#অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব ৪
#নাফিসা নীলয়া!
-ভাই,জানিস ছোট ভাই আজকে আমাকে কলেজের সামনে রোদে দাড় করিয়ে রেখেছিলো। তুই ভাবতে পারছিস? তোর তিতলিকে দাড় করিয়ে রেখেছিলো ইচ্ছে করে। আবার আমার চুল ধরে টানও মেরেছে আমি কতো ব্যথা পেয়েছি জানিস? এখন আমি কিছু জানি না তুই বিচার করবি। আমি কিছু জানি না।
রাতে খাওয়ার সময় শিহাবের কাছে আহ্লাদী স্বরে কথাগুলো বললো তিতলি। রেহানকে সে আজ মজা দেখাবেই। তিতলির কথা শুনে শিহাব রেহানের দিকে তাকালো। রেহান ইতিমধ্যে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। সে জানে তিতলির এসব আদুরে স্বরে বিচার দেওয়া শুনে তার ভাই তাকে কড়া করে ধমক দিবে। তবুও সে হাসছে। তাকে বকলেও তার গায়ে লাগে না। মারলেও না।
-রেহান কি শুনছি আমি? তিতলি কি বলছে এসব? তুই ওর চুল ধরে টান মেরেছিস আবার রোদে দাড় করিয়েও রেখেছিস? এতবড় সাহস তোর? আর কখনো এমন করবি না? দিনদিন প্রচুর বাড়ছিস তুই। নেক্সট টাইম যেনো না শুনি এরকম।
শিহাব ক্রমাগত ধমকাতেই লাগলো রেহানকে। এদিকে রেহান ভাইয়ের ধমক এক কান দিয়ে ঢুকাচ্ছে আরেক কান দিয়ে বের করছে। তার খারাপ না লাগলেও সে মুখটা মলিন করে রাখলো। সে জানে তাকে বকা খাওয়াবেও তিতলি। আবার বকার হাত থেকে বাঁচাবেও তিতলি। ঠিক তাই হলো তিতলি প্রথমে রেহানকে বকা খাওয়াতে চাইলেও এখন রেহানের মলিন মুখ তার সহ্য হচ্ছে না। রেহানের মলিন মুখের দিকে সে করুন দৃষ্টিতে তাকালো। শিহাব আর রেহান দুই ভাইয়ের মলিন মুখ তার কখনোই সহ্য হয় না।
-হয়েছে ভাই,তোর আর বকতে হবে না ওকে। ও আর এমন করবে না। ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে। তাই না ছোট ভাই? কিরে বল?
তিতলি জিজ্ঞেস করলো রেহানকে। রেহান হেসে দিলো। তার ড্রামা করা কাজে দিয়েছে। তিতলি গলে গিয়েছে।
-হ্যা,হ্যা আর হবে না। আমি আর ওর চুল ধরে টানবো না। আর ওকে দাড় করিয়ে রাখবো না। আর হবে না ভাই।
দুই ভাই-বোনের কান্ড দেখে নিঃশব্দে হাসে শিহাব। সে ও আগে থেকে জানতো বকা দেওয়ার পর তিতলিরই বেশি খারাপ লাগবে। তবুও সে বকা দেয়। তার এই ভালোবাসা দেখতে ভালো লাগে। তিতলি ছোট হলেও দুই ভাইকে বড় বোনের মতো শাসন করে।
-ভাই খাচ্ছিস না কেন তুই? তুই আমার একটা কথাও শুনিস না। সারাদিন কাজ আর কাজ। এত বড় হয়ে গেছিস তবুও নিজের খেয়াল রাখতে পারিস না তাই না? সব জ্বালা আমার। দুই ভাইকে সবসময় আমারই সব দেখিয়ে দিতে হয়।
তিতলির বকবক শুনে রেহান হোহো করে হেসে ফেলে। শিহাব মুচকি হাসে। তাদের বোনের কান্ড দেখে।
-ভাই খাও তো তাড়াতাড়ি। তুমি না খেলে পেত্নী টা তোমার ঘার মটকে দিবে।
রেহানের খোঁচা মারা কথা শুনে মুহূর্তে রাগ উঠে গেল তিতলির। সে আস্তে করে উঠে হাত ধুঁয়ে আসলো। তারপর রেহানের কাছে গিয়ে ওর চুল ধরে টান দিয়ে দৌড় দিলো।
-তিতলি,দাড়া শয়তান। দাড়া তুই আজকে তোর চুল ছিড়ে রেঁধে শাক খাবো আমি। দাড়া বলছি।
তিতলির কাজে রেহান চটে গেল। চেঁচিয়ে উঠলো সে।
-তুই তোর বউয়ের চুল ছিঁড়ে শাক রাধিস ছোট ভাই। তাতেই ভালো হবে।
জোরে চেঁচিয়ে বললো তিতলি সে ইতিমধ্যে তার ঘরে চলে গেছে। যাতে রেহান তাকে আর না ধরতে পারে।
শিহাবও এবার জোরে হেসে দিলো দুই ভাই-বোনের কান্ড দেখে।
-কি হচ্ছে এত চেঁচামেচি করছো কেন তোমরা?
রেজা সাহেব নিচে নামতে নামতে বললেন। উনি শিহাবদের বাবা। ব্যবসার সব ভার শিহাবের ওপর দিয়ে তিনি এখন রিটায়ারমেন্টে আছেন। অবসরে তিনি যৌবনে ফিরে গিয়েছেন। সারাদিন তার বন্ধুদের সাথে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান। ছেলে-মেয়ের সাথে না চাইতেও তার দুরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। তবুও উনি চেষ্টা করছেন দুরত্ব মেটানোর।
-হেই ইয়াংম্যান হোয়াট্স আপ? কেমন চলছে সব?
বাবার সাথে মজা করে জানতে চায় রেহান।
-খুব ভালো রেহান। কাল তো আবার আরেক জায়গায় ট্যুর আছে আমাদের। এজন্য আজ তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেছিলাম। কিন্তু তোমাদের চেঁচামেচি শুনে নিচে আসতে হলো।
-ওই একটু তিতলির সাথে ঝগড়া করছিলাম। নাথিং এলস। তুমি ঘুমাতে যাও। কাল তো তাড়াতাড়ি উঠতে হবে নাকি?
রেহানের কথা শুনে চলে যেতে চাইছিলেন ওর বাবা। কিন্তু শিহাবকে নির্লিপ্ত দেখে থেমে গেলেন।
-কেমন চলছে সব শিহাব? কাজ সব ঠিকঠাক তো?
বাবার কথা শুনে তার দিকে নির্লিপ্ত চোখে তাকালো শিহাব। তার বাবা একটাবার জিজ্ঞেস করলো না তার সমস্যা হচ্ছে কিনা! বা সে কেমন আছে। বাবার সাথে দুই ভাই-বোনের কথা হলেও শিহাবের একদম কথা হয় না। বাবার সাথে কবে দুদন্ড বসে কথা হয়েছে সেটাও মনে পরে না শিহাবের। বাবার সাথে তো দেখাই হয় না। শিহাবের গাম্ভীর্যতা আর রেজা সাহেবের খামখেয়ালি আচরন তাদের মধ্যে আরো দুরত্ব সৃষ্টি করেছে। মা যাওয়ার পর বাবাকেই বেশি প্রয়োজন ছিলো তাদের। কিন্তু বাবা ও তো মানুষ তিনি মাকে ভালোবাসতেন ভীষণ। সেই ধোকা ভুলতেই নেশায় ঝুঁকে পরেছিলেন। কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছিলেন। যখন মনে হলো ছেলেমেয়েদের দিকে এবার নজর দেওয়া উচিত তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। তবে তিতলি আর রেহান নিজে আগ বাড়িয়ে দুরত্ব কিছুটা কমাতে পেরেছে। যা শিহাব পারেনি।
-অল গুড!
গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিয়ে চুপ করে রইলো শিহাব। তার বাবা তার এমন জবাব পেয়ে আর কিছু বললেন না। চলে গেলেন নিজের ঘরে।
-ভাই কাল নীরা আপুদের একটা এক্সিবিশন আছে। এনজিওর বাচ্চাদের জন্য। সো নীরা আপু আমাকে ইনভাইট করেছে যাওয়ার জন্য। তুমি কি যাবে? না চাইলে ইট্স ওকে। আমি জাস্ট কথার কথা বলছি। তিতলিও যাবে আমার সাথে। ও তো বায়না ধরেছে। ওখানকার সব সুন্দর জিনিস ওকে কিনে দিতে হবে। সো আমরা দুজনেই যেহেতু যাচ্ছি তাই আমি তোমাকেও বললাম। তিন ভাই বোন না হয় একসাথেই গেলাম।
খাওয়া শেষে চুপচাপ নিজের ঘরে ছিলো শিহাব। ল্যাপটপের কি-বোর্ড চেপে কিছু মেইল চেক করছিলো। রেহানের একটানা কথা শুনে কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেল শিহাব। হাত থেমে গেল কি-বোর্ডের মাঝে। নিজেকে সামলে নিয়ে রেহানের দিকে চাইলো শিহাব।
-যাবে কিনা বলো।
শিহাব আনমনে কিছু একটা ভাবলো। তারপর সম্মতি দিলো।
-আচ্ছা কখন যেতে হবে? সময়টা বল আমি তাহলে সময় বের করে নিবো।
শিহাবের কথা শুনে কিছুক্ষন থমকালো রেহান। তার কাঠখোট্টা ভাই কোথাও যেতে চায় না। তবুও সবসময় কোথাও গেলে ভাইকে বলতে ভুল হয় না তার। সে ভেবেছিলো প্রতিবারের মতো এবারও না উওর আসবে। তবে এবার তার ভাই সম্মতি দিলো। সে অবাক হলেও খুশি হলো প্রচন্ড ভাই যেতে চেয়েছে এই ই তো বেশি। আর কিছু ভাবতে হবে না তাকে। সে সময়টা বলে তার ঘরে চলে গেল। সে যাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে পরলো শিহাব। আনমনে কিছু ভাবনা এসে গেল মনে।
-আম্মা তাড়াতাড়ি মিলাকে রেডি হতে বলো। ও নাকি আজ আমার সাথে ক্যাফেতে যাবে। সময় চলে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি করতে বলো প্লিজ।
নীরার কথা শুনে হতাশ চোখে তার দিকে তাকালেন মালিহা। মিলার তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। ইতিমধ্যে মিলাকে বকে এসেছেন তিনি। মিলার সাজগোছ এর প্রতি খুব ঝোঁক। সে সকাল থেকে সেজেই চলেছে।
-তোর বোনকে তুই বোঝা একটু। সাজগোজ করতে করতে ওর কত সময় লাগে সেটা কি জানিস না? আরো লাই দে বোনকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তোল ওকে।
মায়ের কথা শুনে হেসে দিলো নীরা। সে জানে মিলার তৈরি হতে সময় লাগে। এজন্য সকাল থেকে তাগাদা দিচ্ছে মিলাকে। তবুও মেয়েটা লেট করবে। সবসময় এমন হয়। কিন্তু বোনকে কিছু বলতে পারে না নীরা। একটা মাএ বোন তার।
সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে মিলার ঘরে চলে গেল।
-হয়নি মিলা? আর কতক্ষন লাগবে? সুন্দর লাগছে তো তোকে। তুই আজ নির্ঘাত লেট করাবি আমায়। এমন হলে কিন্তু আমি তোকে নিবো না।
মিলা তখন লিপস্টিক লাগাচ্ছিলো ঠোঁটে। বোনের কথা শুনে বোনের দিকে ফিরলো মিলা। সে জানে আপা এমন ধমকিই দিবে। কিন্তু তাকে ছাড়া যাবে না। তাই সে আস্তে আস্তে তৈরি হচ্ছিলো। বোনের কাছে গেল সে। গোলাপি সবুজের কম্বিনেশনের ফুলকারি সালওয়ার কামিজে তার আপাকে তো অপ্সরী লাগছে। সে তার হাতের লিপ্সটিকের দিকে তাকালো। আচ্ছা আপা তো কখনো সাজে না। আজ একটু লিপ্সটিক লাগিয়ে দিলে কেমন হয়! মনে মনে ভাবে মিলা। যেই ভাবা সেই কাজ।
-আপা এসো একটু লিপ্সটিক লাগিয়ে দেই তোমাকে। যদিও আমার আপা এমনিতেই সুন্দর তবুও একটু দিয়ে দেই। ভালো লাগবে আরো।
মিলার কথা শুনে ভয়াবহ চমকালো নীরা। এসব তার একটুও পছন্দ না। এই সাজগোজ থেকে দশ হাত দূরে থাকে সে।
-না, মিলা একদম না। পছন্দ না আমার। আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে মিলা। কি করছিস তুই? তাড়াতাড়ি কর।
বোনকে আবারও তাগাদা লাগালো নীরা। মিলা গাল ফুলিয়ে পুনরায় আয়নার দিকে চাইলো। সবকিছু ঠিকঠাক কিনা দেখে নিলো আরেকবার। তারপর একটা পেন্সিল কাজল হাতে নিলো। লিপ্সটিক না হোক কাজল তো সে আপাকে দেওয়াবেই।
-কোনো কথা শুনছি না আপা। আমি তোমার চোখে কাজল টেনে দিবোই। চুপ করে বসো।
মিলার কথা শুনে নীরা বুঝলো নাছোড়বান্দা মিলা তার কোনো বারনই শুনবে না। তাই সে হতাশ হয়ে বসে পরলো। নীরার চোখে হালকা করে কাজল টেনে দিলো মিলা। এবার তার বোনের বূপ তো দ্বিগুন বেড়ে গেছে।
-মাশাআল্লাহ,মাশাআল্লাহ কি সুন্দর লাগছে তোমাকে আপা।
মিলার কথায় হাসলো নীরা।
-আমার মিলাকেও চমৎকার লাগছে। ঠিক যেন একটা নীল পরী।
-দেখতে হবে না বোনটা কার।
মিলার কথা শুনে জোরে হেসে দেয় নীরা। মিলাও তার সাথে হাসে।
-কিরে হলো তোদের? এই না কত দেরি হয়ে যাচ্ছে বললি?
রুমে ঢুকে দুই বোনকে একসাথে হাসতে দেখে মালিহার চোখ জুরিয়ে গেল। দুই বোনকে কি সুন্দর লাগছে একসাথে হাসাতে।
-হ্যা আম্মা এখনই বের হবো। তুমি এগিয়ে দাও আমাদের চলো।
নীরার কথায় মিলাও ব্যাগ নিয়ে উঠে দাড়ালো। তারপর দুই বোন মিলে বেড়িয়ে পরলো ক্যাফের উদ্দেশ্যে।
ক্যাফেতে গিয়ে সবকিছু দেখে নিচ্ছে নীরা আর ওর বন্ধুরা। মিলা এককোণে দাড়িয়ে সব পর্যবেক্ষন করছে। করার মতো কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছে না সে।
-সাইফ ভাইয়া আমি কি করবো বলে দাও। কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছি না।
মিলার কথায় সাইফ ওর দিকে ফিরলো।
-তুমি এক কাজ করো কাস্টমাররা চলে আসতে শুরু করে দিয়েছে। তুমি ওদের হাসিমুখে রিসিভ করো। তাহলে ওদের আগ্রহ বাড়বে।
সাইফের কথা শুনে তাই করলো মিলা। সবাইকে সুন্দর করে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে সে। তার মিষ্টি হাসি দেখে সবাই সাচ্ছন্দ্যে এগিয়ে আসছে। এদিকে শিহাবরা এসে পৌছালো। তিতলি শিহাবের হাত ধরে হাটছে। রেহান সামনে ওরা পেছনে। তিতলি চারদিকে দেখছে। কত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে সব। দেখেই তো কতো ভালো লাগছে।
-ভাই,আমি যা চাইবো তাই কিনে দিতে হবে আজকে।
তিতলির কথা শুনে হাসলো শিহাব।
-আচ্ছা,কেমন লাগছে তোর? ভালো লাগছে তো?,
বোনকে জিজ্ঞেস করলো শিহাব।
-হ্যা অফ কোর্স ক্যাফের চারদিকে কত সুন্দর করে সাজানো ভালো না লেগে কোনো উপায় আছে!
রেহান ওদের সামনে হাটছিলো,এবার পাশে চলে আসলো।
-ভাই আজকে তোমার ক্রেডিট কার্ড শুন্য করে দিবে এক পেত্নী। আহারে আমার ভাইয়ের টাকা আহারে।
রেহান করুন মুখ করে আফসোস প্রকাশ করলো। তার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো তিতলি।
-কি বললি তুই? আমি পেত্নী তাই না? আর তোর কোনো ভাই না। ভাই শুধু আমার। আমার ভাইয়ের টাকা আমি উড়াবো। তাতে তোর কি? তোর এত জ্বলে কেন?
তিতলিকে রাগাতে পেরে শান্তি লাগছে রেহানের। সে দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
-রেহান, তিতলি থাম দুজন। আমরা ক্যাফেতে চলে এসেছি ভুলে যাচ্ছিস মনে হয়।
শিহাবের মৃদু ধমকে থামলো দুইজন। কিন্তু তিতলি কড়া চোখে তাকিয়ে বুঝিয়ে দিলো। আজ বাড়ি গিয়ে রেহানের বারোটা বাজাবে সে।
-ওয়েলকাম,আমাদের ক্যাফেতে। আপনারা সাচ্ছন্দ্যে ঘুরে ঘুরে সব দেখুন। কোনো সমস্যা হলে তো আমরা আছিই যদিও সমস্যা হবে না। বাচ্চারা খুব সুন্দর জিনিস বানিয়েছে। ওইযে ওদিকটায় দেখুন।
সবাইকে ওয়েলকাম জানাচ্ছে মিলা। তখনই ওর সামনে রেহানরা আসলো। রেহানের সাথে শিহাব আর একটা অচেনা বাচ্চা চেহারার মিষ্টি মেয়ে মেয়েটাকে চিনলো না মিলা। তবে তার বিরক্ত লাগছে। রেহানকে আসতে বলেছে কে! আজব তার বন্ধুদের সে বলেছে। তারা একটু পরই আসবে। কিন্তু এই শয়তানটাকে তো সে বলেনি। তাহলে এ এলো কি করে। মনে মনে ভাবছে মিলা।
-হেই টিলা। আমাদের ওয়েলকাম করবে না? নাকি এমন স্ট্যাচুর মতোই দাড়িয়ে থাকবে?
দাঁত কেলিয়ে বললো রেহান। রেহানের কথায় রেগে গেলেও আপাতত কিছু বললো না মিলা। সে শিহাব আর তিতলিকে হেসে ওয়েলকাম জানিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে বললো। ইতিমধ্যে তার বন্ধুরাও এসে গেছে। মিলা ওদেরও কিছু জিনিস কিনতে বলেছে।
-নীরা আপু,নীরা আপু। হোয়ার আর ইউ?
ক্যাফেতে ঢুকেই চেঁচালো রেহান। রেহানের চেঁচানো দেখে তিতলি ওকে একটা চিমটি কাটলো।
-কি হচ্ছে কি ছোট ভাই। চেঁচাচ্ছিস কেন তুই? সবার অসুবিধা হবে তো।
তিতলির কথা শুনে চুপ করলো রেহান। আসলেই এটা একটা অশোভনীয় কাজ হয়ে গেল। নীরা সবাইকে জিনিসগুলো দেখাচ্ছিলো।
-বাচ্চারা অনেক যত্ন করে তৈরি করেছে। নিখুঁতভাবে। কোনো প্রকার ভেজাল নেই এতে। আপনারা দেখুন দেখে ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন।
শিহাব তাকিয়ে ছিলো সেদিকে। রেহান এ পর্যায়ে নীরাকে দেখে আবার ডাক দিলো। নীরা শুনতে পেয়ে তাকালো রেহানদের দিকে। মিষ্টি হেসে সে আস্তে আস্তে হেটে গেল ওদের দিকে।
-তোমরা এসেছো আমি খুবই খুশি হয়েছি রেহান। ঘুরে ঘুরে দেখো সব। আশা করছি ভালো লাগবে তোমাদের।
নীরার কথায় হাসলো রেহান। তিতলি রেহানকে খোচাচ্ছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
-ওহহো আমার বোনের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি। মিট মাই লাভলি সিস্টার তিতলি।
তিতলি বিরাট একটা হাসি দিয়ে নীরাকে জড়িয়ে ধরলো যেনো জনম জনম সে নীরাকে চিনে। নীরা প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেও পরে সে ও জড়িয়ে ধরলো।
-কেমন আছো তিতলি?
-অনেক ভালো। তোমার মতো মিষ্টি আপুকে দেখে অনেক ভালো আছি।
তিতলির কথা শুনে মিষ্টি করে হাসলো নীরা। বুঝলো মেয়েটা খুব মিশুক এবং খোলা মনের।
-আচ্ছা কিউটি যা পছন্দ হয় নিয়ে নিও। আর কোনো সমস্যা হলে আপুকে স্মরন করতে ভুলো না। রেহান খেয়াল রেখো তিতলির। তুমি তো আমার ভাই ই সুতরাং তোমাকেই দায়িত্ব দিলাম। তিতলিকে ঘুরে ঘুরে দেখানোর।
নীরার কথা শুনে রেহান হেসে তিতলিকে নিয়ে অন্য সাইডে দেখানোর জন্য নিয়ে গেল। এতখনে শিহাবের দিকে নজর পরলো নীরার। সে তো কথা বলতে বলতে ভুলেই গেছিলো। একটু বিব্রত হলো নীরা।
-মিস্টার রেজা আপনি ও দেখুন আমাদের বাচ্চারা অনেক সুন্দর কাজ করেছে। দেখুন ঘুরে ঘুরে।
নীরা কথাটা বলে চলে যাচ্ছিলো শিহাবের ডাক শুনে থেমে গেল।
-মিস নীরা পানি হবে একটু? পানি?
-অফ-কোর্স আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি।
নীরা আস্তে আস্তে টেবিলের কাছে গিয়ে পানি নিয়ে আসলো।
-নিন পানি।
শিহাব ঘামছিলো প্রচন্ড। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে তার। ডিসেম্বর মাস অথচ সে ঘামছে আশ্চর্য! নীরাকে দেখলেই তার এমন নার্ভাস লাগে। এর আগেও তার সাথে এমন হয়েছে। সেদিন ভার্সিটিতেও হয়েছিলো। তখন সে নিজেকে চতুরতার সাথে সামলে নিয়েছে। আজ পারছে না। সে বুঝতে পারছে না এমন হচ্ছে কেন। সে আজও যথাসম্ভব নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। নীরা পানির গ্লাস হাতে তার দিকে ঝুঁকে আসলো।
-আপনি ঠিক আছেন? মিস্টার রেজা? সমস্যা কোনো? ঘামছেন কেন!
নীরার কথা শুনে শিহাবের আরো অস্থির লাগা শুরু করলো। আশ্চর্য নীরা এমন ঝুঁকে জিজ্ঞেস করছে কেন তাকে? সে তো শুধু ঘামছেই আর তো কিছু হচ্ছে না। সে নীরার হাত থেকে পানির গ্লাস নিতে চাইলো নীরা বাড়িয়ে দিলো। পানির গ্লাস নিতে গিয়েও তার হাত কেঁপে উঠলো আশ্চর্য! শিহাব রেজার হাত কাঁপছে সামান্য পানির গ্লাস ধরতে। এসবের মানে কি। শিহাব বুঝতে পারছে না। নীরাও বুঝতে পারছে না শিহাবের এমন আচরনের কারন কি! সে ভাবছে হয়তো শিহাব অসুস্থ বোধ করছে। সে ভাবলো রেহানকে ডাক দিবে।
-আপনি বসুন আমি রেহানকে ডেকে নিয়ে আসি। আপনি বোধ হয় অসুস্থ।
নীরার কথায় শিহাব আঁতকে উঠলো। আঁতকে উঠে সে নীরার হাত ধরে ফেললো। বদরাগী,সদা,গম্ভীর শিহাব নিজের কান্ডে নিজেই প্রচন্ড বিরক্ত হতবাক হয়ে গেল। এ কি করছে সে। তার মাথা কি নষ্ট হয়ে গেল। নীরাও অপ্রস্তুত হয়ে গেল। শিহাব তার হাত ধরে আর ছাড়ছেই না। আজব লোক তো। এ কোন লোকের পাল্লায় পরলো সে।
-মিস্টার রেজা আমার হাত।
-কি হ্যা।
হকচকিয়ে প্রশ্ন করলো শিহাব।
-আমার হাত ছাড়ুন। আমি বুঝতে পারছি আপনি অসুস্থ। আমি রেহানকে ডাকছি।
নীরার কথা শুনে শিহাব তাড়াতাড়ি নীরার হাত ছেড়ে দিলো।
-নো, নো ইট্স ওকে। আই এম ফাইন। শুধু শুধু রেহানকে ডাকতে হবে না। আপনি পানিটা দিন।
বহুকষ্টে নিজেকে সামলে পানি খেয়ে নিলো শিহাব। এই কর্ণারে কেউ নেই। সবাই ওদিকের জিনিস দেখছে। তাই শিহাবের এমন কান্ড কারো চোখে পরলো না।
-আর ইউ শিওর? ঠিক আছেন আপনি?
-ইয়েস,ইয়েস আমি একদম ফিট আছি।
শিহাবের কথা শুনে চলে আসলো নীরা। ওদিকে তাকে ডাকছে কাজ আছে অনেক। সে আর এই বিষয়ে মাথা ঘামালো না।
এদিকে শিহাব পানি খেতে খেতে নিজেকে ধাতস্ত করছে।
-অলরাইট শিহাব রেজা অলরাইট। তুমি এমন এবনরমাল বিহেভ আর করবে না। আজই শেষ।
নিজের সাথে নিজেই প্রতিজ্ঞা করলো শিহাব।
চলবে!