#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ৩৪
#সুমাইয়া আক্তার মিম
_
দীর্ঘ একঘন্টা যাবত একই জায়গায় অসহায়ের মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে বারিশ। তাঁর সামনে, তাঁর রূপজান ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্না করে চলছে। কোনো থামাথামি জু নেই।আজ এই মেয়ে কেঁদে কেঁদে সাগর বানিয়ে তবেই থামবে। কান্নার একটাই কারণ….বারিশের কেটে যাওয়া ক্ষতবিক্ষত হাত। হাতের এই অবস্থা কী করে হলো? কেনো হলো? রূপকে জানানোর প্রয়োজন বোধ কী ছিলো না? কেনো এমন অযত্নে হাত রেখে দেওয়া হয়েছে?হেনতেন হাজারো প্রশ্নের ঝুড়ি। বেচারা বারিশ, বউয়ের চোখ রাঙিয়ে এতো এতো প্রশ্ন শুনে রিতিমত ভরকে গিয়েছে।এর পর থেকে রূপের কান্না থামছেই না।বারিশ কতো কিছু বলেও কান্না থামাতে সক্ষম হলো না। অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো।রূপ দুই হাত দ্বারা বারিশের কাঁটা হাত উঁচিয়ে নিখুঁত ভাবে দেখছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে শান্ত গলায় বললো,
‘এবার তো চুপ যাও রূপজান।আমি ঠিক আছি।রিলেক্স।’
শুনলো না রূপ।বারিশ রূপের কপালে টুপ করে চুমু খেলো। আজকাল বউ তাঁর বড্ড জেদি আর একরোখা মনোভাবের হয়ে উঠেছে। একবার রেগে গেলে সর্বনাশ। বউয়ের রাগের মাত্রা দ্বিগুণ হলে বারিশ পর্যন্ত ভয়ে নতজানু হয়ে যায়।ভাবা যায় দ্যা বারিশ খান বউকে ভয় পায়,যার ভয়ে কিনা ঘরে এবং বাহিরে তান্ডব চলে।রূপ একবার অগ্নিমূর্তি রূপ ধারণ করেছে তো হয়েছে, তাকে শান্ত করার সাধ্যি স্বয়ং বারিশ খানেরও নেই।কতো পাঁয়তারা করতে হয় তখন বউকে মানানোর জন্য। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মীম।নিজের কেটে যাওয়া হাতের দিকে তাকালো বারিশ।গতকাল ছায়ান যখন রূপকে স্পর্শ করেছিলো তখন রেগে কাঁচের জানালা আঘাত করায় বেশ কেটে গিয়েছে।এখনো ব্যান্ডেজ করেনি। তাঁর রূপজানকে আঘাত পেতে হয়েছে, চোখের মূল্যবান পানি ঝরিয়েছে।যতোক্ষন না ছায়ানকে দিগুন কষ্ট না দিবে ততোক্ষণ নিজের ক্ষতের চিকিৎসা সে করবে না।আজ ছায়ানকে শাস্তি দিয়ে বেশ তৃপ্তি পেলো বারিশ। এইবার নিজের ক্ষতের চিকিৎসা করবে সে।হাতের দিকে তাকাতে দেখতে পেলো খুব বাজে অবস্থা হয়ে আছে।রক্ত পড়তে পড়তে এক সময় জমাট বেঁধে গিয়েছে।বেশ অনেকটা কেটে গিয়েছে। গতকাল রোহান ভয়ে ভয়ে কয়েকবার তাকে ব্যান্ডেজ করে নিতে বললে বারিশের রাগী দৃষ্টি দেখে পুনরায় কিছু বলার সাহস হয়ে উঠেনি। রূপের নজর থেকে বাঁচানোর জন্য গতকাল থেকে খুব সাবধান ভাবে চলেছে। হঠাৎ রূপের ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্নার আওয়াজে ঘোর কাটলো বারিশের।রূপ বারিশের হাত নিজের দুই হাতে আগলে নিয়ে নিখুঁত ভাবে দেখছে কোথায় কোথায় কেটে গিয়েছে।হাতের অবস্থা দেখে কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে রূপ আর বারিশকে কথা শুনাচ্ছে। হাসলো বারিশ।অন্য হাত দ্বারা রূপের গাল ছুঁয়ে মৃদু হেসে বলল,
‘আমি ঠিক আছি রূপজান।এমন বাচ্চাদের মতো নাক টানা অফ করো।’
নাক টেনে।রূপ অসহায় গলায় বললো,
‘আমার জন্য সব হয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই ঔ সাইকোটার উপর রাগ ঝাড়তে এমন করেছেন!’
বারিশ পুনরায় হাসলো। রূপের গাল টেনে দিয়ে বললো,
‘একদমি আমার রূপজানকে দোষারোপ করবে না। তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।’
হাসলো রূপ। পুনরায় রাগি গলায় বললো,
‘যার রাগ তাঁর উপর ঝাড়তে হয়।অন্যের উপর রাগ কেনো নিজের উপর দেখিয়েছেন বলুন। নিজেকে ক্ষতবিক্ষত না করে তাকে গিয়ে করুন।’
বারিশ অবাক হলো। পুনরায় সুইট হেসে রূপের কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
‘যার রাগ তাঁর উপর দেখিয়েছিতো। এখন প্রশান্তি মিলছে। তুমিতো জানো আমি ঋণ রাখি না,রূপজান। সুদে আসলে সব পূরন করে দেই।’
রূপ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে রইলো পরক্ষনে বুঝতে পেরে মুচকি হেসে ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স আনিয়ে সাবধানে বারিশের হাত ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো। নিশ্চয়ই বারিশ আচ্ছামতে ঔ পাগলের চিকিৎসা করে দিয়েছে, মেরে। পরবর্তীতে আর এমন কিছু করার কথা মাথায় আনবে না। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো রূপ।
রাতের খাবার সার্ভেন্ট রুমে দিয়ে গিয়েছে।বারিশের হাত কাঁটা থাকার কারণে রূপ সযত্নে নিজ হাতে বারিশকে খাবার খাইয়ে দিলো।খাবার শেষে জোর করে পেইন কিলার খাইছে। সম্পূর্ণ কাজগুলো বারিশ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলো। রূপের তাঁর প্রতি অতিরিক্ত কেয়ারিং ভালোলাগা, ভালোবাসা তিরতির করে বেড়ে যায়। আলাদা সুখ সুখ অনুভুতি হয়।এটাই তো সে চেয়েছিল। তাঁর রূপজান তাকে খুব ভালোবাসবে। নিজের মতো গুছিয়ে নিবে তাকে। তাঁর খুশির শেষ নেই।বারিশ খুব ভালো করে জানে তাঁর রূপজান কতোটা বেশি তাকে ভালোবাসে।শুধু প্রকাশ করা বাকি। রাতের খাবার খেয়ে রূপকে নিয়ে বারিশ ঘুমের প্রস্তুতি নিলো।বারিশের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে রূপ।আঙুল দ্বারা শার্টের বোতাম নাড়িয়ে দিচ্ছে।বারিশ চোখ বন্ধ করে রূপকে জরিয়ে ধরে গভীর ভাবে তাকে অনুভব করছে।রূপ কিছু সময় খচখচ করে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে উঠলো,
‘আপনি কী এখানো ঔ দিনের ঘটনা নিয়ে আপসেট।আমার উপর কী রেগে আছেন!’
রূপের কথা শুনে চোখ খুলে তাকালো বারিশ।ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
‘আপনার এমন মনে হওয়ার কারণ!’
রূপ পুনরায় ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,
‘না মনে হলো। কিছু কী হয়েছে? আপনি কি চিন্তিত কোনো বিষয়ে!’
বারিশ রূপের মুখ দুই হাত দিয়ে আলতো ভাবে ছুঁয়ে নাকে নাক ঘষে দিলো। কপালে কপাল ছুঁয়ে বলতে লাগলো,
‘উহুম মেরি জান।সব ঠিক আছে।আমি থাকতে কী কিছু বেঠিক হতে পারে! আমি সবসময় সবকিছু ঠিক করে দিবো। আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আগাম সব কিছু নিজ হাতে গুছিয়ে নিবো।কোনো বাধা আমাদের ছুঁয়ে দিতে পারবে না। কোনো কিছুতেই ক্রুটি থাকবে না।ভালোবাসি রূপজান।’
হাসলো রূপ।বারিশের থেকে মুখ ছুটিয়ে বারিশের বুকে মুখ গুজে দিলো। ফিসফিস করে কিছু একটা বললো। শুনলো না বারিশ।বারিশ রূপের মাথার চুলের মাঝে হাত ডুবিয়ে মৃদু হাসে।রূপ ঠোঁট বাঁকিয়ে অভিযোগ সুরে বলে,
‘সব হয়েছে আপনার ঔ ছয় ফুট উঁচু জিরাফের মতো গলা লম্বা আর রোবটের মতো স্টিক দাঁড়িয়ে থাকা অকর্মের গার্ডগুলোর জন্য।’
বউয়ের অভিযোগ শুনে হাসলো বারিশ। মুখটা কঠিন করে প্রতুত্তর করে বললো,
‘কেনো?কী করেছে অকর্মের গার্ড গুলো রূপজান?’
রূপ পুনরায় আগের ন্যায় মাথা গুঁজে বললো,
‘ওদের জন্য তো এতো কিছু হলো।এতো বড় জলজ্যান্ত পাগল পালিয়ে গিয়েছে এখন পর্যন্ত হাতে হাত গুটিয়ে তল্লাশি করছে।অদ্ভুত।সবকটাকে পানিশমেন্ট দিবেন।’
রূপের কথা শুনে বারিশ দাঁত কিরমির করে বলে উঠলো,
‘হুম শাস্তি তো পেতে হবে ঔ কুকুর ছানাকে।যে তোমাকে কষ্ট দিয়েছে। তাকে তো কঠিন শাস্তি পেতে হবে রূপজান।’
‘কী বিরবির করছেন!’
বারিশ নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,
‘শাস্তি দেওয়ায় ব্যবস্থা করছি।আর নিজের মনের আগাম প্রশান্তির।’
হাসলো রূপ।বারিশের হাতের আঙ্গুল দিয়ে খেলতে শুরু করলো। গল্পে গল্পে রাত ভারি হলো। দুজনে হেসে হেসে মনের খুনসুটি প্রকাশ করছে।ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ হোক প্রতিটি রাত। অপ্রকাশিত ভালোবাসা মনে মনে নিজেদের স্থায়ী জায়গায় খুঁজে নিক।
#চলবে,,,❣️
[লেখিকা~সুমাইয়া আক্তার মীম]
❌কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌
আরেকটু বড় করে গল্প দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও প্রচন্ড ক্লান্তি বোধ হওয়া আর লিখার ইচ্ছে জাগলো না। পরবর্তী পর্ব বড় করে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। কেউ অভিযোগ রাখবেন না।সকলে দুই লাইন গঠন মূলক মন্তব্য করে যাবেন।খুব শীঘ্রই গল্প শেষ হতে চলছে। নতুন গল্প আসতে চলছে খুব শীঘ্রই। ধন্যবাদ সবাইকে।