#এ_শহরে_বৃষ্টি_নামুক পর্ব২
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব
মেঘেদের গুড়ুম গুড়ুম গর্জন শোনা যাচ্ছে।পলিথিনের পর্দাটা একটু সরিয়ে লোহার শিঁকগুলোয় একহাত রেখে বাইরে তাকিয়ে আছে রাত্রি।বৃষ্টির ছঁটায় একটু আধটু ভিজে উঠছে হাত-মুখ।নিভ্রান হাল্কা কেঁশে গলা পরিষ্কার করলো।মুঠোয় রাখা হাতের বাঁধন ঢিলে করে দিলেও তা ছুটে গেলো না।রাত্রি নিজের অজান্তেই সজোরে খামছে ধরেছে তাকে।মুচকি হাসলো নিভ্রান।চোখ তুলে রাত্রির মুখের দিকে তাকালো।বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়েই থাকলো একাধারে।মেয়েটার সৌন্দর্য্য অপার্থিব।পাতলা ঠোঁটজোড়া মৃদু কম্পমান।বারবার চোখের ভারি পল্লব ঝাপটাচ্ছে।গালের উপর কয়েক ছিঁটা পানি।নিভ্রান শুকনো ঢোঁক গিললো।দৃষ্টি সরিয়ে ভরাট গলায় প্রশ্ন করলো,
—“নাম কি আপনার?”
ঘাড় ফিরিয়ে একপলক তাকালো রাত্রি।পরক্ষণেই মৃদু হেসে উওর দিলো,”আমি রাত্রি।”বলে আবারো বৃষ্টি দেখায় মন দিলো সে।মনে মনে কয়েকবার নামটা স্বগতোক্তির মতো আওড়ে নিলো নিভ্রান।পুনরায় বললো,
—“তো,রাত আপনি…”
তার কথা শেষ হবার আগেই শব্দ করে হেসে ফেললো রাত্রি।হাসলো নিভ্রানও।নিষ্পলক নয়নে চেয়ে থেকে
ধীরকন্ঠে বললো,
—“হাসছেন কেনো?”
কোনরকমে হাসি থামালো রাত্রি।চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নরম স্বরে বললো,
—“আমার নাম রাত-রি।রাত নয়।”
—“আমি নাহয় রাত-ই ডাকি।”
মুখে উওর দিলোনা রাত্রি।সম্মতিসূচক হাসি হাসলো শুধু।বাতাসের বেগ বেড়েছে।বৃষ্টির পানিও তীব্রভাবে ঢুকে পড়ছে ফাঁক দিয়ে।চোখের উপর কয়েকটা ঝাপটা এসে পরতেই দ্রুত পলিথিনটা ছেড়ে দিয়ে একহাতে চোখ কঁচলালো রাত্রি।
গায়ের জ্বরটা নেমে গেছে হঠাৎই।ঘাড়,গলা ঘামে ভিজে উঠেছে।নিভ্রান পকেট থেকে রুমাল বের করে এগিয়ে দিলো।ইশারা করলো ঘাম মুছে নিতে।মৌনমুখে কিছুক্ষন ইততস্ত করে অত:পর দ্বিধাগ্রস্ত হাতে রুমালটা নিলো রাত্রি।ঘাম মুছে পুনরায় নিভ্রানের কাছে দিকেই নিভ্রান তা সযত্নে ভাঁজ করে পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে বললো,
—“এভাবে একা একা জার্নি করবেন না রাত।কাল কতো অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন জানেন?”
—“আমার অভ্যাস আছে।”তৎক্ষনাত উওর দিলো রাত্রি।
খানিকটা অবাক হলো নিভ্রান।ঘাড় বাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,
—“অসুস্থ হবার অভ্যাস আছে?”
আবারো হেসে ফেললো রাত্রি।হাসতে হাসতেই বললো,
—“জার্নি করার অভ্যাস আছে।”
এবার আর হাসলো না নিভ্রান।গম্ভীর স্বরে বললো,
—“এতটুকুন মেয়ে এতদূর জার্নি করেন কেনো?আর করলেও রাতের বেলাটা এভোয়েড করবেন,বুঝলেন?”
রাত্রির চোখেমুখে হঠাৎই অদ্ভুত এক কালো ছাঁয়া খেলে গেলো।হাসিটা থেমে গেছে।ঠোঁটের আকৃতিটায় ফুটে উঠেছে বিষাদের দাগ।মাথা ঝুঁকিয়ে মুখের উপর উড়ে বেড়ানো কয়েকটা অগোছালো চুল কানের পিছে গুঁজে দিতে দিতে সে বললো,
—“আসলে,ওখানে আমার মা থাকেতো।একটা সমস্যা হয়েছিলো তাই তাড়াহুড়ো করে যেতে হয়েছে।কাল থেকে আবার ভার্সিটিতে পরীক্ষা শুরু হবে তাই গতরাতেই রওনা দেয়া ছাড়া উপায় ছিলোনা।”
—“আপনার মা ওখানে তাহলে আপনি..”
—“আমি একা থাকি।”মুচকি হেসে উওর দিলো রাত্রি।
নিভ্রান গভীর দৃষ্টিতে তাকালো।এই হাসিটার পিছে ঠি ক কতটা কষ্ট লুকিয়ে আছে বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হচ্ছেনা।কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে মেয়েটার হয়তো বাবা নেই।বাবা ছাড়া একটা পরিবারকেও ঠি ক কতটা ঝড়ঝাপটা পোহাতে তা সবাই জানে।মায়া হলো নিভ্রানের।তবে মেয়েটার সাহসের বাহ্ববা দিতে হয় অবশ্যই।ঢাকাশহরে ছোট্ট একটা মেয়ের একা একা থাকা চাট্টিখানি কথা না।চারিদিকে খারাপ মানুষজন ওঁত পেতে থাকে কখন সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পরবে।
প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলো নিভ্রান।মেয়েটার মুখে বেদনা মানায় না।ব্যাক্তিগত প্রশ্ন ছেড়ে সে বললো,
—“কোন ভার্সিটিতে পরেন?”
অকপটে ভার্সিটির নাম বললো রাত্রি।লোকটাকে একেবারেই খারাপ মনে হচ্ছেনা।অভিজ্ঞতা আছে তার।মানুষের কথাবার্তার ভঙ্গি দেখলেই সে বুঝতে পারে কার উদ্দেশ্য খারাপ আর কার উদ্দেশ্য সৎ।
ভার্সিটির নাম শুনতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো নিভ্রানের।তার অফিসের কাছেই এই ভার্সিটি।কিন্তু মেয়েটার বাসাতো এদিকে।রোজ এতদূরের ভার্সিটিতে যায়?বিস্মিত কন্ঠে সে বললো,
—“আপনি যেই ঠি কানা বললেন সেখান থেকে তো অনেক দূরে হয়ে যায়।কাছাকাছি বাসা নিলেইতো পারেন।”
—“আরে না,এখনতো স্টুডেন্টকে পড়াতে যাচ্ছি।এদিকে একটা টি উশনি আছে।আমার বাসা ভার্সিটির কাছেই।এই দুদিন গ্রামে ছিলাম তাই পড়াতে পারিনি।আজকে মিস দেয়া যাবে না।তাই পড়িয়ে একেবারে বাসায় যাবো।”
বিস্ময় কমলোনা নিভ্রানের।বরং বাড়লো আরো খানিকটা।মেয়েটার কি ক্লান্তি নেই?রাতভর জার্নি করে এখন বাসায় না যেয়ে পড়াতে যাবে?অন্যকারো কথা বাদ ই দিক।তার নিজেরই তো গা ম্যাজ ম্যাজ করছে।কখন যেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিবে সেই অপেক্ষাই করছে।কন্ঠের বিস্ময়টা লুকাতে পারলোনা সে।বললো,
—“এই অসুস্থ শরীর নিয়ে?”
রাত্রি মলিনভাবে হাসলো।বললো,”অসুস্থ কোথায়?একদম সুস্থ আছি।”
তাল মেলালোনা নিভ্রান।রাত্রির চোখে চেয়ে শাসনভরা জোরালো গলায় বললো,
—“তবুও নিজের একটু খেয়াল রাখা উচিত রাত।ছোট মানুষ আপনি,এত চাপ নিবেন না।”
উওর দিলোনা রাত্রি।তবে খুব করে বলতে ইচ্ছে করলো,”নিজের খেয়াল রাখলে গেলে যে মায়ের খেয়ালটা রাখা হবেনা”।কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারলোনা।কারো কাছে নিজের অসহায়ত্ব কখনো প্রকাশ করেনা সে।নিজেকে অন্যর সামনে ছোট করা মানে নিজের আত্নসম্মান টাকে বিলিয়ে দেয়া।যা তার স্বভাবের একেবারেই বিপরীত।চোখ বুজলো সে।সিএনজিতে কাত করে মাথা ঠেকিয়ে বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দতরঙ্গ অনুভব করার চেষ্টা করলো।নিভ্রান তাকালো একবার।মেয়েটা বার বার মুগ্ধ করছে তাকে।এরকম শান্ত,সাহসী,দৃঢ় স্বভাব সে পূর্বে দেখেনি।
~চলবে~
[আশা করছি এক দু’লাইন গঠনমূলক মন্তব্য করে যাবেন❤️।]