#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ১৭
#সুমাইয়া আক্তার মিম
হাড় কাঁপানো তীব্র শীত, চারিদিকে মানুষদের এক গমগমে পরিবেশ।নিউ ইয়র্ক এর রাস্তাঘাটে মানুষজন জায়গায় জায়গায় একত্রিত হয়ে কাঠ খর দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।দামি জ্যাকেট,শাল ইত্যাদি শীতের পোশাক দিয়ে আবৃত করে রেখেছেন সকলের শরীর, তবুও কাঁপা কাঁপা হাতে আগুন পোহাতে ব্যস্ত সকলে। চারিদিকে গমগমে পরিবেশ,আর মাত্র একদিন পর নিউ ইয়ার তাই সবাই সেই ব্যবস্থা নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। আনন্দে উচ্চাসে মেতে উঠেছে সম্পূর্ণ নিউ ইয়র্ক। সবাই দীর্ঘ দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে নিউ ইয়ার উপলক্ষে এখনো জেনো সেই আয়োজন শেষ হয়নি।তিব্র শীতেও ঘর ছেড়ে এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে প্রিয়জনদের নিয়ে নিউ ইয়ার উপলক্ষে আনন্দে উচ্চাসে মেতে উঠেছেন সকলে। এই সুন্দর শহরটিকে আরো দিগুন সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে নিউ ইয়ার উপলক্ষে। জাঁকজমক সাজে দারুন লাগছে চারিদিকটা।রাস্তা থেকে শুরু করে প্রতিটি বাড়ি সাজানো হয়েছে রং বেরঙের বাতি,লাইট, মরিচ বাতি, ফেয়ারি লাইট ইত্যাদি দিয়ে। গাছগুলোতেও বিভিন্ন লাইট,স্টার ইত্যাদি দিয়ে ভরপুর করে সাজিয়ে তুলেছেন। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
খান বাড়ির প্রতিটা কোণায় কোণায় জ্বলছে রং বেরঙের ফেয়ারি লাইট সাথে ফুল, বেলুন দিয়ে অসাধারণ সুন্দর করে বাড়িটি সাজানো হয়েছে। রূপ সারাদিন মিসেস মিথিলা খানের সাথে এবং রিনির সাথে নিউ ইয়ার উপলক্ষে বেশ আনন্দে মেতে উঠেছে। বাড়ির প্রতিটি সদস্য,সার্ভেন্টদের সাথে হাতে হাত কাজ করছে আর আনন্দ করছে।আজ সারাদিন ঠিকভাবে রূপকে কাছে পাইনি বারিশ তাই রাগের রেশ জেনো ধাপে ধাপে বেড়ে যাচ্ছে তাঁর।যতোবারি রূপের কাছে এসেছে ততবার সে বিভিন্ন অজুহাতে সেখান থেকে কেটে পরেছে যার দারুন বারিশ ভীষণ রেগে রয়েছে। কাজের চাপে ঠিকভাবে কিছু বলতেও পারছে না তবে শাসিয়ে গিয়েছে রাতে তাকে দেখে নিবে।রূপও কম কিসের সেও চিৎকার করে বলেছে একদম ভয় দেখাতে আসবেন না আমি মোটেও আপনাকে ভয় পাই না। পরিপ্রেক্ষিতে বারিশ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিছু বলার জন্য গটগট পায়ে কাছে আসতে নিলে মুখ ভেঙ্গিয়ে এক ছুটে রিনির রুমে চলে যায়। সেদিকে তাকিয়ে দাঁত কিরমির করে নিজের কাজে চলে যায় বারিশ মনে মনে ভেবে নিয়েছে আজ এই মেয়ের হচ্ছে, সব ফাইজলামি বের করবে বড্ড বেড়ে গিয়েছে।আজকে সারাদিন রূপের বেশ ভালো কেটেছে। এখানে আসার পর একটুর জন্যেও মনে হয়নি সে শশুড় বাড়িতে আছে মনে হয় নিজের বাড়িতে রয়েছে। সারাদিন কেটে যায় বিভিন্ন কাজে দুষ্টুমিতে আনন্দে, মাঝে একবার ভিডিও কনফারেন্সে নিজ বাড়ির সকলের সাথে কথা বলে নিয়েছে।
.
মোবাইলে কথা বলতে বলতে হলরুমে প্রবেশ করে বারিশ, সামনের দৃশ্য দেখে ভ্রু জোড়া আপনা আপনি কুঁচকে আসে সাথে চোখ জোড়া ছোট হয়ে যায় তাঁর। মোবাইলের অপর পাশের ব্যক্তিকে পরবর্তীতে কথা বলবে বলে গট করে কলটি কেটে দিলো।বারিশের পেছনে তাঁর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট রোহান দাঁড়িয়ে গোল গোল চোখে সামনের দৃশ্য দেখে ভয়ে একবার নিজের স্যারের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো।বারিশ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে অবস্থান করা তাঁর রূপজানের দিকে যে আপাতত হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।বারিশ একবার হলরুমের দিকে তাকালো সম্পূর্ণ হলরুমের নাজেহাল অবস্থা মনে হচ্ছে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে।পুনরায় রূপের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে,এক হাত উঁচিয়ে পেছনে অবস্থানরত রোহানকে নিজের জ্যাকেটটি গার্ডের হাতে দিতে বলে বিদায় নিতে বললো।রোহান মাথা নিচু করে সায় জানিয়ে গার্ডের হাতে জ্যাকেটটি দিয়ে দ্রুত প্রস্থান করে হলরুম থেকে। রূপ এবং অন্য কেউ বারিশকে এখন পর্যন্ত খেয়াল করেনি সবাই মনের আনন্দে নিজেদের মতো আড্ডায় মেতে আছেন।সার্ভেন্টগুলো পর্যন্ত কাজ না করে রূপের কথা শুনছে আর তাঁর সাথে সাথে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।রূপ তো বারিশের নামে সকলের কাছে সেই পরিমানের কথা শুনাচ্ছে যা শুনে সকলের উচ্চস দিগুন বেড়ে গিয়েছে।বারিশ কটমট চোখে তাকিয়ে আছে রূপের দিকে জেনো চোখ দিয়ে আজকে রূপকে ভস্ম করে দিবে।রিনির চোখ হঠাৎ নিজের ভাইয়ের দিকে পড়তে ভয়ে শিউরে উঠে গায়ের সব পশম সোজা হয়ে গিয়েছে।বারিশ শক্ত দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাতে চট করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,
‘ভা…..ভা ভাইয়া।’
রিনির এমন কথা শুনে উপস্থিত সকলে ভয়ে জমে যায়।বারিশকে দেখে সকলের অবস্থা বেহাল। সকলে মাথা নিচু করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বারিশ সব সার্ভেন্টদের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধমকে বলে উঠে,
‘সবাই নিজেদের কাজে যান।গো!’
তাঁর বলার সাথে সাথে সবাই নিজেদের মতো করে কাজে চলে যায়।সবাই জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো একটুর জন্য গর্দান যেতে যেতে যায়নি।বারিশ এবার রাগী দৃষ্টিতে রূপের দিকে তাকালো।রূপ বারিশকে দেখে ভয়ে প্রথমেই মিথিলা খানের উরনার আড়লে নিজেকে লুকিয়ে ফেললো।বারিশ এমন হৈ হুল্লোড় পছন্দ করে না সেখানে তাঁর বউ সারা বাড়ি একদম মাথায় তুলে রেখেছে। চিৎকার চেঁচামেচি উচ্চ স্বরে হাঁসি মনে হচ্ছিল জেনো কোনো বিয়ে বাড়ি। কেউ কখনো এমনটা করার সাহস পাইনি আজ জেনো রূপের সাহসের সাথে সাথে প্রত্যেকের সাহস বেড়ে গিয়েছে।বারিশের সারা মুখ লাল হয়ে গিয়েছে রূপ উরনার ফাঁকে বারিশের এমন চেহারা দেখে ভয়ে আরো চেপে দাঁড়ালো, মিথিলা খান তাকে এক হাতে জড়িয়ে রেখেছে।বারিশ লম্বা লম্বা পা ফেলে মিথিলা খানের কাছে এসে কোনো কথা না বলে টেনে মিথিলা খান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।রূপতো ভয়ে রিতিমত লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। আজকে সকালে একবার বারিশকে রাগিয়ে দিয়েছিল এখন আবার রাগিয়ে দিয়েছে আজ নির্ঘাত তাঁর শরীর থেকে মাথা আলাদা করে দিবে। লাফালাফি করছে আর মিথিলা খানকে ডাকছে তাকে বারিশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।বারিশ রেগে রূপকে শক্ত করে ধরে নিজের কোলে তুলে নিলো। মিথিলা খান ছেলের রাগ দেখে চট জলদি বল উঠলেন,
‘বারিশ!রূপকে একদম বকবে না।ও নেহাতি বাচ্চা মেয়ে।ও এমন কি করেছে যে তুমি রেগে যাচ্ছো।রাগার হলে সার্ভেন্টদের বকো রূপকে কিন্তু বকবে না।’
বারিশ মিথিলা খানের দিকে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কোনো কথা না বলে গটাগট পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলেন। মিথিলা খান ছেলের রাগ দেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। রিনি মায়ের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বললো,
‘আজকে তো পুতুল ভাবি শেষ।যা রেগে আছে ভাইয়া। আল্লাহ প্লীজ ভাইয়ার মাথাটা ঠান্ডা করে দাও।’
রিনি অসহায় গলায় বললো। মিথিলা খান একবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে তিনিও প্রার্থনা করতে লাগলেন রূপের জন্য।এই ছেলেটা এতো পরিমাণ রাগী ঘাড় ত্যাড়া কারোর কথা শুনবে না।না জানি কী করে মেয়েটার সাথে।
.
নিকষ কালো অন্ধকার।টিমটিমে আলো জ্বলছে রুমের ভিতরে।বাহিরের রং বেরঙের আলো গুলো কাঁচ ডিঙ্গিয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করায় খুব সুন্দর লাগছে চারিদিক। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
রূপকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রেখেছে বারিশ মুখটা তাঁর রূপের খুব নিকটে।গমগমে পরিবেশে জুরে শুধু জোরে জোরে নিঃশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে।রূপ দেয়ালের সাথে মাথা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে মনে মনে দেয়া দূরুদ পরছে। রুমে আসার পর বিশ মিনিট হয়ে গিয়েছে সে এমন করে দাঁড়িয়ে আছে।বারিশের চোখাচোখি হওয়ার দুঃসাহস তাঁর মাঝে নেই।চোখ বুঁজেই উপলব্ধি করতে পারছে বারিশ কতোটুকু পরিমাণ তাঁর নিকটে রয়েছে যার ফলস্বরূপ চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে বারিশের ভারি গরম নিঃশ্বাস। পর্দার আড়ালে বাহিরে শীতল হাওয়া রুমে আসতে ঝনঝন করে ভেজে উঠে রুমের স্টিল আর কাঁচের তৈরি ছোট ঝাড়।বারিশ শক্ত হাতে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে রূপের থুতনি চেপে ধরে শীতল কন্ঠে বলতে লাগলো,
‘আমাকে তোমার ভয় করে না রূপজান?’
বারিশের এমন কথা শুনে রূপের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।রূপ কি বলবে বুঝতে পারছে না।বারিশ আরেকটু শক্ত করে চাপ দিলো থুতনিতে এইবার ব্যথা লাগলো রূপের।ভ্রু জোড়া কুঁচকে চোখ দুটো আরো চেপে বন্ধ করে নিলো।বারিশ মুখ থেকে অদ্ভুত ধরনের আওয়াজ করে বলতে লাগলো,
‘বারিশ খানের মিসেস তুমি,সাহস আমারই মতো বরাবরই অনেক হবে।আই এ্যম ইমপ্রেস এন্ড সো হ্যাপি।’
বারিশের কথার মর্ম বুঝতে পারলো না রূপ।আদো আদো চোখ খুলে বারিশের দিকে তাকাতেই সেই চিরচেনা বাঁকা হাসি দেখতে পেলো।বারিশ থুতনি থেকে হাত সরিয়ে গাল টিপে দিয়ে বললো,
‘আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কখনো কেউ কথা বলেনি।ঘরে বাহিরে সবাই ভয়ে আসর হয়ে থাকে। কেউ কোনো শব্দ করে না শুধু মাত্র আমার কথা শ্রবণ করে সেখানে আমার অর্ধাঙ্গিনী কিনা চোখে চোখ রেখে আমাকে ভয় পায় না বলে। ইন্টারেস্টিং বেরি ইন্টারেস্টিং।’
বারিশ বাঁকা হেসে কথা গুলো বলে আরো কাছে চলে এলো।রূপ বারিশকে এতো কাছে আসতে দেখে চোখ আরো খিচে নিলো।বারিশ যে তাকে ভয় দেখাচ্ছে সে খুব ভালো বুঝতে পারছে,না ভয় পেলে চলবে না এই রাগী বিলেতিকে।ভয় পেয়েছো তো হেরে গিয়েছো!একটি প্রবাদ আছে না।মনে রাখবে ভয় থেকে বাঁচতে হলে বিপরীত পাশের ব্যক্তিকে ভয় দেখাতে শুরু করো এতে করে সে ভয় না পেলেও কনফিউজড হয়ে যাবে আর এতে প্রতিনিধিকে হারাতে সক্ষম হবে। হঠাৎ কানের কাছে বারিশের ফিসফিসিয়ে কথা শুনে কেঁপে উঠলো।
‘একদম চেরি ফলের মতো লাগছে তোমাকে ইচ্ছে করছে ঠুস করে কামড় বসিয়ে দিই।’
বারিশের কথা শুনে রূপ নাক মুখ কুঁচকে বললো,
‘ছিহ কথার কী ধরন।নির্লজ্জ।’
‘তোমার অনলি ওয়ান হ্যান্ডস্যাম হাজবেন্ড জান।’
বারিশ ইনোসেন্ট ফেইস করে খুব মধুর সুরে কথাটি বললো।রূপ বারিশের কথা শুনে মুখ ভেংচি কেটে মিনমিন করে বললো,
‘অনলি ওয়ান হ্যান্ডসাম লাল-সাদা মিক্সড রাক্ষস।’
‘কী বললে? আমি রাক্ষস!’
রূপের কথা শুনে বারিশ ক্ষেপে গিয়ে রূপের দিকে লাল লাল চোখ করে তাকাতেই রূপ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কিছুটা জোরে বলে উঠলো,
‘এমন লাল লাল চোখ করে তাকাবেন না আপনাকে মোটেও ভালো দেখতে লাগে না। মনে হয় রক্ত চোষা ভ্যাম্পায়ার।আই ডোন্ট লাই ভ্যাম্পায়ার। কেমন খয়েরতি টাইপের হয়।ইয়াক’
বারিশকে পাত্তা না দিয়ে বললো।রূপের এমন কথা শুনে বারিশ দিগুন রেগে রূপের হাত শক্ত করে ধরে পেছনে মুড়িয়ে নিলো।রাগে তাঁর চোখ মুখ অদ্ভুত ভয়ংকর লাগছে।বারিশ শক্ত গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘তুমি আমাকে ইনডিরেক্টলি খয়েরতি বলছো।বড্ড সহস হয়েছে তাই না সুইটহার্ট!’
রূপ কিছুটা কুকিয়ে উঠলো।বড্ড ভয়ংকর লাগছে বারিশকে কিন্তু ভয় পেলে চলবে না।এই ভয় কে জয় করতে হবে কারণ সারাজিবন এই ভয়ংকর মানুষটার সাথে মানিয়ে নিতে হবে।পুনরায় আগের ন্যায় জারি রেখে কিটকিট করে বলতে লাগলো,
‘আমি তো ভ্যাম্পায়ারকে বলেছি আপনাকে না। তাঁর মানে আপনি সত্যি মানছেন রাগলে ঠিক ওদের মতো দেখতে লাগে আপনাকে।’
বারিশ বাঁকা হেসে পুনরায় শক্ত করে চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। অন্য হাতে গাল টিপে বললো,
‘খুব বুদ্ধি হয়েছে।জানো তো ভ্যাম্পায়রা রক্ত কিন্তু দারুণ ভাবে খেতে পারে, একবার শুরু করলে এক বিন্দু রক্ত অবশিষ্ট থাকে না। আমারও খুব খেতে ইচ্ছে করছে।তোমার রক্ত টেস করা প্রয়োজন আই নো তুমি খুব ইয়ামি গোলোমুলু রসগোল্লা।’
রূপ এইবার কিছুটা ভয় পেলো। কিছু একটা ভেবে হাঁসফাঁস করে বারিশকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করলো।ইনোসেন্ট ফেইস করে বলে উঠলো,
‘আপনি সত্যি খুব নির্দয়! এমন করে কেউ ধরে, আমার খুব লাগছে। এমন করে ধরেছেন মনে হচ্ছে হাড্ডি সব ভেঙ্গে তারপর ক্ষান্ত হবেন। ছাড়ুন না।’
বারিশ রূপের কথা শুনে হালকা ছেড়ে দিয়ে হাতটা মুখের সামনে এনে আলতো চুমু খেয়ে কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে শীতল কন্ঠে বলতে লাগলো,
‘আমাকে ভয় লাগছে না তোমার!’
‘আপনি কি চাইছেন আমি আপনাকে ভয় করি!’
কোনো ভনিতা ছাড়া শান্ত কন্ঠে বারিশকে উল্টো প্রশ্ন করলো। রূপের কথা শুনে বারিশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে। উল্টো দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রূপ এখনো তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।বারিশ মোটেও চায় না রূপ তাকে সকলের মতো ভয় করুক সে চায় রূপ তাকে খুব ভালোবাসুক তাদের মাঝের সম্পূর্ণ জড়তা কেটে যাক। কিন্তু তাঁর অতিরিক্ত রাগ সব গুলিয়ে দিচ্ছে সাথে রূপ একটু চোখের আড়াল হলে রূপকে হারানোর ভয় মাথায় সবসময় চরকির মত ঘুরে বেড়ায়,সে স্থির হতে পারছে না।রূপ তাঁর এতো কাছে তবুও জেনো রূপকে নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তা কমছে না। হঠাৎ তাঁর নিলয় খানের কথা গুলো মনে পড়ে, রূপকে আজাদি দাও নিজের সীমানার মাঝে রেখে।তাহলে রূপ সহজ হবে সম্পর্কটা নিয়ে। রূপ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসবে তোমাকে।রূপ পুনরায় মুখ বাঁকা করে বলতে লাগলো,
‘দেখুন আমি আপনার কর্মচারী নই যে সবসময় রুলস মেনে রোবটের মতো চলবো।আই এ্যম ইউর ওয়াইফ।সো এসব রুলস ফোলস আমার দারা হচ্ছে না। এগুলো আপনি অন্যদের উপর জারি রাখুন হু। আমি মোটেও আপনাকে ভয় পাই না আর আমি মোটেও ভিতুও নই।’
রূপের কথা শুনে মৃদু হেসে বারিশ রূপের কোমড় জড়িয়ে রাখা অবস্থায় দেয়ালের সাথে হালকা ভাবে মিশিয়ে অন্য হাত রূপের কাঁধের কাছে দেয়ালে রাখলো। রূপের মুখ বরাবর ঝুঁকে বলতে লাগলো,
‘সো মিসেস ওয়াইফি আপনি ভিতু নন তাহলে সবসময় পালাই পালাই করছেন কেনো।আর আমি কোনো রুলসে তোমাকে বেঁধে রাখিনি শুধু ভালোবাসার শক্ত শিকলে বেঁধে রেখেছি যেখান থেকে চাইলেও তুমি বের হতে পারবে না। তোমার আজাদি শুধু আমি থেকে শুরু আর আমিতে শেষ।তুমি নিজের মতো করে চলতে পারো কিন্তু শুধু মাত্র আমার সীমানাতে।’
‘হু।’
রূপের মুখের উপর ফু দিয়ে পুনরায় বলতে লাগলো,
‘আমি তোমাকে সব রকমের আজাদি দিতে প্রস্তুত কিন্তু…দিন শেষে তোমাকে আমাকে ভালোবাসতে হবে এবং খুব শীঘ্রই প্রকাশও। নাহলে নিজের ভাষায় তোমাকে বুঝিয়ে দিবো।’
‘থ্রেট দিচ্ছেন!’
রূপ ভ্রু নাচিয়ে বলে। রূপের কথা শুনে বারিশ হেসে বললো,
‘ঊহু রূপজান তোমাকে শুধু জানিয়ে রাখছি।আর আমি জানি আমার এই স্বপ্নটা খুব শীঘ্রই বাস্তব হবে। ততোদিন নিজেকে প্রস্তুত করো।’
কথা গুলো বলে টুপ করে কপালে চুমু খেয়ে বাঁকা হেসে সেখান থেকে চলে যায় বারিশ।রূপ বারিশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো কি বুঝাতে চাইছে বারিশ পরক্ষনেই কিছু একটা ভেবে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। মিনমিনে বলতে লাগলো,
‘আপনাকে অনেক অপেক্ষা করতে হবে মি.ক্রাশ,এতো সহজে আপনার অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না।আপনি যদি চলেন ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায়। আপনাকে যদি নাকানিচুবানি না খাইয়েছি আমার নামও রূপ বারিশ খান নয়।’
কথা গুলো বলে কপালে বারিশের স্পর্শ করা জায়গায় টুকু ছুঁয়ে ব্লাসিং হতে লাগলো।বারিশকে আসতে দেখে হাসি থামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। বারিশ বাঁকা হেসে রূপকে ইশারা করে বললো পুল সাইটে আসতে। এই কনকনে শীতে পুলের ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটতে যাচ্ছে সে।রূপ আনমনে বিরবির করে বলে উঠলো,
‘নিশ্চইয় নতুন কোনো বুদ্ধি কিলবিল করছে মাথায়।’
কথাটা ভেবে নাক ফুলিয়ে পুল সাইটের দিকে পা বাড়ালো রূপ।
–
কেউ ঠিক বলেছে,বনের বাঘকে পুষ মানাতে তাঁর জন্য প্রয়োজন বাঘিনীর। বাঘিনীর কাছে বাঘের শত হিংস্রতাও এক নিমেষে উধাও হয়ে যায়। ভালোবাসা ছাড়া পৃথিবী চলে না আর না পৃথিবীর সৌন্দর্য বাড়ে।ভালোবাসা অদ্ভুত,সব সময় জিতিয়ে দেওয়া মানুষটাও তাঁর প্রেয়সীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলে নতজানু হয়ে যায়।
#চলবে,,❣️
[লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম✵]
❌কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌
(হঠাৎ হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যায় যার কারণে গল্প লেখার ইচ্ছে খুঁজে পাচ্ছি না।মন খারাপের সাথে যুক্ত হয়েছে জ্বর।গত দুইদিন কিছুটা অসুস্থ থাকায় গল্প দিতে পারিনি।)