#আমার_চন্দ্রাবতী পর্ব ২৭
লেখিকা- সালসাবিল সারা
–“আমার ছেলে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চায়।”
সাজ্জাদ সাহেব বেশ শান্ত ভঙ্গিতে বললেন।
বসার ঘরে উপস্থিত ইদ্রিস জমিদার,আহেলী এবং বড় কাকী আসমান থেকে টপকালেন যেনো।সাজ্জাদ যখন এই বাড়িতে প্রবেশ করেছিল তখন বাড়ির দুই প্রধান মহিলা বেশ ঘাবড়ে ছিলেন।কারণ,সাজ্জাদের প্রকৃতি সম্পর্কে তারা যথেষ্ট অবগত।নিজের বোনের মেয়ের হলুদেও দেমাগী লোকটা আসেনি,গ্রাম বলে।সেই লোক অসময়ে এই বাড়িতে উপস্থিত হলে,যে কারোর মস্তিষ্ক চিন্তায় অচল হওয়া স্বাভাবিক। ইদ্রিস জমিদার আসতেই টুকটাক কুশল বিনিময় করে উল্লেখিত কথাটি বললেন সাজ্জাদ।তার চেহারায় এখন মুটামুটি হাসিখুশি ভাব।
ইদ্রিস জমিদার কিঞ্চিৎ অসন্তুষ্ট আবার খুশিও হলেন বটে।এতো বড় ঘর থেকে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব আসা নিতান্তই গর্বের বিষয়।
–“ইহা একখান ভালা প্রস্তাব।তবে,আমার মাইয়্যা এহনো পড়তাছে। মাইয়্যারে এতো জলদি বিয়া দেওয়ার কোনো চিন্তাভাবনা আমি করি নাই এহনও।”
ইদ্রিস দম ফেললেন কথা শেষে।আহেলী জমিদারের এহেন কথায় দুঃখ পেলেন।কোনো পাগল লোক না হলে এমন প্রস্তাব নাকচ করে?আফসোস,জমিদারকে কিছু বলার সাহসটুকু এই আহেলীর নেই।
–“মেয়েকে আমরা পড়াবো।মনে হয় না আমার ছেলে এতো বছর অপেক্ষা করবে!ছেলে আমাকে আসতে বলেছিলো আরো কিছু সময় পূর্বে।আমি প্রথমে নাকচ করেছিলাম,মেয়ে ছোট।সেই কি রাগ,আমার সাথে কথায় বলেনি আর।যে ছেলে দিনে একবার হলেও বাবার খোঁজ নেয়,সেই ছেলে ইন্ডিয়ায় গেলো তো গেলো বটে;সবাইকে ফোন দেয় সে বাবাকে দেয় না।তাই ছুটে এলাম ছেলের খুশির কাছে।”
সাজ্জাদের হাসির প্রকোপ বাড়লো।
মাঝের লঙ্কাকান্ড এড়িয়ে সুন্দর কাহিনী বললেন সাজ্জাদ।যদিও কিঞ্চিৎ গরমিল আছে কথায়,তবে বাকি কাহিনী একেবারে সত্যি।ইন্ডিয়া যাওয়ার পূর্বে ছেলে এবং বাবার দ্বন্দ্ব লেগেছিল।দুআর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথা ইয়াদ তার বাবা-মাকে জানালে; ইয়াদের বাবা দ্বিমত করে- দুআ গ্রামের মেয়ে,তাছাড়া বয়সে ছোট,পড়ালেখায় যোগ্যতা অর্জনে এখনো ঢের সময় প্রয়োজন এইসব ভেবেই।
তাতে ছেলের কি রাগ!গোছানো লাগেজ তুলে আছাড় দিয়ে সবটা এলোমেলো করলো, ল্যাম্পশেডের অস্তিত্ব রাখেনি,প্রচণ্ড রাগে আলমারির শক্ত দরজায় ঘুষি দিতেও ভুলেনি ছেলেটা।তবে,এরপর একবারও প্রস্তাব বা বিয়ের কথা উল্লেখ করেনি ছেলেটা।যেনো বিয়ের ব্যাপারের সবকিছুতে সে অন্তর্যামী।বাবা সাহায্যে না করলে, একাই সবটা করবে সে।আরেকটা বার বাবাকে অনুগ্রহ করেনি এই বিষয়ে।জরুরি কাগজপত্র নিয়ে নিজের যাবতীয় জিনিসের লাগেজ ব্যতীত ইয়াদ ইন্ডিয়ায় পাড়ি জমালো।
ছেলের এমন রাগেও সাজ্জাদ আঘাত পায়নি,যতটা আঘাত সে পেয়েছে ইয়াদের ফোন না করায়।তার ছেলেটা ভালো,বেশ ভালো,অত্যন্ত যত্নশীলও বটে।বাবার সাথে কথা না বললেও মায়ের কাছে ঠিকই তার খবর নিয়েছিলো।এইসবে পাষাণ বাবার হৃদয় গলে পানি হলো নিমিষেই।আজ পর্যন্ত ছেলের কোনো জিদ অপূর্ণ রাখেনি,তবে “দুআ” নামক জিদ কেনো অপূর্ণ রাখবে?তাই তো ছুটতে ছুটতে এইখানে এসে থামলো জনাব সাজ্জাদ।একমাত্র ছেলের প্রতি তার ভালোবাসা পরিমাপ করা অসম্ভব!
–“আপনের ছেলের প্রস্তাবটা আমাদের মাথার উর্ধ্বে।তবে,মাইয়্যা তো ছোডো।এহন বিয়া দিমু কেমনে?”
ইদ্রিস জমিদার বেশ ভেবে বললেন।যদিও তিনি মনের অন্তরালে ইয়াদ ছেলে কেমন এইসব ভেবে যাচ্ছেন।তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করেও লাভ নেই।কোনো বাবাই তো আর বলবেন না,তার ছেলের এমন অমন দোষ আছে!মেয়ে বিয়ে দেওয়াটা বিরাট দায়িত্ব।অনেক কিছু যাচাই করে বিয়ের কথা আগাতে হয়।
–“ঠিক আছে,আমার প্রস্তাব রেখে গেলাম আপনাদের কাছে।কিন্তু,আপনার মেয়েকে আমার ছেলের বউ হিসেবেই চায়।আমার ছেলে আপনার মেয়ের প্রতি মাতোয়ারা।আসি তবে,ফোন করে জানাবেন মতামত।উত্তর যেনো “হ্যাঁ” হয় এই দোয়া করি।বিয়ে ঠিক হয়ে থাকবে,আমরা নাহয় মেয়েকে পরে উঠিয়ে নিবো?”
সাজ্জাদ উঠে দাঁড়ালেন।তার ভেতরকার সত্তায় আজ প্রশান্তিতে পূর্ণ।
–“সে নাহয় দেখা যাবে।তবে ,ভাই সাহেব কিছু তো নিলেন না আপনি।নাস্তাটা পড়ে রইলো।”
আহেলীর চিন্তিত কণ্ঠ।
–“যেদিন আত্মীয়তা গ্রহণ করবেন সেদিন নাহয় খাবো?আমি বরং মাইশা,রামিসা আর আমার বোনকে দেখে আসি।পরেরবার আমাদের আত্মীয়তা যেনো আরো গভীর হয়।”
সাজ্জাদ সালাম বিনিময় শেষে ত্যাগ করলেন জমিদার বাড়ি।মনে মনে তার একটাই প্রার্থনা, তার ছেলের মনটা যেনো না ভাঙে।
.
দুআ রুমে পায়চারি করছে।সাজ্জাদ এসেছে শুনে মেয়েটা রুম থেকেই বেরুলো না।আর না তাকে কেউ সাক্ষাৎ করতে ডেকেছে।নিচ থেকে খারাপ কিছুর ইঙ্গিতও পায়নি সে।জেনিকে সেই যে দেখতে পাঠিয়েছে নিচের খবরাখবর,আর আসার নাম নেই মেয়েটার।এইদিকে দুআর অন্তর শঙ্কায় ভর্তি।হঠাৎ,এইভাবে ইয়াদের বাবা এইখানে কেনো এসেছে এই নিয়েই তার যতো মাথা ব্যথা।
অন্যদিকে ইয়াদের বাবার নাম শুনতেই ইয়াদ ফোন কে’টে দেওয়ার পর মানবটার আর কোনো খোঁজ নেই।নিজেকে দুর্বোধ মনে হচ্ছে মেয়েটার।মাত্রারিক্ত চাপে মেয়েটার অস্থিরতা বাড়ছে ক্রমশ।ইয়াদের ইন্ডিয়ান নাম্বারও চেষ্টা করেছে সে,ফলাফল শূন্য।তাকে অন্যান্য অ্যাপসে মেসেজ,কল দিয়েও লাভ হয়নি একরত্তি।মারিয়া বা অন্য কারো থেকে খোঁজ নিবে এই ব্যাপারে, এমনটাও তার মনে সায় দিচ্ছে না। মাইশাও নেই বাড়িতে।তাছাড়া এই ব্যাপারে মাইশা বা রামিসা কিছু জানে বলে দুআর মনে হয় না।অতঃপর মাথায় রাজ্যের দু’শ্চিন্তা নিয়ে শুয়ে পড়লো মেয়েটা নরম বিছানায়।
কিয়ৎ বাদেই দরজা ঠেলে রুমে আসলো জেনি।তার উজ্জ্বল চেহারার উজ্জ্বলতা আজ তীব্রভাবে লক্ষণীয়।জেনির উপস্থিতি টের পেয়ে দুআ শঙ্কিত মনে জেনিকে প্রশ্ন করলো,
–“আঙ্কেল কেনো এসেছিলো?”
জেনি লাজুক হাসলো দুআর প্রশ্নে।দুআ ভ্রু কুঁচকালো,
–“বলো না।”
–“প্রস্তাব দিয়া গেছে।ইয়াদ সাহেবের লাইগা আপনার প্রস্তাব।”
দুআ লাফিয়ে উঠলো তৎক্ষণাৎ।প্রস্তাব!তাও ইয়াদের বাবা স্বয়ং এসে দিয়েছেন?অবিশ্বাস্য ঠেকলো দুআর,
–“আমার বিশ্বাস হয়না।”
–“নিচে যাইয়া দেহেন।সক্কলে আলোচনা করতাছে।রিজোয়ান জমিদার আইলেই আলোচনা প্রখর হইবো।ইস,আমি কতো খুশি!”
জেনি ঘুরপাক খেলো রুমে।খুশিতে আত্মহারা হলো মেয়েটা।
তবে,দুআ খুশিও নয় অখুশিও নয়।তার মনের অনুভূতি সংমিশ্রণ।ইয়াদের বাবা এইখানে প্রস্তাব নিয়ে আসাটা কি ইয়াদের অজানা?নাহলে বাবার নাম শুনে তার বাচনভঙ্গি এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।তার বাবাই বা হঠাৎ কেনো প্রস্তাব নিয়ে হাজির হলেন,এটাও দুআর বোধগম্য হলো না।
দুআর স্পষ্ট মনে আছে,মারিয়ার রুমে তার প্রতি ইয়াদের বাবার দৃষ্টি কেমন অহংকারে ভরপুর ছিলো।অথচ,আজ শুনছে ইয়াদের বাবা বড্ড হাসিখুশি এবং বিয়ের জন্যে এক প্রকার চাপ দিয়ে গেলো।
দুআ চিন্তিত,বড্ড চিন্তিত।সামনের দিনে কি অপেক্ষা করছে,এই নিয়ে দুআর মস্তিষ্ক অচল।সাত পাঁচ না ভেবে মেয়েটা পুনরায় ফোন লাগলো ইয়াদের নাম্বারে। এইবারও ইংরেজিতে একই সুরে ভেসে এলো,
–“The number is not available at this moment.”
__________________________
মুখের উপর সানক্যাপের আস্তরণ দিয়ে স্ট্রেইট বসে রইলো ইয়াদ।তার পাশের সিটে অবস্থানরত ফারসিভ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইয়াদকে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত।এয়ারপোর্টে আসা অব্দি তার বন্ধু প্রফুল্ল মনে ছিলো।স্পষ্ট দেখেছে সে,তারা এয়ারপোর্টের ভেতরে চললেও ইয়াদ ফোনে কথা বলছিল খুশি মনে।তারা বুঝতে পেরেছিল,প্রেয়সীর সমেত এমন প্রেমালাপে ইয়াদ বড্ড পরিবর্তিত থাকে।বন্ধুর খুশিমুখ দেখে বুঝে নিলো সকলে সে দুআর সমেত আলাপ করছে। সেইক্ষণে নিজেরাই বন্ধুর প্রেমালাপের গতি বুঝে হেসেকুটে একাকার হয়েছিল।ইয়াদ ভেতরে এলেই তিন বন্ধু লক্ষ্য করলো, ইয়াদের মুখশ্রীতে তিমির ভাব। তার পাশাপাশি বন্ধুমহলের সকলের ভেতরেই ভর করলো তিমির রাজা।
ইয়াদের থমথমে পরিস্থিতিতে যেঁচে আর কথা বাড়ালো না একজন মানবও।কিন্তু,এখন ব্যাপারটায় পরিবর্তন হচ্ছে।ইয়াদ তাদের সাফ বলে দিলো,নিজ পরিবারকে দেশে ফেরার খবর জানিয়ে ফোন বন্ধ করতে।ফারসিভ স্বচক্ষে দেখেছে ইয়াদ নিজের মোবাইল থেকে সিম খুলে ফেলে দিয়েছিল ডাস্টবিনে।এতো রাগ কেনো জমলো বন্ধুর মনে, এই নিয়ে ফারসিভের দুর্ভাবনা।
আমতা আমতা করেই ফারসিভ ইয়াদকে প্রশ্ন করলো,
–“ঘুম নাকি?”
–“নাহ,বল।”
ইয়াদ অবস্থার পরিবর্তন না করেই বললো।
–“তোর আর দুআর মাঝে কোনো সমস্যা হলো?
ফোনে কথা শেষেই দেখি মেজাজ চটে আছে তোর।ঘটনা বল।”
ফারসিভের কথায় চিন্তার সুর।
–“বাবা ঝামেলা করবে আমাদের বিয়েতে।বুঝিনা বাবার সমস্যা কি।যায় হোক,বাবা দুআর বাসায় গেলো আজ।নিশ্চিত তুফান শুরু তাদের বাসায়।বাবা জানেনা,দুআর বাবার মান সম্মানের ভার কতো বেশি।আমি নিজেই জানি,দুআর বাবা বিয়েতে অমত জানাবে আমার বাবার কথা শুনে।যদিও ফোন করেছিলাম দুআকে জানাতে আমি বাংলাদেশে ফিরছি আজ,তবে বলতে পারলাম না।বাবার আগমনের কথা শুনেই ফোন কেটে দিলাম।মেয়েটা কাদতে কাদতে অজ্ঞান হয়েছে বোধ হয়।হঠাৎ ফিরে,মাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম;
তাই মাকে ফোন করা হয়নি।তবে,এখন সব বিষাক্ত লাগছে আমার।”
ধীরে ধীরে রাগ বাড়ছে ইয়াদের।মুখের উপর সানক্যাপ সরিয়ে নিলো সে।তার চক্ষুর সাদা অংশে রক্তিম আভা স্পষ্ট।
–“কি করবি এখন?”
–“সোজা চট্টগ্রাম ছুটবো।আগে ঢাকায় নামবো,যেহুতু টিকিটে ডেস্টিনেশন ঢাকা দেওয়া।একদিন হোটেলে স্টে করে দেন চট্টগ্রাম যাবো।হবু শ্বশুর আব্বার সাথে আমি কথা বলবো সরাসরি।”
ইয়াদের কঠোর জবাব।
–“রাজি না হলে উনি?দুআকে ভুলতে পারবি?”
ফারসিভ চিন্তিত।
ইয়াদ বাঁকা চোখে তাকালো ফারসিভের পানে।ফারসিভ সত্যিই বন্ধুর প্রেমের ব্যাপারে ভাবছে।
–“তোর কি মনে হয়,ওকে আমি ছাড়বো?ওর বাবা রাজি না হলেও আমি ওকে বিয়ে করবো।দুআ ছাড়া আমার জীবনে অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ।আমার চন্দ্র শুধুই আমার।ওকে আমার করবোই,বাই হুক অর বাই ক্রুক।”
ইয়ার বৃদ্ধা এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্যে নিজের কপালে ঘষলো।না চাইতেও দুআর সামনে তার কঠোর রাগের প্রয়োগ করতে হবে, কারণ পরিবারের অনুমতি ছাড়া মেয়েটা বিয়ে করবে বলে মনে হয় না ইয়াদের।বড্ড ভীতু তার প্রেয়সী।তবে,ইয়াদের ধারণা,একবার বিয়ে হউক,সব ঠিক হয়ে যাবে।সবাই মেনে নিবে।ইয়াদ সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলো,ইদ্রিস জমিদার বিয়েতে রাজি না হলে জোর করে দুআকে বিয়ের করবে সে।কোনো ভাবেই দুআর উপর রিস্ক নিতে চায় না ছেলেটা।
ফারসিভ বন্ধুর কাঁধে হাত চাপলো,বিনয়ের সুরে বললো,
–“চিন্তা করিস না।সব ঠিক হবে ইন শাহ্ আল্লাহ্।”
–“ইন শাহ্ আল্লাহ্।তোদের ফোন বন্ধ রাখ।আমার ব্যাপারে বাসার কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি শুধু,
‘আছে’।কই আছি, এতো কিছু বলার দরকার নেই।আমি বাংলাদেশে নামতেই অন্য সিম লাগিয়ে আমার ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করে নিবো।খেলোয়াড় হওয়া এক জ্বালা।লাপাত্তা থাকায় যায় না।কোচ আবার কি শুরু করে খোদা জানে।অন্তত এটা চাচ্ছি,কেউ না জানুক আমি কোথায় আছি।”
খেলোয়াড় লোকটা আবারও মুখের উপর ক্যাপ রেখে হেলান দিলো সিটে।
ফারসিভ সবটা বুঝে নিয়ে ইয়াদের সকল বাক্য চালান করলো পাশের সারিতে অবস্থানরত অন্য দুই বন্ধুকে।
ইয়াদের একান্ত ভাবনা,দুআকে বিয়ে করাটা বড্ড রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হতে চললো।আনমনে হাসলো ছেলেটা।বিয়ে যেভাবেই হোক।প্রেয়সীকে তো পাবে সে!এটাই সন্তুষ্টি,এটাই তার প্রাপ্তি।
.
সেদিন আর ইয়াদের কোনো খোঁজ পেলো না দুআ।দুশ্চিন্তায় রাতের খাবারটুকু খেলো না মেয়েটা।ঘড়ির কাঁটা এগারোটা ছুঁই ছুঁই।বাড়ির ভেতরকার অবস্থা স্বাভাবিক।বিয়ের প্রস্তাবের ব্যাপারটা সবাই ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করলেন।
লোকটাকে এই ব্যাপারে সবটা জানাতে চাইলেও,
ইয়াদের কোনো বার্তা দুআর নিকট নেই।চিন্তিত মেয়েটার চিন্তার পরিমাণ হুড়হুড় করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।আহেলী,ইদ্রিস জমিদার,বড় কাকী সকলেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন এই প্রস্তাবে।তারা মূলত অপেক্ষারত রিজোয়ানের।মাইশা হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় ছেলেটা ভার্সিটি থেকে সরাসরি মেয়েটার বাড়িতেই ছুটলো।পরিশ্রমী ছেলের কথা বিবেচনা করে ইদ্রিস কিছুই জানালো না তাকে।ঘরে ফিরুক ছেলেটা বিনা চিন্তায়,
এরপর না হয় তার বোনের বিয়ের ব্যাপারে আলোচনায় বসবে চাচা-ভাতিজা!
নিজের দুশ্চিন্তা সংবরণ করতে না পেরে দুআ অবিন্যস্ত হাতে ডালিয়ার নাম্বারে ফোন লাগালো।মারিয়ার সাথে কথা বলে এতটা শান্তি পাবেনা সে,যতটা শান্তি ইয়াদের মায়ের সাথে কথা বলে পাবে।ফোন লাগলেও অতি চিন্তায় মেয়েটার হাত কাঁপ’ছে।ফোন রিসিভ হতেই ডালিয়ার আদুরে জবাব ভেসে এলো,
–“মা,কেমন আছো?”
দুআ কুশল বিনিময় পর্ব শেষে হঠাৎই প্রশ্ন করলো,
–“আপনার ছেলে কোথায় আন্টি?উনাকে আমি ফোনে পাচ্ছি না।”
–“ওর মোবাইলে সমস্যা হয়েছে হয়তো।ঠিক হলেই ফোন করবে।চিন্তা করো না।”
ডালিয়া হেসে বললো।
–“সত্যি আন্টি?উনি ঠিক আছেন তো?”
দুআর গলা ধরে আসছে।
–“পাগল মেয়ে,কেঁদো না আবার।নিজের জন্যে প্রস্তুতি নাও।ইয়াদ ফিরলেই তোমাদের দু’জনের বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা চালু হবে।”
দুআ অবাক হলো।আজকেই তো,ইয়াদের বাবা এসে কথা বলে গেলো।তাহলে কি ডালিয়া এইসবের কিছুই জানেনা?যেহুতু ডালিয়ার অজানা তথ্যটি,তাই দুআও নিজের মুখ খুললো না।তার বুলিতে যদি তাদের পরিবারে আবারও সমস্যা হয়? নাহ,কিছু বললো না মেয়েটা আজকের দিনের ঘটনার কথা।তাদের পরিবারের ব্যাপার,তারাই সামলিয়ে নিক।দুআর আপাতত প্রয়োজন ইয়াদের খোঁজ নেওয়া।
তবে,ভদ্রতার খাতিরে মেয়েটা বললো,
–“আঙ্কেল কোথায়,আন্টি?উনাকে আমার সালাম দিবেন।”
–“তোমার আঙ্কেল আজ তার বোনকে দেখতে গিয়েছিল চট্টগ্রামে।এখন মিটিংয়ে ব্যস্ত।তোমার সালাম পৌঁছে যাবে মা,এতো চিন্তা করো না।ঠিক মতো খাও,নিজের খেয়াল রেখো।ইয়াদ সুযোগ হলেই ফোন করবে।”
ডালিয়ার সাথে পুনরায় কিছু কথা বলে ফোন রাখলো দুআ।
ইয়াদের মোবাইলে সমস্যার কারণে যোগাযোগ করছে না,ইহা যেনো ইহকালের বড় অবিশ্বাস্য উক্তি।লোকটার কি টাকার অভাব?মোবাইলে সমস্যা হলে এতক্ষণে তা ঠিক করে নেওয়াটা স্বাভাবিক বা অন্য মোবাইল কিনে যোগাযোগ করাটাই স্বাভাবিক।
দুআর অভ্যন্তরে জ্বলছে।প্রেমিক পুরুষের চিন্তায় অতিষ্ট মেয়েটা।তার বুলি শ্রবণের আশায় চাতক পাখির ন্যায় মোবাইলের পানে চেয়ে রইলো।স্মৃতিতে ভাসছে লোকটার সাথে কাটানো সকল মুহূর্ত।ব্যাকুল হচ্ছে প্রেয়সীর হৃদয়।আরো ঘণ্টা খানেক অতিবাহিত হলো।ওপাশ থেকে কোনো ফোন এলো না।চোখের কার্নিশের অশ্রু হাতের উল্টোপিঠে মুছলো মেয়েটা।লোকটার সামান্য কণ্ঠ শ্রবণে এলেই যেনো স্বস্তি পাবে সে।নানান খারাপ চিন্তায় মস্তিস্ক ভারী হচ্ছে দুআর।মনের বিরুদ্ধে বিরাট যুদ্ধ সেরে দুআ পুনরায় ফোন লাগালো ইয়াদের ইন্ডিয়ান নাম্বারে।এইবারও ভেসে এলো,
–“The number you have dialled is currently switched off.”
চলবে…..
কপি করা বারণ।কেমন হয়েছে গল্প অবশ্যই জানাবেন।
পূর্ববতী পর্বের কমেন্টের জয়ীদের নাম গ্রুপে পোস্ট করা আছে।জয়ীর সংখ্যা অনেক হওয়ায় এইখানে দেওয়া সম্ভব হয়নি।সত্যি সবার গঠনমূলক মন্তব্য দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়।