মায়াবন্দী #লেখিকা- তাসনিম তামান্না #পর্ব-১০

0
606

#মায়াবন্দী
#লেখিকা- তাসনিম তামান্না
#পর্ব-১০

☆☆☆

-বিয়ে মানে তুমি কি সব বলছো এমনটা তো কথা ছিলো না (সিয়া)

-হ্যাঁ এমনটা কথা ছিলা কিন্তু দেখ তোদের তো বিয়েটা হয়েই গেছে এবার শুধু অনুষ্ঠান করে সবাইকে জানিয়ে বিয়ে হবে (সাদিয়া)

-আম্মু তু……(সিয়া)

-তোর পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হবে না ওটা নিয়ে তুই টেনশন করিস না (সাদিয়া)

সিয়া কিছু বলবে তার আগেই সাদিয়ার ডাক পরলো সাদিয়া ‘আসছি’ বলে সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

-মন খারাপ করিস না মা তোকে তো বিয়ে দিতে হতো তুই ভেবে দেখ কি করবি তোর আব্বু কিন্তু কথা দিয়ে ফেলেছে (সাদিয়া)

সাদিয়া আর দাড়ালো না চলে গেলো। সিয়া দরজা লাগিয়ে ভাবতে লাগলো কি করবে ও কিছুই তো করার নাই। যদি সত্যি টা মিথ্যা হতো খুব কি ক্ষতি হতো। সাদমান তো ওকে মানেই না কুৎসিত বলে সহ্য করতে পারে না সেখানে আবার সবাইকে জানিয়ে বিয়ে ভাবতেই হাস্যকর লাগছে সিয়ার কাছে। কিন্তু এটা তো সত্যি ওদের বিয়ে হয়ে গেছে কিন্তু সে বিয়ে আজকের নয় প্রায় পাঁচ বছর আগে সেদিন দুজনের অমতেই বিয়েটা হয়ে ছিলো। সিয়া জানালা দিয়ে আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল

-এমন কেনো করে দাদু এমনটা করার কি খুব দরকার ছিল এমনটা না করলেও পারতা উনি এ বিয়ে কথা শুনলে আবার রেগে যাবে নিশ্চিত আমার সাথে বাজে বিহেব করবে দেখ

#ফ্ল্যাসব্যাক

সিয়া তখন ক্লাস এইটে পড়তো সাদমান অর্নাস ফাইনাল ইয়ারের পড়ে। তখন পরিবারের সবাই একসাথে খুলনার বাড়িতেই থাকতো। সিয়া ওর দাদাই আর দাদুর প্রিয় ছিলো। সিয়াও ওদেরকে খুব ভালোবাসতো। সিয়ার দাদাই মারা যাওয়ার কিছু দিন পর সিয়ার দাদুও বিছানায় সজ্জা হয়ে যায়। সিয়ার দাদু যখন বিয়ে হয়ে এবাড়ি আসে তখন নাকি তার গায়ের রঙের জন্য অনেক কথা শুনে হয়েছিল অনেক অপমানিত হতে হয়েছে কিন্তু তিনি ওসবে কান দেননি সিয়ার দাদাইয়ের ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করে নিয়েছে। সিয়া সকল ভাই বোনদের মধ্যে ওর গায়ের রঙ চাপা হওয়ায় সিয়ার দাদুর চিন্তা হতো তার মতো যদি সিয়াও কষ্ট পাই তাই তিনি মনে মনে ঠিক করে রেখে ছিলেন অায়মানের সাথে সিয়ার বিয়ে দিবে কিন্তু এটা কাউকে কখনো বলে নি। সিয়ার দাদু যখন শরীর খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন উনি বুঝতে পারলেন ওনি আর কিছু দিনের অথিতি মাত্র। সেদিন উনি ছেলেদের ডেকে আয়মান আর সিয়ার বিয়ের কথা বললে কেউই দ্বিধা করে না মৃত্যু পথ যাত্রীর কথা ফেলতে পারে না কিন্তু আয়মান সেদিন বন্ধুদের সাথে ট্যুরে ছিলো বাসায় না থাকায় সাদমানের সাথে বিয়ে ঠিক করে সেদিনই ওদের বিয়ে দিয়ে দেয়। সিয়ার দাদুর দিন দিন শরীর খারাপ হতে লাগলো বাসার সবার একটা শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেকটা শোক সিয়ার দাদু সবাইকে ছেড়ে চলে যায় সেদিন। তাকে দেখে সে দিন মনে হচ্ছিল তিনি হাসছেন তার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে।

সাদমানে বিয়েতে অমত থাকার সত্ত্বেও দাদুর মন রখাতে সেদিন সিয়ার সাথে বিয়ে করতে হয়েছিল। বিয়ের আগে সিয়ার সাথে বাজে ব্যবহার করতো না কিন্তু বিয়ের তারপর থেকে সিয়ার সাথে বাজে বিহেব করতে থাকে। কিন্তু সেটা সবার আড়ালে সিয়ার জেএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়ে গেলে ওরা ঢাকায় চলে আসে আর বলা হয় সিয়ার পড়ালেখা শেষ হলে ওদের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে। সাদমানের মা নিলা প্রথমে মেনে না নিলেও পরে মেনে নিয়েছে।

সিয়া ঢাকায় এসে পড়ালেখা শুরু করে। মাঝে মাঝে খুলনার বাড়িতে সবাই একসাথে হতো কিন্তু তখনো সাদমান সুযোগ পেলেই সিয়াকে অপমান করতো। সিয়াও বুঝতে পেরেছিল সাদমান ওকে সহ্য করতে পারে না সিয়াও যথাসম্ভব সাদমানের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতো যাতে কোনো ভাবেই ওকে অপমান করতে না পারে। কিন্তু শেষ রখা হয় না কোনো না কোনো ভাবে সাদমান সিয়াকে অপমান করতো

#বর্তমান

সিয়া এসব ভাবতে ভাবতে বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। সকালে ৭:৪৫ এ ঘুম ভাঙ্গলো সিয়ার উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখলো রান্না করছে ওর আম্মু, ফুপি,চাচিরা নিরা গালে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে আছে আর কাজ দেখছে। সিয়াও মুচকি হেসে নিরার পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।

-কি করছ তোমরা ভাবিকে কাজ করতে নিচ্ছো কেনো বেচারি দেখোতো কত কষ্ট পাচ্ছে (সিয়া)

-পাক কষ্ট এই টুকু মেয়ে আসছে কাজ করছে এই বয়সটা পড়া লেখা করবে এতো পাকামি ভালো না (রুবীনা)

-আহারে বাচ্চা মেয়ে যাও পড়তে বস (সিয়া)

নিরা মুখ ফুলিয়ে বলল

-মজা করছো আমার সাথে (নিরা)

সিয়া মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে বলল

-এমা না না তা কখন করলাম আমার ঘাড়ে কটা মাথা বলো (সিয়া)

-আম্মু আমার যখন এইটুকু বয়স তখন বউ করে আনছ কেনো একটা বুড়িকে আনতে পারতা (নিরা)

-হ্যাঁ তাই করতে হবে ভাবছি (রুবীনা)

-এমন বলতে পারলা (নিরা)

-না বলতে পারার কি আছে (রুবীনা)

নিরা আর কিছু না বলে দুপদাপ করে চলে গেলো। ওরা হু হা করে হেসে উঠলো। নাস্তা রেডি করে সবাই নাস্তা করতে নাস্তার টেবিলে আসলো রুমা আর সাদমান বাদে।

-রুমা কই ওকে তো ডেকে আসলাম আজ কাল মেয়েটার যে কি হয়েছে ঠিক মতো খাই না কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে সিয়া যা তো ডেকে আনতো (ফুপি)

-আচ্ছা ফুপি (সিয়া)

-সাদমান কেও ডাকিস (রুবীনা)

সিয়া না চাওয়ার সত্ত্বেও বলল

-আচ্ছা (সিয়া)

সিয়া উপরে গিয়ে রুমাকে কয়েক বার ডাকলো কিন্তু কোনো রেসপন্স পেলো না ওয়াসরুমে ভেবে সাদমানকে ডাকতে গেলো রুমার রুমের কয়েক রুম পরেই সাদমানের রুম। সিয়া সাদমানের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে কেমন ভয় লাগছে ওর সাহস সংচয় করে দরজায় দুইবার নক করে বলল

-ভাইয়া খেতে ডাকছে (সিয়া)

দরজার ওপর পাশ থেকে উত্তর এলো

-তুই যা আমি আসছি (সাদমান)

সিয়া আর কথা না বাড়িয়ে হাটা দিলো রুমার রুম ক্রস করার সময় ভাবলো রুমাকে আরো কয়েক বার ডাক দি। যেই ভাবা সেই কাজ সিয়া আরো কয়েকবার ডাকলো কিন্তু রুমা দরজা খুললো না রুম থেকে সারা শব্দও আসছে। সিয়া কান পাতলো দরজায় না তাও কোনো সারাশব্দ পাচ্ছে না। সিয়া দরজার ছিদ্র দিয়ে একচোখ মেরে দেখার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ পর সাদমান সিয়ার হাত টান দিলো

-এভাবে রুমে উঁকি মারছিস কেনো (সাদমান)

সিয়ার চোখ মুখ কেমন হয়ে গেছে সাদমানের হাত ছাড়িয়ে আবার আগের মতো করে চোখ দিলো দরজায়। সাদমান সিয়ার এমন কাজে ভ্রু কুচকে এলো আর কিছু না বলে সিয়ার কাজ দেখতে লাগলো।

-ভা ভাইয়া ও ও (বলে দরজা ধাক্কাতে লাগলো) রুমা দরজা খোল (সিয়া)

-এমন করছিস কেনো (সাদমান)

-ভাইয়া রুমা হাত কাটা রক্ত বের হচ্ছে (সিয়া)

-ওয়াট (সাদমান)

#চলবে
#Tasnim_Tamanna

[ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। রিচেক করি নাই]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here