#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ২৬
#সুমাইয়া আক্তার মিম
_
নারী আসক্তি সবচেয়ে বড় আসক্তি যা একজন পুরুষকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে সহজেই সক্ষমতা রাখে। নারী আসক্তি, একসময় রূপ নেয় গভীর ধ্বংসের খেলা।নারী যেমন একজন পুরুষের জীবনের সবচেয়ে বড় এবং মূল চাবিকাঠির চরিত্র ধারণ করে ঠিক তেমনি একজন পুরুষকে ধ্বংসের যুদ্ধে অনায়াসে পরাজিত করতে পারে। শুধুমাত্র দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো আলাদা। মৃত্যু যখন মানুষকে আপন করে নেয় তখন চারপাশে সবকিছুই হয়ে উঠে ধোঁয়াশা আর নির্জীব।
ছায়ান গত দুই ঘণ্টা যাবত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে যেখানে ভেসে রয়েছে রূপের হাসৌজ্বল মুখ। বারবার পাগলের মতো স্ক্রিনে টার্চ করছে এবং খুব গভীরভাবে রূপকে পর্যবেক্ষণ করছে সে।এই প্রথম কোনো মেয়ের প্রতি কেমন প্রেম প্রেম শুভ্রতা জেগে উঠেছে মনে, উতলা হয়ে পরেছে। দিগুন পাগলামো বাড়ছে, ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে, অনুভব করতে চাইছে। ভাবনা গুলো তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। নারী আসক্তি সে খুব বাজে ভাবে আসক্তি। প্রতিদিন নারীর আলিঙ্গন না যেয়ে থাকে না সে।যার উপর কুনজর পরেছে যে করে হোক একদিনের বিছানা সঙ্গিনী করেছে।আজ প্রথম তাঁর সারাজীবন একটি মেয়ের স্পর্শে পেতে ইচ্ছে করছে। মাথায় ঘাম ছুটে গিয়েছে,এই মেয়েতো একদম আগুন সুন্দরী ছুঁয়ে দিলেই কেমন ঝলসে যাবে সে। হুম ঠিক, ছুঁয়ে দিলে তাঁর মতো পাপীর হাত ঝলসে যাবে কারণ সে নিকৃষ্ট জীব হয়ে শুভ্রতায় ভরে উঠা স্নিগ্ধ গোলাপের পিছনে ছুটেছে, মৃত্যু তাঁর কাম্য। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।তখন বারিশের ছবি দেখাচ্ছিলেন মি.রিপন।বারিশের সাথে রূপের নিউ ইয়ার এর একটি ছবি যেখানে রূপের হাসৌজ্বল মুখে আটকে যায় ছায়ান। তাঁর নেশা হয়,নারী নেশা। জাগ্রত হয় ভিতরের পশু মনে চলে লালসা যা তাঁর আগাম ধ্বংসের পূর্বাভাস।বারিশের ছবি থেকে আলাদা করে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে রূপকে।সে ভুলে গিয়েছে কার দিকে কুদৃষ্টি দিচ্ছে ভুলে বসেছে নিজের অবস্থান।এমনি তো হয় মৃত্যু,ইচ্ছাসহিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া আর মৃত্যুকে আপন করে নেওয়া।রূপকে তাঁর চাই! যেকোনো মূল্যে চাই এতে তাঁর জীবন চলে গেলো সে ভীতু হবে না। সারাজীবনের জন্য চাই যদি সারাজীবন না পায় এক রাত্রি হলেও এই মেয়ের সংস্পর্শে আসতে চায় সে।এই মেয়ের সংস্পর্শে এসে মৃত্যু হলেও সে বিজয়ী আর ছায়ান বিজয়ী হতে অনেক ভালোবাসেন। বিজয়,অন্যের কষ্ট, কাউকে নিজের সামনে দুমরে মুচড়ে শেষ হতে দেখলে তাঁর মাঝে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব হয়।রূপ তাঁর জিদ হয়ে গিয়েছে যাকে সে ভালোবাসা বলে সম্বোধন করছে। তাঁর রূপকে সারাজীবন চাই, শুধুমাত্র ভোগবিলাসের জন্য। সারাজীবন না পেলেও একটি রাতের জন্য হলেও চাই।তাঁর মনের নর্দমায় জমে রয়েছে অসৎ ভাবনা, রয়েছে খারাপ চিন্তাধারা, চোখে রয়েছে রূপের জন্য লালসা,যাকে তাঁর চাই।এটাকে ভালোবাসা বলে না। ভালোবাসা হচ্ছে পবিত্র বন্ধন, পবিত্র চিন্তা ধারা যেখানে সব জায়েজ। ভালোবাসা হলো,সে বিহীন মৃত্যুই শ্রেয়। ভালোবাসা ছাড়া কোনো কিছু কল্পনা করা যায় না। এক মিনিট দূরত্ব মনে হয় মৃত্যু সমপরিমাণ কষ্ট।যার কষ্টে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে দিতে ইচ্ছে হয়।যার দিকে খারাপ দৃষ্টি দিলে সেই দৃষ্টিকে ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হয়।ঠিক এমনি হয় ভালোবাসা যার হাজার হাজার উদাহরণ রয়েছে। ভালোবাসা নিয়ে হাজার কবি লিখেছেন নিজেদের মতো করে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।মি.রিপন একপাশে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছেন কিন্তু সেটা ছায়ানের ভয়ে নয়,দ্যা বারিশ খানের ভয়ে।বারিশ খান কী করবে সেটা ভাবলে তাঁর বুক মরুভূমির ন্যায় শুকিয়ে যাচ্ছে।এই পাগল অন্যের বউয়ের ভাবনায় দিশেহারা হয়ে রয়েছে যদি বারিশ জানতে পারে তাহলে আর রক্ষে নেই।বারিশ সম্পর্কে খুব ভালো করে ধারণা রয়েছে মি.রিপনের।সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি সবটা লোকমুখে শোনা।বারিশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত নয় কারণ বারিশের অস্তিত্ব জুড়ে রহস্যের সহবাস।বারিশ সকলের কাছে খোলসা না সম্পূর্ণ আবরনে ঢাকা,খুবই ভয়ংকর চরিত্রে লোক সে।মি.রিপন নিজের গলায় হাত বুলিয়ে মৃদু কুকিয়ে উঠেন,হাত সামনে এগিয়ে দেখলেন বিন্দু বিন্দু রক্তের ছাপ।যখন ছায়ান রূপকে নিজের লালসাময় দৃষ্টি দিয়ে গিলে খাচ্ছিল তখন ভয়ে শিউরে উঠেন মি.রিপন। তাঁর বুঝতে অসুবিধা হয়নি এই সাইকো বারিশ খানের কলিজার উপর কুদৃষ্টি দিয়েছে যার ফলস্বরূপ তাঁর কলিজা ছিঁড়ে নিবে বারিশ।মি.রিপন ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো ,কপালে ঘাম জমেছে তাঁর। ছায়ান বিরবির করে গানের সুরে বলছেন, বেবিডল ইউ আর মাইন। তোমাকে চাই খুব করে চাই।ছায়ানের এমন কথা শুনে মি.রিপন উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,
‘কী..কী করছেন বস।ইনি বারিশ খানের ওয়াইফ যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে বারিশ খান।এর দিকে তাকানো মানে নিজ থেকে নিজের মৃত্যুকে দাওয়াত দেওয়া। আমাদের উচিত এখনি আমেরিকা ত্যাগ করা। এতোক্ষণে হয়তো বারিশ খানের লোক জেনে গিয়েছে ড্রাগস ডিলের পেছনে আমাদের হাত তারউপর এমন কিছু আঁচ করতে পারলে জানে মেরে দিবে বারিশ খানের লোক।প্লীজ স্যার বোঝার চেষ্টা করুন।’
ছায়ানের কোনো হেলদুল নেই সে আপনমনে রূপকে দেখছে মুখে লেপ্টে আছে বিশ্রী হাঁসি।মি.রিপন এইবার খুব ক্ষিপ্ত ছায়ানের উপর। কেনো যে ডাবল পয়সা ইনকাম করার জন্য এমন পাগলের কাছে কাজ করতে এসেছিলো এখন নিজেও মরবে তাঁকেও মারবে।মি.রিপন পুনরায় বলে উঠেন,
‘প্লীজ বস চলুন এখান থেকে।আর এটা কোনো মেয়ে নয় জলজ্যান্ত মৃত্যুর ফাঁস যা তিলে তিলে আপনাকে শেষ করে দিবে। এর পেছনে ছুটা মানে মৃত্যু আপনার খুব নিকটে।আ…..’
কথাটা পরিপূর্ণ করার পূর্বে ছায়ান রেগে উঠে খামচে ধরলো মি.রিপনের গলা।ছায়ানের ধারালো নখের আঁচড়ে খানিকটা ডেবে যায় মি.রিপনের গলা। টুপ টুপ রক্ত ঝরছে গলা বেয়ে সাথে থরথর করে কাঁপছে মি.রিপন।ছায়ান হিংস্র ভাবে রেগে হিসহিসিয়ে বললো,
‘আমার মৃত্যুর কথা আমাকে শুনাতে এসেছিস।এতো সাহস আসে কোথায়?এই পৃথিবীতে এমন কাউকে বাঁচিয়ে রাখবো না যে আমার মৃত্যুর কবজ হতে পারে।আই লাভ মাই লাইফ। খুব ভালোবাসি নিজের জীবনকে এর থেকে বেশী কাউকে আমি ভালোবাসি না।যে আমার মৃত্যুর কারণ হতে চাইবে তাকে আমি গুম করে দিবো।আর রইলো বেবিডল,একে তো যেকোনো মূল্যে আমার চাই।বেবিডলকে না নিয়ে এই দেশ আমি ছাড়ছি না।দ্যা বারিশ খান থেকে তাঁর কলিজা আমি ছিনিয়ে নিবো আর দ্যা বারিশ খান সেই দুঃখে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে।ইয়েস,মাই ডগ এটাই হবে।’
মি.রিপনের গলা ছেড়ে কথা গুলো বলে উচ্চ স্বরে পাগলের মতো হেসে উঠলো।মি.রিপন গলা চেপে কাশতে লাগলো।
তখনের ঘটনা মনে করে গলার আঁচড়ের জায়গা চেপে ভয়ে কাঁপতে লাগলেন তিনি।এই পাগল তাকে মেরে দিবে আর নাহলে বারিশ খান মারবে তাঁর থেকে ভালো কিছুদিন এই সব ঝামেলা থেকে দূরে থাকা। তাই তাকে এখন এই জায়গা থেকে কেটে পরতে হবে।মি.রিপন গলা ঝেড়ে আস্তে করে বলেন,
‘বস আমার ছুটি প্রয়োজন। কিছু দিন পর ফিরে আসবো।একটু নিজ দেশে যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো।’
ছায়ান স্ক্রিনে তাকিয়ে অদ্ভুত হেসে বললো,
‘অবশ্যই মি.রিপন। আপনাকে ছুটি দেওয়া হবে এবং তাও সারাজীবনের জন্য।’
ছায়ানের কথার মানে বুঝতে পারেনি মি.রিপন।বুঝার পূর্বে একটা বুলেট তাঁর বুকের বাম পাশে ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পরেন তিনি।ছায়ান মোবাইলের স্ক্রিনে থেকে চোখ নামিয়ে মি.রিপনকে দেখে বাঁকা হেসে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বুকে সর্বোচ্চ দিয়ে লাথি মারে, ছটফট করে উঠলো মি.রিপন। মুখে কিছু বলতে পারছে না। মনে মনে নিশ্চয়ই অভিশাপ দিলো এই পাপী হায়েনাকে।আস্তে আস্তে মৃত্যুর নিদ্রা নেমে এলো তাঁর আঁখি জোড়ায়।ছায়ান দাঁত কড়মড় করে বলে উঠলো,
‘ভীতু কাপুরুষ একটা।আমার খেয়ে অন্যের প্রশংসা হচ্ছে।’
কথাটা বলে বিশ্রী হেসে রূপের ছবিতে চুমু খেয়ে বলে উঠলো,
‘তোমাকে পাওয়া এতো সহজ নয় বেবিডল। কিন্তু ডোন্ট ওয়ারি, আমি তোমাকে আমার কাছে খুব শীঘ্রই নিয়ে আসবো।ছায়ান সিত্তিস এর নজর পরেছে আর তুমি আমার হবে না এটা কী হতে পারে! কিন্তু তোমাকে পেতে হলে আমার জীবন রিস্ক রয়েছে আর তুমিতো বুঝতে পেরেছো আমার জীবন আমার কাছে কতোটা দামি তাই তোমাকে পেতে কিছুটা কারসাজি করতে হবে।আমি কিন্তু তোমাকেও খুব ভালোবাসি তাই তোমাকে আমার চাই মানে চাই।রাজার রাজ্যে থেকে রানিকে নিয়ে আমি গুম হয়ে যাবো আর রাজা কিছু করতে কিংবা বুঝতেই পারবে না। জীবনে এই প্রথম আমি তোমাকে পাওয়ার জন্যে নিজেকে এতো রিস্ক করেছি বিনিময়ে তোমাকে কিন্তু চাই। জীবন আর তুমি দুটোই আমার খুব প্রিয় হয়ে গিয়েছে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
ছায়ান সিত্তিস মৃত্যুকে ভয় পায় কিন্তু মৃত্যুকে আপন করার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছে,একেই বলে আধুনিক যুগের আপডেট পাগল 🌚।যদি কখনো তাঁর জীবন আর রূপের মাঝে যেকেনো একজনকে বেছে নেওয়া হয় অনায়াসে সে তাঁর জীবনকে বেঁচে নিবে।সে আবার বড় গলায় বলে সে রূপকে ভালোবাসে, যার আপাদমস্তিকে ভালোবাসা কী জানে না সে কি করে কাউকে ভালোবাসতে পারে।ছায়ান এতোটাই মেন্টালি সিক এই সামান্য বিষয়টি মানতে নারাজ, জোর করে কাউকে ভালোবাসি বলে গর্ব করে বেরাচ্ছে সে।
_
রূপ শাওয়ার নিয়ে মিররের সামনে বসে নিজেকে দেখছে। আজকাল নিজের কাছে নিজেকে বেশ সুন্দরী মনে হয় ব্যপারটা হাস্যকর মনে হলেও সত্যি। বসন্তের ন্যায় মনে বিচরণ করে প্রতিনিয়ত ভালোলাগা ভালোবাসা। রুমের পুলসাইটের থাই সরিয়ে নিচে তাকাতে দেখতে পেলো বারিশ গার্ডের সাথে কিছু জরুরী বিষয়ে কথা বলছে।তাকে শাওয়ার নিয়ে অপেক্ষা করতে বললো কিছু সময়, একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে যাবে।বারিশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুমে চলে আসলো। আজকাল অকারণে সারক্ষণ ড্যাবড্যাব করে বারিশের দিকে তাকিয়ে থাকে যার ফলস্বরূপ বারিশের নানা রকমের দুষ্টু কথা এবং তাকে জ্বালাতনে সম্মুখীন হতে হয়। দিনকে দিন বারিশের রোমান্টিক অত্যাচার গুলো তাঁর উপর বেশ ভারি পরছে কিন্তু রূপ, সেও কম নয়। কোনো কিছুই ছাড় দেওয়ার মেয়ে সে না। প্রতিটি বিষয়ে বারিশকে দক্ষতার সাথে জবাব দেয়।বারিশের সাথে থাকতে থাকতে তারই মতো ট্রিট করে সে।বারিশকে জব্দ করে বেশ সাহসী নারীর পরিচয় দেয় রূপ অবশ্যই সাহসী তো হবেই,দ্যা বারিশ খানের বিবি বলে কথা। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। আজকাল বারিশ তাকে বন্দুক চালানো আর তীর ধনুক শিখাচ্ছে। এগুলো এখন তাঁর ভয় লাগে না বেশ দক্ষতার সাথে শিখছে কিন্তু পেরে উঠতে একটু সময় নিবে। রোজ নিয়ম করে এসব শিখছে সাথে নৃত্য শিখছে রিনির সাথে ইউটিউব দেখে দেখে। নৃত্য করা তাঁর ছোটবেলার ইচ্ছে তাই শিখা।বারিশও রূপের কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখছে না।যা চাইছে বলার পূর্বে পেয়ে যাচ্ছে। নিজের রুমের পাশের রুমের মাঝে বারিশ গার্ড দিয়ে নৃত্য শিখার প্রয়োজনীয় সব কিছু দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে।
রূপ মিররের সামনে চিন্তিত মুখ করে বসে রয়েছে।এই শীতের সকালে সে চুল ভিজিয়ে শাওয়ার নিয়েছে। এখন বারিশ তাঁর কী করবে এটা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে খুব।বারিশ বারবার তাকে নিষেধ করেছে শাওয়ার নিতে যদি নেও যাতে চুল না ভিজায় এবং হিটার ব্যবহার করতে। কিন্তু রূপ হিটার তো ব্যবহার করেছে কিন্তু চুল ভিজিয়ে এখন ভয়ে সিটিয়ে আছে।বারিশ এসে দেখলে মেরে লাল করে দিবে তাঁকে।এতো লম্বা চুল নিজ হাতে আঁচড়াতে পর্যন্ত পারে না সেখানে কী করে বিনা সাহায্যে শুকাবে সে।বারিশ সবসময় চুল শুকিয়ে দিবে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে সেতো হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে পর্যত ভালো করে জানে না। এখন তো বারিশকে বলা যাবে না, কী করবে সে?তখনি খটখট দরজায় আওয়াজ হতে রূপ মলিন গলায় ভিতরে আসতে বললো। হাতে হট চকলেট নিয়ে রুমকি এসেছে।রুমকি হচ্ছে রূপদের একজন বাঙ্গালী সার্ভেন্ট। গতবার মিসেস মিথিলা রুমকিকে দেশ থেকে নিয়ে এসেছিলেন কাজের জন্য।বেশ মিষ্টি দেখতে বোকা স্বভাবের মেয়ে।রুমকিকে দেখে রূপ খুশি হয়ে হাত থেকে হটচকলেট নিয়ে তাঁর চুল শুকিয়ে দিতে বললো।রুমকি কিছুটা ভয় পেলো কারন বারিশ খুব রেগে যাবে দেখলে কিন্তু রূপ কিছু হবে না বলে জলদি জলদি শুকিয়ে দিতে বললো।রুমকিও খুশি মনে তাই করতে লাগলো।রূপ বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে বারিশ আসছে না দেখে রূপ এক চুমুক হট চকলেট খেয়ে রুমকিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘রুমকি একটা বসন্তের প্রেম প্রেম টাইপের বাংলা গান শুনাওতো।’
রুমকি শুকনো ঢোক গিললো।ধীর গলায় বললো,
‘ম্যাম আমি। আমার গলার স্বর খুব বাজে আর আমাকে এখানে স্যার দেখতে পেলে খুব বকবে। তাঁর উপরে স্যার ব্যতিত কেউ আপনার চুল স্পর্শ করে না এটা স্যারের খুব প্রিয়।’
রূপ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বিরক্তি সুরে বললো,
‘উফ্ রুমকি এতো চিন্তা করবে না তো। তোমার স্যারকে আমি সামলিয়ে নিবো কিছু হবে না। এখন যা বলেছি তাই করবে। তারাতাড়ি গান গাইতে শুরু করো।’
রুমকি বেচারি ভয় পেলো।ম্যামের কথা না শুনলে স্যার তাকে আস্ত চিবিয়ে খাবে তাই দরজার দিকে একবার তাকিয়ে বেসুরে গলায় গাইতে শুরু করলো,
”মনে রং লেগেছে বসন্ত এসেছে খুশিতে মেতেছে জীবন।”
আরেক লাইন গাওয়ার পূর্বে রূপ চোখ মুখ কুঁচকে উচ্চ স্বরে বলে উঠলো,
‘এটা আবার কেমন দারা গান।ইয়াক, খুব বাজে গান। তোমাকে আর গাইতে হবে না।’
রুমকি ঠোঁট ফুলিয়ে বলে উঠলো,
‘জ্বী ম্যাম।’
রূপ হাসলো। এমন গান সে প্রথম শুনেছে আর রুমকির গলা তো নয় জেনো মঞ্চের মাইক। ভাবতেই পুনরায় ঘর কাঁপিয়ে উচ্চ স্বরে হাসলো রূপ। রুমকি বেচারি রূপের হাসি দেখে মাথা নিচু করে নিজেও হেসে দিলো।চুল শুকানো হয়ে গিয়েছে রুমকি তাই রুম ত্যাগ করলো।রূপ উঠে বারিশের উদ্দেশ্য পা বাড়াবে তখনি উচ্চ স্বরে বেজে উঠলো মোবাইলটি। কিন্তু রূপের মোবাইল টোন তো এটা নয়, না বারিশের। তাহলে কার মোবাইল বাজছে তাদের বেড রুমে! রূপের ভ্রু কুঁচকে এলো, আওয়াজ অনুসন্ধান করে এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারলো তাঁর পার্স থেকে আওয়াজ আসছে।রূপ ঠোঁট উল্টিয়ে কিছু একটা ভেবে মোবাইল বের করে নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখলো,না এটা তাঁর মোবাইল নয়। কিন্তু বিষয় হচ্ছে অন্যকারোর মোবাইল তাঁর পার্সে কী করছে?ভাবতে ভাবতে একসময় কল কেটে গেলো কিন্তু কল কেটে গিয়ে মোবাইলে ভেসে উঠলো ত্রিশ মিনিট এর একটি ছোট ভিডিও। হয়তো ভিডিও করেই মোবাইল লক করে দিয়েছে যার ফলস্বরূপ মোবাইল লক খোলার পর ভিডিও সামনে চলে এসেছে। যেহেতু তেমন কোনো লক ছিল না তাই মোবাইলে কল আসায় মোবাইল উপেন হয়ে গিয়েছে। রূপের খুব ইচ্ছে জাগলো ভিডিওটা দেখার জন্য।তাই কার মোবাইল? কোথা থেকে এসেছে? সেসব বাঁধ দিয়ে ভিডিও উপেন করে দিলো।ভিডিও উপেন করতে অটোমেটিক চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গিয়েছে রূপের। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে সে কিন্তু স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠা প্রতিটা জিনিসের উপর। ইচ্ছে থাকার শর্তেও মোবাইল রাখতে পারছে না।সে জেনো ভয়ে জমে গিয়েছে। নড়াচড়া করার শক্তি পর্যন্ত নেই। কেমন করে পশুর মতো একটা মানুষকে কাটছে, দেখে মনে হচ্ছে খুব সাধারণ কিছু কাটছে। এমন দৃশ্য কখনো দেখেনি রূপ ভয়ে রিতিমত বুকে ব্যথা অনুভব করছে সে কিন্তু গলা দিয়ে নূন্যতম আওয়াজ বের করতে পারছে না। শরীর জেনো আসর হয়ে এসেছে, গলা দিয়ে ঘাম ঝরছে টপটপ।খুনির চেহারা সম্পূর্ণ স্পষ্ট।স্পষ্ট চারিপাশ।রূপ আর থাকতে পারেনি মোবাইলটা সজোরে ফ্লোরে ফেলে দিলো।বারিশ আওয়াজ পেতে দৌড়ে ছুটে আসলো।রূপ চিৎকার করে তাকে ডাকছে, খানিকের মাঝে বারিশ থমকে গেলো,মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।রূপ চিৎকার করছে কেনো?বারিশ দিশেহারা হয়ে ছুটে আসতে রূপ তাকে জাপটে ধরে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিলো। শরীর থরথর করে কাঁপছে।বারিশ আষ্টেপৃষ্ঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে নানা কথায় শান্ত হতে বলছে কিন্তু রূপের চিৎকার থামাথামি নেই সে কেঁদেই যাচ্ছে। বারবার মুখে আওড়াতে লাগলো,
‘বারিশ!খুন।মেরে ফেলছে ওরা লোকটিকে। খুব নিকৃষ্ট ভাবে মেরেছে। আমার খুব ভয় করছে বারিশ আপনি শক্ত করে জড়িয়ে রাখুন আমাকে।’
একই কথা বলেই যাচ্ছে। হঠাৎ কী হয়েছে বুঝতে পারলো না বারিশ কিন্তু বেশি সময় লাগেনি বুঝতে।ফ্লোরে পরে থাকা মোবাইল থেকে এখনো আওয়াজ আসছে।সেই আওয়াজ রূপের ভয় দিগুন করছে বুঝতে পেরে গার্ডকে ইশারায় মোবাইল টা নিয়ে যেতে বললো।গার্ড মোবাইল নিয়ে চলে যেতে বারিশ রূপকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। রূপ এখনো আগের মতো কান্না করছে।বারিশ রূপের মাথায় আলতো হাতে বিলি কেটে দিচ্ছে। চোখে মুখে তাঁর ভয়ংকর রাগ। ফর্সা মুখ ধারন করেছে রক্তিম আভা,খুব বিধ্বস্ত লাগছে তাকে। রূপের একেকটা চোখের পানি রক্ত ক্ষরণ করছে বুকে। ঘাড় এদিক সেদিক ঘুরিয়ে রূপের কপালে চুমু খেলো।রূপ পুনরায় উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,
‘ও..ওরা ম.মেরে ফেললো। বুঝতে পেরেছেন,খখুব বা.বাজে ভাবে।আ…’
বারিশ রূপের ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। বারিশ রূপকে ঠোঁটের ভাজে বুঝিয়ে দিলো, চিন্তা করবে না মেরি জান আমি আছি তো।এইবার ক্ষান্ত হলো রূপ। থেকে থেকে কাঁপুনি কমে গেলো নিমিষেই।বারিশ গভীর চুম্বন দিয়ে রূপকে কোলে তুলে রুফটপের দিকে অগ্রসর হলো।বারিশের গলা জড়িয়ে বুকে মাথা হেলিয়ে দিলো রূপ। এইবার শান্তি লাগছে, নিজেকে সেইফ মনে হচ্ছে। তাঁর ভালো থাকার সুখের নীড় বারিশ। আরো টাইট করে জরিয়ে ধরে মনে মনে বলে উঠলো,
‘ভালোবাসি মি.সুপারহিরো।’
রূপের কাছে বারিশ সুপার হিরো। শুধুমাত্র তাঁর সুপার হিরো।
#চলবে,,,❣️
[লেখিকা-সুমাইয়া আক্তার মিম✵]
❌কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌
[ছায়ান সিত্তিস কে নিয়ে লিখতে লিখতে আপনাদের লেখিকা নিজেও পাগলপ্রায়।এই ছায়ান সিত্তিস চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলতে প্রচন্ড হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাকে। বুঝতেই পারছেন ছায়ান ক্যারেক্টার প্রচন্ড সাইকো যার কথা কাজে আপনাদের মাথা ঘুরিয়ে দিবে, এলোমেলো লাগবে। অবশ্যই পাগলের কথাবার্তা এলোমেলই হবে স্বাভাবিক তাই সবাইকে ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইল এবং শেষটা ভালো কিছু আছে তাই সকলে পাশে থাকবেন শেষ পর্যন্ত। ধন্যবাদ সবাইকে।]