#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ২৭
#সুমাইয়া আক্তার মিম
_
ধূসর রাঙা বিশাল বাড়িটার সামনে দুটো কালো গাড়ি থামাতে ততখানি দুজন গার্ড দু’দিক থেকে টেনে বিশাল গেইটা খোলে দিলেন। গেইটের ভিতরে প্রবেশ করলো গাড়ি দুটো।প্রথম গাড়িটি থামতে গার্ড ভিতু চেহারা মাটির দিকে স্থির রেখে ডোর খোলে দিতে সেখান থেকে নেমে আসলো বারিশ খান। কোনো দিকে না তাকিয়ে গটগট পায়ে বাড়িটার ভিতরে প্রবেশ করে, তাঁর পেছন পেছন অন্য সবাই প্রবেশ করলো।বারিশের সম্পূর্ণ মুখ জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে রক্তিম আভা।চোখ,মুখ ক্ষোভ রাগে রক্তের ন্যায় রক্তিম আঁকার ধারন করেছে।প্রেয়সীর যন্ত্রনা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে থেকে থেকে।সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে গোটা একটি দিন কিন্তু দিয়ে গিয়েছে রূপের মনে একরাশ অস্থিরতা,ভয় আর কষ্ট। রূপের এই কষ্ট জেনো বারিশের মনে আগুনের ফুলকির ন্যায় কাজ করছে। সেদিন বারিশ তাকে নানা বুঝিয়ে শান্ত করলেও একমিনিট এর জন্য চোখের আড়াল হতে পারেনি রূপ থেকে, না সে আড়াল হয়েছে।একটু চোখের আড়াল হলে ভয়ে ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠে,কান্না করে,পাগলামি করে । সবসময় ভয়ে বারিশের সাথে চিপকে থাকে। ভয়ের কারণে সম্পূর্ণ রাত জ্বরে ভুগতে হয়েছে রূপকে।ডাক্তার বলেছে এমন একটি নির্ম দৃশ্য তাকে রিতিমত কাবু করে দিয়েছে যার কারণে সে ভয়ে এতোটা অসুস্থ হয়ে পরেছে।বিষয়টি বারিশের অজানা নয়। সারাটাক্ষন বারিশ নিশ্চুপ ছিলো এবং রূপকে সামলিয়েছে তাঁর ভেতরে যে রাগে ক্ষোভে রক্ত টগবগ করছে তা সকলে বুঝতে পেরেছে যার দারুন ভবিষ্যতে আগাম ঝড়ের আভাস পাচ্ছে সকলে। গতরাতে রূপ বারিশের বুকে মাথা রেখে জ্বরের ঘোরে শুধু একটি কথা বারবার আওরিয়েছে তা হচ্ছে,মাডার! খুব খারাপ ভাবে মেরে ফেললো লোকগুলোকে। এদের শাস্তি দিবেন বারিশ, খুব কঠিন শাস্তি। রূপের জ্বরের ঘোরের প্রতিটা কথা বারিশের মাথায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, তখন থেকে সেই নর্দমার কীট কে পৃথিবী ছাড়া করার জন্য মাথায় খুন সাবারি হয়ে আছে তাঁর। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।বারিশ এখন এসেছে তাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত তাদের আউট হাউসে।আউট হাউসটি তাদের বাড়ি থেকে বেশ দূরে জঙ্গলের গভীরে তৈরি করা হয়েছে। খুব সুন্দর দেখতে আউট হাউসটির চারিপাশে বিশাল বড় বড় গাছে ঘেরা। নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে।বিশেষ করে এমন এক নির্জন জায়গায় জঙ্গলের মাঝে বাড়ি রূপের খুব শখ তাইতো রূপের ইচ্ছেকে প্রাধান্য রেখে হাউট হাউসটি করা।বারিশ প্রায়ই কাজের সূত্রে এখানে আসা।
নিস্তব্ধ হল’রুম জুরে পিন ডপ আওয়াজ টুকু নেই। বারিশের পিএ রোহান সহ ঘর ভর্তি বাকি গার্ডরা সকলে মাথা নিচু করে রেখেছে।বারিশ দুই আঙ্গুল দ্বারা কপাল মেসেচ করে হাতের কিউব মেলাতে শুরু করলো। রোহান একবার মাথা তুলে বারিশের দিকে তাকিয়ে তাঁর হাবভাব দেখে ভয়ে পুনরায় মাথা নুইয়ে নিলো, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম টুকু মুছে নিলো। পরক্ষনেই মনে পরলো বারিশ এমন পছন্দ করে না তাই সে ভয়ে ভয়ে বারিশকে দেখে নিয়ে সাথে সাথে পকেট থেকে হ্যান্ড ওয়াশ প্যাক থেকে কিছুটা নিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিলো।বারিশ আগের ন্যায় কিউবে নিজের সম্পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে,মুখের ভাব এখনো আগের মতো কিন্তু কেমন সব কিছু চুপচাপ শান্ত,জেনো সমুদ্রে ঝড় আসার পূর্বে চারিদিক যেমন শান্ত থাকে ঠিক সেইরকম।বারিশ কিউব মেলাতে মেলাতে গমগমে কন্ঠে বললো,
‘আজকের রাতের মাঝে আমার সব ইনফর্মেশন চাই রোহান।এট এ্যনি কস্ট।’
বারিশের কথা শুনে রোহান সহ বাকি সবাই খানিকটা কেঁপে উঠলো।বারিশ পুনরায় একই ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
‘তোমার কী মনে হয় রোহান, আমার জানকে যে এতোটা কষ্ট দিয়েছে, তাকে আমি কতোখানি পুরাতে পাড়ি।’
বারিশের খামখেয়ালি শান্ত গলার কথাটা তিরের মতো আঘাত করছে রোহানকে চারিপাশ থেকে।সে এইবার টিস্যু পেপার দিয়ে মুখের ঘাম টুকু আলতো আলতো করে মুছে ধীরে কন্ঠে বলল,
‘আমি কল্পনা করতে পারছি না স্যার, এতো বেশি যন্ত্রণাদায়ক হবে।’
রোহানের কথা শুনে বাঁকা হাসে বারিশ। পুনরায় ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে উঠলো,
‘গুড,খুব ভালো বলেছো।ভিডিও অন করো।’
বারিশের কথা মতো ল্যাপটপ অন করে একটি ফ্লোডারে ঢুকে সেখান থেকে একটি ভিডিও অন করতে শুরু হয়ে গেলো ছায়ান সিত্তিস এর করা ঔ কালো রাতের কুকর্ম। তখন রূপের হাত থেকে পড়ে মোবাইলটি ভেঙ্গে বেস স্ক্যচ পড়ে যায় যার কারণে ভিডিও স্পষ্ট নয় তাইতো মেমোরি খুলে ল্যাপটপের সাথে সংযুক্ত করা হলো।ল্যাপটপের দৃশ্য দেখে কারোর কোনো প্রতিক্রিয়া না হলেও রোহানের অবস্থা নাজেহাল,সে এই কাটাকাটি ভীষণ ভয় পায়। তাইতো কখনো কাউকে শাস্তি দেওয়ার সময় কাটাকাটি দায়িত্ব গার্ডের দ্বারা পরিপূর্ণ করে।ঐভাবে সকল কাজে পারদর্শী সে,স্যুট করা, কাউকে ঘায়েল করা,বুদ্ধির দিক থেকেও সে বেশ দূরত্ব। তাইতো বারিশের বেশ পছন্দের সে।গত অনেক বছর ধরে বারিশের হয়ে বারিশের সকল কাজে ছায়ার মতো লেগে থাকে, কখনো কোনো কাজে ভুল হবে না। রোহান এইবার বেশ বুঝতে পারছে রূপ কেনো এতো বেশি ভয় পেলো ভিডিওটি দেখে।একটা মানুষকে কেমন জীবত অবস্থায় পিচ পিচ করে কাঁটছে, দেখে মনে হচ্ছে সাদ্য গরু জবাই করে তাঁর মাংস কাটা হচ্ছে। ভাবতেই মুখ চেপে ধরে রোহান।বমি আসছে তাঁর কিন্তু স্যারের অনুমতি ছাড়া নড়তে পর্যন্ত পারছে না। কোনো রকম চোখ মুখ চেপে নিজেকে দমিয়ে নিলো সে।বারিশ ক্রুদিত নয়নে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপ স্কিনে, তাঁর চোখ মুখে আগুনের ফুলকি বেরিয়ে আসছে। বাঁকা হেসে ঠাস করে ল্যাপটপ অফ করে দিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো। মনে মনে হাসলো সে। মুখে ভেসে উঠলো রহস্যময় চিহ্ন যার ধারনা করতে পারলো না রোহান।বেশ বুঝতে পারছে তাঁর স্যার গভীর কিছু ভেবে নিয়েছে যা খুব ভয়ংকর হতে চলছে এই সাইকো ছায়ান সিত্তিস এর জন্য। রোহান কিছু একটা ভেবে আঁতকে উঠে বললো,
‘স্যার এ তো ছায়ান সিত্তিস। চায়নিজ বক্সিং খেলোয়াড়ার। খুব জঘন্য একজন সাইকো কিলার।বেশ অনেক রিপোর্ট রয়েছে তাঁর সম্পর্কে।একে মারার জন্য পুলিশ, ইনচার্জ,ডিবি সবাই মূহুর্তের অনুসন্ধানে রয়েছে।একে ইনকাউন্টার করার অনুমতি রয়েছে কিন্তু কোনো না কোনো কারনে সেটা হয়ে উঠেছে না। খুব খারাপ ড্রাগস ডিলার আর…..’
কিছু বলে না রোহান ভিতু মুখ করে তাকালো তাদের স্যারের দিকে যে আয়েশ করে হেলান দিয়ে বসে আছে। কোনো ভাব আবেগ বোঝা যাচ্ছে না।বারিশ পুনরায় কিউব মিলাছে। থেমে থেমে শান্ত গলায় বলে উঠলো,
‘দীর্ঘদিন যাবত তুমি এখানে কাজ করছো রোহান তাই আমার দ্বিতীয় পদক্ষেপ কী সিদ্ধান্ত নিয়েছি বেশ বুঝতে পারছো নিশ্চয়ই। পরবর্তিতে নতুন করে রিপিট করা আমার পছন্দ নয় তাই সময়মতো সব হয়ে যাওয়া চাই।প্ল্যান অনুযায়ী,গট ইট।’
রোহান থতমত খেয়ে ভিতু গলায় মিনমিন করে বলে উঠলো,
‘স্যার ছায়ান সিত্তিস একজন হাতে কলমে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত পাগল।যে ঠিক ভুল ভাবতে জানে না।না মানে…যদি ম্যামের কোনো ক্ষতি করে বসে।’
রোহান কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলেও নিজ আত্মরক্ষা করতে পারেনি।বারিশ রেগে সিংহের ন্যায় গর্জে হাতের কিউবটি ছুঁড়ে মারে রোহান বারবার। সাথে সাথে রোহানের কপালে দেখা দেয় বিশাল বড় বিস্ফোরণ। রোহান কপাল চেপে কুঁকড়ে উঠে কুঁজো হয়ে যায়।বারিশ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,
‘বারিশের জানের ক্ষতি করার মতো শক্তি এখনো এই পৃথিবীতে জন্ম নেয়নি রোহান। পরবর্তীতে ভেবে কথা বলবে,কী বলছো?আর কাকে বলছো?বারিশ খান আর তাঁর জানকে আঘাত করা দুটোই অসম্ভব।’
একজন গার্ডকে ইশারা করতে আইসব্যাগ এনে রোহানের হাতে দিলো। রোহান সেটা কপালে চেপে মাথা নাড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলো,
‘ইয়েস..ইয়েস বস।’
বারিশ শয়তানি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
‘দুটো ভাবনার আলাদা আলাদা শাস্তি।যদি প্রথম ভাবনা মতো হয় তাহলে বিশিষ্ট খেলোয়াড় ছায়ান সিত্তিস এর মৃত্যু খুবই সাদামাটা হবে যাতে তেমন কোন যন্ত্রনা হবে না যেমনটা সাধারণ অন্যদের সাথে হয় ঠিক তেমনি হবে।এমনও হতে পারে শাস্তি পেয়ে নিজের জীবন ভিক্ষা পেয়ে নিজ দেশে ফিরে যাবে আর যদি দ্বিতীয়টা হয়…. খানিকের মাঝে হিংস্র বাঘের ন্যায় এদিক সেদিক ঘাড় বাঁকিয়ে চোখ বুজে নিলো। তাহলে খুব কঠিন মৃত্যু হবে এবং সেটা আমার হাতে দ্যা বারিশ খানের হাতে। ইতিহাস রচিত হবে, এতোটা জঘন্য দিন হবে সেই দিন। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ লাইভ সো দেখবে ছায়ান সিত্তিস এর মৃত্যু। শুধুমাত্র একটু কষ্ট করতে হবে আমকে আর সব পরিকল্পনা মাফিক…ঠুস্।’
কথাটা বলে রহস্যময় হাসি হাসে বারিশ। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। রোহান কপালে হাত দিয়ে বারিশের কথার মানে বোঝার চেষ্টা করলো।প্রথম কথার মানে বুঝলেও শেষের দিকটা বোঝতে অক্ষম সে। তাঁর স্যার তো কখনো কাউকে নিজ হাতে মৃত্যু তো দূরের কথা শাস্তি পর্যন্ত দেয়নি তাহলে কী মানে দাঁড়ায় শেষের কথাটার।স্যার তো ম্যামের কাছে ওয়াদাবদ্ধ তাই ম্যাম না চাইলে দুনিয়া এদিক সেদিক হলেও কখনো তাদের স্যার ওয়াদা খিলাপ করে কাউকে নিজের হাতে মারবে না। তাহলে কী বলছেন স্যার? তারউপর শেষের কথাটা মানে কী হতে পারে?বিষয়টি ভাবতে ভাবতে রিতিমত ঘাম ছুটিয়ে ফেলছে কিন্তু তাঁর এতো বুদ্ধি কোনো কাজে আসছে না। এখন সে নিজেকে মনে মনে বকতে শুরু করলো।এতো বছর কাজ করেও স্যারের রহস্যময় কথার মানে বুঝতে পারলো না সে।ধিক্কার জানায় সে তাঁর প্রশিক্ষণকে। এখন যতোক্ষন স্যার না বলবে ততোক্ষণ হাজার ভেবেও এই রহস্যের বেড়াজাল থেকে রহস্য উন্মোচন করতে পারবে না সে।
ক্রিং ক্রিং শব্দ করে মোবাইল বেজে উঠতে বারিশ গম্ভীর দৃষ্টিতে মোবাইলের স্ক্রিনে তাকাতে সাথে সাথে চোখ দুটো শীতল হয়ে যায়।বাড়ি থেকে মিসেস মিথিলা খান কল করেছেন। রূপের কিছু কী হয়েছে? ঝটপট মোবাইল রিসিভ করে কানে ধরে শান্ত কন্ঠে সালাম দিতে অপরপাশ থেকে মিসেস মিথিলা সালামের জবাব দিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলেন,
‘কোথায় তুমি বারিশ? জলদি বাড়িতে আসো।রূপ খাবার খাচ্ছে না বলেছে তুমি না আসলে সে খাবার খাবে না। এককথায় তোমাকে এখন রূপ বাড়িতে চায় মানে চায়। তুমি না আসলে পানিটুকু নাকি খাবে না জিদ ধরেছে। আধঘন্টা পর আসবে বলে দুঘন্টা লাগিয়ে ফেলেছো তা নিয়ে রূপ মনব্রত করেছে।এসব কী বারিশ? তুমি জানো তো রূপের উপর দিয়ে যা গিয়েছে তা দেখার পর রূপ খেতে পারবে না আর তুমি কিনা বাড়িতে নেই। জলদি বাড়ি আসবে।’
বারিশ শান্ত গলায় বললো,
‘ওকে আমি আসছি।’
বলে মোবাইল কেটে দিয়ে বড়বড় পা ফেলে দরজার দিকে । হঠাৎ থেমে সামনের দিকে তাকিয়ে কুটিল হেসে বলে উঠলো,
‘জাল বিছিয়ে রাখো কারণ খুব শীঘ্রই চুনোপুঁটি ফাঁদে আটকাতে চলছে।’
কথাটা বলে চোখের সানগ্লাস পরে বেরিয়ে যায় বারিশ। সেদিকে তাকিয়ে রইলো রোহান। মনে মনে আফসোস সুরে বলে উঠলো, ইস্ বেচারা সাইকো ছায়ান। হাজার মানুষের আকুতি হয়তো আল্লাহ তায়ালা শুনেছেন তাইতো মৃত্যু তাকে এতো দূর মাতৃভূমি থেকে এই অপরিচিত দেশে টেনে নিয়ে এসেছে। মানুষ ঠিকই বলে সময় একসময় মানুষকে এমন জায়গায় দাড় করিয়ে দিবেন যেখান থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো কূল কিনারা অবশিষ্ট থাকবে না।যদি বারিশের দ্বিতীয় ভাবনার মাঝে পরে এবং এমন কোনো কাজ করে তাহলে ছায়ান সিত্তিস এর খুব জঘন্য ভাবে মৃত্যু লিখা আছে কপালে।কতো ভালোবাসেন তাদের স্যার ম্যামকে,যদি এমন কিছু হয় যা সে বারিশের শেষের কথা থেকে ধারণা করছে তাহলে সত্যি রোহান কল্পনা করতে অক্ষম কী হতে পারে ছায়ান সিত্তিস এর সাথে!
_
নিজ রুমের বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে রয়েছে রূপ তারই পাশে বসে আছেন মিসেস মিথিলা আর রিনি। দুজনে দীর্ঘ সময় ধরে রূপকে এটা সেটা বলে মন বুলানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।এখন শরীরের জ্বর নেই সেটা সেড়ে গিয়েছে বারিশ থাকাকালীন। এখন সে বেশ সুস্থ কিন্তু মনের ভয়টা থেকে থেকে তাজা হয়ে উঠছে যা চাইলেও ভুলা যায় না। মিসেস মিথিলা অনেক চেষ্টা করেও খাওয়াতে ব্যর্থ হয়েছেন।এটা নতুন নয় রূপের জন্য। কখনো এমন অপ্রত্যাশিত জিনিস দেখলে সে বেশ কিছুদিন যাবত ট্রমায় চলে যায়। খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না সবসময় সেই জিনিসটাই চোখে ভেসে বেড়ায়। এখনো তেমনি হয়েছে, সেদিনের ভিডিও দেখে সে ট্রমায় চলে গিয়েছে। কিছু খেতে গেলে বমি পায় সবসময় সেই মানুষটির পিচ পিচ করা রক্তাত শরীর ভেসে উঠতে বমি করতে করতে অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পরে।এমনটা তাঁর আগেও হয়েছে। রূপের বয়স যখন ষোলো তখন একবার টিভিতে সে জম্বি মুভি লেগেছিলো সেখানে জম্বিটা একটা মানুষের শরীর কামড়িয়ে খাচ্ছিল, মানুষটির রগ টেনে, শরীরের নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে খাচ্ছিল।ছিহ কি বিশ্রী আর ভয়ংকর দৃশ্য ভাবতে এখনো গা শিউরে ওঠে এবং বমি পায়।এই দৃশ্য দেখার পর টানা একমাস কেউ তাকে ঠিকঠাক কিছু খাওয়াতে পারেনি।ভয়ে এবং অতিরিক্ত বমি,জ্বরে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন। তারপর থেকে এসব জিনিস,হররমুভি, সাইকোলজি মুভি থেকে সে একশো হাত দূরে দূরে থাকে কখনো দেখে না । কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু দেখতে পেয়েছে তা ভাবতেই শরীরে লোমকূপ গুলো পর্যন্ত তাকে চিৎকার করে বলে উঠে,রূপ ভয় পা! লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।বারিশ পাশে থাকলে রূপের ভয় গায়েব হয়ে যায় কিন্তু এই নিষ্ঠুর স্বামীটা অসুস্থ বৌকে রেখে কোথায় রয়েছে। কতোটা নির্দয়,হু। মনে মনে রাগ হলো, ভীষণ রাগ। মনে মনে ঠিক করলো কথা বলবে না আর বারিশের সাথে।দরজা ঠেলে তখনি গটগট পায়ে প্রবেশ করলো বারিশ।এসেই রূপের দিকে কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।মিসেস মিথিলা খান আর রিনি চল গেলো।সবাই চলে যেতে বারিশ দরজা অফ করে নিজের গায়ের জ্যাকেটটি খুলে শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ক্লিন করে রূপের পাশে বিছানায় বসে পরলো।রূপ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে বারিশের দিকে।যখন বুঝতে পারলো সে তো বারিশের উপর রেগে আছে ততখানি মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।স্মিত হাসলো বারিশ। রূপের কপালের চুল আলতো হাতে সরিয়ে চিবুক ছুঁইয়ে নিজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে কপালে চুমু খেলো।রূপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।বারিশ মুখে ফু দিয়ে নরম কন্ঠে বলল,
‘আমার পরীজান কী রাগ করেছে তার মি.এরোগেন্ট ম্যানের সাথে! আমি স্যরি তো জান আর হবে না পরবর্তী থেকে। এইবার তো তাকাবে আমার দিকে।’
রূপ তাকালো না আগের ন্যায় বসে আছে।বারিশ মৃদু হেসে আরো কাছে ঘেঁষে নাকে চুমু খেয়ে মুখের বেশ কাছাকাছি এসে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
‘এই পিচ্চি তাকাও আমার দিকে।স্যরি তো খুব ইমপ্যটেন্ট ছিলো তুমি জানো তো মেরি জান।প্লীজ এইবার মাফ করে দাও আর কখনো কথার হেরে ফের হবে না।প্রমিস।’
রূপ কিছুটা রাগ কমিয়ে অভিযোগ কন্ঠে বারিশের চোখে চোখ রেখে বললো,
‘আপনি জানেন আমার আপনাকে কতোটা প্রয়োজন তাহলে কেনো ফিরতে লেইট হলো।’
বারিশ হাসলো। বৌয়ের অভিযোগে শুনে। সে মৃদু হেসে বলল,
‘আর হবে না পরীজান। তোমার প্রশান্তির জন্য তো সামান্য চেষ্টা।’
মানে বুঝলো না রূপ। কিছু একটা ভেবে ভীতু গলায় বললো,
‘লোকগুলোকে পেয়েছেন যারা এমন একটি জঘন্য কাজ করেছে।কী হিংস্র পাগল! কেউ এমন করে কি কাউকে মারে।’
বারিশ খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে গম্ভীর গলায় বললো,
‘উহুম। খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবো এবং খুব কঠিন শাস্তির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তুমি এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও একদম এসব ভাববে না।শরীর খারাপ করবে।’
রূপ মন খারাপ করে বললো,
‘বললেই হলো, এমন একটি জঘন্য স্মৃতি চাইলে কী ভুলে থাকা যায়!আমি তো চেষ্টা করছি ঝেড়ে ফেলতে, পারছি না তো।আর আপনি কিন্তু এমন সাইকো কিলারের সাথে লাগতে যাবেন না। খুব ভয়ংকর সে যদি কিছু করে বসে।’
কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।বারিশ মৃদু হেসে বা হাতে রূপের গালে স্পর্শ করে আশ্বাস দিয়ে বলে উঠলো,
‘তোমার কী মনে হয় এই সামান্য কিলার তোমার এরোগেন্ট ম্যানকে কিছু করতে পারে!নো জান কখনো না। আমার কিছু হবে না আর এই জঘন্য স্মৃতি ভুলার কথা,সেটা আমি তোমাকে বুলিয়ে দিবো।’
রূপ পুনরায় কিছু বললো না সে বেশ বুঝতে পারছে বারিশকে বললেও সে থামার পাত্র নয় আর রূপ নিজেই তো তাকে ঔ কিলারকে শাস্তি দিতে বলেছে।রূপ বারিশের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
‘আমি জানি কিছু হবে না আর না আপনি থাকতে আমার কিছু হতে পারে।আই ট্রাস্ট ইউ মি.খান।’
বারিশ পুনরায় চমৎকার হাসলো।এই কথাটি তো সে শুনতে চেয়েছিলো । রূপের মুখের দিকে খাবার তুলে দিতে মুখ কাচুমাচু করে বললো,
‘আমার খেতে ইচ্ছে করছে না কেমন বমি পায় খাবার দেখলে। খেতে নিলে সেই দৃশ্য ভেসে ওঠে চোখের সামনে।প্লীজ আমি খাবো না আপনি রেখে দিন।’
বারিশ শুনলো না।নরম কন্ঠে বলে উঠলো,
‘বলেছিতো তোমার সব কষ্ট লাঘব করার দায়িত্ব আমার। কিছু হবে না আমি আছি তো ,ভয় পাচ্ছ কেনো জান?’
পুনরায় রূপের মুখে খাবার দিতে নিলে একই রকম ভাবে মুখ সরিয়ে নিলো রূপ।বারিশ টেবিলের উপর থেকে মোবাইল নিয়ে সেখান থেকে একটি ভিডিও অন করে রূপের সামনে ধরলো। মিনিটে সব কিছু ভুলে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল মুখে।বারিশের হাত থেকে চট করে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও দেখতে লাগল।এটা তো তাদের ছোটবেলার ফ্যামেলি প্রোগ্রামের ভিডিও।বেশ বড় ভিডিওটিতে তাঁদের ছোটবেলার অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে।রূপ আপন মনে ভিডিও দেখছে আর হাসছে। ছোটবেলার স্মৃতি গুলো চড়া দিচ্ছে মনে, কী সুন্দর ছিলো সবকিছু! ইচ্ছে করছে আবার পুনরায় শৈশবে ফিরে যেতে।রূপ এতোক্ষণ কী হয়েছে সব ভুলে গেলো,ব্যস্ত হয়ে ভিডিও উপভোগ করছে।বারিশকেও এটা সেটা দেখাচ্ছে আর দুজনে মিলে হাসছে ।বারিশও রূপের সাথে তাল মিলিয়ে দেখছে এবং সেই সুযোগটির সঠিক ব্যবহার করে রূপকে খাইয়ে দিতে লাগলো। খুব সুন্দর মতে স্বল্প সময়ে খাবার শেষ করলো রূপ কোনো ঝামেলা ছাড়াই।বারিশ হাসলো। খাবার শেষে বারিশের বুকে মাথা রেখে ভিডিও উপভোগ করছে সাথে বারিশ তাঁর মতো করে সাথ দিচ্ছে। কতোটা খুশি রূপ ভুলে বসেছে সেই ভয়।বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো। হঠাৎ চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবতেই রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে মুখে। রূপের কপালে চুমু খেয়ে চুলে বিলি কাটতে লাগলো।
#চলবে,,,💞
[লেখিকা-সুমাইয়া আক্তার মিম✵]
❌কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ ❌