#কি_করে_বলবো_তোমায় পর্ব-৩
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা
অন্যদিকে রিয়া-রায়হান আগের মতোই ঝগড়া করছে। কে আগে আমাদের সাথে সেলফি তুলবে।🥴
রিয়া : আমি আগে সেলফি তুলবো তারপর অন্য কেউ😏
রায়হান : না আগে আমি আসছি আমি আগে সেলফি তুলবো।
তারপর তানভীর ক্যামেরাম্যান কে (তানভীর-ঊর্মি এর দুইপাশে রিয়া-রায়হান কে দাড় করিয়ে অনেক গুলো ফটোসুট করলো।
বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে সবাই চলে গেলো সাথে ঊর্মির এর পরিবারও। তানভীর আসার আগেই ঊর্মি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো সারাদিনের ক্লান্তিতে।
তানভীর রুমে এসে দেখে ঊর্মি আগেই ঘুমিয়ে গেছে তাই সে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে চলে গেল। (তোমাকে হয়তো কোনোদিন বলাই হবে না কতটা ভালোবাসি তোমাকে। #কি_করে_বলবো_তোমায় কতটা চাই কিন্তু তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না। তুমি তো অন্য কাউকে ভালোবাসো। কোন মুখে বলবো তোমার ভালোবাসি? জোর করে তো কারো মন পাওয়া যায় না। আমি ফিরিয়ে দেবো তোমাকে তোমার ভালোবাসার কাছে। তোমাকে আমি কষ্ট পেতে দিতে পারবো না মায়াবতী মনে মনে) তানভীর রুমে এসে বিছানায় ঊর্মির পাশে শুয়ে পড়লো।
সকালে……
আমি : মনে হচ্ছে কেউ আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে যেন ছাড়া পেলেই আমি কোথাও পালিয়ে যাবো। তাকিয়ে দেখি তানভীর আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আমি উনাকে দেখছি বাতাসে চুল গুলো উনার কপালে বারি খাচ্ছে। (এ কদিনে তানভীরকে আমার বেশ ভালোই লাগে। আমি আমার অতীত ভুলে নতুন করে সব শুরু করতে চাই। যাইহোক আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তানভীর এখন আমার স্বামী তার সাথেই আমাকে সুখে থাকতে হবে। তানভীর অনেক ভালো একটা ছেলে। তানভীর এর সাথে আমায় কথা বলতে হবে) একটু নড়তেই তানভীর উঠে গেলো কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে। তারপর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
আমি উঠে বেলকনিতে গেলাম। আজ আমি আমার আব্বু-আম্মুর সাথে দেখা করতে যাবো ভেবেই খুব আনন্দ হচ্ছে।
তানভীর ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখে ঊর্মির বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। যেহেতু আজ ঊর্মিকে নিয়ে ঊর্মি বাপের বাড়ি যাবে তাই তাকে ফ্রেশ হয়ে রেডি হিয়ে নিতে বলে।
শশুর-শাশুড়ির থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলো বাপের বাড়ির উদ্দেশ্য। বাড়ি পৌঁছাতেই ১ টা বেজে গেছে। বাড়িতে আসতেই আব্বু-আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। অনন্ত আর তানভীর গল্প করছে। আব্বু-আম্মুও তানভীর এর সাথে ভালো মন্দ কথা বলছে। আমি আমার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ২ দিন পর নিজের রুমটাতে আসছি মনে হচ্ছে কত বছর পর আসলাম। একটা আলাদা শান্তি কাজ করছে। আমি আরামে বিছানায় ঘুমিয়ে গেছি এর মধ্যে তানভীর রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অনন্তর সাথে গল্প করছে। আমাকে কেউ ডাকও দেয়নি। ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তানভীর রুমেই ছিলো। এতোক্ষণ আমি কি করে ঘুমালাম কেউ আমাকে ডাক পর্যন্ত দেয়নি।
আমি : তানভীর আমি এতোক্ষণ ঘুমালাম আর আমাকে কেউ ডাকও দিলো না আপনিও তো ডাকতে পারতেন।
তানভীর : তোমার কয়েকবার ডাকা হয়েছে কিন্তু তুমি উঠোনি তাই পরে আর তোমাকে ডাকি নি।
আমিও কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম তখন দেখি তানভীর রুমে নেই বাইরে কথা বলার আওয়াজ আসছে। রিয়া, অনন্ত, তানভীর গল্প করছে।
রিয়া : কিরে ঊর্মি আয় আমাদের সাথে আড্ডা দিবি।
অনন্ত : আপু আয় আমরা গল্প করি।
আমি : না ভাইয়া আমার ভালো লাগছে না। রিয়া তোরাই গল্প কর আমি বরং নিজের রুমে যাচ্ছি।
অনন্ত : কি হয়েছে আপু শরীর খারাপ নাকি তোর?
আমি : না ভাইয়া আমার কিছু হয়নি এমনি ভালো লাগছে না (বলে নিজের রুমে চলে আসলাম)
আমি আসার পর তানভীরও রুমে আসলো।
তানভীর : তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে ঊর্মি?
আমি : না।
তানভীর : তাহলে তখন বললে ভালো লাগছে না তোমার।
আমি : তানভীর আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
তানভীর : হ্যাঁ বলো।
অতীত……..
আজ কলেজে প্রথম দিন রিয়ার জন্য লেট হয়ে গেলো। কলেজে পৌছুতেই গেইটের সামনে কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেলাম। অবশ্য আমি একা পড়ে যাইনি সেই ব্যক্তিটিও আমার সাথে পড়ে গেছে। সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে মাটিতে বসে আছে।
সরি…… (দুজনে একসাথেই বললাম)
ছেলেটি : হ্যালো আমি আসিফ। আপনার নাম?
আমি : আমার নাম ঊর্মি।
আসিফ : কোন ইয়ার?
আমি : ১ম বর্স আজই কলেজের প্রথম দিন ছিল। আচ্ছা এখন আসি আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। চল রিয়া।
এভাবেই কাটছিলো সময় এর মাঝে আমার আর আসিফের বন্ধুত্ব হয়। ওর আর আমার মাঝে বন্ডিং টা বেশ ভালোই ছিলো।
একদিন আসিফ আমাকে কল করে বলে ওর সাথে দেখা করতে। আমিও দেখা করতে যাই একটা নদীর পাড়ে। গিয়ে দেখি আসিফ আগে থেকেই ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে গিয়ে আসিফকে ডাক দিলাম। আসিফ…….. (আসিফ ফুল হাতে একটা হাটু গেড়ে বসে পড়লো)
আসিফ : i love you Urmi! Will you be mine?💙
আমি : i love you too Asif🥺 (এ কদিনে আমিও আসিফকে ভিশন ভালোবেসে ফেলেছি)
২ বছর পর…..আজ আমাদের ভালোবাসার ২ বছর পূর্ন হলো তাই আমি আসিফের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। আসিফের কথা আব্বু-আম্মু আগে থেকেই জানতো। আব্বু-আম্মু আমাকে সবসময় স্বাধীনতা দিয়েছে কারণ তাদের বিশ্বাস ছিলো তাদের শিক্ষা কখনো ভুল হতে পারে না। তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরলাম ওর সাথে দেখা করবো বলে।
দেখা করতে গিয়ে এমন কিছু জানতে পারবো তা কখনো ভাবতেও পারিনি। আমার ভালোবাসার মানুষটা আমাকে শুরু থেকেই ঠকালো।
আসিফের বন্ধু রাসেল বললো আজ নাকি আসিফের বিয়ে তার কাজিন আনিকার সাথে। ওদের বিয়ে নাকি আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। এটা শুনে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারিনি সেদিন বাড়ি ফিরে খুব কান্না করেছিলাম। আসিফ আমার সাথে এমনটা কেনো করেছিলো এটা জানার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার। ও তো পারতো সবটা আমার জানিয়ে দিতে। ও কোনো আমার অনুভূতি নিয়ে খেলা করলো??
বর্তমানে…….
তানভীর : মেয়েটার মনে কতো কষ্ট আর আমি ঊর্মিকে ভুল বুঝে আসলাম একবারও জানতে বা শুনতে চাইলাম না সেদিন রাতে সে কি বলতে চাইছিলো আমায় (মনে মনে)
আমি : তানভীর আমি সেদিন আপনাকে বলতে চাইছিলাম যেহেতু আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে আমরাও সুখে সংসার করতে পারি। কিন্তু তার জন্য আমি এখন প্রস্তুত নই আমার কিছু সময় প্রয়োজন।
আম্মু ডাকছে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। তাই আমরাও চলে গেলাম বাইরে……খাবার খেয়ে আম্মু-আম্মু আর অনন্তর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে যে যার মতো নিজেদের রুমে চলে গেলো। আমি আর তানভীরও রুমে চলে আসলাম ঘুমানোর জন্য।
পরেরদিন দিন থেকে চলে আসলাম শশুর বাড়ি তানভীর এর অফিসের কাজ আছে বলে। এভাবেই কাটছিলো দিন আজ আমার আর তানভীর এর বিয়ের ৩ মাস হলো। অনেক পরিবর্তন হয়েছে আমাদের সম্পর্কের। হ্যাঁ আমি তানভীরকে ভালোবাসি আর তানভীরও আমাকে ভিষণ ভালোবাসে। বিয়ের পর নাকি আল্লাহ তায়ালা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে মোহাব্বত দেয়। অনেক ভাগ্য করে এমন স্বামী পাওয়া যায়।
চলবে?…….