#মায়াবন্দী পর্ব-৪
#লেখিকা- তাসনিম তামান্না
☆☆☆
আধাঘন্টার মতো দাড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছে সিয়া। সাদমান সহ সব ভাইবোন মিলে আয়মানের কাছে ২০ হাজার টাকা চাইছে কিন্তু আয়মান ওতটাকা দিতে নারাজ এই নিয়ে ওদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। সাদমান যখন বলছে ২০ হাজার মানে ২০ হাজারই এর কোনো নড়চড় হবে না তাই সিয়া কোনো কথা বললে লাভ হবে না তাই ও চুপ আছে। সিয়া এখান থেকে যেতেও পারছে না নিরা (আয়মানের বউ) সিয়ার হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে। সিয়া সেই প্রথম থেকে সব চুপচাপ হজম করছে।
-টাকা না দিলে বউও পাবি না বাসর ঘরও পাবি না (সাদমান)
-আরে আমি টাকা দিবো না কখন বললাম আমি বললাম তো এই নে পাঁচ হাজার এর চেয়ে বেশি দিতে পারবো না (আয়মান)
-তাহলে আর তোর আর বাসর করা লাগবে না এমনিতেই ফুল কিনতে ১০ হাজার টাকা গেছে আর আমরা যে এতো কষ্ট করে সাজালাম তার বেলা (অয়ন)
-আমার কাছে এখন পাঁচের বেশি নাই এইগুলো নে আর পরে দিবো (আয়মান)
-তাহলে তুমি পরে বাসর করো ভাইয়া (সুমা)
-ওফ সিয়া কিছু তো বল (আয়মান)
-কি বলবো ভাইয়া দিয়ে দিলেই পারো ভাবির সারাদিনের ধকল আর তোমরা এখন আবার এসব শুরু করছো ভাবিরও তো রেস্টের দরকার আমি ভাবিকে নিয়ে যাচ্ছি তোমাদের এসব শেষ হলে ডেকো ভাবিকে নিয়ে আসবো (সিয়া)
-আরে দাড়া নিরাকে কই নিয়ে যাচ্ছিস দাড়া আমি দিচ্ছি (আয়মান)
আয়মান ১৪ হাজার টাকা বেড় করে সাদমানের হাতে দিয়ে বলল
-আর নাই পরে দিবো (আয়মান)
-তুই আবার পাল্টি খেলি শালা (সামাদ)
-ভাইয়া তুমি আবার শুরু করছো তুমি জানো আমার হেন্সামের বাসারঘর সাজিয়ে দিয়ে ছিলাম বলে ওর পুরো ক্রেডিট কার্ড আমার হাতে দিয়েছিলো আর তুমি ২০ হাজার দিতে পারছো না এতো কিপটে কেনো তুমি আমার আগে জানা ছিলো না (সিয়া)
-তোর কাছে সাহায্য চাইলাম আর তুই আমার বাঁশ দিচ্ছিস (আয়মান)
-চুপচাপ টাকা দিয়ে দাও ভাইয়া নাহলে তোমার বউকে নিয়ে চলে যাচ্ছি (সিয়া)
আয়মান সবার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে টাকা দিয়ে দিলো ওরাও দাঁত কেলিয়ে টাকা নিয়ে ঘরের বাইরে আসতেই আয়মান ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিলো। সেটা দেখে সামাদ বলল
-তোর কি সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে নাকি এখনো সারারাত পড়ে আছে (সামাদ)
-আপুর জন্য টাকা পেলে তাড়াতাড়ি নাহলে আয়মান ভাইয়া যা ঘাড় ত্যাড়া এখনো তিন চার ঘন্টা লাগাতো (সাইমা)
-সিয়া আপু তুমি কি সত্যি বললে নাকি বানানো গল্প? (সুমা)
-মিথ্যা বলে আমার কি লাভ সত্যিটাই বলছি (সিয়া)
-কিন্তু এই হেন্সামটা কে? (রুমা)
-সেটা তোদের না জানলেও চলবে (সিয়া)
সিয়া আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। সাদমান সহ সবাই সিয়ার যাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। রুমা রেগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল
-এর জন্য কথা বলতে মন চাই না (রুমা)
-ঠিক হইছে এতো জেনে কি করবা (সাইমা)
-সাইমা তুই কিন্তু…. (রুমা)
রুমাকে আর না বলতে দিয়ে ধমক দিয়ে সাদমান বলল
-শাট আপ যে যার কাজে যা (সাদমান)
ওরাও আর কিছু না বলে চলে গেলো।
.
.
সিয়া ওর আম্মুকে খুজতে খুজতে নীলার ঘরে গিয়ে দেখে ওর মা আর দুই চাচি কি নিয়ে আলোচনা করছে সিয়া যেতেই ওদের আলোচনা থেমে যায়। সিয়া ওদের এখন একসাথে দেখে কিছুটা অবাক হয় বিয়ে বাড়িতে কিনা ওরা গল্প করছে সিয়া অবাক দমাতে না পেরে প্রশ্ন করেই ফেলে
-তোমরা তিনজন একসাথে গল্প করছো (সিয়া)
-তা কি করবো ছেলের বাসরঘরে গিয়ে টাকা আদায় করবো (রুবীনা)
-বড়ম্মু তুমিও না আসলে তোমরা একসাথে এখানে গল্প করছো নিচে মেহমান তাই আর কি অবাক হলাম (সিয়া)
-মেহমান আছে মেহমানের কাজে তিনবোন মিলে একটু গল্প করি কতদিন একটু একসাথে হইনা এখানে এসেও কাজ আর কাজ (নীলা)
-সিয়া তোর কি কিছু লাগবে (সাদিয়া)
-না আম্মু আমিও তোমাদের সাথে গল্প করবো (সিয়া)
কথাটা বলে রুবীনার কোলে শুয়ে পড়লো। রুবীনাও মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। সিয়া আরাম পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
-সিয়া তোর পরিক্ষা আর কত দিন বাকি (রুবীনা)
-তিন মাস (সিয়া)
-তাহলে সিয়ার পরিক্ষার পর তোরা সবাই মিলে সিলেটে আমার ওখানে যাবি সবাই একসাথে বেড়ানোও হয়ে যাবে (রুবীনা)
সিয়া রুবীনার কথা শুনে ঝট করে চোখ খুলে ফেললো।
-এটা ভালো বুদ্ধি (নীলা)
-আচ্ছা আমরা বাসায় যাবো কবে (সিয়া)
-কেনো এখানে ভালো লাগছে না (সাদিয়া)
-ভালো লাগবে না কেনো ভালো লাগছে কিন্তু আমি শান্তি পাচ্ছি না আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকা ব্যাক করতে চাইছি কারণটা তোমরা জানো তাহলে (সিয়া)
-আচ্ছা যাস পারলে এখনি যা (রুবীনা)
-প্লিজ বড়ম্মু রাগ করো না রিয়ার কন্ডিশন তো তোমরা জানোই আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে আমি এখানে থাকতে পারছি না ওর জন্য মন কেমন করছে (সিয়া)
বলতে বলতে সিয়ার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।
-এই পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেনো আচ্ছা যাস এতো টেনশন করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (রুবীনা)
-তাই যেনো হয় (সিয়া)
ওরা আরো কিছুক্ষণ গল্প করলো সিয়ার মনটাও ভালো হয়ে গেলো। গল্পের মাঝেই সাদমান এসে বলল
-আজ কি খেতে দিবা না? না খায়িয়ে রাখার প্লান করছো নাকি (সাদমান)
-ওমা সেটা কেনো হবে টেবিলে গিয়ে বস ওখানে অনেকে আছে বললে খেতে দিবে (নীলা)
-আম্মু আমার দিকে সবাই কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকছে (সাদমান)
সাইমা রুমে ডুকতে ডুকতে বলল
-বুঝলে ‘সাদমান শাহরিয়া’ শারুক খান তো তাই সবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকে (সাইমা)
সাদমান আর সাইমার কথা শুনে রুবীনা, নীলা, সাদিয়া হেসে দিলো। কিন্তু সিয়ার মুখটা স্বাভাবিক করে জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আজ আকাশটা একদম পরিষ্কার চাঁদ তারার মেলা চাঁদ উঠেছে চিকন দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। সিয়ার সে দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।
-সাইমা তুই কিন্তু বেশি পটর পটর করছিস আজ কাল (সাদমান)
-হয়েছে থাম চল খেতে দিচ্ছি (রুবীনা)
রুবীনার কথা শুনে সিয়া উঠে বসলো ওরা তিনজন হাসতে হাসতে চলে গেলো। সাদমান সাইমার মাথায় গাট্টা দিলো সাইয়া সাদমানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে মাথা ডলতে ডলতে সিয়ার পাশে গিয়ে বসলো সিয়া তখনো জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে একধেনে।
-আপু তুমি এখানে ছিলে আমাকে ডাকতে আমিও আসতাম আমি তো তোমাকে খুজতে ছিলাম তুমি যে এখানে আমি তো জানতামই না (সাইমা)
সিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ছোট করে উত্তর দিলো
-ওহ (সিয়া)
-আপু তোমার মন খারাপ? (সাইমা)
-কই না তো কেনো (সিয়া)
সাইমা উত্তর দেওয়ার আগে সিয়ার ফোন বেজে উঠলো সিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ‘BEST SAGOL’ লেখা স্কিনে জলজল করছে। সিয়ার বুক ধুকপুক করছে তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বলল
-হ্যালো সব ঠিক আছে তো (সিয়া)
-হ বইন এতো চাপ নিস না (ইমন)
-তুই চুপ থাক জানিস আমি কতটা টেনশনে আছি সকাল থেকে ওর কাছে কত বার ফোন দিচ্ছি ও ততবারই ঝাড়ি মারছে (সিয়া)
-ঝাড়ি মেরে কি কইলো (ইমন)
-কি আবার বললে এক ডাইলগ ‘তুই বিয়ে খাইতে গিয়ে আমাকে কেন ডিস্টার্ব করছিস’ মানে কি ভাই আমার কিছু হচ্ছে না ও ডিস্টার্ব হচ্ছে হাও হোয়াই (সিয়া)
-হাহাহা (ইমন)
-একদম হাসবি না শয়তান পোলা ও বুঝে না আমি কতটা টেনশনে আছি ওর জন্য (সিয়া)
-টেনশনে করিস না ঠিক হয়ে যাবে ছায়া তো কাঁদতে কাঁদতে শেষ আচ্ছা তুই কবে আসবি আমি আর পারছি না (ইমন)
-তাড়াতাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করবো তুই ওদের খেয়াল রাখিস সাথে নিজের ও (সিয়া)
-হুম তুইও সাবধানে থাকিস রাখছি বাই (ইমন)
-হুম (সিয়া)
ফোন কেটে পাশে দেখলো সাইমা নেই। উঠে যেতে নিলেই কারোর সাথে ধাক্কা খেয়ে পিছনে গেলো সিয়া। নিজেকে সামলিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে সাদমানকে দেখতে পেয়ে শুখনো ঢোক গিলে বলল
-আআপনি এএখানে (সিয়া)
-কেনো অন্য কেউ আসার কথা ছিলো না (সাদমান)
সিয়া কিছুক্ষণ সাদমানের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে ধীর পায়ে বেড়িয়ে গেলো সাদমানও আর আটকাই নি।
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন ]