#অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব ১৯
#নাফিসা নীলয়া!
শিহাব অনেক রাত করে বাড়ি ফিরলো বিদ্ধস্ত অবস্থায়। তিতলি আর রেহান অনেকবার কল করেছিলো। সে বলেছে একটা কাজে আটকে গেছে ফিরতে লেট হবে। তার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। ওরা যেনো খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু ওরা ওদের ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করলো। রেহান এমনিতেও দেরিতে ঘুমায় তাই সে সোফায় শুয়ে গেম খেলছিলো। আর তিতলি গালে হাত দিয়ে বসেছিলো। শিহাব বাড়িতে ঢোকার পর তিতলি তার ভাইকে দেখে চমকে গেল। কিরকম এলোমেলো অবস্থা তার ভাইয়ের। রেহান তখনো একমনে গেম খেলছে। তিতলির চেঁচানোর আওয়াজে উঠে বসলো। তিতলি দৌড়ে ভাইয়ের কাছে গেল।
-ভাই,কি হয়েছে তোর এরকম এলোমেলো অবস্থা কেন?
রেহানও ওদের কাছে এসে দাড়ালো।
-ভাই হোয়াট হ্যাপেন্ড? এরকম লাগছে কেন তোমাকে?
ওদের ক্রমাগত প্রশ্ন শুনেও শিহাব কিছু বললো না চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। তিতলি আর রেহান দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিতলি শিহাবের হাত ঝাকালো।
-আমাকে বলবি না কি হয়েছে তোর? বল না।
এবার শিহাব মুখ খুললো। সে দেখলো রেহান আর তিতলি দুজনেই ভীষণ চিন্তা করছে তার জন্য। কিন্তু এখন ওদের কিছু বলাও সম্ভব না। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো শিহাব।
-আমি ঠিক আছি। ক্লায়েন্ট এর সাথে একটা ঝামেলা হয়েছে এজন্য একটু ডিস্টার্ব। নাথিং এলস। তিতলি খাবার বাড়। ফ্রেশ হয়ে এসে খাবো।
কথা শেষ করেই শিহাব নিজের ঘরে চলে গেল। এদিকে তিতলি আর রেহান একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না। রেহান বলে উঠলো।
-হয়তো আমরাই বেশি চিন্তা করছি। সত্যিই হয়তো ক্লায়েন্টের সাথে ঝামেলা হওয়ায় ভাইয়ের মুড অফ।
রেহানের কথা তিতলি আমলে নিতে পারলো না।
-ছোট ভাই, শিহাব রেজা আমাদের ভাই। ও কখনো এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ডিস্টার্ব হয়েছে? তোর মনে হয়? ওর মতো ডেডিকেটেড কাজের প্রতি যত্নশীল ছেলে কখনো এসব বিষয় নিয়েও এতোটা ডিস্টার্ব হয় না। যা ও বাড়ি বয়ে আনবে। শত সমস্যা হলেও ও বাড়িতে এসে হাসিমুখে থাকে। কিছু তো একটা হয়েছেই।
তিতলির কথা শুনে রেহানও চিন্তিত হয়ে গেল। তবে আর কিছু বললো না। খাওয়ার সময় শিহাব খেতে বসলে ওরা দুজনও বসলো। কারোই খাওয়া হয়নি ওদের বাবা ছাড়া। ওরা শিহাবের অপেক্ষা করছিলো। শিহাব খেতে খেতেই বললো।
-এত রাত পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে বলেছে কে তোদের? আমি তো ফোন করে খেয়ে নিতে বলেছিলাম।
-তুই বললেই তো আর আমরা শুনছি না। তাছাড়া ছোট ভাই এমনিতেও দেরি করে ঘুমায়। আমারও আজ পড়া শেষ করতে দেরি হয়ে গেছে। তাই তোর জন্য ওয়েট করেছি।
তিতলির কথা শুনে শিহাব আর কিছু বললো না। রেহান আর তিতলি শিহাবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু শিহাবের গতিবিধি দেখে কিছুতেই ব্যপারটা ধরতে পারছে না। শিহাব ভাই-বোনদের সাথে অনেককিছু শেয়ার করলেও যে বিষয়গুলো ওদের দুঃশ্চিন্তায় ফেলে সেগুলো কখনো শেয়ার করে না। শিহাব খাবার খেতে খেতেই ওদের উদ্দেশ্যে বললো।
-আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে খাওয়া শেষ কর দুজন। রোজ রোজ এত দেরিতে যেনো ঘুমাতে না দেখি। খাওয়া শেষ করে নিজেদের ঘরে যাবি। দ্বিতীয় বার যেনো বলতে না হয়।
শিহাব অনেকদিন পর এমন শাসননের স্বরে কথা বললো। এতে তিতলি আর রেহান কিছু বলতে পারলো না। বড় ভাইয়ের সাথে তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও তারা শিহাবের সব কথা মেনে চলে। খাওয়া শেষ করে তিতলি মুখ ফুলিয়ে ঘরে চলে গেল। শিহাব কেন ওদের কাছে সব বলে না ভেবেই তার অভিমান হচ্ছে।
শিহাব খাওয়ার পর ভাবলো ছাদ থেকে ঘুরে আসবে। রেহান তখনো বসে বসে ভাইয়ের গতিবিধি লক্ষ করছে। শিহাব ঘরে গিয়ে সিগারেট আর লাইটার নিয়ে ছাদে চলে গেল। রেহানও আস্তে আস্ত পা টিপে টিপে ভাইয়ের পেছনে পেছনে ছাদে চলে আসলো।
শিহাব সিগারেট ধরিয়ে খাওয়া শুরু করলো। রেহান পেছনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে। রেহান জানে তার ভাই সিগারেট খায়। কিন্তু নিজের ঘর আর বাইরে ছাড়া এই বাড়ির আর কোথাও সে সিগারেট খায় না।
-আমার পেছন পেছন এসে তোকে স্পাইগিরি করতে বলিনি। তিতলির সাথে তোকেও ঘুমাতে বলেছিলাম।
রেহানের ভাবনার মাঝেই শিহাব কথা বলে উঠলো। রেহান এগিয়ে এসে তার ভাইয়ের পাশে দাড়ালো।
-তিতলিকে বলে দিবো? যে তুমি সিগারেট খাও?
শিহাব ভাইয়ের কথা শুনে হাসলো।
-হাসির কি হলো ভাই? পেত্নীটা জানতে পারলে তো তোমার ঘাড় মটকে দেবে।
রেহানের এসব কথায় শিহাব হো হো করে হেসে ফেললো।
-কি হয়েছে তোমার? তুমি কোনো সাধারণ বিষয়ে এতো ডিস্টার্ব হও না আমরা জানি। বলো কি হয়েছে ভাই।
রেহানের প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না শিহাব। সে তার মতো সিগারেট টানতে থাকলো। শিহাবের কোনো হেলদোল না দেখে রেহান বলে উঠলো।
-তুমি যদি না বলো তাহলে আমিও সিগারেট খাওয়া শুরু করবো।
শিহাব রেহানের দিকে তাকালো।
-আমার সামনে পারবি? সাহস আছে?
-অবশ্যই আছে। তুমি আমার সামনে খেতে পারলে আমি কেন পারবো না?
রেহানের কথা শুনে শিহাব হেসে রেহানের বুকে একটা ঘুষি দিলো। তারপর ভাইয়ের কাধে হাত রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো।
-কিছুই হয়নি আমার। শুধু ক্লায়েন্টের ওই ঝামেলাটার জন্য মাথা খারাপ আমার। তুই তো জানিসই আমি দুই নাম্বারি পছন্দ করি না। আর ওই বিচ টা এটাই করেছে। এতো চিন্তিত হওয়ার কারন নেই।
-সত্যিই?
-সত্যিই। তিতলিকেও বুঝিয়ে বলিস।
শিহাবের কথায় রেহান এই প্রসঙ্গে আর কিছু বললো না। তবে এমন কিছু বললো যার জন্য আবার ঘুষি খেতে হলো তাকে।
-ভাই আমাকেও একটা দাও। জাস্ট দুইটা টান দিয়ে ফেলে দিবো।
রেহানের এই কথা শুনে শিহাব আবার ওকে আস্তে করে ঘুষি মারলো। রেহান দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
-না দাও! আমি নিজেই কিনে খেতে পারবো।
শিহাব আর কিছু না বলে আবার রেহানের গলা জড়িয়ে ধরলো। দুই ভাই মিলে রাতভর গল্প করলো।
-দাদী চুল আঁচড়ে দাও। আমার ক্লাস আছে জলদি করো।
মিলা সকাল সকাল তাড়াহুড়ো করছে। তার রোজকার অভ্যাস এটা। সকালভর বিছানায় গড়াগড়ি করে তারপর সময় শেষ হয়ে গেলে সে তৈরি হবে। নীরা রান্না করছে। মালিহা একটু অসুস্থ থাকায় সে ই সব করছে। এদিকে মিলা একা একা ভালোভাবে চুল আঁচড়াতে পারে না। প্রায় সময় নীরাই আঁচড়ে দেয়। মালিহা অসুস্থ নীরা রান্না ঘরে এজন্য মিলা তার দাদীর কাছে এসেছে।
-বস তেল নিয়ে আয়। তারপর আঁচড়ে দিবো। তার আগে না।
মিলা তাদের দাদীর কথা শুনে একটা চিৎকার দিলো।
-না একদম না। একদম তেল দিয়ে দিবে না। আমার আজকে ক্লাস আছে। আপা কিছু বলো না।
নীরা রান্না ঘর থেকে উকি দিয়ে দেখলো মিলার কান্ড। সে হাসতে হাসতে তাদের দাদীকে বললো।
-দাদী এখন তেল দিয়ে দিতে হবে না। তুমি শুধু চুলের জট ছাড়িয়ে চুল বেঁধে দাও। রাতে আমি ওকে তেল দিয়ে দিবো।
-বস খান্ডারনি মাইয়া। এও বড় ঢিঙি হয়ে গেছে। এখনো ওকে চুল আঁচড়ে দিতে হবে। বলি কয়দিন পর শশুড়বাড়ি গিয়ে কি করবি?
মিলা মুখ ফুলিয়ে দাদীর সামনে বসলো। তার দাদী নূরজাহান বেগমও চুল বেঁধে দিতে লাগলেন।
মালিহা একটু অসুস্থ হঠাত করেই বিপি লো হয়ে গেছিলো। এখন একটু ভালোই আছেন। তবে নীরা তাকে কোনো কাজ করতে দেয়নি। সকাল থেকে নিজেই সব করছে। রেজাউল কাজে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছেন। তখন মালিহা বললেন।
-আমার মেয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। ওর জ্বর আসার পর ওকে বসিয়ে রেখেছিলাম। এজন্য এখন আমাকেও বসিয়ে রেখেছে।
মালিহার কথা শুনে রেজাউল হাসলেন। পাশে বসে বললেন।
-চলো ওরা ডাকছে। খেয়ে ওষুধও খেতে হবে। তুমি তো ঘরে একা বসে খাবে না।
রেজাউল বলতে বলতেই নীরা আবার ডেকে উঠলো। মালিহা আর রেজাউল একসাথে হাসলেন। খাওয়ার জন্য ঘরের বাইরে গেলেন।
সবাই একসাথে খাওয়ার সময় নীরার দাদী নূরজাহান বেগম মালিহাকে বললেন।
-নীরাকে বলেছো বিয়ের ব্যপারে?
মালিহা রেজাউলের দিকে তাকালেন। মিলা আর নীরা কিছুই বুঝতে পারছে না।
-আম্মা কার বিয়ের ব্যপারে বলবে দাদী?
নীরার প্রশ্নে নীরার দাদী কপাল কুঁচকে ফেললেন।
-কার বিয়ে আবার। তোর বিয়ে। বয়স তো কম হয়নি। অনেক হয়েছে। এবার তোর বিয়ে করা উচিত। বউমাও সেদিন বলেছিলো তাই না বউমা?
নীরা তার মায়ের দিকে তাকালো। রেজাউল চুপ করে আছেন। কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। মিলাও এখানে নীরব।
মালিহা নীরার দিকে তাকালেন। তিনি ভেবেছিলেন নীরাকে একান্তে সব বুঝিয়ে বলবেন। কিন্তু নীরার দাদীর জন্য তা সম্ভব হলো না। তাই তিনি মুখ খুললেন।
-এখন তো ভাব উচিত তাই না নীরা? এই নিয়ে তোকে আমি সব বুঝিয়ে বলবো। আপাতত তোরা খেয়ে নে। তোদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মালিহার কথা শুনে নূরজাহান বেগম বিরক্ত হলেন।
-হ্যা বউমা এই করে করেই তোমরা মেয়েটার বিয়ের বয়স পার করে দিলে।
এরপর কেউ আর কিছু বললো না। নীরাও না। চুপচাপ খেয়ে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে মিলাকে নিয়ে বের হলো। বাইরে এসে মিলা কথা বলার সুযোগ পেলো। হাটতে হাটতে বললো।
-আপা শিহাব ভাইয়ের কথা বাসায় বলি?
মিলার কথা শুনে নীরা ওর দিকে চোখ গরম করে তাকালো।
-একদম চুপ মিলা। আমি এখন বিয়ে করবো না। আর এখানে শিহাব এলো কোত্থেকে? তোকে আমি একবার বারন করেছি না? দিনদিন এমন হয়ে যাচ্ছিস কেন তুই?
বেয়াদব একটা। বড় বোনকে কি বলতে হয় এখনো সেটা জানিস না তুই?
-আপা শুনো তো এভাবে আর কতোদিন। প্লিজ কিছু ভাবো। এমন করো না।
-মিলা চুপ কর নইলে একটা থাপ্পড় খাবি।
নীরা বেশ জোড়েই ধমকে বললো কথাগুলো। মিলা সবসময় তার বারন শোনে। আর আজ শুনলো না। কালকের পর থেকে নীরার মন মেজাজ খারাপ। তারওপর মিলার এসব কথা। তাই সে একটু বেশিই রিয়্যাক্ট করে ফেলেছে। মিলার চোখে প্রায় পানি এসে গেছে নীরার বকা শুনে। সে এমনিতেই নীরার বকা সহ্য করতে পারে না। আজ তো নীরা খুব জোরে বকলো তাকে তাও আবার বাইরে। হাটতে হাটতে দুজন বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে এসে পরেছিলো।
-রাস্তায় দাড়িয়ে এভাবে ওকে বকছো কেন? আশ্চর্য! বাচ্চা মেয়েটাকে এখানে বকার মানে কি?
দুই বোন তখনো আস্তে আস্তে হাটছিলো। মিলা চোখের পানি লুকানোর চেষ্টায় ছিলো। পেছন থেকে ভারী কন্ঠের আভাস পেয়ে দুইবোনই পেছনে তাকালো। দেখলো শিহাব দাড়িয়ে আছে। মিলা চোখের পানি মুছে ফেললো। নীরা দেখলো মিলা চোখ মুছছে। তার নিজেরই খুব খারাপ লাগলো। বোনটাকে সে ছোট থেকে নিজ হাতে বড় করেছে। নীরা তো জানে মিলা সবার সামনে খিটমিট স্বভাবের হলেও তার সামনে জল। ছোট থেকেই নীরার বকা সহ্য করতে পারে না মিলা। চোখে পানি এসে যায়। তাই নীরাও সবসময় বোনকে সব বুঝিয়ে বলে। উচ্চস্বরে বকে না। আর আজ বকলো তাও আবার বাড়ির বাইরে। নীরার সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। সব হয়েছে শিহাবের জন্য। তাই সে শিহাবের ওপর রেগে গেল।
-আপনার সমস্যা কি? আমার বোনকে আমি মারবো কাটবো যা খুশি করবো আপনাকে কৈফিয়ত দিবো কেন?
-ওয়াও দারুন! তাই বলে রাস্তায় দাড়িয়ে ওকে এভাবে বকবে। এই তোমার কমন সেন্স? পাবলিক প্লেস এটা। অথচ তুমি উচ্চস্বরে ওকে বকছো।
শিহাবের গম্ভীর রাগী স্বরে নীরাও প্রচন্ড রেগে গেল। সে যথাসম্ভব নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। একে তো কাল শিহাবের কান্ডে সে ডিস্টার্ব। দুই আজ তার বিয়ের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে আর মিলাও শিহাবের কথা বলেছে! সব মিলিয়ে নীরার এখন মাএাতিরিক্ত রাগ উঠছে। অথচ সে এমন না। সবসময় সব কিছু সুন্দরভাবে ব্যালেন্স করার ক্ষমতা তার আছে। সব হচ্ছে শিহাবের জন্য। নীরাদের বিল্ডিং এর এদিকটা একটু নিড়িবিলি। সবাই কাজে চলে যায় আরো আগে। রাস্তার দুই ধারে সবুজ গাছ। ওদের বাকবিতন্ডা দুই একজনের চোখে পরলেও এড়িয়ে গেল। সকাল সকাল সবাই ই নিজেদের কাজের জন্য তাড়ায় থাকে।
নীরা নিজেকে সামলালো। মিলা চুপ করে আছে। মিলার খুব খারাপ লাগছে। শিহাব আর নীরাকে এভাবে কথা বলতে দেখতে। সে তো এমন দেখতে চায়নি।
-আমার এখানে ওকে বকা উচিত হয়নি মানছি। আমি নিজেও বুঝতে পেরেছি। তবে আপনার ও এখানে বলা প্রয়োজন ছিলো না।
-ও হো আমি তো ভুলেই গেছিলাম। তুমি তো মহৎ। সবকিছু বোঝো সবকিছু ব্যালেন্স ও করতে পারো। হোয়াটএভার আমার আর কি। তুমি সবসময়ই ঠিক আর সবাই ভুল।
শিহাব কথা শেষ করেই উল্টো হেটে চলে গেল।৷ গাড়ির কাছে গিয়ে চাকায় একটা লাত্থি দিলো। এতোকিছুর পরও শিহাব নীরাকে দেখার জন্য সকাল সকাল এই এরিয়াতে এসেছে। সে ভেবেছে নীরা বের হলে একবার দেখেই চলে যাবে। নীরাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে গাড়ি থামিয়ে সে অপেক্ষা করছিলো। তখনই দেখলো নীরা আর মিলা হেটে আসছে। মিলা কি যেনো বললো তারপরই নীরা মিলাকে জোরে বকতে লাগলো। সবকথা শিহাব যদিও শোনেনি। কিন্তু মিলাকে ওভাবে বকতে দেখে সে এগিয়ে গিয়েছিলো। মিলাকে রাস্তায় বকতে দেখে শিহাবের একটুও ভালো লাগেনি তাই সে কারন জানতে চেয়েছিলো। আর তারপর কি হলো নীরা উল্টো তাকেই কথা শুনিয়ে দিলো। এতোকিছুর পরও সে নীরাকে দেখতে এসেছে। নিজের ওপর নিজেরই রাগ হচ্ছে এখন। নিজেকে সামলে সে ওখান থেকে নিজের অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেল।
নীরা মিলার দিকে তাকালো। মিলা মুখটা চুপসে রেখেছে। নীরা ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো। স্কুলে ফোন দিয়ে ছুটি নিয়ে নিলো আজকের। তারপর মিলার বন্ধুকে ফোন করে জেনে নিলো আজ মিলার কোনো ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে কিনা! নেই শুনে সে ফোন কেটে দিলো। তারপর মিলার হাত ধরলো।
-মিলা আমি স্যরি। আপাকে কি ক্ষমা করা যায় না? দেখ মিলা তুই যেমনটা ভাবিস তেমনটা সম্ভব না। আর সহজও না। বাস্তবে আমাদের বহু পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। সবদিক বিবেচনা করতে হয়। আমিও তাই করছি। আমি বলেছিলাম এই নিয়ে আর কথা বলিস না। তবুও বললি। যাই হোক এখন তো একটু হাস। আপার ওপর রাগ করে থাকিস না। প্লিজ! এই যে আমি কানে ধরছি।
বলতে বলতে নীরা সত্যিই কান ধরলো।
নীরার নরম সুরে কথা শুনে আর কান ধরা দেখে মিলা আর রাগ করে থাকতে পারলো না। হেসে ফেললো।
-এইতো গুড গার্ল বল তো আজ কেন ছুটি নিয়েছি?
নীরার কথা শুনে মিলা হাসতে হাসতে বললো।
-কারন আজ মিলা তার আপার সাথে সারাদিন ঘুরবে। আজকের দিন শুধু মিলার!
-এক্স্যাক্টলি। আজ দুইবোন খুব ঘুরবো। শপিং ও করবো। আমরা কতোদিন শপিং করি না। সো লেট্স গো।
দুই-বোন হেসে গল্প করতে করতে এগিয়ে গেল।
–চলবে।