মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৮

0
1292

#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৮
#সুমাইয়া আক্তার মিম

~চারিদিকে আঁধারে নিস্তব্ধ রাত।ঘড়িতে রাত দশটার কাটা টিকটিক করছে। গাড়ির ভেতরে মুখ কালো করে বসে আছে রূপ।। মুখে তাঁর আঁধার ঘন কালো মেঘ। মনে হচ্ছে টুপ করে যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর নড়েচড়ে বসে কয়েকবার আড়চোখে বারিশকে দেখে নিলো । সে আপাতত দুজন গার্ডের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।। কিছুক্ষণ পর ওদের ফ্লাইট বাংলাদেশ টু আমেরিকা।এয়ারপোটের বাহিরে গাড়ি থামিয়ে কিছু বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন বারিশ। তাদের পেছনে আরো কয়েকটি গাড়ি এর মাঝে একটি গাড়িতে বারিশের আব্বি আম্মি আর রিনি ও ড্রাইবার আর অন্য গুলোতে গার্ড।রূপসা বুঝতে পারে না এরা কেনো এতো এতো গার্ড নিয়ে সবসময় ঘুরে।এই বড় লোকদের সবসময় বড় বড় বিষয়,,, আজিভ। কথাগুলো বিরবির করে মুখ কুঁচকে নিলো রূপ।।‌মুখটা একদম কাঁদো কাঁদো করে রেখেছে এই পর্যন্ত এক বক্স টিসু শেষ করে আরেক বক্স কোলো নিয়ে বসে আছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলেছে।চুখ মুখের একদম নাজেহাল অবস্থা। অতিরিক্ত কাঁদার জন্য ইচ্ছেমত জারি খেতে হয়েছে বারিশের কাছ থেকে। তবুও যখন চুপ যাচ্ছিল না উল্টো আরো ভ্যা ভ্যা করে চিৎকার করে কান্না করছিলো তখন বারিশ রেগে দিলো এক রাম ধমক যাতে করে রূপের কান্না অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গিয়েছে কিন্তু নাক টানা এখন অব্দি বন্ধ হয়নি। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।

‘অতিরিক্ত কাঁদার ফলে চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে গিয়েছে রূপের।।।নাকটা একদম টকটকে লাল হয়ে গিয়েছে যার কারনে বারিশ বাঁকা হেসে টুপ করে কামড় বসিয়ে দিয়েছিল।।রূপ বারবার কান্না করে বলছিল,,আমি যাবো না। আমি যাবো না। প্লিজ আমাকে আব্বি আম্মির কাছ থেকে এতো দূরে নিয়ে যাবেন। প্লীজ আমাকে রেখে আসুন।আরো কতো কি!
কতো কাঁদলো কিন্তু এই হার্টল্যাস পাষাণ হৃদয়ের মানুষের মনে বিন্দুমাত্র আছড় কাটলো না। উল্টো বিরক্ত হয়ে নিজের বাসায় রূপের মুখ বন্ধ করে দিলো। নির্লজ্জ কোলবালিশ।

–এতো নাক টানলে তো নাকটা গাজরের মতো লম্বা হয়ে যাবে রূপজান।

হঠাৎ বারিশের এমন উদ্ভট কথা শুনে তাঁর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে ছোট ছোট চোখ করে তাকালো রূপ।কালো রঙের জ্যাকেট পরিহিত সাদা শরীরে একদম চকলেট বয় লাগছে বারিশকে। তাঁর ঠোঁটের বাঁকা হাসিটা অনেক বেশি ভালো লাগে রূপের কাছে । সবসময় মুখে বাঁকা হাঁসি বিদ্যমান।এখনো কী সুন্দর গাড়ির দরজায় এক হাত রেখে আর অন্য হাত রূপের সিটের উপর রেখে তাঁর মুখ বরাবর ঝুঁকে আছে।।বারিশের মাত্রারিক্ত সৌন্দর্য বরাবরই ঘায়েল করে রূপকে। ইচ্ছে করে সারাদিন তাকিয়ে থাকতে। কিন্তু তাকিয়ে থাকার মতো দুঃসাহস মোটেও করা যাবে না।যদি বারিশ বুঝতে পারে রূপ তাঁর উপর মনে মনে ভীষণ রকম ক্রাশিত তাহলে রূপের অবস্থা নাজেহাল করে দিবে বারিশ যা একদম হতে দিতে পারে না রূপ।।।ক্ষানিক তাকিয়ে কোনো কথা না বলে মুখ কালো করে বারিশের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো রূপ।তা দেখে বারিশ রূপের থুতনি ধরে আবার নিজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।।রূপ চোখ ছোট করে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিকে তাকিয়ে বারিশ মাথা নিচু করে মৃদু হাসে। ভীষণ কিউট লাগছে এমন করে রূপকে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
বারিশ মৃদু হেসে রূপের জ্যাকেটের চেইনটা গলা পর্যন্ত লাগিয়ে দিয়ে গালে আলতো হাত রেখে বলতে লাগলো,,,

–এমন করে তাকিয়ে লাভ হবে না রূপজান। এখন আমি তোমার ইনোসেন্ট ফেইসে পটছি না।সো চলো আমাদের লেইট হয়ে যাচ্ছে।হাত ধরে।।

যাওয়ার কথা শুনে রূপের ঠোঁট’টা অটোমেটিক উল্টে আসলো। এখন তাঁর পরিবার ছেড়ে এতো দূরে যেতে হবে সেটার জন্য কান্না পাচ্ছে না এখন তাঁর কান্না পাচ্ছে প্লেনে উঠতে হবে সেটা ভেবে।রূপ উঁচু জায়গায় ভীষণ ভয় পায় । একপ্রকার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় উঁচু জায়গায় উঠলে।। তাই কখনো তাকে নিয়ে কেউ পাহাড়ি ভ্রমনে যায়নি। উঁচু জায়গায় ফোবিয়ার মতো কাজ করে তাঁর ক্ষেত্রে। কখনো এমন হলে কেঁদে কেটে সকলের করুন অবস্থা করে দেয় সকলের।তাই তাকে নিয়ে কখনো উচু জায়গায় উঠেনি কেউ।জীবনে কখনো প্লেনে উঠেনি রূপ। আজকেই প্রথম তাই তাঁর ভীষণ ভয় হচ্ছে।রূপের অবস্থা একদম হাত পা ছড়িয়ে কান্না করার টাইপের।সে কী করে উঠবে প্লেনে ভাবতেই শরীর ভয়ে মৃদু কেঁপে উঠছে ।।
হঠাৎ হাতের টান অনুভব হতে রূপ বারিশের দিকে তাকালো। কাঁদো কাঁদো গলায় মিনতি স্বরে বলতে লাগলো,,,

–আমি যাবো না প্লীজ। আমাকে আব্বি আম্মির কাছে রেখে আসুন না।

–নো মোর ওয়ার্ডস।ডোন্ট ছে আই ওয়োন্ট গো এট অল।(আর কোনো কথা না। একদম যাবো না বলবে না।)অনেক অপেক্ষা করিয়োছো আর কোনো দূরত্ব নয়।সো হারি আপ।হাত ধরে টেনে।

–উহু না আমি যাবো না।প্লীজ ছারুন আমায়।আমি বাড়ি যাবো।

–রূপ একই কথা কতো বার রিপিট করতে হবে। আরেকবার যাবো না বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।গট ইট।রাগী গলায়।।

–না মানে না। আমি যাবো না বলছি তো। আর আপনার থেকে খারাপ এই পৃথিবীতে আর হতেই পারে না।
কেঁদে দিয়ে।

‘বারিশ বেশ বিরক্ত রূপের কর্মকান্ডে।রূপকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। ঝটপট কাঁধে তুলে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। রূপ ছোটোছুটি করছে লাফালাফি করছে কিন্তু সেদিকে না তাকিয়ে নিজের মতো এগিয়ে যেতে লাগলো বারিশ।‌পেছন পেছন গার্ড আর বাকি সবাই আসছে।রূপকে কাঁধে তুলে নিয়ে যেতে দেখে রিনি সহ সকলে মিটমিট করে হাসতে লাগলো।।।

________________

~~রূপকে কাঁধে তুলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বারিশ আর রূপ এলোপাথাড়ি থাপ্পড় মেরে যাচ্ছে বারিশকে। ছোটাছুটি করছে কিন্তু বারিশের কোনো হেলদুল নেই সেই নিজের মতো হাঁটছে।।রূপের ভীষণ রাগ হচ্ছে।রাগে আর ভয়ের কারণে চিৎকার করে কান্না করছে আর বলছে,,,

–ছাড়ুন আমাকে মি.কোলবালিশ। ছাড়ুন বলছি।।। আপনি সত্যি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ।অনলি ওয়ান এক পিস শয়তান সাদা ভুত। ছাড়ুন,,,,,,,,ছাড়ুন না। আমাকে নামিয়ে দিন। ছাড়ুন বলছি।আমি যাবো না বলছি তো। ছাড়ুন না রাক্ষস। কেঁদে কেঁদে।

রূপের কোনো কথাই জেনো বারিশের কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।সেতো নিজের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। রূপের কান্না জেনো তাকে একটুও নতোযান করতে পারেনি। পাষাণ হৃদয়ের মানুষ একটা। কোনো হেলদুল নেই।রূপ এইবার মিনমিনে গলায় মিনতি স্বরে বলতে লাগলো,,,

—প্লীজ আমি যাবো না।।আমাকে নামিয়ে দিন না আমি প্লেনে চড়বো না। ।হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে করতে বললো।

বারিশ কোনো কথা কানে নিলো না।সোজা প্লেনে উঠে ধপ করে সিটে বসিয়ে দিলো। নিজের গাঁয়ের জ্যাকেটটা খোলে সিটের উপর রেখে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রূপের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে পুনরায় সিট থেকে উঠে দৌড় দিতে নিবে বারিশ পাশে বসে খপ করে ধরে নিলো।
লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। হাত দুটোকে নিজের এক হাতের মাঝে নিয়ে পিঠের দিকে মুড়িয়ে দিলো।অন্য হাত দিয়ে শক্ত করে কোমড় পেঁচিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।রূপের মুখটা নিজের মুখ বরাবর নিয়ে এসে রাগী গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,,,

–একদম ফাইজলামো করবে না রূপজান তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। হাত পা বেঁধে বসিয়ে রাখবো। একদম নড়াচড়া করবে না।

রূপ বারিশের দিকে তাকিয়ে করুন গলায় নিচু স্বরে বলতে লাগলো,

–আমার উঁচু জায়গায় ভীষণ ভয় করে।আমি চড়বো না প্লেনে প্লীজ।। আমার ভীষণ ভয় করছে।কান্না করতে করতে হেঁচকি উঠে গেছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।হাত পা অসম্ভব রকমের কাঁপছে।
বারিশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রূপের গালে আলতো হাত রেখে যত্ন সহকারে চোখের পানি মুছে দিলো। অদুরে গলায় ধীরে ধীরে বলতে লাগলো,,,

–ডোন্ট ওয়ারি রূপজান আমি আছি তো। কিছু হবে না টাস্ট মি।বারিশ খান থাকতে তাঁর পরিজানের কী কিছু হতে পারে? একদম ভয় পেবে না কিছু হবে না। ঠিক আছে।

রূপ বারিশের চোখের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।বারিশ মৃদু হেসে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো । নিজের বুকের সাথে খুব যত্ন করে রূপের মাথাটা নিজের এক হাত দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে আর অন্য হাতে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।বারিশ চোখ বন্ধ করে সফট ভয়সে ফিসফিস করে পুনরায় বলতে লাগলো,

–পরীজান জাস্ট ক্লোজ ইউর আইস এন্ড ফিল মাই হার্ট। বুকের সাথে গভীর ভাবে মিশিয়ে। দেখবে একদমই ভয় করবে না তোমার।

‘রূপ কোনো কথা না বলে বারিশের কথা অনুযায়ী চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো আর বারিশের হার্ট বিট শুনতে লাগলো।। খুব জোরে জোরে বিট করছে বারিশের হার্ট।এতো জোরে কেনো বিট করছে। মনে হচ্ছে হার্ট ছিঁড়ে বের হয়ে আসতে চাইছে। শুধু মাত্র কী রূপ তাঁর খুব নিকটে আছে বলে এতো জোরে বিট করছে?খুব ইচ্ছে করছিলো প্রশ্নটা করতে কিন্তু পরক্ষনেই ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখে দিয়ে আরেকটু গভীর ভাবে হার্ট বিট শুনতে লাগলো। ইশ্ কী মধুর সেই ধ্বনি ইচ্ছে করছে আরো গভীরে গিয়ে শুনতে।।

‘আর কোনো কিছু রূপের খেয়াল নেই তাঁর সম্পূর্ণ জুরে শুধু বারিশের জোরে জোরে বিট হওয়া হার্টের মন্ত্রমুগ্ধ মধুর ধ্বনি কানে আসছে।।এটা তো সেই মধুর ধ্বনি যেই ধ্বনি নিজের বিয়ের দিন অজ্ঞান হওয়ার আগ অব্দি কানে ভাসছিল ।সেই অচেনার বুকে শুনেছিল। হাজার আওয়াজের মাঝে স্থির ভাবে তাঁর কানে শুধু সেই ধ্বনিটা বারবার প্রতিফলিত হয়েছিল।কী অসাধারণ সেই ধ্বনি। এখন খুব ভালো লাগছে রূপের।সে নড়েচড়ে আরেকটু কাছে ঘেষে বারিশের হার্ট বিট শুনতে লাগলো।বারিশও নিজের পরীজানকে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো।সেও তাঁর পরীজানকে খুব কাছ থেকে ফিল করতে চায়। খুব কাছ থেকে।। হঠাৎ রূপের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। চোখে ঘুম পরীরা সব দল বেঁধে ভীর জমিয়েছে।আস্তে আস্তে সে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।ঘুমের মাঝেও বারিশের অদ্ভুত ধুকধুক শব্দ করা হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছে। এখন জেনো আরো ভালো ভাবে শুনতে পাচ্ছে।।। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।

নিজের বুকের মাঝে ভারী নিঃশ্বাস আঁচড় খাওয়ার অনুভব হতে সেদিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে বারিশ। ক্ষনিকের মাঝে একদম ঘুমে কাদা হয়ে গিয়েছে রূপ। কেমন বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে নাক ফুলিয়ে ঘুমাচ্ছে।বারিশ মৃদু হেসে নাকটা আলতো টেনে দিয়ে জড়িয়ে ধরে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল।। অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,,,,,

–আমার পিচ্চি রূপজান।।

#চলবে,,,❣️

[লেখিকা-সুমাইয়া আক্তার মীম✵]

(গল্পটা গতকাল সম্পূর্ণ লিখার পর কপি করতে গিয়ে রিমুভ হয়ে গিয়েছে তাই গতকাল গল্প পোস্ট করতে পারিনি।। পরবর্তীতে নতুন করে গল্প লিখতে হয়েছে তাই প্রথমের মতো এতোটা ভালো এবং গুছানো হয়নি। সকলে নেক্সট নাইস না লিখে গঠন মূলক মন্তব্য করবেন। আপনাদের সকলের গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি।রিচেক করা হয়নি ধন্যবাদ।।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here