#অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব ৩২
#নাফিসা নীলয়া!
সবাই চাইছে নীরা আর শিহাবের বিয়েটা যেনো ধুমধাম করে হয়। কিন্তু নীরার এতো জাকজমক কখনোই পছন্দ ছিলো না। কিন্তু সবার জন্য কিছু বলতেও পারছে না। রুমা,মিলা,সাইফ,রেহান,তিতলি সবাই অনেক এক্সাইটেড হয়ে আছে ওদের বিয়ের জন্য। এজন্য নিজের পছন্দের কথা বলতেও পারছে না। নীরা কথা অনুযায়ী এতো জাকজমক করে কি হবে। তাছাড়া ইসলামেও বিয়েতে এতো রিচুয়ালস নেই। সাদামাটা বিয়েতেই বরকত বেশি। নীরা ঘরে বসে বসে এসবই ভাবছিলো। তখনই নূরজাহান বেগম ঘরে প্রবেশ করলেন। ঘরে ঢুকেই তিনি বলতে শুরু করলেন।
-দুইদিন পরে বিয়ে। অথচ তোর নিজের প্রতি কোনো যত্ন নেই। এসব কি নীরা? তোর চোখ মুখ দেখ সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরে ঘুরে কাজ করতে করতে কালো হয়ে গেছিস একদম। তোর গায়ের রঙ তো কতো সাদা ছিলো।
নূরজাহান বেগমের কথা শুনে নীরা বিরক্ত হলো। বললো।
-গায়ের রঙ দিয়ে কি আসে যায় দাদী। আমি জানি তুমি কেন এসেছো। এখন দয়া করে আমাকে নিয়ে ঘসামাজা শুরু করবে না।
নীরার কথা শুনে নূরজাহান বেগম রেগে গেলেন।
-হ্যা হ্যা তা করবি কেন! বিয়ের সময়েই তো মেয়ে মানুষের একটু যত্ন নিতে হয় নিজের। শুকুর কর শিহাবের মতো স্বামী পাবি। যে তোর খুতও দেখে না। অন্ধ হয়ে গেছে তোর প্রেমে। তাই বলে তুই একটু বিয়ে উপলক্ষে নিজের যত্ন নিবি না? মুখের লাবন্য সব নষ্ট হয়ে গেছে। কতো করে বলেছিলাম মেয়েকে বিয়ে দে বিয়ে দে। তা না করে বয়স বাড়িয়ে এখন বিয়ে দিচ্ছে।
নূরজাহান বেগম নিজে নিজে বকবক করতে করতে চলে গেলেন। নীরা বসেই রইলো। কে বোঝাবে এদের যে তার এসব একদম ভালো লাগে না।
নীরা বসে থেকেই ভাবলো শিহাবকে ফোন করে জানালে কেমন হয়। যদি তার কথাটা গুরুত্ব দেয় তাহলে ভালো। নইলে আর কি! সবাই যেভাবে চাইছে সেভাবেই হবে। ভেবেই নীরা ফোন করলো শিহাবকে।
শিহাব তখন অফিস থেকে বেড়িয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলো। রাত হয়ে গেছে। সে গাড়িতে উঠে বসলো তখনই তার ফোন বেজে উঠলো। সে দেখলো নীরা তাকে ফোন করেছে। সে হাসিমুখে ফোন রিসিভ করলো। যদিও সে জানে যে নীরা তাকে দরকার ছাড়া ফোনই করে না। সে ফোন রিসিভ করলে নীরাই আগে কথা বলা শুরু করলো।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ তুমি?
-আলহামদুলিল্লাহ। তো কি করছো?
-কিছু করছি না।
নীরা ইতঃস্তত করছে। কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। এভাবে নিজের কথাটা ভেবেই কি বলা ঠিক হবে সেটাই বুঝতে পারছে না সে। সে চুপ করে এসব ভাবতে ভাবতেই ওপাশ থেকে শিহাব বললো।
-কিছু বলতে চাইছো সেটা বুঝতে পারছি। বলে ফেলো।
শিহাবের কথা শুনে নীরা চোখ বড় বগ করে বললো।
-তুমি কিভাবে বুঝলে যে আমি কিছু বলতে চাইছি।
শিহাব হাসলো। তারপর বললো।
-কারন তুমি দরকার ছাড়া কখনো আমাকে ফোন করো না।
শিহাবের এই কথাটা শুনে নীরার একটু গিল্ট ফিল হলো। আসলেই সে শিহাবকে দরকার ছাড়া ফোন করে না। ফোন করা উচিত। যেহেতু বিয়ে হচ্ছেই সেক্ষেত্রে খোঁজ নেওয়াই উচিত। এসব ভেবেই নীরা আর কিছু বলতে পারছে না। নীরা কিছু বলছে না বলে শিহাব আবার বললো।
-গিল্ট হওয়ার কিছু নেই। আমি তোমাকে বুঝি। সমস্যা নেই। একবার আমার কাছে আসো তখন তুমি আমাকে ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না।
শিহাবের এই কথাটাই যথেষ্ট ছিলো নীরাকে রাগিয়ে তুলতে। সে আর কিছু না বলে বললো।
-রাখছি।
শিহাব বুঝে গেল নীরা রেগে গেছে তাই সে এবার বললো।
-তুমি কি বলতে চাইছিলে সেটা বলো। নইলে আমি তোমার বাসায় আসছি শুনতে।
নীরা কপাল চাপড়ালো। শিহাব আবার বললো।
-বলো। না বললে কিন্তু ভালো হবে না।
নীরা বলবে না বলবে না করেও শেষে বলে ফেললো।
-আসলে আমি চাইছি আমাদের বিয়েটা সাধাসিধাভাবে হোক। এতো এতো নিয়মকানুনের কি দরকার! এগুলোর একটাও আমাদের ইসলাম সমর্থন করে না। তো আমি ভাবছিলাম যে। মানে, আচ্ছা থাক সবাই খুব আনন্দে আছে শুধু শুধু আনন্দ নষ্ট করা ভালো হবে না। তিতলি রেহানেরও নিশ্চয়ই ওদের ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে অনেক আশা ছিলো। থাক আমার সমস্যা নেই।
নীরার এমন কথা শুনে শিহাব হাসলো। তার নিজেরও এতো কিছু পছন্দ না। নীরারও পছন্দ না। বাহ্ দুজনের চিন্তাধারাও মিলে যায়। কথাটা মনে আসতেই ভালো লাগলো শিগাবের।
-আমারও এতোকিছু পছন্দ না। আর সবচেয়ে বড় কথা এতো অনুষ্ঠান দিয়ে আসলে কিছুই হয় না। তুমি চিন্তা করো না। যা হবে তাতেই ওরা আনন্দ করতে পারবে। বুঝেছো! এক্সট্রা কোনো কিছু এড করতে হবে না। সাধারণ বিয়ের মতোই সবটা হবে। আমিও এটাই চাইছিলাম। তোমার থেকে এডভাইসও নিতাম। যাক তুমিও সেটাই ভেবেছো যা আমি ভেবেছিলাম। আমাদের চিন্তাধারার মিল আছে তাই না?
শিহাবের কথা শুনে নীরার মনটা ভালো হয়ে গেল। সে এবার নরম স্বরে কথা বললো।
-হুম। কিন্তু ওরা তো কতো আনন্ত করবে ভেবেছিলো। ওদের যদি মন খারাপ হয়?
-একদম হবে না। আমি তো বলেছিই। আর আনন্দ করতে হলে বড় করে অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয় না। কাছের মানুষরা থাকলে ভালোবাসা থাকলে অল্পতেও খুব আনন্দ করা যায়। বুঝেছো বউ?
শিহাবের কথা শুনে নীরা একটু লাজুক হাসলো। নীরা কথা বলতে বলতেই নূরজাহান বেগম আবার ওকে ডাকলেন। নীরা শিহাবকে বললো।
-বুঝেছি। আচ্ছা শোনো দাদী ডাকছে। পরে কথা হবে।
-আচ্ছা।
শিহাব আর নীরার সিদ্ধান্তে দেখা গেল কারোই কোনো সমস্যা হলো না। সবাই সাচ্ছন্দ্যেই রাজি হলো। আস্তে আস্তে বিয়ের দিনও ঘনিয়ে আসলো।
এরমধ্যে বিয়ের শপিং করার সময় রেহান আর মিলার মধ্যে আবার ঝগড়া হলো। মিলা রেহানের সাথে কম ঝগড়া করা শুরু করলেও ওইদিনের স্বপ্নটা দেখার পর থেকে আবার আগের মতো ঝগড়া করতে শুরু করলো। এবারের ঝগড়ার বিষয়টা হচ্ছে শাড়ি নিয়ে। মিলা একটা গোলাপী জমদানী শাড়ি নিয়ে দেখছিলো তখনই রেহান এসে বললো।
-এটাতে তোমাকে গোলাপি পেত্নী লাগবে বেয়াইন। প্লিজ আরেকটা দেখো।
রেহানের কথাটা শুনেই মিলা ধপ করে জ্বলে উঠলো। সে রেহানের মাথায় শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে বললো।
-তোমাকেও এখন পেত্নীর মতো লাগছে। রেহান পেত্নী।
মিলার এই কান্ড দেখে আশেপাশের সবাই হাসতে লাগলো। মিলা এতো তাড়াতাড়ি কাজটা করেছে যে রেহান হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। তারপর সবার হাসির শব্দ শুনে হুস ফিরতেই সে তাড়াতাড়ি শাড়ি সরিয়ে মিলার মুখে ছুড়ে মারলো। তারপর চেঁচিয়ে বললো।
-তুমি একটা পেত্নী,অগ্নিকণ্যা জোয়ালামুখী,আর, আর কি যেনো ও হ্যা আর হচ্ছে তোমার মুখটা ঢেড়সের মতো। সারাদিন মুখটাকে তুমি ঢেড়সের মতো করে রাখো।
-কিহ্! আমার মুখ ঢেড়সের মতো? তোর মুখ কি? তোর মুখ তো বেজির মতো দেখতে।
-দেখো মিলা সম্মান দিয়ে কথা বলো। আমার সাথে একদম তুই তুকারি করে কথা বলবে না।
-কেন? কেন বলবো না। তুই কোথাকার কোন রাজা বাদশাহ্ যে তোকে আমার আপনি আজ্ঞা করে কথা বলতে হবে হ্যা? হু আর ইউ?
-মিলা স্টপ। অনেক বলেছো তুমি। অভদ্র একটা মেয়ে। আমি ভেবে পাচ্ছি না। আমার ভাবির মতো একজন মমতাময়ীর বোন হয়ে তুমি এমন জল্লাদ হলে কি করে?
-কি আমি জল্লাদ? আমি জল্লাদ হলে তুমি কি? বাঁদর একটা, বেজি একটা।
শপিংমলের আশেপাশের সবাই ওদের এমন ঝগড়া দেখে হাসাহাসি করছে। তিতলি অনেক চেষ্টা করছে ওদের থামাতে কিন্তু কিছুতেই পারছে না। নীরা,শিহাব, সাইফ আর রুমা অন্যপাশে গিয়েছে। তারা এখনো দেখেনি ওদের ঝগড়া। তিতলির অবস্থা এখন শোচনীয়। সে ওদের থামাতে না পেরে দুজনের মাঝখানে চলে আসলো। ওকে মাঝখানে আসতে দেখে রেহান তিতলিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। তারপর বললো।
-তুই মাঝখানে গেলি কেন? আজ এই জল্লাদ মেয়েটাকে আমি দেখেই ছাড়বো।
এই কথা শুনেই মিলা আবার রেগে গেল। সে এবার রেগে গিয়ে তিতলিকে টেনে তার কাছে আনলো। তারপর বললো।
-তিতলি তুমি কেন মাঝখানে আসলে? তোমার বেজির মতো ভাইকে আজ আমি দেখেই ছাড়াবো। তুমি আমার পাশে দাড়াও।
রেহান আবার তিতলির হাত টেনে বললো।
-মোটেও না। ও আমার বোন সুতরাং ও আমার পাশে থাকবে।
মিলা আবার তিতলিকে টেনে বললো।
-না তিতলি আমাকে আপু বলে ডাকে। ও আমার ও বোন ও আমার পাশে থাকবে।
মিলা আর রেহানের টানাটানিতে তিতলি বেচারির অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তখনই শিহাব,নীরা আর সাইফ রুমা এসে গেল। এসে এই পরিস্থিতি দেখে অবাক হয়ে গেল। ওরা তাড়াতাড়ি মিলাদের কাছে গেল। তিতলি ওদের দেখে বললো।
-প্লিজ ওদের থামাও নইলে এরা আমাকে নিয়ে টানাটানি করতে করতে মেরে ফেলবে।
রেহান আর মিলা এবার তিতলির কথা শুনে তিতলিকে ছেড়ে দিলো। তিতলি তাড়াতাড়ি রুমার কাছে চলে আসলো। বললো।
-রুমা আপু এদের থামাও। নইলে এরা আজকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিবে।
রুমা অবাক হয়ে বললো।
-তাই তো দেখছি।
তিতলিকে সরে গেলেও মিলা আর রেহান আবার নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে শুরু করলো। নীরা মিলার কান্ড দেখে রেগে গেল। শিহাব দেখলো নীরা প্রচন্ড রেগে যাচ্ছে। সেজন্য শিহাব নিজেই গিয়ে রেহানকে টেনে আনলো। ধমক দিয়ে বললো।
-কি হচ্ছে রেহান। শপিংমলে এতো মানুষের মাঝে এসব কি শুরু করলি? চারদিকে তাকিয়ে দেখ সবাই হাসছে। তোরা কি বাচ্চা নাকি?
শিহাবের ধমক শুনে এবার দুজনেই চুপ করলো। একটুপর মিলা বললো।
-সব রেহানের দোষ! ও ই আগে শুরু করেছে।
বলেই মিলা ভয়ে ভয়ে নীরার দিকে তাকালো। আজ তার ইম্ম্যাচিউরের মতো বিহেভ দেখে নিশ্চয়ই তার আপা অনেক রেগে গেছে। এখন তার কি হবে! সব এই রেহানের দোষ। মিলা নীরার দিকে তাকিয়ে দেখলো। সত্যিই নীরা তার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে। মিলা অসহায় হয়ে সাইফের দিকে তাকালো। সাইফ কাধ ঝাকিয়ে জানালো। সে আজ কিছুই করতে পারবে না।
দুজনের ঝগড়া থামলে সবাই সবাই শপিংমল থেকে বের হলো। রেহান আর মিলা দুজন আর দুজনের দিকে তাকালোও না। তিতলি ওদের কান্ড দেখে এখন মিটি মিটি হাসছে। দুপুর হয়ে যাওয়ার কারনে সবাই সাইফের রেস্তোরাতে গেল লাঞ্চ করতে।
সেখানেও বসার সময় রেহান যেপাশে বসলো মিলা সেপাশে বসলো না। অপরপাশে বসতে গিয়েও দুজনে মুখোমুখি হয়ে গেল। মিলা রেহানের দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রেহানও তাই করলো। সাইফ হাসতে হাসতে সবাইকে বললো।
-আমি তো ভেবেছিলাম আমি আর রুমাই বোধ হয় ঝগড়া করি। এতো দেখছি মিলা আর রেহানও আমাদের থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে।
রুমাও সাইফের কথায় তাল মেলালো।
-ঠিক! আল্লাহ এতো ঝগড়া কি করে করিস রে তোরা?
রুমার কথা শুনে মিলা আর রেহান দুজন দুজনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে উঠলো।
-সব দোষ ওর।
ওদের এমন ভাব দেখে নীরা এবার দুজনের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললো।
-আরেকবার ঝগড়া শুরু করলে দুটোই এবার আমার হাতের মার খাবি।
নীরার ধমক শুনে এবার দুজনে মুখ গোমড়া করে চুপ করে বসলো।
তিতলি হাসতে হাসতে বললো।
-আজকের সেরা বিনোদন। থ্যাংক্স দুজনকেই।
তিতলির কথা শুনে দুজনেই চোখ গরম করে তাকালো।
শিহাব গলা খাঁকাড়ি দিয়ে নীরাকে বললো।
সাইফ রেস্তোরা ক্লোজ করলো। সব স্টাফ ও চলে গেল। এখন বাইরের কেউ নেই। সবাই খাওয়া শুরু করলো। মিলা খেতে খেতে বললো।
-আমি আইসক্রিম খাবো। আমার ঝাল লাগছে!
মিলার কথা শুনে সাইফ উঠতে গেল। নীরা সাইফকে বসতে বলে নিজেই গেল আইসক্রিম আনতে। শিহাবের খাওয়া শেষ এজন্য সে ও উঠে গেল। বাকিরা খেতে লাগলো।
নীরা আইসক্রিম বের করে পিছে ফিরতেই শিহাবের সাথে ধাক্কা খেলো। শিহাব একদম নীরার পেছনে দাড়িয়ে ছিলো। নীরা নাকে ব্যাথা পেলো শিহাবের সাথে ধাক্কা খেয়ে। শিহাব তাড়াতাড়ি নীরারকে ধরে বললো।
-স্যরি স্যরি এক্সট্রেমলি স্যরি।
তারপর নীরার নাক ছুঁয়ে বললো।
-বেশি ব্যথা পেয়েছো?
নীরা এমনিতেই একটু রেগে ছিলো মিলার ওপর। সে একটু ঝাড়ি দিয়ে বললো।
-না এখন সামনে থেকে সরো।
শিহাব একটু নরম স্বরে বললো।
-আমি সত্যিই বুঝিনি। স্যরি।
-আচ্ছা ঠিক আছে দেখি সরো। মিলাকে আইসক্রিম দিয়ে আসি।
শিহাব সরে গেলে নীরা মিলাকে আইসক্রিম দিয়ে আসলো। তারপর নিজে এক কর্ণারে একা গিয়ে বসে ফোন বের করে নিজের নাক দেখতে থাকলো। একটু লাল হয়ে গেছে। আর একটু ব্যথাও করছে।
শিহাব নীরার সামনে ধপ করে বসে পরলে নীরা ফোন রেখে শিহাবের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো। শিহাব কোনো কথা না বলে নীরার নাকে বরফ ডলে দিলো। নীরা প্রথমে অবাক হলো পরে পিছিয়ে গিয়ে বললো।
-কি হচ্ছেটা কি! আমি এতোও ব্যথা পাইনি। সরাও এটা।
শিহাব আবার বরফ দিতে নিলে নীরা এবার রাগী চোখে তাকিয়ে বললো।
-নাথিং সিরিয়াস। এমন করছো কেন আশ্চর্য! সরাও।
শিহাব নীরার ধমক খেয়ে আর কিছু করলো না। তবে গম্ভীর মুখভঙ্গি করে বললো।
-তুমি সবসময় আমার জন্য ব্যথা পাও। এর আগেও পেয়েছিলে!
নীরা শিহাবের কথা শুনে হেসে ফেললো।
-এসব তো কো-ইন্সিডেন্স। বাদ দাও তো। কি সব যে বলো!
শিহাব আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো। নীরা হঠাত মনে পরার ভঙ্গিতে বললো।
-আরে দেখো এখানেই তুমি প্রথম আসার পর বসেছিলে। আচ্ছা সেদিন কি খুব অসুস্থ হয়ে গেছিলে? কি হয়েছিলো?
শিহাব নীরার কথা শুনে চারদিকে তাকিয়ে দেখলো এটা সেই সেইম কর্ণার এবং সেইম টেবিল। সে পর্যবেক্ষন করে হেসে ফেললো। তারপর বললো।
-তোমাকে দেখে নার্ভাস হয়ে গেছিলাম।
নীরা অবাক হয়ে বললো।
-সিরিয়াসলি? তুমি আবার নার্ভাসও হও!
-তোমাকে দেখে হই।
নীরা হাসতে হাসতে বললো।
-কই আমি তো কখনো দেখলাম না। আর আমার কখনো মনেও হয়নি এমনটা।
-কারণ তুমি আমার দিকে কখনো সেভাবে নজরই দাওনি। আর এখন একটু নোটিস করলেও সেটা অতোটাও না।
শিহাবের এই কথা শুনে নীরা চুপ করে গেল। তারপর উঠে চলে আসতে গেলে শিহাব নীরার হাত ধরে ফেললো। বললো।
-কবে?
নীরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
-কি কবে?
শিহাব স্থির চোখে তাকিয়ে বললো।
-কবে আমি একেবারে মন থেকে তোমার হবো?
নীরা কিছু বললো না প্রথমে। একটু পরে বললো।
-বিয়ের পরে সব হবে। কারণ বিয়ে এমনই একটা পবিএ সম্পর্ক যেখানে ভালোবাসা সম্মান আপনাআপনিই এসে যায়!
-আচ্ছা!
নীরা এবার বললো।
-এসব বাদ দাও। তিতলির কাছে আমি সব শুনেছি। তোমার আন্টির সাথে ওরকম আচরন করা একদমই ঠিক হয়নি। শত হোক উনি তোমার মা। এটা তো মনে রাখা উচিত ছিলো শিহাব। যতোই হোক তোমার এতো এগ্রেসিভ হওয়াটা উচিত হয়নি।
নীরার কথা শুনে শিহাব নীরার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বললো।
-আমি অনেককিছু সহ্য করেছি। আর সেদিন সবকিছু সহ্য করার উর্দ্ধে চলে গিয়েছিলো। তুমি সব জানো বোঝো। এই কথাটা আমি তোমার থেকে আশা করিনি।
-দেখো তবুও উনি মা তো। সত্যিই সন্তানের জন্য তো সবাই ভালোই চায়। মা-বাবার দোয়া জীবনে খুব প্রয়োজন। তুমি প্লিজ আন্টির কাছে ক্ষমা চেও। তোমার ওরকম ব্যবহার সত্যিই ঠিক হয়নি। তুমি শান্তভাবে বুঝিয়েও বলতে পারতে।
নীরার কথা শুনে শিহাব প্রচন্ড রেগে গেল চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো। সে রেগে গেলেও শান্তভাবে বললো।
-এটা ওনার প্রাপ্য ছিলো।
বলেই শিহাব উঠে গেল। এবার নীরা শিহাবের হাত ধরে বললো।
-মা বাবাকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না শিহাব প্লিজ।
শিহাব নীরার একেবারে সামনে বসে বললো।
-আর আমি যে এতো এতো বছর কষ্ট পেয়েছি। আমার ভাই-বোনরা কষ্ট পেয়েছে সেটা? শোনো আমি প্রচুর পাষাণ হয়ে গেছি। এসবের কোনো মূল্য আমার কাছে নেই। কোনো সহানুভূতি আমি দেখাতে পারি না। আর পারবোও না। এরপর তুমি কি বলবে আমি সেটাও বুঝে গেছি। বলবে ওনাকে আমাদের বিয়েতে ডাকতে। কিন্তু আমি আগেই বলে দিচ্ছি। সেটা আমি করবো না।
নীরা আর কিছু বললো না। শিহাবের হাত ছেড়ে দিতে চাইলো তবে শিহাব ধরে রাখার কারণে পারলো না। তাই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো।
-আবার কি হলো? তুমিই তো উঠতে চাইছিলে।
শিহাব নীরার দিকে তাকিয়ে বললো।
-তোমার সব কথা রাখতে পারলেও এটা সম্ভব না। কেন সম্ভব না সেটা তুমিও খুব ভালো করে জানো। এছাড়া তোমার সব কথাই আমি শুনবো।
চলবে!
(খুবই দুঃখিত এতোটা দেরি করার জন্য আর এতোদিন পর এতো ছোট পর্ব দেওয়ার জন্য। আসলে মানুষের জীবনে অনেকসময় এমনসব পরিস্থিতি আসে যে সেখান থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে যায়। আর আমি খুব অসুস্থ ও ছিলাম এজন্যই এরকম দেরি হয়েছে। অনেকেই আমাকে মেসেজেস দিয়েছেন দেরি হওয়ার জন্য। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত সবার কাছে।)