মায়াবন্দী পর্ব-৬

0
611

মায়াবন্দী পর্ব-৬
#লেখিকা- তাসনিম তামান্না

☆☆☆

সিয়া ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ১০:২০ বাজে পাশে তাকিয়ে দেখলো সাইমা এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে এসে দেখলো নিলা আর সাদিয়া রান্না করছে তা দেখে ওর ভ্রু কুচকে গেলো বিরক্ত নিয়ে বলল

-তোমাদের কি রান্নাঘর ছাড়া আর কোথাও যায়গা নাই সারাদিন রান্নাঘরে কাল জার্নি করলে আজ ঘুমাবা তা না উঠেই রান্না ঘরে আসছেন ওনারা (সিয়া)

-বয়স হইছে ওত ঘুম হয় না বুঝলি আর কাল তো গাড়িতে ও ঘুমাইছি তাতেই হয়ে যাবে (সাদিয়া)

-হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাদের তো খুব বয়স হইছে দাঁত পড়ে গেছে তাই না (সিয়া)

-চুপ কর বেশি বকে খেতে বস খাবার দিচ্ছি (নিলা)

সিয়া ভেংচি কেটে টেবিলে বসে পড়লো

-আব্বু, বড়ব্বু কই এখনো ঘুমাচ্ছে নাকি?(সিয়া)

-উহুম তারা কখন অফিসে চলে গেছে (নিলা)

-সেকি আজকের দিনটা রেস্ট নিয়ে কাল থেকে অফিস করত (সিয়া)

-ওনারাই ভালো জানেন (নিলা)

-সিয়া তুই কি আজ রিয়ার কাছে যাবি? (সাদিয়া)

-হ্যাঁ আম্মু তুমি বাসায় চলে যেও আমি এখান থেকে সোজা রিয়ার ওখানে যাবো (সিয়া)

ওদের কথার মাঝে সাদমান এলো। সিয়া সাদমানকে দেখে একদফা ক্রাস খেলো। সাদমানের এলো মেলো চুল, ঘুমে মুখ ফোলা, ওয়াইট কালারের গেঞ্জি আর ব্লাক ট্রাউজার। সাদমান ফোন টিপতে টিপতে চেয়ার টেনে বসলো সিয়া সাদমানের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। সাদমান তাকাতেই সিয়া চোখ সরিয়ে নিলো।

-আম্মু খেতে দাও একটা কাজ আছে যেতে হবে (সাদমান)

-তোর আবার এখন কি কাজ? কাল থেকে অফিস যাস আজ আর যেতে হবে না (নিলা)

-অফিসে যাবো না একটা ফেন্ডের সাথে দেখা করতে হবে (সাদমান)

নিলা ওদের দুজনের খাবার দিলো সাদমান সিয়ার দিকে দু একবার তাকালেও সিয়া আর একবার সাদমানের দিকে তাকায় নি নিঃশব্দে খেয়ে উঠে এসেছে।
.
.

সাদমান গাড়ি চালাছে আর সিয়া গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না দুজনেই চুপচাপ। সিয়া যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিল সাদমানও তখনই বের হচ্ছিল তখন নীলা সাদমানকে বলল সিয়াকে পৌঁছে দিয়ে যেনো সাদমান ওর কাজে যায়। সিয়া অনেক বলেছিলো একা যেতে পারবে কিন্তু ওর কথা কেউ শুনেই নি জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে সাদমান না ও বলেনি হ্যাঁ ও বলে নি শুধু বলছি ‘গাড়িতে গিয়ে বস’ সিয়াও আর কিছু বলে নি। সিয়া ইমনের কাছে ফোন দিলো

-হ্যালো তুই কই (সিয়া)

-শশুর বাড়ি ক্যান (ইমন)

-মানে তুই ছায়াদের বাসায় (সিয়া)

-দূর ছায়া বলল আমাকে কলেজে আসতে এসে ওর কাছে ফোন দিছি ‘কই তুই’ ও বলে ‘আমি রিয়ার কাছে তুই আই’ কেমন ডা লাগে এখন বসে আছি কলেজে (ইমন)

-বসে না থেকে তো যেতে পারিস (সিয়া)

-হুম এবার যাবো খাওয়া শেষ (ইমন)

-মানে কি খাইছিস আমারে না দিয়ে খাইলি (সিয়া)

-সিগারেট খাবি আই এখনো আছে দিবানি (ইমন)

-ওয়াক ছিঃ বিয়াদ্দপ ছেমড়া ওয়েট কর তোর বউ রে বলতাছি (সিয়া)

-যাহ যাহ ভয় পাই নাকি আমি হাহ (ইমন)

-ও মাই আল্লাহ তাই নাকি গুড তুই দাড়া আমি পাশেই আছি একসাথেই যাবো (সিয়া)

-ওখে (ইমন)

ফোন কেটে সিয়া সাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল

-ভাইয়া কলেজের সাথে গাড়ি থামান ওখান থেকে চলে যাবো (সিয়া)

সাদমান গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-পরে আবার আমার ঘাড়ে দোষ দিবি যে আমি তোকে পৌঁছে দি নাই (সাদমান)

সিয়া ভ্রু কুচকে বলল

-আপনাকে এসব কে বলল (সিয়া)

-আমি জানি কারোর কাছে শোনা লাগে না (সাদমান)

-যেটা ভাবেন আপনি তো আবার সব জানতা (সিয়া)

-হুম এটাও জানি কলেজ ফাঁকি দিয়ে ছেলেদের সাথে ফাইজলামি করিস (সাদমান)

-আমি জানি না আপনি জানেন বাহ বাহ তাহলে আব্বু আম্মুর সাথে বলে দিয়েন আমি একজন রে বহাত ভালাবাসি তারে বিয়া করমু আমি লজ্জায় বলতে পারছি না আমি একটু কষ্ট করে বলে দিবেন ভাইয়া (সিয়া)

সাথে সাথে সাদমান ব্রেক করলে সিয়া সামনের দিকে ঝুঁকে গেলো কিছুটা সাদমানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সাদমান রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো এটা ওর কলেজের সামনে সিয়া একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল

-আমাকে কষ্ট করে এতো দূর নিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ (সিয়া)

বলে তাড়াহুড়া করে নেমে গেলো সিয়া। আর একবারও পিছনে না ফিরে এক ছুটে কলেজের ভিতরে চলে গেলো। সাদমান সিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে চলে গেলো।

সিয়া কলেজে এসে ইমনকে খুঁজে পিছন দিকে গিয়ে দুমদুম করে দুইটা কিল বসিয়ে দিলো। ইমন পিঠ ডলতে ডলতে পিছনে ফিরে সিয়াকে দেখে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল

-জীবনে মানুষ করতে পারলাম না অমানুষ অমানুষই রয়ে গেলো (ইমন)

-নিজে তো খুব সাধু পুরুষ (সিয়া)

-হ্যাঁ এতোদিন পরে আসলি কই জিগাস্যা করবি কেমন আছিস? দিনকাল কেমন যাচ্ছে তা না এসেই মারলো কুত্তা একটা দূরে যা (ইমন)

সিয়া মুখ ভেঙ্গছি কেটে বলল

-তুই যা আমার তো খেয়ে দাইয়া কাম নাই তোর সাথে মধুরি আলাপ করবো (সিয়া)

-থাক হইছে চল ওরা ওয়েট করছে তোর জন্য আমারে তো কেউ ভালাবাসিস না (ইমন)

-ওরে নাটংকি বাজ চল (সিয়া)

সিয়া আর ইমন এতদিনের বকবক সব একসাথে করতে করতে রিয়ার বাসায় পৌঁছে গেলো। সিয়া ছুটে গিয়ে রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল

-ওফ এবার শান্তি শান্তি লাগছে (সিয়া)

-কত বড় হারামি মাইয়া আমার জানা মতে বরকে জড়িয়ে ধরলো শান্তি লাগে আর এ… (ইমন)

-তুই মুর্খ তুই এটা জানিস না বেস্ট ফেন্ডকে জড়িয়ে ধরলে সব দুঃখ, কষ্ট, ডিপ্রেশন চলে যায় (সিয়া)

-না বইন তোর কাছ থেকে শিখতে হবে দেখছি বাট আমার গফরে জড়িয়ে ধরলে শান্তি লাগে (ইমন)

ছায়া ইমনের বাহুতে চাপড় মেরে বলল

-আমি তোরে কবে জড়িয়ে ধরছি রে আর একটু হাত ধরলেই বলি সব বিয়ের পরে আর সেখানে জড়িয়ে ধরাতো অনেক পরে ভাই (ছায়া)

-আমি আগেই বলছিলাম এ কোনো সমস্যা আছে সময় থাকতে ডক্টর দেখা (রিয়া)

রিয়ার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। ইমন রেগে বলল

-এই একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবি না আর তুই আমার গফ সেটা তোকে কে বললো আমি কখনো বলছি তুই আমার গফ সো এসব আশা বাদ দে (ইমন)

ছায়ার চোখ ছলছল করে উঠলো

-তুই সত্যি আমাকে ভালোবাসিস না তোর গফ আছে কই আগে তো বলিস নি (ছায়া)

-আরে আগে বলি নাই টাইম পাই নাই আর তোরে ভালো লাগছিলো না তুই পুরানো হয়ে গেছিস তাই আর কি নতুন একটা পটালাম আজ কাল কার যুগে কি একটা দিয়ে হয় বল (ইমন)

ছায়া ক্ষেপে গিয়ে বলল

-তাই না আমি পুরান হয়ে গেছি… (ছায়া)

বলে এদিক ওদিক কিছু খুজতে লাগলো একটা ঝাড়ু পেয়ে সেটা নিতে দেখে ইমনের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম ছায়াকে ঝাড়ু হাতে নিয়ে ওর দিকে আসতে দেখে ইমন ভোঁ দৌড় দিলো। সিয়া আর রিয়া ওদের কাজ দেখে এতোক্ষণ মিটমিটিয়ে হাসতেছিলো ঝাড়ু হাতে নিয়ে দৌড়াতে দেখে ওরা দুজন এবার শব্দ করেই হেসে দিলো।

-হেন্সাম কই (সিয়া)

-অফিসে গেছে তুই খাইছিস (রিয়া)

-হ্যাঁ তুই (সিয়া)

-হ্যাঁ (রিয়া)

-তুই নাকি শুনলাম ভাইয়াকে বিয়ে দিবি তা মেয়ে খুঁজে পাইছিস (সিয়া)

রিয়া মলিন হেসে বলল

-পেয়ে যাবো (রিয়া)

সিয়া ভেংঙ্গীয়ে বলল

-পেয়ে যাবো (সিয়া)

-তুই আমার সাথে ফাইজলামি করছিস (রিয়া)

রিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে সিয়া বলল

-সহ্য করতে পারবি তো ভাইয়ার পাশে অন্য মেয়ে কে? আমি জানি পারবি না তাহলে কেন এমন উল্টো পাল্টা ডিসিশন নিচ্ছিস? সবসময় খারাপ হবে এমন টাও তো নাই ভালো টাও তো হতে পারে তাই এসব বাদ দে (সিয়া)

রিয়া কিছু বললো না। সিয়া সারাদিন রিয়ার ওখানে থেকে সন্ধ্যার দিকে বাসায় আসলো।

#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here