#ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব ৬
©জারিন তামান্না
‘খাবারটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। খেয়ে নিন প্লিজ। বাকি কথা পরে শুনবো সব।’
পলক এখনো প্রচন্ড শকড।সিফাতের কথার কোন রেসপন্স নেই। এখনো তার স্থির চাহনী। সে যে প্রচন্ডরকম ঘোরের মধ্যে আছে সেটা সিফাত বেশ বুঝতে পারছে। তাই তাকে ঘোর থেকে বের করে আনার জন্য খানিক দুষ্টুমির সুরেই বললো,
_এভাবে হা হয়ে তাকিয়ে আছেন কেন, মৃন্ময়ী ? আপনি কি চাচ্ছেন যে এবার আমি আপনাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেই?তাও এই ভরা রেস্টুরেন্টে?আমার অবশ্য কোন সমস্যা নেই। এসবে ব্যাপকভাবে অভ্যস্ত আমি। সো,আপনি চাইলে আমি…বলেই দুষ্টু হাসি হাসলো সে।
সিফাতের ওমন চাহনী আর কথাবার্তায় আরেকদফা ঝটকা খেলো পলক।অবশ্য এবারের ঝটকায় সে আগের ঘোর থেকে বেরিয়ে বাস্তবে ফিরে আসতে সক্ষম হলো। চকিতেই আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই রেস্টুরেন্ট ভরা। ফাঁকা ফাঁকা করে বেশ জায়গা নিয়ে টেবিল ফেলা হলেও এই এরিয়াটা বেশ বড় হওয়ায় অনেকগুলা টেবিল আছে এখানে। আর সবগুলোই ফুল। এবার বেশ লজ্জা পেল সে। লজ্জায় খানিক নড়েচড়ে বসলো।কিন্তু না সিফাতের দিকে তাকালো আর না কিছু বললো।
সিফাত বুঝে গেছে তার ডোজ কাজ করেছে। নিজের উপর নিজেরই গর্ববোধ হলো তার। নিজেই নিজেকে সাবাসী দিল। মনে মনে বললো,
_সাব্বাস ব্যাটা!তুই তো বিয়ের আগেই বউ সামলানোতে এক্সপার্ট হয়ে গেছিস। এক ডোজেই কেমন শকড মোড থেকে ব্যাক টু নরমাল মোড করে দিলি। very well done, Shifat..এরপর খানিক মুচকি হেসে পলকের উদ্দেশ্যে বললো,
_নিন খাবারটা কমপ্লিট করুন। নয় তো এবার সত্যি সত্যি একেবারেই ঠান্ডা হয়ে যাবে। খেতে একদম ভাল্লাগবে না।
পলক খুব ধীর স্বরে বললো,জ্বী। বলেই পলক খাওয়া শুরু করলো।
খাওয়া শেষ না হওয়া অবদি মাঝে কেউ আর কোন কথা বললো না।
_________________________________
_তো আপনি কি যেন বলছিলেন,কথাটা শেষ করুন এখন। কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললো সিফাত।
_আমি আর কি বলবো। আপনি তো সবই জানেন দেখছি।কিন্তু এসব জানার পরেও কেন বিয়ে করতে চাইছেন আমায় সেটাই বুঝতে পারছি না আমি।
_মৃন্ময়ী আপনাকে কিছু কথা বলছি মন দিয়ে শুনুন। আর আমার কথা বলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি একটা কথাও বলবেন না। কথা শেষ হোক,তারপর যা জানতে চাওয়ার, যত প্রশ্ন করার করবেন।আমি উত্তর দিব সে সবের।কিন্তু তার আগে টু শব্দ করবে না।শুধু আইসক্রিম খাবেন আর ঠান্ডা মাথায় আমার কথাগুলো শুনবেন। কেমন?
পলক মুখে কিছু বললো না।শুধু ঘাঁড় কাত করে সম্মতিজ্ঞাপন করলো।
মুচকি হেসে সিফাত বলা শুরু করলো।
_মৃন্ময়ী, আপনি আমাকে চেনেন মাত্র ৫ দিন। কিন্তু আমি আপনাকে চিনি,জানি আজ ২ মাস ১৭ দিন।
এটুকু শুনেই পলকের চক্ষু চড়াকগাছ। কিভাবে কি সেটা জানার ইচ্ছা হলেও আপাদত সে কোন প্রশ্ন করতে পারলো না। তার যে এখন টু শব্দ করাও বারণ।তাই চুপচাপ সিফাতের কথা শুনতে লাগলো।কারণ সিফাত তার মত বলেই যাচ্ছে।
_২ মাস ১৭ দিন আগে প্রথমবারের মত আমি আপনাকে দেখি। আপনার বায়োডেটাটা ভুল করে আমার জন্য সিলেক্ট করা মেয়েদের বায়োডেটাগুলোর সাথে মিশে গেছিল। কিন্তু আমি এটাকে ভুল না বলে ভাগ্য বলবো।সত্যি বলতে এটাকে আমি আমার সৌভাগ্য মানি। নয় তো অন্যকারো অনিচ্ছাকৃত একটা ভুলের কারণে আমি আমার জন্য এই সঠিক মানুষটার সন্ধান পেতাম না। ‘একটু দম নিয়ে,কফিতে চুমুক দিল সিফাত। বাইরে আকাশের দিকে চাইলো। দুপুরের শেষভাগ চলছে। রোদের উত্তাপটাও কেমন মিইয়ে এসেছে। বাইরের আকাশে চোখ রেখেই আবারো বলা শুরু করলো,
_প্রথমবার দেখেই চোখদুটো থমকে গেছিল আমার। শ্রাবণের মেঘ জমা ওই মুখখানায় ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছিল দৃষ্টির গভীরতা। টানা দুদিন আমি শুধু ভেবেছি আপনাকে নিয়ে।আমার পরিবারের মতামত কি হবে সেই নিয়ে।তারপর সবশেষে নিজের মনের ইচ্ছেটাকে বাঁচিয়ে নিয়েই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার আপনাকেই চাই। ‘কথাটা বলেই দৃষ্টি ফিরিয়ে চাইলো পলকের মুখের দিকে। মৃদু হাসলো। সে স্পষ্ট দেখতে পেলো পলকের চোখে মুখে অনেক অনেক প্রশ্নের সমাগম। সেটা উপেক্ষা করেই সে বলতে লাগলো,
_এরপর পুরো ১ মাস আমি আপনাকে মনিটর করেছি। আপনার জীবন সম্পর্কে যতটা ডিটেইলসে জানা যায় সবটা জেনেছি। আপনার বাহ্যিক চাল চলন, জীবন ধারা,ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, আপনার বিয়ে ভাঙার ব্যাপরটা এ সব..সব ইনফরমেশন আমি কালেক্ট করেছি। আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকতাম না কেন আপনার খবর আমার কাছে ঠিক টাইম টু টাইম পৌঁছে যেত। আমি যতই আপনার সম্পর্কে জানছিলাম ততই শিওর হচ্ছিলাম যে আপনাকেই আমার চাই। নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে।এরপর একদিন আমি নিশাতের সাথে দেখা করি। তাকে খুলে বলি আমার ব্যাপারটা। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই সেটা তাকে বুঝিয়ে বলার পরে সেও আমাকে হেল্প করতে রাজি হয়ে যায়।তারপর আপনার ব্যাপারে বাকি যতটুকু ইনফরমেশন নেওয়ার ছিল সেসব নিশাতই আমাকে দিয়েছে। নিশাতের সাথে মাঝে মাঝে গিয়ে দেখা করতাম।কথা হতো আপনাকে নিয়ে। আর এভাবেই কেটে যায় আরও ১ মাস।সব কিছু জানার পর যখন আমি পুরোপুরি আপনাকে নিজের করার ডিসিশন নিলাম তখনই পরিবারকে জানিয়েছি। পরিবারকে রাজি করাতে বড্ড কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে গো মৃন্ময়ী। ‘বলেই কফিতে লাস্ট চুমুকটা দিয়ে পলকের চোখের দিকে চাইলো। সেই দৃষ্টিতে দৃষ্টি স্থির রেখেই বললো,’আর তারপর সপ্তাহ দেড় আগে আপনার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই এবং স্বপরিবারে গিয়ে প্রথমবারের মত আপনার মুখোমুখি হই। আর এখন আল্লাহ চাহেন তো আপনি খুব শিঘ্রই পুরোপুরিভাবে আমার হবেন। আমার অর্ধাঙ্গীনী হিসেবে।আমার জীবনের অংশ হবেন আপনি।
কিন্তু আপনাকে নিজের জন্য পেতে চাওয়াটা যেমন আমার একান্ত ব্যক্তিগত চাওয়া।সেখানে আপনার সম্মতিটাও আমার জন্য একান্ত গূরুত্বপূর্ণ। তাই আমি চাই আপনি আমাকে জানুন।যাচাই করুন।কোন কনফিউশন থাকলে সেটা ক্লিয়ার করে নিই। তারপর আমরা একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হই। মৃন্ময়ী আমি চাই, যেদিন থেকে আমরা বিয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হবো সেদিন থেকেই সেই সম্পর্কের প্রতিটা মূহুর্ত, একে অন্যের কাছে আসার প্রতিটা পদক্ষেপে আমাদের সমান সম্মতি থাকুক। ভালোবাসা থাকুক। জানি হুট করে কাউকে ইচ্ছে করে ভালোবাসা যায় না। কিন্তু আমি এটাও চাই না যে শুধু মাত্র স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের খাতিরে বা নিয়মের জোরে আপনি আমাকে ভালবাসুন। আমি জানি আপনি না চাইলেও এই বিয়ে হবেই। কিন্তু আমি আপনাকে কিছুটা সময় দিতে চাই। মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে।আমাকে নিজের লাইফে গ্রহণ করতে।
আমি আপনাকে আমাকে চুজ করা বা না করার জন্য কোন সুযোগ দিচ্ছি না।বিয়ে আপনার আমাকেই করতে হবে।কারণ আপনি তো আবার আপনার পরিবারের বাধ্যগত মেয়ে। বাবা যার কাছে তুলে দিবে নাচতে নাচতে তার কাছেই যাবেন।(শেষের তিনটে কথা একপ্রকার ঠ্যাস মেরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো সিফাত। কারণ ভুলভাল সিদ্ধান্ত হলেও যে পলক কখনো সেসবের প্রতিবাদ করে না সেটা সিফাত জেনেছে । তাই এ ক্ষেত্রে কিছুটা রাগ আছে সিফাতের পলকের প্রতি)তাহলে সেই সুযোগ আমার কেন হবে না?আর না হলেও এখন ছেড়ে দেওয়ার অপশন নেই কোন।আপনিই আমার ওয়াইফ হবেন এটাই ফাইনাল।এখন শুধু আপনার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তটা জানতে চাইছি। আর এটা যত দ্রুত সম্ভব আমাকে জানান। আপনি সময় চান নাকি সরাসরি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চান!
দেখুন, আমার কিন্তু এই মাঝবয়সে এসে প্রেম করার মানসিকতা নেই। যত রোমান্স, ভালবাসা-বাসি সব বউয়ের সাথেই হবে। যেটা আল্লাহ চাইলে আপনার প্রাপ্য। আমার স্ত্রী হিসবে সব অধিকারও হবে কেবলই আপনার। এখন আপনি আমার প্রেম না করা প্রেমিকা হোন বা একেবারে বিয়ে করা বউ, তাতে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু খুব বেশি সময়ও আমার দেওয়ার নেই। So..take a decision fast. I want to make u ‘my lady’ as soon as possible.
কথাগুলো বলে একটা লম্বা দম নিল সিফাত।তারপর পলকের দিকে তাকিয়ে বললো,
_ব্যাস!এটুকুই বলার ছিল। এখন আপনি বলুন, আপনার কিছু বলার বা জানার আছে?
এতক্ষণ পলক লক্ষী মেয়ের মত সিফাতের বলা সব কথাগুলো শুনছিল।শুনছিল কি..একপ্রকার গিলছিল বলা চলে। কিন্তু এতসব শোনার পর, শেষমেশ যে প্রশ্নটা সে করলো সেটা শুনে এবার সিফাত নিজেই হতভম্ব হয়ে গেল।
__________________________
সিফাতের কথা শেষ হবার পর পলক ফ্যালফ্যাল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল সিফাতের দিকে।এরপর ব্যাক্কলের মত প্রশ্ন করলো,
_আপনার বয়স কত?
সিফাত হতভম্ব!বিস্মিত কন্ঠে সে জিজ্ঞেস করলো,’কেন আপনি সত্যই জানেন না? বায়োডেটা দেখেনি?’
পলক বোকার মত ডানে বা’য়ে মাথা নাড়ালো।যার অর্থ সে কিছুই জানেন না।
সিফাত পুরাই ব্যাক্কল বনে গেল।এই মেয়ে কি তবে তার সাথে পরিচয়ের আগে তার বায়োডেটাটা অবধি দেখেনি! জানেই না কিছু? বড্ড হতাশ হলো সে। একটা চাপা শ্বাস ফেলে বিরস মুখে বললো,
_এবার জুলাইতে ৩২ শেষ হয়েছে। ৩৩ রানিং।
_কিইইইইই ৩২ বছর বয়স!!! তার মানে আমার থেকে তো ১,২,৩…(এভাবে হাতের কর গুণে)পাক্কা ৯ বছরের বড়অঅ!!
পলকের এরূপ প্রতিক্রিয়ায় পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সিফাত। এ মেয়ে তো এখনই বয়স শুনেই এমন চিল্লাপাল্লা করছে তাহলে বুড়ো হতে হতে না জানি কত চিল্লাপাল্লা করবে। হে আল্লাহ মাবুদ,রক্ষা করো। মনে মনে বিড়বিড় করলো সে। তারপর হুট করেই মনে হলো,আচ্ছা এই মেয়ে কি তার নামটা জানে? নাকি সেটাও এখনো জানা হয়ে ওঠেনি। তাই চকিতেই সে প্রশ্ন করলো, আচ্ছা,আপনি আমার নামটা জানেন তো? নাকি সেটাও…
_না, না..নাম জানি।আপনি পাইলট এটাও জানি। এটুকু বলেছিল মা।
পলকের কথাশুনে জোরে সোড়ে একটা শ্বাস ফেললো সিফাত। হতাশা খানিক কমলো।যাক, মেয়ে এটুকু অন্তত জানে। তারপর কিছুটা বিদ্রুপের সুরেই পলকের উদ্দেশ্যে বললো,
_অহ,আচ্ছা।থ্যাংক গড। বায়োডেটা দেখেননি তবুও আপনি এতকিছু জানেন আমার ব্যাপারে এও ভাগ্য আমার। ধন্য আমি!
_________________________________
হোটেলের পার্কিংলটে দাঁড়িয়ে আছে সিফাত আর পলক। রিহানকে কল করে গাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলেছিল অনেক আগেই। কিন্তু এখানে এসে গাড়িটা পেলেও ড্রাইভারকে পেলে না তারা। সিফাতের মেজাজ খারাপ হচ্ছে খুব। একে তো ড্রাইভার নিখোঁজ তার উপর আবার কল রিসিভ করছেনা। পলক বারবার করে বলেছিল যে সে একাই চলে যেতে পারবে কিন্তু সিফাত তাকে একা ছাড়বে না এখন। এমনিতেই এখান থেকে অনেকটা দূরে পলকের বাসা তার ওপর এখন প্রায় বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে। তাই সে নিজেই ওকে বাসায় পৌঁছে দিবে বলেছে। এভাবে অপেক্ষা করতে বড্ড বিরক্ত লাগছে সিফাতের। কিন্তু পলকের ঠিক কেমন লাগছে সেটা তার হাব ভাবে বোঝা গেল না কিছু। হঠাৎ সিফাত ডাকলো,
_মৃন্ময়ী?
হাতঘড়িতে সময় দেখছিল পলক।বিকেল ৪:২৫ বাজে।আচমকা সিফাতের ওমন ডাক শুনে চমকে উঠলো সে। অস্থির কন্ঠে বললো,
_জ্বী..কিছু বলছিলেন?
সিফাত চুপ করে আছে। একধ্যানে দেখছে তার মৃন্ময়ীকে।এই মেয়েটা বড্ড সরল। অল্পতেই প্যানিক হয়ে যায়। ঠিক যতটা মেধাবী ঠিক ততটাও বুদ্ধিমতী নয়।খুব সাধারণ একটা মেয়ে। কিন্তু,তারপরেও….তারপরেও কি যেন একটা আছে যেটা তাকে একজন দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারীতে পরিণত করেছে। তার সরলতা?আত্মসম্মানবোধ?চিন্তার পরিপক্কতা? নাকি অন্য কিছু যা সহজে বোঝা যায় না। অদৃশ্য কোন রূপ! সিফাত ভেবে পায় না কিছুই।
সিফাতকে এভাবে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকতে দেখে পলক নিজেও কিছুটা বিচলিত হলো। তাই সে একটু জোর আওয়াজেই আবারও জানতে চাইলো,
_কিছু কি বলছিলেন আমায় আপনি?
পলকের কথায় ঘোর কাটে সিফাতের।কিন্তু ঠিক কি বলার ছিল সেটা সেও জানেনা। নয় তো ভুলে গেছে হয় তো। তাই ঠিক কি বলবে বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক চাইলো একবার। ঠিক তখনই খেয়াল করলো ড্রাইভার আসছে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে বললো,
_হ্যাঁ,বলছিলাম যে ড্রাইভার এসে গেছে।আর আপেক্ষা করতে হবে না আপনাকে। এখুনি বেরিয়ে পড়বো আমরা।
_ওহ,,আচ্ছা।
_yeah.
ড্রাইভার কাছে আসতেই চোট ঝাড়ি খেল সিফাতের।কারণ তার চা পান খাওয়ার চক্করে এতক্ষণ ওয়েট করতে হলো তাদের।
সিফাতের ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার রশিদ। বয়স সবে মাত্র ২৫ বছর। কিন্তু ব্যাপক চা পান খাওয়ার অভ্যাস। তাই সুযোগ পেলেই ছোটে চা পান খেতে।
_ইয়ে…মানে ভাইজান,আমি তো কাছেই গেছিলাম। এট্টু ভীড় আছিল। লাইনে খাড়াইতে হইছে। এইল্লাগাই দেরি হইয়া গেছে। কিন্তু দেখছে ভাইজান কি দিন আইলো আজকাল পান খাইবার লাইগ্গাও ঢাহা শহরে লাইন দইড়া খাঁড়ান লাগে! কি দিন কাল আইলো বাবা রে বাবা।
সিফাতের ঝাড়ি খেয়ে রশিদের অকপট স্বীকারোক্তি। এ আর নতুন কিছু নয়,প্রতিবারই এমন সব ঘটনার পর রশিদের একচোট স্বীকারোক্তি শুনতে হয়।যেটাকে সহজ ভাষায় কৈফিয়ত বলা চলে।সিফাত জানে ছেলেটার ঘন ঘন চা পান খাওয়ার অভ্যাস আছে। তাই আর কিছু বললো না। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। তার উপর সে নিজেও বেশ ক্লান্ত। তাই কথা না বাড়িয়ে সে গাড়ির চাবি চাইলো। আজ সে নিজেই ড্রাইভ করবে। যদিও সে ভীষণ ক্লান্ত কিন্তু তাও আজ সে নিজেই ড্রাইভ করে পলকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।তারপর নিজের বাসায় যাবে।
এতক্ষণ কৈফিয়ত দিতে ব্যস্ত থাকায় পলককে খেয়াল করেনি রশিদ। তাই চাবি বাড়িয়ে দিতে দিতে পলককে চোখে পড়তেই উত্তেজনায় একপ্রকার চেঁচিয়ে উঠলো সে।হাসি হাসি মুখ করে বললো,
_আরেএএএ…ভাবীজি না? সালামালাইকুম।কেমন আছেন ভাবীজি? আমি রশিদ। ভাইজানের পিয়ারের ডেরাইভার।(যদিও সে সিফাতের খুব পছন্দের কেউ নয়। কিন্তু তাও রশিদের এমন বাড়িয়ে বলা কথায় কিছু বললো না সে)
রশিদের আচমকা এমন চেঁচিয়ে উঠায় প্রথমে সিফাত আর পলক দুজনেই চমকে উঠেছিল। সিফাত নিজেকে দ্রুত সামলে নিলেও পলক থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুসময়। তারপর নিজেকে ধাতস্ত করে রশিদের কথার জবাব দিলো।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম। জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?
_জ্বে, আমিও বহুত ভালা আছি আল্লাহর রহমতে। ভাইজানের লগে দেখা করতে আইছিলেন বুঝি?
এবার পলক বেশ অস্বস্তিতে পড়লো। কি বলবে সে?বিয়ে ঠিক হতে না হতেই হবু বরের সাথে রেস্টুরেন্টে মিট করতে এসেছিল?কি ভাববে রশিদ! পলক আবারও প্যানিক হয়ে গেছে। সিফাত সেটা বুঝতে পেরে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল রশিদকে।
_আহ,রশিদ। বেশি কথা বলো না তো। দাও চাবি দাও,আর তুমি ক্যাব নিয়ে বাড়ি চলে যাও।আমি উনাকে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরবো।
সিফাতের ধমকে চুপসে গেল রশিদ। একটু বেশি বকবক করার বাতিক আছে বেচারার। কিন্তু সিফাতকে সে বেশ সমীহ করে। সম্মান করে।ভালোওবাসে খুব।তাই আর কিছু না বলে চুপচাপ চাবি বাড়িয়ে দিল সিফাতের হাতে।
চাবি হাতে নিয়ে পলককে বললো গাড়িতে গিয়ে বসতে। পলকও বাধ্য মেয়ের মত তাই করলো। একটু সময় পর সিফাতও গাড়িতে এসে বসলো। সীট বেল্ট লাগাতে লাগাতে পলককে ইশারা করলো সীট বেল্ট লাগিয়ে নিতে। সীট বেল্ট টেনে লাগানোর সময় পলক সেটা ঠিকঠাকভাবে লক করতে পারছিল না।বার বার সেটা ছুটে যাচ্ছিল। সিফাত চুপচাপ কিছুক্ষণ দেখলো পলকের কান্ড। মিটিমিটি হাসছে সে।এদিকে বেচারি পলক বেল্ট টানাটানি করে রীতিমত পেরেশান। সিফাতের বেশ মায়া লাগলো এবার। তাই সে নিজেই সেটা লাগিয়ে দিবে বলে ঠিক করলো।
চলবে……