#ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব ৭
©জারিন তামান্না
পলক রীতিমত নাজেলহাল।কিন্তু এর থেকেও বেশি কিছুই বোধয় ছিল তার কপালে।তাই বেল্ট টানাটানির একপর্যায়ে হাত ফসকে বেল্ট গেল ছুটে।সজোরে ছিটকে ফিরে গেল নিজের জায়গায়।ব্যাপরটা এতই দ্রুত ঘটছে যে পলক ভয় পেয়ে পেছনের দিকে ঝুঁকে গেল।চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে সে।শক্ত হয়ে সেঁটে রইলো সীটের সাথে। সিফাত তখনও চুপচাপ।খুবজোর হাসি পেল তার পলকের এহেন ভয় পাওয়া দেখে। কিন্তু এই অবস্থায় বেচারিকে হেনস্থা করতে আর মন চাইলো না তার। তাই কোন রকমে হাসি চেপে শান্তস্বরে বললো,
_দেখি,,,বেল্টটা এদিকে দিন।আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।
পলক তখনো চোখ মুখ খিঁচে পেছনের দিকে সেঁটে আছে।সিফাতের কথা তার কানে গেল না। তার এহেন অবস্থা দেখে সিফাত বুঝলো সে শুনতে পায়নি তার কথা। তাই গলা বাড়িয়ে ডাকলো তাকে।
_মৃন্ময়ী!
সিফাতের ডাকে হকচকিয়ে গেল পলক। কিন্তু নড়লো না এক বিন্দুও।মিটিমিটিয়ে চোখ খুলে প্রথমে সামনে দেখলো। কি হয়েছিল খেয়াল হতেই তার বা’পাশে ঘুরে বেল্টটাকে দেখলো।সেটাকে নিজের জায়গায় দেখে ধাতস্ত করলো নিজেকে। এরপর তাকালো সিফাতের দিকে।কপাল কুঁচকে চিন্তাভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। পুরো ব্যাপরটা বুঝতে পেরে ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল সে। দ্রুত সোজ হয়ে বসে গায়ের ওড়না টেনেটুনে ঠিক করলো। যদিও বা সেটা ঠিকই ছিল। কিন্তু নার্ভাস হয়ে পড়ায় কি রেখে কি করছিল সেটা পলকের নিজেরও বোধগম্য হচ্ছিল না।
_Are you ok,Mrinmoyi? সিফাতের শান্তকন্ঠে করা প্রশ্ন।প্রশ্ন শুনে সিফাতের দিকে তাকালো পলক। অস্থিরকন্ঠে দ্রুত জবাব দিল।
_হ্যাঁ এ..হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।
_আচ্ছা।দেখি বেল্টটা এদিকে দিন তো আমি লক করে দিচ্ছি।
সিফাতের কথায় আবারও হকচকিয়ে গেল পলক। সিফাত ঠিক কি বললো, বুঝতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো তার। সিফাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে নির্বিকার ভঙ্গীতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল পলক। তারপর আস্তে করে বেল্টটা টেনে আনলো সামনের দিকে। লক করতে যাবে তখনই সিফাত বললো,
একটু উপরের দিকে ধরুন তো। কথাটা পলকের বোধগম্য হলো না। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সিফাতের দিকে চাইতেই সে বেল্টের দিকে কিছু ইশারা করলো। সিফাতের দৃষ্টি অনুসরণ করে বেল্টের দিকে চাইতেই সিফাত বললো,
_যেখানে ধরে আছেন সেখান থেকে খানিকটা পিছিয়ে ধরুন যাতে বেল্ট ছুটে না যায়। পলক এবারেরও ঠিক কিছু বুঝলো না। শুধু সিফাতের কথা মত অন্য হাতদিয়ে খানিকটা উপরে হাত রেখে টেনে ধরে রাখলো বেল্টটাকে। পলক বেল্ট টেনে ধরতেই সিফাত নিচের খালি জায়গাটায় ধরে টেনে বেল্টটা লক করে দিল।পলক অবাক হলো বেশ। কি সুন্দর দূরত্ব রেখেও মানুষটা ঠিক তাকে হেল্প করলো। একটা অন্য রকম ভালো লাগা ছুঁয়ে গেল তাকে। মনে মনেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মৃদু হাসলো সে। কিন্তু মুখে কিছুই বললো।এই মূহুর্তে ভীষণ লাজ্জা লাগছে তার।
________________________________
_সাজির বিয়ে ঠিক হয়েছে। ডেট ফাইনাল হয়নি কিন্তু ছেলেরবাড়ি থেকে দেখতে এসে পাকা কথা দিয়ে গেছে।
রাতে খাবার টেবিলে এসে বসতে বসতে নিজের স্ত্রী শিফাকে কথাগুলো বললো পলকের বড়ভাই পলাশ। কিন্তু শিফার তাতে কোন হ্যাতচ্যাঁত নেই। সে নির্বিকার ভঙ্গীতে স্বামীর প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
শিফার এমন নির্বিকার ভাবভঙ্গী দেখে খানিকটা বিরক্ত হলো পলাশ।বিরক্তি নিয়েই আবারও বলা শুরু করলো,
_ছেলে পাইলট। যদিও ছেলের বয়স আমার সাজির তুলনায় খানিকটা বেশিই কিন্তু মা বললো ছেলে আর তার পরিবার নিজে থেকে সম্বন্ধ নিয়ে এসছিল।পলককে দেখে তাদের খুব পছন্দ হয়েছে।
স্বামীর প্লেটে তরকারি তুলে দিতে দিতে নির্বিকার ভাব বজায় রেখেই শিফা বললো,
_তা এসব আমাকে বলছো কেন? আমি কি কিছু শুনতে চেয়েছি নাকি আমাকে শোনাবার জন্যই এভাবে বলছো?
_আহ,শিফা! এভাবে বলতেছো কেন?এতদিন পরে আল্লাহ তা’আলা আমার বোনটার দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন। বিয়ের জন্য এত ভালো ছেলে, পরিবার পাচ্ছে ও। আমার ভীষণ খুশি লাগতেছে ওর ভাগ্য দেখে। শেষের কথাগুলো বলতে গিয়ে চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো পলাশের।আর সেটা দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো শিফা। বেশ তেঁতানো গলায় বললো,
_এএএহ….কি আমার ভাগ্য!না জানি আবার কোন বাড়ির মানুষ গুলার কপাল পুড়লো।আরেএএ..তোমার ঐ অপয়া বোনটার জন্যই আমার একমাত্র ভাইটা আজকে জেলে।মাকে ভিটে মাটি ছেড়ে আমার কাছে এসে পড়ে থাকতে হচ্ছে।আমার মেয়েটা নিজের দাদাবাড়ির বাড়ির আদর, সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।আর তুমি কিনা ঐ অপয়ার বিয়ের খবর আমাকে শুনাইতে আসছো! কিছুটা আর্তনাদ করেই বললো কথাগুলো শিফা।
_চুপ করো শিফা। অনেক বেশি বলে ফেলছো কিন্তু। রাগী অথচ ঠান্ডা গলায় নিজের স্ত্রীকে সাবধান করলো পলাশ। কিন্তু শিফা দমবার পাত্রী নয়। স্বামীর এমন সতর্কবাণী যেন আরও বেশি অগ্রাসী করে তুললো তাকে।তারপর প্রবল ক্রোধমিশ্রিত কন্ঠে বললো,
_হবে না,কোনদিনও সুখী হবে না ঐ অপয়া, পোড়ামুখী।কোন অকালের অভিশাপে যে আমার সোনা ভাইটার সাথে তোমার ওই রাক্ষসী বোনটার বিয়ের খেয়াল আসছিল আমার মাথায়…আল্লাহ গো..সব শেষ করে ছাড়ালো ঐ অপয়া রাক্ষসীটা। মরে না ক্যান ঐ রাক্ষসী।মরলে পরে এত কষ্টের মধ্যেও আমার ভাইটা একটু শান্তি পাইতো।আর..
এরপর আর কিছু বলতে পারলো না শিফা। তার আগেই ধমকে উঠলো পলাশ।
_শিফা!!আর একটাও কথা বলবা না বলতেছি। কি শুরু করছো তখন থেকে হ্যাঁ? কি শুরু করছো!যা মুখে আসতেছে বলে যাচ্ছো আমার বোনের নামে। কি দোষ করছে ও? যা হইছে সব তোমার ঐ ক্রিমিনাল ভাইয়ের জন্য। কোন যোগ্যতাই ছিল ওর আমার বোনের পাশে দাঁড়ানোর। আমার বোনের পায়ের নখের যোগ্যতাও ছিল না ওর।তারপরেও শুধুমাত্র তোমার কথায়, তোমার চাওয়া রাখতে আমার অনার্স পড়ুয়া বোনটার বিয়ে আমি তোমার ওই ক্লাস এইট পাশ অশিক্ষিত ক্রিমিনাল ভাইটার সাথে দিতে গেছিলাম। আর তুমি? তুমি কি করছো হ্যাঁ? বাবা যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বললো, কি সিনক্রিয়েটটাই না করলা!আরেএএ বাবা না হয় রাগের মাথায় বলছিল, তুমিও ক্ষমা চাও নাই একবারও।আমার বোনের এত বড় সর্বনাশ করতে চাওয়ার পরেও এতটুকু অনুতাপ নাই তোমার।আর সেই তুমি কিনা আমার বোনকে বলে যাচ্ছে তাই বলে?এত সাহস কি করে হয় তোমার?
আর কি যেন বললা!আমার বোনের জন্য তোমার মেয়ে ও বাড়ির আদর পায় নাই। আরেএএ, সেদিন বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করতে কে গেছিল সুইসাডের নাটক করতে?জন্মের পরে ওর মুখটাও তুমি দেখতে দাও নাই ওই পরিবারের কাউকে।তখন শুধু মাত্র আমার মেয়েটা তোমার গর্ভে ছিল বলে আর এখন ওর মা হিসেবে আছো বলেই এতদিনেও আমি তোমায় ছাড়ি নাই। নয় তো তোমার মত মানুষের সাথে একঘরে থাকতেও আমার অসহ্য লাগে। কথাগুলো বলেই ভাতের প্লেটে হাত ধুয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেল পলাশ। আর স্বামীর থেকে এতগুলো কথা শোনার পর অপমানে রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো শিফা।
_______________________________
ছাদের রেলিং এর কাছে দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট টেনে যাচ্ছে পলাশ।অতিরিক্ত রাগ বা টেনশনে পড়লে তার সিগারেট খাওয়ার মাত্রাও বেড়ে যায়। তিন বোনের মধ্যে পলক হলো তার সবচেয়ে আদরের। ৬ বছরের বড় হলেও পলাশের সবচেয়ে কাছের ছিল এই পলক। মায়ের দেখাদেখি সেও সাজি নামেই ডাকতে শুরু করে বোনকে। অন্য দু বোনের থেকে পলকের রুপ রঙ খানিক চাপা হওয়ায় বিশেষ খেয়াল আর আদরে রাখতো সে পলকে। সে যেদিন বাসা ছেড়ে এলো সে কি কান্না পলকের।তার ভাইটাকে ছাড়া যে একদমই চলে না। ও বাড়িতে যদি ওর সবচেয়ে কাছের কেউ ছিল সেটা ওর এই ভাইটা। ছোট থেকে এই ভাইটাই তাকে আগলে রেখেছিল। এই ভাইয়ের কথা রাখতেই এত কান্নাকাটির পরেও শেষমেশ বিয়েতে রাজি হয়েছিল সে।আর সেই কি না তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে! এসব ভাবতে ভাবতেই আবারও মনে পড়ে গেল পলকের বিয়ের দিনের কথা।
সেদিন বিয়ে ভাঙার কথা শুনে মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলেন তাদের বাবা আমজাদ আলী।এমনতেই বড় মেয়ের জন্য সমাজে মুখ দেখানো দায় হয়ে গেছিল।তার ওপর মেজ মেয়ের বিয়েটাও ভেঙে গেল।তাও ছেলের দোষে।এখন তো লোকে আরও ছিঃ ছিঃ করবে তাকে। শেষমেশ একটা অশিক্ষিত, ক্রিমিনালের সাথে মেয়ে বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। এতটাই নির্দয় পিতা সে। লোকে ভাববে মেয়ের বোঝা ঘাঁড় থেকে নামাতেই এহেন কাজ করেছেন তিনি। এসব ভাবনা চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু অন্যদিকে শিফা নিজের ভাইয়ের এহেন পরিস্থির জন্য পলককে দায়ী করে যাচ্ছেতাই বলে সে পলককে।অশান্তি করে খুব। এসব শুনে আমজাদ আলী আর সহ্য করতে না পেরে অনেক অনেক কথা শুনিয়ে দেয় শিফাকে।শিফাও চুপ থাকে না। শশুড়ের সাথে তর্কে জড়িয়ে যায়। কথায় কথায় একপর্যায়ে শিফাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন আমজাদ আলী।রাগে অপমানে শিফাও বলে দেয় সে থাকবে না এই সংসারে। কিন্তু সে একা যাবে না। গেলে পলাশকেও সাথে যেতে হবে। কিন্তু পলাশ যেতে রাজি হয় না। সে ভাবে বাবা রাগের মাথায় বলেছেন আর শিফাও উত্তেজিত হয়ে এসব করছে।শিফার গর্ভধারণের বিষয়টা তখনো তার ও পরিবারের সবার অজানা। শিফা জানতো ঠিকই কিন্তু বলেনি কাউকে। আর যখন পলাশ রাজী হচ্ছিল না তখন সে গর্ভধারণের বিষয়কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
সেদিন..
_তুমি সত্যিই যাবা না আমার সাথে?
_না।এই বাড়ি আমার পরিবার ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। আর তুমিও যাবে না কোথাও। বাবা রাগের মাথায় বলেছেন এমন। দোষ তো তোমারই ছিল।বাবার সাথে ওভাবে কথা বলা একদম উচিৎ হয়নি তোমার।
_না। আমি আর এক মূহুর্তও থাকবো না এই বাসায়। আমি তো যাবোই সাথে তুমিও যাবা। আর না গেলে..
_আহ,শিফা।চুপ করো তো। আমি কোথাও যাবো না বলছি তো। তোমার যাওয়ার হলে তুমি যাও।আমি তোমার জন্য আমার পরিবারকে ছাড়তে পারবো না। আর তুমি যা করেছো তারপরে তো এসবের প্রশ্নই আসে না।
কথাগুলো মূলত কথার কথা হিসেবে বলেছিল পলাশ। শুধু মাত্র শিফাকে ভয় দেখিয়ে সেই সময়টুকুর জন্য চুপ করাতে। কিন্তু তার এমন কথার প্রতিক্রিয়া হিসেবে শিফা যা বলেছিল তা সম্পূর্ণ তার ধারণার বাইরে ছিল।তাকে বাধ্য করেছিল নিজের পরিবার ছেড়ে শিফাকে নিয়ে আলাদা থাকতে।
_আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি যাবা না আমার সাথে। এটাই তোমার শেষ কথা তো! তাহলে তুমিও শুনে রাখো,তুমি কালই আমাকে ডিভোর্স দিবা। আমি কালই এই বাচ্চাটার এবর্শন করে ফেলবো। আর যদি তাও না দাও তাহলে আমি সুইসাইড করবো। আমরা দুজনেই শেষ হয়ে যাবো।তখন আমার জন্য আর কোন দায় তোমার থাকবে না।
বাচ্চার কথা শুনে চমকে যায় পলাশ। আচমকা এমন একটা খবরের বিস্ময়, প্রথম বাবা হওয়ার আনন্দ,আর তারপরেই বাচ্চাটাকে হারানোর ভয় এই সব অনুভূতি একে একে এসে জাপটে ধরে তাকে।বিস্মিত ভয় মিশ্রিত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সে জিজ্ঞেস করে, তুমি প্রেগন্যান্ট, শিফা?
শিফা চুপ।সে বুঝে গেছে তার মোক্ষম হাতিয়ার কাজে দিয়েছে। সে খুব ভালো করেই জানতো যে পলাশের বাচ্চা কতটা পছন্দের। বিয়ের পর পরই বাচ্চা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। কিন্তু শিফা এত তাড়াতাড়ি মা হতে চায়নি। তাই এই সেই অযুহাতে নয় তো পলাশের অগোচরেই পিল খেয়ে গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকতো। এরপূর্বেও একবার সে গর্ভধারণ করেছিল। কিন্তু সকলের অগোচরেই মেডিসিন নিয়ে এবর্শন করে ফেলে বাচ্চাটার। এবারও সেটাই করার চিন্তাভাবনা করেছিল বলেই কাউকে কিছু জানায়নি। বিয়ের ঝামেলা মিটলেই তার এবর্শন করার প্ল্যান ছিল। কিন্তু পলাশকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করতেই অনিচ্ছা স্বত্তেও বাচ্চাটার কথা বলতে হলো তার।
_কি হলো, চুপ করে আছো কেন? তুমি কি সত্যি সত্যি প্রেগন্যান্ট? কত দিন হলো? আর আমাকে জানাওনি কেন তুমি? এইই শিফা.. কথা বলছো না কেন তুমি? উত্তেজনায় ভেতর ভেতর কাঁপছে পলাশ। কথা জড়িয়ে আসছে তার।পলাশের এই মূহুর্তের অবস্থাটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলো শিফা। তাই নিজের কাজ হাসিল করার জন্য শেষ দাউটাও সে চেলে ফেললো। মুখ খুললো শিফা।
_হ্যাঁ। দু মাস চলছে। এটুকু বলতেই পলাশ দৌঁড়ে এসে জাপটে ধরলো শিফাকে। পূর্বের ন্যায় আনন্দে উত্তেজনা ভরা গলায় বললো,থ্যাংক ইউ শিফা। থ্যাংক ইউ সো মাচ। তুমি নিজেও বুঝতে পারছো না তুমি কত বড় উপহার দিয়েছো আমাকে। খুব খুশি হয়েছি আমি।
খুব ধীরে পলাশের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল শিফা। তারপর অতিব শান্ত গলায় বললো,
_খুশি হওয়ার কোন কারণ নেই পলাশ। যখন এই বাচ্চাটা জন্মই নেবে না তখন..। এটুকু শুনেই ধমকে উঠলো পলাশ।
_শিফা!!কি যা তা বলছো তুমি? জন্ম নিবে না মানে?আমার সন্তান জন্ম নিবে। এই পৃথিবীর আলোও সে দেখবে। আলো দেখবে সে।
_আমিই যখন থাকবো না তখন এই বাচ্চা জন্ম নিবে কিভাবে? তুমি আমাকে ডিভোর্স না দিলে আমি সুইসাইড করবো। আমার সাথে সাথে এই বাচ্চাটাকেও শেষ করে দিবো। তাই,হয় তুমি আমাকে নিয়ে তোমার সন্তানকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাবে নয় তো..
_না…তুমি আমার সাথে এটা করতে পারো না শিফা। বাচ্চাটা আমারও। তুমি একা ওর জন্য কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারো না।(পলাশের প্রকাশ্য প্রতিবাদ।)
_না পারার কিছু নেই পলাশ। বাচ্চাটার মা আমি। আমার গর্ভে আছে ও। আমার যা ইচ্ছা করতে পারি আমি নিজের সাথে…আর ওর সাথেও।(শিফার সহজ কথায় হুমকি।) এখন তুমি বলো, তুমি আমাকে নিয়ে আলাদা হবে নাকি..
_শিফা প্লিজ!! বোঝার চেষ্টা করো।এমনটা করলে তুমি শুধু আমাকে না, আমাদের অনাগত সন্তানকেও তার পরিবার থেকে দূরে করে দিবে। প্লিজ শিফা..একটু বুঝো! আমি তোমাকে খুব যত্নে রাখবো।ইনফ্যান্ট বাড়ির সবাই এই খবরটা শুনলে কতটা খুশি হবে তোমার ধারণা নেই। তারা তোমায় মাথায় করে রাখবে। আর বাবা…বাবার রাগও দেখবে থাকবে না আর। ঝোঁকের মাথায় কি না কি বলেছেন তাই ধরে তুমি চলে যেতে চাইছো। এমন পাগলামো করে না সোনা.. প্লিজ।
_ওর পরিবার বলতে তুমি আর আমিই যথেষ্ট হবো। অন্যকাউকে লাগবে না। এখন তুমি সিদ্ধন্ত নাও। তোমার এই বাচ্চা চাই নাকি একেবারে মুক্তি চাই আমাদের থেকে?
শিফা তার কথায় অনড়। পলাশের কোন অনুনয় তাকে তার এগুয়ে দাবী থেকে টলাতে পারলো না।তাই বাধ্য হয়ে পলাশকেও আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হলো।আলাদা হওয়ার কথা শুনে আমজাদ আলী মুখে মুখে তাকে ত্যাজ্যপুত্র করে দিলেন। নিজের বাচ্চাটার জন্ম হোক পৃথিবীতে তার জন্য নিজের জন্মদাতা জন্মদাত্রী বাবা মা, আদরের বোনগুলোকে ছেড়ে আসতে হয়েছিল সেদিন তাকে।আমজাদ আলীর ভয়ে কেউ তার সাথে প্রকাশ্যে যোগাযোগ না রাখলেও তার মা নিজের একমাত্র ছেলেকে ছাড়তে পারেননি। শহর ছেড়ে অন্যত্র থাকায় বিগত ২’৫ বছরে দেখাও হয়নি একবারও।
একটা চাপা অপরাধবোধ আর বিষাদ ভরা শ্বাস ছেড়ে অতীতের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো পলাশ। হাতে থাকা জ্বলন্ত সিগারেটটা ওভাবেই মেঝেতে ফেলে দিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। মেয়েটা যে তার ভীষণ বাবা ভক্ত। রাতে বাবাকে ছাড়া সে কিছুতেই ঘুমায় না। এত এত কষ্ট মানসিক যন্ত্রণার মাঝে এই মেয়েটাই যে তার একমাত্র আনন্দ আর সুখের খোঁড়াক।
চলবে…