#অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব ২৪
#নাফিসা নীলয়া!
-খালামনি তোমার ছেলে একটা ডিজেবল মেয়েকে বিয়ে করবে ভাবতে পারছো তুমি? ওই মেয়ের জন্য আমাকে রিফিউজ করলো! তুমি যদি একবার দেখতে। আমি সহ্য করতে পারছি না এসব। একদম পারছি না।
জায়মার বাড়িতে জায়মার সাথে দেখা করতে এসেছে তিশা। সে কিছুতেই এসব মেনে নিতে পারছে না। তিশার মুখে সব শুনে জায়মাও হতভম্ব হয়ে গেছেন। শেষমেশ শিহাব এরকম একটা মেয়েকে বিয়ে করবে সেটা তিনিও মানতে পারছেন না। কি করবেন না করবেন কিছুই মাথায় আসছে না এই মুহূর্তে। তখনই জায়মার স্বামী সোহেল ঘর থেকে বের হয়ে নিচে আসলেন। তিশাকে দেখে হাসলেন।
-কেমন আছো তিশা?
তিশা সোহেলকে দেখে হাসার চেষ্টা করলো।
-ভালো আছি আংকেল। তুমি ভালো?
-খুব ভালো আছি।
তারপর জায়মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
-আমি অফিসে যাচ্ছি। দেরি হবে ফিরতে। রিশাদ ফোন করেছিলো তোমাকে?
জায়মা একটু বিরক্ত হলেন।
-না করেনি।
-আচ্ছা থাকো তোমরা আমি যাচ্ছি।
বলেই সোহেল বেড়িয়ে গেলেন।
-খালামনি রিশাদকে নিজের ছেলে ভাবতে পারোনি তাই না?
তিশার প্রশ্নে জায়মা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। রিশাদকে তিনি বড় করেছেন ঠিকই। তবে নিজের সন্তানের মতো কখনো ভাবতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন তার এই সংসারে নিজেরও একটা সন্তান হবে। কিন্তু হয়নি। রিশাদকেই নিজের মতো বড় করেছেন। তবে শিহাব,তিতলি আর রেহানের প্রতি যেই টান আছে সেটা রিশাদের প্রতি নেই। শুধু দায়িত্ববোধ থেকেই সব করেছেন। এজন্য তিশার প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন তিনি।
-কি নাম যেনো মেয়েটার? ও হ্যা নীরা। ওর সাথে দেখা করবো আমি।
-দেখা করে কি হবে খালামনি?
-ওকে বুঝিয়ে দিতে হবে ওর মতো মেয়ে শিহাবের জন্য ঠিক নয়। শিহাবের জন্য পার্ফেক্ট চয়েজ তুই। তুইও নীরাকে তোর আর শিহাবের সম্পর্কের ব্যপারে বলবি।
-কিন্তু কি বলবো!
তিশার কথায় বিরক্ত হলেন জায়মা।
-এটাও শিখিয়ে দিতে হবে তোকে?
-আমি বুঝেছি খালামনি। কিন্তু নীরা এতো বোকা মেয়ে না। যে আমরা যা বলবো ও তাই বিশ্বাস করবে। ও ডিজেবল্ড কিন্তু বোকা না।
-তাই নাকি? একদিনেই চিনি গেলি ওকে?
-আমি যতটুকু বুঝেছি আমার তাই মনে হলো। আর ওইদিন নীরার ভাবসাবেও আমার এরকমই মনে হয়েছে। আমার কাছে আরেকটা প্ল্যান আছে।
জায়মা তিশার দিকে তাকালেন শোনার আশায়।
-নীরার সেল্ফ রেস্পেক্টে আঘাত করতে হবে। আমি ওকে অবজারভ করে যতোটুকু বুঝলাম ও ভীষণ আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মেয়ে। এইধরনের মেয়েরা এই টাইপেরই হয়। এন্ড এটা তুমি খুব ভালো পারবে। তুমি বুঝতে পারছো তো আমি কি বলছি?
জায়মা তিশার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
-বুঝতে পেরেছি। এমনভাবে বলতে হবে যেনো ওর আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। তারপর তোর আর শিহাবের ব্যপারেও ওকে বলতে হবে। দুটো বিষয় এড করে বললে আই থিংক কাজে দিবে।
তিশারও এরকমই মনে হলো। তবে আরেকটা ভয়ও মনে রয়ে গেল। শিহাব জানতে পারলে কি হবে। সেটাও ওকে ভাবাতে লাগলো। তাই সে জায়মার উদ্দেশ্যে বললো।
-খালামনি সবই ঠিক আছে তবে শিহাব জানতে পারলে কি হবে ভেবেছো তুমি?
-উফ তিশা আগেই এতোসব ভেবে কি হবে। সব কথার এক কথা হচ্ছে ওই মেয়েটার জন্য আমার শিহাবের প্রতি এই অধিকারটুকুও রইলো না। আমার ছেলে আমাকে প্রাধান্যই দিলো না। আমার কি অধিকার নেই? মা হিসেবে অবশ্যই আছে। আমি শিহাবের জন্য তোকে ঠিক করেছি। ছোট থেকে ওর কোনো বিষয়ে আমাকে থাকতে দেওয়া হয়নি। এবারও থাকতে দেওয়া হচ্ছে না সেটা আমি কি করে হতে দেই।
জায়মার কথায় তিশার বলতে ইচ্ছে করছে তুমিই তো সেই অধিকার হারিয়েছো নিজের দোষে। এখন অন্যের দোষ দিয়ে লাভ কি! তবে বললো না। কারন এখানে তিশারই লাভ রয়েছে। সে শুধু হাসলো।
নীরা স্কুলে ক্লাস নিচ্ছে। সবাইকে ধরে ধরে শিখাচ্ছে। ক্লাস টাইম শেষ হলে সে বাইরে বের হলো। জিনিয়া এসে বললো একজন গার্ডিয়ার তার সাথে দেখা করতে চায়। নীরা গেল দেখা করতে। গিয়ে দেখলো খুব সুন্দরী একজন মহিলা বসে আছেন।
-আপনিই নীরা মিস?
-ইয়েস। আপনি রুমঝুমের মা?
-হ্যা। আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।
-হ্যা বলুন কি বলবেন।
-আসলে আমি বুঝতে পারছি না কোত্থেকে শুরু করবো। আমার মেয়েটাকে এখানে পড়তে দিয়েছি। ওর আগের থেকে অনেক ইম্প্রুভমেন্ট হয়েছে আমি জানি। তবে ওর বাবার কিছু ফিনানশিয়াল প্রবলেমের জন্য পড়ানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। আমি অথোরিটির সাথেও কথা বলেছি তবে ওনারা কনসিডার করতে চাইছে না। তবে একজন বললো আপনার সাথে কথা বলতে। আপনি এসব বিষয়ে খুব সাহায্য করেন শুনেছি। তাই আপনার কাছে আসা। প্লিজ ম্যাম বিষয়টা দেখবেন একটু। আমি আমার মেয়েটাকে পড়াতে চাই এখানেই। আমি আসলে কখনো কারো কাছে এভাবে রিকুয়েষ্ট করতে অভ্যস্ত নই। আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন?
মহিলাটির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো নীরা। এরকম অনেককেই সে দেখেছে সাহায্যও করেছে। এরকম কিছু দেখলে তার নিজের ছোটবেলার কথা মনে পরে যায়। তার নিজেরও লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তার মায়ের চেষ্টায় পুনরায় পড়তে পেরেছিলো। মা-বাবা সন্তানের জন্য হয়তো সব করতে পারে। যেমন এই মহিলাটি এভাবে অনুনয় করতে অভ্যস্ত না। কিন্তু নিজের সন্তানের জন্য অসহায় হয়ে সেটাই করছে। নীরা মহিলাটির উদ্দেশ্যে বললো।
-আমি আপনার পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছি। আমি সব বিবেচনা করে বিষয়টি খুব দ্রুত দেখবো। আপনি একদম চিন্তা করবেন না। রুমঝুম আর বাকি বাচ্চারা আমার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। ওদের জন্য যা করতে হয় আমি করার চেষ্টা করি সবমসময়।
নীরার আশ্বাস পেয়ে মহিলাটির চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। তিনি হেসে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিলেন। নীরাও হেসে বিদায় দিলো।
ইতিমধ্যে ব্রেক দিয়ে দিয়েছে। রুমা নীরার কাছে আসলো। তার মুখ হাসিহাসি। নীরা পানি খেতে খেতে ভ্রু কুঁচকে রুমার দিকে তাকালো। রুমা হাসতেই থাকলো। নীরা পানি খাওয়া শেষে বলে উঠলো।
-হোয়াট?এমন অকারনে হাসছিস কেন?আশ্চর্য!
-আরে ইয়ার গেস কর কি হয়েছে?
-কি হয়েছে?
-আরে গেস কর না কে এসেছে?
নীরা এবার খুব বিরক্ত হলো।
-উফ রুমা কে এসেছে? নিশ্চয়ই কোনো মহারাজা আসেননি।
-আরে রানীসাহেবা আপনার মহারাজাই এসেছেন। ব্রেকটাইমে তোর সাথে লাঞ্চ করবেন উনি।
-মহারাজা মানে পাগল নাকি তুই?
-ধুর ব্যক্কল একটা। শিহাব ভাই এসেছে। দেখেছিস এখনই চোখে হারায় তোকে। উফ আল্লাহ সাইফ যে কেন এমন হলো না।
রুমার কথা শুনে থম মেরে গেল নীরা। তার ভাবনাতে শুধু এটাই এলো। এই লোকের কি কোনো কাজ নেই। সবসময় হাজির হয়ে যায়। রুমার গুতো খেয়ে সম্বিত ফিরলো নীরার। রুমা তার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। করিডোরে গিয়ে থামলো ওরা। শিহাব দাড়িয়ে আছে নীরাকে দেখে হাসলো সে। রুমা বলে উঠলো।
-এই যে শিহাব ভাই একঘন্টা পরে আমার বান্ধবিকে দিয়ে যাবেন ঠিক আছে?
রুমার কথা শুনে শিহাব গম্ভীর মুখে বললো।
-একঘন্টা? মাএ?
শিহাবের কথা শুনে রুমা হু হা করে হেসে ফেললো। এদিকে নীরার প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো। এটা কোন ধরনের কথা। রুমা বলে উঠলো।
-এক ঘন্টাই অনেক সময় শিহাব ভাই। আপনাদের জন্য নীরার ক্লাসে আজ আমি প্রক্সি দিবো। কি ভালো আমি তাই না নীরা?
নীরা কটমটিয়ে তাকালো রুমার দিকে। রুমা হাসতে হাসতে চলে গেল। শিহাব নীরাকে বললো।
-যাওয়া যাক তবে?
নীরা মাথা নাড়লো। দুজনে বের হয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। শিহাব গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে নীরাকে জিজ্ঞেস করলো।
-কোথায় যাওয়া যায় বলো তো?
-আপনার যেখানে ইচ্ছে।
-আরে বলো তো তোমার ফেভারিট জায়গা কোনটা?
-আমার স্পেসিফিক কোনো ফেভারিট জায়গা নেই তেমন।
-আচ্ছা এবার বলো কি খেতে ভালোবাসো তুমি?
নীরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। শিহাব হাসতে হাসতে নীরার দিকে এগিয়ে নীরার কপাল ছুঁয়ে দিলো।
-সবসময় ভ্রু কুঁচকে তাকাও কেন বলো তো?
-আমার ভ্রু কুঁচকে তাকাতে ভালো লাগে তাই।
বলেই নীরা শিহাবের হাত সরিয়ে দিলো। শিহাব হেসেই গাড়ি স্টার্ট দিলো। তারপর আবার বললো।
-বলো তো কি খেতে পছন্দ করো?
নীরা বুঝলো শিহাব নাছোড়বান্দা সে জেনেই ছাড়বে। তাই নীরা বললো।
-ঝাল খেতে পছন্দ করি। ঝাল ঝাল মরিচের ভর্তা,শুটকির ভর্তা আর গরম ভাত।
-ব্যস এটুকুই?
-মোট কথা ঝাল ঝাল ভর্তা। আর ঝাল যেকোনো কিছু।
-ও আই সি। এজন্যই আমার প্রতি তোমার ব্যবহার এমন স্পাইসি।
শিহাবের কথা শুনে নীরা চোখ গরম করে তাকালো। শিহাব মিটিমিটি হাসতেই থাকলো।
-ইউ নো হোয়াট শিহাব? আপনি একটা যা তা!
-আই নো। আচ্ছা তাহলে আজ তোমার ফেভারিট খাবারই খাবো আমরা। চলো যাওয়া যাক।
একটা সুন্দর নিরিবিলি জায়গায় নীরাকে নিয়ে এলো শিহাব। এখানে একটা ছোটমতো ধাবা আছে। শিহাব মাঝেমাঝেই এখানে আসে। যখন সব কাজে হাপিয়ে উঠে। একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য এখানে আসা হয় তার। তারপর খাওয়াদাওয়াও এখানেই হয়। শিহাব নীরাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। ওদের দেখে একটা লোক এগিয়ে এলেন। শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
-বহুদিন পর এলে। খুব ব্যস্ত থাকো নাকি?
-জ্বি কাকা তা তো একটু থাকিই। আপনারা সবাই ভালো আছেন?
-খুব ভালো আছি। তোমার বাড়ির সবাই ভালো তো?
-হ্যা সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।
নীরা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। লোকটি নীরাকে দেখে শিহাবকে জিজ্ঞেস করলো।
-ওকে তো চিনলাম না । ও কে?
শিহাব বললো।
-ও আপনাদের হবু বউমা। আর নীরা উনি হচ্ছেন আমার কাকা।
নীরা সালাম দিলো।
-আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম। বাহ্ ভারি মিষ্টি দেখতে তো বউমা। শিহাব তোমার পছন্দ আছে বলতে হবে। আচ্ছা যাই হোক এই দুপুরে এসেছো আর আমি তোমাদের দাড় করিয়ে রেখেছি৷ চলো ওদিকটায়।
শিহাব আর নীরা ওনার পেছনে হাটতে থাকলো। নীরা শিহাবকে বললো।
-জায়গাটা সুন্দর।
-তোমার পছন্দ হয়েছে?
শিহাবের প্রশ্নে নীরা বললো।
-খুব।
-তাহলে এখন থেকে আমরা দুজন মাঝেমাঝে এখানেই লাঞ্চ করতে আসবো।
নীরা আর কিছু বললো না। ওরা গিয়ে একটা টেবিলে বসলো। শিহাব একটা বাচ্চামতো ছেলেকে খাবার নিয়ে আসতে বললো। ঠিক নীরার পছন্দ মতো। লাল মরিচের ভর্তা শুটকির ভর্তাসহ নানান পদের ভর্তার সাথে গরম ভাত। এতো খাবারের কথা শুনে নীরা বলে উঠলো।
-এতো খাবার কে খাবে? শুধু শুধু অপচয় হবে।
-আরে হবে না আমিও তো খাবো।
-আচ্ছা! এই শহরের মধ্যেই এতো সুন্দর জায়গা আছে আমি তো জানতামই না। আগে জানলে সবাইকে নিয়ে আসতাম। মিলা,রুমা,সাইফ,তিতলি,রেহান সবাইকে নিয়ে আসতাম।
এবার শিহাব নিজেই ভ্রু কুঁচকালো।
-মানে আমাদের মাঝে তুমি সবাইকে নিয়ে আসতে? আর ইউ ম্যাড?
-হ্যা তো আপনজনদের সাথে খুশি ভাগ করে নিতে কার না ভালো লাগে। আর আমি তো আজকের কথা বলিনি। বলেছি আগে জানলে সবাইকে নিয়ে ঘুরতে আসতাম। এখানে আমার আপনার মাঝখানের কোনো কথা তো আসেনি।
-ও আচ্ছা ঠিক আছে।
ওরা কথা বলতে বলতেই বাচ্চা ছেলেটা খাবার দিয়ে গেল। নীরা খেতে শুরু করার আগে দেখলো শিহাব খেতে ইতস্তত করছে। নীরা বিষয়টা পাওা না দিয়ে ভর্তা দিয়ে ভাত মেখে মুখে নিলো। শিহাবও খাওয়া শুরু করলো। তারপর বললো।
-এটা তোমার প্রিয় খাবার তারমানে আজ থেকে আমারও প্রিয় খাবার।
নীরা খেতে খেতেই শুনলো। শিহাব ঝাল একদম খেতে পারে না। নীরার প্রিয় খাবার বলেই সে আগে বলেনি। বাহাদুরি করে ঝাল ঝাল ভর্তা খেতে লাগলো। তবে বেশিক্ষন সইতে পারলো না। ভর্তায় ঝাল খুব বেশি।। তার কৃষ্ঞবর্ণ মুখও লাল হয়ে গেল ঝালের চোটে। নীরা খাওয়া থামিয়ে দেখলো বিষয়টা। শিহাব এই মুহূর্তে দরদর করে ঘামছে। শিহাবের পরনের স্কাই ব্লু রঙের শার্টও ঘামে ভিজে যাচ্ছে। নীরা বুঝলো শিহাব একদম ঝাল সহ্য করতে পারে না। কিন্তু ঢঙ করে খেতে বসেছে। সে তাড়াতাড়ি শিহাবকে পানি দিলো। শিহাব একনজর তাকিয়ে পানি খেলো। নীরা শিহাবকে আরো পানি দিলো। শিহাবের এতো পানি খেয়েও ঝাল কমেনি। নীরা সেই বাচ্চা ছেলেটাকে ডাক দিলো।
-এই মেহেদী শোনো।
-জ্বি আপা।
-মিষ্টি আছে না তোমাদের?
-হ্যা আপা আছে তো।
-তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো জলদি যাও।
ছেলেটা দৌড়ে গিয়ে মিষ্টি নিয়ে আসলো। শিহাব ঝালের চোটে হাঁপাচ্ছে। নীরা শিহাবের পাশে বসে শিহাবের গাল চেপে ধরে মুখে মিষ্টি পুরে দিলো। শিহাব হতভম্ব হয়ে তাকালো। নীরা শিহাবকে অগ্রাহ্য করে ধমকে বললো।
-তাড়াতাড়ি খান নইলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।
শিহাব দ্রুত মিষ্টি গিললো। নীরা আরেকটা মিষ্টি নিয়ে শিহাবের মুখে ঢুকিয়ে দিলো। শিহাবের এখন একটু ভালো লাগছে। ঝাল কমেছে একটু। নীরা আশেপাশে টিস্যু খুঁজলো পেলো না। তারপর নিজের ওড়নার কোনা দিয়েই শিহাবের কপালের ঘাম মুছে দিলো। শিহাব অবাক হয়ে তাকিয়েই আছে নীরার দিকে। নীরা শিহাবের তাকানো দেখে আবার ধমকে উঠলো।
-হোয়াট? তাকিয়ে আছেন কেন? আজব যা পারেন না তা করতে বলে কে আপনাকে!
শিহাব কিছু বললো না। নীরা আবার বললো।
-আমার পছন্দ বলেই কি আপনাকে খেতে হবে। না একদম না। এসব আমার একদম পছন্দ না শিহাব। নিজের সমস্যা হবে এমন কোনো কিছুই করা ঠিক না। সামান্য একটা বিষয় আমাকে বললেই হতো। নিজের পছন্দমতো খাবার খেলেই পারতেন। আমার জন্য নিজের পছন্দ বদলাতে হবে না শিহাব। আমি এটা একদম এপ্রিশিয়েট করি না। কখনো কারো জন্য নিজের পছন্দ বদলাতে হয় না। আর আমার জন্য আপনাকেও বদলাতে হবে না। আপনি যেমন তেমনই ঠিক। আপনার নিজস্ব পছন্দ আপনারই থাকুক। আমার জন্য চেঞ্জ করতে হবে না। ঠিক আছে?
শিহাব মুগ্ধ হয়ে নীরার কথা শুনলো। তারপর বললো।
-কিন্তু আমার কাছে সবকিছুর উর্দ্ধে তুমি।
নীরা নিজের কপাল চাপড়ালো।
-কাকে কি বলছি আমি। আমারই বোঝা উচিত ছিলো তুমি একটা ঘাড়ত্যাড়া লোক।
শিহাব নীরার মুখে তুমি সম্বোধন শুনে আশ্চর্যজনক চোখে তাকিয়ে রইলো। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। নীরা আবার বললো।
-হোয়াট? হা করে তাকিয়ে আছো কেন? মুখ বন্ধ করো।
-আমাকে একটা চিমটি কাটো তো। মানে সিরিয়াসলি?
বলেই হাসলো শিহাব। সেই সুন্দর হাসি। যেই হাসিটা নীরার কাছে সুন্দর লাগে। নীরা শিহাবের সুন্দর হাসিটা দেখলো।
খাওয়া শেষ করে ওরা কিছুক্ষন ঘুরলো। নীরা দেখলো কতোগুলো বাচ্চা খেলাধুলা করছে। সে শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বললো।
-ওরা কি পড়াশোনা করে না?
-জানি না তো। জিজ্ঞেস করতে হবে দাড়াও।
শিহাব সেই বাচ্চাগুলোকে ডাকলো। নীরা ওদের বললো।
-কেমন আছো সবাই?
-ভালো আছি।
-আচ্ছা শোনো তোমরা কি খেলছিলে?
-আমরা মার্বেল খেলা খেলছিলাম।
-বাহ্ জানো ছোটবেলায় আমরাও এই খেলা খেলতাম। আচ্ছা তোমরা কি পড়াশোনা করো?
নীরার কথা শুনে বাচ্চাদের মুখ কালো হয়ে গেল। ওরা একে অপরের দিকে তাকালো। মুখ ভার করে বললো।
-টাকা নেই।! আমাদের মধ্যে কারো কারো বাবা- মা ই তো নেই। কিভাবে পড়বো। খেতেই পারি না।
বাচ্চাগুলোর কথা শুনে কষ্ট লাগলো নীরার তবে সে সুন্দর করে হাসলো। তারপর ওদের উদ্দেশ্যে বললো।
-আচ্ছা আমি যদি তোমাদের পড়ার ব্যবস্থা করে দেই তাহলে কেমন হয়? তোমরা তো এমনিতেও কতো কাজ করো। পড়ার পাশাপাশি না হয় কাজ ও করলে। আমাদের একটা সংস্থা আছে যেখানে বাচ্চারা কাজ করার পাশাপাশি পড়ছেও। তোমরাও না হয় তাই করবে। কি পারবে না সবাই?
সবাই একসাথে চেঁচিয়ে বলে উঠলো।
-পারবো আপু।
-আচ্ছা তাহলে তো খুবই ভালো। আমি খুব খুশি হয়েছি তোমাদের ইচ্ছে দেখে। আমি সব ব্যবস্থা করবো। যাও এবার খেলো গিয়ে।
বাচ্চাগুলো খুশি হয়ে আবার খেলতে চলে গেল। শিহাব জানতো নীরা এমন কিছুই করবে। সে নীরাকে বললো।
-দ্যাট্স হোয়াই আমি তোমাকে এতো সম্মান করি।
নীরা হাসলো। দুজন হাটতে থাকলো। চারদিকের সুন্দর পরিবেশ অবলোকন করতে করতে। হাটতে হাটতে নীরা থেমে গেল। সামনে একটা শিউলি ফুল গাছ। ঝাঁকেঝাঁকে শিউলি ফুল ধরেছে গাছটায়। নীরার খুব পছন্দ শিউলি ফুল। শিহাব দেখলো নীরা শিউলি ফুল গাছের দিকে তাকিয়ে আছে। সে নীরার হাত ধরে সেখানে নিয়ে গেল। নীরা বুঝতে পারছে না শিহাব কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। সে কিছু বলতে চাইছিলো। তবে শিহাব বলতে দিলো না। শিহাব গাছের ডাল ধরে ঝাঁকানো শুরু করলো। আর সব শিউলি ফুল বৃষ্টির মতো ঝরঝর করে পরতে থাকলো। নীরা খিলখিল করে হেসে ফেললো। ঠিক যেনো শিউলি ফুলের বৃষ্টি পরছে। শিহাব আরেকবার ডাল ঝাঁকিয়ে নীরার কাছে গেল। নীরা তখন দুই হাত বাড়িয়ে শিউলিফুল ছুঁয়ে দিচ্ছে। শিহাব নীরার হাত ধরলো। নীরা শিহাবের দিকে হাসতে হাসতেই তাকালো। বললো।
-থ্যাংক ইউ। এমন সুন্দর দুপুরের জন্য। এমন সুন্দর শিউলি ফুলের বৃষ্টির জন্য।
-আমার তোমাকে থ্যাংক ইউ বলা উচিত। আমার জীবনে আসার জন্য ধন্যবাদ তোমাকে নীরা। এই দুপুরে তোমার হাত ধরে বলছি কখনো অসম্মান করবো না তোমাকে। করার প্রশ্নই উঠবে না। তুমি আমার আজীবনের জন্য আমার। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্যও আমি তোমাকেই চাইবো। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে আমার এই মরুভূমির মতো জীবনে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে আসার জন্য।
নীরা শিহাবের কথা শুনে হাসতে থাকলো। এতো খুশি আর আনন্দ বহুদিন পরে হলো।
-হয়েছে এবার চলো কতো দেরি করে ফেললাম আমরা। সব তোমার জন্য।
বলেই শিহাবের হাত ধরে টানলো নীরা। শিহাব বললো।
-আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে গেলে তোমার সাথে আমি যেকোনো জায়গায় চলে যেতে পারবো। তুমি যেখানে বলবে সেখানেই চলে যাবো।
নীরা শিহাবের হাত ধরেই হাসতে হাসতে বললো।
-আচ্ছা আপাতত এখান থেকে চলো তাতেই হবে।
শিহাব বলে উঠলো।
-এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা বিয়ে করছি নীরা। আমি কিছু জানি না।
-তুমি সত্যিই একটা পাগল শিহাব। এবার তো চলো।
-আমি তো বলেছিই তুমি যেখানে নিয়ে যাবে আমি তোমার সাথে সেখানেই যাবো। চলো।
নীরা শিহাবের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলো। আজ তার হাসি থামছে না। দুজন মিলে একসাথে হাটতে থাকলো।
–চলবে!