#অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব ১২
#নাফিসা নীলয়া।
-আমি এখন যাই। হাতে তেমন ব্যথা করবে না আশা করি। কিছু দরকার হলে ডাকবেন কেমন?
নীরা শিহাবের হাত দেখে বললো। শিহাবের ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে সময় কেন থেমে গেল না। এই সময়টা যদি এখানেই থমকে যেতো। তবুও সে বললো
-আচ্ছা যাও।
নীরা যেতে যেতে ও থমকে গেল। শিহাবের বিহেভিয়ার নীরার একদম সুবিধার মনে হচ্ছে না। তার এখন মনে হচ্ছে শিহাবকে ইগনোর করা উচিত। সে শিহাবকে ইগনোরই করবে।
-আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন না। স্বল্পপরিচিত কেউ আমাকে তুমি বলুক আমি তা একদম চাই না।
নীরার কথা শুনে শিহাব ব্যথিত হলো। আজ পর্যন্ত কারো জন্য সে এতো উতলা হয়নি। কাউকে দেখেই তার ভেতরে এতোটা প্রশান্তি আসেনি। যতোটা নীরাকে দেখে এসেছে। আর সেই নীরার কাছেই সে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছে। তবুও সে হাল ছাড়বে না। এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে।
-আমি একবার যেটা বলি সেটাই করি৷ আমাকে থামানোর সাধ্য আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। সো আমি তোমাকে তুমি করেই বলবো। চাইলে তুমিও আমাকে তুমি করে বলতে পারো। তবে চিন্তা করো না সবার সামনে তোমাকে আপনি করেই সম্বোধন করা হবে। এখন যেখানে যেতে চাচ্ছো যাও।
নীরা চোখমুখ শক্ত করে তাকালো। এই ঘাড়ত্যাড়া লোকের সাথে কথা বলাই বৃথা। রুমার বিয়েটা শেষ হলে এর সাথে কথা বলে সব মিটমাট করতে হবে। এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। মনে মনে ঠিক করলো নীরা। তারপর প্রস্থান করলো। শিহাব তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। মনে মনে বললো।
-যতোই চেষ্টা করো দূরে যেতে পারবে না নীরা। আমার জীবনের অন্ধকারের আলো তুমি। তোমাকে কি করে যেতে দেই! আমি খুব স্বার্থপর। সবসময় নিজের স্বার্থের কথা ভাবি। আমার স্বার্থের জন্য হলেও তোমাকে আমার কাছে ধরা দিতেই হবে।
***
অন্ধকার কাটিয়ে নতুন ভোরের সূএপাত হয়েছে। গতরাতের এতো ঝামেলা সব চাপা পরে গেছে। সাইফের পরিবার এসব নিয়ে কাউকে মাথা ঘামাতে না করেছে। তবুও সবাই বলাবলি করছিলো। তবে সাইফের বাবা রেগেমেগে সবাইকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। বিয়ে বাড়িতে সেই উটকো ঝামেলা নিয়ে কথা না বলার অনুরোধ করেছে সবাইকে।
তিতলিকে নিয়ে রেহান চলে যেতে চাইছিলো। শিহাব ও বলেছে তিতলি চলে যেতে চাইলে ওরা চলে যাবে। তবে সাইফ শিহাবের হাত ধরে অনেক অনুরোধ করেছে। সাইফের বাবা মা ও বারবার করে বলেছে ওরা যেনো না যায়। সাইফের বিপদের দিনে কোনো আত্মীয়ই সাহায্য করেনি। শিহাব স্বল্পপরিচিত হয়েও পূর্ণ বিশ্বাস রেখে সাহায্য করেছে। তাই সাইফের পরিবার শিহাবের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের আত্মীয়র এমন কান্ডের কারনে লজ্জিত হয়ে বারবার ক্ষমাও চেয়েছে। তারপর শিহাব তিতলিকে জিজ্ঞেস করেছে ওর কোনো সমস্যা হবে কিনা। থাকতে পারবে কিনা। তিতলি হাসিমুখে বলেছে ওর কোনো সমস্যাই হবে না। সে তো বিয়ে খেতেই এসেছে। এখন ইনজয় না করে সে কখনোই যাবে না। তিতলি এখন স্বাভাবিক হয়েছে। স্বাভাবিক আচরণ করছে। নীরাদের সাথে সব দেখভাল করছে।
রেহান ঘুরাঘুরি করছে এদিকওদিক। সবাই ব্যস্ত। সে কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছে না। বিধায় এদিক ওদিক ঘুরছে। মিলা অনেকক্ষন যাবত খেয়াল করছে রেহান এদিকওদিক চরকির মতো ঘুরছে। সে রেহানের কাছে গেল।
-তুমি এমন চরকির মতো ঘুরছো কেন?
রেহান মিলাকে দেখেও কোনো কথা বললো না। সে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। কাল কথা বলেছে বলে কি এখনো বলবে নাকি! কখনো না। কাল ওমন পরিস্থিতি তে কথা বলতে হয়েছে। কিন্তু এখন সে বলবে না। টিলা জাহান্নামে যাক তার কি।
এদিকে মিলা বুঝতে পেরেছে রেহান কেন এমন করছে। সে রেহানকে সহ্য করতে পারে না ঠিক। কিন্তু ওইদিনের তার ব্যবহারটা সত্যিই খুব বাজে ছিলো। পরে সে রিয়ালাইজ করেছে যে সে সত্যিই ওভার রিয়্যাক্ট করে ফেলেছিলো। পুরো ক্যান্টিনের সবার সামনে চেঁচিয়ে রেহানকে অপমান করেছিলো। যা একটু বেশিই হয়ে গেছে। তারপর সে খুব গিল্ট ফিল করেছে। তবে নিজের ইগো বজায় রেখে সে স্যরি বলেনি। কিন্তু রেহানের এমন বিহেভ দেখে এখন তার সত্যিই খারাপ লাগছে।
-দেখো রেহান। সেদিনের জন্য স্যরি। আমার অতটাও রিয়্যাক্ট করা ঠিক হয়নি। তবে তোমার ও ভুল ছিলো। তোমার ও অমন করা মোটেও উচিত হয়নি। তুমি তো জানো আমি এসব পছন্দ করি না। তবুও তুমি সায়রাকে ওসব বলেছো। সো দোষ তোমার ও আছে তাই না?
মিলার কথা শুনে মজাই পেলো রেহান। সে এমনিতেও এমন গম্ভীর মুডে থাকতে পারে না। আবার মিলাকে না জ্বালাতে পারলে তার ভালোও লাগে না। যাক যাই হোক সে ঠিক করলো সে আর এমন গম্ভীর আচরণ করবে না। এমন গম্ভীর আচরণ তার ভাইকে মানায়। তাকে মানায় না। তার সাথে এসব একদম যায় না। সে হাপিয়ে গেছে একদম। যাক আবার মিলাকে জ্বালানো যাবে।
-ইট্স ওকে মিলা টিলা। তুমি যেহেতু এতো করে স্যরি বলছো তো ইট্স ওকে। আমার আবার খুব দয়ার শরীর কিনা তাই তোমাকে মাফ করে দিলাম যাও।
রেহানের কথা শুনে মুহূর্তে রেগে লাল হয়ে গেল মিলা। তার আসলে স্যরি বলাই উচিত হয়নি। রেহানের মতো হারামিকে স্যরি বলে সে একটা বড় ভুল করলো।
-শুরু হয়ে গেল তোমার তাই না? আমারই দোষ কোন কুক্ষনে যে তোমাকে স্যরি বলতে গেলাম। যওসব ফাজিল ছেলে।
মিলার কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে হাসলো রেহান। মিলার কোনো কথা সে আর গায়ে মাখবে না বলে ঠিক করলো। কারন মিলা এই নরম তো এই গরম। কখন কি করে নিজেও জানে না। তারচেয়ে ওর কোনো কথায় কান না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
-আহ্হারে টিলা তোমার জন্য আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। আহারে টিলা! আহারে!
রেহানের এমন গা জ্বালানো কথাবার্তায় মিলা এবার ভয়াবহ ভাবে রেগে গেল। হাতের কাছে একটা ঝুড়ি ছিলো সে সেটা রেহানের দিকে ছুঁড়ে মারলো। রেহান হাসতে হাসতে সেটা ধরে ফেললো। রেহানের কান্ড দেখে মিলার মাথায় আরো রাগ চেপে বসলো। সে আশেপাশে তাকালো। একটা ঝাড়ু দেখতে পেল সেটা হাতে নিলো। রেহান বুঝে গেছে এখন এই ঝাড়ু দিয়ে তাকে মারা হবে। তাই সে দৌড় দিলো মিলা ও দৌড় দিলো। দৌড়াতে দৌড়াতে দুজনই হয়রান হয়ে গেল। তবুও হাল ছাড়লো না। রেহান সামনে নীরাকে পেলো। সে নীরার পেছনে লুকালো। মিলা নীরাকে দেখে থেমে গেল। সবাই হাসছে ওদের কান্ড দেখে।
-আপু দেখো তোমার বোন আমাকে বিনা কারনে মারার জন্য দৌড়ানি দিয়েছে। তাও আবার ঝাড়ু নিয়ে। ভাবতে পারছো তুমি?
ইনোসেন্ট মুখ করে নীরার কাছে বললো রেহান। মিলা হতভম্ব হয়ে গেল। বজ্জাতটা কি বলছে এগুলো। নীরা বোনের দিকে চোখ গরম করে তাকালো।
-এসব কি হচ্ছে মিলা। দিনদিন কি তুই ছোট হচ্ছিস? আশ্চর্য! এটা কেমন আচরন? এগুলো শিখিয়েছি তোকে?
-আপা শুনো তো। রেহানেরই দোষ। ও ই আমাকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছে।
-চুপ! আর একটা কথা না। যা রুমার কাছে যা৷ আর একবার এমন করতে দেখলে কিন্তু খবর আছে তোর।
নীরার ধমক শুনে মিলা চুপসে গেল। ঝাড়ু ফেলে দিয়ে রেহানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। বুঝালো তাকে পরে দেখে নিবে। রেহান ও হাসি হাসি মুখ করে তাকালো। মিলা রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে রুমার কাছে চলে গেল।
-থ্যাংক ইউ আপু৷ তুমি না থাকলে তোমার বোন আজ আমাকে মেরেই ফেলতো।
-আমার বোনকে একটু কম জ্বালালেই তো পারো। আমি কিন্তু সবই দেখি। তুমিই ওকে ক্ষেপাও। আর মিলাও একটা গাঁধি তোমার ছোট ছোট কথায় রেগে যায়।
নীরার কথায় রেহান একটু লজ্জ্বা পেলো। হাসলো সে।
-তোমার বোনকে জ্বালাতে আমার ভালো লাগে।
-আচ্ছা তাই? আমার বোন কিন্তু প্রচন্ড রাগী আজ ঝাড়ু নিয়ে হামলা করেছে। কাল কি নিয়ে হামলা করবে বলতে পারছি না।
হাসতে হাসতে বললো নীরা৷
-সমস্যা কি তুমি আছো না তুমি আমাকে বাঁচাবে।
দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বললো রেহান। নীরাও ওর কথা শুনে হেসে ফেললো।
মিলা ফোঁসফোঁস করতে করতে রুমার ঘরে ঢুকলো। রুমা তখন ফেসপ্যাক দিয়ে বসে আছে। আর তিতলির সাথে গল্প করছে। মিলাকে এমন ফোঁসফোঁস করতে দেখে তিতলি আর রুমা দুজনই অবাক হলো। একে অপরের দিকে তাকালো তারা। কিন্তু মিলার এমন আচরণের কারন কেউই খুঁজে পেলো না।
-কি হয়েছে মিলা আপু? তুমি এমন করছো কেন?
মিলা তখন ঘরময় পাঁইচারি করছে।
-কি হয়নি সেটা বলো তিতলি। তোমার হারামি ভাইটা কি কখনো ঠিক হবে না?
ইতিমধ্যে তিতলি বুঝে গেছে মিলা কার কথা বলছে। তবুও সে হাসতে হাসতে বললো।
-আমার কোন ভাই গো আপু?
মিলা রেগে তাকালো তিতলির দিকে।
-আর কোন ভাই তোমার পেয়ারের ছোট ভাই। নিশ্চয়ই শিহাব ভাইয়ের কথা আমি বলছি না। শিহাব ভাই তো খুব ভালো মানুষ। কিন্তু তোমার ছোট ভাইটা তো শয়তানের নানা হয়। আমি বুঝি না। আমি কিছুতেই বুঝি না। তোমার আর শিহাব ভাইয়ের মতো ভালো মানুষদের ভাই ওই শয়তানটা কি করে হলো?
মিলার এমন কথায় রুমা আর তিতলি হাসিতে ফেটে পরলো। কিন্তু মিলা এখনো মাথা ঠান্ডা করতে পারছে না।
-ঠিকই তো আছে৷ তুই যেমন তোর সাথে তো সেরকমই করবে। বাব্বাহ। এওদিনে আমাদের মাথা গরম মিলাকে টাইট করার মতো একজনকে পাওয়া গেল। অবশেষে!
হাসতে হাসতে বললো রুমা। রুমার কথা শুনে দাঁত কিড়মিড় করলো মিলা।
-রুমা আপা কি বললে তুমি? তুমি এটা বলতে পারলে? ওই শয়তানটার জন্য তুমি আমাকে এরকম কথা বলতে পারলে? দাড়াও আমি যদি আপাকে আর সাইফ ভাই কে বিচার না দিয়েছি। তো আমার নামও মিলা না।
-এহ আসছে উনি। তোর আপা,আর সাইফ ভাই উল্টো আমাকে ভয় পায়। তারা আবার করবে আমার বিচার। হাহ্।
ভাব দেখিয়ে বললো রুমা। তিতলি ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। গতকালের দূর্ঘটনার কথা যেনো তার মনেই নেই।
-মিলা আপু,তুমি আমাকে বাচ্চা বলো। অথচ তুমি নিজেই বাচ্চাদের মতো করছো।
তিতলির কথায় মুখ ফুলালো মিলা।
-হয়েছে আর ঢঙ করতে হবে না তোমাদের। এখন দয়া করে রেডি হও। তোমাদের তো আমাকেই সাজিয়ে দিতে হবে। পেয়েছো তো ফুল টাইম ফ্রি ফ্রি বিউটিশিয়ান। তাই গায়ে লাগছে না কারো।
মিলার এমন কথা শুনে হাসতে হাসতে তৈরি হতে বসলো রুমা আর তিতলি। ওদের সাজাতে না সাজাতেই বেশ কয়েকজন মেয়ে সাজতে এসে পরলো মিলার কাছে। মেহেদী অনুষ্ঠানে মিলার সাজানো দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছে। তাই হলুদে সবাই ওর কাছেই সাজতে এসে পরলো। সবাইকে সাজাতে সাজাতে হয়রান মিলা। এই শীতেও সে ঘেমে গেছে। সবাইকে সাজানো শেষ হলে সে সাইফদের ঘরে গেল। দেখলো নীরা আর সাইফ বসে আছে। সাইফ নীরার সাথে গল্প করছে।
-আপা কখন রেডি হবে তুমি? অলমোস্ট সব মেয়েরা তৈরি হয়ে গেছে। এখন শুধু আমি আর তুমিই বাকি আছি। আর সাইফ ভাই এখন কি তোমাকেও সাজিয়ে দিতে হবে নাকি? আপাকে রেখে দিয়েছো যে।
-ধুর আমাকে সাজাবে কেন?দেখ নীরার পছন্দ মতো পাঞ্জাবি টা পরেছি। সাদার ভেতর হলুদের ছোঁয়া সুন্দর না? তোর রুমা আপা তো পছন্দই করতে পারছিলো না কেনার সময়। ভাগ্যিস নীরা ছিলো।
হাসতে হাসতে বললো সাইফ।
-হ্যা দেখেছি সুন্দর লাগছে তোমাকে।
-থ্যাংক ইউ মিলা। কিন্তু তোর এই অবস্থা কেন?
মিলা জবার দেওয়ার আগেই নীরা কথা বলে উঠলো।
-কিরে এই হাল কেন তোর? যুদ্ধ করে এসেছিস নাকি রে?
-আপা একদম শেষ আমি সবাইকে সাজাতে সাজাতে।
বোনের ক্লান্ত মুখ দেখে মায়া লাগলো নীরার।
– আচ্ছা তুই যা।গিয়ে শান্ত হয়ে বস আমি আসছি শাড়ি পরিয়ে দিবো। তোর আর কিছু করতে হবে না। ঠিক আছে?
-ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি আসো।
বলেই মিলা চলে গেল। নীরা যেতে চাইছিলো কিন্তু সাইফ আবার বসিয়ে রেখেছে তাকে। সে একদম রেডি হওয়ার পর কমপ্লিমেন্ট দিয়ে বের হতে বলেছে নীরাকে। নীরা অধৈর্য হয়ে বসলো। এদিকে সাইফ নিজেকে বারবার আয়নায় দেখছে। তখনই শিহাব আর রেহান ঘরে ঢুকলো।শিহাবের পারফিউম এখানে আছে সেটাই নিতে এসেছে। রেহান পারফিউম দিবে তাই সেও এসেছে।
-শিহাব ভাই কেমন লাগছে আমাকে বলো তো?
-হ্যান্ডসাম হাঙ্ক।
শিহাব হাসতে হাসতে বললো।
-মেয়েরা আজ মুগ্ধ হবে তো?
নিজেকে দেখতে দেখতেই কথাটা বললো সাইফ। রেহান তখন পারফিউম দিচ্ছে।
-আজ তো মেয়েরা আমাকে দেখে দিওয়ানা হয়ে যাবে। তুমি বর। সো তুমি একজনেরই।কিন্তু আমি সবার। আমি আবার খুব দয়াবান।
রেহানের কথা শুনে সাইফ আর শিহাব একএে হেসে উঠলো। এদিকে নীরা বিরক্ত চোখে তাকালো সাইফের দিকে।
-বলবো রুমাকে? যে তুই অন্য মেয়েদের মুগ্ধ করতে চাইছিস।
নীরার কথা শুনে সাইফের হাসি মুখ কালো হয়ে গেল। সে দৌড়ে নীরার কাছে চলে আসলো।
-প্লিজ আমার মা। বলিস না রুমাকে। নইলে আমার হাল বেহাল করে ছাড়বে সে। তখন আর তুই তোর এই বন্ধুকে পাবি না।
সাইফের এমন কান্ড দেখে নীরা, রেহান,আর শিহাব হেসে ফেললো।
-আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না আমি। তাড়াতাড়ি কর।
-বললি না কেমন লাগছে?
নীরা সাইফের মাথার চুল ঠিক করে দিতে দিতে বললো।
-রাজপুএের মতো লাগছে আমার ভাইকে।
সাইফ এতে খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে গেল।
-বিয়ের দিনও এমন সুন্দর কমপ্লিমেন্ট চাই নীরা।
-অবশ্যই আমি এবার যাই?
-হ্যা যা।
নীরা যেতে চাইছিলো রেহানের কথায় থেমে গেল।
-আপু? আমাকে তো বললে না কেমন লাগছে?
নীরা রেহানের কথায় হাসি হাসি মুখ করলো।
-প্রিন্স চার্মিং! বাকি কমপ্লিমেন্ট কাল দিবো। আজই সব শেষ করতে চাচ্ছি না। তোমরা তাড়াতাড়ি করো।
কথা শেষ করে নীরা দ্রুত চলে গেল। শিহাব খুব আহত হলো। নীরা এমন ভাব করলো যেনো শিহাবকে সে চিনেই না। তবুও সাইফের দিকে তাকিয়ে হাসলো শিহাব বললো।
-তোমাদের বন্ডিংটা খুব সুন্দর সাইফ। একদম ভাই-বোনের মতো।
-আরে আমরা তো ভাই-বোনই। আমাদের একদম আত্মার সম্পর্ক।
সাইফ উৎফুল্ল কন্ঠে বললো। শিহাব হাসতে থাকলো।
-রুমা কি সুন্দর লাগছে আমার মেয়েটাকে মাশাআল্লাহ।
রুমা তার বাবার কথায় হাসলো। হলুদ শাড়িতে হলদে পরীর মতো লাগছে রুমাকে। নীরা ঘরে প্রবেশ করে রুমাকে দেখলো। তার বান্ধবির মুখের সুন্দর হাসিটা দেখে তার ভেতরটা জুড়িয়ে গেল।
-আসলেই খুব সুন্দর লাগছে আংকেল। একদম হলদে পরী।
-হ্যা মা এবার তুমিও তৈরি হয়ে নাও এখনই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। আচ্ছা তোমার বাবা-মা তো আসলেন না। কতোবার করে বললাম আসতে।
-আসলে আংকেল আমার দাদী অসুস্থ থাকেন। কোথাও যেতে পারেন না। দাদীকে একা রেখে আসা তো সম্ভব না। তবে কাল অবশ্যই আসবেন।
-আচ্ছা এবার সবাই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে চলে আসো। আমি যাই।
রুমার বাবা চলে গেলেন। নীরা রুমার শাড়ি সেফটিপিন দিয়ে সেট করে দিলো ভালোভাবে।
-হ্যা রে রুমা। মিলা কই?
-ওয়াসরুমে গেছে। এখনই আসবে। তাড়াতাড়ি তৈরি হ তো তোরা। তোরা দুই বোনই বাকি আছিস।
রুমার কথার মাঝেই মিলা বেড়িয়ে আসলো।
-এই যে আমি এসে গেছি। আপা হয়েছে রুমা আপার সব ঠিক আছে। এবার চল আমরা তৈরি হয়ে নেই। দেখো দুই বোন আজকে খোপায় বেলি ফুলের মালা গাঁথবো। সুন্দর না?
ড্রেসিং টেবিল থেকে মালা নিতে নিতে বললো মিলা।
-হ্যা খুব সুন্দর। রুমা এখন চুপ করে বসে থাক। আমরা রেডি হয়ে তোকে নিয়ে যাবো।
রুমা চুপ করে বসে রইলো। নীরা আর মিলা দুজন দুজনকে সাজাতে লাগলো।
-ভাই তুমি কবে বিয়ে করবে? দেখো এখানে কতো মজা হচ্ছে। আমার ভাইয়ের বিয়েতে তো আমি আরো মজা করতে পারবো। তুমি কেন বিয়ে করছো না।
তিতলি আক্ষেপ করতে করতে শিহাবকে কথাটা বললো। প্রতিউওরে শিহাব কিছুই বললো না শুধু হাসলো। রেহান ইতিমধ্যে মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্ট করা শুরু করে দিয়েছে। শিহাব তিতলিকে রেহানের দিকে ইশারা করলো। তিতলি রেহানের দিকে তাকালো।
-আগে ওকে বিয়ে দিতে হবে।
শিহাবের কথা শুনে তিতলি খিলখিল করে হেসে ফেললো। এর মধ্যেই নীরা আর মিলা রুমাকে নিয়ে উপস্থিত হয়ে গেছে।
সাইফ আর রুমাকে একসাথে বসিয়ে দিলো ওরা।
বড়রা একেএকে হলুদ দিলো। এরপর নীরাদের সব বন্ধুরা একএে হলুদ দিয়ে মজা করতে থাকলো। হলুদ মাখামাখি ফটো সেশন সবই হলো। জমজমাটভাবে সাইফ আর রুমার হলুদ সন্ধ্যার প্রোগ্রাম হতে থাকলো।
এদিকে রেহান একগাঁদা হলুদ নিয়ে মিলার মুখে মাখাতে চাইছিলো। কিন্তু মিলার জ্বলন্ত চোখ দেখে আর সাহস করতে পারলো না। তবে তিতলিকে একগাঁদা হলুদ মাখিয়ে দিলো। তিতলিও রেহানকে হলুদ দিয়ে ভূত বানিয়ে দিলো। রুমা আর সাইফ কে হলুদ লাগিয়ে একটু দূরে দাড়ালো নীরা। এখান থেকে সবাইকে একসাথে দেখে তার খুবই ভালো লাগছে। রুমা, সাইফ, মিলা, রেহান, তিতলি ওরা সবাই হলুদ নিয়ে মাতামাতি করছে। নীরা সবার মজা করা দেখছে। ভালো লাগছে দেখতে।
-যাই বলো এখানে আমাদের মিল আছে। তুমিও ভীড় বেশি পছন্দ করো না আমিও করি না।
-আপনার মনে হয় না শিহাব আপনি একটু বেশি এডভান্স?
-সত্যিই? আমার তো মনে হয় না।
হালকা হেসে বললো শিহাব। নীরা ভাবছে বিয়েটা শেষ হোক। এসব ও শেষ করবে সে।
-একটা কথা বলি আপনাকে?
নীরা অনুমতি চাইলো শিহাবের কাছে।
-হ্যা অবশ্যই।
-এসব আচরণ আপনার সাথে একদম যাচ্ছে না। প্রথমদিনের আপনার সাথে এখনকার আপনাকে কেউ মেলাতে পারবে না।
-না এটা ঠিক বললে না। কারণ আমি তোমার সামনে আসলেই এমন হয়ে যাই। বাকি সবার সামনে ঠিক আগের মতোই আছি।
-আপনি কি বোঝেন শিহাব আমি এসবে খুব বিরক্ত হই।
এরকম টিনেজারের মতো আচরণ আমার একদম পছন্দ না। আমি খুব বিরক্ত।
নীরার কথায় শিহাবের মধ্যে কোনো হেলদোল দেখা গেল না। সে আপনমনে নীরাকে দেখছে। চারদিকের প্রদীপের আলো রয়েছে। সেই আলোতে নীরার মায়াময় মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
-আপনার নজর সরান। আমার এসব একদম পছন্দ না। সবসময় এরকম অপলক তাকিয়ে থাকা হুটহাট হাত ধরা আমি একদম পছন্দ করি না। আপনি তো সেই প্রথম থেকে এমন করছেন। যারা এসব করে তাদের আমি দুই চোখে দেখতে পারি না।
নীরা পুরো কথাটা সামনের দিকে তাকিয়েই বললো। শিহাব আপনমনে হেসে ফেললো।
-তার মানে তুমি প্রথম থেকেই আমাকে নোটিস করতে? ওয়াও গ্রেট। আচ্ছা কোন জিনিসটা তুমি পছন্দ করো নীরা? তুমি তো কিছুই পছন্দ করছো না।
চোখমুখ আরো শক্ত হয়ে গেল নীরার।
-আমি আপনাকে এখন সত্যিই সহ্য করতে পারছি না শিহাব। অসহ্য!
নীরার শক্ত চেহারাটাও ভালো লাগছে শিহাবের। সে তো নীরার সবকিছুতেই মুগ্ধ হয়। এমন কোনো দিন কি আসবে যেদিন সে নীরার কিছুতেই মুগ্ধ হবে না? নাহ্ কখনোই আসবে না। সম্ভবই না। নিজের মনে এসব ভেবে নিজেই হেসে ফেললো শিহাব।
—-চলবে।
–