ্দেশ্য,
পরীক্ষা শেষে ভালো একটা রেস্টুরেন্টে বন্ধু বান্ধব মিলে খোশ আলাপ করবে।ঢাকা থেকে আসার পরপরই দুআ পরীক্ষার জন্যে ব্যস্ত ছিলো।তাদের পরীক্ষার জন্যে রিজোয়ান এবং মাইশার তথাকথিত অনুষ্ঠান স্থগিত রেখেছে।পড়ালেখার এতো ব্যস্ততা এতসব দুশ্চিন্তার মাঝেও ঢাকায় দেখা সেই লম্বা মানবের কথা,তার প্রতিচ্ছবি কিছুই যেনো দুআর মস্তিষ্ক থেকে মুছে যায়নি।বরং দিনের পর দিন গাঢ় হচ্ছে সেই চিন্তাভাবনা।ইয়াদ নামের মানবটার স্মৃতি মনের অজান্তেই দুআর মস্তিষ্কে স্থায়ী ঠিকানায় রূপান্তরিত হয়েছে যেনো।তারপরও দুআ এইসব চিন্তা মনের গহীন কোণে রাখলো।এমন বিখ্যাত মানবের প্রতি দুআ কিছুই যেনো অনুভব করতে চায় না।ইয়াদের মতো বিখ্যাত মানুষের প্রতি ভালো লাগা সবারই হয়।তার মনই যেনো তাকে হাত দেখিয়ে নিষিদ্ধ করছে এই অনুভূতির পূর্ণতা পাওয়া অসম্ভব।তবে দুআ অখুশি নয়। বিধাতার উপর নিজের ভাগ্য লেখনীতে সে পুরোপুরি বিশ্বস্ত।বিধাতা তার জন্যে যা নির্ধারণ করে রেখেছে ভাগ্যে,তাই যেনো সে চোখ বুজেই গ্রহণ করে নিবে।তাই দুআর মন খারাপের কোনো গতি নেই।বরং সে খুবই উচ্ছ্বাসিত,
তার পরীক্ষার পরই রিজোয়ানের বিয়ের সকল অনুষ্ঠান শুরু হবে সেই সুবাদে।
যথারীতি পরীক্ষা শেষ হতেই সকলের হাসিখুশী মুখশ্রী বিদ্যমান। যার অর্থ,শেষের পরীক্ষাটা সবার মনের মতোই হয়েছে।কলেজ থেকে বেরুনোর পূর্বে দুআ এবং সঞ্জয় মাঠে অপেক্ষা করছে রামিসা এবং মাহির জন্যে।সঞ্জয় এবং দুআর হল একই থাকলেও বাকি দুইজন ভিন্ন হলে পড়েছিল।দুআ বসলো মাঠের এক কোণে।পাশে থাকা সঞ্জয় ফাইলের সমেত দুআকে বাতাস করার চেষ্টা করছে।বর্ষাকাল হওয়া সত্বেও রোদের তেজ যেনো বিন্দুমাত্র কমলো না।সঞ্জয় শার্টের হাতায় কপালের ঘাম মুছে চারদিকে নজর বুলাচ্ছে।কিন্তু,দূর দূরান্তে সেই দুই মেয়ে মানুষের ছায়া অব্দির হাদীস মিলছে না।
–“ঐ দুই বেডি গেলো কই?”
–“আরে আসবে।তুই বস তো।বাতাস করা লাগবে না।”
দুআ ভ্রু কুঁচকে নিলো রোদের তেজে।
–“বর্ষাকালেও এমন রোদ, ভাবা যায় না এইসব।এরা আসলেই আমরা রওনা দিবো।বাকি কথা তোরা সব গাড়িতে বসেই বলবি।”
–“যথা আজ্ঞা,সঞ্জয় বাবু।”
দুআ এবং সঞ্জয় পুনরায় চারিদিকে নজর বুলাচ্ছে।
দ্বিতীয় তলা থেকে মাহি বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে আছে দুআর পানে।অতিরিক্ত মায়া কাজ করছে তার দুআর প্রতি।রামিসা,ইয়াদের গোয়েন্দা; আজই দুআর প্রতি ইয়াদের অনুভূতির কথা জানিয়ে দিয়েছে মাহিকে।মাহির কানে রামিসার বলা কথাগুলো যেনো কানে বাজছে বারবার।মাহি যেনো খুশি হতে গিয়েও অখুশি।মাহির মুখশ্রীতে চিন্তার আভাস আন্দাজ করে রামিসা মাহির কাঁধে হাত রেখে প্রশ্ন করলো,
–“তুই কি আমাদের দুআর জন্যে খুশি না?”
মাহির ধ্যান ভাঙ্গলো যেন,
–“হু?বুঝিনি।”
–“কি হয়েছে তোর?এতদিন এই কথা বলিনি তাই রাগ করছিস?দেখ,দুআ আমাদের সাথেই থাকতো তাই বলার সুযোগ পায়নি।তাছাড়া পরীক্ষার চিন্তায় সবকিছু এলোমেলো ছিলো মগজে। সরি,আর একটা কথাও তোর থেকে লুকাবো না।”
মাহি হাত ধরলো রামিসার,
–“এইসব কিছুই না দোস্ত।সত্যি একটা কথা বলবি?”
–“হুম বল?”
–“দুআর ত্বকের সমস্যা জেনে যদি ইয়াদ ভাইয়া দুআকে কষ্ট দেয়?দুআ দেখতে অনেক রূপসী আমরা সেটা সবাই জানি।তাছাড়া ওর ব্যবহার,ভদ্রতা,শালীনতা সবাইকে তার পেছনে ঘুরতে বাধ্য করে।তবে,ইয়াদ ভাইয়া তো আর কচি খোকা না।উনি এতো বড় পার্সোনালিটির একজন মানুষ,এই মানুষটা আমার বান্ধবীকে কষ্ট দিলে আমি উনাকে মেরে ফেলবো।বুঝছিস আজব?আমার দুআর অনেক কষ্ট,ওর ত্বক নিয়ে।মুখে না বললেও আমরা সেটা বুঝি।সে মনে করে তার ভেতরকার ত্বকের খোঁজ পেলে সবাই তার সুন্দর মুখশ্রীকেও অলজ্ঞানি করবে।ইয়াদ ভাইয়া যেনো আমার দুআকে কখনো কষ্ট না দেয়।”
–“আরে বাহ,মাহি।তুই তো আজ ইয়াদ ভাইয়া বলে বলে মুখে ফেনা তুলবি দেখছি।তোর কি মনে হয়,ইয়াদ ভাইয়া দুআর দাগের কথা জেনে পিছু হটার মতো ছেলে?আমি ভাইয়াকে অনেকবার বলতে চেয়েছি দুআর দাগের ব্যাপারে।কিন্তু ভাইয়া পাত্তা দেয়নি। তার শুধু দুআর মুখশ্রীর ছবি চাই।দেখিস না,আমি ইদানিং আমার মোবাইলের সব ছবি দুআময় করেছি!কারণ একটাই,আমার ইয়াদ ভাই।সে একেবারে দুআর প্রেমে মগ্ন।”
–“আর দুআ?সে কি পছন্দ করে ইয়াদ ভাইয়াকে?”
–“তোর কি মনে হয় দুআ এমন মেয়ে?করে না পছন্দ এই পাথরটা।কিন্তু,একবার ভাইয়া আসুক এইখানে;
আমাদের বাহিনী ভাইয়ার বাহিনী সবাই মিলে ইয়াদ ভাইয়ার প্রতি দুআর পাথর মনকে ভাঙ্গানোর চেষ্টা করতে হবে।নাহলে,নাজানি ইয়াদ ভাইয়া কি কান্ড করে ফেলে!”
–“হ্যাঁ,একদম।এইবার থেকে শুরু হবে মিশন- ‘ইয়াদ দুআর মিলন মেলা’।”
মাহি কথাটা বলে রামিসার সাথে হাত মেলালো।
–“ভাই!এতক্ষণ লাগে হল থেকে বের হতে?”
দুআ প্রশ্ন করলো বাকি দুজনকে।
–“আরে বলিস না,রামিসা সিনিয়র এক ছেলেকে দেখে পাগল হয়ে গিয়েছিল।অনেক কষ্টে ধরে এনেছি একে।আজব কাজকারবার।”
–“মিথ্যুকের বাচ্চা তুই,মাহি।”
রামিসা ক্ষেপলো।
মাহি কিছু বলতে নিলে সঞ্জয় বাঁধা দেয়,
–“হরে কৃষ্ণ! থামবি তোরা?দেরী হচ্ছে কিন্তু।আমাদের এক জায়গায় যাওয়ার কথা ছিলো।ভুলে গেছিস?”
–“সঞ্জয়, ওরা ঝগড়া করুক।আমরা যায় তো।চল।”
দুআ উঠে পড়লো।দ্রুত গতিতে হাঁটতে আরম্ভ করলে মাহি এবং রামিসা দুইজন তার পেছনে ছুটলো,
–“ওরে চাঁদ, আস্তে হাট!আজব।”
মাহির কথায় দুআ নিজের গতি ধীর করলো।
কলেজ গেইট থেকে বের হলে রামিসার নজরে এলো ইশফাকের অবয়ব।গত কয়েকদিন ধরে রামিসা বড় পিলারের পেছনে লুকিয়ে থাকা ইশফাককে দেখেছে।তার কি উদ্দেশ্য এটা রামিসার বোধগম্য হয়না।দুআ যেনো ব্যাপারটা না বুঝে তাই দ্রুত তাড়া দিয়ে সকলকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো সে।
পেছন ফিরতেই রামিসা দেখলো ইশফাক নিজেও তার গাড়িতে বসলো।রামিসার মনে অজানা চিন্তার আভাস এলো যেনো।
গাড়িতে বিদ্যমান এসির হাওয়া সকলের সত্তাকে ঠান্ডা করলেও গাড়ি থেকে নামতেই সেই গরমভাব আবারও জেঁকে ধরলো সবাইকে।সকলের সাথে কথা বলার ছলে ইশফাকের ব্যাপারটা ছুটে গেলো রামিসার মাথা থেকে।সবাই হাসি মনে রেস্টুরেন্টের দ্বিতীয় তলায় উঠলে দেখে এইদিকে একেবারে ঠান্ডা পরিবেশ বিদ্যমান।বিনা দ্বিধায় সকলে এইখানে বসার সিদ্ধান্ত নিলো।রেস্টুরেন্টের ভেতরকার পরিবেশ শহরের মতো উন্নত নাহলেও বেশ মান সম্মত।গ্রামে এইসব রেস্টুরেন্ট নতুন তৈরি হচ্ছে এবং এইসবের উদ্যোগ নিচ্ছে বেশিরভাগই গ্রামের শিক্ষিত যুবক।সকলে ছবি তুলতে ব্যস্ত।দুআ তিন চারেক ছবি তুলে চেয়ারে গিয়ে বসলো।এই মুহূর্তে তার মাথায় পানির ছিটা পড়া যেনো বাধ্যতামূলক।বাকিদের বিরক্ত না করে দুআ দেওয়ালে লেগে থাকা চিহ্ন দেখে এগোতে লাগলো।অনেকখানি হেঁটে তার দৃষ্টিতে এলো ওয়াশরুমের অবস্থান।এইদিকে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে।দুআর এখন আফসোস হচ্ছে কেনো সে একা এলো! রামিসা এবং মাহিকে ডেকে আনার জন্যে পেছনে ফিরতেই দুআ দেখলো সেদিনের সেই ছেলেটা,অর্থাৎ ইশফাক।
দুআ হচকিয়ে উঠলো।পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই দুআর হাত চেপে ধরলো ইশফাক,
–“তুমি আমাকে ইগনোর করো কেনো?”
–“কি অসভ্যতামী এইসব?হাত ছাড়ুন আমার।”
–“ছাড়ার জন্যে তো ধরিনি।আমার তোমাকে ভালো লাগে।”
দুআ স্তব্ধ।তার আঁখির কোণে অশ্রুজল চিকচিক করছে।ইশফাক এর হাতের বাঁধন হচ্ছে তীব্র থেকে তীব্রতে পরিণত।
–“রামি.. রামিসা,মাহি!সঞ্জয়?”
হঠাৎই দুআ চিৎকার দেওয়া শুরু করলো। এতে ভরকে গেলো ইশফাক।দুআর দুই বাহু বেশ বল প্রয়োগ করে চাপলো সে,
–“তোমায় আমার করে নিবো আমি।হোক সেটা একদিনের জন্যে!”
মাহি এবং সঞ্জয় দুআর নাম ধরে ডাকলে ইশফাক দুআকে ধাক্কা দিলো। যার দরুণ দুআ ছিটকে পড়লো মেঝেতে। আতঙ্কে দুআ যেনো বোবা বনে গেলো।মাহি,
সঞ্জয়ের সাথে আরো কয়েকজনের আগমন ঘটলো সেখানে।মহিলার ওয়াশরুম হওয়ার সুবাদে এইখানে লোকের সমাগম নেই বললেই চলে।মাহি দুআর হাত ধরে উঠে বসালে দুআ জড়িয়ে ধরলো মাহিকে।মাহি এবং সব লোকেরা একই প্রশ্ন,
–“কি হয়েছে?”
দুআ নিশ্চুপ। শুধু চক্ষুযুগল দিয়ে পানির স্রোতের মতো অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে তার।
রামিসা ইয়াদকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রেস্টুরেন্টে দুআর ভিডিও করার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলো।মূল কিনারায় এসে কাউকে না দেখতে পেয়ে বিচলিত হয়ে পড়ল সে।অন্যদিক থেকে শোরগোল তার কর্ণপাত হলে ভিডিও চালু রেখে দৌড় দিল সেথায়।দুআর মাহিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা,মানুষের সমাগম,দুআর বিস্ফোরিত – বিধ্বস্ত চেহারা সবটাই ক্যামেরায় ধারণকৃত হয়েছে।রামিসা বিচলিত হয়ে সেথায় যাওয়ার জন্যে তাড়াহুড়ো করলে হাতের আলতো চাপে সম্পূর্ণ ভিডিও ইয়াদের কাছে পৌঁছালো।
—————————
সিরিজ শেষে ইয়াদ দেশে ফিরেছে তিনদিন পূর্বে।তম্মধ্যে ক্লাব ম্যাচে অংশগ্রহণ করার জন্যে নির্দেশ এলে সে তা নাকচ করলো না।
ম্যাচ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।বর্তমানে স্টেডিয়াম মুখরিত হচ্ছে দর্শকের প্রিয় দল এবং প্রিয় খেলোয়াড়দের নামে।সবচেয়ে উত্তেজনা তখনই সৃষ্টি হলো যখন ইয়াদ ব্যাট হাতে মাঠে নামলো।দর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ অন্য খেলোয়াড় ভক্তদের মতো প্লে কার্ডে ইয়াদের জন্যে নানান কিছু লিখে এসেছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ মেয়ের হাতের প্লে কার্ডে লিখা ছিলো,
–“ম্যারি মি, ইয়াদ বিন তেহরান!”
ইয়াদ ব্যাটিং এর স্থানে দাঁড়ালো।চারিদিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করে ব্যাটের সাহায্যে মাঠে দুই তিন বার “ঠক্ ঠক্” শব্দ করে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখানোর সাথে সাথে সম্পূর্ণ স্টেডিয়াম মুখরিত হলো,”ইয়াদ” নামের সশব্দে।ইয়াদের ঠোঁটের কোণায় কিঞ্চিৎ হাসি।তার জন্যে মানুষের এতো ব্যাকুলতা দেখে নিজেকে নিয়ে প্রচুর গর্বিত সে।
বর্তমান খেলা বিশ ওভারের ছিলো।এরমধ্যে বারো ওভার খেলা শেষ করেছে অন্য খেলোয়াড়।ইয়াদ এই ম্যাচে ওপেনিং এ নামেনি।খেলায় চার ছক্কা হাকানোর মধ্য দিয়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের মাঝে উত্তেজনার ছাপ হাজারগুণ বাড়লো।এই চার ছক্কা যেনো খেলায় উত্তেজনা বাড়ানোর মূল কেন্দ্র!
নির্দিষ্ট ওভারের পূর্বে রান কভার করার মাধ্যমে ইয়াদের দল ম্যাচ জিতে নিজে দলের নাম উজ্জ্বল করলো।
সব নিয়ম নীতি শেষে ইয়াদ আসলো চেঞ্জিং রুমে।ঘামে আঁটসাঁট জার্সি খুলে উদোম শরীরে সে চেয়ারে বসে পড়লো। ঘাড়ে ঝুলানো তাওয়াল দিয়ে পিঠের ঘাম মুছতে ব্যস্ত সে। তার পাশে অবস্থানরত সহকর্মী রিয়াদ তাকে বলে উঠলো,
–“জামাল থেকে শুনলাম,সে নাকি তোমার বোনের সাথে সম্পর্কে আছে?”
–“বিড়াল সারাক্ষণ মিউ মিউ করে,কিন্তু আমরা কি বুঝি তাদের ভাষা?তেমনি জামাল সেই পর্যায়ের মানুষ।
সারাক্ষণ বকবক করে,কিন্তু তার কথার উত্তর কেউ বুঝে না।আমার বোনের সাথে তার সম্পর্ক পান থেকে চুন খসে পড়ার মতো ঠুনকো।”
ইয়াদ অধরজোড়া প্রশস্থ করলো।
–“হুম,ভালো।তোমাদের মতো ভালো ফ্যামিলির সাথে জামালের উগ্রতা একেবারে যায় না।তোমার বোনকে দেখে রেখো।”
রিয়াদ এর মাথায় চিন্তার ভাঁজ লক্ষণীয়।
–“অবশ্যই।আমি বেঁচে থাকতে জামাল তার কর্মে সফল হবেনা।”
ইয়াদের পাশাপাশি রিয়াদ নিজেও অল্প হাসলো।ধীরে ধীরে সেখানে ইয়াদের সকল সহকর্মীর আগমন আরম্ভ হলো।
–“ইয়াদ,আপনি কি বাসায় ফিরবেন নাকি পার্টিতে যাবেন?”
–“পার্টিতে যাবো,অবশ্যই।তবে এরপূর্বে বাড়ি যেতে হবে।”
অন্য সহকর্মীর কথায় উত্তর দিলো সে।
–“শুধু পার্টিতে যাবে নাকি মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করবে?ঠিক পূর্বের ন্যায়?”
জামালের কণ্ঠ শুনে মেজাজ চরম পর্যায়ে পৌঁছালো ইয়াদের।
–“যে যেমন তার চিন্তা ভাবনা তেমন হবে।অতীত নিয়ে পড়ে থাকা বা খোটা দেওয়া অজ্ঞের কাজ।তাই তোমার মতো জ্ঞানহীন পুরুষের সাথে কথা বলা আমার রুচিতে বাঁধে।খারাপ অতীতকে ভুলে নিজেকে শুধরে নেওয়াটা ইয়াদের মতো সাহসী মানুষরাই পারবে।আর তোমাদের মতো বিড়াল পারবে শুধু অন্যের জীবনে এসে মিউ মিউ করতে। ডিজগাস্টিং শিট!”
ইয়াদের কথায় পিন পতন নীরবতা ছেয়ে গেলো পুরো চেঞ্জিং রুম জুড়ে।জামাল যেনো লজ্জায় মাটিতে মিশে যায় যায় অবস্থা।অন্যরা সবাই নিজের হাসি সংযত রাখার বৃথা চেষ্টা করলো।জামাল লজ্জায় রুম ত্যাগ করতেই অট্টহাসির রোল পড়লো সে ঘরে।সেই হাসির শব্দ জামাল রুমের বাহির থেকে শুনে বুঝলো,তার নিজের কথা গুণেই সে আজ হাসির পাত্র সকলের কাছে।ইয়াদের প্রতি তার ঘৃণার মাত্রা যেনো গাঢ় হলো আরো!
–“জামালের ব্যবহার কি কোনদিনও ভালো হবে না?”
রিয়াদ প্রশ্ন করলো।
–“যার ব্যবহার কখনোই ভালো ছিলনা,তার কাছে তুমি ভালো ব্যবহার কিভাবে এক্সপেক্ট করো?”
ইয়াদ জবাব দিলো সাবলীলভাবে।
–“তোমার কথায় পয়েন্ট আছে।”
রিয়াদ ইয়াদের কাঁধে হাত রেখে বললো।রিয়াদ যেনো আজ বেশ চিন্তিত!
ইয়াদ নির্বিঘ্নে নিজের জিনিসপত্র ঠিকঠাক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।এর মাঝেই তার মন গহীনে দুআর প্রতিচ্ছবি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।খেলার সময় মনটা সম্পূর্ণ সেথায় নিয়োজিত থাকলেও বর্তমানে এখন তার সারা সত্ত্বা দুআর নাম জপছে।তবে নিজেকে সামলে নিচ্ছে সে বারংবার।দুআর আজ সারাদিনের খবর বাড়িতে ফিরে আরামসে দেখবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।তাছাড়া দুআর মুখশ্রী না দেখে ইয়াদের পুরো দিন যেনো পূর্ণতা পায় না।
________________________
সন্ধ্যা সাতটার দিকে রিজোয়ান তাদের বাড়ি ফিরলো। দুআকে কয়েকবার ডেকেও কোনো সাড়া পেলো না সে।তার মা এবং দুআর মা রামিসার বাড়ি গিয়েছে কিছু জরুরি কথাবার্তার সুবাদে।রিজোয়ান বাড়ির কর্মচারী জেনিকে ডাকলো,
–“দুআ কই?”
–“আপামনি হের সইয়ের লগে আছে রুমে।”
–“কে এসেছে?”
–“মাহি আর রামিসা আফা।”
জেনি উত্তর দিলো রিজোয়ানের প্রশ্নে।
রিজোয়ান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।
দুআ তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তার দুই বান্ধবী ছাড়া কাউকে বলেনি।গ্রাম হওয়ার সুবাদে এটা যতোই উন্নতির পর্যায়ে পৌঁছিয়ে যাক না কেনো,গ্রামের মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন করা অসম্ভব।যতো দোষ সব মেয়ের উপরেই পড়বে।তাছাড়া তার বাবা যদি জানে সে বাইরে গিয়েছে তাহলে তার বাড়তি বাহিরে যাওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।যদিও সে বাড়ির গাড়ি করে ঘুরে বেড়ায় তবে সেটা শুধু রিজোয়ান আর দুআর মা জানে।কিন্তু,এই ঘটনা ফাঁস হলে তার বাবার কানে সবটা যাবে আর দুআর জীবনটা নরকে পরিণত হবে।বাদ বাকি রিজোয়ান জানলে সে ছেলেটাকেই না মেরে ফেলে!এই ভয়ে দুআ নিজে নিশ্চুপ রইলো সাথে বাকিদের চুপ থাকতে বললো।কিন্তু, রামিসা এবং মাহি ভেবে নিয়েছে পরবর্তী সেই ছেলে তাদের দৃষ্টিতে আসলে, তার মাথা দুইখণ্ড করবে তারা। অতঃপর দুআর শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে, আজকের এই ঘটনাটা তিন বান্ধবী মিলে ধামাচাপা দিয়ে দিলো।
–“দুআ!”
রিজোয়ান দরজায় কড়া নেড়ে বললো।
দুআ রামিসার কোলে শায়িত ছিলো।ভাইয়ের শব্দ শুনে নিজেকে ঠিক করে নিলো সে। গায়ের উপর ওড়না জড়িয়ে সে মাহিকে ইশারা করলো দরজা খুলতে।মাহি যথারীতি কাজ করলো।
রিজোয়ান কামরায় প্রবেশ করে বিধ্বস্ত দুআকে
দেখে বিচলিত হয়ে পড়লো,
–“চাঁদ?অসুস্থ তুই?তোকে এমন লাগছে কেনো?”
দুআ তার ভাইয়ের চিন্তায় মলিন হাসলো,
–“আমি ঠিক আছি,ভাই।তোমার বিয়ের আলোচনা করার জন্যেই এদের রেখে দিলাম আজ।”
–“সব ঠিক আছে।কিন্তু তুই ঠিক নেই।আমি অন্ধ না,দুআ!কি সমস্যা আমায় সব বল।”
রিজোয়ানের কণ্ঠে ক্রোধ স্পষ্ট।
দুয়ার নিশ্চুপ অবস্থা দেখে রিজোয়ান তার চোয়ালে হাত রেখে তাকে প্রশ্ন করলো,
–“কষ্ট দিয়েছে কেউ?নাম বল!তাকে আমি নিজ হাতেই মার…”
দুআ থামিয়ে দিলো রিজোয়ানকে,
–“শেষমেষ তো তুমি জমিদার বংশের ছেলে।তোমার মুখে মারামারির কথাটা এইবার চলেই এলো।আমার কিছু হয়নি ভাই।আমি ভালোবোধ করবো যদি তুমি আমাদের জন্যে কিছু মুখরোচক খাবারের ব্যবস্থা করে দাও।”
–“সত্যি তো চাঁদ?তুই ঠিক আছিস?”
–“তিন সত্যি।”
দুআ মলিন হাসতেই রিজোয়ান হেসে উঠলো,
–“নিচে নামো সবাই।বাজার থেকে ফুচকাওয়ালাকে আনানোর ব্যবস্থা করছি।”
তিনজন রমণীর মুখশ্রী খুশিতে চকচক করছে।
–“ওহ আল্লাহ্!এই রিজোয়ান ভাই সেরা।এমন ভয়ংকর ভাই আমি কখনো দেখিনি,আজব।”
মাহি কোমরে হাত রাখলো।
–“একদম ঠিকাছে। ঐ ইশফাক আরেকবার ডিস্টার্ব করুক,আমি দুলাভাইকে বলে দিবো তার কথা।”
–“আহ্,বাদ দিবি প্লিজ?আমরা নিচে যায়,চল?আর ভালো লাগছে না আজকের এইসব ঘটনার কথা ভাবতে।সবটা আমি ভুলতে চাই।”
দুআর কথায় সায় দিয়ে তিন রমণী কামরা ত্যাগ করলো।
—————————–
তৈরি হয়ে পাঁচ তারকা হোটেল এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ইয়াদ। পার্টিতে যেতে ইয়াদের ঢের দেরী হলো জিয়ার কারণে।জামালের সাথে স্টেডিয়ামে ঘটে যাওয়া ঘটনার জের ধরেই জিয়া অশান্তি করলো ঘরে।এর ফলে, ইয়াদের মেজাজ স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।আজ যদি জামাল তার সামনে পড়ে,তবে সে এক মিনিটও দেরী করবে না জামালের উপর হাত চালাতে;এমনটা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো।
পার্কিং লটে বিদ্যমান লম্বা আয়নাতে নিজের অবয়ব দেখে নিলো সে।ইন করা চেক শার্টটার উপর পুনরায় নিজের হাত ঘষলো।এই মুহূর্তে নিজের পাশাপাশি সে দুআর অবস্থান কল্পনা করছে।মেয়েটা তার চেয়ে উচ্চতায় ছোট।হয়তো ইয়াদের উচ্চতা একটু বেশি বলে তাই!ইয়াদ মলিন হাসতে চেয়েও হাসলো না।বাড়িতে গিয়ে দুআর ছবি দেখার কথা থাকলেও জিয়ার কারণে ইয়াদ তার মুড নষ্ট করলো।অতঃপর ইয়াদের দৃষ্টিতে তার চন্দ্রাবতীর দেখা মিললো না।
পার্টির পরিবেশ নিরিবিলি।যে যার মতো অবস্থান করছে।মৃদু গানের শব্দের তালে সবার কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট।রিয়াদ হাত দেখিয়ে ইয়াদকে ইশারা করলো।ইয়াদ তার সম্মুখে করে নিলো নিজের জায়গা।টুকটাক কথা বলার ছলে ইয়াদ খুঁজে চললো জামালকে।সেটা বুঝতে পেরে রিয়াদ মুচকি হাসলো,
–“জামাল পার্টি থেকে মাত্র বেরিয়েছে।”
–“বেঁচে গেলো।নাহলে..”
নিজের পারিবারিক কথাটা মুখের অন্তরালে গিলে ফেললো সে। মুহূর্তেই সে টপিক অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো।
ভারী খাওয়া – দাওয়ার পর্ব শেষ করে পার্টির মধ্যবর্তী স্থানে বসে রইলো ইয়াদ।তার পাশে অন্য সব ক্রিকেটার বিদ্যমান।ইয়াদের মনে ব্যাকুলতা কাজ করছে।আজ সকাল থেকেই দুআর ছবি দেখা হয়নি তার।ইয়াদ ভেবে নিয়েছে এই মুহুর্তেই তার দুআকে দেখা চায়।ইয়াদ এক কিনারায় চললো। মোবাইল চালু করতেই একে একে নোটিফিকেশন আসতে আরম্ভ করলো।খেলা থাকাকালীন সে নিজের ব্যক্তিগত মুঠোফোন বন্ধ রাখে,তবে তার অফিসিয়াল ফোন সজাগ থাকে সর্বক্ষণ।
রামিসার বার্তা দেখে অধরযুগল প্রশস্থ হলো তার অনায়াসে।মাঠে অবস্থানরত মুখ গোমড়া চন্দ্রাবতীকে দেখে ইয়াদের শরীর হিম হয়ে এলো।মেয়েটাকে মুখ গোমড়া অবস্থায়ও যেনো অপ্সরী মনে হচ্ছে তার!এইসব ছবি রামিসা দ্বিতীয় তলা থেকেই তুলেছিল।সবটাই ঠিক ছিল,যতক্ষণ পর্যন্ত না ইয়াদ চার মিনিটের সেই ভিডিও বার্তা চালু করলো!দুআর ভয়ার্ত মুখশ্রী, বিধ্বস্ত অবস্থা,এলোমেলো কালোকেশ,অর্ধ মাথাটা আজ ওড়নার আবরণ বিহীন সবটা যেনো ইয়াদের রন্ধ্রে ঝিম ঝিম অবস্থার সৃষ্টি করেছে।সবচেয়ে বেশি কষ্ট অনুভব করলো সে,যখন তার নেত্র যুগল; বদ্ধ আঁখির আড়ালে বাহমান অশ্রুর মালকিনকে পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করতে পারলো!দুআর অশ্রু যেনো ইয়াদের মনের সাগরে সৃষ্ট সাইক্লোনের আভাস দিচ্ছে!
–“দুআর কি হলো?”
নিজের মনে প্রশ্ন করে সাথে সাথে সে ফোন করলো রামিসাকে।তবে ফলাফল শূন্য।রামিসা ফোন তুলছে না।ইয়াদ হুট করেই কিছু একটা ভেবে নিলো।আর কনফারেন্সে সে ফোন লাগালো তার বন্ধু মহলকে,
–“আমি চট্টগ্রাম যাচ্ছি।আজ ভোরে।”
–“কি?তোর মাথা ঠিক আছে?টানা খেলেছিস তুই।আজ বাড়তি ম্যাচ ছিলো।আবার বলছিস ট্যুর দিবি। আশে পাশে কোথাও যা?”
ইয়াসির তীব্র কণ্ঠে বললো।
–“আমি আমার কারণে যাচ্ছি।ঘুরতে না।গাড়িতে আমি সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিবো।তোরা চালাবি গাড়ি।”
ইয়াদ দ্রুত জবাব দিলো।
এর মাঝে ফারসিভ বিরক্তি নিয়ে বলে,
–“কিছুদিন পরে যা।আমার কাজ আছে হাতে।”
–“হ্যাঁ,আমারও।”
স্পন্দন সায় দিলো ফারসিভের সাথে।
–“ধেত! আমার কাউকে লাগবেনা।আমার দুআকে দেখতে আমি একাই যাবো।”
ইয়াদ ফোন কাটলো।রাগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে তার শরীর ঘমার্ত।রামিসাকে আবারও ফোন করলে ফলাফলের উন্নতি পেলো না সে।পকেটে পুনরায় মোবাইল রাখতে গেলে ফোন বেজে উঠলো।
–“যাবি না তো ফোন করেছিস কেনো?”
–“দুআ ভাবীর কি হলো?”
স্পন্দন প্রশ্ন করলো।
–“জানিনা।মেয়েটা কান্না করছিল মেঝেতে বসে।আশেপাশে মানুষ ছিলো।কি হয়েছে জানিনা।কিন্তু এই মেয়েকে আমি স্বচক্ষে না দেখলে সত্যি আমার মনটা শান্ত হবে না।আমরা দ্রুত ফিরে আসবো। আই প্রমিজ।”
ইয়াদ বিচলিত হয়ে বললো।
–“তুই সত্যি কি দুআকে এতো ভালোবাসিস!”
–“সমস্যা কি তোদের?আমি কি ভালোবাসার অযোগ্য?আমার মনে তালা দিয়েছিলাম পবিত্র মেয়ের খোঁজে।আমি ওকে পেয়েছি এখন।সে পুরোটাই আমার।তাকে আমার চাই,হোক সেটা তার ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়!”
–“আমরা যাবো।আর আমি এটাও জানি কেনো তুই আমাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিস!”
ইয়াসির বললো।
–“কারণ,তুই ধীরে ধীরে দুআর মনে জায়গা করে নিতে চাস।একা গেলে দুআ কখনো তোর সাথে দেখা করবে না,তাই তুই আমাদের মোহরা হিসেবে নিয়ে যাচ্ছিস।সমস্যা নেই বস।আমরা যাবো।আমাদের ইয়াদুর জন্যে আমরা সব করতে পারি। ফ্লাইটে যাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু,ফ্লাইট ক্যান্সেল।আমরা গাড়িতে যাচ্ছি।”
ফারসিভ বললো।
–“অবশ্যই সেই কারণ।আমি চাই দুআ ধীরে ধীরে আমার জীবনে আমাতে নিবদ্ধ হোক।আমার মোহে তাকে আমি গ্রাস করে নিবোই নিবো।হোকনা তাতে হাজার বাঁধা!তাও এই ইয়াদের মন তাকে ছাড়বে না।আমার চন্দ্রাবতীর মনে জায়গা তৈরি করতে আমি সব করবো।”
চার বন্ধু মিলে পরিকল্পনা শেষ করলো।
ইয়াদ দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে হোটেল থেকে।ভেতর থেকে তার সত্ত্বা চিল্লিয়ে বলছে,
–“আমি আসছি চন্দ্রাবতী।ইয়াদের মোহে মোহিত হতে বাধ্য তুমি।তোমার সব কিছু যে ইয়াদেই সীমাবদ্ধ!”
দুআর প্রতি ইয়াদের এই ব্যাকুলতা দুআ ঢাকায় না এলে কখনো সৃষ্টি হতোই না বুঝি! একজনের পবিত্রতা, যেকোনো মানুষের মনে দাগ কাটার জন্য সত্যি যেনো এক বিশাল হাতিয়ার।যেমনটা ইয়াদ মগ্ন দুআর পবিত্রতায়।
চলবে…..
কপি করা বারণ।কেমন হয়েছে গল্প অবশ্যই জানাবেন।পেজের রিচ কম তাই হয়তো গল্প সবার কাছে যায় না।সাইলেন্ট রিডার্স আপনারা গল্প পড়ে রিয়েক্ট দিবেন এবং কমেন্ট করবেন।