#আমার_চন্দ্রাবতী পর্ব ২৮
লেখিকা- সালসাবিল সারা
জমিদার বাড়ি ফাঁকা নয়।তবে,দুআ এবং জেনির উপস্থিতিতে বাড়িটা একবিন্দু ভারী ঠেকছে না।না আছে আহেলী বা বড় কাকীর মেজাজ,না আছে কাজের মেয়েদের কাজ করার তোড়জোড়ের ব্যস্ততা।কাজের মহিলারা টুকটাক কাজ শেষ করেই বেরিয়েছে।বাড়ির বাকি সকলে মাইশার বাড়িতে।মেয়েটা সুসংবাদ দিয়েছে।মা হচ্ছে সে।হাড়ি হাড়ি মিষ্টি নিয়ে কিয়ৎ পূর্বেই সেথায় পাড়ি জমালো সকলেই।
মাইশার প্রচুর বমি হলে তাকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যায় রিজোয়ান।সেখানে একদিন ব্যয় করে অতঃপর আজ সকালে ফিরে এলো তারা রিপোর্ট সমেত।এমন খুশির খবর শুনে সকলেই আত্মহারা।জমিদার বাড়ির বংশধর আসছে বলে কথা!রিজোয়ানের সাথে দুআর দেখা হয়েছে সেই দুইদিন পূর্বেই।মাইশার অসুস্থতার কারণে ইয়াদের বাবার দেওয়া প্রস্তাবের কথাটাও গা ঢেকে ফেললো।সকলেই অত্র মেয়েকে নিয়ে বেজায় চিন্তিত ছিলো।মাইশা তাদের পুত্রবধূ হলেও মেয়ের সমতুল্য।এক মেয়ের অসুস্থতায় অপর মেয়ের খুশির সংবাদ নিয়ে আলোচনা করা জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য না।
সোফায় গা এলিয়ে বসে রইলো দুআ।জ্বর তার একশোর কৌটায়।দুইদিন যাবত তার খাবারে অনীহা,
অতঃপর জ্বরে মত্ত হলো মেয়েটা।পর্যাপ্ত ঘুমকেও বুড়া আঙ্গুল দেখালো মেয়েটার তীব্র দুশ্চিন্তা।প্রেমিক পুরুষকে তার বড্ড স্বার্থপর মনে হয়।দুইদিন যাবত না কোনো ফোন করলো আর না কোনো খবর পাঠালো। জনে জনে সকলকে জিজ্ঞেস করেছে অস্থির প্রেমিকা,
সেই পাষাণ প্রেমিকের কথা।কিন্তু,কেউ কোনো যৌক্তিক উত্তর দেয়নি।কেউ বলেছে,ইয়াদ ভালো আছে;আবার কেউ বললো ইয়াদ দেশেই আছে।
বিশ্বাস হয়না দুআর কিছুই।দুর্বলতায় শরীরটা নুয়ে আসে।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো সে,প্রেমিক পুরুষের কথা ভেবে আর মন খারাপ করবে না দুআ।লোকটা নিশ্চয় তাকে ছাড়া ভালো আছে?নাহলে এইভাবে বিনা নোটিশে যোগাযোগ বন্ধ রাখার কোনো অর্থ নেই।
কোলের উপর স্থায়ী অসহায় বইটা দুর্বল হাতে তুললো সে। নুয়ে যাওয়া দৃষ্টি ঠেকলো বইয়ের গভীরতায়।পড়ালেখার মাঝে ডুবে যাওয়ার তীব্র চেষ্টা মেয়েটার।অন্তত কিছু সময় মনটাকে তো স্থির করতে পারবে,সেই নিষ্ঠুর প্রেমিকের চিন্তা হতে?
গগণে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ বিদ্যমান।বড় জানালার কাঁচের ফাঁকে দৃশ্যমান ঝলঝকে আলোর ঝলকানি।বাড়ির অন্যসব খোলা স্থানের মাধ্যমে হিম পবন প্রবেশ করছে বিনা দ্বিধায়।মুহূর্তেই হ্রাস পেতে শুরু করলো ঘরের উষ্ণতা।জ্বরের মাঝে এমন হিম পবনের স্পর্শে শরীরে কাঁ’টা দিয়ে এলো দুআর। দূর্বল কণ্ঠে সে জেনিকে নির্দেশ দিলো,
–“গেস্ট রুমের কম্বলটা নিয়ে আসো, জেনি।”
নির্দেশনা পেয়ে মেয়েটা দৌড় দিলো।ইতোমধ্যে আগমন হলো গগণ চিড়ে ঝরঝর বর্ষণের।জেনি কম্বল আনতেই সেটি গায়ে মুড়িয়ে নিলো দুআ।গলায় ওড়নার আবরণে হাঁসফাঁস লাগলে,ওড়না দূরে ছুঁড়ে রাখলো সে।কম্বলে ঢেকে আছে তনু,তাই সেথায় ওড়নার প্রয়োজন বৃথা।
দুআ বইয়ে নজর ডুবালো।জেনি সম্পূর্ণ নিচ তলার দরজা জানালা বন্ধ করতে ব্যস্ত।বর্ষণের বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপর তলার দরজা,জানালা সব পূর্ব থেকেই বন্ধ।নিচের কাজ শেষ করেই হঠাৎই জেনি চিল্লিয়ে উঠলো,
–“হায়রে,মালকিনের আমের আচার!আর কাপড় তো আনলাম’ই না।আইজকা আমারে মালকিন মাই’রা ফেলাইবে।”
জেনির চিৎকারে দুআ পূর্বে ভয় পেলেও,এখন ম্লান হাসলো সে।বড়জোর বকার সম্মুখীন হবে সে।তার বাড়ির কেউ কাজের লোকের গায়ে হাত তুলে না।
–“ভয় পেও না।সাবধানে কাজ শেষ করে আসো ছাদের।ধীরে সুস্থে করবে কাজ।এখন ছাদ পিচ্ছিল।”
দুআ শান্ত ভঙ্গিতে বললো।
–“আপনি ডরাবেন না?”
জেনির বিচলিত প্রশ্ন।
তাদের কথার মাঝেই শোনা গেলো গাড়ির শব্দ। পরিচিতি ছাড়া জমিদার বাড়িতে অন্যদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।তাছাড়া এই বাড়িতে দুআর পরিবার ব্যতিত অন্য কারো আসার কোনো হাদীস নেই এইক্ষণে।তাই সে ভেবে নিলো তার পরিবার ফিরেছে,
–“নাহ পাবো না।চলে এসেছে সবাই।শুনলেই তো গাড়ির শব্দ।মায়ের বকুনি শোনার পূর্বে দৌড় লাগাও।”
–“আল্লাহ্ গো!”
জেনি সিঁড়ির পানে ছুটলো।
মেয়েটা দুই তলায় উঠতেই দুআ সেদিক থেকে নজর ফিরিয়ে পুনরায় নজর ঠেকালো বইয়ের পৃষ্ঠায়।
–“আসুন আসুন, স্যার।সকলে বাইরে গেছে আপনি বরং বসুন।ছোট মালকিন আছে বাড়িতে।”
বাড়ির বয়োজোষ্ঠা কেয়ার টেকার অতিথিকে ভেতরে বসার আহ্বান জানালো।
দুআ সোফা থেকে ঘাড় বাঁকিয়ে ফিরলো পেছনে।তাদের বাড়ির কেয়ার টেকার দরজায় দাঁড়িয়ে উনারই পেছনে কোনো এক মানবকে উল্লেখিত কথাটা বলেছে।
দুআর সাথে তার দৃষ্টি মিললে,কেয়ার টেকার পুনরায় বললেন,
–“ঐযে মালকিন বসার ঘরেই আছে। যান সাহেব।”
এতটুক বলে কেয়ার টেকার দরজা হতে সরলো।হয়তো লোকটা চলেই গেলো দায়িত্ব শেষে?
তবে দুআ বুঝলো না কে এলো?দুই পলক ঝাঁপটাতেই রুহ কাঁ’পলো মেয়েটার। পায়ে চকচকে বুট,শুভ্র রঙের ডেনিম প্যান্ট,মেরুন রঙের শার্ট পরিহিত এক যুবক দরজায় সটান দাঁড়িয়ে।মাথার উপর ক্যাপ এবং মুখের গন্ডিতে মাস্কের আস্তরণ।দুআর চিনতে বেগ পেতে হলো না,এই যুবক কে!
মাত্রারিক্ত রাগে দুআর তনু চিরচির করছে।হাতের বইটি বলি হচ্ছে মেয়েটার রাগের।রক্তিম হলো মেয়েটার আঁখি।জল সেথায় টুইটুম্বর।চোখ ফিরিয়ে নিলো সেই নিষ্ঠুর পুরুষ হতে।হেলান দেওয়া তনু সোজা করে বসলো সে।সিদ্ধান্ত নিলো,আর একবারও তাকাবে না সেই নিষ্ঠুর পুরুষের পানে।
________
ইয়াদ ব্যাকুল।প্রেমিকার বেদনাদায়ক দৃষ্টি,মুখভঙ্গি তার ভেতরটায় ক্ষ’ত সৃষ্টি করেছে।মেয়েটা কেমন শুকিয়ে গেলো বলে মনে হলো প্রেমিকের ব্যাকুল হৃদয়ে।এক কদম,দুই কদম করে এগিয়ে যাচ্ছে সে প্রেয়সীর পানে।ইয়াদ পর্যবেক্ষণ করছে,যতো কদম সে বাড়াচ্ছে ততোই মেয়েটার তনু কাঁ’পছে,হাতের থাকা বইটার দুমড়ানোর অবস্থা করুণ হচ্ছে।ইয়াদ ভেবে পায় না,দুআ তাকে দেখেও এক রত্তি নড়লো না,চমকালো না।তাহলে কি তার বাবা অনেক বড় কেলেঙ্কারি বাঁধিয়ে দিয়েছে এই বাড়িতে?দুআর মন কি বড্ড ব্যধিত?
ইয়াদ দুআর নিকট থামলে দুআ ক্ষি’প্ত স্বরে জেনিকে ডেকে উঠলো,
–“জেনি,জেনি!”
ইয়াদ চমকপ্রদ।দুআ তাকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না যেনো।
–“দুআ,তুমি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছো না?”
ইয়াদের কণ্ঠস্বর তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
পুনরায় দুআ ইয়াদের পানে না চেয়েই জেনিকে ডাকতে নিলে ইয়াদের রাগের পরিমাণ বাড়ে আর সে কম্বলের আস্তরণের উপরেই দুআর বাহু চেপে ধরে বিনা সংকোচে।
দুআর টলমলে দৃষ্টির সমেত ইয়াদের রাগী দৃষ্টি মিললো।ব্যথিত প্রেমিকার মন প্রেমিকের রাগী দৃষ্টিতে নিবদ্ধ।দুআর মনে মনে একটাই ঝড় চলছে,লোকটা বড্ড নিষ্ঠুর।
ইয়াদের দৃষ্টিতে দুআ তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে পুনরায় জেনিকে ডাকতে নিলে ইয়াদ বিক্ষি’প্ত কণ্ঠে আওড়ালো,
–“আরেকবার যদি আমার নাম না ধরে বা আমার সাথে কথা না বলে অন্য কাউকে ডাকার চেষ্টা করেছো তো, আই স্যয়ার আমি কি করবো তোমাকে আমি নিজেও জানিনা।”
ইয়াদের রাগের তীব্রতা আন্দাজ করে দুআ নিশ্চুপ থাকাতে অটল রইলো।দুআর গালের দুই ধারে রক্তিম আভার বিচরণ।তার তুলতুলে গালে হাত ছুঁয়ে দিতেই ভ্রু কুঁচকে নেয় ইয়াদ,
–“আর ইউ সিক?”(তুমি কি অসুস্থ?)
নিজ গাল হতে হাত সরিয়ে দেয় মেয়েটা, দূর্বল কণ্ঠে বলে উঠে,
–“আমি ম’রে গেলেও আপনার কি?তাছাড়া আপনি এইখানে আসবেন বলে আমি ভাবতে পারছিনা।গ্রামের মেয়েদের কয়দিন’ই বা ভালো লাগে শহুরে ছেলদের।আপনি কেনো এসেছেন?দুইদিন আমাকে ছাড়া বেশ ভালোই ছিলেন,সেটা আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।খামোখা কষ্ট করে আসলেন।আমি তো এখনো ম’রিনি!”
তীব্র রাগে হুঁ’শ খোয়ালো ইয়াদ।মেয়েটার গাল অব্দি হাত নিয়েও নিয়ন্ত্রণ করলো নিজেকে।এই মেয়ের গায়ে হাত তুললে ইয়াদ নিঃশেষ হবে।ইয়াদের এগিয়ে আসা হাতের দ্রুততায় দুআ ভরকে গিয়ে কম্বলের তল হতে হাত বের করে নিজেকে আড়াল করলো। তনু হতে সরলো মোটা কম্বল।দৃশ্যমান হলো প্রেমিকার তনুর ওড়না ব্যতীত স্থান।পরিহিত জামার অনেকাংশ নিচে নেমে যাওয়ার কারণে,রমণীর বুকের নিচু অংশের দিকে অবস্থানরত ডোরাকাটা সেই আকর্ষণীয় দাগের দেখা মিললো।প্রেমিক মনটায় হরতালের সৃষ্টি হলো মুহূর্তেই।নজর ফিরিয়ে মেয়েটার মুখপানে তাকালো সে।ঠোঁটে হাত চেপে মেয়েটা কান্না থামানোর চেষ্টায়।ইয়াদ ঝুঁকলো মেয়েটার উপরে। আঁধারে ঢেকে গেলো প্রেয়সী।ইয়াদের দৃষ্টি স্থির আবার চঞ্চল।দুআর চিবুক ছুঁয়ে দিলো সে।হাতের উল্টোপিঠে দুআর মুখের উপর লেপ্টে থাকা অশ্রুজল মুছে নিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
–“আমি তোমার কাছেই আসছিলাম সেদিন। ফোনে বাবার এইখানে আসার কথা শুনে অবাক হলাম বেশ।বাবা নিশ্চয় উল্টোপাল্টা কিছু বলেছে!সেই সংবাদ যেনো আমার কানে না আসে তাই মোবাইল বন্ধ রেখেছি। আমার যখন রাগ উঠে তখন আমি কি করি আমি নিজেই জানিনা,এটা কি তোমার অজানা?”
অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে দুআ।লোকটা কিছু না জেনে শুধু মনের ধারণাতেই এতো কিছু ভেবে নিয়েছে!লোকটা কেনো এমন হুটহাট সব কিছু নিজের মনের কল্পনায় সাজিয়ে নেয়?একটা বার তার সাথে কথা বলে নিলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো?
দুআ প্রত্যুত্তর করলো না।ইয়াদ তখনো অশান্ত,দুআর বলা পূর্বের কথা তার মস্তিষ্কে কিলবিল করছে।না পারছে রাগ দমাতে,না পারছে এই মেয়ের উপর রাগ দেখাতে!তার উপর মেয়েটার ধংসাত্মক রূপ ইয়াদের প্রাণনা’শের জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে যেনো।
দুআর কোমরে হাত পেঁচিয়ে মেয়েটাকে উঠিয়ে নিলো সে।অতঃপর নিজের কোলে বসিয়ে মেয়েটার ঘাড়ে মুখ ডুবালো প্রেমিক পুরুষ।দুআ স্থব্দ, কিংকর্তব্যবিমূঢ়।লোকটার প্রতিটা নিঃশ্বাস দুআর কাঁধে জ্বল’নের আভাস সৃষ্টি করছে।দুআ অস্থির,মৃগী রোগীর মতো কাঁপ’ছে সে।তার ধারালো নখ গেঁথে যাচ্ছে ইয়াদের হাতের উপরিভাগে।অথচ দুই মানব মানবীর খবর নেই সেই ব্যাপারে।
লম্বা কেশের আস্তরণ সরিয়ে দুআর ঘাড়ে অধর ছোঁয়াতেই অস্ফু’ট শব্দ করলো দুআ।মেয়েটা বুঝি এখনই জ্ঞান হারাবে?
ইয়াদ সবটা বুঝলো। তাও সরলো না।মেয়েটার সাথে রাগ দেখাতে না পেরে এই পদ্ধতি অবলম্বন করলো সে।
–“জ্বর বাঁধিয়েছো কেনো?”
কথা আওড়ানোর সময় ইয়াদের অধর দুআর ঘাড়েই অবস্থানরত ছিলো। যার দরুণ দুআর অস্থিরতার হার বাড়লো সহস্রগুণ,
–“স..সরুন না।জেনি আছে বাসায়।”
–“থাকুক।রাগ তুলেছো কেনো?”
ইয়াদ অনড়।
–“যে কেউ চলে আসবে।প্লিজ!”
মেয়েটার আকুতি শুনে ইয়াদ উঠে দাঁড়ালো দুআকে সোফায় বসিয়ে।অন্য সোফায় ওড়না নজরে এলে,দেরী না করেই ওড়না নিয়ে মেয়েটার বুকের উপর বিছিয়ে দিলো সন্তর্পনে,
–“এমনভাবে পাগল করো না,যেনো বিয়ের আগে অঘটন ঘটিয়ে দিই!নিজেকে সামলে রাখো।”
লজ্জায় গুটিয়ে রইলো মেয়েটা।
জেনি দু’তলা থেকে ইয়াদের কণ্ঠস্বর শুনে আর নিচে নামার সাহস পেলো না।থাক না,সেই কাঙ্খিত প্রেমিক প্রেমিকা নিজেদের প্রেমে মগ্ন!
–“বাবা কি বলেছিলো?”
ইয়াদ দুআর পাশাপাশি সোফায় বসে প্রশ্ন করলো।
–“আপনি জানেন না?”
দুআ চমকে প্রশ্ন করলো।
–“কি বলেছি ভুলে গেলে?বললাম’ই তোমায়,কিছু না জেনেই তোমার কাছে ছুটে এসেছি।আমার মনে হচ্ছে,তোমার বাবা আর আমার বাবার জন্যেই আমাদের বিয়েতে ঝামেলা হবে।”
ইয়াদ দুআর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো সযত্নে।
–“কেনো এমন মনে হয় আপনার?”
দুআ পুনরায় প্রশ্ন করলো।
–“আমি শিউর, বাবা তোমার বাবাকে হিং’স্র বানিয়েছে।তোমার বাবা তার মান সম্মান খুইয়ে আমাকে বিয়ে দিবে তোমায়?”
দুআ হাসলো অভ্যন্তরে।লোকটা কিছুই জানেনা।তার বাবা তো এই প্রস্তাবে খুশি বেশ।তবে ইয়াদকে উত্যক্ত করতে দুআ আসল কথা গোপন রাখলো,
–“হুম,বাবা বেশ রেগে।মনে হয় না আমাদের বিয়েতে বাবা সহজে রাজি হবে না।”
ইয়াদ তৎক্ষণাৎ দুআর নিকট আসলো।মেয়েটার হৃদস্পন্দন বাড়লো পুনরায়।দুআর চকচকে নাকের ডগায় অধর ছুঁয়ে দিলো ইয়াদ,
–“তোমার বাবা না মানলেও তুমি আমার,অনলি মাইন।”
দুআ পলক ঝাপটালো।পিটপিট দৃষ্টিতে ইয়াদের পানে চেয়ে বললো,
–“বাবা যদি আমার বিয়ে আপনার সাথে না দেয়,তবে আপনি আমাকে ভুলে যাবেন?”
ইয়াদ হাসলো।কিয়ৎ বাদে বাড়লো তার হাসির তীব্রতা,
–“আমি তোমাকে ভুলবো?যেখানে চোখের পলকে তোমার প্রতিচ্ছবি ভেসে বেড়ায় সেখানে আমি তোমাকে ভুলবো? হাসালে চন্দ্র!”
ইয়াদের হাসিটা দুআর সর্বোপরি প্রিয়।দুআ হাত বাড়াতেই ইয়াদ এগিয়ে এলো দুআর সম্মুখে।দুআর উষ্ণ হাতের তালু স্পর্শ করলো ইয়াদের খরশান চোয়ালে,
–“আপনি এমন পাগলাটে কেনো?”
–“তুমি অনেক আদুরে তাই!”
অধর প্রশস্ত হলো মেয়েটার।এমন প্রেমিক পুরুষ নিজ জীবনে পাবে সে,ইহকালে এমনটা ভাবেনি।সবসময় এইসব ব্যাপারে মেয়েটা বড্ড দুশ’চিন্তায় ভুগতো।তবে,ছেলেটা এসে সবকিছু এলোমেলো করলো।দুআর ছোট্ট মনে সঞ্চার করলো ‘ভালোবাসা’ নামক অনুভূতি।
দুআর হাতের উপরেই নিজের হাতের অবস্থান ঠিক করলো ইয়াদ।মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে প্রশ্ন করলো,
–“বাবা কি বেশি ঝামেলা করেছে?”
দুআ এইবার মাথা নাড়লো,
–“নাহ,আঙ্কেল উল্টো আমাদের বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে গেলো।”
–“হুয়াট?”
ইয়াদ যেনো গগণ থেকে টপকালো।
–“উম।আপনি এসেছেন অনেক্ষণ হলো।আপনি বসুন।নাস্তার ব্যাবস্থা করছি।জেনিটা কই যে গেলো!”
দুআ উঠতে নিলে ইয়াদ থামালো দুআকে,
–“আমার খাওয়ার দরকার নেই।বরং তুমি খেয়ে নাও কিছু।কারণ,আজ এমন কিছু ঘটতে যাবে যেটা তোমার সহ্য হওয়া অস্বাভাবিক।আমি আজ বড় কাহিনী করবো।”
অস্থিরতায় আবদ্ধ দুআ বেশ অবাক হলো ইয়াদের কথায়।তার কণ্ঠ মোটেও ভালো আভাস দিচ্ছে না,
–“কি করবেন?”
–“আমার বাড়ির সবাই যেকোনো সময়ে এসে পড়বে তোমার বাড়িতে। কারো সাথে যোগাযোগ না করলেও তোমার গোয়েন্দা মারিয়ার কাছে খবর দিয়েছি গত রাতে।আজ দুপুর দুইটার দিকে সবাইকে আসার হুঁশিয়ারি নোটিশ পাঠানো শেষ।সবাই হুড়মুড় করে চলে আসবে আমি একশো পার্সেন্ট শিউর।এতক্ষণে হয়তো,তোমার বাড়ির সবাই ফুফু থেকে খবর পেয়ে ছুটে আসছে।”
ইয়াদের কণ্ঠস্বর শান্ত।
দুআ বেশ শব্দ করে চিল্লিয়ে বললো,
–“কি?কেনো?কি করছেন আপনি?”
ইয়াদ উঠে দাঁড়ালো।দুআর দুই বাহু ধরলো পরম ভালোবাসায়।দুআর মাথার তালুতে নিজের অধর স্পর্শ করে জবাব দিলো,
–“যতদিন আমার নাম তোমার নামের সাথে জড়িয়ে যাবে না,ততদিন আমার নানান চিন্তায় মত্ত থাকতে হবে।তাই,আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার নাম তোমার নামের সাথে জড়ানো অতি প্রয়োজন।”
দুআ নির্বিকার চেয়ে রইলো।
–“উপরে যাও।শাড়ি পড়বে কিন্তু আজ।অবশ্য মা নিজেই নিয়ে আসবে।”
ইয়াদ পুনরায় জবাব দিলো।
চমকিত প্রেয়সীর মস্তিষ্কের সকল কর্মকান্ড বন্ধ।ইয়াদ দু’বার শব্দ করে জেনিকে ডাকলো।জেনি শুনলো না।সে ছাদে,নিজের কাজে ব্যস্ত।দুআ নিজ থেকে ডাকতে না এলে,মেয়েটা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।অগত্য ইয়াদের ডাক তার কান অব্দি পৌঁছালো না।
–“উপরে যাও না,তুমি।আমি একাই নিচেরটা সামলাবো।কোনো স্ট্রেস নিও না।তোমার ইয়াদ তোমার জন্যে সর্বদা ঢাল হয়ে থাকবে।”
ইয়াদের উক্তি দুআর শ্রবণে এলে মেয়েটা অবাকের সুরে প্রশ্ন করে,
–“কিন্তু,আপনি কি করতে চাচ্ছেন?”
–“আই ওয়ান্ট টু মেরি ইউ,টুডে।অ্যান্ড আই উইল। আই ডোন্ট নো, হাউ উইল ইউর ফ্যামিলি রিয়েক্ট!বাট,আই হ্যাভ নাথিং টু ডু। ইউ উইল বি মাই ওয়াইফ টুডে,এট এনি কস্ট।”(আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই,আজ।আর আমি করবোই।আমি জানিনা তোমার পরিবার কিভাবে রিয়েক্ট করবে!তবে,আমার কিছু করার নেই।তুমি আমারই বউ হবে আজ,যে করেই হোক।)
চলবে…..
কপি করা বারণ।কেমন হয়েছে গল্প অবশ্যই জানাবেন।পূর্ববতী পর্বের কমেন্টের জয়ীদের নাম গ্রুপে পোস্ট করা আছে।জয়ীর সংখ্যা অনেক হওয়ায় এইখানে দেওয়া সম্ভব হয়নি।সত্যি সবার গঠনমূলক মন্তব্য দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়।