#চারুলতা পর্ব১
#শারমিন আঁচল নিপা
[১৮+ এলার্ট এবং যারা দুর্বলচিত্তের মানুষ তারা চাইলে এড়িয়ে যেতে পারেন]
নিজের মামার সাথেই বিয়ে এবং তার লালসার শিকার হই আমি। ঘৃণ্য একটা সম্পর্কের সাক্ষী আমি। নিজের অজান্তেই নিজেকে শেষ করে দিতে মন চায় কিন্তু কেন জানি না শেষ পর্যন্ত পেরে উঠতে পারি না। এ নরক যন্ত্রণা থেকে বেরও হতে পারি না। রঙিন এ দুনিয়ায় মানুষের কষ্টের পরিমাণ ফ্যাকাশে। পুরুষ জাতির উপর তীব্র ঘৃণার আস্তরণ জমা আমার এ বুকে। কালো জাদুর জন্য নিজের মেয়ের মতো ভাগ্নীর জীবনটা নষ্ট করতেও মামার বিবেকে বাঁধেনি। মামা চায় অধিক শক্তি আর সে শক্তি হাসিলের জন্যই একের পর এক ঘৃণ্য কাজের সাথে নিজেকে জড়াচ্ছে।
আমার মামা একজন শয়তান পূজারক। জন্মের পর থেকে মামার তান্ডব লীলা দেখে আসতেছি। আমার বয়স যখন সাত বছর আমার মা,বাবাকে আমার মামা কুপিয়ে হত্যা করে, তারপর বাবা আর মায়ের মাথাটা শয়তানের নামে উৎসর্গ করে দেয়। এরপর এ বাসায় একা হয়ে পড়ি আমি৷ সারাদিনের যন্ত্রণা বাবা,মাকে হারানোকে ঘিরেই। পড়াশোনাও করতে পারিনি। নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর আর স্কুলে যেতে দেয়নি মামা। বাবা,মায়ের মৃত্যুর একমাত্র সাক্ষী আমি বেঁচে আছি শুধু, তবে কখনও মুখ খোলার সাহস হয়নি। কারণ অন্য সাক্ষীদের মামা খুন করে দিয়েছে যাতে করে মামার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে না পারে। কিন্তু আমাকে কেন বাঁচিয়ে রেখেছিল তার হদিস আমার জানা ছিল না। সেদিন যদি আমাকে বাঁচিয়ে না রেখে মেরে ফেলত তাহলে হয়তো এ কষ্টের সম্মুখীন আমি হতাম না। আমাদের বাড়িটা লোকালয় থেকে বেশ দূরে। মামা মূলত শয়তান পূজা করার জন্যই আগের বাড়ি পরিত্যাগ করে লোকালয়ের খানিক অন্তরালে এ বাড়িটায় উঠেছে। এরপর থেকে মামার একেকটা তান্ডবলীলার সাক্ষী আমি। আমার মামা শুধু আমার বাবা,মাকে না বরং তার নিজের মাকেও খুন করতে দ্বিধাবোধ করেনি। আমার নানীকে আমার মামা মেরেছিল চরম করুণ উপায়ে। আমার নানীকে মামা প্রথমে গলা টিপে হত্যা করে তারপর আমার নানীর বুকের উপর উঠে লাফাতে থাকে। নানীর পাজর ভাঙার কটকট শব্দ আমার কানে এখনও ভেসে আসে আর যন্ত্রণা দেয়। আমি সেদিনও কিছু বলতে পারিনি। ছোট বয়সে এত করুণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েও যে আমি পাগল হইনি সেটাই হয়তো অনেক বড় পাওয়া।
আমার বয়স সবে পনেরো পার হয়েছে। নবম শ্রেণীতে উঠেছি সবে। এ অল্প বয়সে আমি সাক্ষী হয়ে আছি ভয়ংকর একটা জঘন্য সম্পর্ক আর অধ্যায়ের। সেদিন ছিল আমাবস্যা রাত। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে আছে সব। নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনেও যেন ভয় পাচ্ছিলাম বারবার। তবুও নিজেকে সামলে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। একটা সময় ঘুমও আসলো চোখে।
রাত তিনটে বাজে অনেক বিভৎস আওয়াজ আমার কানে আসতে লাগল। এ বাড়িতে এ আওয়াজগুলো নতুন না। বরং প্রতিরাতেই কোনো না কোনো আর্তনাদ আর পিশাচী আওয়াজ মামার পূজার রুম থেকে ধেয়ে আসে৷ তবে আজকের আওয়াজটা একদম ভিন্ন আর ভয়ংকরও বেশি। এ বাড়িতে সন্ধ্যার পর আলো জ্বালানো নিষেধ। তাই চারপাশ অন্ধকার হওয়া সত্ত্বেও আলো জ্বালানোর দুঃসাহস দেখাতে পারলাম না। শরীরের লোম কাটা দিয়ে উঠছিল বারবার। নিজের ভেতরে থাকা সমস্ত সাহস একীভূত করে আওয়াজ বরাবর এগুতে থাকি। এগুতে এগুতে কখনও দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছি আবার কখনও দরজার কপাটে। আওয়াজটা প্রখর হওয়ায় আমার ধাক্কার শব্দগুলো এতটা শুনা যাচ্ছে না। আমি অন্ধকারে হাতিয়ে হাতিয়ে আসতে আসতে এক পর্যায়ে বুঝতে পারলাম আমি আমার মামার পূজার রুমের সন্নিকটে চলে এসেছি।
পূজার রুমের পাশে এসে একদম জড়োসড়ো হয়ে এক কোণে বসে বিষয়টি অনুধাবন করার চেষ্টা করলাম। এমন সময় মামার পূজার রুম থেকে হালকা আলোর ফিনকি বাইরে এসে পড়ল। রুমের দরজাটা খোলা। লক্ষ্য করলাম এক নবজাতক শিশু কাঁদতে লাগল প্রখর কণ্ঠে। মামার সেদিকে কর্ণপাত নেই। নিজেকে সামলে দেখতে লাগলাম কী হচ্ছে। মামা শিশুটির শরীরে লাল সিঁদুর মেখে দিল। তারপর কালো কিসের যেন আস্তরণ দিয়ে দিল। বাচ্চাটার কান্না প্রখর হতে লাগল সে সাথে আমার শরীরটা আরও জোরে কাঁপতে লাগল। হার্টবিট দ্রূত গতিতে উঠানামা করছে আমার। এখান থেকে উঠে ঘরে যাব নাকি এখানেই বসে থাকব সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আমার দুটানা এখনও বিরাজমান, এর মধ্যেই শিশুটির গলাটা আলাদা হয়ে গেল চোখের সামনেই। চিৎকার দেওয়ার সাহস ও হচ্ছে না আমার। শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে অনবরত। মামা গলাটা আলাদা করেও ক্ষ্যান্ত হয়নি। এবার শিশুটির চোখ গুলো উপড়ে দিল। সে চোখ গুলো আর মাথাটা পিশাচ শয়তানের পদতলে উৎসর্গ করে কী যেন বিড়বিড় করতে লাগল। এমন সময় জোরে একটা কাঁপুনি অনুভব করলাম। মূর্তিটা জ্যান্ত হলো লক্ষ্য করলাম। এবার আমার গলা শুকিয়ে যেতে লাগল। মামা জোর গলায় বলল
– হে পিশাচী দেবী আমার আরও শক্তি চাই। জগতের এমন কোনো ঘৃণ্য কাজ বাকি নেই যে আমি করিনি। নিজের স্ত্রী,বোন,বোন জামাই কে খুন করেছি, নিজের মাকে খুন করার পর তার বুকে উঠে লাফিয়ে মায়ের পাজর ভেঙেছি। নিজের বাবাকে পুড়িয়ে হত্যা করে ছাইগুলো তোমার তরে উৎসর্গ করেছি। প্রতিদিন কোনো না কোনো নবজাতককে তোমার তরে বলি দিচ্ছি। আজকে নবজাতক বলির সংখ্যা একশত একটা পূর্ণ হয়েছে। এর পরও কী আমি অসীম শক্তির অধিকারী হব না?
আমার শরীর কাঁপতে লাগল শুধু। পিশাচী দেবী রাগান্বিত স্বরে বলল
– এরচেয়ে অনেক জঘন্য কাজ তোকে করতে হবে। এছাড়া অসীম শক্তি লাভ করা কখনই সম্ভব না। আমি এখনও তোর উপর তুষ্ট হইনি। আমাকে তুষ্ট করলেই শক্তি মিলবে অন্যথায় না।
মামা কিছুক্ষণ ভেবে বলল
– তাহলে দেবী, তুমি কী চাও আমি আমার ভাগ্নীকে হত্যা করি। কিন্তু তুমিই তো নিষেধ করেছিলে ওকে হত্যা করতে। নাহয় অন্যদের সাথে তাকেও হত্যা করে দিতাম।
পিশাচী দেবী হাসতে হাসতে বলল
– হত্যার থেকে জঘন্য কী হতে পারে বল?
মামা চুপ হয়ে অনেক ভেবে বলল
– তুমি আমাকে পথ দেখাও দেবী। আমাকে বলে দাও কী করতে হবে। সে কাজ যতই জঘন্য হোক না কেন আমি করতে পারব।
পিশাচী দেবী গম্ভীর গলায় বলল
– তোকে তোর ভীগ্নীকে বিয়ে করতে হবে। বিয়ের পর পরই ভাগ্নীর সাথে মিলিত হওয়া যাবে না। তোর ভাগ্নীকে বিয়ে করে তাকে নগ্ন অবস্থায় ঘরে আটকে রাখবি। হাত পা বেঁধে রাখবি। কিছু খেতে দিবি না। তারপর ঠিক পনেরো দিন পর যখন চন্দ্রকে সূর্য গ্রাস করবে ঠিক তখন তোর ভাগ্নীর সাথে তুই মিলিত হয়ে তার যোনিপথে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে আমার পদতলে উৎসর্গ করতে পারলেই তুই অসীম শক্তির অধিকারি হবি। অন্যথায় তোর উপর আমি তুষ্ট হব না। এ জঘন্য কাজের মাপ কাঠি তুই যখন পার করতে পারবি তখনই আমি তোর উপর তুষ্ট হব এছাড়া নয়। তুই কী পারবি আমার শর্তমতে কাজ করতে?
ভেবেছিলাম মামার পক্ষে এ কাজ করা কখনও সম্ভব হবে না। তবে মামা বেশ নির্দ্বিধায় বলল
– কিন্তু বিয়ে কীভাবে করব ভাগ্নীকে? এলাকার সবাই জানে চারুলতা আমার ভাগ্নী। এলাকায় জানাজানি হলে তো আমি বাধাগ্রস্ত হব এ কাজে।
মামার কথা শুনে পিশাচী দেবি হেসে বলল
– কাল তোর ভাগ্নীকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে আমার সামনে নিয়ে আসবি আমি শয়তানের মন্ত্র পাঠ করে তোদের বিয়ে করিয়ে দিব।
হুট করেই আবারও কাঁপুনি অনুভব করলাম। পিশাচী দেবি মূর্তি রূপ ধারণ করল পুনরায়। মামা মূর্তিটার পদতলে মাথাটা নুইয়ে দিল। আমার শরীর কাঁপতে লাগল। এখান থেকে কীভাবে পালিয়ে যাব সে চিন্তায় আমার মাথায় এখন কাজ করছে। নিজের জীবন নিয়ে কখনও চিন্তা ছিল না। তবে নিজের মামার কাছে ধর্ষিত হব বিষয়টা কোনো মেয়েই মানতে পারবে না। এ নরক যন্ত্রণা আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রাবাহিত হতে লাগল। শরীরে অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব করতে লাগলাম। পালিয়ে যাওয়ার আগেই জ্ঞান হারালাম।
পরদিন যখন জ্ঞান ফিরল আমি লক্ষ্য করলাম আমাকে দুধ দিয়ে পরিপূর্ণ করা বড় পাত্রে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তারপর মামা এসে কী যেন মন্ত্র পড়ে আমার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিল। সাথে সাথে আমি পুনরায় বেসামাল হয়ে গেলাম। জ্ঞান ছিল তবে চিন্তা শক্তি স্তবির হয়ে গিয়েছিল। আমাকে নেওয়া হলো পিশাচ দেবীর সামনে। মামা একের পর এক মন্ত্র পড়ে পিশাচ দেবীকে জীবিত করে তুলল। পিশাচ দেবী এসে জোরে জোরে কী যেন পড়ল আর সারা শরীরের ছিটিয়ে দিল দুর্গন্ধময় পানি। আর সাথে সাথে বলল
– বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে এবার পনেরো দিন একে উলঙ্গ করে ঘরে আটকে রাখ।
কথাটা বলেই পিশাচ দেবী মূর্তি হয়ে গেল। মামা আমাকে নগ্ন করে একটা অন্ধকার রুমে আটকে রাখল।
পরদিন আমার হুঁশ আসলো। আমার সারা শরীর নগ্ন হয়ে আছে। আমি আত্মহত্যা করতে চাইলেও করতে পারছি না কোনো ভাবে। সারা ঘরে আমার কাপড় খুঁজে পেলাম না। এ জায়গা থেকে যে করেই হোক আমাকে পালাতে হবে৷ আর পলানোর একমাত্র উপযুক্ত সময় হবে মামা যখন পূজা করে তখন। আমি পথ খুঁজতে লাগলাম কোনদিক দিয়ে পালাব। ভাগ্যক্রমে মামা আমাকে বেঁধে রাখতে হয়তো ভুলে গেছে। আমি অনেক খোঁজার পর লক্ষ্য করলাম বাথরুমের উপর দিকটা ভাঙা। চিন্তা করলাম এদিক দিয়েই আমি পালাব। তবে আমি নগ্ন হয়ে বাইরে যাবই বা কী করে। শত চিন্তা আমার মনে ঝেঁকে বসছে। হয়তো কোনো মায়াবলে আমি আটকে আছি তাই আত্মহত্যা করতে পারছি না। মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করলাম।
রাত তখন তিনটে। নর পিশাচ মামা এখন পূজার রুমে। আমি নিজেকে সামলে বাথরুমের উপর দিক দিয়ে ভাঙা কাচটা আরও ভেঙ্গে বাগানের দিকে লাফ দিলাম। এতে করে আমার সারা শরীরে কাঁচ লেগে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। নগ্ন শরীর নিয়ে সামনে এগুবো কীভাবে সে চিন্তায় মগ্ন আমি। এমন সময় কিছু একটার আওয়াজে পেলাম, চারুলতা ডাকটা আমার কানে আসতেই ভয়ে চুপসে সামনের দিকে তাকলাম ভাবতে লাগলাম শেষ রক্ষা হয়তো আর হবে না। পরক্ষণেই চারুলতা ডাকটা দ্বিতীয়বার কানে আসতেই আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ-
[বাস্তবের সাথে গল্পের কোনো মিল নেই। সুতরাং বাস্তবের সাথে গুলাবেন না। গল্পটা একটা ভৌতিক কাহিনিকে ঘিরে। বিজ্ঞানের যুগে এসব কাহিনির কোনো অস্তিত্ব নেই। পাঠকরা অনেক দিন যাবত একটা ভয়ংকর গল্প চাচ্ছিলেন তাই সে চাওয়া পূরণ করতে এ গল্প দেওয়া]