#কি_করে_বলবো_তোমায় অন্তিম_পর্ব
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা
আজ অনেকদিন পর ভার্সিটিতে আসছি। তানভীর পৌঁছে দিয়ে গেছে আবার বাসায় যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে। আমি আর রিয়া ক্লাস শেষ করে মাঠে একটা গাছের নিচে বসে আছি তখন রিয়া বললো…..
রিয়া : ওও তোকে তো বলাই হয়নি। শোন তোর সাথে আমার কথা আছে।
আমি : হ্যাঁ বল! কি বলতে চাইছিস?
রিয়া : ইয়ে মানে ঊর্মি, ইয়ে মানে,
আমি : এতো ইয়ে মানে করতে হবে না বলে ফেল।
রিয়া : আমি আর রায়হান একে অপরকে খুব ভালোবাসি।
আমি : ওও এই কথা।
রিয়া : তুই অবাক হলি না
আমি : না। তোরা যেভাবে ঝগড়া করতিস। আর তোর জিজু আমাকে আগেই বলেছিলো।
রিয়া : জিজু জানলো কিভাবে?
আমি : ভুলে যাস না তুই যেমন আমার বেস্টফ্রেন্ড তেমনি তানভীরও রায়হান ভাইয়া বেস্টফ্রেন্ড।
রিয়া : তাই বল।
আমি : আচ্ছা চল এখন গেইটের দিকে যাই তানভীর আসবে আমাকে নিতে।
রিয়া : হ্যাঁ চল ঊর্মি।
উঠতে যাবো তার আগেই আসিফ সামনে এসে দাড়ালো। এতো কিছুর পরও নির্লজ্জের মতো সামনে এসে দাড়িয়ে আছে।
আসিফ : ঊর্মি তোমার সাথে কিছু কথা আছে!
রিয়া : ঊর্মি তোমার সাথে কোনো কথা বলবে না। চল ঊর্মি!
(আমি কোনো কথাই বলছি না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি)
আসিফ : ঊর্মি প্লিজ আমার কথাটা শুনো একবার। আমি জানি তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে আসছি।
আমি : আপনাকে ক্ষমা করার কোনো প্রশ্নই আসে না। আপনি একটা প্রতারক।
আসিফ : ঊর্মি জানি আমি ভুল করেছি কিন্তু সেদিন আমার হাতে কিছু করার ছিলো না।
আমি : কি বলতে চাইছেন আপনি?
আসিফ : তোমাকে ঠকানোর ইচ্ছে আমার ছিলো না। আমি তো তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু মায়ের ইচ্ছে ছিলো উনার বোনের মেয়ের (আনিকা আসিফের স্ত্রী) সাথে আমার যাতে বিয়ে হয়। মা আমার সেই ছোট বেলা থেকেই আনিকার সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন আমি তা জানতাম না। জানার পরপরই মা আমদের বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়েটাতে আমি রাজি ছিলাম না কিন্তু মায়ের ইচ্ছের কাছে আমি হেরে গিয়েছিলাম।
আমি : আপনি তো আমাকে জানাতে পারতেন!
আসিফ : পরিস্থিতি তেমন ছিলো না। আচ্ছা যাই হোক তুমি আমাকে মাফ করে দাও। আর তোমার স্বামীকে নিয়ে সুখী হও। আমি অতীত ভুলে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তুমিও অতীত ভুলে জীবনে এগিয়ে যাও।
আমি : হুম! আমিও আমার অতীত ভুলে বর্তমান আর ভবিষ্যতকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছি। আচ্ছা আজ আসি ভালো থাকবেন।
আসিফ : তুমিও ভালো থেকো। (#কি_করে_বলবো_তোমায় কতটা ভালোবাসি। সবার চাওয়াটা তো আর পূরণ হয় না। হয়তো তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে না। হ্যাঁ আমি আমার স্ত্রীকে আপন করে নিয়েছি কিন্তু তোমার জায়গাটা আলাদা। আনিকাও আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে খেয়াল রাখে। তুমি সুখী হও ঊর্মি তোমার জীবনে। আল্লাহ তায়ালা যা করেন ভালো জন্যই করেন)
গেইট এর সামনে এসে দেখি তানভীর আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি : তুমি কখন এলে তানভীর?
তানভীর : এইতো কিছুক্ষণ হলো। চলো যাওয়া যাক। গাড়িতে উঠো।
আমি : হ্যাঁ চলো।
বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম দুজনে। তারপর সারাদিন শাশুড়ী মায়ের সাথে গল্প করতে করতে কেটেছে। সবাই একসাথে রাতের খাবার খেয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম আমি আর তানভীর। তানভীর ঘুমোনোর জন্য তৈরি হচ্ছে।
আমি : তানভীর তোমার সাথে কথা আছে। এখনো কাউকে বলিনি।
তানভীর : জি বলেন মহারানী কি বলবেন?
আমি : সারপ্রাইজ (তানভীর এর পাশে বসে আমার পেটের ওপর ওর হাত দিয়ে কথাটা বললাম)
তানভীর : সত্যি? (কাঁদো কাঁদো হয়ে)
আমি : হ্যাঁ! আজই সকালে জানতে পেরেছি।
তানভীর : আজ আমি সবচেয়ে সুখী মানুষ। অনেক খুশি আমি (ঊর্মির কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো)
আমি : ভালোবাসি তানভীর। খুব বেশি ভালোবাসি।
তানভীর : আমিও খুব বেশি ভালোবাসি।
৯ মাস পর………তানভীর এই ৯ মাস ঊর্মির খুব খেয়াল রেখেছে ওর সব আবদার পূরণ করেছে।
তানভীর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ ঊর্মি ওকে ডাকছে। ঊর্মির লিভার পেইন উঠেছে তাই তানভীর তাড়াতাড়ি করে ঊর্মিকে হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করিয়েছে। ঊর্মির আর তানভীর এর পুরো পরিবার হসপিটালে। ঊর্মির অপারেশন হচ্ছে ওদিকে তানভীর চিন্তায় শেষ যদি ঊর্মির এর কিছু হয়ে যায়। মনে মনে শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছে।
অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে এসেছে সাথে নার্স এর কোলে বাচ্চা (মেয়ে)
তানভীর : ডক্টর ঊর্মি কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো?
ডক্টর : চিন্তা করা করবেন না মি. তানভীর আপনার স্ত্রী সন্তান দুজনেই সুস্থ। নিন এবার মেয়েকে কোলে নিন।
তানভীর : (মেয়েকে কোলে নিলো)
২ ঘন্টা পর ঊর্মির জ্ঞান ফিরে। একে একে সবাই ঊর্মির সাথে দেখা করে গেছে। তানভীর মেয়েকে কোলে নিয়ে ঊর্মির পাশে বসলো।
ঊর্মি : তুমি খুশি হয়েছো তানভীর?
তানভীর : আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। অনেক অনেক ভালোবাসি মায়াবতী সাথে আমার রাজকুমারী কেও।
ঊর্মি : আমিও অনেক ভালোবাসি।
সমাপ্ত………….