প্রেমাতাল পর্ব ২৯
মৌরি মরিয়ম
একসময় নীরবতা ভেঙে মুগ্ধ বলল
-“ভাবছো আমি খুব খারাপ?”
-“না।”
-“তাহলে? কথা বলছো না, দূরে বসে আছো! এসবের কারন কি?”
-“কই?”
মুগ্ধ তিতিরের কাছে এগিয়ে ওর হাতটা ধরতেই তিতির আচমকা সরে গেল। মুগ্ধ বলল,
-“ভয় কেন পাচ্ছো?”
তিতির ভাবলো সত্যিই তো, ও কেন ভয় পাচ্ছে! বলল,
-“কই নাতো! ভয় পাচ্ছি না।”
মুগ্ধ তিতিরের হাতটা ধরে বলল,
-“শোনো তিতির, তোমার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি তোমার আমাকে ভয় করছে। তুমি আমাকে এরকম ভাবোনি হয়তো তাই এক্সেপ্টও করতে পারছো না। কিন্তু তোমার ভয় পাওয়ার কোনো কারন দেখি না। ও অনেক বড় একটা অন্যায় করেছিল। রাগটা আমার সেদিনই উঠেছিল কিন্তু তোমার সেফটির কথা ভেবে পালিয়ে গিয়েছিলাম।”
তিতিরের মনে পড়লো মুগ্ধর মা বলেছিল মুগ্ধর অনেক রাগ, না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। মুগ্ধ বলল,
-“দেখো, আমি অল্পতে রাগি না কিন্তু কেউ বেঈমানি করলে প্রচন্ড রেগে যাই।”
তিতির ভয়ে ভয়ে বলল,
-“বেঈমানকে তার বেঈমানির শাস্তি দেয়ার জন্য আল্লাহ আছেন।”
-“হ্যা অবশ্যই আছেন। আমি তো শাস্তি দেইনি। আমি শুধু প্রটেস্ট করেছি। আমার প্রটেস্ট করার ধরনটা এমন। আমার বাবা ছোটবেলা থেকে আমকে এভাবে প্রটেস্ট করতে শিখিয়েছেন। তার কারন, মার কেই মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। আমাদের সোসাইটিতে সবাই ক্রাইম করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর আমরা কাপুরুষের মত হাত গুটিয়ে বসে থাকি! আমরা যত হাত গুটিয়ে বসে থাকবো ক্রাইম ততই বাড়তে থাকবে।”
তিতির চুপ করে বসে রইল। এতক্ষণে একবারও তাকায়নি মুগ্ধর দিকে। মুগ্ধ বলল,
-“কি হলো? কিছু বলো।”
-“তোমাকে তখন আমার অচেনা লাগছিল। তোমার ফেসটাও বদলে গিয়েছিল।”
মুগ্ধ তিতিরকে বুকে টেনে নিল। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-“কান পেতে শুনে দেখো তো, এই হৃদস্পন্দন অচেনা কিনা?”
তিতির শুনলো ওর চেনা সেই শব্দ, ঢিপঢিপ ঢিপঢিপ ঢিপঢিপ! পেল সেই চেনা ঘ্রাণ। মুগ্ধ একটু সময় দিল তিতিরকে। তারপর বলল,
-“তিতির প্রত্যেকটা মানুষের মাঝেই ভাল খারাপ দুটো দিক থাকে। ভালটা খুব সহজেই মানুষের চোখে পড়ে। কিন্তু খারাপটা একসাথে থাকতে থাকতে সামনে আসে।”
তিতিরের মনে হলো মুগ্ধ তো ঠিকই বলছে। অন্যায় দেখলে যারা চুপ করে থাকতে পারে না তারাই তো প্রকৃত মানুষ। বলল,
-“আমি হঠাৎ তোমকে এভাবে দেখছি বলে হজম করতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু প্রটেস্ট করা কোনো খারাপ কাজ না। সো এটাকে তোমার খারাপ দিক বলা যাচ্ছে না।”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“আমি অনেক স্ল্যাং ইউজ করেছি তিতির। তুমি তো জানতে না তোমার মুগ্ধ এত স্ল্যাং ইউজ করে।”
তিতির কিছু বলল না। মুগ্ধ বলল,
-“শুধু মেরেই প্রটেস্ট করা যেত, স্ল্যাং টা এক্সট্রা ছিল যার কোনো দরকার ছিল না। বাট এধরনের সিচুয়েশনে এমনই হয়, আই কান্ট কন্ট্রোল মি। এটা আমার খারাপ দিক। এজন্যই বললাম আজ আমার খারাপ দিকটা তোমার সামনে এসেছে। একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে তোমার সবটা জানা দরকার। সব জেনেশুনে তারপর ডিসিশন নাও।”
তিতির মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে বলল,
-“কিসের ডিসিশন?”
-“আমার সাথে সারাজীবন থাকার ডিসিশন।”
তিতির মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“একদম বাজে কথা বলবে না। আমি ডিসিশন অনেক আগেই নিয়ে ফেলেছি। এখন তুমি যেমনই হও না কেন আমি তোমার সাথেই থাকব।”
-“যদি আমার আরো আরো খারাপ দিকগুলো তোমার সামনে আসে তবুও থাকবে?”
-“তবুও থাকব।”
-“যদি জানতে পারো আমার আরেকটা গার্লফ্রেন্ড আছে তবুও?”
তিতির মুগ্ধকে ছেড়ে দিয়ে ওকে মারতে শুরু করে দিল। মুগ্ধ হাসতে হাসতে ওর দুই হাত একসাথে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এল। তারপর মুখটা ধরে গালে একটা চুমু দিল। তিতির মুগ্ধর বুকে মাথা রাখলো।
নীলাচলের সামনের টিকেট কাউন্টারে জীপ থামতেই মুগ্ধ আর ড্রাইভার নামলো টিকেট কাটতে। তিতিরও নেমে দাঁড়ালো। চিকন রাস্তা দুই ধারে খাদ! অনেক নিচে দূরে বান্দরবান সিটি দেখা যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে সাঙ্গু নদী আর অজস্র উঁচ নিচু পাহাড়। মুগ্ধ পাশে এসে দাঁড়ালো। বলল,
-“চলো।”
-“এত তাড়াতাড়ি চলে এলাম?”
-“মাত্র ৬ কিমি তো!”
-“ওহ।”
মুগ্ধ জীপের দরজা খুলতেই তিতির বলল,
-“আবার জীপে উঠব কেন?”
-“এটা তো কাউন্টার। আরেকটু যেতে হবে। হেটে যাবে নাকি?”
-“ওহ।”
জীপ সাঁই করে একবার নিচুতে গিয়ে আবার উঁচুতে উঠে নীলাচলে নামিয়ে দিল। মুগ্ধ জীপটাকে পার্কিং এ দিয়ে ড্রাইভারের নাম্বার নিয়ে বলল,
-“আমরা হাইয়েস্ট ২ ঘন্টা থাকব। তুমি যেখানে ইচ্ছা অপেক্ষা করতে পারো। এসে তোমাকে ফোন দিলে তুমি চলে এসো।”
চওড়া সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল তিতির। ওর মনে হলো ওরা কোনো পার্কে বেড়াতে এসেছে। মানুষের অভাব নেই। মুগ্ধ ওর হাত ধরে বাম পাশের একদম কিনারে নিয়ে গেল। এখানটায় ইটসিমেন্ট দিয়েই গাছের গুড়ির ডিজাইন করে তা দিয়ে বারান্দার মত বানিয়েছে। এখানে এসে সামনে তাকাতেই তিতিরের মন ভাল হয়ে গেল। মুগ্ধ ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
-“কি এখন ভাল লাগছে তো?”
-“হুম। তুমি বুঝতে পেরেছিলে প্রথমে আমার ভাল লাগেনি?”
-“হ্যা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় তোমার এক্সপ্রেশন দেখেই বুঝেছি।”
তিতির হাসলো।এরপর মুগ্ধ ওকে হাত ধরে কোথাও নিয়ে যাচ্ছিল। তিতির দেখলো এখানে একটা গোল দোতলা বিল্ডিং আছে। কাছাকাছি যেতেই বুঝলো এটা একটা রেস্টুরেন্ট। মুগ্ধ রেস্টুরেন্টের দোতলায় চলে গেল। দোতলায় স্টাফদের রেস্টরুম বোধহয়। মুগ্ধ একটা ওয়েটারকে ডেকে বলল ছাদে যেতে চায়। ওয়েটার বলল,
-“পারমিশন নাই।”
মুগ্ধ ওয়েটারের হাতে ১০০ টাকা গুঁজে দিতেই ওয়েটার হেসে হেসে বলল,
-“ভাই আসলে তো এভাবে কাউকে উপরে যেতে দেইনা। বেশিক্ষণ থাকবেন না।”
-“হ্যা হ্যা আমি একটু তোমার আপুকে উপর থেকে পাহাড় দেখিয়েই চলে আসব।”
উপড়ে উঠতে উঠতে তিতির বলল,
-“পুলিশের ছেলে হয়ে তুমি ঘুষ দিচ্ছ?”
-“এটা ঘুষ না। আমাকে ও কিছু দিচ্ছে আমি ওকে কিছু দিচ্ছি, শোধবোধ। তাছাড়া আমাকে অত অনেস্ট ভাবার কোনো কারন দেখি না। আমার প্রয়োজনের জিনিসটা আমি যেভাবে হোক আদায় করে নিই। এটা আমার আরেকটা খারাপ দিক।”
একথা বলেই হাসলো মুগ্ধ। উপরে উঠেই তিতির বুঝলো কেন মুগ্ধ ঘুষ দিয়ে হলেও এখানে নিয়ে এসেছে ওকে। মুগ্ধ একেবারে কিনারে নিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“আশেপাশে তাকিও না। দূরে থাকাও। যতদূরে চোখ যায়।”
তিতির তাই করলো। তারপর মুগ্ধর বুকে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। বলল,
-“খুব মনে পড়ছে নীলগিরির কথা। কিভাবে পাহাড় দেখিয়েছিলে আমাকে। আমি তো দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম।”
-“হুম।”
-“আচ্ছা তুমি কি সবাইকে ওভাবে পাহাড় দেখাও?”
-“নাহ, তোমার মধ্যে মুগ্ধতা বেশি তাই তোমাকে দেখিয়েছি।”
এখান থেকে সব পাহড়গুলোকে নীল দেখাচ্ছে। এজন্যই বোধয় এটার নাম নীলাচল। ডান পাশে তাকাতেই দেখতে পেল কয়েকটা ঘর। সবগুলোর চাল নীল। তিতির জিজ্ঞেস করল,
-“ওটা কি?”
-“নীলাচল এস্কেপ রিসোর্ট।”
-“ওখানে কি টুরিস্টরা থাকতে পারে?”
-“হ্যা। গুজব আছে আর্মিরা ছাড়া কেউ থাকতে পারেনা কিন্তু আসলে পারে। আমি তো এক রাত থেকেছি উইদাউট এনি রেফারেন্স।”
-“সত্যি?”
-“হ্যা।”
তিতির ঘুরে দাঁড়াল। মুগ্ধর গলার পিছনে দুহাত বেঁধে বলল,
-“আমি থাকব।”
-“মানে?”
-“তুমি কাল ছুটি নিতে পারবে?”
-“কেন?”
-“তাহলে আজ রাতে ফিরব না। এখানেই থাকব।”
-“পাগল হলে নাকি?”
-“প্লিজ প্লিজ না করোনা।”
-“বান্দরবান টু ঢাকার টিকেট আমি গতকালই চিটাগাং থেকে কেটে রেখেছিলাম।”
-“তো? এখন ফেরত দেয়া যাবে না? আর ফেরতই কেন? আমরা তো যাবই বাট আজকের বদলে কাল বা পরশু। দুদিন পাহাড়ে থাকব। শুধু তুমি আর আমি।”
মুগ্ধ হেসে তিতিরের কোমর জড়িয়ে বলল,
-“আমার পাগলীটার মাথা দেখছি পুরো খারাপ হয়ে গেছে।”
-“এই বলোনা টিকেট চেঞ্জ করা যাবে?”
-“তা যাবে, পরিচিত। অপরিচিত হলেও যেত.. কিন্তু।”
তিতির মুগ্ধর মুখ চেপে ধরে বলল,
-“এত কিন্তু কিন্তু করোনা প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
মুগ্ধ ওর মুখ চেপে ধরা তিতিরের হাতে চুমু দিয়ে বলল,
-“যদিও আগে বুকিং না দিলে পাওয়া যায় না। তবু চলো দেখছি কি করা যায়।”
ভাগ্য ওদের সাথে ছিলনা। নীলাচলে একটা রুমও পাওয়া গেল না। ইভেন এখন বুকিং দিলে তিন মাস পরে পাওয়া যাবে। একথা শুনে তিতিরের মন খারাপ হয়ে গেল। মুগ্ধ বলল,
-“প্রমিস তোমাকে এখানে আবার আনবো। এই নীল চালওয়ালা এস্কেপ রিসোর্টেই রাখবো। নিলগিরি হিল রিসোর্টেও রাখবো। কিন্তু মন খারাপ করোনা বাবা।”
-“তাহলে অন্যকোথাও থাকি? আজ আমার ঢাকা যেতে ইচ্ছে করছে না। ঢাকা গেলেই তো আর তোমাকে এত কাছ থেকে দেখতে পাব না।”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“আমরা অনেক কাছাকাছি থাকি তিতির। আর হতে পারে দূর থেকে তবু তো এই মুখটা প্রতিদিনই অফিসে যাওয়ার সময় দেখিয়ে যাই। কাছ থেকেও তো দুএকদিন পর পর দেখা হয়।”
তিতির রাগে গটগট করে বলল,
-“তুমি থাকতে চাচ্ছো না? ওকে চলো।”
বলেই হাটা শুরু করলো। মুগ্ধ দৌড় দিয়ে ওকে ধরে ফেলল। বলল,
-“এই পাগলী! আমি কি বলেছি থাকতে চাচ্ছি না? তোমার কথার প্রেক্ষিতে ওই কথা বললাম।”
তিতির মাথাটা এক দিকে হেলিয়ে বলল,
-“তাহলে বল থাকবে।”
-“আচ্ছা আচ্ছা থাকব। মিলনছড়ি হিল রিসোর্টের কথা মনে আছে বলেছিলাম?”
-“হ্যা, পাখির নামে নাম সব কটেজের।”
-“হুম। ওখানে থাকবে?”
তিতির লাফিয়ে উঠে বলল,
-“উফফফ… ওয়াও!!! চলো চলো।”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“আন্দাজে গিয়ে কি করবো? খালি থাকলে ফোনেই পাব। চলো নিচে চায়ের দোকান আছে। চা খাই আর খুঁজি কোথায় থাকা যায়।”
-“খুঁজতে হবে? যদি পাওয়া না যায়? আচ্ছা এত বড় বান্দরবানে আমাদের থাকার যায়গা হবে না?”
-“শোনো, সিটিতে তো হোটেলের অভাব নেই। কিন্তু ওখানে থেকে লাভ নেই। কোনো রিসোর্টে থাকলে থাকাটা সার্থক হতো।”
-“তাহলে?”
-“রিসোর্ট না পেলে থাকব না। চলে যাব।”
তিতির মন খারাপ করে রইল। মুগ্ধ জিজ্ঞেস করলো,
-“আচ্ছা তুমি যে আজ রাতে থাকতে চাচ্ছো তোমার ভয় করছে না?”
-“কিসের ভয়? তুমি আছো না? তুমি থাকতে ভয় কিসের?”
-“আরে ভয়টা তো আমাকে নিয়েই।”
-“তোমাকে নিয়ে কি ভয়?”
-“তোমাকে একা পেয়ে যদি ভুল কিছু করে ফেলি।”
-“আমি জানি আমার মুগ্ধ কোন ভুল করতে পারেনা। এর আগেও আমরা অনেক রাত দুজনে একসাথে থেকেছি।”
-“হ্যা, তখন তো তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলেনা।”
-“তাতে কি?”
-“তাতে কি জানোনা? মুগ্ধর তো তোমার উপর অনেক লোভ জন্মেছে যা আগে ছিলনা।”
তিতির মুগ্ধর পিঠে ঘুষি দিতে দিতে বলল,
-“তুমি শুধু শুধু আমাকে কনফিউজড করবে না।”
মুগ্ধ হাসতে লাগলো। তিতির মারপিট থামিয়ে মুগ্ধর হাত জড়িয়ে হাটতে হাটতে বলল,
-“তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে।”
চায়ের দোকানগুলো পাহাড়ের পাশেই। টেবিল আর বেঞ্চ পাতা। অনেক রকম পাহাড়ী জিনিস পাওয়া যায় এখানে। বেঞ্চে বসতেই তিতির খেয়াল করলো ফ্লোরটা কাঠের। দেয়ালগুলো বাশের। ওরা যেখানে বসে ছিল তার দেয়ালগুলো বারান্দার মত অর্ধেক। দূরের সব দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে যা উপর থেকে দেখেছিল কিন্তু এখান থেকে আবার অন্যরকম লাগছে। অত দূরে লাগছে না। মনে হচ্ছে কাছেই। মুগ্ধ দোকানী মেয়েটাকে বলল,
-“দিদি দুটো চা দিয়েন।”
তারপর তিতিরকে জিজ্ঞেস করলো,
-“ম্যাম, বলেন কয়দিনের ছুটি নেব?”
-“দু’দিন।”
-“বুঝে বলো। কারন তারপর আবার বায়না ধরলে রাখতে পারব না। দু’দিন ছুটি নিলে মরতে মরতে হলেও তিন দিনের দিন অফিসে এটেন্ড থাকতে হবে।”
-“হ্যা হ্যা দুদিনই। কাল আর পরশু। কারন, কাল রাতে আমরা রওনা দিব। পরশু সকালে পৌঁছে সারাদিন রেস্ট নিবে। পরের দিন অফিস যাবে।”
-“শুধু আজ রাত আর কালকের দিনটা থাকবে তো?”
-“হ্যা।”
-“আচ্ছা। তাহলে আমি শুধু কালই ছুটি নেব। রেস্ট লাগে না। এতদিন তো রেস্ট করলামই।”
-“তবু জার্নি করে ফিরে একটু রেস্ট নিবে না?”
-“আরে না। একটা ছুটি মানে অনেক কিছু। এভাবে রেস্ট নিয়ে নষ্ট করার মানে হয়না। আমি ট্যুরে গেলে ভোরবেলা ফিরেই অফিস যাই, অভ্যাস আছে।”
তিতির আর কিছু বলল না। মুগ্ধ ফোন করে একদিন ছুটি নিয়ে নিল। তারপর মিলনছড়ি হিল রিসোর্টে ফোন দিয়ে জানতে পারলো কোন কটেজ খালি নেই। তিতির বলল,
-“এখন কি হবে?”
-“দেখছি।”
কিছুক্ষণ নাম্বার ঘেটে তারপর বলল,
-“তিতির, আমি এখন ফোন করছি আমার সবচেয়ে প্রিয় রিসোর্টের কেয়ার টেকারের কাছে। অমায়িক লোক, অনেকটা মংখাইয়ের মত। দোয়া করো যাতে ওখানে একটা ব্যবস্থা হয়।”
-“ওকে।”
তিতির খুব এক্সাইটেড ছিল। ফোন করল,
-“হ্যালো।”
-“হ্যালো, বংশী দা.. মুগ্ধ বলছি।”
-“আরে সাহাব। আপ? আপ কাহাসে?”
-“বান্দরবান থেকেই। কোনো কটেজ খালি আছে? বউ নিয়ে এসেছি।”
-“আপ সাদি ভি কার লিয়া? সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ!”
-“হ্যা দাদা। এবার একটা কটেজ দাওনা গো।”
-“লেকেন দুখ কি বাত ইয়ে হে সাহাব, কোয়ি ভি কামরা খালি নেহিহে।”
-“আহা। গেল সব।”
-“কা গায়া সাহাব?”
-“খুব ইচ্ছে ছিল তোমাদের “হলিডে ইন” এই থাকব। আমার বউটা ওইরকম যায়গা খুব পছন্দ করত।”
-“আফসোস কি বাত হে। আগার আপ হামকো কুছ দিন পেহলে বাতা দে তো হাম আপকো অর বিবিজিকো লিয়ে ও লেকওয়ালা কামরা রাখ দেতা।”
-“হুট করে এসেছি। কোনো প্ল্যানিং ছিলনা দাদা। আচ্ছা, কি আর করা। রাখছি তাহলে।”
-“আচ্ছা সাহাব, কেয়া আপ হামকো কুচ সামে দে সাকতা? হাম ম্যানেজার সাহাব কো পুছকে বাতা তা হু কেয়া তাম্বু খাটানা যাবে কি নেহি!”
-“দাদা আমি তো তাঁবু আনিনি।”
-“হামারে পাস তো হেয়।”
-“ওহ, আচ্ছা দেখ তাহলে।”
-“ঠিক হেয় সাহাব। ম্যানেজারবাবু বান্দরবান গায়া হেয়। কুছ দের বাদ আয়েগা।”
-“আচ্ছা আচ্ছা।”
আরো কয়েকটা রিসোর্টের ফোন নাম্বার ছিল মুগ্ধর কাছে। একে একে সব গুলোতে ফোন করলো মুগ্ধ। কোনোটাতেই কোনো কটেজ খালি নেই। তিতিরের মনটা পার্মানেন্টলি খারাপ হয়ে গেল। আর মুগ্ধ শেষপর্যন্ত বংশীর আশায় রইলো।
বিকেলটা নীলাচলে কাটিয়ে ওরা বান্দরবানে ফিরে এল। সন্ধ্যা হতে হতে মুগ্ধ তিতিরকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেল যার নাম মেঘদূত। এটা যে রেস্টুরেন্ট সেটা বুঝতেই কতক্ষণ সময় লেগে যায়। বান্দরবান ক্যান্টনমেন্টের শুরুতেই রাস্তার ডান পাশে একটা বড় একতলা বিল্ডিং। বিল্ডিং এর একপাশে বিশাল কিচেন আর কাউন্টার। অন্যপাশে রেস্টুরেন্ট, এসি জোন। সামনে বাগান। বাগানে কম করে হলেও ১০/১২ টা টেবিল। মাঝখানে পানির ফোয়ারা। মুগ্ধ তিতিরকে জিজ্ঞেস করলো,
-“কোথায় বসবে? ভেতরে না বাগানে?”
-“অবশ্যই বাগানে।”
বাগানের কোনো টেবিলই খালি ছিল না। কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর একটা টেবিল খালি হলো। মুগ্ধ বলল,
-“এখনে গিয়ে অর্ডার করতে হয়। তুমি বসো আমি অর্ডার করে আসি।”
-“আচ্ছা।”
মুগ্ধ অর্ডার করে ফিরে এসে বলল,
-“মুখটা প্যাঁচার মত করে রেখোনা তো। তোমাকে পেঁচিমুখী রুপে মানায় না।”
তিতির ক্ষেপলো না, মারলো না কিছুই করলো না। চুপ করে বসে রইল। মুগ্ধ বলল,
-“আরে বাবা। আমি তো চেষ্টা করলাম। এত মন খারাপ করার কি আছে? কদিন পর নাহয় আগে থেকে বুকিং দিয়ে আসব।”
তিতিরের মন তাতে ভাল হল না। ও বলল,
-“আমি কোন কিছু একবার ঠিক করলে তারপর যদি না করতে পারি খুব অস্থির লাগে, আর কিছুই ভাল লাগে না তখন।”
-“দেখছি তো বাবা। একটু ধৈর্য ধর। বংশী ম্যানেজারের সাথে কথা বলেই জানাবে। থাকার ব্যবস্থা হলে তো জানাবেই নাহলেও জানাবে। কারন ও জানে আমি অপেক্ষা করছি।
খাবার চলে এল। মুগ্ধ গপাগপ খাচ্ছে। তিতির এখনো মুখেই দেয়নি। মুগ্ধ ওকে খাইয়ে দিতে চাইল। বলল,
-“একবার খেয়ে দেখো খাবাবগুলো। ঢাকায় কোথাও নেই এত টেস্টি কাবাব। আর এই কাবাব টার নাম “অস্কার পুলে”। সাথে বসনিয়া রুটি। আমার জানামতে বসনিয়া রুটি পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের আর কোথাও অস্কার পুলে পাওয়া যায়না। একবার মুখে দিয়ে দেখ জাস্ট, অমৃত।”
-“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না তুমি খাও।”
মুগ্ধ রেখে দিল। বলল,
-“যাও আমিও খাবনা। খিদে নিয়ে সারারাত বসে থাকব।”
এমন সময় মুগ্ধর ফোন বেজে উঠলো। বংশী কল করেছে। তিতির ওর হাত আটকে ধরে বলল,
-“প্লিজ ফোন ধরোনা। যদি বলে ব্যবস্থা হয়নি আমি হার্ট অ্যাটাক করবো।”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“আরে দুটোই তো হতে পারে। ফোন না ধরলে জানবো কি করে?”
-“জানিনা আমি।”
ফোন কেটে গেল ততক্ষণে। এবার মুগ্ধ নিজেই কল করলো।
To be continued…