মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৭

0
1319

#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৭
#সুমাইয়া আক্তার মিম

~~রুলস মুখস্থ করতে করতে এক প্রকার হাঁপিয়ে গিয়েছে রূপ।এতো রুলস সবগুলো মাথার এক হাত উপর দিয়ে গিয়েছে।তাঁর মাঝে বারিশ শাস্তি দিতে একদম ভুলেনি।। শাস্তি হিসেবে তাকে পঁচিশ বার জড়িয়ে ধরতে হবে আর পঁচিশ গালে চুমু খেতে হবে।এমন উদ্ভট শাস্তির কথা শুনে রূপসার ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে ছিঁড়ে ফেলতে। কিছু বলতে পারছেনা বারিশের ভয়ে। দেখা যাবে কিছু বলা মানে বাঘকে খেপিয়ে দিয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারা। ভয়ে কাঁচুমাচু করে না পেরে অনেক সাহস জুগিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

–প্লিজ অন্য শাস্তি দিন।আ,আমি পারবো না এটা। ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।

বারিশ রূপসার কথা শুনে বাঁকা হেসে বলল,

–নোপ মেরি জান। তোমাকে এই শাস্তিই পেতে হবে।এক মিনিট ওভার হলে শাস্তি বেড়ে দ্বিগুণ হবে মেরি জান।আর আমার কথার উপর কথা বলার দুঃসাহসে শাস্তি কিন্তু ডাবল হতে পারে কিন্তু আজকে তোমার জন্য নতুন তাই সেটা মাইনাস। বাঁকা হেসে।। এখন টাইম ওয়েস্ট না করে হারি আপ ।। হাত উঁচিয়ে।‌

আর না পেরে বাধ্য হয়ে গনে গনে পঁচিশ বার জড়িয়ে ধরেছে আর পঁচিশ বার গালে চুমুও খেয়েছে।কি সব আজগুবি কান্ড। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।এসব করতে গিয়ে একদম হাঁপিয়ে গিয়েছে রূপসা।চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে।‌ইচ্ছে করছে লজ্জায় কোথাও নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে।এতো লজ্জায় কখনো তাকে পড়তে হয়নি।এগুলো তো শুধু ট্রেইলার পিকচার আবি বি বাকি হে। তাঁর জীবনে এসব রোজ হবে বুঝতে একদম অসুবিধা হচ্ছে না রূপের।বারিশ নির্লজ্জ কিন্তু এইতো নির্লজ্জের সীমানা একদম অতিক্রম করে ফেলেছে।রাগে লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পর্যন্ত পারছে না।অন্য দিকে বারিশ সুখের সাগরে ভাসছে।প্রাপ্তি সত্যি অনেক মধুময় হয়।বারিশের মুখে তৃপ্তির হাসি। মৃদু হেসে রূপের মাথায় চুমু খেয়ে বলতে লাগলো,,

–গুড মেরি জান।আর এমন লজ্জা পেতে হবে না। লজ্জা পেলে তোমাকে স্ট্রবেরি মতো লাগে।ইউ নো না আই লাভ স্ট্রবেরি।।একদম কামড়ে কুমড়ে খেয়ে ফেলবো।শয়তানি হাসি দিয়ে।।

বারিশের কথা শুনে গোল গোল চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে রইল রূপ। চোখ মুখ কুঁচকে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,,,

–ছিইইইইইই!

রূপের মুখের অবস্থা দেখে বাঁকা হেসে রূপের কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,,

—ছিহ না মেরি জান জ্বি। এখন গালে চুমু খেয়েছি। পরবর্তীতে ঠোঁটে খাবো। মনে থাকে জেনো।বলে বাঁকা হেসে ইমপ্যটেন্ট কল এটেনন্ড করতে বারান্দায় চলে যায়।আর তাঁর যাওয়ার দিকে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রূপ।নাক মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে।একটু কান্না করতে পারলে ভালো লাগতো। এখন থেকে এই অসহ্য টর্চার সহ্য করতে হবে ভেবে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়।এই বারিশকে যদি সে গোল না খায়িয়েছে তাঁর নামও রূপসা হায়দার না থুরি রূপসা বারিশ খান নয়।।রূপসা নাক মুখ ফুলিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো,,,

–আমারও সুযোগ আসবে মি.কোলবালিস। আপনাকে যদি আমি কামড়িয়ে লাল না করেছি আমার নামও রূপসা নয়।ছোট বেলার সব কামড়ের সুদ নিবো।একদম কামড়িয়ে মেরে ফেলবো অসভ্য নির্লজ্জ সাদা ভুত।। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
আল্লাহ একটু সাহস আর অনেক গুলো বুদ্ধি দাও ওই রাগি এরোগেন্ট ম্যান থেকেও হাজার গুণ বেশি বুদ্ধিমান করে দাও যাতে করে একে আচ্ছোমতে শায়েস্তা করতে পারি। কাঁদো কাঁদো গলায়।।।।

~~খাবারের টেবিলে কাঁদো কাঁদো মুখ করে সকলের দিকে তাকিয়ে আছে রূপসা।সবাই কেমন রোবটের মতো বসে আছে।রূপসা বেশ বুঝতে পারছে এই বারিশ কোল বালিশের জন্য সবার এই অবস্থা। একদম কেউ নড়াচড়া করছে না নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে।রিনি বাঁকা চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলতে লাগলো, এখন থেকে তোমাকেও রোবটের মত খেতে হবে রূপ বেবি। এমন চুপচাপ করে কী করে থাকে সবাই।সে তো পটরপটর না করলে খেতেই পারে না।সে বাড়িতে সবসময় খাবার খাওয়ার সময় টিভিতে কার্টুন দেখতে দেখতে খাবে।দশ মিনিটের খাবার এক ঘন্টায় শেষ করবে। তাঁর জন্য আচ্ছা বকুনি খেতে হতো মায়ের কাছে। মায়ের বকুনির জন্য টিভি দেখে খেতে না পারলেও খাবার টেবিলে পটরপটর করতে করতে খাবে।সবাই নিরবতার সাথে খাবার খেলেও সে বেশিক্ষন কথা না বলে থাকতে পারে না।বাড়ির সব বাচ্চারা যেখানে মানে খাবার সময় কথা বলা নিষেধ।ইসলামে খাবারের সময় কথা বলতে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। সেখানে রূপসাকে বকাঝকা করলে কিছুক্ষণ চুপ থাকে পরবর্তীতে পুনরায় ভুলে যায়।। এখানে থাকলে সবচেয়ে বেশি রোজা হায়দার খুশি হতেন আর বলতেন আরোও কিছু দিন আগে বারিশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত ছিল তাহলে আরো আগে এই মেয়ে জঙ্গি থেকে মানুষে পরিণত হতো।কথা গুলো ভেবে মনে মনে বলে উঠলো রূপ,,,,,এক হিটলার থেকে রক্ষা পেয়ে আরেক হিটলারের হাতে পরেছি।।কথা গুলো ভাবতেই কান্না চলে আসলো তাঁর। মিথিলা খান হাঁসি মুখে এটা সেটা তাকে দিচ্ছে আর তাঁর সাথে কতো কি বলে যাচ্ছে কিন্তু কিছুটি রূপের কানে ঢুকছে না সেতো তাঁর কল্পনার জগতে ব্যস্ত। মিথিলা খান নিজের হাতে খাইয়ে দিতে নিলে বারিশ তাঁর দিকে খাবার নিয়ে রূপসাকে খাইয়ে দিতে লাগল। মিথিলা খান মৃদু হেসে নিজের চেয়ারে বসে খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।বারিশ শান্ত গলায় বলতে লাগলো,,

—এতো ভাবতে হবে না।ভাবার জন্য সারাজীবন পরে আছে।আর এখন থেকে তো শুধু তোমায় ভাবতেই হবে। রূপের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।

বারিশের শেষের কথার মানেটা বুঝতে সময় লাগলেও বেশ ভালো বুঝতে পারছে বারিশ কি মিন করেছে। বুঝতে পেরে গলাটা শুকিয়ে গেলো তাঁর।বারিশ এক চামচ খাবার তাঁর দিকে এগিয়ে দিতে রূপ মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,

–আ,,,আমি নিজে খেতে পারবো।।

বারিশ থমথমে গলায় বলে উঠলো,
–আমার কথার উপর কথা একদম পছন্দ নয় মেরি জান।আর এখন থেকে তুমি রোজ আমার হাতে খেতে হবে।গট ইট। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।রূপসা চট করে খাবার মুখে নিলো আর মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।
বারিশ পুনরায় বলতে লাগলো,,

–গুড রুলস গুলো ভালো করে মাথায় ডুকিয়ে নাও।আর তুমি যে নিজ হাতে খেতে পারো না সেটা আমি খুব ভালো করে জানি পিচ্ছি।।

বারিশের মুখে পিচ্চি শুনে এইবার রাগ সংবরণ করতে পারেনি রূপ।রাগি গলায় মিনমিন করে বলে উঠলো,,,

–আমি একদম পিচ্ছি না।বিশ প্লাস।হুহহ।

রূপসার কথা শুনে বারিশ বাঁকা হেসে বেঙ্গ করে বলতে লাগলো,,,

–বাবাহ এতো বড় হয়ে গিয়েছো কিন্তু নিজের হাতে এখনো খেতোও পারো না।আর কোনো কাজ ঠিক মতো করতে পারো না।

–আপনি কী আমাকে খোটা দিচ্ছেন!
বাচ্চাদের মতো মুখ করে।রাগে গাল দুটো লাল হয়ে গিয়েছে।

–উহু !!! এমন বাচ্চাদের মতো মুখ করবে না তাহলে কিন্তু টুপ করে খেয়ে ফেলবো। দুষ্ট হেসে।

বারিশের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলে ঝটপট খাওয়ায় মনোযোগ দিল।এই ছেলে সত্যি অনেক নির্লজ্জ। একদম নির্লজ্জেরও সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছে।।
বিরবির করে বলে উঠলো,,,

–বিলেতি নির্লজ্জ!!!!

—এখনো তো নির্লজ্জের কিছু করিনি মেরি জান। রুমে গেলে রোমান্স ক্লাস শুরু।।শায়তানি হাঁসি দিয়ে।।

বারিশের কথা শুনে রূপসা ভয়ে তরতর করে ঘামতে লাগলো। তারমানে আবার শুরু করবে।মনে মনে বলতে লাগলো,এই বারের মতো বেঁচে গেলো বিরবির করে কথা বলা তো দূরের কথা মনে মনেও আর কথা বলবো না জীবনে।।।

বারিশ পুনরায় বলে উঠলো,
–নিজ হাতে খেতে শিখোনি আবার আমাকে কামড়িয়ে খেয়ে ফেলার প্ল্যান করছিলে।বেড়ি নটি মেরি জান। বাঁকা হেসে।

বারিশ তাহলে এই কথাগুলোও শুনে ফেলেছে।হায় আল্লাহ এখন তাঁর কী হবে! ইচ্ছে করছে নিজের সমাধি নিজে করে ফেলতে।ফ্লোর খুরিয়ে এর ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে।সে কী বারিশকে কামড়িয়ে কুমড়িয়ে খেয়ে ফেলবে এখন বারিশই তাকে কামড়িয়ে কুমড়িয়ে খেয়ে ফেলবে।।।।রূপসার অবস্থা দেখে বারিশ বাঁকা হেসে পুনরায় খাইয়ে দেওয়াতে মনোযোগ দিলো।।

#চলবে,,,,❣️

[লেখিকা-সুমাইয়া আক্তার মিম✵]

১০৭৪ শব্দের পর্ব।।।
(নেক্সট নাইস লিখবেন না কেউ দয়া করে।।।আপনারা নেক্সট না বললেও আমি লিখা হলে নেক্সট পর্ব পোস্ট করবো ।।। একহাজার, দুই হাজার শব্দের গল্পে শুধু চার শব্দের নেক্সট নাইস সত্যি হতাশা জনক। সকলের গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি।ধন্যবাদ সবাইকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here