মায়াবন্দী পর্ব- ৫

0
611

মায়াবন্দী পর্ব- ৫
#লেখিকা- তাসনিম তামান্না

☆☆☆

সিয়া ঔ বাড়িতে যতক্ষণ ছিলো ততক্ষণ বেশিরভাগ সময়ই মা চাচিদের সাথে ছিলো আর যতটুকু সময় একা ছিল ঘরের দরজা বন্ধ করে ছিলো সাদমানের সাথে দেখা হলেও যত সম্ভব এড়িয়ে গিয়েছে সিয়া। রিয়াদ সিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলেও সিয়া কথা বলে নি। একপ্রকার সাবাইকে ইগনোর করেছে সিয়া সাদমানকে যেনো তাকে আর অপমান করতে না পারে সেজন্য যত সম্ভব দূরে দূরে থেকেছে। আয়মান না অনুষ্ঠান শেষে দুদিন আগেই নতুন বউ নিয়ে চলে গিয়েছে। সাদমান আর সিয়া দেরও যেতে বলছিলো কিন্তু ওরা যাবে না বলে দিয়েছে। বাসার আত্মীয় স্বজনরা সবাই চলে গেলে সাদমান আর সিয়ারাও বাসাই যাওয়ার জন্য রওনা দিলো।

গোধূলির আলো ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়ে চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। সাদমান,সিয়া,সাইমা এসাথে আর বড়রা একসাথে এক গাড়িতে করে খুলনা টু ঢাকা যাচ্ছে। সিয়ার সাদমানের সাথে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলো না কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারেনি কিই বা বলবে? সাদমানরা বিকালেই বেড়িয়েছে বাসার উদ্দেশে সকালে বের হতে চাইলে সাদমান সাফ না জানিয়ে বলে ‘রাতে জার্নি করতে বেশি ভালো লাগে রাতেই যাবো আমি তোমাদের বেশি তারা থাকলে তোমরা এখন যাও’ ওরাও আর কিছু বলে নি সাদমান যে ত্যাড়া বলে কাজ হবে না ওরা জানে তাই আর কথা বাড়ায় নি।

এখন রাত ১১টা বাজে ওরা হোটেল থেকে খাবার প্যাক করে নিয়েছে। গাড়িতে সাইমা বকবক করলে সিয়া হু হ্যাঁ না ছাড়া বেশি কিছু বলে নি। একটু খেতে সিয়া ঘুমিয়ে ছিলো কিন্তু হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই সিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। সিয়া চোখ বন্ধ করে হাতড়ে ফোন বের করে ওভাবেই ফোন রিসিভ করে সিয়া নাম না দেখলেও সাদমান ঠিকি খেয়াল করেছে ফোনে স্কিনে ‘MR.HANSAM’ নাম দেখে সিয়ার দিকে আড় চোখে তাকায় সাদমান। সিয়া কানে দিতেই ঘুম কর্পূরের মতো ওরে যায়। ব্যাস্ত গলায় বলল

-কি কি হয়েছে হেন্সাম তুমি কাঁদছ কেনো? বলো না কি হইছে? (সিয়া)

-আমি বিয়ে করবো না (রাব্বি)

-কিহ? এসব কি বলছো? কিছুই তো বুঝতেছি না! তুমি? বিয়ে? মানে ক্লিয়ার করে বলো (সিয়া)

-শোন তোর বোন আবার আমাকে বিয়ে দিবে বলছে আমি কিন্তু খুন করে দিবো এসব আবল তাবল করলে আল রেডি মেয়ে দেখা শুরু করে দিছে (রাব্বি)

-মানে টা কি তোমাকে আবার বিয়ে দিবে কেনো তোমার তো বিয়ে হয়ে গেছে হেন্সাম (সিয়া)

-সেটা তোর বোনের কাছে গিয়ে শোন তার মাথায় ভুত চাপছে আমাকে বিয়ে দিবেন তিনি (রাব্বি)

-আমার বোন আমার বোন করছো কেনো হ্যাঁ আমার বোন তোমার কি সেটা বলে ডাকো? আর ওর কথা শুনে তুমি কাঁদছ আর ইউ মেড ভাইয়া? (সিয়া)

-তো আর কি করতাম ধমক দিয়েও কাজ হচ্ছে না পারলে মনে হয় ও এখনি আমাকে আবার বিয়ে দিয়ে দিতো (রাব্বি)

-ওফফ চাপ নিও না হেন্সাম তোমার মতো বুইড়া বেটা রে কেউ বিয়ে করবে না তুমি যে ভাবে কান্না করছিলে আমার জানটা মনে হয় আর একটু দেরি হলে লাফাইতে লাফাইতে বেরিয়ে আসতো (সিয়া)

-শাট আপ তুই আমার সাথে ফাইজলামি করতেছিস (রাব্বি)

-আরে এখানে ফাইজলামির কি দেখলে যেটা সত্যি সেটাই বলছি তোমার বউয়ের কথা ধরো না ওর কন্ডিশন তো জানোই ওর মাথায় এসবই ঘুরবে কিন্তু এসব করতে পারবে না বুঝলে তাই এসব বাদ দিয়ে ওর কাছে যাও ভাইয়া আমি কালই আসছি একটুও নড়বো না আমার জানের কাছ থেকে দেখে নিও (সিয়া)

-আচ্ছা তুই তাড়াতাড়ি আই তো এসে রিয়াকে বুঝা আমি আর পারছি না। গাড়িতে উঠছিস? (রাব্বি)

-হ্যাঁ তোমরা খাইছো? (সিয়া)

-হ্যাঁ ওর খুব কষ্ট হচ্ছে রে ওর কষ্ট আমি আর দেখতে পারছি না (রাব্বি)

-আর কয়েকটা দিন ভাইয়া ইনশাআল্লাহ ও সুস্থ হয়ে যাবে আর আমার চ্যামপ আসবে (সিয়া)

-আমিন! সেটাই যেনো হয় আচ্ছা রাখছি সাবধানে থাকিস (রাব্বি)

-আচ্ছা (সিয়া)

ফোন কেটে বাইরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সিয়ার সবাইকে শান্তনা দিচ্ছে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আদেও কি রিয়া আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবে নাকি সবাইকে ছেড়ে হারিয়ে যাবে কোনো অজানা দেশে। যে দেশ থেকে কখনো চাইলেও ফেরা যায় না যাকে সবাই বলে ‘নাফেরার দেশ’।

সাদমান আর সাইয়ার সিয়ার কথা গুলো মন দিয়ে শুনছিলো কিন্তু ওরা দুজন কিছুই বুঝলো না কিন্তু সাদমান কোনো প্রশ্ন করলো না চুপচাপ গাড়ি চালানোই মন দিলো সাইয়া কৌতুহল দমাতে না পেরে প্রশ্ন করলো

-আপু রিয়া আপু তো তোমার বেষ্টফেন্ড তাই না (সাইমা)

সিয়া বাইরের দিকে তাকিয়ে ছোট করে উত্তর দিয়ে বলল

-হুম (সিয়া)

-তাহলে রিয়া আপুর কি হইছে উনি কি অসুস্থ? কি হইছে ওনার (সাইমা)

সিয়া আবারও দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল

-রিয়া প্রেগন্যান্ট বাট বেবির পজিশন ঠিক নাই ডক্টর বলছে সিজারের সময় কন্ডিশন খারাপ হলে যেকোনো একজনকে ওরা বাঁচাতে পারবে হেন্সাম রিয়ার এ্যাবশন করতে চাইছিলো কিন্তু রিয়া করতে দেইনি হেন্সাম রিয়াকে খুব ভালোবাসে তাই হারাতে চাইনা খুব কাঁদে ভাইয়া, ভাইয়া অনাথ ভাইয়ার বাবা-মা কেও নাই আমাকে নিজেও বোনের মতো দেখে আর খুব ভালো ভাইয়া (সিয়া)

সাদমান আর সাইমা সবটা শুনে ওদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো

-ওহ তুমি রিয়া আপুকে খুব ভালোবাসো তাই না? (সাইমা)

-হুম আম্মুর পরে ও-ই আমাকে বুঝে না বলা কথা গুলাও যে কি ভাবে বুঝে যায় ও-ই ভালো জানে (সিয়া)

-হুম ছোটম্মুর কাছে তোমাদের অনেক গল্প শুনছি রিয়া আপু বিয়ে টা কি ওনার বাসা থেকে এখনো মেনে নেই নি (সাইমা)

-না মেনে নিবে না বলছে আঙ্কেল কিন্তু মাঝে মাঝে আন্টি লুকিয়ে দেখা করতে আসে আঙ্কেল ও তো মাঝে মাঝে লুকিয়ে দূর থেকে দেখে যায় কিন্তু ঔ ইগোর জন্য কাছে আসতে পারে যতই যায় হোক মেয়ে তো (সিয়া)

-হ্যাঁ বাবা-মা বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। আচ্ছা রিয়া আপুর হাসবেন্ড কি করে (সাইমা)

-জব করে (সিয়া)

-ওওও (সাইমা)

ওরা আর কোনো কথা বলো না। রাতের মধ্যেই বাসায় চলে আসলো ওরা সাদমানদের বাসায় আজ রাত থেকে কাল বাসায় যাবে বলে ঠিক হলো। সিয়া সাইমার রুমে ঘুমিয়ে গেলো। আজ একটুও সাদমানের সাথে কথা হয় নি সাদমান ও সিয়ার পিছনে লাগেনি।
#চলবে
#Tasnim_Tamanna

[ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। গল্প দিতে দেড়ি হওয়ার জন্য সরি। স্কুল খুলছে আবার এস্যাইমেন্টের প্যারা লেখার টাইম পাচ্ছি না। তাও যতসম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করছি। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here