মায়াবন্দী
লেখিকা- তাসনিম তামান্না
পর্ব-৩
☆☆☆
দুপুর ৪টা বাজে সবাই বরযাত্রী যাওয়ার পর সিয়া সাওয়ার নিয়ে একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো আর এখন ৪টা বাজতে উঠে গেছে দুপুরে খাবার এখনো খাওয়া হইনি ওর কিছুক্ষণ আলসামি করে শুয়ে থেকে কিছু চিন্তা করলো তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো। নিচে গিয়ে দেখলো কয়েকটা মেয়ে আছে কোনো ছেলে নেই দেখে সস্তির নিশ্বাস ছাড়লো বিশেষ করে সাদমানকে না দেখে। আর কিছু না ভেবে রান্নাঘরের দিকে গেলো দেখলো অনেক রান্না করা আছে আরো রান্না করছে কিছু মহিলা সিয়াকে দেখতে পেয়ে একজন মহিলা এগিয়ে এসে বলল
-কিছু লাগবো ম্যাডাম আফনে তো দুকুরে কিছু খান নাই খাবার দিমু (মহিলা)
সিয়া মহিলাটার টিকে তাকিয়ে দেখলো মহিলাটা তার মায়ের বয়সী সিয়া মিষ্টি হেসে বলল
-চাচী আমি আপনার মেয়ে মতো তাই ম্যাডাম আপনি আগ্গে করতে হবে না আমার নাম সিয়া। সিয়া বলে ডাকতে পারেন (সিয়া)
-আফনার দাদা কত ভালা মানুষ ছিল আফনেও তার মত হইছেন এই গ্রেরামের জন্য কত কি করছে উনি। কিন্তু ঔ দুই ম্যাডাম বলছে ম্যাডাম কইয়া ডাকতে তাই তো ম্যাডাম কইয়া ডাকলাম নাইলে যদি রাগ করতেন (মহিলা)
সিয়া বুঝতে পারলো না কোন দুইটা মেয়ের কথা বলছে কিন্তু সেটা নিয়ে ওতো মাথা ঘামালো না এমনিতেই মাথায় চিন্তা গিজগিজ করছে। ওসব বাদ দিয়ে বলল
-ওহ আমাকে নাম ধরে ডাকবেন সমস্যা নাই। আচ্ছা খাবার কিছু আছে (সিয়া)
-হ্যাঁ হ্যাঁ পোলাও মাংস হয়ে গেছে দিমু (মহিলা)
সিয়া নাক মুখ কুচকে ফেললো এই ৪দিন ধরে পোলাও মাংস খাচ্ছে। একপ্রকার অরুচি এসে গেছে ও খাবার গুলোর উপর।
-ওগুলা ছাড়া কিছু নাই (সিয়া)
-না আর এহনো রান্না করতেছে বাইরে (মহিলা)
সিয়া আর কিছু না বলে ফ্রিজে খুলে দেখলো পিয়ারা আছে কয়েকটা। পিয়ারা দেখে হাসি ফুটলো। একটা পেয়ারা ধুয়ে খেতে লাগলো।
-আফনে ভাত খাইবেন না (মহিলা)
-না চাচী রাতে খেয়ে নিবো এখন ভাত খাইতে ইচ্ছে করছে না (সিয়া)
-আইচ্ছা আফনে তাইলে থাকেন আমি যায় আমার মেলা কাম পইড়া আছে (মহিলাটা বকবক করতে করতে চলে গেলো)
সিয়া ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। খেতে খেতে চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো।
.
সাদমান, সুমন আর ওর সাথে আয়মানের ১টা মামাতো ভাই আর ২টা খালাতো ভাই মিলে বরযাত্রী না গিয়ে গ্রামটা ঘুরে দেখছে আর ফুল নিয়ে আসছিলো। ওরা পাঁচজন মিলে দুপুরের খাবার খেয়ে রেস্ট নিয়ে এখন বাসর ঘরের কাজে হাত লাগিয়েছে। সাদমানই বাসায় ছেলেদের আসতে বারন করছে যতক্ষণ না বাসার সবাই আসছে।
-এই অয়ন(আয়মানের মামাতো ভাই) এখানে তো গোলাপের প্যাকেট ১টা আমরা তো ২ প্যাকেট আনছিলাম আর এক প্যাকেট কই? (সাদমান)
-সবগুলোই তো আনা হইছে জানা মতে আর জানি না (অয়ন)
-ভুলে নিচে ফেলে আসিস নি তো আবার সামাদ (আয়মানের খালাতো ভাই) বসে না থেকে দেখে আই তো নিচ থেকে (রিয়াদ আয়মানের খালাতো ভাই)
-আমি নিচে যাইতাছি না যারে দেখতে পাবো তারে উপরে আনতে বলবো (সামাদ)
বলে হাটা লাগালো সামাদ। অয়ন বলল
-শালা অাইলসে ব্যাটা (অয়ন)
সামাদ উপর থেকে ডাইনিংয়ের পাশে প্যাকেট আর সিয়াকে ডাইনিং টেবিলের বসে থাকতে দেখে বলল
-এই যে, এই, এই মিস, নাম কি ভুলে গেছি? ও হ্যাঁ এই যে মিস সিয়া? মিস সিয়া (সামাদ)
সামাদের মুখে সিয়ার নাম শুনে সাদমানের হাত থেমে গেলো কান খাড়া করে ওদের কথা শুনতে লাগলো।
সিয়া এতোটাই ওর চিন্তায় মগ্ন ছিলো যে ওর নাম শুনে চমকে উপরে তাকালো সামাদকে দেখে ভ্রু কুচকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে তাকালো
-মিস সিয়া ঔ প্যাকেটটা একটু উপরে এনে দিন প্লিজ আসলে একটু কাজে বিজি তো তাই আর নিচে যাইতে পারছি না (সামাদ)
সিয়া সামাদের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে প্যাকেট থেকে একটা গোলাপ ফুল নিয়ে বলল
-আমিও বিজি আছি ভাইয়া আপনি এসে নিয়ে যান (কথাটা বলে সিয়া বাসার বাইরে চলে গেলো)
সামাদ সিয়ার প্যাকেটের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে খুশি হয়ে গেছিলো ভেবে ছিলো সিয়া ওগুলো নিয়ে আসবে কিন্তু সিয়া সামাদকে বোকা বানিয়ে চলে গেলো। সামাদ নিচে আর কাউকে দেখতে না পেয়ে অগতা নিজেকেই যেতে হলো মুখ ফুলিয়ে গিয়ে নিয়ে আসলো প্যাকেটটা। সিয়ার কথা শুনে সাদমানের ভালো লাগছে না খারাপ লাগছে ওর মুখ দেখে কিছুই বোঝা গেলো না স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করতে লাগলো। সামাদ বলল
-কি মেয়েরে বাবা কবি ঠিকি বলছিলো ‘মেয়েদের মন বোঝা নই রে নই সোজা’ (সামাদ)
-ওটা কবি বলেনি ওটা গান মূর্খ তা হঠাৎ একথা বললি (অয়ন)
-আরে আমি ভাবলাম… (তখনকার কথা বলল সামাদ)
ওর কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। রিয়াদ আনমনা হয়ে বলল
-সেজন্য এতো ভালো লাগে (রিয়াদ)
কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল ‘মানে’। রিয়াদের ধ্যান ভাঙলো একটু আগে কি বললো সেটা ভেবে শুকনো ঢোক গিলে বলল
-আব আ আরে ককিছু না এই তাড়াতাড়ি কাজ কর (রিয়াদ)
রিয়াদ কথাটা এড়িয়ে গেলো সাদমান রিয়াদের ওপর কাল থেকে রেগে আছে কিন্তু যত সম্ভব নিজেকে সামলিয়ে রাখছে কতক্ষণ সামলাতে পাড়বে ও জানে না।। সাদমান কিছু না বলে দাতে দাত চেপে চুপচাপ কাজ করতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ কাজ করার পর সাদমানের ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেলো ওসব মাথা উঁচু করে লাগানোতে এখন ওর ঘাড় ব্যাথা করছে। সুমন নিচে গিয়ে ওদের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসতে বলল। সাদমান হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৫.৪৫ বাজে সময়। ঘাড় মালিস করতে করতে আয়মানের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। সিয়াকে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।
সিয়াদের এবাড়িটা ওর দাদুর বাড়ি এটা খুলনায়। এবাড়িটা তিনতলা বিশিষ্ট অনেক বড় একটা বাড়ি। কিন্তু সিয়ার দাদু দাদি মারা যাওয়ার পর এবাড়িটা ফাঁকা পড়ে আছে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া ওরা কেউ বেশি একটা এবাড়িতে আসে না। সিয়ার বড়চাচা আলম সিলেটে থাকে চাকরির সূত্রে। সিয়ার মেজচাচা আলী ঢাকাতে থাকে সিয়ারাও ঢাকাতে থাকে কিন্তু আলাদা বাসায়। সবাই যে যার চাকরিরসূত্রে আলাদা থাকলে তাদের বন্ধন আটুট।সিয়া তখন ওখান থেকে এসে বাগানে এসে বসছে। সিয়া উদাসীন হয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে কোন দিকে যে তাকিয়ে আছে আছে ও নিজেও জানে না। সিয়ার একমাত্র রিয়া বেষ্টু,বোন যাকে ও নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে সে মৃত্যুর সাথে লাড়াই করছে শুনে প্রতিটা মুহুর্ত ভয়ে ভয়ে কাটছে সিয়া এরজন্য ওর একদন্ড শান্তি পাচ্ছে না যবে থেকে শুনেছে। এরজন্য সিয়া এখানেও আসতে চাই নি কিন্তু রিয়া জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে রিয়াকেও নিয়ে আসা পসিবল না এত দূর। রিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে সিয়ার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। সাদমান দূর থেকে সিয়াকে দেখছিলো দূর হলেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিয়ার চোখে পানি দেখে নড়েচড়ে দাঁড়ালো সাদমান। সাদমান কিছু বুঝতে পারলো না সিয়ার কি হইছে। আজ সিয়াকে তেমন কিছু বলেনি বলতে গেলে কথাই বলে নি তাহলে সিয়া কাঁদছে কেনো? ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। সিয়ার চোখের পানি মুছে রুমে চলে গেলো। কিছু ভালো লাগছে না ওর। ও ভেবেই রেখেছে সাদিয়া আসলে সাদিয়ার সাথে কথা বলে যাই একটা ব্যাবস্হা করে চলে যাবে ঢাকাই এভাবে গুমরে থাকতে পারছে না ও আর!!
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক কমেন্ট করবেন]