#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ১২
#সুমাইয়া আক্তার মিম
বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে গটগট পায়ে নিজের রুমে চলে যায় বারিশ।বেশ অস্থির হয়ে আছে তাঁর রূপ জানকে দেখার জন্য। ভীষণ দেরি হয়ে গিয়েছে আজকে। একটি খুব জরুরি মিটিং ছিল যার কারণে ফিরতে অনেক বেশি সময় লেগে গিয়েছে। দুয়েক বার শুধু বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে, ল্যাপটপ স্কিনে রূপকে দেখেছিলো নিজেদের রুমে মন খারাপ করে একা একা বসে আছে। নিশ্চয়ই বেশ বিরক্ত হচ্ছে সে!বারিশ জ্যাকেটটি খুলে বিছানার উপর রেখে আশেপাশে রূপকে খুঁজতে লাগল। রুমের কোথাও রূপকে দেখতে না পেয়ে নিমিষেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো। সারা রুমে,রূপটফ,ওয়াশরুমে কোথাও রূপকে না দেখতে পেয়ে মেজাজ বিগড়ে যায় তাঁর। মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ ভ্রু তে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে বড় বড় পা ফেলে রিনির রুমের দিকে পা বাড়ালো।
.
হালকা চাপানো দরজাটাকে ঠেলে রিনির রুমে প্রবেশ করতেই ভ্রু কুঁচকে চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে আসে। সম্পূর্ণ রুমের নাজেহাল অবস্থা।কোনো জিনিসপত্র জায়াগা মত নেই বরং এলোমেলো ভাবে এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
বেড সিট,কুশন,পুতুল সহ বিভিন্ন জিনিস এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। দেখে বুঝা যাচ্ছে রুমের ভিতরে বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। চোখ মুখ কুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো বারিশ।ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে বিছানার দিকে তাকাতেই নিমেষেই সকল ক্ষিপ্ততা,ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে চোখমুখে ফুটে উঠলো একরাশ ভালো লাগা মুগ্ধতা।মন্ত্রমুগ্ধ দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে রইলো বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা ঘুমন্ত সাদা পরীটার দিকে। মুখে মৃদু হাসি রেখে ফুটিয়ে আনমনে ধিরে ধিরে বিছানার দিকে পা বাড়ালো। হঠাৎ পায়ে কিছু বিঁধতে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখলো সম্পূর্ণ ফ্লোরে চিপস আর চিপসের প্যাকেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।বারিশ এইবার প্রচন্ড বিরক্ত, তাঁর বুঝতে বাকি নেই এগুলো সব রূপের কার্যক্রম।
ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রূপের দিকে। খুব আবেদনময়ী লাগছে তাঁর ঘুমন্ত পরীকে। আলতো হাতে কপালের চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে কপালে আলতো চুমু খেয়ে এক হাতের উপর ভর দিয়ে তাকিয়ে রইলো।রূপ বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে ঘুমিয়ে আছে মুখে এখনো চিপসের গুঁড়ো লেগে রয়েছে।বারিশ হালকা হেসে আলতো হাতে পরিষ্কার করে দিলো, রূপের পা জড়িয়ে রিনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।এখন ঘড়িতে —৬:০০—মিনিট বাজছে। সন্ধ্যায় এই অবেলায় ঘুমানোর কারনে বেশ বকা খেতে হতো এখন রিনিকে।রিনির হাত থেকে রূপের পা ছাড়িয়ে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে রূপকে কোলে তুলে নিয়ে নিজেদের রুমের দিকে পা বাড়ালো বারিশ।
.
ঘুম থেকে উঠে নিজেকে নিজেদের রুমে দেখে বেশ অবাক হলো রূপ।মাথা চুলকিয়ে মনে করতে লাগলো,সে তো রিনির রুমে ছিল। একসাথে দুজন বেশ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো।আড্ডা বললে ভুল হবে,বারিশ বাড়িতে নেই সেই খুশিতে পার্টি দিচ্ছিল।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো মনে নেই আর ঘুম ভাঙ্গতে এখন নিজেকে নিজেদের রুমে আবিষ্কার করলো। সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো বারিশ সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছে।রূপ সেদিক ভ্রু কুঁচকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তাঁর মানে জানাবের এতোক্ষণে ইমপ্যটেন্ট কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দেখো বাড়ি ফিরতেই আবার কাজ নিয়ে বসে পড়েছেন। একদম ডেশিং লুক নিয়ে একমনে ল্যাপটপের স্কিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করছে, আশেপাশে যে বউ আছেন সেই খেয়াল কী আছে! বিরক্ত হয়ে নাক ফুলালো রূপ।বিরবির করে বলতে লাগলো,
‘কানা পন্ডিত একটা’।
ছোট বেলা থেকে বারিশ পড়া কিংবা ল্যাপটপে কাজ করার সময় চোখে গ্লাস ব্যবহার করতো।চোখে কাঁচের ফ্রেম ব্যবহার করলে বেশ সুন্দর লাগে তাকে। কিন্তু রূপের কাছে পন্ডিত পন্ডিত মনে হতো।তাঁর যথেষ্ট কারণ আছে এর মধ্যে বারিশ খুব ইন্টেলিজেন্ট ছেলে তাই রূপ তাকে একবার ব্যঙ্গ করে কানা পন্ডিত বলেছিল।ব্যস্ হয়েছিল,বারিশ রূপের দুই হাতে নিজের দাঁত বসিয়ে দিয়েছিল। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। এখনো বারিশ চোখে কাঁচের ফ্রেম লাগিয়েছে দেখতে বরাবরই মতো চমৎকার লাগছে কিন্তু ছোট বেলার কথা মনে পড়তে মুখটা নিমেষেই ছোট হয়ে গিয়েছে রূপের।
‘এমন করে লুকিয়ে না তাকিয়ে সোজাসুজি তাকাতেই পারো।কজ আই এ্যম ইউর হাসবেন্ড। আমাকে সব ভাবে দেখার রাইট তোমার রয়েছে।’
ল্যাপটপ স্কিনে চোখ রেখে শান্ত গলায় বলতে লাগলো।বারিশের কথা শুনে রূপ কিছুটা কেঁপে উঠলো। আবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বারিশের দিকে।সে কি করে জানলো যে রূপ তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে তো তাঁর দিকে তাকাইনি।বারিশ পুনরায় কাজ করতে করতে বললো,
‘এতো ভেবে কাজ নেই। তোমার ছোট মাথায় কিছুই ঢুকবে না।এখানে এসো।’
‘আপনি কি করে বুঝলেন আমি কিছু ভাবছি’।
অবাক হয়ে।
বারিশ মৃদু হেসে রূপের দিকে চোখ রেখে,
‘তোমার সম্পূর্ণ তুমিটার উপর পিএইচডি করা হয়ে গিয়েছে। আমি যতোটা তোমাকে জানি ততটুকু তোমার নিজেরও জানা নেই।’অদ্ভুত হেসে
‘হ্যা’।
অবাক হয়ে বারিশের দিকে তাকিয়ে রইল।বারিশ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে রূপের কাছে এসে তাকে কোলে উঠিয়ে ধপ করে সোফায় গিয়ে বসে পড়লো।
‘কিকি…কি করছেন। ছাড়ুন’।
ছটফটানি করতে করতে বললো রূপ।বারিশ চুলে মুখ গুজে কিছুটা ধমকে বললো,
‘স্টপ রূপজান, একদম লাফালাফি করবে না তাহলে খারাপ হবে। চুপচাপ বসে থাকো।’
রূপ আর লাফালাফি না করে চুপচাপ বসে রইল।বেশ কিছুক্ষণ কোনো কথা না বলে বসে থাকতে থাকতে রূপ বিরক্ত। কিছু বলতে পারছে না উঠতেও পারছে না।বারিশ এক মনে তাঁর চুলে মুখ গুজে রয়েছে।রূপ কিছু বলার জন্য নড়েচড়ে উঠতে বারিশ শান্ত গলায় বললো,
‘উফ্ মেরি জান একটু রিল্যাক্স হতে দাও তো।রোমেন্স টাইমে একদম ডি্স্টাপ করবে না তাহলে পানিশমেন্ট পেতে হবে।আজকে সারাদিন ঠিক ভাবে তোমাকে পায়নি তাই এখন নো নড়াচড়া।’
‘সারাদিন কোথায় মাত্রই তো পাঁচ ঘণ্টা ‘।
অবাক হয়ে বললো রূপ। রূপের কথা শুনে বারিশ আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।নাক দিয়ে ঘসে শান্ত গলায় বললো,
‘তোমার থেকে পাঁচ সেকেন্ড দূরে থাকতে পারিনা সেখানে পাঁচ ঘন্টা অনেক।’
রূপকে পেছন থেকে সামনে ঘুরিয়ে কোমড় আলতো চাপ দিয়ে শক্ত গলায় বললো,
‘আমি না থাকাতেই খুব তো পার্টি হচ্ছিল।তাই না সুইটহার্ট।’
বাঁকা হেসে রূপের কোমড়ে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।রূপ ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় মেকি হেসে হাত নেড়ে বলতে লাগলো,
‘কই না তো আমি তো সারাদিন ঘুমিয়েছিলাম।টাস্ট মি।’
‘উহু জান মিথ্যা বলা আমি একদম পছন্দ করি না।আর তুমি কী ভুলে যাচ্ছো তোমার প্রতি সেকেন্ডের আপডেট আমার কাছে আছে।আমি দূরে থাকলেও তুমি আমার চোখের সামনেই থাকো ভুলে যাচ্ছো।’
শয়তানি হাসি দিয়ে রূপের হাতে টুপ করে কামড় বসিয়ে দিলো।
‘আহ্হ্। আমার লাগছে ছাড়ুন।আর দুষ্টমী করবো না। সত্যি বলছি।’
‘কী জেনো বলছিলে,,,রাক্ষস,জমরাজ, জলহস্তী, বিলেতি সাদা ভুত, কোলবালিশ আর কী কী আমি!
রেগে আরো শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।রূপ বেচারি এইবার কেঁদে দিবে।চোখ দুটো টলটল করছে পানিতে।বারিশ বাঁকা হেঁসে বলল,
‘এইভাবে ইনোসেন্ট ফেইস করে কিছু হবে না রূপ জান।এখন তোমাকে তো শাস্তি পেতে হবে।সো গো ফাস্ট।
কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।রূপ লাফালাফি করতে করতে বললো,
‘না না প্লীজ।আর জীবনে কোলবালিশ বলবো না। শুধু কোলবালিশ কেনো আর কোনো নামে বিকৃতি করবো না।প্লীজ এইবার মাফ করে দিন।
বারিশ রূপের কথার ডোন্ট কেয়ার করে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।রূপ এইবার হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো। চিৎকার করে বললো,
‘প্লীজ মি.কোলবালিস….’
বারিশ থেমে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।রূপ তোতলিয়ে বলতে লাগলো,
‘না মানে..মি.এংরি বার্ড প্লীজ এইবারের মত মাফ করে দিন আর কখনো আপনাকে পঁচা নামে ডাকব না।আজ থেকে আপনাকে আমি এংরি বার্ড বলে ডাকবো।ঠিক আছে। এইবার তো ছেড়ে দিন। কাঁদো কাঁদো গলায়।
বারিশ ধপ করে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজেও রূপের দুই হাত বিছানায় চেপে ধরে আধশোয়া হয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে রইল।বারিশের তাকানো দেখে রূপের গলা শুকিয়ে গিয়েছে। ভয়ে কিছু বলতে পারছে না চোখ মুখ খিচে তোতলিয়ে বলতে লাগলো,
‘আ…আহ্ আর কোনো নামে ডাকবো না।প্লীজ ছেড়ে দিন প্লীজজজ।কামড়াবেন না প্লীজ। অনুরোধ সুরে।
বারিশ বাঁকা হেসে রূপকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে টুপ করে বেশ জোরে গলায় কামড় বসিয়ে দিলো। কামড় দিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে রইল।রূপ ছটফট করতে লাগলো ব্যথায়। চোখ দিয়ে পানি চলে আসতে বারিশ ছেড়ে দিলো। ঠোঁট দিয়ে আলতো করে পানি শুষে নিলো। রূপকে নিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে নিজের বুকের উপর রূপকে শুইয়ে দিয়ে বললো,
‘পরবর্তী থেকে জেনো আজকের শাস্তি টা মনে থাকে। ঠিক আছে।’
‘হুম।’
মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো রূপ।বারিশ পুনরায় বলতে লাগলো,
‘আগামীকাল সকালে তৈরি থাকবে। তোমাকে রিনির ভার্সিটিতে এডমিশন হতে হবে’।
বারিশের কথা শুনে চট করে বুক থেকে মাথা তুলে বারিশের দিকে তাকালো রূপ। তাঁর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সে কথাটি তাঁর পছন্দ হয়নি।রূপ চোখ মুখ করুন করে কিছু বলতে নিলে ,
‘নো মোর ওয়ার্ডস। কোনো অজুহাত নয় রূপজান। তোমাকে পড়াশোনা কমপ্লিট করতে হবে ।সেটা তোমার ভালো না লাগলেও।গট ইট।’
রূপ আর ভয়ে কিছু বলেনি।দেখা যাবে কিছু বললে এই ছেলে যা সাংঘাতিক পুনরায় কামড়িয়ে দিবে। মনে মনে আবারও পড়াশোনার ঝামেলা পোহাতে হবে ভেবে মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গিয়েছে তাঁর। বেচারি বিড়াল ছানার মতো আশপাশ করছে। মনে মনে বারিশকে শ’খানেক বকা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। মনে মনে পড়াশোনা থেকে বাঁচার ফন্দি করতে লাগলো।সে জানে বারিশ যা বলে সেটাই শেষ কিন্তু তাঁর চেষ্টা করতে ক্ষতি কী।এক কথায় সে আর পড়াশোনা নামক ঝামেলা পোহাবে না ব্যাস্।।।
#চলবে,,,❣️
[লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম✵]