#আমার_চন্দ্রাবতী পর্ব ৩
লেখিকা- সালসাবিল সারা
দুআর মুখ বেজার।মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নানান চিন্তা।দ্বিতীয় তলার বারান্দার রেলিং চেপে দাঁড়িয়ে রইলো সে।দৃষ্টি তার পাশের সরিষা ক্ষেতে।পবনের তীব্র ঝটকায় দুআর সারা সত্ত্বা প্রশান্তিতে ভরে গেলেও প্রশান্তি মিলছে না দুআর হৃদয়ে।বিপিএল এর শেষ ম্যাচ ছিলো আজ।তার উপর ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস চূড়ান্ত ম্যাচ খেলছে।রামিসার বাসায় নিশ্চয় এখন সবাই তাণ্ডব চালাচ্ছে!কিন্তু আজ সেখানে যাওয়ার জন্যে মন সায় দিলো না তার।কথায় বলে,মনের প্রশান্তি বড় প্রশান্তি।ঠিক তাই,যেখানে আজ দুআর মনেই শান্তি নেই; সেখানে দুআর কাছে সেখানকার আনন্দ একেবারে ফিকে মনে হচ্ছে।পবনে উড়ন্ত এলোকেশ বিরক্তি নিয়ে হাত খোঁপা করে নিলো সে।আঁখিতে জল টুইটুম্বর।কিন্তু, তারা গড়িয়ে পড়তে যেনো শক্তমুখে বারণ করেছে দুআ তাদের। খানিকক্ষণ বাদে ডাক পড়লো তার কাকীমার,
–“চাঁদ!খাবি না?”
দুআ নিশ্চুপ।একটু শব্দ করলেই যেনো তার অক্ষিকোটর ভেদ করে বেরিয়ে আসবে সেই প্রত্যাশিত নোনাজল! কাকীমা আবারও ডাকলো,
–“মন খারাপ করছিস কেনো?রিজোয়ান আসুক।সে-ই তোর মা-বাবা দুইজনকেই মানিয়ে নিবে।”
দুআ মাথা দোলালো দুদিকে,
–“নাহ,খাবো না আমি আর কোথাও যাবো না।”
দুআর কণ্ঠস্বর থেকে এই শব্দখানা বেরুতেই গালে তার আঁখির নোনাজলের আগমন ঘটলো।দুআর অবস্থা অবলোকন করে তার কাকীমা দুআর মায়ের কাছে ছুটলো।দুআর মাকে কিভাবে জব্দ করতে হয় সেটা দুআর কাকীমা বেশ ভালোই জানে।
দুআর মন অভিমানে ভরপুর।রিজোয়ানের বিয়ের কথাবার্তা এগুচ্ছে মাইশার সমেত।কথা ছিল কিছুদিন বাদে রিজোয়ান আর তার মা এবং দুআ ঢাকায় যাবে মাইশার অন্য আত্মীয়ের খোঁজ করতে।সাথে যাবে মাইশার বাবা -মা এবং রামিসা। দুআ প্রথমে ভারী আবেগপ্রবণ হয়েছিল এই ব্যাপারে।কিন্তু,আজ সকালেই তার মা তাকে ঢাকায় যেতে বারণ করে।মায়ের সাথে হাজার তর্ক করেও লাভ হলো না দুআর।বিনিময়ে দুআর মনে জমা হলো গগণ ছোঁয়া অভিমান।এই অভিমানে দুআর মনের সকল প্রশান্তি কোথায় যেনো লুকিয়ে পড়লো।
–“চাঁদ,নাস্তা খাবি আয়।”
মায়ের ডাকে দুআ রেলিং চেপে ধরলো সর্বশক্তি দিয়ে।দুআর মা তার কাঁধ স্পর্শ করে সামনে ফিরাতেই দেখলো,দুআর চোখে মুখে লেপ্টে আছে অভিমানী অশ্রু।মায়ের মনটা এইবার গললো বোধ হয়।দুআর থুতনিতে আঙ্গুল ছুঁয়ে সেই আঙ্গুল নিজের অধরে স্পর্শ করিয়ে শব্দ করে চুমু খেলো দুআর মা,
–“এমন অভিমানী হলে কি হয়?আমি তোর আব্বাকে জানিয়েছিলাম তোর ঢাকা যাওয়ার কথা।কিন্তু উনি বারণ করেছেন বিধায় আমি তোকে বারণ করেছি।নাহলে,আমার আপত্তি থাকার কোনো প্রশ্নই উঠে না।”
দুআ মায়ের বাহুডোরে চলে এলো।”অভিমান” শব্দটা দুআর জন্যে বেশ পরিচিত শব্দ।দুআ যেমন প্রাণৌজ্জ্বল তেমনি অল্পতে অভিমানী হয়ে উঠে।দুআর মা তার পিঠে হাত বুলিয়ে তাকে পুনরায় বলে উঠলো,
–“নাস্তা খেয়ে নে।এরপর একটা কথা বলবো তোকে।এই কথায় দেখবি তোর আব্বা একেবারে রাজি হয়ে যাবে।এখন বল খাবি তো?”
দুআর মুখে হাসির ঝিলিকের দেখা মিললো।সে মাথা দুলিয়ে জানালো “খাবে”।
পেছনে দাঁড়িয়ে কাকীমা শাড়ির আঁচল মুখে চেপে হাসছে।আর অস্ফুট স্বরে আওড়ালো,
–“মা মেয়ের যতো রং তামাশা!”
দুআ গিয়ে তার কাকীর গালে চুমু দিলো,
–“তোমার থেকেই তো আমাদের গায়ে এমন রং তামাশার চিলিক এসেছে।আমি জানি মাকে তুমি রাজি করিয়েছ।”
–“হয়েছে আর কথা না।খেয়ে নে।”
–“মাথা টিপে দাও!”
–“ইস,দুই ফোঁটা চোখের জল কি ফেললো অমনি তার মাথা ব্যাথা করছে!আয় বাবা।উদ্ধার কর আমায়।”
দুআর কথায় মুখে মিছা বিরক্তি নিয়ে জবাব দিলো কাকীমা। বিনিময়ে দুআ মুখ কুচঁকে তার কাকীমার মুখভঙ্গি নকল করার চেষ্টা করলো।
———————-
তার মায়ের কথা অনুযায়ী দুআ তৈরি হয়ে নিলো।বিকেলের প্রথম ভাগ।রিজোয়ান থেকে আগেই তার বাড়ি ফেরার সময়টা জেনে নিলো দুআ।যার দরুণ সবকিছু নিজের মায়ের বাতানো পরিকল্পনা অনুযায়ী করবে বলে দুআ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ইতিমধ্যে দুআ তার প্রাণপ্রিয় বন্ধুগণদের খবর দিয়েছে তার বাড়ির সামনে উপস্থিত হতে।নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনজন উপস্থিত হলো।বিপিএল এর চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলারও ইতি ঘটলো।ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস এর জয়ের ফলাফল মাহি,সঞ্জয় এবং রামিসার মুখশ্রীতেই প্রতিফলিত হচ্ছে।তিনজনের এমন খুশিতে গদগদ মুখের ইতি ঘটলো যখন দুআ তার কাঙ্খিত কথা তাদের সামনে উপস্থাপন করলো,
–“আমরা এখন ভাইয়ার ভার্সিটির সামনে যাবো।সেখান থেকে বাবার কারখানায়।”
রামিসা, সঞ্জয় এবং মাহি নিঃসন্দেহে এই দুইজন মানুষকে বেজায় ভয় পায়। রামিসা সাথে সাথেই প্রস্তাব নাকচ করলো,
–“দুই বাঘের সম্মুখে যাওয়ার সাহস আমার নেই।”
–“আমারও নেই।কেনো যাবো সেখানে স্ব-ইচ্ছায়,
আজব।”
দুআ সঞ্জয় এর দিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করলে,সেও মাথা নেড়ে “না” ইঙ্গিত করে।
অতঃপর দুআ তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিস্তারিত জানালো সবাইকে। সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে রামিসা গভীর চিন্তায় পড়লো।সে নিতান্তই তার সই ছাড়া ঢাকায় যাবে না।বাকি দুইজনও দুআর এমন বিপদে তাকে সাহায্য করতে চায়।তারা তিনজনই জানে দুআর কতো সখ ঢাকায় ভ্রমণ করবে বলে! ভয়কে বিদায় জানিয়ে তিনজনই দুআর সাথে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।দুআর মুখে প্রশান্তির হাসি।এই বুঝি দুআর স্বপ্ন পূরণ হবে!
দুআর ঘরের গাড়িতে উঠে পড়লো তিনজন।তাদের উদ্দেশ্য রিজোয়ানের ভার্সিটির সামনে যাওয়া।মনের মধ্যকার ডর-ভয় দূর করে তারা চারজন এখন তাদের ঐতিহ্যবাহী আলোচনায় ব্যস্ত। ঘোর আড্ডায় বাম হাত ঢুকিয়ে সেই আলোচনা পন্ড করলো মাহি।আজকের ম্যাচে তার মোবাইলে ধারণকৃত ইয়াদের ভিডিও দেখে মাহি আপনমনে খুশিতে গদগদ হয়ে যাচ্ছে।দুআ মুখ কুঁচকে মাহিকে প্রশ্ন করলো,
–“কি করছিস তুই?প্রেমে পড়েছিস বুঝি?”
মাহির মুখ লজ্জায় লাল। সে দুআর দিকে নিজের মোবাইল তাক করে বলে উঠলো,
–“প্রেমে পড়েছি সেই কবেই,এই সুদর্শন যুবককে দেখে।এই দেখ আমার ইয়াদু।আজকের ‘ম্যান অব দ্যা ম্যাচ’ হয়েছে। ইয়াদুর মসৃণ গালখানা কি আদুরে! হাসলে দুইদিকে কেমন আদুরে ভাব সৃষ্টি হয় তার। কবে যে ইয়াদুর গালখানা আমি আলতো হাতে ছুঁয়ে দেখবো! ইস,আজব।”
মাহি মোবাইল দুআর হাতে ধরিয়ে নিজের মুখে হাত রাখলো লাজে।আর দুআর দৃষ্টি পড়লো মোবাইলের স্ক্রিনে ভাসমান হাস্যজ্জ্বল মানুষটার দিকে।মাহির বক্তব্য একেবারে সঠিক।এই ইয়াদ নামের ছেলেটা নিঃসন্দেহে নজর কাড়া সুদর্শন।এতো সুন্দর মানবের জায়গা নিশ্চয় কোনো সিনেমায় হওয়ার কথা ছিলো! ইয়াদের বলিষ্ঠ হাতে পুরষ্কার নেওয়ার ছবিটা দৃশ্যমান।সাথে ইয়াদের সেই মসৃণ গালের হাসি যেনো সত্যি নজরকাড়ার লাহান।দুআর মনে অন্যকিছু ভাবনা আসার পূর্বেই দুআ মাহিকে তার মোবাইল দিলো,
–“তুই দেখ এইসব ছেলেকে।এমন মানুষের প্রেমে পড়ে কি লাভ?যে জানেই না তুই এই দুনিয়ায় এক্সিস্ট করিস।গিয়ে দেখ,ইয়াদ নামের ছেলেটার প্রেমিকার অভাব নেই।”
–“এই ভাই,আমি জানি আমার ভাই এখন সিঙ্গেল।তাই আমার ভাইয়ের ব্যাপারে উল্টো পাল্টা কথা নয়।”
রামিসা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো।দুআ নিশ্চুপ। কিই বা বলবে?এরা সবাই ইয়াদ ভক্ত।এদের সাথে কথা বলা মানে বড়সর একটা বাঁশের সম্মুখীন হওয়া।দুআ এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে সামনে আসা ঝড়ের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ভার্সিটির গেইটে গাড়ি থামলো।মিনিট খানেক পরে রিজোয়ান বেরিয়ে এলো।নিজেদের গাড়ি দেখে সেদিকে এগিয়ে আসছে সে।আজ সে বাইক আনেনি।সকালেও এই গাড়ি তাকে ছেড়ে গিয়েছিলো ভার্সিটিতে।তবে গাড়ির দরজা খুলতেই অবাক হলো রিজোয়ান।দুআ এবং তার বাহিনীকে দেখে রিজোয়ান অবাকের সুরে প্রশ্ন করলো,
–“কি ব্যাপার?সবাই এইখানে?”
–“আব্বার কারখানায় যাবো,প্লিজ ভাইয়া।তুমি আব্বাকে রাজি করাবে, আমাকে যেনো ঢাকায় যেতে দেয় তোমাদের সাথে। আম্মা আজ সকালে বলেছিলো আব্বা মানা করেছে আমায় ঢাকা যেতে।”
দুআর কষ্টময় কণ্ঠ।
–“কি বলিস? কাল অব্দি তো চাচার এই ব্যাপারে কোনো মত ছিলো না।আচ্ছা,চল।দেখি কিভাবে আমার চাঁদকে আমার সাথে যেতে না দেয়!কারখানায় সবার সামনে চাচাকে এই কথা বললে,উনি সৌজন্যতা খাতিরে ‘হ্যাঁ’ বলবেন ই।তো,এই আইডিয়া কার ছিলো?চাচীর বুঝি?”
–“হুম।”
–“দুজনই একে অপরের জন্যে তৈরী।”
কথাটা বেশ গভীর উদ্দেশ্য নিয়ে বললো রিজোয়ান।এই কথার অর্থ বুঝে দুআ আর রামিসা মুখ চেপে হাসলো।আর মাহি,সঞ্জয় মূর্খের মতো চেয়ে রইলো তাদের পানে।
সবাই মিলে কারখানায় পৌঁছালো। রামিসা,সঞ্জয় এবং মাহি গাড়িতে বসে আছে।দুআ রিজোয়ানের হাত ধরে সামনে এগুচ্ছে।একটু দূরে যেতেই তাদের দৃষ্টিতে এলো এই গ্রামের জমিদার সাহেব তথা দুআর বাবার অবয়ব।সবার সম্মুখে রিজোয়ান বেশ সাবলীলভাবে দুআর বাবাকে বলে উঠলো,
–“চাচা,আপনি কি দুআকে ঢাকায় যেতে বারণ করেছেন?”
–“দূরের ভ্রমণে দুআ অসুস্থ হইয়া যায়।এই ব্যাপারে কি তোমরা অজ্ঞ?”
–“আমি আছি,মা আছে।আমরা দুআর খেয়াল রাখার জন্যে কি যথেষ্ট নই? কাল অব্দি আপনার এই ব্যাপারে মত ছিলো না কোনো।কিন্তু, এখন এই ছোট মেয়ের সাজানো স্বপ্নে কেনো বাঁধা সৃষ্টি করছেন?”
রিজোয়ান থমথমে কণ্ঠে বললো।
–“আব্বা,এইসব কথা বাসায় বললে হইতো না?এইভাবে এতো মাইনষের সামনে!”
–“আব্বা,দুঃখিত আমি।আমাকে যেতে দিন,দয়া করে।আমি সত্যি একদম সুস্থ থাকবো এবং কোনো দুষ্টুমি করবো না।”
দুআ স্নিগ্ধ কণ্ঠে জবাব দিলো।
–“চাচা,এইখানে অনেক বুঝদার মানুষ আছে যাদের সামনে আপনি আমাদের কথা ফেলতে পারবেন না।তাছাড়া,বাসায় এই ব্যাপারে কথা তুললে হুদাই আমাদের দুইজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতো।”
জমিদার সাহেব হেসে উঠলো।তার পরিবারের সদস্য তাকে এমন ভয় পায় এটা উনি আগেই জানতেন।কিন্তু,আজ সচক্ষে দেখে তার মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠলো।জমিদার সাহেব কিছু বলার পূর্বেই “মুরলি” নামের অন্য এক লোক বলে উঠলেন,
–“জমিদার সাহেব,ছেলেমেয়ে যখন এতো জিদ করছে যেতে দিন না তাদের।আমাদের রিজোয়ান তার বোনের কোনো ক্ষতি হতে দিবে না,এটাই আমার বিশ্বাস।”
–“বিশ্বাস আমারও আছে,মুরলি।শুধু মাইয়্যার চিন্তা ছিলো আগে,কিন্তু এহন এই চিন্তাটা চইলা গেলো।দুআ তুমি যাইতে পারবা ভাইয়ার লগে।”
জমিদার সাহেব পানের পিচকি ফেলে জবাব দিলো।দুআর খুশির অন্ত নেই।সে তার খুশির বহিঃপ্রকাশ করতে তার আব্বাকে জড়িয়ে ধরলো,
–“ধন্যবাদ,আব্বা।”
–“দুই ভাই-বোন বেশ চালাক হইছো।আব্বার ‘না’ কে ‘হ্যাঁ’ বলাটাও শিইখা ফেলাইছো।”
জমিদার কথাটা বলে রিজোয়ানের দিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো।দুইজনের চোখাচোখি হতেই ম্লান হাসলো দুইজন।দুআর সুখই যেনো তাদের দুইজনের কাছে সবচেয়ে বেশি দামী।
___________________
বিপিএল সিরিজ শেষ করে পরদিন বাড়ি ফিরলো ইয়াদ।শুনতে পেলো,তার মায়ের শরীর হঠাৎই খারাপ হলো।বাদবাকি ইয়াদের আর কোনো পরিকল্পনা নেই অন্য কিছুর।অগত্য সে বাড়ি ফেরাটা উত্তম মনে করলো।তাছাড়া মাঠে গিয়ে অনুশীলন করা ছাড়া আপাতত ইয়াদের কাছে ছুটি আছে বহুদিনের।
সবে মাত্র বিকেলের নিদ্রা থেকে সজাগ হলো ইয়াদ। উদোম শরীরে ট্রাউজার পড়নে সে সোজা চললো ব্যালকনির দিকে। গগণ এখন কমলা রঙে আবৃত।সামান্য ব্যাবধানে চারদিকেই এক তলা,দুই তলা,তিন তলা বিল্ডিং দৃশ্যমান। এই আবাসিক এলাকায় সকলেই নিজস্ব বাড়িতে থাকে।এই এলাকায় ভাড়া বাসার কোনো সুযোগ নেই।
চারদিকে নজর বুলিয়ে যাচ্ছে সে।মাঝে মাঝে কিছু প্রাইভেট কার এবং দামী মোটর সাইকেলের আনাগোনা ইয়াদের দৃষ্টিতে পড়ছে নিভৃতে।পবনের হালকা ঝিলিক ইয়াদের শরীরকে ছুঁয়ে গেলো। অবাধ্য কিছু চুল ললাট স্পর্শ করার পূর্বেই আঙ্গুলের সাহায্যে সেগুলোকে তাদের নায্য স্থানে বসিয়ে দিলো ইয়াদ। দুই হাত উপুড় করে কোমর ডানে বামে দুইবার সংকুচিত করতেই তার দরজায় কেউ কড়া নাড়লো।পেছনে বাঁক ফিরলো সে।থমথমে কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
–“কে?”
–“আমি,ইয়াদু।”
ডালিয়ার কথায় ইয়াদ “ক্লথ হ্যাঙ্গার” থেকে টিশার্ট নিয়ে দরজা খুললো।হুড়মুড় করে রুমে প্রবেশ করলো ডালিয়া এবং মারিয়া।ইয়াদ টিশার্ট পরিহিত অবস্থায় বলে উঠলো,
–“কি ব্যাপার?মা মেয়ে একসাথে?”
–“হ্যাঁ,বড় ভাইয়া। জানো?আমাদের বাসায় মেহমান আসবে দুইদিন পরেই।তাও চট্টগ্রাম থেকে।”
–“ছোট ফুফুর ফ্যামিলি আসবে কি?”
ইয়াদ পুনরায় প্রশ্ন করলো।
–“হ্যাঁ,উনারা তো আসবেই সাথে মাইশার হবু শ্বশুর পক্ষের লোকজন আসবে।এই ধরো এসে শুধু যাচাই করে যাবে।এইসব ফর্মালিটি আসলে,ওরা আগে থেকেই দুইজনকে পছন্দ করে।”
ডালিয়ার জবাব।
–“ওহ।আসুক।এসে ঘুরে যাক।”
ইয়াদ সোফায় বসলো কথাটা বলে।
–“অন্য আত্মীয়ের বাসায়ও যাবে তারা,সব শেষে নাকি আমাদের বাড়িতে আসবে।আমাদের বাড়িতে এলে দুই চারদিন তাদের রেখে দিবো।কি বলো বাবা?তুমি কি আছো কিছুদিন বাসায়?”
মায়ের প্রশ্নে ইয়াদ মোবাইলের দিকে নজর দিয়ে বললো,
–“অবশ্যই মা।আমি আছি কিছুদিন।”
–“জানো জানো ভাইয়া,মাইশা আপুর হবু শ্বশুর বাড়ি থেকে আসবে;ঐ ভাইয়াটা, উনার আম্মু আর দুআ আপু।”
‘দুআ’ নামটা শুনে ইয়াদ মারিয়ার দিকে তাকালো।এমন নাম সচরাচর কম শোনা যায়।তাই একটু অবাক হলো সে।বিনা সংকোচে সে মারিয়াকে প্রশ্ন করলো,
–“দুআ কে?শুনেছি ছেলের কোনো ভাই বা বোন নেই।তাহলে?”
–“ওহ।তোমাকে তো দেখানই হয়নি।দুআ আপু ভাইয়াটার চাচাতো বোন সাথে রামিসা আপুর বেস্টফ্রেন্ড।কি সুন্দর দেখতে দুআ আপু!ঠিক যেনো চাঁদ একদম।দেখায় তোমাকে?”
ইয়াদ উত্তর দেওয়ার পূর্বে মারিয়া ইয়াদের কাছাকছি বসে পড়লো।মোবাইলে রিজোয়ানের সাথে হাসিমুখে দুআ দাঁড়িয়ে আছে।মারিয়ার হাত থেকেই ইয়াদ পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো দুআর চেহারা।দুআকে পরিচিত মনে হলো ইয়াদের।কিন্তু,ইয়াদের স্মরণে আসছে না ঠিক কই দেখলো সে দুআ নামের মেয়েটাকে।পরক্ষণে মনে এলো,কিছুদিন পূর্বেই তো মারিয়ার পাঠানো ছবিতে এই মেয়েকে দেখলো ইয়াদ।মারিয়া মোবাইল সরিয়ে নিলে ইয়াদ নিজের সৃষ্টি অন্যদিকে ফেরায়। ইয়াদের মতে মারিয়ার কথা একদম সঠিক।মেয়েটার চেহারা সত্যি যেনো চাঁদের মতো!মারিয়া নিভৃতে হেসে ইয়াদকে প্রশ্ন করলো,
–“দুআ আপু অনেক শুভ্র দেখতে,তাই না?”
–“মনে হয়।”
ইয়াদ মারিয়ার দিকে চেয়ে বললো।
হঠাৎই বিকট শব্দ হলে সবাই হইচই করে বেরিয়ে পড়লো রুম থেকে।জিয়াকে জনাব সাজ্জাদ চড় দিলেন সজোরে।মেঝেতে লাগেজ এবং তার পাশে বিশাল আকারের ফুলদানির ধ্বংসাবশেষ দৃশ্যমান।জিয়া সশব্দে কান্না করছে।ইয়াদ উদ্বিঘ্ন কণ্ঠে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,
–“হয়েছে কি বাবা?”
–“তোর বোন আমাদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে সেই ছেলের সাথে পালিয়ে যাওয়ার ফন্দি করেছে। বাঁধা দিলাম আর শুরু হলো তার বেয়াদবি।”
ইয়াদের মেজাজ মুহূর্তেই বিগড়ে গেলো।জিয়ার সম্মুখে এসে জিয়ার গালে হাত রেখে বলে উঠলো,
–“আপু তুমি কেনো বুঝতে পারছো না,জামাল ছেলেটা ভালো না।তোমাকে ভাগিয়ে নিয়ে তোমার লাইফ শেষ করে সে আমার উপর প্রতিশোধ নিতে চাই।বুঝো তুমি এইসব?দিনে কতো মেয়ের সাথে উঠা বসা করে সে জানো তুমি কিছু?আমার পরিবারের কেউ যেনো তোমার কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জিত হতে না হয়।”
–“মেয়েদের সাথে উঠা বসার কথা তুই বলছিস,ইয়াদ?ভুলে গিয়েছিস তোর আগের অবস্থা?”
ইয়াদ হাত দেখিয়ে থামলো জিয়াকে,
–“চুপ থাক,আপু।মারিয়া ভাইয়ার জন্যে কফি নিয়ে আসো,ফাস্ট।রুমে নিয়ে আসবে।”
মারিয়া বিস্ফোরিত চোখে তার ভাইয়ের অগ্নিদৃষ্টি লক্ষ্য করে চুপচাপ সেই স্থান প্রস্থান করলো।
–“তোর মাথায় কি সাধারণ জ্ঞান নেই?ছোট্ট একটা মেয়ের সামনে এইসব কি ব্যবহার তোর?”
ইয়াদের কণ্ঠে ক্রোধের আভাস মিলছে।
–“কেনো, তুই আগে কতো মেয়ের সাথে শুয়েছিস সব ভুলতে বসলি?”
–“আগে আর এখনের মধ্যে অনেক তফাৎ,জিয়া।অতীতের ভুল শুধরে নেওয়ার শক্তি আমার ছিলো এবং আমি সেটা পেরেছি।অতীতের ভুলকে সঠিক করার মতো শক্তি সব মানুষের থাকে না।সেই হিসেবে আমি নিজের কাছে জয়ী।তুই তোর আশিকের কথা ভাব।আমারটা ছিলো অতীত আর তোর আশিক এর টা বর্তমান।আগেও ছিল সেটা,এখনো আছে।সে একজন মেয়েবাজ সাথে সে ধোকাঁবাজ।ক্রিকেট বোর্ডের সবাই জানে,জামাল কেমন ছেলে!”
ইয়াদ নিজের হাত মুঠ করলো।নিজের পক্ষের সাফায় গাওয়া তার সবচেয়ে বিরক্তির কাজ মনে হয়।কিন্তু আজ সে পরিস্থিতির শিকার।
–“আমি জামালকে ভালোবাসি,ভালোবাসি।তোমরা আমাকে কেউ তার থেকে আলাদা করতে পারবে না।আজ বাঁধা দিয়েছো,কিন্তু সুযোগ পেলে আমি আবারও পালানোর চেষ্টা করবো।”
–“দুইদিন অত্যাচার সহ্য করলে,সব ভালোবাসা পালাবে।ভালো হয়ে যা,জিয়া।”
–“তোর মতো পাথর কি বুঝবে ভালোবাসা কি?জীবনে কাউকে ভালবেসেছিস?দেখবি,এমন এক দিন আসবে তোর জীবনে;যেদিন তুই তোর ভালোবাসার মানুষের জন্যে অনেক কষ্ট অনুভব করবি।কিন্তু তাকে ছুঁয়ে দেখতে পারবি না।তোর মতো বেয়াদবকে ভালোবাসবে কে,এটাই চিন্তার বিষয়।বড় বোনের সাথে তুই তোকারি করিস?
জিয়ার কথায় হাসলো ইয়াদ,
–“এইসব অভিশাপ দিয়ে লাভ নেই,আপু।আমার জীবনে এইসব কিছুই ঘটবে না।তুমি বরং অন্য অভিশাপ দাও আমাকে।আর শেষ কথা,তুমি জানোনা;আমার কথামত না চললে আমি বেয়াদবি করতে একটুও পিছপা হই না!”
–“ইয়াদু,তুই!”
–“কিছু বলো না,আপু।আমি জাস্ট অবাক,বাহিরের ছেলের জন্যে তোমার এই অবস্থা দেখে।”
ইয়াদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
–“ভাইয়া,কফি?”
–“হুম,চলো রুমে।”
ইয়াদ মারিয়ার সাথে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠছে।নিচ থেকে জিয়া দুইবার ডাকলো ইয়াদকে।কিন্তু, ইয়াদ সেদিকে কর্ণপাত করলো না।
–“ইয়াদ ভাইয়া,জিয়া আপু তোমায় অভিশাপ দিয়েছে বিধায় তোমার মন খারাপ?”
মারিয়ার কথায় ইয়াদ ঠোঁট প্রশস্ত করলো,
–“তোমার ভাই অভিশাপে বিশ্বাসী নয়। যা কপালে আছে তাই হবে।”
–“বাহ,ভাইয়া!তুমি কতো কনফিডেন্ট নিজেকে নিয়ে।চিন্তা করো না।দুআ আপুর মতো সুন্দর বউ পাও তুমি, আমি এই দোয়া করি।”
ইয়াদ চমকে উঠলো।তার ছোট বোন এইমাত্র কি বললো,সেটা মারিয়ার মাথায় হয়তো আসেনি।কিন্তু,ইয়াদের মাথা ভনভন করে উঠলো।ইয়াদ মনে মনে ভাবে,
–“মারিয়ার সব কথা,সেই দুআ মেয়েটাতেই কেনো শেষ হয়?”
পরক্ষণে মারিয়ার নানান কথার বেড়াজালে ইয়াদ খানিকক্ষণ পূর্বে মারিয়ার করা দোয়ার কথা ভুলেই বসলো।দুই ভাইবোন মিলে এখন রাজ্যর আলোচনা নিয়ে বসেছে।
চলবে…..
কপি করা বারণ।কেমন হয়েছে গল্প অবশ্যই জানাবেন।পেজের রিচ কম তাই হয়তো গল্প সবার কাছে যায় না।সাইলেন্ট রিডার্স আপনারা গল্প পড়ে রিয়েক্ট দিবেন এবং কমেন্ট করবেন।
বড় পর্ব দেওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু একদমই লিখতে পারছিলাম না।হাত কাঁপছিলো প্রচুর।রিভিশন করিনি।আমার কষ্টের প্রতিদান দিবেন অবশ্যই।অর্থাৎ লাইক,কমেন্ট করবেন।
নোট: অনেকেই বলবে,আপনি রেগুলার গল্প দিন লাইক কমেন্ট বাড়বে নিজে নিজে।
এখন কথা হচ্ছে,আমি যদি বেঁচে নাই থাকি,লিখবে কে?তাই লেখিকার কষ্ট বুঝুন।সে দেরী করে দিক বা গ্যাপ দিক তাকে সময় এবং সম্মান দুইটাই দিন।নিশ্চয় লেখিকা তার পাঠক পাঠিকাদের বেজায় ভালোবাসে।লেখিকার কষ্টকে একান্তই নিজের কষ্ট ভাববেন।