প্রেমাতাল পর্ব ১৬
মৌরি মরিয়ম
পাহাড়ে ওঠাটা যতটা কঠিন ছিল নামাটা আরো বেশি কঠিন মনে হলো তিতিরের। নিচে তাকাতেই ভয় করছে। এত খাড়া পাহাড়! মুগ্ধ বলল,
-“আরে এভাবে পা ফেলছো কেন? এত ভয়ের কিছু নেই।”
-“ভয়ের কিছু নেই মানে? কোথায় পা ফেলবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”
মুগ্ধ হেসে তিতিরের হাত ধরে ধরে পাহাড় থেকে নামালো। তারপর কটেজের সামনে এসে তিতির নৌকা ঘাটের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,
-“দেখুন দেখুন, সাফি ভাইয়ারা আসছে।”
মুগ্ধ তাকিয়ে দেখলো চারটা নৌকা এসে ঘাটে ভিড়েছে। সাফি এবং অন্যরা নৌকা থেকে নামছে। কাঠের ব্রিজটাতে উঠেই সাফি ওদেরকে দেখতে পেল। সেখান থেকেই হেসে হেসে বলল,
-“ভাই শুধু তোর পক্ষেই এটা সম্ভব! হারিয়ে গিয়েও আমাদের আগে এসে বসে আছিস!”
মুগ্ধও হাসি মুখে বলল,
-“আর তুই যেটা করেছিস সেটাও শুধু তোকে দিয়েই সম্ভব।”
ততক্ষণে সাফি ওদের কাছে চলে এসেছে। দুই ভাই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলো। সাফি বলল,
-“আমি তোকে না দেখে ভেবেছিলাম তুই প্রথম গাড়ীতে চলে গেছিস। নিলগিরি গিয়ে দেখি তুই নেই। আর তিতিরও নেই। কি যে ভয় পেয়েছিলাম। পরে দোলা বলল যে ও নাকি শিওর তিতির তোর সাথেই আছে।”
মুগ্ধ সাফিকে ছেড়ে বলল,
-“তুই নিলগিরি গিয়ে টের পেয়েছিস যে আমি নেই! তাহলে বোঝ তুই কোন জাতের ছাগল।”
-“সরি সরি ভাই।”
-“কাল রাতে কোথায় ছিলি? থানচি থেকে না ভোরে রওনা দিয়েছিলি?”
-“হ্যা, ভাই কি আর বলবো ভুল রাস্তায় গিয়ে দুনিয়ার ঘুরলাম।”
-“কেন মাঝিরা রাস্তা চিনে না? আর গাইড নেস নাই?”
-“মাঝিদের কথা কি আর বলবো। একজন বলল কোন রাস্তা দিয়ে জানি শর্টকাট মারবে আর অন্যরাও লাফাতে লাফাতে সেদিকে চললো। গাইডরা নিষেধ করেছিল। ওরা শোনেনি।”
-“বললে আবার শুনবে না কেন?”
-“গাইডও যে কি জুটসে কপালে! তোমার মংখাইরে খালি পায়ে ধরা বাকী রাখছি। সে বলে সে মাত্র নাফাখুম থেকে গেছে সে কোনক্রমেই আসতে পারবেনা।”
মুগ্ধ হেসে দিল। তিতির এতক্ষণ চুপ করে ছিল। তারপর মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“উনি কোন মংখাইয়ের কথা বলছে?”
তিতিরের কথা শেষ হতে না হতেই মংখাইকে দেখা গেল নদী থেকে ব্রাশ হাতে উঠে আসছে। সাফি বলল,
-“ওই মিয়া তুমি না কইলা আসবা না?”
মংখাই দাঁত কেলিয়ে বলল,
-“মুগ্ধ দাদা বললে তো না আসি পারিনা।”
মুগ্ধ মংখাইয়ের কাধ জড়িয়ে বলল,
-“আমার ভাই লাগেনা? না এসে পারবে কি করে?”
মংখাই লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইল। তিতিরের ভাল লাগছিল। মংখাই মুগ্ধর কত ভক্ত। আর সেটা শুধুমাত্র ওর ব্যবহারের জন্যই। ওদের মত মানুষদের এত আপন করে নিতে সবাই পারেনা।
মুগ্ধ বলল,
-“তারপর রাতে কোথায় থাকলি তোরা?” -“সন্ধ্যা নাগাদ কোনক্রমে তিন্দু আসতেই ডুবো পাথরে ধাক্কা লেগে আমাদের নৌকাটা গেল উল্টে। বাকী তিনটা সেফলি ছিল, সামনেই। ভাগ্য ভাল ওই নৌকার সবাই সাঁতার জানতাম আর ওখানটায় পানিও কম ছিল। তাও পাথরে লেগে সবাই কমবেশি ব্যাথা পেয়েছি। তারপর সন্ধ্যা হয়ে গেছে নৌকা চালানোও নিষেধ তাই আমাদের এক গাইড বলল বড়পাথর এলাকায় নদীর একটা অংশে নাকি চর পরেছে। ওখানে থাকা যাবে। তো আমরা সেখানে গিয়েই তাঁবু গাড়লাম। খুব ভয়ে রাতটা পার করেছি ভাই। কতরকম রিস্ক ছিল চিন্তা কর।”
-“তা তো ছিলই। ভালয় ভালয় আসতে পেরেছিস সেজন্য শুকরিয়া কর।”
-“হুম। আল্লাহ বাঁচাইছে।”
-“যাই হোক, জীপ ছাড়ার কথা ছিল বান্দরবান বাস স্ট্যান্ড থেকে ৯ টায়। ছাড়ালি হোটেলের সামনে থেকে ৮ টায়। আমরা তো ৯ টার আগেই বাসস্ট্যান্ড গিয়ে দেখি জীপ নেই। হোটেলে গিয়ে শুনি ১ ঘন্টা আগে চলে গেছিস। আজব ব্যাপার!”
-“আরে আর বলিস না। জীপ ড্রাইভার এসে বলে জীপ রেডি চাইলে আমরা আগেও যেতে পারি। তো আমি দেখলাম সবাই ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে রেডি। তাই ভাবলাম যত তাড়াতাড়ি যেতে পারবো ততই ভাল, রওনা দিয়ে দিলাম। তোরা কিভাবে কিভাবে এলি?”
-“অনেক কাহিনী! সব বলবো আগে ফ্রেশ হয়ে নে তোরা।”
এতক্ষণে দোলাও চলে এসেছে। তিতিরকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বলল,
-“আহারে, বোনটা আমার! অনেক কষ্ট হয়েছে না?”
তিতির অযথাই অস্বস্তিবোধ করলো। বলল,
-“না না ঠিক আছি একদম।”
দোলা এবার ওকে ছেড়ে বলল,
-“এই তোমার কাপড় ভেজা কেন?”
তিতির হেসে বলল,
-“আমরা মেঘ ধরতে গিয়েছিলাম। মেঘ আমাদের ভিজিয়ে দিয়েছে।”
দোলা বলল,
-“কোথায়?”
তিতির অাঙুল দিয়ে দেখালো,
-“ওই যে উঁচু পাহাড়টা দেখতে পাচ্ছো ওর চূড়ায় গিয়েছিলাম। সূর্যোদয়ও দেখে এসেছি।”
সাফি বলল,
-“ভাইয়া তুই আবার ওই রিস্কি পাহাড়টাতে গিয়েছিলি? তাও তিতিরকে নিয়ে? তোর কি মাথা খারাপ?”
মুগ্ধ বলল,
-“নো রিস্ক নো গেইন।”
তিতির বলল,
-“আসলেই। রিস্ক নিয়ে গিয়েছিলাম বলেই তো আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যের লিস্টে আরো একটা যোগ হলো।”
-“হ্যা কিন্তু জানের রিস্ক নিয়ে এসব করা উচিৎ না। তোমার কিছু হয়ে গেলে তোমার ফ্যামিলির কাছে কে জবাব দেবে বল?”
মুগ্ধ বলল,
-“আমি জবাব দেব।”
-“ভাইয়া তোর সাহস অতিরিক্ত বেশি।”
-“হুম। কারন আমি জানি আমি ওকে ওখানে সেফলি নিয়ে যেতে পারবো এবং সেফলি নিয়ে আসতে পারবো তাই নিয়ে গেছি। আর ও তোর মত ভীতু না যে অর্ধেকটা গিয়ে ফিরে আসবে। সি ইজ আ পিওর ট্রাভেলার। গত ২/৩ দিন ধরে আমাদের উপর দিয়ে যা গেছে অন্য কোনো মেয়ে হলে ভেঙে পড়তো, কান্নাকাটি করতো, বিরক্ত করতো। হার্ট অ্যাটাকও করতে পারতো। ও বলেই হাসি মুখে স্টেবল ছিল। বিপদকে বলেছে এডভেঞ্চার। ওকে নিয়ে পৃথিবীর যেকোনো দুর্গম যায়গায় চলে যাওয়া যাবে। কোনো প্রব্লেম হবেনা।”
মুগ্ধর মুখে এসব কথা শুনে লজ্জায় কুকড়ে গেল তিতির। সাফি, দোলা মিটিমিটি হাসছিল। মুগ্ধ যে এরেস্ট হয়ে গেছে তা বুঝতে কারোরই বাকী রইল না।
তিতির যে ঘরে ছিল সে ঘরে ঢুকেই দোলা বলল,
-“ভাইয়ার ব্যাগ এখানে? তোমরা একসাথে ছিলে? এত ফাস্ট?”
তিতির কি বলবে ভেবে পেলনা। মুগ্ধ পেছন থেকে দোলার মাথায় একটা গাড্ডা মেরে বলল,
-“চিন্তাটাকে বিশুদ্ধ কর। আর মনটাকে ড্রাই ক্লিনার্সে দে। ওটা নোংরা হয়ে গেছে। সবাই তোর আর সাফির মত না। বাসের মধ্যেই কিসব করছিলি! ছিঃ”
তারপর নিজের ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। দোলা চিৎকার করে উঠল,
-“ভাইয়া!! তুমি সবসময় কেন আমার পিছনে লেগে থাকো?”
-“আমি কোথায় পিছনে লাগলাম? তোমরা তো এক ঘরেই ছিলে! যা দেখেছি তাই বললাম।”
-“হুম। এই ঘুমকুমারী ঘুমিয়ে পড়েছিল দরজা না লাগিয়ে তাই আমি ওনার সেফটির জন্য এঘরে এসে শুয়েছি। অবশ্যই আলাদা বিছানায়।”
বলেই মুগ্ধ বেড়িয়ে গেল। দোলা তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“এই তুমি অস্বস্তি ফিল করছো কেন? আমরা ভাই বোনরা এমনই। সবসময় দুষ্টুমি করতে থাকি। কিছু মনে করোনা।”
-“না না আমি কি মনে করবো? আমি বুঝেছি।”
ওদের সবার মনই মোটামুটি খারাপ হয়ে গেল কারন আর্মি ক্যাম্প হতে শুধু মাফাখুম যাওয়ার পারমিশন মিলেছে। নাইক্ষ্যাং, সাতভাইখুম, ভেলাখুম কোনটারই পারমিশন পায়নি। ওদিকে কোনো জনবসতি নেই, পাহাড়ীরা শুধু মাছ ধরতেই ওদিকে যায় কিন্তু পুরো বর্ষাকাল বৃষ্টির কারনে ওদিকে কেউ যেতে পারেনি। আপাতত কোনো রাস্তা নেই, সব জঙ্গল! মুগ্ধ, সাফি অনেক রিকোয়েস্ট করেছিল জঙ্গল কেটে রাস্তা বানিয়ে যাবে যেহেতু ৫ জন মাঝি ৫ জন গাইড আছে তার উপর ওরাও আছে কোনো প্রব্লেম হবেনা। কিন্তু কোনো কাজ হলোনা। আর্মিরা শুধু নাফাখুম পর্যন্তই পারমিশন দিল।
রেমাক্রি বাজার থেকে নাস্তা করে ৮ টার মধ্যে ওরা রওনা হয়ে গেল নাফাখুম জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে। রেমাক্রি হতে গাড়ি তো দূরের কথা নৌকা ও চলাচল করতে পারে না বলে নাফাখুম পর্যন্ত পুরো রাস্তাটা পায়ে হেটেই যেতে হয়। নাফাখুম যাওয়ার রাস্তাটা বড্ড সুন্দর, ঘন সবুজ পাহাড়ি জঙ্গল, তার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে অসম্ভব সুন্দর একটি ঝিরি। ঝিরিপথ ধরে হাটছে সবাই। তিতিরের খারাপ লাগছে। এই কদিন মুগ্ধ আর ও একসাথে ছিল। সারাক্ষণ টুকটাক গল্প করেছে আর আজ দূরে দূরে থাকতে হচ্ছে। দোলা আপু সারাক্ষণ ওর পাশাপাশি হাটছে। মুগ্ধ কাছাকাছিই আছে, কথাও বলছে কিন্তু স্পেশালি ওকে কিছুই বলছেনা। শুধু দৃষ্টি বিনিময় হচ্ছে। ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক। সবার সামনে তো আর মুগ্ধ সারাক্ষণ ওর সাথে বকবক করতে পারবেনা। কিন্তু তবু মন মানতে চাইছেনা।
হঠাৎ মুগ্ধ তিতিরকে থামালো,
-“এই দাঁড়াও দাঁড়াও।”
তিতির দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর বলল,
-“কি হয়েছে?”
মুগ্ধ নিচু হয়ে তিতিরের একটা পা ধরে বলল,
-“নড়ো না। জোঁকে ধরেছে।”
তিতির কোন কথা বলল না। কারন ও টের পাচ্ছিল না জোঁকটা ধরলো কোথায়! ব্যাথা তো পাচ্ছেনা। উল্টো দোলা চেঁচিয়ে উঠলো,
-“মাগো এটুকু যেতে না যেতেই জোঁক?”
একটা ছেলে লবন নিয়ে দৌড়ে এল। মুগ্ধ চেনেনা তাকে। মুগ্ধ বলল,
-“না না লবন দিয়েন না। আমি এমনি ছাড়িয়ে দিচ্ছি।”
মুগ্ধ জোঁকটা ধরে টেনে ছুটিয়ে আনলো। এতক্ষণে তিতিরের ব্যাথা লাগলো কারন জোঁকটা কামড়ে ধরেছিল আর মুগ্ধ তা টেনে ছুটাবার চেষ্টা করছিল। সাফি বলল,
-“ভাইয়া, লবন দিলে জোঁকটা একা একাই পড়ে যেত তো।”
মুগ্ধ কোনো কথা বলল না। জোঁকটা ছুটিয়ে ফেলার সাথে সাথে রক্ত পড়তে লাগলো। মুগ্ধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পকেট থেকে রুমাল বের করে পায়ের ক্ষতস্থানটায় বেধে দিয়ে বলল,
-“লবন দিলে জোঁক পড়ে যেত ঠিকই। কিন্তু ইনফেকশন হয়ে যেত। মাসখানেক ভুগতে হতো। এখন তা হবে না। রক্ত এমনি এমনি থেমে যাবে।”
তিতির কিছু বলল না। দাঁতে দাত চেপে রইলো। ওর কিছুই বলার নেই ও জানে ওর সবচেয়ে ভাল হবে যাতে মুগ্ধ তাই করবে।
কিছুদূর যেতেই দেখা গেল ঝিরির পানি অনেকটাই বেশি। মুগ্ধর হাটুর উপর পর্যন্ত যা তিতিরের কোমড় সমান হবে। তিতির বলল,
-“ইশ! পুরো ভিজে যাব। ভেজা কাপড়ে সারাটা দিন থাকতে হবে। আচ্ছা আর কোনো রাস্তা নাই এটুকু পার হওয়ার?”
সাফি বলল,
-“না, এটাই একমাত্র রাস্তা। পাশে তো পাহাড় দেখছোই। আর পাহাড় এবং আটকা যায়গা বলেই তো এখানে পানি জমে রয়েছে।”
মুগ্ধ তিতিরের কাছে গিয়ে নিচু স্বরে বলল,
-“অলরেডি অনেকবার কোলে চড়ে ফেলেছো! আরেকবার কি চড়বে?”
তিতির চমকে তাকালো। মুগ্ধ বলল,
-“আই মিন টু সে তোমার কোন আপত্তি না থাকলে আমি তোমাকে কোলে করে এটুকু পার করে দিতে পারি।”
তিতির লজ্জা পেয়ে গেল। মনে মনে তো নাচছে কিন্তু একথার রিপ্লাই ও কিকরে দেবে? “হ্যা কোলে চড়বো” একথা কি বলা যায়? মুগ্ধ বোধহয় বুঝে নিল। আচমকাই তিতিরকে কোলে তুলে পানির ভেতর দিয়ে হাটা শুরু করলো। তিতির মুগ্ধর গলা জড়িয়ে ধরে তাকিয়ে রইলো মুগ্ধর দিকে। এতগুলো মানুষের সামনে মুগ্ধ যদি এতখানি পানির মধ্যে দিয়ে ওকে কোলে করে হাটতে পারে ও কেন পারবে না মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে থাকতে? মুগ্ধও কম না ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল তিতিরের চেয়ে থাকা চোখে। কি যে আনন্দ হচ্ছিল তিতিরের! খানিকটা অহংকারও! অহংকার তো খারাপ, তবু আজ তিতির অহংকার করবে। কেনই বা করবে না? গ্রুপে যে কয়েকটা মেয়ে তাদের সবার সাথে তাদের বয়ফ্রেন্ড আর শুধু একজনের সাথে ফ্রেন্ডরা আছে, তবু সবগুলো মেয়ে কোমড় সমান পানিতে হাটছে। ছেলেগুলো বড়জোড় ওদের হাত ধরে আছে। আর ও একজনের কোলে করে যাচ্ছে! হা করে তাকিয়ে তা সবাই দেখছে। নিজেকে তখন প্রিন্সেস মনে হচ্ছিল!
To be continued….