প্রেমাতাল পর্ব ২৪
মৌরি মরিয়ম
বাসের লাইট জ্বলে উঠতেই দুজন দুজনকে ছেড়ে যে যার সিটে চলে গেল। বাস কুমিল্লার একটা হোটেলে ২০ মিনিটের ব্রেক দিল। মুগ্ধ বলল,
-“চলো ডিনার করে আসি।”
-“আমি তো ডিনার করেই এসেছি। আমি ৮ টার মধ্যে ডিনার করি।”
-“ডায়েটকন্ট্রোল না?”
-“ডায়েটকন্ট্রোল বলে কথা না। আসলে সবারই রাত ৭/৮ টার মধ্যে ডিনার কম্পলিট করা উচিৎ। নাহলে ক্যালরিটা বার্ন হওয়ারর সু্যোগ পায়না। তুমি খাওনি?”
-“হা হা হা… ৭/৮ টায় আমি নাস্তা করি, ১২ টায় ডিনার। ঘুমানোর আগে না খেলে রাতে ক্ষুধায় আমার ঘুম আসে না।”
তিতির বলল,
-“এটা কিন্তু ভাল অভ্যাস না।”
-“কেন? এত যে খাই আমার কি কোনো ভুরি আছে?”
-“তা নেই।”
-“নেই আর হবেও না কারন, আমি যেমন অনেক খাই তেমন এক্সারসাইজও করি। না খেলে গায়ে শক্তি হবে কি করে? স্লিম মেদবিহীন থাকার জন্য কম খাওয়াটাকে আমি কখনোই প্রেফার করি না। তাহলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়না, দুর্বল হয়ে যায়।”
-“কিন্তু, আমি নিয়মের বাইরে একটু খেলেই মোটা হয়ে যাব। এপাশ ওপাশ সমান হয়ে ব্যাঙের মত দেখাবে।”
-“কেন এক্সারসাইজ করবে।”
-“এক্সারসাইজটা হয়ে ওঠে না। সকালটা তো ক্লাস করেই কেটে যায়। ক্লাস না থাকলে ঘুম।”
-“তোমার ক্লাস তো থাকে ৯ টায়। তার আগে এক্সারসাইজ করবে।”
-“কিভাবে? ৯ টায় হলেও তো সাড়ে ৮ টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়।”
-“আধা ঘন্টায় রেডি হও আর ব্রেকফাস্ট করা হয়ে যায়?”
-“হ্যা।”
-“এক্ষেত্রে তুমি অনেক ফাস্ট। সো ঢাকা ফিরে আসার পর ইচ্ছেমত খাবে। খালি সুগারটা এভয়েড করার ট্রাই করবে। আর ঘুম থেকে উঠবে সাড়ে ৭ টায়। এক্সারসাইজ করবে সাড়ে আটটা পর্যন্ত। তারপর আধা ঘন্টায় রেডি হয়ে খেয়েদেয়ে ক্লাসে চলে যাবে।”
-“সুগার এমনিতেই এভয়েড করি, পছন্দ না। কিন্তু সাড়ে ৭ টায় ওঠা সম্ভব না। এমনিতেই আমার ঘুম বেশি তার উপর এখন রাতে ফোনে কথা বলতে বলতে ঘুমাতে লেট হয়ে যায়।”
-“তাহলে রাতে বেশিক্ষণ কথা বলব না।”
-“কেন? তোমার কি মনে হয় আমি ডায়েটকন্ট্রোল করে দুর্বল হয়ে গেছি? বান্দরবানে দেখোনি অন্যসব মেয়েদের থেকে আমি কতটা স্ট্রং ছিলাম?”
-“হ্যা হয়তো আছো বাট ডায়েটকন্ট্রোল না করলে আরো স্ট্রং থাকবে। তাছাড়া আমার বাচ্চাগুলোও তো পুষ্টি পাবে না।”
তিতির লজ্জা পেয়ে খামচি দিল মুগ্ধকে। মুগ্ধ বলল,
-“উফ মারছো কেন? যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম রে বাবা।”
-“উফ তুমি চুপ না করলে আমি আরো মারব।”
-“না সত্যিই কিন্তু তোমার ডায়েটকন্ট্রোল করা উচিৎ না।”
-“ডায়েটকন্ট্রোল না করলে মোটা হয়ে যাব।”
-“আরেকটু মোটা তো হওয়াই উচিৎ।”
-“কি বলো তুমি? এই ফিগার বানানোর জন্য সব মেয়েরা হা হুতাশ করে মরে। আর তুমি কিনা মোটা হতে বলছো?”
-“তোমার ফিগার ঠিক আছে তবে গায়ে আরেকটু মাংস হলে ভাল হতো। আরো এট্রাক্টিভ লাগত তখন। অন্যদের কথা জানিনা তবে আমার চোখে লাগত। তাছাড়া এখন জড়িয়ে ধরলে গায়ের মধ্যে হাড্ডি ঢুকে যায়। তুমিই বলো আমাকে জড়িয়ে ধরে মজা পাওনা? সেটা তো এই কারনেই যে আমার গায়ের হাড্ডির খোঁচা তোমাকে খেতে হয়না।”
তিতির মুগ্ধর হাতে ইচ্ছেমত খাঁমচাতে লাগলো। মুগ্ধ হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল।তিতিরের হাত ধরে বলল,
-“পরে আরো মেরো। কিন্তু এখন না গেলে তো ব্রেক টাইমটুকু বাসে বসেই কেটে যাবে। চলো তো।”
-“যেতে হবে না দাঁড়াও।”
এই বলে তিতির ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করলো। তারপর সেটা মুগ্ধর হাতে দিয়ে বলল,
-“খাও, আমি নিজের হাতে রেঁধেছি তোমার জন্য।”
-“ওয়াও, হোয়াট আ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ!”
মুগ্ধ বক্সটা খুলতেই দেখলো বিরিয়ানি রান্না করে এনেছে তিতির, সাথে কাবাব। মুগ্ধ ঘ্রাণ শুঁকে বলল,
-“সিরিয়াসলি তুমি রান্না করেছো? এত সুন্দর ঘ্রাণ!”
-“হুম আমি রান্না করেছি। বিরিয়ানি কিন্তু এই প্রথম রান্না করলাম। ঘ্রাণ ভাল হলেও খেতে ভাল নাও হতে পারে। তাড়াহুড়োয় টেস্টও করতে পারিনি।”
মুগ্ধ বক্সটা নিয়ে নিজের সিটে বসলো। তারপর তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তিতির, বিরিয়ানি আমার অনেক পছন্দ।”
-“জানি তো, সেজন্যই তো বিরিয়ানি রেঁধে আনলাম।”
মুগ্ধ হেসে বক্স্ব রাখা চামচটা দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। তিতির আগ্রহে চেয়ে রইলো মুগ্ধ কি বলে সেটা জানার জন্য। কিন্তু মুগ্ধ কিছুই বলছে না শুধু খেয়েই চলেছে। অর্ধেকটা যখন শেষ হলো তখন মুগ্ধ বলল,
-“আহহা! দ্যাত আমি একাই খেয়ে চলেছি। তোমাকে দিচ্ছি না। কি খারাপ আমি। নাও হা করো।”
তিতির হা করলো। মুগ্ধ ওকে খাইয়ে দিল। তিতির খেয়ে বুঝলো বেশ ভালই হয়েছে রান্নাটা। কিন্তু মুগ্ধ কিছু বলছে না কেন? তিতির বলল,
-“খাবাবগুলো খাচ্ছো না যে?”
মুগ্ধ একটা কাবাব তুলে মুখে দিল। তারপর বলল,
-“মাছের কাবাব?”
-“হুম।”
-“বাহ! অস্থির জিনিস তো।”
আরেকটা খেল। তারপর বিরিয়ানি রেখে এক এক করে সবগুলো কাবাব খেল। বলল,
-“এই তিতিরপাখি তুমি একটা নাও।”
-“নাহ তুমি খাও।”
মুগ্ধ জোড় করে একটা খাইয়ে দিল। তারপর বিরিয়ানিটা শেষ হতেই মুগ্ধ বলল,
-“চলো, বাইরে যাই।”
-“কেন?”
-“চা খাব, ওয়াশরুমে যাব।”
তিতির উঠলো। হোটেলে ঢুকে ওয়াশরুমে গেল। ফিরে এসে মুগ্ধকে কোথাও পেলনা। ফোনটাও তো ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় মুগ্ধর কাছে দিয়ে গিয়েছিল। হোটেল থেকে বেড়িয়ে একই কোম্পানির এতগুলো বাস দেখে মাথা ঘুরে যাচ্ছিল কারন ও বুঝতে পারছিল না কোনটা ওদের বাস! এখন কি হবে? আচ্ছা ও কি ওয়াশরুম থেকে এখনো বের হয়নি? তা তো হবার কথা না। তাহলে কি কাউন্টারে গেল কিছু কিনতে? উলটো ঘুরে দৌড় দিতেই মুগ্ধর সাথে ধাক্কা লাগলো। মুগ্ধর হাতে থাকা ওয়ান টাইম কাপের দুই কাপ চা উলটে পড়লো মুগ্ধর শার্টের বুক আর পেটের কাছটাতে। তিতির ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,
-“সরি সরি। আমি খেয়ালই করিনি। পুড়ে গেল বুঝি বুকটা?”
-“পুরে তো সেদিনই গেছে যেদিন ঝাপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরেছিলে কিন্তু দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিলে?”
তিতির খানিকটা হাপাচ্ছিল। বলল,
-“আমি তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এদিক ওদিক খুঁজছিলাম। টেনশনেই দৌড় দিয়ে ফেলেছি।”
-“কেন তোমাকে না বলেছিলাম আমি চা নিব? আমি তো তোমাকে দেখেছিলাম বের হতে। আমি ভেবেছি তুমি সামনে থাকবে।”
-“ওহ খেয়াল করিনি বোধহয়।”
-“আচ্ছা আসো আমার সাথে। চা নিয়ে আসি।”
চা নিয়ে আসতে আসতে বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেল। বাসে উঠেই চা খেল ওরা। চা খাওয়া শেষ হতেই মুগ্ধ উপর থেকে ওর ব্যাগ টা নামালো। ব্যাগ থেকে একটা শার্ট বের করে পড়নের শার্টটা খুলে ফেলল। তিতির হা করে তাকিয়ে রইলো। মুগ্ধ শার্টটা পড়তে পড়তে বলল,
-“মেয়েদের অনেক সুবিধা বুঝলে? ওরা অনেক ব্যাপারে এক্সট্রা প্রিভিলেজ পায়।”
তিতির বলল,
-“কখনোই না। মেয়েদের কোনো ব্যাপারেই সুবিধা নেই।”
-“আছে আছে। যেমন ধরো আমি চেঞ্জ করছি আর তুমি যে লোভাতুর দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছিলে সেই ঘটনাটা যদি উলটো হতো যেমন তুমি চেঞ্জ করছো আর আমি লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তাহলে আমি হয়ে যেতাম চরিত্রহীন, লুচ্চা ব্লা ব্লা ব্লা। বাট তোমার কিন্তু কোনোই দোষ হচ্ছে না।”
তিতির অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
-“সরি। কিন্তু আমার সামনে চেঞ্জ করোনা কক্ষনো। আমার চোখ চলে যায়।”
মুগ্ধ ব্যাগটা আবার উপরে উঠিয়ে রেখে বসলো। তারপর তিতিরের কাছে এসে বলল,
-“সাবধানে থেকো। মাঝেমধ্যে চোখ কিন্তু আমারও চলে যায়। বাধা দিলেও শোনেনা।”
তিতির অবাক হয়ে তাকালো মুগ্ধর দিকে। ওর দুষ্টুমি মাখা হাসি দেখে তিতির খুব লজ্জা পেল। তারপর আর তাকালোই না ওর দিকে। কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ তিতিরের কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে আনলো। বুকের মধ্যে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
-“আমার বউটা যে এত ভাল রান্না করতে পারে আমি তো আগে বুঝিনি।”
তিতির মুখ তুলে চাইল মুগ্ধর দিকে। তারপর বলল,
-“তাই সত্যিই ভাল হয়েছে?”
-“হুম।”
-“আচ্ছা, সারাজীবন যদি আমি তোমাকে মজার মজার রান্না করে খাওয়াই তুমি কি সারাজীবনই আমাকে এভাবে আদর করবে?”
-“হুম, আরো কত কত আদর করবো!”
তিতির চোখ নামিয়ে মুগ্ধর বুকে মুখ গুঁজে চুপ করে রইলো। মুগ্ধ বাসের সিটের মাথাটা এলিয়ে চোখ বন্ধ করলো কিছুক্ষণের জন্য। ঘুমিয়ে পড়েছিল। তিতিরের দিকে তাকাতেই বুঝলো ও ঘুমন্ত। রাত তখন অনেক। বাসের ম্যক্সিমাম লোকজনই ঘুমাচ্ছে। কিন্তু তিতির যেভাবে বাকা হয়ে আছে পরে তো কোমড়,ঘাড় ব্যাথা করবে। তাই মুগ্ধ ডাকলো,
-“তিতির এই তিতির?”
তিতির মাথা উঠিয়ে সেই ঘুমে জড়ানো মাদকময় কন্ঠে বলল,
-“কি হয়েছে ডাকছো কেন?”
-“এভাবে শুয়ে থাকলে তোমার গা ব্যাথা হয়ে যাবে। একটু এদিকে এসে শোও।”
-“পারব না আমি। দুইটা মেয়েকে তো লিপকিস করেছোই, এখন আর আমার গা ব্যাথার কথা চিন্তা করে কি হবে? মনে যে কত ব্যাথা হয়েছে! সেটা দূর করতে পারবে?”
-“কেন বাবা? ওরা তো আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল তখন। এইযে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড হয়েছো আমি তোমাকে কত আদর করিনা বলো? করতেই হয় রে বাবা। এটা নিয়ে কষ্ট পেওনা প্লিজ।”
-“তার মানে কি তুমি আমাকে যেভাবে আদর করো ওদেরও সেভাবে আদর করেছো?”
-“না, এতটা না। বাট করেছি তো।”
তিতির কান্না করে দিল,
-“অ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যা.. তুমি এত এমন, আমি আগে বুঝিনি।”
-“কেমন?”
-“অন্নেক পচা। একদম ভালবাসো না আমাকে।”
মুগ্ধ তিতিরের চোখ মুছে দিয়ে বলল,
-“কেন বাবা? এরকম কেন বলছো? আমি তো তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। তুমি বোঝোনা?”
-“হ্যা বুঝি। খুব ভাল করে বুঝি যে আমাকে ওদের মত অত ভালবাসো না। আমিও তো তোমার গার্লফ্রেন্ড! কখনো আমাকে লিপকিস করেছো?”
-“আমি তো করতে চেয়েছিই। তুমিই পারমিশন দাওনি!”
-“অদ্ভুত তো! আমি লজ্জা পেয়ে না না বলি। তুমি পারমিশনের অপেক্ষা করো কেন? পারমিশন চাইলে কি আমি কখনো বলতে পাড়বো যে, হ্যা আসো আমাকে কিস্সি করো?”
মুগ্ধ খুব ভালভাবে বুঝতে পারছে তিতির এখনো ঘুমের ঘোরে থেকেই এসব বলছে! হয়তো ঘুম থেকে উঠে সবটা ভুলেও যাবে। কিন্তু ওর খারাপ লাগছে। ঘুমের ঘোরে তিতিরের বলা উল্টাপাল্টা কথা শুনে সবসময় ওর হাসি পায়। এখনো পাচ্ছে কিন্তু তারপরেও মনের কোন কোনায় কষ্টও হচ্ছে। কেন যে তিতিরকে সব বলতে গেল! ও তো একটা মেয়ে তার উপর বাচ্চা মানুষ! ওর খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। মুগ্ধকে চুপ থাকতে দেখে তিতির আবার বলল,
-“দেখেছো এখনো কিস্সি করছো না। তুমি তোমার এক্সদেরকেই বেশি ভালবেসেছিলে।”
মুগ্ধ বলল,
-“করবো। এখন তো জানলাম তোমার ইচ্ছে আছে। এখন করবো। তবে আজকে এই বাসের মধ্যে না।”
কান্নার ভাব করে তিতির বলল,
-“কেন?”
-“ছিঃ বাসে কেউ কিস করে? কত মানুষ আছে না?”
-“ওহ তাই তো।”
-“বাসায় গিয়ে। ওকে?”
-“জানি বাসায় গিয়ে তুমি ভুলে যাবে।”
একটু বিরক্ত হয়ে একথা বলে আবার কান্নার ভাব করলো। তারপর মুগ্ধকে অবাক করে দিয়ে তিতির নিজের সিটে দুই পা উঠিয়ে পা ভাজ করে গুটিসুটি মেরে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো মুগ্ধর কোলে মাথা রেখে। মুগ্ধ জাস্ট হা করে চেয়ে রইলো। এটুকু যায়গার মধ্যে এভাবে কি করে ঘুমানো সম্ভব সেটাই বুঝে উঠতে পারছিল না।
তিতির যেভাবে শুয়েছে বাস একটু ব্রেক করলেই পড়ে যাবে। মুগ্ধ দুহাত দিয়ে ওকে নিজের কোলের মধ্যে ধরে রাখলো। সত্যি ঘুমকুমারী নামটা সার্থক! নিজের মনেই হাসলো মুগ্ধ। তিতির একটু আগে যখন ঘুমের ঘোরেই বলেছিল, ‘কি হয়েছে ডাকছো কেন?’ ইশ তখন ওর ভয়েসটা কি মারাত্মক শোনাচ্ছিল! বুকের মধ্যে লাগছিল একদম। মুগ্ধ তিতিরের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিল। তারপর চেয়ে রইলো ওর মুখের দিকে। কিছুক্ষণ পরেই বাসটা একটা স্পীড ব্রেকার পার হলো। আর বাসটা সামান্য নড়ে উঠলো। তিতির পড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু মুগ্ধ ধরে ফেলল। তিতির নড়ে উঠে পাশ ফিরলো। কি অদ্ভুত মেয়ে! এটুকু যায়গার মধ্যে আবার পাশ ফিরছে। হেসে ফেললো মুগ্ধ। কিন্তু তিতির শুধু পাশ ফিরলই না মুগ্ধর কোমড়ও জড়িয়ে ধরলো। এখানেই শেষ নয়, ও মুগ্ধর পেটের মধ্যে মুখ গুঁজে ঘুমাচ্ছিল। পেটের মধ্যে গরম নিঃশ্বাস পড়ায় প্রথমে ওর সুড়সুড়ি লাগছিল পরে আস্তে আস্তে সয়ে গেল। বাসের সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু মুগ্ধ এমনিতেই যেখানে বাসে ঘুমাতে পারে না, এই অবস্থায় তো অসম্ভব! এই মুহূর্তটা ও কিছুতেই মিস করতে চায় না।
তিতির ঘুম যখন কিছুটা ভাঙলো, ও বুঝতে পারছিল না ও কোথায়! কিন্তু ঘ্রাণটা খুব চেনা, মুগ্ধ! কিন্তু মুগ্ধ এত রাতে কিভাবে এল? লুকিয়ে লুকিয়ে? কিন্তু সেটা কিভাবে? চম্পা কি দরজা খুলে দিয়েছে? বাবা-মা, ভাইয়া কেউ দেখে ফেলেনি তো! এসব প্রশ্নই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। এমন সময় বাসটা একটু নড়ে উঠতেই তিতির মনে পড়লো ওরা বাসে করে চিটাগাং যাচ্ছে, ওর হবু শ্বশুরবাড়ীতে। এমা! ও এভাবে মুগ্ধর পেটের মধ্যে মুখ গুঁজে ঘুমাচ্ছিল ও? ইশ জেগে উঠলে মুগ্ধ খুব ক্ষ্যাপাবে আর লজ্জা দেবে। তিতির উঠলো না ঘুমের ভান করে পরে রইলো। মুগ্ধর পেটের লোমগুলো শার্টের উপর দিয়েই তিতিরের চোখেমুখে লাগছিল! উফ কি আরাম! মুগ্ধ যদি কয়েকটা বাটন খুলে দিত তাহলে ও এখানে প্রান ভরে চুমু খেত। খুব ইচ্ছে করছে। ওকে কি বলবে? ইশ কখনো বলতে পারবে না ও।
নাহ আর কতক্ষণ এভাবে শুয়ে থাকবে? মুগ্ধর নিশ্চই কষ্ট হচ্ছে। কোল থেকে মাথাটা উঠাতেই ও বলল,
-“মাম, আপনার ঘুম ভাঙলো?”
-“ইশ তোমার কত কষ্ট হলো!”
উঠে যেতে নিল তিতির। মুগ্ধ ওকে উঠতে দিলনা। নিজেই কোল থেকে উঠিয়ে বুকের মধ্যে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো তারপর বলল,
-“কষ্ট হয়নি। থাকো এখানে ভাল লাগছে।”
-“তুমি এতক্ষণ একা একা বোর হওনি?”
-“নাহ! একা কোথায় আমার ঘুমকুমারী তো ছিল আমার কাছে। খুব কাছে!”
-“একটা গান শোনাবে?”
-“এখানে?”
-“তাতে কি হয়েছে? এই যেরকম নিচু ভয়েসে কথা বলছি সেরকম ভয়েসেই গাও।”
-“গলা না খুলে গান গাইলে কি সুন্দর হয়?”
-“সুন্দর হওয়া লাগবে না। আমি জানি তুমি ভাল গাও। একদিন খারাপ হলেও ক্ষতি নেই।”
মুগ্ধ গাইতে শুরু করলো,
“তুমি ভরেছ এ মন…..
এক নিঝুম অরন্যে।
বসন্তে পাহাড়চূড়ায় আর বৃষ্টি দিয়ে।
মরুভূমির ঝড়ে আর ঘুমন্ত সাগরে।
তুমি ভরে দাও এ মন ফিরে এসে!
তুমি ভরেছ এ মন…..
এক নিঝুম অরন্যে।
আমায় ভালবাসতে দাও
এ জীবন দিয়ে।
যেন হারাই তোমার মিষ্টি হাসিতে
যেন থাকো সারাক্ষণ এই বাহুডোরে
ফিরে এসো এ জীবনে নতুন করে।
তুমি ভরেছ এ মন…..
এক নিঝুম অরন্যে।”
To be continued….