মেঘবতীকন্যা পর্ব ৫

0
1387

#মেঘবতীকন্যা পর্ব ৫
# সুমাইয়া আক্তার মিম

~~ফুলের তীব্র গন্ধ নাকে আসতেই মুখ কুঁচকে নিলো রূপসা।এতো পরিমাণ ফুলের সুবাস আসছে যে মনে হচ্ছে কোনো ফুল পরীর দেশে সে শুয়ে আছে।চোখ পিটপিট করে খোলে আবার চেপে বন্ধ করে নিলো।চোখ জোড়া যেনো কেউ সুপার গ্লো দিয়ে আটকিয়ে রেখেছে। বারবার খুলতে ব্যর্থ হচ্ছে।এইদিক থেকে সেদিক বারবার এমন করে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে যাতে করে ঘুম ছুটে যায়। প্রচন্ড বিরক্তি আর অস্বস্তির সাথে কোনোরকম মাথা চেপে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসলো। পিটপিট চোখে আবছা আলোয় দেখে চোখ থেকে জট করে সব ঘুম উধাও হয়ে গেল। বারবার চোখ বন্ধ করছে আর খুলছে, হাত দিয়ে কচলিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে পেলো এটা স্বপ্ন না সত্যি বাস্তব।।এই জেনো এক স্বপ্নপুরী,,,,,,,এক বিশাল বড় রুমের দামি বিছানায় সে অবস্থান করছে। যতোদূর চোখ যাচ্ছে রুমের কোনায় কোনায় জেনো আধুনিকতা আর প্রাচুর্যে ভরা। সম্পূর্ণ রুমে মৌ মৌ করছে হাজারো নাম না জানা ফুলের বাহার আর রঙ বেরঙের ক্যান্ডেল। সারা ফ্লোরে বিছিয়ে আছে লাভ সেইফ বেলুন। আবছা আলোয় সম্পূর্ণ রুম জেনো এক স্বপ্নের রাজ্যে মনে হচ্ছে আর রূপসা হচ্ছে সেই রাজ্যের রানী। বিছানার চারিদিকে শুধু ফুল আর ফুল সে হাজারো ফুলের মাঝে বসে আছে।গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে এসব দেখছে আর মুখে লেগে আছে তাঁর ভুবন ভোলানো হাসি। খুশিতে চট করে বিছানা থেকে নেমে সম্পূর্ণ রুমে ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখছে।সব জেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে হাত ছুয়ালে ভেনিস হয়ে যাবে। লেহেঙ্গাটা দুই হাত দিয়ে ধরে প্রান খুলে ঘুরতে লাগলো আর এসব অনুভব করতে লাগলো। কিছুক্ষণ আগে যে তাঁর বিয়ে হয়েছে কিংবা সে এই অচেনা জায়গায় কী করে এসেছে এসব কিছুই জেনো তাঁর মনে নেই।সে তো নিজের মতো করে এখনের সময়টা উপভোগ করছে। রূপসার ফুল ভীষণ রকমের পছন্দ সাথে তো বেলুন আরো বেশি পছন্দের তাই নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।হাত দিয়ে ছুয়ে দিচ্ছে সব কিছু পা দিয়ে এদিক সেদিক করে দিচ্ছে সব বেলুন। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। ছোট টেবিলের উপর নিজের পছন্দের কাঠগোলাপ আর বেলি ফুল দেখে দৌড়ে গিয়ে দুই হাতে তোলে নেয় নিজের প্রিয় ফুল গুলো।নাকের কাছে নিয়ে প্রান ভরে নিঃশ্বাস টেনে নিলো।এক অন্যরকম ভালো লাগা শরীর আর মন জুড়ে বয়ে যায়।।এক এক করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সম্পূর্ণ রুম দেখতে লাগল। সম্পূর্ণ রুমের জিনিস কাঁচের এবং খুব দামী খুবই সুন্দর সবকিছু। মৃদু হেসে সব কিছু ছুঁয়ে যাচ্ছে।সব কিছু ভালো লাগলেও রুমের বেশ কিছু জিনিস তাঁর ভালো লাগে নি। সম্পূর্ণ রুম কালো আর সাদা রঙে আবৃত। বিছানার চাদর থেকে শুরু করে রুমের লেম্প সব কিছু কালো সাদা।।কালো সাদা তাঁর পছন্দের রঙ হলেও রুমের রং কালো তাঁর ভালো লাগে না কেমন জানি ভুতুড়ে বাড়ি মনে হয়।গা ঝমঝম করে ভয়ে। এখানে সব কিছু রূপসার পছন্দের হলেও এই দেয়ালের রঙ টা পছন্দ হলো না। রুমের রং তো পিংক এবং উজ্জ্বল মানায় ঠিক তাঁর রুমের মতো। হঠাৎ নিজের রুমের কথা মনে পড়তে হতবাক হয়ে বড় বড় চোখ করে নিজের দিকে তাকালো। ‌আজ তো তাঁর বিয়ে হয়েছে গায়ে এখনো বিয়ের পোশাক রয়েছে।সে তো অজ্ঞান হয়ে এক অচেনা কারোর বুকে ঢলে পড়েছিল তারপর কী হলো?এক এক করে তাঁর সব কিছু মনে পড়ছে।রূপসা চারিদিকে তাকিয়ে ভয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। শুকনো ঢোক গিলে আশেপাশে তাকিয়ে গুটি সুটি মেরে বসে পড়লো।এতোক্ষনের সব ভালোলাগা উধাও হয়ে গিয়েছে আর মনে জেঁকে বসেছে এক রাশ ভয়।।জ্বর আক্রান্ত রোগীর মতো রূপ থরথর করে কাঁপতে লাগলো। বারবার গলা ভিজাতে লাগলো। মনে মনে আওরাতে লাগলো,,,

–আমার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে ওই কোল বালিশ ইংরেজ সাদা ভুতের সাথে। এখন আমি আমার বাসর ঘরে আছি। তারমানে,,,,,,আমি এখন দ্যা এরোগেন্ট ম্যান মিস্টার বারিশ খানের রুমে আছি। বাঘের খাঁচায় আটকা পড়ে গেছি। এখন কী হবে(কাঁদো কাঁদো গলায়)
রুমের চারিদিকে তাকিয়ে বুকটা ডিপডিপ করছে।দুই হাত দিয়ে লেহেঙ্গা টা উঁচু করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক হাঁটতে শুরু করল। হাঁটছে বললে ভুল হবে দৌড়াদৌড়ি করছে।চিন্তা,ভয়, আলাদা অনুভুতি, লজ্জা সব জেনো গুলিয়ে এক হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ সময়ের চিন্তা গুলো এখন সব এক সাথে জেঁকে বসেছে। দেয়ালের ঘড়িতে এগারোটা কাঁটা টিকটিক করছে যেকোনো সময় বারিশ চলে আসতে পারে।যার ভয় দীর্ঘ বছর মনে চেপে রেখেছে আজ এতো গুলো বছর পর পুনরায় সামনাসামনি হবে ভাবতে চোখ গুলো হাতের দিকে চলে গেলো পশম গুলো ভয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।। ভয়ে এদিক সেদিক পায়চারী করছে আর ইচ্ছে মতো হাত কচলাতে লাগলো।হাতের উপর সব টেনশন ঢেলে দিতে চাইছে।।এসি রুমে ও তার কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।। রুমের এদিকে সেদিক তাকিয়ে লুকানোর জায়গা খুঁজছে। লুকানোর মতো হাজারো জায়গা থাকলেও কতোক্ষণ আর লুকানো সম্ভব।ঠিক তো বারিশ এসে টেনে হেঁচড়ে তাঁর সামনে দাঁড় করাবে।।রূপসার হলো এক সমস্যা ভয় পেলে, অতিরিক্ত নার্ভাসনেস হয়ে পরলে কিংবা লজ্জা বোধ অনুভব করলে যে বিষয়টি নিয়ে ভয় কিংবা নার্ভাসনেস সেখান থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন মানে লুকাতে চেষ্টা করে যাতে তাঁর চোখের সামনে পরতে না হয়।পরলেও চোখে চোখ কখনো রাখবে না। তাতে জেনো ডাবল ভয় তাকে গ্ৰাস করবে। তাঁর মতে ভয়ংকর জিনিসের দিকে তাকালে তাকে আরো বেশি বেশি ভয় দেখাবে।এখনো একই ঘটনা তাঁর সাথে ঘটেছে যার কারণে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।। হঠাৎ দেওয়ালে নিজের ছোট বেলার বেশ অনেক গুলো ছবি দেখতে পেয়ে মিনিটে ভয় দূর হয়ে হা করে সামনে দেয়ালের নিজের ছবিগুলো দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।।ছবি গুলোর কাছে গিয়ে মুগ্ধ নয়নে সেগুলো দেখছে।বেশ কিছু ছবি হাতে পেন্টিং করা কিন্তু বোঝা অসম্ভব এগুলো পেন্টিং মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি ছোটবেলার রূপসা এখানে দাঁড়িয়ে আছে।রূপসা সবগুলো ছবি হাত দিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখছে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।সে বেশ বুঝতে পারছে এগুলো বারিশ আর্ট করেছে কারণ বারিশ বরাবরই খুব ভালো পেন্টিং করতে পারে অবশ্যই মোস্ট টেলেন্টেট বয় কিনা!রূপ সব গুলো ছবি হাত দিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখছে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ভয়ে খুব জোরেশোরে কেঁপে উঠল। আঁতকে পেছনের দিকে তাকিয়ে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে মাথাটা নিচু করে ফেললো। ইচ্ছে করছে দৌড়ে নিজের বাড়িতে চলে যেতে।।।

~~রূপসার হাসিমাখা একটি ছবি জরিয়ে ধরে চোখের পানি ফেলছেন মিসেস রোজা হায়দার।মেয়েটা বাড়ি ছেড়ে যেতেই জেনো এক বুক কষ্ট দিয়ে গেছেন সম্পূর্ণ বাড়ি জুড়ে।সকলে কেঁদে কেটে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছে। সকলের চোখের মনি টা বিয়ে হয়ে চলে গেছে ভাবতেই এক বুক কষ্ট এসে বিরাজ করছে। রোজা হায়দার মেয়ের ছবি দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে। মেয়েটাকে এতো তাড়াতাড়ি বিদায় দিতে হবে ভাবতে পারেনি। মনে হচ্ছে ওই দিনিতো মেয়েটি তাঁর কোল জুড়ে এক বুক সুখ নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছি। এতো তাড়াতাড়ি সময় গুলো পেরিয়ে গেলেও ভাবতে পারছেন না তিনি।সেদিনতো ছোট্ট কিশোরী মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে ছিল তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারপর কতো তারাতাড়ি বড় হয়ে গেল আর তাকেও নিজ ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হলো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার। সবকিছু জেনো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে রোজা হায়দারের কাছে।মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বিদায় দেওয়া সকল বাবা মায়ের কাছে অনেক কষ্টের।। এখন মনে হচ্ছে মেয়েটার উপর ভীষণ অন্যায় করে ফেলেছেন। আরেকটু সময় দেওয়ার প্রয়োজন ছিল তাদের। তিনি চাইলে চেষ্টা করে দেখতে পারতেন বারিশকে বলে। কিন্তু তিনি তা করেননি! এখন রূপসার মনের অবস্থা ঠিক কী চলছে সেটা ভেবে তিনি পুনরায় কেঁদে উঠলেন।পেছন থেকে অমিত হায়দার স্ত্রী কাঁধে হাত রাখতে তাঁর দিকে তাকিয়ে পুনরায় কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন রোজা হায়দার।অমিত হায়দার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে স্ত্রীর পাশে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে মেয়ের ছবিটি নিজের কাছে নিয়ে মেয়ের হাঁসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেন,,

–দেখলে তো রোজ আমাদের ছোট আম্মিটা কতো বড় হয়ে গিয়েছে। আজকে তাঁর বিয়ে ছিল!কী সুন্দর লাগছিল আমার পুতুল মা’টাকে। মৃদু হেসে।

–বিয়েটা কিছু দিন পরে হলেও হতো তাইনা।রূপ এতো জলদি এসব মেনে নিতে পারবে তো? প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন স্বামীর দিকে।
অমিত হায়দার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন,,,

–চাইলে তো আর মেয়েকে নিজের কাছে রেখে দিতে পারিনা বলো!মেয়েটা তো শুধু আমাদের আমানত ছিল দীর্ঘ দিন আগে তো মেয়েটার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।সে শুধু বারিশের রেখে যাওয়া আমাদের আমানত।।

–হুম!!!বারিশকে বললে সে ঠিক আরো কিছু দিন সময় দিতো রূপকে। কিন্তু যাইহোক অনেক তো সময় দিয়েছে আর রূপ তো ছোট থেকে নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরু করেছে। কখনো ওদের সামনাসামনি দেখা হয়নি তাই এখন একটু মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে দেখো ধীরে ধীরে আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়ে যাবে ‌।।

–হুম।আমার আম্মিটা বুঝতে পারবে তাঁর আব্বি আম্মি তাঁর ভালোর জন্য সব কিছু করেছো। নিশ্চয়ই রেগে আছে আমার মা টা।মলিন হেসে।

— ভীষণ ভালোবাসে রূপসাকে বারিশ। একদম রূপসা বলতে পাগল। সেই ছোটবেলা থেকে ছেলেটা এতো ভালোবাসে।কিন্তু রূপসা তো এখনো অনেক অবুঝ।মেয়েটা বড় হয়েছে কিন্তু একদম বুদ্ধি হয়নি।না জানি কী কান্ড ঘটায়।সব আপনার আর বাড়ির সবার অস্কার পেয়ে এতোটা অধঃপতন হয়েছে।
কথা গুলো বলে রেগে রি রি করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন রোজা হায়দার। সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন অমিত হায়দার।
লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।মেয়েটা খুব আদরের তাঁর তাই তো ছোট বেলা থেকে কখনো কোনো আঁচ লাগতে দেইনি। কখনো মেয়েকে বকলে রোজা হয়দারকে বকেন সকলে মিলে। তাইতো মেয়েটার এখনো বাচ্চা সুলভ টা যায়নি।।এই মেয়েকে ভাগে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে বারিশের।।।

~~দরজার সাথে হেলান দিয়ে কাঁধ বাঁকা করে রূপসার দিকে তাকিয়ে আছে বারিশ। মুখে তাঁর চিরচেনা বাঁকা হাঁসি।। বারবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্কেন করছে রূপসার।রূপসার ভিতু মুখটা জেনো তাঁর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।রূপসাকে তখন জ্ঞান হারাতে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যায় সে। ঝাপটে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেন। সে অস্থির হয়ে রূপসাকে ডাকতে লাগল। কোনো সারা শব্দ না পেয়ে ভীষণ ভাবে ঘাবড়ে যায়।উন্মদের মতো আচার শুরু করে দিলো যা দেখে রিতিমত সকলে ঘাবড়ে যায়।কেউ তাকে শান্ত করতে পারছিল না। পরিশেষে রূপসার হাল্কা জ্ঞান ফিরতে সে নড়েচড়ে উঠলে তারপর কিছুটা স্বাভাবিক হয় বারিশ।একটুর জন্য মনে হয়েছে এখনি শ্বাস রোধ হয়ে মারা যাবে।বারিশকে স্বাভাবিক হতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন সকলে।একটুর জন্য এই ছেলে লংকাকান্ড বাদিয়ে দিয়েছিল।রূপসার কিছু হলে আগে পিছে কিছু ভাববে না।সব শেষ করে দিবে। তারপর কোনো দিকে না তাকিয়ে যত্ন সহকারে রূপকে কোলে তুলে নিয়ে গড়িতে বসিয়ে তার পাশে বসে জাপটে জরিয়ে ধরলো বুকের সাথে। কপালে চুমু খেয়ে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ড্রাইভারকে গাড়ি সার্ট করতে বলে।

‘বাঁকা হেসে এক পা এক পা করে রূপসার দিকে এগিয়ে আসতে ভয়ে কপাল কুঁচকে আসে রূপের।কাপাকাপির পরিমাণ আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। ভয়ে জমে গিয়েছে যার কারনে নরতেও পারছে না। বারিশ একদম তার কাছাকাছি চলে এসেছে বুঝতে পেরে হাত মুখ শক্ত করে চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নিলো। হঠাৎ গালে ঠান্ডা স্পর্শ পেতে খানিকটা কেপে উঠলো সে।বারিশ নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাঁর বাবুই পাখির দিকে। ঠিক আজকে কতোটা দিন পর এতোটা কাছ থেকে দেখছে।এই একটু ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য তো রাতের পর রাত ঝটপট করছে। মাঝেমাঝে না থাকতে পেরে ছুটে এসেছে সকলের অগোচরে।একটু দূর থেকে দেখে চোখের ক্লান্তি দূর করেছে।ছোঁয়ে দেওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে মাঝে মাঝে রূপের অজান্তে ছুঁয়েও দিয়েছে। শুধুমাত্র রূপসার জন্য তাকে নিজের উপর কন্ট্রোল রাখতে হয়েছে যাতে তাঁর সামান্য ভুল তাঁর জানের কষ্টের কারণ না হয়।। আজকে এতো দিনের এই তীব্র নেশাটা হাজার গুণ বেশি হয়ে গ্ৰাস করবে রূপকে।আর কোনো বাধা মানবে না বারিশ।রূপকে পরিচিত করে দিবে তাঁর তীব্র ভয়ানক নেশার সাথে যা একটু একটু নিস্তেজ করবে তাঁর মেঘবতীকে। খুব ভালোবাসে তাঁর মেঘবতীকে। দীর্ঘ দিনে যেই প্রণয়ে তাকে ভুগতে হয়েছে আজকে থেকে তাঁর পিচ্চি বাবুই পাখিকেও ভুগতে হবে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার। হঠাৎ রূপসাকে নিজের বুকে ঢলে পড়তে দেখে সাথে সাথে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ পুনরায় রূপকে জ্ঞান হারাতে দেখে বারিশ আঁতকে উঠে। শক্ত করে জড়িয়ে গালে হাত রেখে বুঝতে পারলো মেয়েটা তাকে দেখে ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। ভীষণ রাগ হলো তাঁর দাঁত খিচে রাগ দাবানোর চেষ্টা করলো।পরক্ষনে মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো।রূপসাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানা সুইয়ে দিয়ে তাঁর উপর হালকা ভর দিয়ে সুয়ে পরলো। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত রূপের দিকে।হাজারো মায়া দিয়ে তৈরি এই মুখটি যা দেখে সারাজীবন পার করে দিতে পারবে বারিশ। তাঁর নেশা তাঁর এতো নিকটে ভাবতে মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে। ঠোঁট কামড়ে বাঁকা হেসে রূপসার সারা মুখে,থুতুনিতে,গলায় আঙ্গুল দিয়ে স্লাইট করতে করতে বলে,,,

–আজকে তো জ্ঞান হারিয়ে আমাদের বাসরের বারোটা বাজিয়েছো মেরি জান। তাঁর জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। তুমি আটকা পড়েছো জান পাখি এই বারিশ খানের খাঁচায়।এর থেকে তোমার মুক্তি নেই। আগামীকাল সকাল থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু।কংগ্ৰেস মিসেস রূপসা বারিশ খান এন্ড ওয়েল কাম মাই লাইফ।যেই নেশায় আমাকে মেরেছো তা দিগুন হয়ে তোমাকে মেটাতে হবে মেরি জান। তোমার মিস্টার এরোগেন্ট ম্যান ইজ কাম ব্যাক। তুমি আগেও আমার গোলক ধাঁধা থেকে বের হতে পারোনি আর এখন তোমার নামের সম্পূর্ণ আজাদিটাও আমি বন্দি করে দিয়েছি।তোমার সম্পূর্ণ রুহ আমার নামে চাই,তোমার শ্বাস প্রশ্বাসে আমি নিজের নাম চাই। তোমার সম্পূর্ণ টা শুধু আমার। শুধু মাত্র আমার। ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে গভীর ভাবে দেখতে লাগল তাঁর মেঘবতীকে।

‘রাত গভীর হচ্ছে সাথে এক বিষাক্ত প্রেমিকের ভালোবাসাটাও গভীর হচ্ছে। নেশা বড্ড ভয়ানক জীনিস সেটা যদি হয় ভালোবাসা নামক গভীর নেশা তাহলে মাত্রা ছাড়িয়ে যায় সব কিছু থেকে।দিনকে দিন পাগলামোতে পরিনতি হতে থাকে।।
ভালোবাসাতে পাগলামী না থাকলে বড্ড বেমানান মনে হয়।।।।।

চলবে,,,,❣️

[লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম✵]

(সকলের গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি ধন্যবাদ সবাইকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here