#প্রেমে_পড়া_বারণ পর্ব ১৪

0
365

#প্রেমে_পড়া_বারণ পর্ব ১৪
লেখা: জেসিয়া জান্নাত রিম

তিন্নি দের বাড়ি সংলগ্ন নদীর উপর বেশ বড় সাইজের একটা ব্রিজ আছে। ওখানে দাঁড়িয়ে বসে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছে মৌলি। ছবি তুলতে ও এতটাই মশগুল ছিল যে ও খেয়ালই করেনি ও প্রায় ব্রিজের কিনারায় চলে এসেছে। হঠাৎই পা ফসকে পরে যাবে ঠিক তখনই কেউ একজন ওর হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে ওকে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে এলো। ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই সামনের লোকটি ধমকের সুরে বলল,
— এই মেয়ে ছবি তুলছো খুব ভালো কথা। কিন্তু এরকম কেয়ারলেস হয়ে কেন? এখান থেকে পড়ে গেলে সোজা স্রোতে ভেসে যেতে। সাঁতার জানা থাকলেও কাজ হতো না। আর একা একাই বা এখানে কি করছো?
হুট করে মৌলি কিছু বলতে পারলো না। ড্যাবড্যাব করে সামনের লোকটির দিকে তাকিয়ে রইল। লোকটি আবারো বলল,
— তোমার সাথে কেউ নেই এখানে?
মৌমি এবার আস্তে বলল,
— ছিল তো……
লোকটি আসে পাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখতে পেয়ে নিজের মনেই বলল,
— যত্তসব কেয়ারলেস লোকজন বাচ্চা একটা মেয়েকে একা রেখে চলে গেছে। হুহ্।
মৌমির এবার খুব গায়ে লাগলো লোকটি ওকে বাচ্চা মেয়ে বলল। ও কোথায় বাচ্চা। গতমাসে উনিশ বছর পূর্ণ হলো ওর। মৌমি ঝাঁঝালো সুরে বলল,
— আমি মোটেও বাচ্চা মেয়ে নই। আমার বয়স উনিশ বছর।
মৌমির কথায় লোকটি এবার জোরে হাসতে শুরু করলো। মৌলি অবাক হয়ে তাকালো। ও বুঝতে পারলো না ও কি এমন বলল যে লোকটা এভাবে হাসছে। ও মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালো। লোকটি হাসি থামিয়ে বলল,
— সরি বাট আমার কাছে তুমি বাচ্চা মেয়েই। যাইহোক এখানে কার বাড়িতে এসেছো? তোমাকে তো এই গ্রামের কেউ বলে মনে হচ্ছে না।
মৌমি একবার ভাবলো কোনো উত্তর দেবেনা। কিন্তু যত যাই হোক লোকটি একটু আগে ওর জীবন বাঁচিয়েছে। উত্তর না দিলে অভদ্রতা হয়ে যাবে। তাই বলল,
— আমার ভাইয়ার বিয়ে এই গ্রামে।
— তুমি তিন্নিদের বাড়িতে এসেছ?
— হুম আপনি চিনেন ওদের?
লোকটি হাসলো। তারপর বলল,
— আমি রওনক। তিন্নির ফুফাতো ভাই। আমিও বিয়েতে এসেছি। তবে জানতাম না যে আমার একটা পিচ্চি বেয়াইন ও থাকবে।
মৌমির এবার আর রাগ হলো না। লোকটিকে ওর ভালোই লাগছে। তবুও মুখে কৃত্রিম রাগ ফুটিয়ে বলল,
— আমি মোটেও পিচ্চি না।
রওনক হাসতে হাসতে বলল,
— আচ্ছা পিচ্চি বেয়াইন। এবার চলো বাড়িতে যাই। লং জার্নি করে এসেছি। এখানে আর দাঁড়াতে ইচ্ছা করছে না। তোমাকে ও রেখে যেতে ভরসা পাচ্ছি না। দেখা গেল এবার সত্যিই নদীতে ভেসে গেলে।
মৌলি আর কথা বাড়ালো না। লোকটিকে সত্যিই ক্লান্ত লাগছে। ও রওনকের আগে বাড়ির পথ ধরলো। রওনকের মন খারাপ ভাবটা অনেকটাই কেটে গেছে। এখানে আসার ইচ্ছা ওর মোটেও ছিল না। কিন্তু তিন্নির কথাও ফেলে দেওয়া যাবেনা। তাছাড়া ফুফাতো বোনের বিয়েতে না এলে কেমন দেখায় না? যত যাই হোক এবার সবার সাথে আগের মতই স্বাভাবিক বিহেভ‌ করতে হবে ওকে। বিশেষ করে তিন্নির সাথে। তিন্নি খুবই বুদ্ধিমতি মেয়ে। এমন কি হতে পারে তিন্নি অলরেডি ওর অনুভূতি সম্পর্কে জানে। হয়তো সেজন্যই নিজে থেকে এতো দিন ওর সাথে যোগাযোগ করেনি। এমনটাই যদি হবে তাহলে তিথির বিয়েতে আসার জন্য এতো তাড়া কেন দিয়েছে তিন্নি? নাকি ঐ বেশি ভেবে ফেলছে? অবশ্য এসব ভেবে আর লাভ কি? যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে নিয়েছে ও। বিয়েটা মিটে গেলেই ও আর পিছু ফিরে তাকাবে না। আর মুখোমুখি হবে না ওর অতীতের সাথে। সেই ব্যাবস্থা করতে গিয়েই তো ওর আসতে দেরি হলো। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে এখন আর ভালো লাগে না রওনকের। মনে হয় সব কিছু উপেক্ষা করে যা ও চায় সেটা নিয়ে নিতে। কিন্তু যা ও চায় তা কি আদৌ ওর? অবশ্য এখন এসব ভেবেই বা কি হবে। তা যে ওর নয় সেটা তো সেই কবেই নিশ্চিত হয়ে গেছে। সেই সময় তিন্নি যেমন সাহস দেখিয়েছিল তখন ওর ও কি সাহস দেখানো উচিৎ ছিল? হুট করে কথাটা মাথায় আসতেই মনে মনে নিজেকে বোঝালো রওনক, ” মোটেও উচিৎ ছিল না তখন সে বাচ্চা মেয়ে ছিল। এসব বিষয়ে জড়িয়ে তার ভবিষ্যৎ টাই নষ্ট হয়ে যেতো। তুমি যা করেছো ঠিকই করেছো। সে যেভাবে খুশি থাকে থাকুক।”

তিথি আর আফিফের মেহেন্দি আর হলুদ একসাথেই হবে। প্রথমে মেহেন্দি পরেরদিন হলুদ। মেহেন্দির দিন আবার সব কাজিন রা মিলে নাচ গান ও করবে। সবাই এখন সেসবের রিহার্সালেই ব্যস্ত। এদিকে তিন্নি স্টেজ সাজানো নিয়ে ব্যস্ত। এখানকার লোকাল লোকজন কে দিয়ে সমস্ত ডেকোরেশন করানো হচ্ছে। তারা এর আগে কোনোদিন এরকম ডেকোরেশন করেনি। তাই প্রতিটা স্টেপেই তিন্নির তদারকি করতে হচ্ছে। আবিদ ও হাতে হাতে তিন্নিদের সাহায্য করছে। অন্যদিকে তিন্নির ছোট মামা কে পাঠানো হয়েছে বাবুর্চিদের ওখানে। সেখানে খাবারের মেন্যু নিয়ে কি একটা ঝামেলা বেঁধেছে। তাই তিনি তিন্নিকে সমানে ফোন দিয়ে যাচ্ছেন কাউকে সেখানে পাঠানোর জন্য। কিন্তু কাউকেই হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। আবিদ যেতে চেয়েছিল কিন্তু ও এখানকার কিছুই তেমন চিনে না। আর ওকে পাঠানো না পাঠানো একই কথা। যেখানে ছোট মামা ওদেরকে বোঝাতে পারছে না সেখানে আবিদ কি করবে। এর থেকে এখানে বেশি কাজে লাগছে ওকে। তিন্নি ভাবেছে ও নিজেই যাবে। আবিদ কে এখানে সব বুঝিয়ে দিলে ও কি পারবে এখানটা সামলে নিতে? ঠিক এমন সময় তিথি এসে ওর হাত ধরে টানতে শুরু করলো। মেহেন্দির ড্রেসের সাথে গহনা মেলাতে পারছে না ও। তাই তিন্নিকে লাগবে ওর গহনা সিলেক্ট করে দিতে। এত কাজের মাঝে তিথির এই ফালতু কারণ শুনে মাথা গরম হয়ে গেল তিন্নির। ওকে এক ধমক দিয়ে বলল,
— মেহেন্দি তো পরশু। এত আগে গহনা মিলিয়ে কি করবি?
— আরে ট্রায়াল দিতে হবে না। তারপর দেখা গেল সময় মতো কিছুই ঠিক ঠাক নেই।
— আপা এখন মেজাজটা বিগড়ে দিস না। এমনিতেও তোর বিয়ের হাজারটা কাজ বাকি। অন্যদের খুঁজে নে।
— ওরা তোর মতো পারবে না তো। কি সুন্দর তুই সব অনুষ্ঠানের ড্রেস গুলো সিলেক্ট করে দিলি। বেশিক্ষণ তো লাগবে না। আয় না একটু।
এমন সময় তিন্নির ফোনটা আবারো বেজে উঠলো। সেটা তিথির সামনে মেলে ধরে তিন্নি বলল,
— দেখ ছোট মামা বার বার কল দিচ্ছে। আমাকে এখন ওখানে যেতে হবে। এদিকে এখানে এত কিছু বাকি। তোর দেবরের ওপর সব ছেড়ে যেতেও ভরসা পাচ্ছি না। ওদিকে আরো কত কিছু ছড়ানো ছিটানো আছে। একটাকেও হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। সব গুলো নাচ গান নিয়ে ব্যস্ত। এখন আবার তুই এসে টানাটানি করছিস। কোন দিকে যাবো বলতো আমি। এমন চলতে থাকলে তোর বিয়ে হতে হতে আমি পাগল হয়ে যাবো।
— পাগল হবি না আমি এসে গেছি তো। কি কি করতে হবে বলে?
হঠাৎ রওনকের কন্ঠ ওর দিকে ফিরে তাকালো সবাই। তিন্নি হাসি হাসি মুখ করে এগিয়ে গেল ওর দিকে। রওনক এক হাতে জড়িয়ে ধরলো ওকে। তিন্নি ওর বাহুতে হাল্কা করে একটা ঘুষি দিয়ে বলল,
— এই তোমার আসার সময় হলো? জাননা সবগুলো কতটা অকর্মা?
— সরি রে, আগেই আসতাম কিন্তু শেষ মুহূর্তে বস ফোন দিয়ে বলল…..
— হয়েছে আর এক্সকিউজ দিতে হবে না। তোমার এই এক্সকিউজ অনেক শুনেছি। শেষ পর্যন্ত তুমি এসেছ এই অনেক।
ইতিমধ্যেই আবিদ এসে তিথির পাশে দাঁড়িয়েছে। ও আস্তে করে তিথির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
— এটা কে ভাবী?
— রওনক ভাই। তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী।
এ পর্যায়ে রওনকের নজর তিথির দিকে গেল। ও হাসি মুখে তিথির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
— আরে বিয়ের কনে ও দেখছি এখানে আছে। কিরে কি খবর তোর?
রওনকের কথার উত্তরে অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে তিথি বলল,
— আমার খবর জানতে কি তোমার আদৌ ইচ্ছা করে রওনক ভাই। তোমার খাতির তো খালি তিন্নির সাথে। এতবছরে একটা ফোন ও তো করোনি।
— তুই ও তো করিসনি।
— ভালো হয়েছে করিনি। আমার তো মনে হচ্ছিল তুমি আমার বিয়েতেও আসবে না। এত কিসের চাকরি তোমার।
তিন্নির ফোনটা আবারো বেজে উঠলো। তিন্নি ফোন রিসিভ করে বললো সে এদিকটা সামলে আসছে। রওনক নিজে থেকে বলল,
— কিরে কোনো হেল্প লাগবে?
— তুমি এইমাত্র এলে নিশ্চয়ই টায়ার্ড।
— আরে তোকে দেখেছি ক্লান্তি চলে গেছে। তুই না একটু আগে বললি সব গুলো অকর্মা। একমাত্র আমিই কর্মা।
— তুমি কি ডেকোরেশনের দিকটা দেখতে পারবে নাকি খাবারের মেন্যু বোঝাতে বাবুর্চিদের ওখানে যাবে। ছোট মামা পাগল করে দিচ্ছে আমাকে।
— ডেকোরেশন তুই ভালো পারিস। খাবারের লিস্ট টা দে। আমি বরং বাবুর্চিদের ওখানেই যাই। তার আগে আমার জিনিস পত্র কই রাখবো সেটা বল।
— তুমি এখনি রওনা হও আমি কাউকে দিয়ে তোমার জিনিস পত্র ভিতরে রাখছি।
এরপর একটা লিস্ট রওনকের হাতে ধরিয়ে দিলো। এতক্ষণে মৌলি বলল,
— আমিও সাথে যাই ছোট ভাবী?
তিন্নি বলল,
— তুমি সেখানে গিয়ে কি করবে। বাকিরা সবাই নাচ গান করছে ওখানে যাও।
— ওরা আমাকে নিচ্ছে না। আমি কিছু পারিনা বলে। আমি যাতে ওদের ডিস্টার্ব না করি এজন্য অর্নব ভাই আর মৌরি আপু আমাকে একা একা ব্রিজের উপর রেখে চলে গেছে। আমি তো এখানেও কোনো হেল্প করতে পারবো না। এর থেকে ওনার সাথে গিয়ে একটু ঘুরে আসি। প্লিজ।
মৌলির কাঁদো কাঁদো মুখের দিকে তাকিয়ে তিন্নি রওনক কে বলল,
— রওনক ভাই ওকে নেবে তোমার সাথে?
— আসুক। এমনিতেও তোরা এখানে সবাই বিজি থাকবি ও একা কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে কে জানে।
— মানে দুর্ঘটনা কেন ঘটাবে?
— এসে এটা নিয়ে কথা বলবো। কয়েকজন কে বকাও খাওয়াবো। চলো পিচ্চি বেয়াইন।
রওনক মৌলি কে নিয়ে বেরিয়ে এলো। একটা ভ্যান গাড়ি দেখে তাতে উঠে বসলো ওরা। ভ্যান চালক কে কোথায় যাবে বলে মৌলির দিকে তাকালো ও। তারপর বলল,
— তুমি তিন্নি কে ছোট ভাবী কেন বলো?
— আবিদ ভাই বলতে বলেছে।
— আবিদ ভাই কে?
— ঐ যে বড় ভাবীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো না, আফিফ ভাইয়ার ছোট ভাই। আবিদ ভাই বলেছে ভাইয়ার ভাই যেমন ভাই। তেমনি ভাবীর বোন ও ভাবী।
মৌলির শেষের কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো রওনক। মৌলি ভ্রূ কুঁচকে বলল,
— হাসছেন কেন?
— তুমি শুধু পিচ্চি না খুব বোকাও।
— আপনিও বললেন এটা।
— আর কে বলে?
— সবাই বলে।
— কারণটা কি তোমার জানা আছে?
— উঁহু।
— কারণ হচ্ছে তোমাকে যে যা বোঝায় সেটাই বোঝো। নিজের বুদ্ধি খরচ করে বুঝতে চাও না।
— আমি কি করব বলুন তো আমি ছোট বলে ওরা আমাকে সব কিছু থেকে সরিয়ে রাখে। আমি ওদের কাছে কিছু জানতে চাইলে কিছু বলে না। সবাই বলে আমি নাকি বিরক্তিকর। এই যে বিয়েতে সবাই কত মজা করছে একসাথে কত প্লান করছে। কিন্তু আমাকে কিছুতেই রাখেনি। ভাবীর কাছে গেলে ভাবী সারাক্ষণ আফিফ ভাইয়ার সাথে ফোনে কথা বলে। ছোট ভাবী কাজে ব্যস্ত আর আবিদ ভাই ছোট ভাবীর পিছনে পড়ে থাকে সবসময়। আর বড়রা সব গল্প গুজব করতে ব্যস্ত। আমার জন্য তো কারো কাছে কোন সময়ই নেই।
— ওরে বাবা, এতো অভিযোগ। আচ্ছা যাও বিয়ের এই কদিন তুমি আমার সাথে সাথে থাকবে। আমার এসিস্ট্যান্ট হয়ে। কেমন?
— সত্যি?
— নয়তো কি মিথ্যা মিথ্যা। এই যে তোমাকে আজকে সাথে করে নিয়ে এলাম না?
— এই আপনি না খুব ভালো। আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। প্রথমে যখন আমাকে বকা দিলেন আমার খুব রাগ হয়েছিল। এখন আর রাগ নেই। ভবিষ্যতে আপনি আমাকে যত ইচ্ছা বকা দিতে পারেন। আমি রাগ করবো না।
মৌলির কথায় হালকা হাসলো রওনক। যাক পুরো বিয়েটা এবার ওকে মন খারাপ করে কাটাতে হবে না। মেয়েটি বোকা সোকা হলেও ইন্টারেস্টিং।

রাতে গোসল শেষে ছাদে এসে দাঁড়ালো তিন্নি। রওনক দোলনায় বসে ছিলো। পাশে বসে মৌলি রওনকের ফোনে ওর তোলা কিছু ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফ দেখছিলো। তিন্নি কে দেখে রওনক মৌলি কে বলল,
— তুমি ছবি গুলো দেখতে থাকো আমি তিন্নির সাথে কথা বলে আসছি।
বলেই তিন্নির পাশে এসে দাঁড়ালো ও। তিন্নি বলল,
— ওর সাথে তো ভালোই ভাব হয়েছে তোমার?
— হুম। ওর জীবন বাঁচিয়েছি কিনা।
— মানে?
— আরে আজকে বাড়িতে ঢোকার সময় দেখি ও ব্রীজের কিনারে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। আরেকটু হলে পড়ে যেত।
— বলো কি? ও একা ওখানে ছবি তুলতে গিয়েছিল?
— একা না। বলল ওর কোন আপা দুলাভাই ওর সাথে ছিল। পরে ওকে একা রেখে চলে গেছে। কি কেয়ার লেস বলতো। বাচ্চা একটা মেয়েকে একা ছেড়ে দিয়েছে। বাবুর্চিদের ওখানে যাওয়ার সময় এক গাদা অভিযোগ করলো আমার কাছে। ওকে কেউ কিছুতে সাথে রাখে না, সবাই দূর দূর করে ইত্যাদি ইত্যাদি।
— ওকে প্রথম দিকে কয়েকটা কাজ দিয়েছিলাম। কাজ করার থেকে বিগড়ায় বেশি। এজন্য আর কোনো কাজ ওকে দেওয়া হয় নি। চিন্তা করোনা আমি কালকে আফিফ ভাই কে বলবো ওকে নিজের কাছে রাখতে।
— দরকার নেই আমি ওকে বলেছি বিয়ে পর্যন্ত ও আমার পাশে পাশে থাকবে আমার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে। ভালো কথা তোর আফিফ ভাইয়ার সাথে তো আলাপই হলো না আজকে।
— ওনার এ বাড়িতে আসা সাময়িক বন্ধ। বিয়ের আগে বর কনের ঘন ঘন দেখা করতে নেই। তোমাকে পরে আলাপ করিয়ে দিবো।
— তো মিস তিন্নি আফিফ ভাইয়ার সাথে তো আলাপ করবো তবে আবিদ ভাইয়ার সাথে আলাপ করাবেন না। তিনি তো এখন এখানেই আছে।
— সে গোসলে ঢুকেছে। বের হলে আলাপ করে নিও।
— তোর বর তুই আলাপ করিয়ে দে।
— রওনক ভাই। তুমিও?
— সারাদিনে অনেক কিছুই তো শুনলাম।
— ভুল শুনেছো। এতে আমার কোনো ভূমিকা নেই।
— সেটা তো আমি জানি। তবে কি জানিস একই পরিবারে দুইবোনের বিয়ে হলে কিন্তু ভালোই হয়। বলতে হবে দুই ভাইয়েরই রুচিবোধ আছে।
— প্লিজ তুমি অন্তত এখন শুরু করো না। বাড়ির মুরুব্বিরা ওর ওকালতি করতে করতে আমার কান পচিয়ে ফেলেছে। কি জাদু করেছে তাদের কে জানে।
— যে জাদুই করুক তা কি তোর উপরে কোনো প্রভাব ফেলেছে?
রওনকের কথার সাথে সাথে কোন জবাব দিতে পারলো না তিন্নি। আসলেই কি সে জাদু ওর উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি?

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here