#ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব ২৬

0
531

#ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব ২৬
©জারিন তামান্না

তুমি ভালো আছো তো পলক?
_আলহামদুলিল্লাহ। অনেক ভালো আছি। তুমি সুখী তো?
_হ্যাঁ,,,সবকিছু হাতছাড়া হওয়ার পর নির্ঝঞ্ঝাট হয়ে গেছি একেবারে।সুখী না হয়ে যাই কই! তিয়ান নিজেই হাসলো নিজের কথায়। তা দেখে পলকও হাসলো খানিক নিঃশব্দেই। তারপর বললো,
_এখনো আয়ানার সাথেই আছো নাকি…
_আয়ানা বলতে কেউ কখনো ছিলই না,,এখন থাকার তো প্রশ্নই আসে না।
পলক হতবাক হয়ে গেল তিয়ানের এমন অকপট স্বীকারোক্তিতে। চট করেই প্রশ্ন করলো,
_তবে সেদিন যে বলেছিলে…
_অন্ধবিশ্বাস ভালো নয় পলক। বিশ্বাস যেমন অনেক কিছু পাইয়ে দিতে পারে তেমনি অনেক সময় অনেক কিছু খুইয়েও দিতে পারে। তাই বিশ্বাসের পিঠেও প্রশ্ন দাঁড় করাতে জানতে হয়। বলেই শুকনো হাসলো তিয়ান। আর পলক বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে তিয়ানের দিকে। তা দেখে আফসোস ভরা কন্ঠে তিয়ান বললো ,
_বড্ড দেরি করে ফেলেছি আমি,নাহ?ছেড়ে দিলেও একবার পেছন ফিরে দেখা উচিৎ ছিল।তাহলে হয় তো অন্তত…
_ভাগ্যের উপর কারো হাত থাকে না,তিয়ান। তবে ভাগ্যও পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আগে শেষ সুযোগ দেয় আমাদের।চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার। আমরাই শুধু সেই সুযোগ থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য পথে রাস্তা খুঁজে নেই। আমায় একলা ফেলে যাওয়া আমার সেই রাস্তাটা পার করে জীবনের নতুন মোড়ে পৌঁছে গেছি আমি। তুমিও আর থেমে থেকো না।
_বন্ধু তো আমরা আগের মতই আছি, তাই না?
_হ্যাঁ,,আর আজীবন থাকবো।” পবিতি গ্যাং” আজীবন একই সম্পর্কে আবদ্ধ থাকবে।
_ পলক, বিথি,তিয়ান = পবিতি, এখনো মনে রেখেছো তুমি এটা?বলেই খানিক সজোরে হাসলো তিয়ান। কলেজে ক্লাসমেটরা তাদের দলের নাম দিয়েছিল পবিতি। তারা তিনজন প্রায়সময় একসাথে থাকতো বলে বন্ধুরা মজা করে এই নাম দিয়েছিল।
আলতো করে হাসলো পলক।আজও তিয়ান মুগ্ধ হয়ে দেখলো সে হাসি।তারপর বললো,
_সিফাত ভাইয়া কবে ফিরছেন দেশে? বিয়ের ডেট কবে?
_এই তো আর ২ সপ্তাহ পরেই ফিরবেন। সিনিয়র পাইলট হিসেবে জয়েন করবেন এসে। জয়েনিং এর পরেএকমাসের আগে তো ছুটি পাবেন না। তাই বিয়েটা নেক্সট ইয়ার ফেব্রুয়ারিতেই হচ্ছে। ২১ তারিখ।
_অহ,আচ্ছা। বেশ ভালো মনের মানুষ সে। প্রথমবার দেখেই ভালো লেগেছিল আমার।
_হ্যাঁ।
_সুখী হবে তুমি।
_তা জানি না। সেটা সম্পূর্ণ ভাগ্যের ব্যাপার। তবে,এটুকু জানি যে, আমার রূপ,রঙ, অতীত সবটা জেনে বুঝেই আমাকে গ্রহণ করছেন উনি,,পরবর্তীতে ভুল বলে অবজ্ঞা অন্তত করবেন না।
পলকের কথাটার অর্থ বেশ ভালো করেই ধরতে পারলো তিয়ান। মেয়েটা আজও অভিমান করে আছে তার উপর। শুকনো হাসলো সে। কারণ এর বিপরীতে কিছু বলার ক্ষমতা তার নেই আজ। তারপর, প্রশ্ন করলো পলককে।
_অতীতের সবটাই জানে তাহলে?
তিয়ান যে এই প্রশ্নের দ্বারা তাদের সম্পর্কের বিষয়টাকে বুঝিয়েছে সেটা পলক বেশ বুঝতে পারলো। সিফাত জানে না তিয়ানের আর তার অতীতটা।বলেনি সে। তবুও,সে মিথ্যা বললো তিয়ানকে,
_হু,,সবটাই জানে।
তিয়ান আর কিছুই বললো না এরপরে।সিফাত যখন সবটাই জানে এবং তারপরেও তিয়ানকে দেখেও কোন মিস বিহেভ বা আপত্তি করেনি তখন এই মানুষটার মনটা সত্যিই ভালো।সুখী হবে তার পলক এই মানুষটার সাথে। মনে মনে এসব ভাবতেই একটা প্রশ্ন উঠলো তার মনে,”তার পলক?! পলক কি আর তার আছে এখনো?” নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো তিয়ান। কিন্তু,উত্তর পাওয়ার কোন চেষ্টা সে করলো না। মনকে প্রবোধ দিল সে, সব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি নয় সবসময়!
___________________________________

এক সপ্তাহ পর,

দুপুর বেলায় বাসায় ফিরতেই স্টাডি টেবিলের উপর একটা খাম দেখতে পেলো পলক। কৌতুহলী হয়ে খামটা হাতে নিতেই অবাক হয়ে গেল সে। সিফাত পাঠিয়েছে। দ্রুত হাতে খামটা খুলতেই একটা ভাজ করা কাগজ পেল । কাজটার ভাজ খুলতেই মুচকি হাসলো পলক। চিঠি লিখেছে সিফাত তাকে। আমজাদ আলীর অসুস্থতার খবর পাওয়ার পর প্রায় দিন সময় পেলেই একবার দুবার কল করে সিফাত। মাঝে মাঝে ফ্রি থাকলে ভিডিও কল দিয়ে গম্ভীর নয়নে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে পলকের দিকে। কিন্তু কিছু বলেনা । তারপর,১/২ মিনিট পরে কল কেটে দিয়ে টেক্সট করে, “নিজের খেয়াল রাখবেন।Bye.” প্রতিবারই এক কাহিনী। প্রথম প্রথম আজব লাগতো পলকের কাছে ব্যাপারটা। তাই একবার জিজ্ঞেসও করেছিল সিফাতকে, এমন কেন করে সে? জবাবে সে কেবল বলেছিল,

_পদ্মপাতার জলের মত টলটলে ও মুখখানা দেখে আমি কেবল আমার চোখের তেষ্টাটুকু মিটাই,মৃন্ময়ী! এই নিয়ে আপনার কোন আপত্তি থাকলেও সেটা আমি মানতে চাই না। আর কথার শব্দ বাক্য তাতে ব্যাঘাত ঘটায় & নিজের কাজে ডিসার্টবেন্স মোটেও পছন্দ নয় ল। U know that right? তবে জানেন,বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে ভয়ও লাগে আবার।
_ কেন? অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল পলক।
_যদি নেশা লেগে যায়।টাল হারিয়ে ফেলি! তখন এই দূর দেশে কে উদ্ধার করবে আমাকে বলুন তো?! বলেই সকৌতুক হেসেছিল সিফাত।
তবে, সিফাতের এমন অধিকারবোধের আগে পরে আর কোন কিছুই বলতে পারেনি পলক সেদিন। মানুষটার এইসব ছোট খাটো পাগলামি, শক্তপোক্ত অধিকারবোধগুলো যে তারও ভালো লাগে আজকাল।তাই লজ্জা, অস্বস্তি লাগলেও চুপচাপ বসে থাকতে হয় তাকে ক্যামেরার সামনে।

কিন্তু,এত কিছুর পরেও এই যুগে এসেও দূর দেশ থেকে এভাবে কেউ চিঠি লিখতে পারে এটা ভেবেই আশ্চর্য হয়েছিল পলক। তবে,সিফাতের এই কাজটা বেশ ভালোও লেগেছে তার। তাই দেরি না করে চটপট পড়তে শুরু করলো সে চিঠিটা । চিঠিতে লেখা,

প্রিয় মৃন্ময়ী,
আসসালামু আলাইকু। কেমন আছেন আপনি? আর বাকি সবাই?
অবাক লাগছে না? রোজ কথা হওয়ার পরেও,আপনাকে দেখতে পাওয়ার পরেও,সব সময় সব জেনেও পুরোনো দিনের মানুষদের মত চিঠি কেন লিখছি? সত্যি বলতে অবাক আমারও লাগছে। কিঞ্চিৎ লজ্জাও লাগছে কেন জানি। এইই…হাসবেন না কিন্তু আমার কথা শুনে।আপনার থেকে কিছু লুকাতে ইচ্ছে করে না তাই বলে দিলাম চিঠি লেখার অনুভূতিগুলোও।এর আগে কখনো কাউকে চিঠি লিখিনি আমি। প্রয়োজন পড়েনি কখনো। আজও কোন প্রয়োজনে লিখছি না। তবে কেন লিখছি সেটাও সঠিক জানা নেই আমার।শুধু ইচ্ছে হলো,জীবনে প্রেম না করেও প্রেমিক পুরুষ হয়ে নিজের প্রেমিকাকে একটা চিঠি লিখার। তবে,আপনি তো আমার প্রেমিকা নন। তাই চিঠিটাও আমি নিজের হবু স্ত্রীকে লিখছি।আচ্ছা,প্রেমিকার বদলে হবু স্ত্রীকে লিখলেও কি প্রেম পত্র বলা হবে এটাকে? হলেও মন্দ হবে না, তাই না?হা..হা..হা..

এখন মধ্যরাত এখানে।ঘুম আসছে তবুও।একটু আগেই কথা হয়েছে আপনার সাথে। তবুও খুব করে মিস করছি আপনাকে।তাই বিশেষ কোন কাজ না পেয়ে এই চিঠি লেখা। কিন্তু,প্রেম পত্র কিভাবে লিখে সেটা তো জানা নেই আমার।তার উপর আপনার সাথে আমার বিয়েটাও এরেঞ্জম্যারেজ। চেনা জানা নেই আমাদের খুব একটা।প্রেম তো অনেক পরের কথা।তবে বাস্তবিক অর্থে বিয়ের পরেও হয়তো কোনদিন আপনার প্রেমিক পুরুষ হয়ে ওঠা হবে না আমার।এসবে আমার বিদ্যাবুদ্ধি একেবারেই শূন্যের কোঠায়। বিয়ের পর স্বামী হিসেবে কেমন হবো,কতটা যোগ্য হয়ে উঠতে পারবো আপনার সেটাও জানি না আমি। তবে,নিজের জন্য খুব করে চাই আপনাকে। চেষ্টা করবো নিজের সমস্তটা দিয়ে আপনাকে সুখী করার।

জীবনে প্রথম কোন নারীকে এভাবে চাইছি নিজের জন্য। যার সমস্তটা জুড়ে আমি থাকবো আর আমার সমস্তটা জুড়ে থাকবে সে। আর সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার রোজকার আর্জি এই চাওয়াটাই যেন আমার চিরস্থায়ী আর শেষ চাওয়া হয়। আমার সমস্তটা জুড়ে আপনাকে চাই মৃন্ময়ী। হবেন তো আপনি আমার?

এটুকুই থাক আজ। আর কিছু লিখতে পারছিনা। এই চিঠির বদলে কোন ফিরতি চিঠি পাবো না জানি। তবুও, চিঠিটা পাঠিয়েছি আপনাকে। ইন শা আল্লাহ খুব শিঘ্রই ফিরে আসবো আমি।আপনাকে নিজের করে নেবো সারাজীবনের জন্য। আপেক্ষায় থাকবেন বলেছেন, আপেক্ষায় থাকবো আমিও। মৃন্ময়ীর ‘প্রিয়’ হওয়ার!

নিজের খেয়াল রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি
সিফাত

চিঠিটা পড়ে কতক্ষণ চুপ করে বসে রইলো পলক। মনের ভেতর কিসব অনুভূতিরা যেন খুব জোর আনাগোনা করছে। ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে। কেবল,চিঠিটা বুকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজতেই দু’ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো চোখের কার্ণিশ বেয়ে। এ নোনাজল বরাবরের মতোই উষ্ণ, স্বচ্ছ,আর তেতো জল হলেও সে জলের উষ্ণতা আজ গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিল পলককে। সে জলের স্বচ্ছতা অদ্ভুত এক স্বস্তিতে জড়িয়ে নিল তাকে। পরম এক সুখানুভূতিতে আবিষ্ট হলো পলকের সমস্ত স্বত্তা।

____________________________________
কয়েকদিন পর,

ট্রেনিং শেষে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরেছে সিফাত। রুমের চাবি নিতে গেলে রিসিপশনিস্ট মেয়েটি বললো, তার জন্য একটি চিঠি এসেছে বাংলাদেশ থেকে। তার ট্রেনিং শেষ হতে আর ২ দিন বাকি। তারপর, অফিসিয়াল পার্টি আর বাকি সব ফর্মালিটিজ শেষ করে নেক্সট উইকেই সে দেশে ফিরে যাচ্ছে। এরমধ্যে তার জন্য বাংলাদেশ থেকে কেউ চিঠি পাঠিয়েছে শুনে বেশ চমকালো সে।তবে,বাইরে সেটা প্রকাশ না করে চিঠি আর চাবি নিয়ে লিফটের দিকে পা বাড়ালো ।লিফটে ঢুকে খামটা ভালো করে দেখলো সে। প্রেরকের কোন নাম নেই খামের উপর। একবার ভাবলো পলক পাঠিয়েছে বোধয়। সে চিঠি পাঠানোর পর তো আর কথা বলার সুযোগ হয়নি পলকের সাথে। প্র্যাকটিকাল এক্সামের বিগত কয়েকটা এর জন্য রাত দিন প্রায় বাইরেই কেটেছে তার। তাই লাস্ট ৩ দিনে একটুও কথা বলার সুযোগ হয়নি তার। এতসব ভাবতে ভাবতেই লিফট এসে থামলো তার ফ্লোরে। রুমে গিয়ে বিছানায় বসে দ্রুত হাতে খাম খুলে বের করলো চিঠিটা। চিঠি খোলামাত্রই তার আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা তার মৃন্ময়ীর চিঠি। খুশিতে ঝলমল করে উঠলো তার চোখ মুখ।কিন্তু, মূহুর্তেই আবার চুপসেও গেল। চিঠিতে তেমন কিছুই লেখা নেই। আর না আছে কোন সম্বোধন। সরাসরি তিন লাইনের একটা চিঠি।সেখানে লিখা,

আসসালামু আলাইকুম।

আপনার হবার অপেক্ষায় থাকবে মৃন্ময়ী!

নিজের খেয়াল রাখবেন।সাবধানে ফিরে আসবেন।

ইতি
মৃন্ময়ী

মেজাজ খারাপ হচ্ছে সিফাতের। এই তিন লাইনের জন্য চিঠি লিখে এত দূর দেশে পাঠানোর কি ছিল? আর কিছু কি বলতে পারতো না সে? আজব!

আরও কয়েকবার পড়লো সে চিঠিটা। আর যতবার সে পড়ছে চিঠিটা মেঘ কাটানো রোদ্দুরের মত একটা অন্যরকম সুখানুভূতি একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে তার মনের কোণায় কোণায়। মৃন্ময়ী তার হবার অপেক্ষায় থাকবে আর কি চাই তার!

শেষবারের মত আরেকবার চিঠিটা পড়ে তাতে চুমু খেলো একটা। তারপর লজ্জা পেয়ে মৃদু হাসলো সে তার এহেন বোকা কাজে।প্রেমে পড়লে বুঝি মানুষ এমনই বোকা বোকা কাজ করে?কিংবা তীব্র ভালোবাসায়? জানা নেই তার।এরপর, আলতো হাতে ভাঁজ করে চিঠিটা সযত্নে রেখে দিল ওয়ালেটের এক কোণায়।

____________________________________

৩৫ দিন পরে আজ আবার নিজের দেশের মাটিতে ফিরে এলো সিফাত। কিন্তু, পলককে জানায়নি এ কথা। চিঠি পাওয়ার পর থেকে একবারও সে যোগাযোগ করেনি তার সাথে। পলকও নিজ থেকে কখনো কল করে না। তার নাকি লজ্জা লাগে। কিন্তু,সিফাতের কথাও তার মনে পড়ে। মিস করে তাকে। তবুও আগ বাড়িয়ে কথা বলেনা কখনো।কিন্তু,এসবের মাঝে নিশাতের সাথে ঠিকই যোগাযোগ রেখেছে সিফাত। আমজাদ আলী ও তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিয়েছে। সে আজ ফিরছে এটা নিশাত জানলেও পলকে বলতে মানা করেছে। এদিকে পলকও জানে না ঠিক কবে নাগাদ ফিরবে সিফাত।সিফাত তার চিঠি পেয়েছে কি পায়নি সেটা নিয়েও একটা চিন্তা রয়ে গেছে তার মনে। সব মিলিয়ে তার বেশ অভিমান হয়েছে সিফাতের প্রতি। মানুষটা কি এক্কেবারেই ভুলে গেল তাকে? কিন্তু,মুখ ফুঁটে জিজ্ঞেস করার মত সাহসও নেই তার। লজ্জা লাগে বলেই কল বা ম্যাসেজ করে না নিজে থেকে।
_________________________________

পরেরদিন বিকেলে,

ডিসেম্বরের শেষ দিকে বেশ ভালোই শীত পড়েছে। পলকের স্কুলে শীতকালীন ছুটি চলছে।আজকাল তাই বেশ খালি সময় কাটাচ্ছে পলক। আসরের নামায পড়ে ছাদে হাঁটাহাটি করতে এসেছিল সে। দিনের শেষভাগে এসে সূর্যটাও তার লাল আভা ছড়িয়ে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে কানে গুঁজে রাখা হেডফোনে গান শুনছিল সে।মন খারাপ তার। আজ প্রায় ৯ দিন সিফাতের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। এদিকে যে মানুষটার সাথেই তার বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে মেতে আছে সবাই। অথচ, স্বয়ং ওই মানুষটারই কোন খবর নেই।এসব ভেবেই মন বিষণ্ণতায় ছেয়ে আছে তার। ছাদের কার্নিশে রাখা কফি মগের হ্যান্ডেলটা শক্ত হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। ঠিক সেই সময় আচমকা সে হাতের উপর অন্য কারও স্পর্শ পেয়ে চমকে পাশ ফিরে চাইলো পলক। আর মূহুর্তেই তার সমস্ত শরীর জুড়ে খেলে গেলো কনকনে শীতের চাইতেও হিমশীতল এক শিহরণ।এতক্ষণে তার হাতের বাঁধনে নিজের আঙুল গুঁজে কফির মগটা ছাড়িয়ে নিজ হাতে নিয়ে নিয়েছে ব্যক্তিটি।পলকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নির্দ্বিধায় চুমুক দিল পলকের চুমুক দেওয়া কফির মগে। কফি টেস্ট করতে করতে বললো,
এর থেকে কিছুটা স্ট্রং কফি খাওয়ার অভ্যাস করুন।বিয়ের পরে এভাবেই রোজ একমগে দুজনের কফির ভাগ থাকবে আমাদের। কখনো সূর্য উঠা ভোর দেখায় সময় কিংবা সূর্য ডুবির গোধূলি বেলায়। মনে থাকবে? বলেই পলকের চোখের দিকে তাকিয়ে কফির মগে আরেকটা চুমুক দিল সিফাত।

পলক বিস্মিত। সিফাত দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখলো সে সিফাতকে। চকলেট কালার পলিশড সুজ,ব্লু জিন্স, আর মেরুণ টি শার্টের সাথে চকলেট কালারের লেদার জ্যাকেট। ক্লিনসেভ করা। চুলগুলো এক সাইডে ব্রাশ করা। এতদিন বিদেশে থেকে এসে যেন আরও যেন আরও বেশি সুন্দর হয়ে গেছে সে। পলক মুগ্ধ হয়ে দেখলো তাকে। সেই মুগ্ধতার ছাপ ফুঁটে উঠলো তার উজ্জ্বল চোখে মুখে ‘ আর ঠোঁটের কোণে জড়ো হওয়া মৃদু হাসিতে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে সিফাত দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। বিশ্বাস করার জন্য তাকে একবার ছুঁয়ে দেখবে বলে তার গাল অবদি হাত বাঁড়িয়েও গুটিয়ে নিল সেটা। সিফাত চুপচাপ দেখছে পলকের বিস্ময়,বিভ্রান্ত চোখের দৃষ্টি। মুখে ফুঁটে ওঠা খুশি,মনের চঞ্চলতা আর এসব বাচ্চা বাচ্চা কান্ডকারখানা। কিন্তু কিছু বলছে না। কফির মগ হাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরে সিফাত খেয়াল করলো,পলকের বিভ্রান্ত চোখজোড়া ধীরে ধীরে টলমলে হয়ে উঠছে। তা দেখে বেশ অবাক হলো সে। মৃন্ময়ী কি জন্য কান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটা ভেবে পেল না সে। কিন্তু,সব ভাবনা সাইডে করে কফির মগটা কার্ণিশের উপর রেখলো সে। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে কাছাকাছি হয়ে দাঁড়ালো পলকের সামনে। তারপর আলতো করে তার দুহাত পলকের দু কাঁধে রেখে মৃদু হেসে বললো,
_মৃন্ময়ীর অপেক্ষা শেষ হবার পথে। ফিরে এসেছি আমি। আমার মৃন্ময়ীকে নিজের করে নিতে। এবারে বাকি অপেক্ষার সময়টুকুও পার করে দেবো আমরা,কেমন?

পলক মুখে কিছু বললো না। শুধু চোখ বুজে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। সিফাত হাসছে তাকে দেখে। মৃন্ময়ীর চোখের জলে আনন্দ ছলকে পড়ছে।সেটা বেশ ভালোভাবেই অনুভব করতে পারছে সে। হাত বাড়িয়ে পলকের চোখ মুছতে গিয়েও মুছলো না। এই ভেজা চোখ মুখটায় অন্য রকম সুন্দর লাগছে পলককে। ভালো লাগছে তাকে এভাবে দেখতে। এবারে তাকে ছেড়ে তার থেকে কিছুটা সরে দাঁড়ালো। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করলো,
_কেমন আছেন মৃন্ময়ী?
_ভালো আছি এখন। আপনি?
_আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
_কবে ফিরেছেন আপনি? আর এতগুলো দিন একটা ফোন অবদি করেননি আপনি।কেন?
_গতকাল রাতে ফিরেছি। মৃণ্ময়ীর অপেক্ষার অবসানটা নিজ চোখে দেখবো বলে জানায়নি কিছু। কেন,মিস করেছেন আমায়?
_নাহ। আমি মিস করতে যাবো কেন! অভিমানী সুরে বললো পলক।
_অহ,আচ্ছা। সেই জন্যই বোধয় একটা ফোনকল দূরে থাক ম্যাসেজও করেননি আপনি আমাকে। অভিযোগের সুরে বললো সিফাত।সেটা শুনে দ্রুত গলায় সাফাই দেওয়ার মত করে হরবড়িয়ে পলক বললো,
_এই না…সে জন্য না।আমি তো মিস করেছি। অপেক্ষা করেছি আপনার কলের কিন্তু লজ্জায়..এটুকু বলতেই জিভ কাটলো পলক। নিজের অজান্তেই সত্যি বলে দিচ্ছিল সে! লজ্জায় চোখ বুজে মাথা নিচু করে রইলো পলক। সেটা দেখে নিঃশব্দেই হাসলো সিফাত। তারপর ঝরঝরে গলায় বললো,
_নীচে চলুন। অপেক্ষা করছে সবাই।
_সবাই মানে?
_আমার ফ্যামিলিও এসেছে সাথে। বিয়ের আগে একা একা শশুড়বাড়ি চলে আসাটা কেমন জানি দেখায় না!তাই আর কি..বলেই সকৌতুক হাসলো সিফাত। পলকও হাসলো। তারপর, তারা দুজনেই নেমে গেল ছাদ থেকে।

____________________________________

বাসায় আসতেই পলকে দেখে ছুটে এসে জাপটে ধরলো ইয়ানা। পলকও আদর করে কাছে টেনে নিল তাকে। ড্রয়িংরুমের বিছানায় দাদার সাথে বসে ছিল প্রাপ্তি। ইয়ানাকে ওভাবে আদর করতে দেখে হুট করেই কেঁদে উঠলো প্রাপ্তি। বিগত ২০ দিনে বেশ ভালো রকম ভক্ত হয়ে গেছে সে পলকের। নিশাতের থেকেও বেশি পলকের কাছে থাকতে পছন্দ করে সে। রাতে অবশ্য বাবার কাছেই ঘুমায় সে।তাই তার ফুপ্পির ভালোবাসার ভাগাভাগিটা একদমই পছন্দ হচ্ছে না তার। হাত বাড়িয়ে দিয়ে পুপ্পি পুপ্পি বলে কান্না জুড়ে দিল সে। তা দেখে ইয়ানা হতভম্ব। সে বুঝতে পারলো না একটু আগেও তার সাথে খেলতে থাকা হাসি খুশি প্রাপ্তি আচমকা কেন কাঁদছে। পলক ইয়ানাকে ছেড়ে দ্রুত গিয়ে কোলে তুলে নিল প্রাপ্তিকে। পলকের কোলে যেতেই তার ঘাঁড়ে মুখ গুঁজেই শান্ত হয়ে রইলো প্রাপ্তি। তা দেখে ইয়ানা আরও বেশি বোকা বনে গেল। সিফাতের কাছে গিয়ে কাঁদোকাঁদো মুখ করে বললো,
_পাপাই, মামণি কি এখন আর আদর করবে না আমাকে? সব আদর প্রাপ্তিকেই দিয়ে দিবে?

ইয়ানার অবস্থা দেখে বেশ হাসি পেল সিফাতের। বাচ্চারাও ভালোবাসার মানুষ নিয়ে কত ইনসিকিউর ফিল করে। কিন্তু,ছোট্ট ইয়ানার করুন মুখ দেখে হাসি চেপে গেল সে। ইয়ানাকে কোলে নিয়ে বুঝিয়ে বললো,
_তুমি যেমন আমার মেয়ে লাগো,আমি তোমাকে ভালোবাসি,তেমনি প্রাপ্তিও তোমার মামণির মেয়ে লাগে। তোমার মামণিও তাকে ভালোবাসে। আর তোমার মামণি যেমন তোমাকে ভালোবাসে,,তেমনি তোমার পাপাইও ওকে ভালোবাসে। তাহলে,সেই হিসেবে প্রাপ্তি তোমার বোন হলো।তুমিও ওকে ভালোবাসবে,ওকে?
_ওকে পাপাই। কিন্তু মামণি..?
_মা বাবার ভালোবাসা কখনো ভাগাভাগি হয় না আম্মু। তোমার আম্মু তোমাকে আর প্রাপ্তিকে,,দুজনকেই খুব ভালোবাসে।কিন্তু,প্রাপ্তি তো এখন একটু ছোট তাই সেটা বুঝতে পারেনি। তাই এভাবে কেঁদেছে। কিন্তু তুমি তো বড় ওর থেকে,বুঝো। তাই তুমি একটুও মন খারাপ করবে না। আর তুমিও যদি প্রাপ্তিকে ভালোবাসো আদর করো,তাহলে সেও আর কখনো কাঁদবে না এভাবে। বুঝতে পেরেছো?
_হ্যাঁ,পাপাই। আমি বুঝতে পেরেছি।
_এই তো আমার লক্ষী আম্মুটা।বলেই ইয়ানাকে আদর করে দিল সিফাত।
সিফাতের কথা শেষ হতেই ইয়ানা ওর আম্মুর কাছে গেল। রুকুর ব্যাগ থেকে একটা চকলেট নিয়ে ছুটে গেল পলকের কাছে। ইশারায় প্রাপ্তিকে দেখিয়ে বললো,ওকে নীচে নামাতে। প্রাপ্তি কিছুতেই পলককে ছাড়বে না। তাই পলক তার কোলে নিয়ে বসালো প্রাপ্তিকে। প্রাপ্তিকে পেয়ে হাতের চকলেটটা বাড়িয়ে দিল ইয়ানা তার দিকে। তারপর তার মিষ্টি মিষ্টি গলায় বললো,
_এই নাও প্রাপ্তি,এটা তোমার জন্য। পাপাই বলেছে তুমি আমার বোন হও। আর মা বাবার ভালোবাসার কখনো ভাগাভাগি হয় না। তাই মামণি তোমাকে যেমন ভালোবাসে তেমনি আমাকেও ভালোবাসে। তুমি একদম কেঁদো না এর জন্য। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসবো। পাপাইও তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি আর কেঁদো বোনু। চলো আমরা খেলি। বলেই হাত বাড়িয়ে দিল প্রাপ্তির দিকে। ছোট্ট প্রাপ্তি কি বুঝলো সেই জানে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে শুনছিল সে ইয়ানার কথাগুলো।আর ইয়ানা হাত বাড়িয়ে দিতেই সেও চকলেটটা নিয়ে ইয়ানার হাত ধরে পলকের কোল থেকে নেমে গেল। পলক মুগ্ধ হয়ে দেখলো ইয়ানাকে। কি ভীষণ বোঝদার মেয়ে। প্রাপ্তিকে কি সুন্দর নিজের বোন বলছে। আদর করছে। ভীষণ স্বস্তি লাগছে তার। এরপর সিফাতের দিকে চাইতেই চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের। মুচকি হেসে ইশারায় তাকে কৃতজ্ঞতা জানালো তাকে। সিফাতও চোখের ইশারায় আস্বস্ত করলো তাকে।

ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে এই পুরো ঘটনাটা দেখলো আরও একজন মানুষ। মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করলো তার বোনের জন্য এমন একটা জীবনসঙ্গী দেওয়ার জন্য। পলাশকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো সিফাত। সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো নিজ থেকেই। তারপর তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল নিজের পরিবারের সবাইকেও। আজ সবার সাথে রুকুর বর দিহানও এসেছে। পলকের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল তার। রুকুর মতই আন্তরিক ব্যবহার দিহানেরও। এমন একটা পরিবারে বোনকে দিতে পেরে বেশ স্বস্তি পেল পলাশ।

পলাশ সিফাতের দুবছরের ছোট। কিন্তু তারপরেও সিফাত বারবার পলাশকে ভাইয়া আর আপনি বলে সম্বোধন করায় সে বললো,
_আপনি আমাকে নাম ধরেই ডাকতে পারেন। আর বয়সে আপনার ছোট আমি। তুমি করেই বলুন আমায়।
_বয়স নিয়ে খোটা দিচ্ছেন শালাসাহেব? করুন মুখ করে বললো সিফাত।
_আরেএ না…আপনি ভুল বুঝছেন। আমি সেভাবে বলিনি। আসলে…বিচলিত হয়ে বললো পলাশ।তা দেখে সিফাত হেসে দিলো। সেটা দেখে বিভ্রান্তিতে পড়লো পলাশ। তাকে ওমন বিভ্রান্ত হতে দেখে হাসি মুখেই সিফাত বললো,
_বয়স যাই হোক। সম্পর্কে আপনি মৃন্ময়ীর বড় ভাই। আর সেই সুবাদে আমারও। তাই আপনাকে ভাইয়া বলেই ডাকবো আমি। আপনি আপত্তি করলেও কিন্তু শুনছিনা আমি।
সিফাতের এহেন অধিকারবোধ আর আন্তরিক ব্যবহার বেশ মুগ্ধ করলো পলাশকে। একগাল হেসে দিয়ে সেও বললো,
তাহলে আমিও কিন্তু আপনাকে ভাইয়া বলেই ডাকবো।
_আপনার যেটা ভালো লাগবে সেটা বলেই ডাকবেন আমায়।কোন সমস্যা নেই তাতে। বলেই তার ভুবন ভুলানো হাসিখানা হাসলো সিফাত।

ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে সে হাসি দেখলো পলক। মনে মনে বললো,আলহামদুলিল্লাহ।

____________________________________

সিফাত ইউ এস এ থেকে একগাদা শপিং করে এনেছে সবার জন্য।।বাদ যায়নি পলকের ফ্যামিলিও। সেসব সিফাত নিজ হাতে যার যারটা তার তার হাতে তুলে দিয়েছে। আমজাদ আলী সেসব নিতে সংকোচ করলেও সিফাত যখন বললো,
আপনার মেয়ে দিলে তো ঠিকই নিতেন। তাহলে আপনার মেয়ে যাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিচ্ছে তাকে কেন পর ভাবছেন? সে কি আপনাদের নিজের হবে না? আমি কি আপনার পরিবারের সদস্য হই না বাবা?
সিফাতের মুখে বাবা ডাক শুনে ও তার এত আন্তরিকতা দেখে সিফাতের উপহারগুলোকে আর উপেক্ষা করতে পারলেন না তিনি। সিফাতের মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন তাকে।

সবাইকে তাদের উপহার বুঝিয়ে দিলেও পলককে কিছুই দিল না সিফাত। ব্যাপারটা সবার নজরে এলেও কেউ কিছুই বললো না সেখানে।সন্ধ্যার পর পর বিদায় নিয়ে ফিরে গেল সিফাত ও তার পুরো পরিবার।

____________________________________

কালো রঙের জর্জেট একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছে পলক। বেশ পাতলা শাড়িটা। শাড়ির সাথে থাকা ক্যাটালগ দেখেই লজ্জায় তার মরি মরি অবস্থা।ডীপ কাটিং নেকের স্লিভলেস ব্লাউজের সাথে ডিজাইন করা হয়েছে শাড়িটা। এইভাবে এই শাড়ি সে কিভাবে পড়বে কখনো সেটা ভেবেই লজ্জায় অস্বস্তিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে পলক। তারওপর সিফাত এই শাড়িটা তার জন্য এনেছে সেজন্য রাগে,লজ্জায় আরও খারাপ অবস্থায় তার। মনে মনে একগাদা বকাঝকা করা হয়ে গেছে তার সিফাতকে। পলক জাস্ট ভেবেই পাচ্ছে না,সিফাতের মত ডিসেন্ট, ম্যাচিউর একটা ছেলে এমন একটা শাড়ি তাকে কিভাবে দিতে পারে! কতক্ষণ শাড়িটা হাতে নিয়ে ঝিম মেরে বসে রইলো। তারপর রাগ বিরক্তি নিয়েই শাড়িটা বিছানার একপাশে রেখে হাত বাড়ালো পরের শপিং ব্যাগের দিকে। ওটা হাতে নিতেই তাতে একটা জুয়েলারি বক্স দেখতে পেল পলক। গোল্ড আর ডায়মন্ডের সুন্দর দুটো নাকফুল দিয়েছে সিফাত। আর সাথে একটা চিরকুট। তাতে লিখা,

সবার সামনে আপনাকে নিজ হাতে এসব দিতে কেমন যেন লাগছিল আমার। তাই আগেই ছোট আপুর হাতে আপনার ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি। এরজন্য কিছু মনে করবেন না প্লিজ।

নাকফুল খুব মানায় আপনাকে।এ দুটো দেখেই ভালো লেগেছে খুব, তাই দুটোই নিয়ে এসেছি আপনার জন্য।

আর হ্যাঁ,,একটা ইম্পর্টেন্ট কথা! ক্যাটালগে দেওয়া শাড়ির ব্লাউজটা আমার মোটেও ভালো লাগেনি। ভুলেও এই ধরণের কোন ডিজাইনের কিছু কখনই পড়বেন না আপনি। কড়া নিষেধ রইলো আমার। তবে আমি খুব করে চাই এই শাড়িটায় আপনাকে দেখতে। অপেক্ষায় থাকবো,কালোর আদলে জড়ানো আমার মায়াবতী মৃন্ময়ীকে দেখার!

সিফাত।

এবারেও একগাদা বকাঝকা করলো পলক। তবে এবারে সেটা সিফাতকে নয়, নিজেকে। না জেনে বুঝে আবারও ভুল বুঝেছিল এই মানুষটাকে সে। নিশু ঠিকই বলে, ভাবনার চরকা তার এক সুতো বেশিই টানে সবসময়। যার জন্য সোজা জিনিসেও জট লাগিয়ে ফেলে সে। নিজেকে বকাঝকার পর্ব শেষ করে ফোনটা হাতে নিল পলক।সিফাতের ইনবক্সে ছোট্ট ম্যাসেজ করে লিখলো, ধন্যবাদ!
সাথে সাথেই সিফাতের রিপ্লাই এলো,
আবদারটুকু পূরণ হলেই ধন্যবাদ গ্রহণযোগ্য হবে।তার আগে নয়।
সিফাতের ম্যাসেজ দেখে আপন মনেই হেসে দিল পলক। মানুষটাও মাঝে মাঝে কেমন যেন বাচ্চা বনে যায়। চিঠিতে আদেশ দিয়ে এখন আবদার বলছে।
এরপর ঝটপট সব গুছিয়ে রাখলো সে।মনে মনে ঠিক করলো,,কালই যাবে এই শাড়ির ব্লাউজ বানাতে দিবে সে।ফুল স্লিভের লং ব্লাউজ।তারপর, ক্যাটালগটা নিয়ে ছিড়েছুড়ে ওয়েস্টবিনে ফেলে দিল সে।এবার শান্তি লাগছে তার।যত দোষ তো সব এই ক্যাটালগেরই ছিল যার জন্য আজ আবারও…এসব ভেবে নিজের কান্ডে এবার নিজেই হেসে ফেললো পলক। এত বার ভুল করেও শিক্ষা হয় না তার,,,নিজের দোষে ভুল বোঝে মানুষটাকে বারেবার।আর এবারের পর মনে মনে সত্যিই প্রতিজ্ঞা করলো সে,,,এরপর আর কখনো না বুঝে মানুষটাকে নিয়ে ভুলভাল কিছু ভাববে না সে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here